![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের বাড়িটা ছিল শহর থেকে এক্টু ভেতরে। বেশ বড় বাড়ি।সামনে ফুলের বাগান করেছিলাম,আমি আর বাবা মিলে। আমি ফুল ভালবাসতাম তাই বাবা অনেক গুলো ফুল গাছের চারা লাগিয়েছিলেন।খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাগানে চলে যেতাম।ফুলের যে এত প্রশান্তি তা আর কোথাও মেলা ভার।
বিন্তি আমার আদরের ছোট বোন।আমি ওকে সারাজীবন আগলে রেখেছি,নাহ ঠিক বলিনি,আসলে যতদিন ওকে আমি কাছে পেয়েছি ততদিন।বেশ মানত সে আমায়।আমার বিয়ের পরও যখন মন চেয়েছে আমি ছুটে গেছি ওকে দেখতে।অপুও কখনো মানা করেনি।
অপু আর আমার পরিচয় লাইব্রেরিতে।এক বছরের বোঝাপড়ার পর বিয়ে করি আমরা। আমাদের মানসিকতা একরকম ছিল,তাই দুজন দুজন কে চিন্তে বেশি সময় লাগেনি।কিন্তু অপুকেও আমি বেশিদিন কাছে পাইনি;যেটুকু সময় পেয়েছি তা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।বাবার মত অপু আমাকে বাগান করে দিতে পারেনি কারন আমারা শহরে থাকতাম। ছোট একটা ফ্ল্যাটএ।তবে রোজ অপু আমাকে যারবেরা ফুল কিনে দিতো।যারবেরা আমার প্রিয় ফুল গুলোর মাঝে একটি।যেন এক রাশ প্রশান্তি!
আমি আমার পুরো জীবনটাই আমার মত করে কাটিয়েছি।
গণ্ডিটাকে বেশ ছোট রেখেছিলাম।কিন্তু মানুষগুলো ছিল অসাধারন ।
মুখশধারী মানুষ আমার বরাবরই অপছন্দের ছিল।আমি ছিলাম কিছুটা স্বাধীনচেতা ।তাইত আমার কোন সন্তান ছিল না। সন্তান প্রতিটি দম্পতিরই আরাধ্য; আমরা ছিলাম ব্যতিক্রম।মানুষ কতকিছু বুঝিয়েছে আমাদের।কান দেইনি।সন্তানের ব্যপারে আমার মতামত ছিল ভিন্ন।একটা নতুন জীবন কে পৃথিবীতে নিয়ে আশার সাথে যে অন্তর্নিহিত দায়িত্ব থাকে আমি নিজেকে তা পালনে অক্ষম মনে করতাম।আমার এই চিন্তাকে অপু কখনই তিরস্কার করেনি।হয়তবা সংসারের শান্তি বজায় রাখতেই কিছু বলেনি।ও খুব ভালবাসতো আমায়।
বিন্তির এখন ৩ সন্তান। খুব ভালো আছে ও।বিন্তি ছিল সংসারি মেয়ে।একদম আমার বিপরীত।
আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম প্রতিটী মানুষকে নিয়েই ঈশ্বরের একটা পরিকল্পনা থাকে।এই পরিকল্পনার প্রয়োগ ঈশ্বর করে থাকেন সেই নির্দিষ্ট মানুষটির জীবনে তার কাজের মাধ্যমে। যেমন আমি। আমি পশুপাখি আর ফুল খুব ভালোবাসি। ভালবাসি নিজের স্বাধীনতা।জীবনে কখনো আপোষ করিনি কিংবা করতে হয়নি।কেবল ঈশ্বর চেয়েছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। আমি নির্দ্বিধায় ভাগ্যবতী।
বিন্তি এখনো আমাকে ফুল দিয়ে যায়। যারবেরা নয়তো ওয়াইল্ড সান ফ্লাওয়ার। পৃথিবীতে আমার চোখে দেখা সুন্দরতম ফুল। তবুও কষ্ট হয়।কেননা আমি বিন্তিকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেতে পারিনা। চিৎকার করে বিন্তি নাম ধরে ডেকে বেড়াতে পারিনা।
বেশ কিছুদিন হয় অপু আমাকে দেখতে আসেনা। আর বোধকরি আসবেও না।
মা আমাকে বুকে আগলে ধরে।মা বলে প্রথম প্রথম এখানে যারা আসে তাদের এরকম কষ্ট হয়,ধীরে ধীরে সব সয়ে যাবে। বাবা অনেক কিছু বুঝায়। কিন্তু আমি অবুঝ।আছহা আমার যদি একটা সন্তান থাকত তবে কি আমি ওকে ছেড়ে এভাবে থাকতে পারতাম??অপু কি আমার মত আদর দিয়ে ওকে আগলে রাখত??হয়তবা না।
ঈশ্বর আমার গল্পের উপসংহার আগেই লিখে রেখেছিলেন।
©somewhere in net ltd.