নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চেষ্টাই আছি........
এরপর আর কয়েকদিন আযাযিল কে দেখা গেল না। লিলিথের খাওয়া দাওয়া হারাম হয়ে গেল। দিন যেন কাটতেই চায় না। শুধু ঐ সময়টা যখন লিলিথ আযাযিলের জন্য হোটেলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সেই দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যার সময়টা, কী করে যে এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়! লিলিথ ভেবে পায় না৷ দিন-রাত্রির ব্যবধানে কী করে এমন গড়মিল হল! কে জানে?
এরমধ্যে একদিন সন্ধ্যা করে লিলিথ বাড়ি ফিরলো৷ হোটেলের মেসিয়ার যদিও বলেছিলো- এমন মাঝে মাঝেই করে, তুমি বাড়ি যাও। আসলে আমি খবর দিব। তবুও লিলিথ কীসের টানে, কীসের আশায় যে প্রতিদিন যায়!
আজ সরদারনির ঘর থেকে বেশ হাসি- তামাশার আওয়াজ আসছে৷ হয়তো রঙ্গ রসের আসর বসেছে- এমন প্রতিদিনি বসে। জীবনটাই যাদের সাথে রঙ্গ করেছে তাদের রঙ্গ ছাড়া আর কী আছে। পৃথিবী ভুলাতে নয়, নিজেদের ভুলাতেই তারা অকারণে রঙ্গ করে। জীবনটাই যাদের তামাশা, তারা জীবনের সাথে তামাশা করবে না তো আর কী করবে। লিলিথ সে দিকে পা বাড়ালো না। এসব তার আর ভালো লাগে না। সে হেটে নিজের ঘরের দিকেই যাচ্ছিলো, হটাৎ কোথা থেকে খুকি এসে তার হাত ধরে টান দিলো। বললো- কোথায় গিয়েছিলি সখি?
লিলিথ নিরউত্তর দাঁড়িয়ে রইলো। খুকি লিলিথের কাছে এসে, তাকে কাছে টেনে বললো- আবার, হোটেলে গিয়েছিলি?
লিলিথ তেমনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। হটাৎ কী হল! খুকি বললো- মুখপুড়ি তুই যার জন্য গিয়েছিলি, সে তো মার ঘরে বসে আছে।
লিলিথ কিছুই বুঝতে পারলো না। যেন খুকি কোন ভিন্ন ভাষায় কথা বলছে। যে ভাষা সে জানে না। অথচো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বলছে। লিলিথ অবাক হয়ে খুকির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, বোঝার জন্য। খুকি বুঝতে পেরে বললো- আরে সেই ছোড়াটা, আযাযিল না কী যেন নাম! তুই যার জন্য রোজ হোটেলে যাস, সেই ছোড়াটাকে মা কোথায় থেকে যেন ধরে এনেছে।
লিলিথ এবার সব বুঝতে পারলো। কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না। মনেহচ্ছে সে কোন স্বপ্ন দেখছে। সুন্দর স্বপ্ন নাকি দু:স্বপ্ন সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। খুকি তাকে টানতে টানতে বললো- আয় দেখবি আয়।
খুকি আর লিলিথ ঘরে ঢুকতেই, খুকি বললো- মা দেখো কাকে নিয়ে এসেছি।
সরদারনি মুখ ফিরিয়ে দেখলো- লিলিথ। সে লিলিথের কাছে এসে বললো- কোথায় গিয়েছিলি?
লিলিথ চুপচাপ মুখ নত করে দাঁড়িয়ে রইলো। সে এখনো আযাযিল কে দেখেনি। লিলিথের মুখের দিকে তাকিয়ে সরদারনি সব বুঝলো, বললো- আমারই ভুল হয়েছে, জানাই ছিলো তুই কোথায় থাকবি, তারপরও মনেছিলো না। ভেবেছিলাম এই ক'দিন না পেয়ে তুই হয়তো আর সেদিকে যাস না। লিলিথ তবুও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
পাশ থেকে শান্তা বললো- আহা, সখি আমার না খেয়ে ভেবে ভেবে শুকিয়ে গেল। আর এদিকে নাগরের কোন খবর নাই৷ কী নিঠুর প্রেমিক গো।
সবাই একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো। এই ফাকে লিলিথ এক নজর আযাযিল কে দেখলো। মুখটা শুকিয়ে গেছে। মনেহচ্ছে কেউ সমস্ত মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছে, এমন করুণ। যদিও আযাযিলের মুখে হাল্কা হাসির আভা ছিলো। তবুও লিলিথের মনেহল- না জানি কত কষ্ট পেয়েছে। হটাৎ লিলিথের বুকটা ছ্যাত করে উঠলো, তবে কি এই ক'দিন না খেয়েছিলো! এসব কিছু তার জন্য হয়েছে, সব দোষ তার।
সরদারনি লিলিথের দিকে তাকিয়ে বললো- আজ বেটাকে দাওয়াত করে এনেছি। সেদিক মাংশ খাওয়াতে চেয়েছিলাম, কত কথা শোনালো। তাই আজ আর ছাড়িনি। ধরে নিয়ে এসেছি। যা তো মা, ওর জন্য ভালো করে রান্না কর গিয়ে। আজ দেখবো ওর পেটে কোন রাক্ষস ঢুকেছে। বলেই সে হেসে ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ঘরে আবার হাসির রোল পরে গেল।
এক উদ্ভট হাসির ঝর্ণা বইতে লাগলো সমস্ত ঘরে খিল খিল শব্দে।
বুকের ভেতর তীব্র আনন্দ আজ লিলিথের ও হচ্ছে। চৈত্রের খরায় পুড়া মাটির বুকে নববর্ষার ধারা পড়লে যেমন আনন্দ হয়৷ কই মাছ লাফিয়ে ওঠে পুকুরের বুক থেকে৷
সমস্ত রান্নাবান্না শেষে আযাযিল যখন খেতে বসেছে, চারপাশে সখিদের ভীড় জমে উঠেছে। এমন আনন্দ এই পাড়ায় রোজ হয় কিনা জানি না, তবে এমন হাসির রোল এ পাড়ায় রোজ লেগে থাকে। জীবন যাদের পরিহাস্য করেছে, তারা পৃথিবীকেই সেই পরিহাস্য ফিরিয়ে দেয়। তবে এমনটা দেখা যায় না। চন্দ্রা নামে যে কালো, গজালো দাঁত ওয়ালা হিজরাটা আছে, ৪০/৪৫ বয়স, সে বললো- হায়রে কপাল লো সখি, জীবন যৌবন সবি গেল তবুও কাউকে না খাওয়াতে পারলাম এমন অঙ্গে বসাইয়া। সবাই তীব্র স্বরে হো হো করে হেসে উঠলো।
শান্তা বললো- তোর আর যা কথা সখি, এমন নাগর পাওয়ার জন্য অমন অঙ্গও তো চাই। কথাটা সত্যি, সবাই বুঝলো। তেমনি গোলগাল মুখ, তেমনি দুধেল ফর্সা, তেমনি গড়ন। মেয়ে বলে ভাবলে ভ্রম হয় কিন্তু হিজরা বললেও বিশ্বাস হয় না। কোন নিঁখুত শিল্পির সামান্য ত্রুটি যেন, সে হিজরা। এই আড়তদারই তার পিছনে কীভাবে লেগেছে। কত টাকা সেঁধেছে সরদারনি কে, কিন্তু লিলিথ কিছুতেই রাজি হয় না। দিনের আলোতে যাদের ছোয়া যায় না, অথচো রাতের অন্ধকারে তাদের প্রতি কাম জাগে কীভাবে?
কথাটা শুনে লিলিথ লজ্জায় লাল হয়ে আরষ্ঠ হয়ে রইলো। সরদারনি এসে সবাইকে তারা দিয়ে বললো- যা তা তোরা সব। ছোড়াটাকে ভালোকরে খেতে দে, এখন বিরক্ত করিস না।
না চাইতেও সবাই চলে গেল। লিলিথ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সরদারনি আযাযিল কে বললো- সে দিন তো কত কথা শুনিয়েছিলি। কি আজ তার শোধ নিলাম তো!
আযাযিল কিছু বললো না। সরদারনি লিলিথের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। ভাবটা এমন যে- নে ঘরে এনে দিলাম, এবার আটকে রাখার দায়িত্ব তোর।
লিলিথ সরদারনি ইশারা বুঝতে পেরে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে রইলো। সরদারনি চলে গেল। আযাযিল এক মনে খেয়ে যাচ্ছে৷ কী আজব লোকটা, কোন কিছু চায় না। পাতে কিছু তুলে দিলে নিষেধ ও করে না। ঘরে মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে, লিলিথ তবুও একটা পাতলা খাতা নিয়ে বাতাস করছে। এতে খাবার জুড়াবে, না আযাযিলের ঠান্ডা লাগবে, কে জানে?
©somewhere in net ltd.