নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে বলার মত কিছু নাই। যে দিন বলার মত পরিস্থিতি হবে আশাকরি সেদিন আর বলতে হবে না।

পাজী-পোলা

চেষ্টাই আছি........

পাজী-পোলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘের গারদ পর্ব-১

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১১

হাতে একটা বাক্স নিয়ে একজন লোক অফিসের ভেতর দিয়ে হেটে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অফিস। লোকটার প্যান্ট, শার্ট ইন করা। মুখে চিন্তার ছাপ। খোলা দরজা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি আফজাল হোসেনের রুমে প্রবেশ করলো। টেবিলের উপর বাক্সটা উল্টো করে ধরলে। ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো অজস্র চিঠি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আফজাল হোসেন ফাইল থেকে মুখ তুলে অবাক হয়ে তাকালো সেক্রেটারি শহীদের দিকে।

শহীদ তাকানোর প্রশ্ন বুঝতে পারলো। বললো-
কাশেমপুর জেল থেকে প্রতি দিন আপনার নামে চিঠি আসছে।
চিঠি গুলোর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো- কীসের চিঠি? একটা চিঠি হাতে নিয়ে দেখলো।
শহীদ- সেখানকার এক কয়েদি তার ফাঁসি চায়।
আফজাল হোসেন অবাক হয়ে শহিদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো- কী চায়?
যেন সে কথাটা বুঝতে পারেনি।
শহিদ একটু ধীর স্থির হয়ে বসে বললো- তার ফাঁশি চায়?
আফজাল হোসেন- নিজের ফাঁশি চায়?
শহীদ- হ্যা।
আফজাল হোসেন- কী করেছে সে?
শহীদ- জোড়া খুন।
আফজাল হোসেন প্রথমে অবাক হয়ে বললো- জোড়া খুন?
শহীদ নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
আফজাল হোসেন আবার বললো- এমনিতেই তো ফাঁশি হয়ে যাবে। আমার কাছে চায় কেন?
শহীদ- আপনার কাছে নিশ্চয়তা চায়। যেন ফাশিই হয়। যাবতজীবন না হয়।
আফজাল হোসেন বললো- অদ্ভুত তো, পাগল নাকি?
শহীদ- অদ্ভুত তো বটেই, কিন্তু পাগল কীনা জানি না। পাগল হলে তো পাগলা গারদে নিয়ে যেত, কারাগারে রাখতো না।
আফজাল হোসেন- কাকে খুন করেছে?
শহিদ- জানি না?
আফজাল হোসেন- তাহলে কী জানো? চিঠি এসেছে, ধরে নিয়ে এসেছো৷ খোজ নিবানা ঘটনা কী?
শহিদ- আপনি অনুমতি দিলে খোজ নেব।
আফজাল হোসেন- ঠিক আছে যাও, খোজ নিয়ে জানাও।
শহিদ- জী আচ্ছা স্যার।
বলে উঠে সে চলে গেল। আফজাল হোসেন ফাইলে মনোযোগ দিতে দিতে বলে- স্ট্রেঞ্জ, সবাই তো ফাশি মওকুফের জন্য চিঠি পাঠায়।

শহিদ জানে ঠিকি কিন্তু ইচ্ছে করেই সে আফজাল হোসেন কে বললো না। সে ভেতরে কিছু একটার গন্ধ পাচ্ছে। অবশ্যই ইন্টারেস্টিং কিছু। ঠিক তখনি শহীদের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। আমি ডিভোর্স লয়ারের এখানে বসে আছি তুমি কতদূর?

ম্যাসেজ করেছে তার স্ত্রী শিরিন। শিরিন আর শহীদের সাথে থাকতে চায় না। অনেকদিন ধরেই তাদের সমস্যা চলছিলো, সেটা আজ ঠেকেছে ডিভোর্সে গিয়ে। শিরিন আর তাকে ভালোবাসে না, সে এখন ভালোবাসে মি: আমজাদ চৌধুরী কে। অবশ্য এখন থেকেই থাকছে কিন্তু শহিদ কে ডিভোর্স দিয়ে সে আমজাদ চৌধুরী কে বিয়ে করতে চায়। অথচো তাদের একটা মেয়ে আছে। মেয়ের কথা ভেবেও শিরিন কী থাকতে পারতো না!

শিরিনের কল আসছে, মিসকল উঠে আছে পাচটা। শহীদ ফোন সাইল্যান্ট করলো। তার আজকে আর সময় হবে না৷ সে ছুটে চলেছে, কাশেম পুর কারাঘারের দিকে।

জেলখানার ছোট্ট কামড়ায় একজন কয়েদি, হাত রেখেছে দরজার গ্রিলের উপর। দীর্ঘদিন না কাটা লম্বা, ঝুপড়ি চুল পড়েছে মুখের উপর। মুখে দাড়ি-মুছের জংগল। লোমশ হাত। কয়েদীর পোষাক সে পায়নি। সাজাপ্রাপ্ত না হলে কেউ কয়েদীর পোষাক পায় না। আজ পাচ বছর ধরে তার ট্রায়াল চলছে। শাস্তি হচ্ছে না বলে সস্তি পাচ্ছে না। শাস্তি সে ইচ্ছে করেই চাচ্ছে না। ফাসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সে শাস্তি চায় না। আর বেশীদিন আটকে থাকবে না, খুব তাড়াতাড়ি তার রায় হয়ে যাবে৷ ফাশি নিশ্চিত করতে চায় সে। এজন্য প্রতিদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখছে। ফাশি মওকুফ করতে পারে যে, নিশ্চিত ও করতে পারবে সে।

আনমনে দৃড় কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি করছে সে।
শহর জুড়ে অশুভ ছায়া
শয়তানের নিশ্বাসে দূষিত হাওয়া
ওষ্ঠে বিষাক্ততা, হৃদয়ে বিশ্বাসহীনতা
অবিশ্বাসের ঘন ঘোর আমাবস্যা
অদ্ভুত এক আধারে ঘিরেছে শহর,
হিংস্র নখের থাবা নিয়ে তেড়িয়ে আসছে পিশাচেরা
লাল চোখে রাক্ষস যত, দানবীয় অসুর শত।

তারা আসছে, সমস্ত রূপকথার গল্প থেকে বেড়িয়ে
সত্যের মত নিজেকে জাহির করে।

ছিনিয়ে নিয়ে যাবে প্রেম
বুকের মধ্য থেকে, কবিতার ছন্দ থেকে
প্রেমিকার হৃদয় থেকে, প্রেম পত্র থেকে।

শিয়ালের পাল ছিড়ে খাবে
আগুন ভৎস করে দিবে
বৃষ্টি গলে মুছে সাফ করে
বিষাক্ত সর্প দংশন করবে কেবল প্রেমে
অবিচারে অনাথের মত মরে যাবে প্রেম।

মায়ের দুগ্ধ থেকে শিশু পান করবে বিষাক্ত সিসা কামতুর ঠোটে মিশে যাবে হেমলক বিষের নেশা
প্রেমিকারা হয়ে উঠবে দ্বিরাচারি, প্রেমিকেরা আত্মঘাতী।
যুবক হয়ে উঠবে ক্ষুদার্ত শিকারী
থাকবে না আর কেউ বোন, প্রিয়তমা নারী
উথিত লিঙ্গের কাছে কেবলি মাংস স্বাদ কচি।

প্রেত আসছে-
চারিদিকে প্রতিধ্বনিত হবে হাহাকার, আর্তনাদ।
হৃদয়ের সিন্দুক থেকে চোর চুরি করে নিয়ে যাবে প্রেম,
জুয়ার বাজিতে লুন্ঠিত হবে সেও প্রেম
বাজারে বিকোবে, নিলামে উঠবে।
মনি ঋষি ভিক্ষাতে চাইবে কেবল প্রেম।
প্রলয়ের দিনে দেবতারা আসলে বাচাবে কেবল ধর্ম,
কেউ বাইবেল, কেউ বেদ
কেউ মদীনা, কেউ বুদ্ধা
তারাও লড়বে, নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে।
সকল লোভী পাপী- তাপি
আগলে রাখবে হিরে জহরত, সোনা-দানা।
কেউ বাঁচাবে না প্রেম।
প্রনয়নের সকল চিহ্ন মুছে দিয়ে
থাকবে শুধু রাগ, ক্ষোভ, হিংসা।

ভুলে যাবে সব সৃষ্টির শুরু প্রেম
ধ্বংসের শেষ প্রেমহীনতা।

ছুটে চলেছে শহিদের গাড়ি কাশেম পুর কারাগারের দিকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৫৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কবিতাটা অসাধারণ হয়েছে। প্রেম, দ্রোহ ও বিপ্লব - একসাথে মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাবলীল। কিছু বানান ভুল আছে, এখন আর চিহ্নিত করলাম না ওগুলো, ঘুমাবো।

গল্পটাও অসাধারণ। তবে, আমি বেশ দ্বিধান্বিত। এ গল্পে লেখকের নাম উল্লেখ না থাকলে যে কেউ চোখ বন্ধ করে বলে দেবেন, এটা হুমায়ূন আহমেদের গল্প। গল্পের গাঁথুনি, চরিত্রের বৈশিষ্ট্য - হুমায়ূন আহমেদীয় - এটা একই সাথে আপনার জন্য প্লাস ও মাইনাস পয়েন্ট। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন একজনই। তার মতো লিখতে পারা চাট্টিখানা কথা না। তবে, তার মতো লিখতে লিখতেই একসময় স্বকীয় ধারা সৃষ্টি হবে, অতএব, চিন্তার কারণ নেই।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.