নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেষ্টাই আছি........
ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাচ্ছিলাম। জানালার পাশের সিট বরাবরই আমার প্রিয়। অনেক খোজা-খুজি করে ঈদের বাজারে, কষ্টে-সাধ্যে একটা সিট ম্যানেজ করছিলাম। বসে উঠে চ্যাগায়া বসে দুচোখ বন্ধ করে রবীন্দ্র সংগীত শুনতেছি। আমার কপাল সম্পর্কে আমি জানি আর Same Zone'র সাথে এত মাখামাখির কি আছে। ওর কপাল ও আমার মত, নয়তো আমার পাশে বসবে কেন? একটু পরে শুনি একটা মেয়ের সুরেলা কণ্ঠ ভেসে আসলো।
:এক্সকিউজমি ।
আমি ধড়ফড় করে উঠলাম, চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে। ঠোঁটে কি মিষ্টি হাসি। ডানা না থাকলেও কোন আফসোস নেই। আমার বোধয় Hallucination হচ্ছে। আজকাল প্রায়ই হয়। এতটা ভালো কপাল আমার না। আমি ভালো করে চোখ কচলে নিলাম। মেয়েটা আবার বলল- এক্সকিউজমি, আপনি কি এই সিটে বসবেন?
আমি যেন কথাটা শুনতে পাই নি, পেলেও বুঝতে পারিনি।
আমি বললাম- হ্যা, কি বললেন?
মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে বলল- আপনি এই সিটে বসলে আমি আপনার সিটে বসতাম। জানালার পাশের সিট ছাড়া আমি বসতে পারিনা।
আমি শক্ত ছেলে, এত সহজে গলে যাওয়ার পাত্র আমি নই। সুতরাং এই জোছনার মত হাসি অন্য কোথাও। আমি নিজেকে বুঝালাম। দেখ ভাই, ৫/৬ ঘন্টার জার্নি আর মেয়েটা যে লেভেলের সুন্দরী, তোর তো সাধ্যের বাহিরে। এখন যদি সিট ছাড়িস, সিটটাও গেল।
আমি দৃঢ় স্বরে বললাম- নাহ।
সুন্দরী মেয়েরা না বলে অভ্যস্ত, শুনতে না। মেয়েরা নাকি একজীবনে সবচেয়ে বেশিবার এই না শব্দটাই ইচ্চারণ করে। তাই বোধয় মেয়েটা আমার কথা শুনলো না, কিম্বা শুনলেও বুঝতে চাইলো না। আমাকে আবার জিজ্ঞেস করল। আমি আগের মতই গাঢ় স্বরে বললাম- নাহ।
এক জীবনে যত প্রত্যাখ্যান হয়েছি, যত অবহেলিত না শুনেছি, আজ সব ফিরিয়ে দেব; আজ আমার পালা। কোন ভাবেই সিট আমি ছাড়বো না। নিজের ভেতর এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করলাম। জীবনে ধোকা অনেকবার খেয়েছি। অনেকবার সিট ছেড়ে দেখেছি, লাভ হয়নি। গন্তব্যে পৌঁছে দেখেছি মেয়েটার জন্য কেউ একজন এক পৃথিবী অপেক্ষা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে গুলোর জন্য আমার মায়া হত, আহা রে বেচারা। মেয়েটা কন্টাক্টর কে ডেকে কি যেন বলল, কে জানে! আমি কানে হেডফোন গুঁজে ঘুম দিলাম।
বাস তখন সিরাজ গঞ্জে, ফুড ভিলেজে থেমেছে, ২০ মিনিটের ব্রেক।
আমি নিচে নেমে ফ্রেস হলাম। হালকা নাস্তা করে নিলাম। আরাম করে একটা সিগারেট টেনে- বসে উঠে দেখি, মেয়েটা জানালার পাশে আমার সিটে বসেছে। আমি গাঢ় অভিমানে বললাম- আমি মেনে নেব না, এ অন্যায়।
মেয়েটা মৃদু হেসে বলল- পারলে উঠিয়ে দেখান।
আমি পারিনি। কন্টাক্টর কে ডেকে বিচার দিলাম। কন্টাক্টর বেহায়ার মত হেসে বলল- আমি কি করব বলুন! আর অল্প একটুই তো রাস্তা, পাশের সিটে বসেই যান না!
অসহায় ছেলেদের কথা কেউ শোনে না। আমি গোমড়া মুখে পাশের সিটে বসে পড়লাম। মেয়েটা হেসে বলল- এভাবে ছেড়ে দিলে হয়? অধিকার খাটাতে হয়।
বাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এখন এদের কে বোঝাবে! এটা অগ্রাধিকার নিয়ে অনাধিকার চর্চা, এ অন্যায়। এমনিতেই লোকে বলে মেয়েদের বুদ্ধি থাকে হাঁটুতে। নারীবাদীদের হাঁটুর বুদ্ধি মাথায় উঠুক, এই প্রত্যাশা ছাড়া আমার আর করার কিছু ছিল না। আমার জায়গায় মেয়েটা হলে কি হত? এই বাসের-ই আট-দশজনের তীব্র প্রতিবাদী স্বর, নারীবাদিতার তীক্ষ্ণ বাক্য আর পুরুষতন্ত্রের কটাক্ষ শব্দ, আমার শরীরে কেটে বসত। কোন থানার সামনে দিয়ে গেলে হয়তো আমার নামে হ্যারেসমেন্টের মামলা হত। ঐ আট-দশ জনই আমার বিপক্ষে স্বাক্ষী দিত। আজ ছেলে বলে অসহায় পড়ে রইলাম।
তবে এ ধরণের অনাধিকার চর্চা বোধয় ভালো, কারন - নামার সময় মেয়েটা আমার হাতে একটা চিরকুট দিয়ে গেছিলো। চিরকুট খুলে দেখি- মেয়েটার ফোন নাম্বার। দেখুন এমনিতেই আমি খুব শক্ত ছেলে কিন্তু এখানে আমি গোলে গেলাম। মেয়েটার সাথে আমার দুই মাসের রিলেশন চলেছে। তারপর গভার্মেন্ট জব দেখে, একদিন বিয়ের দাওয়াত কার্ড দিয়ে গেল। নাহ....বিয়েতে আমি যাইনি। এতটা ছেচড়া আমি হতে পারি না। আমার একটা পার্সোনালিটি আছে। আমি মেয়েটাকে একটা গিফট পাঠিয়ে দিলাম। গিফটে লেখা ছিল-
"ঝড়ালে যত অশ্রু আমার
তোমার যেন ঠিক ততটাই
তীব্র সুখের অসুক হয়।"
সারা রাত কি হয়েছে কে জানে! ভোর চারটায় ম্যাসেজ আসলো, এতটা অভিশাপ দিতে পারলে?
আমি রিপ্লে দিলাম- মোদের বোতলে মাতাল আসরে, গালি আমি দিতে পারিনা। এতটা ছেচড়া আমি হতে পারিনা। তুমি তো জানো- আমার একটা পার্সোনালিটি আছে।
মেয়েটা রিপ্লে দিয়েছিল- অধিকার খাটিয়ে আটকে রাখতেও তো শিখনি, কাপুরুষ।
এখন ছেলেরা যদি আটকে রাখতে যায় তাহলে পুরুষতন্ত্র আর ছেড়ে দিলে কাপুরুষ! ছেলেরা যাবে কোথায়? তাছাড়া আমি কেন আটকে রাখতে যাব! ছেড়ে তুমি গেছ, It's your loss। আমি না এর মানে না-ই বুঝি, না 'র মাঝে হ্যা খুঁজি না।
#BeSingle #SaveSingle
২| ১৭ ই মে, ২০২১ সকাল ৮:৫৫
তানভীরএফওয়ান বলেছেন: যত সুন্দরী ততো ভয়ংকরী
৩| ১৭ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:১৯
শেরজা তপন বলেছেন: পুরুষ হবার সুখ ভোগ করেছেন শতভাগ- পুরুষদের এই কষ্টে সবাই মজা পাবে, মুচকি হাসবে!!!
৪| ১৭ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৫০
অশুভ বলেছেন: ভাল লেগেছে। লেখা চালিয়ে যান।
৫| ১৯ শে মে, ২০২১ রাত ১০:৩৫
ঢুকিচেপা বলেছেন: পাজী-পোলার গল্প ভালো হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম এই ঈদের ঘটনা, শেষে দেখি পুরাতন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই মে, ২০২১ রাত ৩:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বাস জার্নি পড়লাম।