নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেষ্টা !!!

চলো এগিয়ে যাই

মেগা বাইট

পথের শেষে পদ্ম ফুল

মেগা বাইট › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুইসাপের লেজের কেরামতি

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:০৪

বাগানের নিচে মাঠটিতে ছয়টি রাজহাঁস হেঁটে হেঁটে ঘাস খাচ্ছে। ফাল্গুন মাসের ফুরফুরে বিকেল। গুইসাপ দম্পতি হেলেদুলে একেবারে রাজকীয় চালে বাগান থেকে নামল মাঠে, লক্ষ্য ওদের মোল্লাবাড়ির পুকুর। পানিতে নেমে যদি মাছ, ব্যাঙ, জলসাপ পাওয়া যায় তো বিকেলের নাশতাটা খাসা হবে।

কিন্তু খোলায় বেরোতেই ছোট পাখিদের ভয়ার্ত কিচিরমিচির শুরু হলো। ওদিকের ডোবার পাড়ে দাঁড়িয়ে পাতিহাঁসের দল ত্রাহি ত্রাহি চিৎকারে পাড়া মাথায় তুলতে লাগল। রাজহাঁসগুলো অবাক কৌতূহলে লম্বা গ্রীবা বাঁকিয়ে দেখছে প্রাণী দুটিকে। তারাও চেঁচাচ্ছে চরাচর কাঁপিয়ে।

না, গুইসাপ দম্পতির কোনো ভাবান্তর নেই। চষা খেতের ওপর দিয়ে নির্ভয়ে এগোচ্ছে। মুখখানিতে যেন মিটিমিটি হাসি ওদের। তাই দেখেই বোধ হয় তরুণ একটা আনাড়ি রাজহাঁস পিছু নিল ওদের, ঠোকর দেবে লেজে। যেই না বেচারা গেছে একটি গুইসাপের লেজের আওতায়, অমনি চাবুকের মতো লেজের প্রচণ্ড আঘাতে ধরাশায়ী হলো রাজহাঁসটি। তারপর উঠেই দেয় দৌড় উল্টো দিকে। হ্যাঁ, গুইসাপের লেজে কেরামতি আছে বটে! চাবুকের মতো সপাং সপাং চালাতে পারে লেজ। ওই লেজ-চাবুকের আঘাতে বাঘা বাঘা কুকুরও কুপোকাত হয়। মানুষের গায়ে ওই চাবুক পড়লে গা যে অবশ হয়ে যায়, তার প্রমাণ আমি নিজে। জুতসই আঘাতে মানুষের গায়ের চামড়া ছুলে যায়—অনেক সময় ঘা-ও হয়ে যায়।

গুইসাপের লেজ যে কী জিনিস, তা অন্য বন্য প্রাণীরা ভালোভাবেই জানে। আবার দুটি গুইসাপ যখন লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তখন দুটি দুদিকে ফিরে সমানে লেজ তরবারির মতো চালাতে থাকে। তা এক দেখার মতো যুদ্ধ বটে।

যে গুইসাপটির কথা আজ আমি বলছি, সেটি আমার নিত্যপ্রতিবেশী। শৈশব-কৈশোরে আমাদের এলাকায় গুইসাপ ছিল প্রচুর। এখন সংখ্যায় কমে গেছে। তিন প্রজাতির গুইসাপই বাল্য-কৈশোরে আমার গ্রাম বাগেরহাটের ফকিরহাটে ছিল, আজও দেখা মেলে। যেটির কথা বলছি আজ, সেটি বেশ বহালতবিয়তে আছে। উঠোন ও আশপাশে টহল দিয়ে বেড়ায়। সুযোগ পেলে গৃহস্থের হাঁস-মুরগির খুপরিতে ঢুকে টপাটপ পাঁচ-সাতটি ডিম বা হাঁস-মুরগির পিচ্চি ছানা গোট কতক মুখে ভরেই দে ছুট। পোষা কুকুর ওদের ঘাঁটাতে সাহস পায় না—ওই লেজ-চাবুকের আতঙ্কে।

এরা দুর্দান্ত সাহসী, জল-স্থল-বৃক্ষে চলতে সমান পারদর্শী। তুখোড় দৌড়বিদ ও বুদ্ধিমান এই গুইসাপটির ইংরেজি নাম Grdy lizard বা Bengal Monitor বৈজ্ঞানিক নাম Varanus bergalensis. শুধু শরীরের মাপ ১৭৫ সেন্টিমিটার লেজটি ১০০ সেন্টিমিটার। দিবাচর। পানিরতলায় ডুব দিয়ে থাকতে পারে দীর্ঘ সময়। বড় গাছের মাথায় চড়তে পারে। বিষধর সাপ লেজ ধরে গাছে আছড়ে মেরে ফেলে ।

প্রিয় আশ্রয়স্থল বন-বাগানের ভেতরের মাটির গর্ত, গোরস্থানের পুরোনো কবরের ভেতরটা, ইটের পাঁজা, ঘন ঝোপঝাড়ের তলা ইত্যাদি। খাদ্য তালিকায় আছে: মাছ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি ও পাখির ছানা, কাঁকড়া অঞ্জন ইত্যাদি। বয়স বেশি হলে বুদ্ধি বাড়ে—বাড়ে কৌশল, একেবারে ‘ঘড়েল’ হয়ে যায়। এ রকম ঘড়েল গুইসাপ পানিতে ডুব দিয়ে এগিয়ে সাঁতার কাটতে থাকা হাঁস ও হাঁসের ছানাসহ অন্যান্য পানিতে ভাসা পাখি ধরে দেয় ডুব। শিকার না মরা পর্যন্ত ডুব দিয়েই থাকে। পরে ডাঙায় উঠে খায়। এরা অনেক সময় গরু-ছাগলের মড়াও খায়। লম্বা জিভ বের করে উইপোকাসহ অন্যান্য পোকা খায়। ২৫-৩০টি ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফোটে আট-দশ মাস পর। ছোট বাচ্চা দেখতে খুব সুন্দর। উপকারী এই প্রাণীটি মানুষ ও পরিবেশের মহাবন্ধু। এরা যে তল্লাটে চরে, সে তল্লাটে বিষধর সাপ থাকে না। এ জন্যই মানুষ এদের ভালোবাসে। এরাও নির্ভয়ে ঘুরে মানুষের আশপাশে—বন্ধু যেন হতে চায় মানুষের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.