![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট গল্প :
~~~~~~
গোধূলী বেলায় প্রিয়তা
____________________
প্রিয়তার ছোট্ট একটা সংসার। দুই ছেলে আর স্বামী। স্বামী ব্যবসা করে। বড় ছেলেটা গ্রেজুয়েশন করে আমেরিকা যাবার জন্য কাগজ পত্র রেডী করছে।আর ছোটটা একাউন্টিং নিয়ে অর্নাস ৪র্থ বছরে আছে। সুন্দর ছিমছাম সংসার। সারাদিন কাটে তার ছেলের পিছনে আর স্বামী পিছনে। কে কোনটা খাবে, কোনটা কে পছন্দ করে, স্বামীর কি পছন্দ এগুলো নিয়ে ব্যস্ত। কখনো রান্না ঘরে, কখন কারও টিফিন বানাতে, কখনও না মেহমানের আপ্যায়ন অথবা ছেলেদের আবদার, মা আজ এটা রান্না করো ,এগুলো পুরণে ব্যস্ত । ঘরে কি হচ্ছে, কোন জিনিসটা কি ভাবে সাজানো হবে তাই নিয়ে তার জীবন। আজ রাতুল মানে ওর বড় ছেলের জন্মদিন। সে আগেই বলে রেখেছে ঘরে কিছু করবে না বাবাকে বলে আমার টাকাটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি বাইরে পার্টি করবো। সব বন্ধুরা ট্রিট চাইছে জন্মদিনের জন্য। ওর বাবা তাই করেছে। গতকাল রাতেই ওর হাতে টাকা দিয়ে দিয়েছে। আজ একটু সকালেই উঠেছে প্রিয়তা। উঠেই চুলাতে দুধ চাপিয়ে নামাজ পরে নিয়েছে। রাতুল ফিরনী অনেক পছন্দকরে। তাি সে ফিরনী রাধবে আজ। আর নাস্তায় ওর পছন্দে আরও কিছু আইটেম রাখবে। তাই সে রান্নাঘরে কাজে লেগে গেলো। এখন সকাল আটটা তিরিশ। স্বামী নাস্তা খেতে বসলো। এত গুলো আইটেম কেন করলে? খাবারের অপচয়টা বন্ধ করতে শিখলে না এখন পর্যন্ত। রাতুল একবারে তৈরি হয়ে আসছে টেবিলে, ওর বাবার কথা শুনে সেও বলল কও করবে আম্মু সারাদিন বসে থাকে আর এই সব উদ্ভত চিন্তা করে। প্রিয়তা বলল তোর জন্মদিন বলেই তো করলাম। আমি তো আগেই বলেছিআমি আজ সারাদিম বাইরে থাকবো। তো কে খাবে এগুলো । বাবাও বাইরে যাবে আর অতুল তো সারাদিন থাকেই না। খাবার গুলো কি করবা? সাহেদ (প্রিয়তার স্বামী) তুমি খাও।
আর যা বাচবে ভিখারীকে দিয়ে দিও। প্রিয়তা ডাইনিং টেবিলের একপাশে দাড়িরে নির্বাক হয়ে সবগুলো কথা শুনে গেল। কিছুই বলার ছিল না ওর। অতুল ও তৈরি হয়ে এসে বলল মা আমি খাচ্ছি না, এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে । সবাই সবার কাজে বেরিয়ে গেলো
প্রিয়তা খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে দিল,আর কয়কটা বড় বড় দীর্ঘশ্বাসের সাথে চোখের কোনে দুফোঁটা জল টলমল করে উঠল। ড্রইং রুমের এক কোনায় বেশ বড় একটা বুকসেলফ আছে ওদের। প্রিয়তা সময় পায়না বই গুলোকে দেখার মতে। অবশ্য এখন আর আগের মতো ওর প্রিয় বই গুলো ওখানে শোভা পায় না। এখন ওখানে সব বড় বড় ইংরেজী লেখক আর লেখিকাদের বই আর ম্যাগাজিনে ভারপুর। সেলফটা নিচে এক কোমা একটি তাকে কিছু বি আজও পরে আছে
অনেক বই ছিল।কবে যে সে বই গুলো কোথায় হারিয়ে গেছে তার খোজও সে জানে না। যখন একটু সময় পায় অথবা বুকসেলফটা পরিস্কার করার সময় বইগুলোর ধুলা পরিষ্কার করে দেয়। আর তখনই বই গুলোর পাতা উলটিয়ে দেখে। মাঝে মাঝে ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে যায় তাদের মাঝে। আজও তাই হলো রবীঠাকুরের শেষের কবিতা বের করে হাতে নিল, পড়তে শুরু করলো, "
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা
তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেরি তার জাল--
তুলে নিল দ্রুতরথে
দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।...
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। আর পড়া হলো না। কে আসলে? এই দুপুরবেলায়। দরজা খুলতেই দেখে রাতুল তা কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাসতে হাসতে বলল আম্মু সকালের রান্না গুলো আছে না খেয়ে ফেলেছো। প্রিয়তা বলল, না সব আছে। লক্ষী মা আমার এবার ওগুলোর সাথে একটু বিরিয়ানী করে দাওনা মা। ওরা কেউ আজ আর বাইরে খাবে না সবাই তোমার হাতের রান্না খাবে। ঠিক আছে ঘরে বসো আমি রান্না করে দিচ্ছি। নিরব ঘর গুলো আজ হৈ চৈ দিয়ে ভরা ভাল লাগছে। সারাদিন চুপ চাপ থাকে। কথা বলার কেউ নাই। প্রিয়তা ব্যস্ত হয়ে গেল রান্না ঘরে। সবার জন্য খাওয়া তৈরি করে পরিবশন করতে করতে বিকাল হয়ে গেল। ভাবলো সাহেদকে ফোন দিবে । আবার মন চাচ্ছে না সে যখন তখন ফোন দেওয়াটা পছন্দ করে না। আর যদি ফোনটা রিসিভ করেও কোন কথা না শুনেই বলে কাজের মাঝে ফোন কেন? আরও কত কি? ওরা চলে গেলো সন্ধ্যার সময়। ছোট ছেলেটা আসলো না এখনও। প্রিয়তা বারান্দায় গিয়ে দাড়াঁলো। সূ্র্য ডুবে গেছে। চারিদিকে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো। পাখি গুলো তার নীড়ের ফিরে যাচ্ছে। এত বিশাল আকাশ। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য। ধুসর সাদা তুলট মেঘ গুলো ভাসছে। মেঘের উপর পরছে লালা আভা। এই সময়টা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সময়ের একটি। যতবার দেখেছি ভালবেসেছি। যতবার দেখছই হারিয়ে যেতে চেয়েছি তোমাতে। ভুলে গেছি সব দুঃখ, সব কষ্টকে। বার বার ভেবেছি সৃষ্টিকর্তা আমায় যদি পাখি করে জন্ম দিত। তাহলে এই রক্তিম আভা, ঝির ঝির হাওয়া গুলো গায়ে মাখিয়ে উড়ে বেড়াতাম। ভুলে যেতাম সব কিছু। এই গোধূলীবেলার কাছে সব কিছু উৎসর্গকরে দিতাম। আমি জানি তুমি কাউকে কস্ট দিতে পারনা। সবার কষ্টগুলো নিয়ে নিজেই রক্তিম আভায় ছড়িয়ে দাও। দাওনা আমাকে একটু শক্তি, একটু সাহস। সবাইকে ভালবাসে বিলিয়ে দেবো নিজেকে। দাওনা তুমি। পাখি গুলো বাড়ি ফিরছে। আর আমি বাড়ি তে থেকেও একা বসে আছি। আস্ত আস্তে গোধূলী বেলাও চলে গিয়ে আধাঁর ঘনিয়ে আসলো। কিন্তু প্রিয়তার আবাক নয়নে তাকিয়ে আছে সেই ডুবে যাওয়া সূর্যটা দিকে। আর বুকের ভিতর থেকে হিম শীতল নিঃশ্বাস গুলো বাইরে এসে মিশে যাচ্ছে নিবির আধাঁরে।
২৪/১১/১৭
©somewhere in net ltd.