নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু নাই। যে দিন বলার মত পরিস্থিতি হবে আশাকরি সেদিন আর বলতে হবে না।

পাজী-পোলা

চেষ্টাই আছি........

পাজী-পোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বসুমতী কটেজ পর্ব ৩

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৪



বসুমতী কটেজ পর্ব ২

বাহিরে ঝড়ের গতি সম্ভবত কমেছে। বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি শব্দ শোনা যাচ্ছে, থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকের শব্দ। তোফায়েল মোমটা টেবিলের উপর রাখল। রজনীগন্ধা সুবাস ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে মেলে ধরে আছে। ঘরে মিহি গন্ধ। এই প্রথম পেল মেয়েটা। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিলো তোফায়েল।

মেয়েটা ফোন দিল তার কলিগ কে-
"হ্যালো, হ্যা শোন কাল আমার যেতে দেরি হবে।"
" কিন্তু কাল তো ভিজিটর আসবে।"
" তুই একটু সামলে নিস, আমি একটু আটকে গেছি।"
" ঠিক আছে, কোথায় আছিস তুই?"
"সমস্যা নেই, আমি একটা কটেজে আছি। ওই সাদা কটেজটা।"
ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে, শুনতে পাচ্ছে না মনে হয়। নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব করছে। মেয়েটা ফোন কেটে দিল। সোফায় বসতে বসতে বলল-
"রজনীগন্ধা বুঝি আপনার প্রিয় ফুল?"
"হ্যাঁ "
"মিষ্টি গন্ধ কিন্তু।"
"আপনারাও কি প্রিয়?"
তোফায়েল সুটকেসের ভেতর থেকে একটা ওল্ড মংক এর বোতল বের করল। ডিনারের পর ওর একটু চলে। বের করতে অবশ্য সংকোচ বোধ করছিলো। অপরিচিত একটা মেয়ে, কী না কী মনে করে! কিন্তু গলায় সুরার স্বাদ না ঢালা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলো না, তাই বের করেই ফেলল। বের করেই দেখলো- মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তোফায়েল স্মিত হেসে বলল-
" চলবে নাকি? ডিনারের পর আমার একটু না হলে অস্বস্তি লাগে।"
মেয়েটা তদ্রুপ হেসে বলল- " ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আপনি খেতে পারেন। নারীরা এতদূর পর্যন্ত তো এগিয়েইছে।"
" আপনি চাইলে আমার সাথে জয়েন করতে পারেন, আশা করি নারীরা এতদূর…. পর্যন্ত এগিয়েছে।"
মেয়েটা মৃদু হাসলো। তোফায়েল বোতলটা টি টেবিলের উপর রেখে গ্লাস আনতে গেল। টেবিলের উপর দুটো গ্লাস রেখে বোতল খুলতে লাগলো।মেয়েটা বলল-
" আপনি খান, আমি খাব না।"
তোফায়েল বিদ্রুপ হেসে বলল-
" ওহ…. মেয়েরা তাহলে এতদূরও এগোয়নি!"
তারপর কন্ঠস্বরে অনুরোধ ঝরিয়ে দুটো গ্লাসেই ঢালতে ঢালতে বলল- " খান, ভালো লাগবে। ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব আছে, কেটে যাবে।"
মেয়েটাও গ্লাস তুলল। তোফায়েল "চিয়ার্স" বলে একবারেই পুরো প্যাক শেষ করলো। খেতে খেতে মাঝে মাঝে একটুর বেশি হয়ে যায় তোফায়েলের কিন্তু আজ বেশি খাওয়া যাবে না। আজকের রাতটাকে রোমাঞ্চ বানাতে হবে। সাথে একটা সুন্দরি মেয়ে আছে।
"বাড়িতে ফোন করলেন না? কেউ অপেক্ষায় নেই!"
" নেই বলে কি খুশি হচ্ছেন?"
" খুশি হলে কি অপরাধ হবে?
তোফায়েল আর একটা প্যাক ঢাললো। ঢালতে যত দেরী, গিলে ফেলতে একটুও দেরী হলনা। মেয়েটা ধীরে ধীরে খাচ্ছে মাতাল বোতলের সুধা। মেয়েটারও তোফায়েল কে বেশ ভালোই লাগছে। এমন রাতে একটা ভুল হয়ে যেতেই পারে। এমন রাত গুলোর জন্মই তো ভুলের জন্য। গল্প, উপন্যাসে তো সেটাই লেখা থাকে।

তোফায়েল একটা সিগারেট জ্বালিয়ে মেয়েটার দিকে প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল-
"সুন্দরি তো আপনি অবশ্যই। অফার নিশ্চয় অনেক গুলো পেয়েছেন। তারপরও সিঙ্গেল থাকার কারণ? ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেললাম, যদি মাইন্ড না করেন……?" ওর গলায় সংকোচ স্পষ্ট। মেয়েটা একটা সিগারেট নিলো, হেসে বলল-
" বয়ফ্রেন্ড ছিল একটা, আমি পাহাড়ে জব নেওয়াযই ঝগড়া, তারপর লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ আর টিকলো না।"
" এই জায়গায় নারীর অধিকারের কথা বলছিলাম। আপনার জায়গায় ছেলেটা হলে কিন্তু রিলেশনের কোন সমস্যা হতো না।"
"আপনি জেনে খুশি হবেন, ছেলেটা বেকার।" বলে মেয়েটা একটু হাসলো। ওকে যে ওর কথা ফিরিয়ে দিচ্ছে, হাসিতে বোঝালো। তোফায়েল আর একটা প্যাক নিল, দ্রুত চালান করে বলল -
"তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই, আপনার সাথে চলে আসতে পারতো। দুজনের খাওয়ার মত যথেষ্ট পরিমাণ টাকা আপনি নিশ্চয়ই আর্ন করেন?"
তোফায়েল দ্রুত খাচ্ছে, মেয়েটা তদ্রুপ ধীরে ধীরে। মেয়েটার হাতে এখনো প্রথম প্যাক রয়ে গেছে, আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট। তোফায়েলের চতুর্থ না পঞ্চম চলে? ভুলেই গেছি। মেয়েটা বাগে আসছেনা, এসে যাবে। তোফায়েল এর জন্য এটা নতুন কিছু নয়। তবে এই মেয়েটা সংগ্রাম জানে, ও লড়াই দেখেছে, তপ্ত রোদের তাপ পড়েছে ওর শরীরে। এর আগের গুলো ছিল লুতুপুতু। দু'চারটা প্রেমের সস্তা বাণী ছড়িয়ে দিলেই ওরা মাখামাখি করত। কিন্তু একে ওত সহজে বশ করা যাবে না। চলুক- খেলা যতক্ষণ চলে ততক্ষণ মজা, শেষ হয়ে গেলেই গ্লানি। তোফায়েল কখনোই খারাপ খেলোয়াড় ছিল না। স্ট্রাইকার হিসাবে বন্ধু মহলে সুনাম আছে। দুই একটা নারী ঘটিত কথা মানুষের মুখে মুখে রটে, যার আংশিক সত্যও। কিন্তু সেগুলো ধোপে টিকে না। তোফায়েল গায়ে মাখে না। তোফায়েল আর একটা প্যাক চালান করল।
মেয়েটা হেসে বলল- "এলো না।"
"ছেলেরা গর্ধোবই থেকে গেল। আমি হলে কিন্তু আসতাম।"
"আপনি গর্ধোব না, বলছেন?"
"অবশ্যই না। এমন আহ্বান কেউ ফেলতে পারে!"
তোফায়েল জানে লাইন গুলো সস্তা। কিন্তু মেয়েরা এগুলোয় খায়। গল্পে-উপন্যাসে যাই পড়ুক এই সস্তার বুলি গুলোতেই তারা কুপোকাত। তবে এই মেয়েটা খাবে কিনা বুঝতে পারছে না। এ আর সবার মত না। ঐ মেয়েরা হলে তোফায়েল কখন বিছানায় তুলতো। নারীবাদীরা এ কথা ঠিকি বলে, প্রত্যেক পুরুষের ঐটাই শেষ গন্তব্য।

মেয়েটা তোফায়েল কে জিজ্ঞেস করে-
" আপনার কথা বলেন। বাড়িতে ওয়াইফ, নিশ্চয়ই সুন্দরী? ছেলে মেয়ে? "
"না….ওসব কিছু নেই। "
"সামান্য লেখোকের নারী ভক্ত নিশ্চয় অসংখ্য? "
"অস্বীকার করব না। 2/4 জন আছে, সামান্য লেখোকের নারী ভক্ত ও সামান্য।"
"তাদের মধ্য থেকে কাউকে বেছে নিলেই হয়?"
"লেখকের লেখাকে ভালোবাসা আর লেখককে ভালোবাসা এক না। তাছাড়া তেমন কেউ নেই যে পাশে বসতে পারে।"
"সেকী, কেন?"
"কেউ পুরোটা দখল করতে পারেনি।"
তোফায়েলের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। নেশটা মনেহয় ধরে গেছে। মেয়েটা বলল-
"আপনি আর খাবেন না।"
তোফায়েল আর একটা প্যাক বানাতে যাচ্ছিলো, বোতলটা রেখে বলল- "কেন? ভাট বকছি?"
"তা নয়, তবে আর খেলে বকবেন।"
"ঠিক আছে, আপনি যখন বলছেন আর খাব না।"
তোফায়েল আর একটা সিগারেট জ্বালালো।
মেয়েটার হাতে এখোনো প্রথম প্যাকের অবশিষ্ট অংশ রয়ে গেছে।

বাহিরে ঝরের বেগ কমেছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির শব্দ শুধুই। এমন নির্মল রাত ফুরায়না যেন। তোফায়েল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার অস্বস্থি হচ্ছে আবার ভালোও লাগছে। কেউ আপনার দিকে এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে এটাও দেখার মত দৃশ্য। অস্বস্থি কাটানোর জন্য মেয়েটা বলল-
"যারা অল্প দখল করেছিলো তাদের কাছে ধরা দিলেই পারতেন?"
"এতটাও কাঙাল হয়নি যে যেখানে সেখানে হাত পাতবো। আপনি হলে ফেলতে পারি।" নেশার ঘোরে বলেই ফেলল।
মেয়েটা হাতের গ্লাসটা টি টেবিলে রেখে লেখার খাতার দিকে এগিয়ে গেল। ঠিক তখনি কারেন্ট চলে আসলো। মোমটা নিভিয়ে দিলো তোফায়েল। টেবিলের উপড় থেকে খাতাটা নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগলো মেয়েটা।
"কী লিখছেন?"
"একটা থ্রিলার লেখার চেষ্টা করছি। যদিও আমি এ বিষয়ে খুব কাচা।"
"কেন? এর আগে লেখেননি? "
"লিখেছি, তবে মোটে একটা। আমার সস্তা প্রেমের গল্প গুলোয় বাজারে চলন্ত।"
"এটার প্লট কী?"
"একজন গৃহবধু, যে হাজবেন্ড এবং হাজবেন্ডের ফ্যামিলি দ্বারা ডমিনেটেড। একদিন এক্সিডেন্টালি হাজবেন্ড কে মেরে ফেলে, তারপর তার মাংশ কেটে পরিবারের সবাইকে রান্না করে খাওয়ায়।"
মেয়েটা হাসে, তোফায়েলের কাছে হাসিটা বিদ্রুপ এর মত লাগে। তারপর সত্যি সিত্যি বিদ্রুপ কন্ঠে বলে-
"আপনারা থ্রিলার লেখার জন্য এই মেরে, কেটে খাওয়া ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেন না?"
"বাজারে যেটা খায় প্রকাশকরা সেটায় চায়। আমাদের কেও সেটাই সাপ্লাই দিতে হয়। আগের গল্পটা ছিলো- একটা ছেলে তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে নিজ মাকে খুন করে। চলেনি…"
এবার বিদ্রুপটা যেন তোফায়েলের কন্ঠে ঝড়ে পড়ল। মেয়েটা বুদ্ধিমতী, খুব শহজেই বুঝে ফেলল।
স্মিত হেসে বলল- " মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে বাবাকে খুন করলে চলতো বলছেন?"
"অবশ্যই। নারীবাদীতার আশ্রয়ে বেড়ে উঠত।"
"আফসোস হচ্ছে, পুরুষবাদী দল এখোনো গড়ে ওঠেনি বলে।"
"অচিরেই উঠবে।"
"তখন আপনার গল্পও হিট করবে।" বলেই মেয়েটা হেসে ফেলল। ঔ হাসিতে ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ দুটোয় ছিলো।

তোফায়েলের অভিমান বাড়তে লাগল, একটু অপমানও বোধ হল। একটু একটু করে রাগও বাড়ছে। মেয়েটা খেলাচ্ছে, কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। ধরা ওকে দিতেই হবে। তোফায়েল এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্র না। কাছেই কোথাও বাজ পড়ল মনেহয়, মেয়েটা চমকে উঠলো। ঝর আবার বেড়েছে বোধয়, শো শো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এমন রাত কিছুতেই মাটি হতে দেওয়া যায় না। তোফায়েল ধীর পায়ে মেয়েটার দিকে এগোলো। নেশায় মাতাল পা সামান্য কাপছে। মেয়েটার পাশে গিয়ে অভিমানী সুরে বলল-
"নারী ভক্ততো তখনও কপালে জুটবে না।"
"নারী বিদ্বেষী লেখা লিখে আপনি নারী ভক্ত খুঁজছেন? হ্যা, নারীবাদী নিয়ে লিখলে অবশ্য খুঁজতে হত না।"
মেয়েটার ঠোটে, কন্ঠে সেই ব্যঙ্গ, বিদ্রুপের হাসি এখোনো বিদ্যামান।

তোফায়েল মেয়েটার কাছে গেল। ওর নিশ্বাস দ্রুত পরছে। মেয়েটার চোখে চোখ রেখে বলল- "আমার তো কোন ভক্ত চাই না।"
মেয়েটা হচকচিয়ে গেল। অবাক হয়ে বলল- "মানে?"
উত্তেজনায় তোফায়েল মেয়েটার হাত ধরে ফেলল।
"তোমাকে চাই।"
ঠিক সেই মুহূর্তে কারেন্ট আবার গেল। অন্ধকারে দুজন নর-নারী মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে।এমন রাত তো ভুলেরি রাত।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:৫৯

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পড়লাম।মদ নিয়ে পেকের পর পেক বর্ননা করায় গল্পের গতি কমে গেছে বলে আমার ব্যক্তিগত মত।দেখি পরের পর্বে কি হয়...

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ ভোর ৪:০১

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ভালবাসা ছাড়া এমন নেশা করে
টনটনে মেয়েদের পটানো যায় ???

.....................................................
কি বলেন তোফায়েল সাহেব !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.