নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
ব্লাক সোয়ান বা কালো রাজহাঁস দেখা তো দুরের কথা, রাজহাঁস যে কালো হয় এই ধারণাই আমার ছিলো না। কিন্তু ডেলসফোর্ড এসে লেকের জলে একজোড়া কালো রাজহাঁস দেখে খুবই মুগ্ধ হলাম। ডেলসফোর্ড পাহাড়ের উপরে অবস্থিত ছোট্ট একটি শহর। অনেকদিন এক স্থানে থাকতে থাকতে অনেকটা এক ঘেঁয়েমিতে পেয়ে বসে। তাই হঠাৎ করে লং উইকেন্ড আসায় স্বপরিবারে বেরিয়ে পড়া। এখানে সাপ্তাহিক ছুটিকে বলে উইকেন্ড। আর এই উইকেন্ডের দুই দিনের ছুটির সাথে অষ্ট্রেলিয়া ডে-এর একদিনের ছুটি জুড়ে দিয়ে সাপ্তাহিক ছুটিটা একটু লম্বা হয়েছে, তাই এটা লং উইকেন্ড।
মেলবোর্ন থেকে একশ বারো কিলোমিটারের রাস্তা। একঘন্টা ট্রেনে যেতে হবে তারপর আধাঘন্টা ড্রাইভ। বউয়ের এক সহকর্মীর বাড়ী সেখানে। সে নিজে এসেই ট্রেন স্টেশন থেকে গাড়িতে করে নিয়ে যাবে, সেটাই প্লান। যথাসময়ে ট্রেন থেকে নামলাম আমরা।নামার পরেই একঝাঁক মাছি এসে একেবারে যেন ঘিরে ধরলো আমাদের। গরমের সময় কান্ট্রি সাইডে মাছির উপদ্রব বেশ বেশি অষ্ট্রেলিয়াতে। আমাদের বান্ধবীটির নাম জুলিয়েন। বয়স আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। হাফ সেঞ্চুরী পার করেছেন তাও কয়েক বছর হলো। সেই জুলিয়েনই তার নিজের গাড়ী ড্রাইভ করে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে। ট্রেনে বসে মাইলের পর মাইল যে অবহেলা অযত্নে পড়ে থাকা ধূসর জমি দেখেছি, এখানে যেন তার বিপরীত। চারিদিকে গাছ আর গাছ। মাঝে মধ্যে ঘন জঙ্গল। আধাঘন্টার পথ মানে পঞ্চাশ কিলোমিটারের মতো। ছোট বড় অনেকগুলো পাহাড় পেরিয়ে সময় মতোই আমরা পৌছে গেলাম ডেলসফোর্ড।
ডেলসফোর্ড শহরটা ছোট হলেও বেশ পুরোনো এবং এর নামডাকও বেশ। একসময় এই এলাকায় ছিলো অনেক বড় বড় কয়লার খনি। কিন্তু সেও অর্ধশতাব্দি আগে। সেই সব খনি এখন পরিত্যক্ত। তারপর থেকে ডেলসফোর্ড একটি শুধুই ট্যুরিস্টিক শহর। মেলবোর্ন সহ বিভিন্ন শহর থেকে মানুষ বেড়াতে আসে এখানে। বিশেষ করে উইকেন্ডের ছুটি কাটাতে অনেকেরই গন্তব্যস্থল এই ডেলসফোর্ড।
ডেলসফোর্ড নেমেই বুঝলাম, মেলবোর্নের হিট ওয়েভ বা তাপ প্রবাহ এখানে তেমনভাবে জেকে বসেনি। দুপুর বেলাতেও বেশ শীত শীত করতে লাগলো আমার। তাই জ্যাকেটটা চাপিয়ে নিলাম গায়ে। জুলিয়েন একা থাকে বাড়িটিতে। তিন বেডরুমের মাঝারি সাইজের বাড়ী এটি। ছোট্ট একটি পাহাড়ের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত বাড়িটি। বারান্দায় দাঁড়ালে তাই সামনের সুউচ্চ এবং গাছে ঠাসা বড় পাহাড়টি ভালভাবেই দেখা যায়।
দুপুরে খাওয়ার ডাক আসলো কিছুক্ষণ পরে। অষ্ট্রেলিয়ান রান্না নিয়ে আমি একটু শংকিত বেশ আগে থেকেই। এরা বেশিরভাগ মানুষই ঝাল খায় না।তবে আলাদাভাবে মরিচ বা গোলমরিচের গুড়া দিয়ে সে সমস্যাটা কিছুটা হলেও সমাধান করা যায়। কিন্তু খাওয়ার ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে রান্না করার সময় অনেকে একেবারেই লবন দেয়না খাবারে। লবনহীন, ঝালহিন এবং অধিকাংশক্ষেত্রে মসলাহীন খাবার আমার মতো বাঙালীর গলা দিয়ে নামতে তাই খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু ডাইনিং টেবিলে গিযে যখন দেখলাম লাঞ্চের খাবার পিৎজা, তখন আশংখাটা কিছুটা দুর হয়ে গেলো। যদিও আমি ভাত আর মাঝের ঝোলের মতো বাঙালী খাবারেই তুষ্ট। তারপরও পিৎজা কিছুটা চলনসই।
অষ্ট্রেলিয়ার বয়স্কদের একটা বড় অংশই একাকী জীবন যাপন করেন। অনেকে স্বামী বা স্ত্রীর কাছ থেকে ডিভোর্সী। অনেকে আবার বিয়েই করেননি, সারাজীবন কাটিয়েছেন পার্টনার নিয়ে। কোন পার্টনারের সাথে খুবই সল্প সময়, কারো সাথে বছরের পর বছর। কিন্তু শেষ বয়সে এসে আবার একা। অনেকের আবার পার্টনার থাকতেও নেই। সুসম্পর্ক নেই বলে যাতায়াতও খুবই সামান্য। কখনও সখনও ছেলে-মেয়ের উছিলায় দেখা হয়ে যায়-এটুকুই। জুলিয়েনের এক ছেলে এবং এক মেয়ে। ছেলে-মেয়ে দুজই চাকরীজীবী এবং তাদের পরিবার নিয়ে তারা ভিন্ন শহরে থাকে। পার্টনার না কি তারা বিয়ে করেছেন, সেটা যদিও শোনা হয় নি। কিন্তু ছেলে এবং মেয়ে দুজনেরই সন্তান আছে। জুলিয়েন তার নিজের সংসার, নিজের ইচ্ছামতো চালায়, খবরদারীর কেউ নেই, প্রশংসা বা পরামর্শের কেউ নেই- এটাই এখানকার জীবন। কখনও ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি বেড়াতে আসে, কখনও তিনি নিজেই বেড়িয়ে আসেন তাদের বাড়ীতে। অষ্ট্রেলীয়ানদের এই একাকী জীবন আমার কাছে কেমন জানি ছন্নছাড়া মনে হয়। হ্যা, অবাধ স্বাধীনতা আছে, আছে ইনটেনসিভ প্রাইভেসিও। কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের যে নাড়ীর যোগ সেটা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত।
ডেলসফোর্ড সম্পর্কে কথা হচ্ছিল একটা জার্মান রেস্টুরেন্টে বসে। ডেলসফোর্ডের মোট জনসংখ্যা দুই হাজার। কিন্তু উইকেন্ডে এই সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ উইকেন্ডে বা লং উইকেন্ডে এই সংখ্যা চার হাজারেও পৌঁছে। কিন্তু উইকেন্ড শেষ তো ডেলসফোর্ড আবার সেই নিজের জায়গাতেই। তাই এখানকর বেশিরভাগ ব্যবসা সপ্তাহে ওই দুইদিনই জমজমাট।
ডেলসফোর্ডের আর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি নিজস্ব গাড়ি নির্ভর। এখানকার সব পরিবারেরই গাড়ি আছে। বলতে গেলে দুই হাজার জনসংখ্যার এই শহরে গাড়ির সংখ্যা দুই হাজারের চেয়ে অনেক বেশি। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে, সকালে একটি বাস পাশের শহর ব্যালারাতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাকী সারা দিন নিজস্ব গাড়ি ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। ট্রেন স্টেশন, সেও পঞ্চাশ কিলোমিটার দুরত্বে। ছোট, বড় অনেকগুলো পাহাড়ের সমারোহ। বেশিরভাগ রাস্তাই হঠাৎ হঠাৎ করে খাড়া নেমে গিয়েছে পাহাড়ের ঢালে, আবার উঠে গিয়েছে আর এক পাহাড়ে। তাই সাইকেল চালানো এখানে প্রায় অসম্ভব। আর পাঁয়ে হাঁটা? সেটাও বেশ কষ্ট সাধ্য। তাই ফুটপথে মানুষের দেখা মেলা ভার।
পাহাড়ের ঢালে সুবিশাল লেক। লেকের চারপাশে আঁকা-বাঁকা পায়ে চলা রাস্তা। একপাশে একটা মাঠ, সেখানে শিশুদের খেলার কিছু রাইডার। আর মাঠের শেষ মাথায় কয়েকটা রেষ্টেুরেন্ট, কফি স্টল, একটা লাইব্রেরি আর টয়লেট। রেস্টুরেন্টগুলোতে ট্যুরিস্টের আনাগোনা।বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো বুনো রাজহাঁস। অসংখ্য বালিহাঁস আর নানান পরিজায়ী পাখি।এর মাঝেই দুটো কালো রাজহাঁস।এই ব্লাক সোয়ান এখানেও সহসা দেখা যায় না। তাই ব্লাক সোয়ানকে ঘিরে কিছু ট্যুরিস্টের বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে দেখলাম। এখানে পাখি আর মানুষের সম্পর্ক বেশ নিবিড়, চোখে পড়ার মতো। বুনো পাখি নিশ্চিন্ত মনে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মানুষের হাত থেকে। বালি হাঁস আপনার সামনের পড়ে যাওয়া খাবার খুটে খুটে খাচ্ছে বেশ নিশ্চিন্ত মনেই।ধরতে গেলে আস্তে আস্তে হাঁটছে, যেন পোষা পায়রা।
মাত্র দুই দিন কাটিয়েই আবার ফিরে আসলাম কর্মব্যস্ত মেলবোর্নে। তারপরও সুবজে ঘেরা সুউচ্চ পাহাড় শ্রেণী এখনও মনের চোখে সমুজ্জল।
পাঠক লাল গোলদার
২৮ জানুয়ারী ২০১৪
২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫
ভ্রমন কারী বলেছেন: ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ!
বেশতো ঘুরিয়ে আনলেন ডেলসফোর্ড থেকে
জীবন আসলে কতভাবে যে যাপিত হয়-..বিশ্ব যারা ঘোরে তারা বেশি উপলিদ্ধি করতে পারে!
আপনার লেখার সূত্রে আমরা একটু একটু ছায়া অনুভব করি মাত্র