নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পিনাকড্রিম

পাগলামী

পিনাকড্রিম

পিনাকড্রিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেওক্রাডাং-এর পথে

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:৪৬

পরিকল্পনা

০৬এপ্রিল,২০০৭, দীর্ঘদিন বা লম্বা সময়ের পরিকল্পনার সফল ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় ম ধু'দার ক্যান্টিনে বসে, বান্দরবান যাচ্ছি এবং বগা লেক আর কেওক্রাডাং আমাদের গন্তব্য।তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে, সে বিষয়গুলো নিয়ে নানা রকম আলোচনা-পর্যালোচনা শেষেএবং কে কে যাবে তার এক সম্ভাব্য তালিকার দায়-দায়িত্ব দেওয়া হলো ফয়সালকে আর সামগ্রিক ট্যুরের দায়িত্ব পেলাম আমি। দিনক্ষণ ঠিক হয় পহেলা বৈশাখ বান্দরবানে উদযাপন করব।কিন্তু আমি বাধ সাধলাম,অফিস আছে আর ছুটির ব্যাপারতো আছেই।আমি বললাম ,আমার ছুটি ১৪ তারিখ থেকে ।টিটোর একই মামলা।আবার শুরু নানা প্যাচাল।কোন সমাধান ছাড়াই মধু'দার আদর মাখা আঙ্গিনা ত্যাগ করি।

প্রথম পর্ব

পরে সিদ্ধান্ত হয় ,যা আমি মোবাইলের মাধ্যমে জানতে পারি,বান্দরবান ট্যুর দুই ধাপে হবে।প্রথম ধাপে অর্থাত ১২/০৪ -এ বান্দরবানর ওনা হবে জাহিদ,মাসুম,সুজন,আমাদের মহল্লার এক ছোট ভাই কিন্তু বন্ধুর মতই চলা ফেরা,আমাকে ভাই সম্বোধন করে,নামটা ঠিক এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না-ও এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে,একজন মেহমান-নাম মনে পড়ছে না আর এ যাত্রার টিম লিডার ফয়সাল।ফয়সাল,মাসুম থেকে যাবে কিন্তু বাকীরা ঢাকা ফিরে আসবে ১৪ তারিখ রাত্রে আর আমি,টিটো,বাবু,বাকীউল ১৪ তারিখ রাতে যাত্রা শুরু করব।ব্যস! সব পাক্কা।

মজার ব্যাপার আমরা ১৪ তারিখ যাত্রা শুরু করলাম এবং কুমিল্লায় ফিরতি দলের সাথে দেখা হয়ে যায়।বেশ জমিয়ে মজা করলাম আর ওদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।

বেশ সকাল সকাল বান্দরবান পৌঁছাই,কেমন বিদেশ বিদেশ লাগছিল।আর্মি চেক,নানা নিয়ম কানুন।যাই হোক মাসুম, ফয়সালের সাথে হোটল রয়েল-এ দেখা হয়।কুশলাদি আর সৌজন্যতা বিনিময়ের পর গা-গোসল সেরে সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে বের হই আপাত শহর গাড ফয়সাল-এর নেত্বৃত্বে।

হোটেল রি সিং সিং.।বেশ ছিমছাম,গোছানো।খাবারটাও মন্দ নয়।খাবার পাট চুকিয়ে বাহিরে এক চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে খোঁজ-খবর করি কীভাবে আমরা বগালেক যাব।প্রায় সবার-ই একই মত।চাঁদের গাড়ী করে যেতে হবে।

দ্বিতীয় পর্ব

অসাধারণ,অনন্য ,অবিস্মরণীয় এক অভিযান ছিল।কেওক্রাডাং চূড়ায় কিছুক্ষণ ও বগালেকে তিন দিন আর বগালেকে পাহাড়ী রাতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

বান্দারবান থেকে চাঁদের গাড়ীতে ৪০ কিমি পাড়ি, ওয়াই জংশন, নৌ পথে সাংগু নদী-দুই ধার উঁচু তার পাহাড়ের সাড়ি,দুই তীরের লা'জওয়াব নান্দনিকতা,পাহাড়ী ললনা দারুণ সময় অবগাহনে ক্লান্তিহীন পাহাড়ী নদীর পাড় ঘেষে রুমা বাজার।

ঘাটে নৌকা ভিড়ল,তখন বেলা কম-বেশী সাড়ে চারটা বাজে।তাড়াহুড়া না করে একে একে সবাই নেমে পড়ি।ভাড়ার পাট চুকিয়ে ওখানেই সিদ্ধান্ত নেই আগে খাবার তারপর কোন হোটেলে উঠবো দেখা যাবে।ঘাটালার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে রুমা বাজারের মাটিতে পা রাখি।তারপর বাজারে বেশ ভেতরে নিজেরাই খাবার হোটেল খুঁজে নেই।পাশাপাশি তিন-চারটা।পছন্দমত একটাতে ঢুঁ-মারি একদম অন্দর মহল মানে রসি ঘর পর্যন্ত।পছন্দমত মেনু বেছেই খাবার পালা চুকিয়ে নেই।এর ঠিক আগ মুহূর্তেই অবশ্য আমার আর বাকীউলের মধ্যে খাবার বাছাই নিয়ে ছোটখাট এক মিষ্টমধুর কথা কাটাকাটি হয়ে যায়,যা ছিল আসলেই অনাকাংখিত।

সাবলীল স্মৃতিচারণ-পাহাড়ী সাংগুতে ঘন্টা ধরে শরীরের সমস্ত অবসাদ-পাপ ধূঁয়ে পরিশুদ্ধ।কী! এক অবর্নণীয় অভিজ্ঞতা...মাঝ রাত অব্ধি নদীর ঘাটলায় নাচ-গান,দর্শকের কমতি ছিলনা মোটেও!বাবর নামে এক স্থানীয় আসিফ ভক্তর পাল্লাতে আমার ছোট "ভাই- বন্ধু"- সফর সঙ্গী টিটো,টিটো গুরু সম্মানে ভূষিত -ওর সঙ্গে গীটার ছিল,গাইতে পারে,তাছাড়া ও ছায়ানটের তালিম নেওয়া একজন।

তারপর রুমে ফেরা,বের হয়ে রাতের পেট পূজা সেরে নেওয়া।খাবার হোটেলেই কথার ফুল ঝুরি।বাদশা নামে একজনের সাথে পরিচয়।আলমগীর নামে একজন বলল,ও গাইড সভাপতি।

বাবরের পাল্লায় পড়ে আবার নদীর ঘাটে।কিছু বিক্ষিপ্ত গান।

ঘরে ফেরা,এসেই একটি গান লিখে ফেলি বান্দরবান উৎসবের উপর অথচ তখনো বগালেক আর কেওক্রাডাং অদেখাই রয়ে গেছে।কিন্তু কী! আশ্চর্য বাস্তব আর কল্পনার কোন ফারাক পাইনি যখন চক্ষু মেলিয়া দেখিয়া পুলকিত হইয়াছিলাম!

এবং টিটো সঙ্গে সঙ্গে সুর করে ফেলে...

দারুণ কিছু সময় কাটালাম লেখা গানের সুরে সুরে সাথে কিছু ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং আগামীকাল সকালে বগালেক যাবার প্রত্যাশায় আপাতত শুভরাত্রি...





**বান্দরবান**

-প্রিন্স এ ওয়াকী

১৬/০৪/২০০৭



বান্দরবান

স্বপ্নের বান্দরবান

পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মেলা

মনে দেয় যে দোলা।।



চিম্বুকে চড়ে

নীলগীরি ঘুরে

সাংরাই উৎসবে

চলে জল কেলী

সাঙ্গু নদীতে।।



চাঁদের গাড়ীতে

পাহাড়ী পথে

ঝর্নার গানে গানে

রুমা হয়ে বগাতে

আকাশের মেলাতে।।



দার্জিলিং পাড়াতে

পায়ে পায়ে উঁচুতে

ছুয়ে ছুয়ে দেখা

(স্বপ্নের) কেওক্রাডাং-এ

সাধের ইচ্ছাতে।।



তৃতীয় পর্ব

১৭/০৪/২০০৭

বেশ সকাল সকাল প্রায় ০৬৩০-এ বিছানা ছেড়ে সকলকে ঘুম থেকে ডেকে উঠাই।বাবু,ফয়সাল আগেই উঠেছে দেখলাম।

প্রত্যেকে গোসল সেরে,সঙ্গে থাকা টোস্টে (কয়লা ) সকালের পেট পূজা সেরে,হোটেলের লেনা-দেনা চুকিয়ে চাঁদের গাড়ীর স্ট্যান্ডে চলে আসি।গাড়ীর সাথে কথা হয়।রুমা থেকে বগালেক পর্যন্ত মাথা পিছু ১০০ টাকা করে।

তারপর আমি,ফয়সাল আর মাসুম আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্টিং এর জন্য চলে যাই।ওখানে যেয়ে জানতে পারি গাইড বাধ্যতামূলক নিতে হবে এবং প্রত্যেককেই স্বশরীরে উপস্থিত হতে হবে।ডিউটি টেবিলে যে ছিলেন,উনি বগালেক ক্যাম্পে ওয়্যারলেস সেটে সব ইনফরমেশন শেয়ার করে এবং প্রত্যকের আইডেন্টিটি চেক করে যাবার অনুমতি দিলেন।আরও বলে দিলেন, যেন বগালেকে যেয়ে ওখানকার ক্যাম্পে রিপোর্ট করি।

রেফাত নামে ১৫-১৬ বছরের এক কিশোর গাইড নির্বাচিত হয়।ক্যাম্পেও দেখলাম ও বেশ পরিচিত।

যাইহোক সব ফর্মালিটিস সেরে বেরিয়ে আসি ক্যাম্প থেকে।

কলা কিনে নেই ডজন চারেক।বাকীউলের কথামত আর ও কিছু ম্যাচ ও মোমবাতি কিনে নেই।ও খুবই সচেতন এ সব ব্যাপারে,বেশী বেশী থাকলে দোষ কী?

রুমা বাজারের বগা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়েই প্রত্যেকে কলাগুলো গিলে নেই, কেনা অবধি কারো তর সইছিল না।তারপর মুখে মুখে শোনা ঐতিহ্যবাহী চাঁদের গাড়ীতে উঠে বসি।

যাত্রা হলো শুরু বগালেকের উদ্দেশ্যে।নানা চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের কোল ঘেসে,বুক চিরে,ইটে বিছানো রাস্তা,কখনো বিপজ্জনক ঢাল বেয়ে ওঠা,কখনো ৬০ বা ৬৫ ডিগ্রী ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া।ওহ! সে এক অন্য রকম বুকে ভয় ধরানো অভিজ্ঞতা।তবে সবুজের ছিল বড়ই অভাব।আর জুম চাষের উদ্দ্যশ্যে পাহাড়ের ঢালে ঢালে আগুন জ্বালিয়ে জমি তৈরী।বড় বড় গাছ পর্যন্ত পুড়ে কয়লা।আর ছিল বাঁশঝাড়।তবে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর থ্রিল রোডটুকু গাড়ী বেয়ে ওঠাটা ছিল অন্য রকম অনুভূতির।৭৫-৮০ ডিগ্রী ঢাল বেয়ে! কী বলব,জানটা ছিল হাতের মুঠোয়।একবার যদি কোন কারণে গাড়ীর স্টার্ট থেমে যেত,তাহলে কী যে হতো,এখনো ভাবনায় পেয়ে বসলে গা শিউরে ওঠে।

পরে জেনেছি স্থানীয় একজন প্রভাবশলী ব্যক্তিত্ব নিজের ব্যবসা আর তার এলাকার অধিবাসীর ভাবনায় রাস্তাটা তৈরী করেছেন রুমা বাজার এলাকার বাহির সীমানা হতে কম বেশী দার্জিলীং পাড়া পর্যন্ত।রাস্তার নামটা তার নামেই পরিচিতি পেয়েছে, ''জুয়েল বমের'' রাস্তা।

ভয়ংকর রাস্তাটুকু মানে ভয়ংকর ঢালটা জয় করার পরেই চোখে পড়ে বগালেক!

অপূর্ব এক দৃশ্য!পাহাড়ের খাঁজে স্বচ্ছ পানির বিশাল এক জলাধার(পরে জেনেছি,লোকালয়ের পানির চাহিদা,সেই সাথে মাছের চাহিদাও মেটায় বগালেক)।অভূতপূর্ব,মায়াময় রৌদ্রজ্জ্বল বগালেক,স্বচ্ছ পানির ভেতর উঁচু সবুজ পাহাড় আর সুবিশাল নীল আকাশের প্রতিবিম্ব,নিঃশ্চুপ-নিস্তব্ধ চারপাশ।সৃষ্টিকর্তার অসাধারণ শীল্প -অস্ফুটে বলে উঠি,আলহামদুলিল্লাহ!

সঙ্গের সাথীদের চোখে মুখে ভাবালুতার ওঠা নামা।

কী!এক ভাল লাগা।

এবং এক সময় বগালেক পাড়ায় এসে গাড়ী থামে।মোবাইল ঘড়িতে চোখ রাখি,প্রায় ১১ টা।সব্বাই হাত-পা নেড়ে চেড়ে দেখে নিয়ে গাড়ী থেকে বগালেক মাটিতে পা ফেলি।নির্মল বিশুদ্ধ বাতাসে বুক চিতিয়ে নাক ফুলিয়ে অক্সিজেন টেনে নেই বুকের একদম গহীন গভীরে।কেমন এক ভাললাগায় মনটা ভরে ওঠে।আমার কাছে প্রথম দেখাতেই প্রেম।কিছু নেই,এক ঘর-দুই ঘর বম জাতির বাস অথচ তারপরও ভাল লেগে যায়।মনে মনে পুলক জাগে।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৫৩

লেখোয়াড় বলেছেন:
আপনার ভ্রমণ আনন্দময় হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.