নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

[email protected]

পি মুন্সী

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য সকলকে স্বাগতম। কোন পুরানো পোষ্টেও নির্দ্বিধায় মন্তব্য করতে পারেন; সাড়া পাবেন।

পি মুন্সী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষমতা ও রাষ্ট্র: ক্ষমতার উৎস, ন্যায্যতা ও কনষ্টিটিউশন

০২ রা জুন, ২০০৮ রাত ২:১৪

ক্ষমতা ও রাষ্ট্র নিয়ে কিছু ভাবনা আলোচনার সূত্রপাত ঘটাতে চাই। আগ্রহীদের অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত হতে আশা রাখি।



রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠন নিয়ে আমাদের অনেকের মাথায় ভালোমানুষি কল্পনায় অনেক আজগুবি ধারণা আছে জানি; তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠন প্রসঙ্গে একটা মৌলিক ধারণা নিয়ে কথা শুরু করবো। রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠনের মানে হলো ঐ রাষ্ট্রসীমার বাইরে বাকি সবই তার শত্রু রাষ্ট্র; তবে সকলেই মূলত শত্রু রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে আবার কেউ একটু কম বা কেউ একটু বেশী শত্রু- ভাবাপন্ন। একথাটাকে অনেক সময় কূটনৈতিক ভাষায় উল্টোভাবে বলা হয় বন্ধু রাষ্ট্র (অর্থাৎ মূলত কম-শত্রু রাষ্ট্র); যেটা আবার নির্ধারণের ভিত্তি হলো নিজ রাষ্ট্রের কোন স্বার্থ প্রসঙ্গে তা অন্য বা অন্য রাষ্ট্রের সাথে কতটুকু সাধারণ বা একই স্বার্থ - এই অর্থে। জন্মের পর থেকে ১৯৭৬ সালের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশকে চীন স্বীকার করতে পারেনি। আজ চীন বন্ধু রাষ্ট্র (অর্থাৎ মূলত কম-শত্রু রাষ্ট্র)।একারণে আমরা আবার কেউ কারো চিরকালীন বন্ধু রাষ্ট্র বলে কিছু দেখতে পাই না। আমাদের অনেকের শুনতে ভালো না লাগলেও তাই, রাষ্ট্র মানে শত্রু মিত্রের ভেদাভেদ ও ভেদজ্ঞান।

অন্যদিকে, আভ্যন্তরীণভাবে গাঠনিক দিক থেকে দেখলে রাষ্ট্রের গাঠনিক উপাদান নাগরিক। নাগরিকেরা ইচছা আকাঙ্খায় সম্মিলিত হয়ে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করে, জন্ম দেয়। আলাপ আলোচনা করে কীসের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট হলো তা লিপিবদ্ধ করলে ঐ লিপির নাম হয় কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র)। এভাবে প্রাতিষ্ঠানিকতা পাওয়া শুরু হয় রাষ্ট্র ধারণার। ঐ রাষ্ট্র নাগরিকের কী কী স্বার্থের মৌলিক দিক সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কনষ্টিটিউট (গঠন) হলো তাই কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) এর বিষয়। রাষ্ট্র ধারণা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) এর সীমার মধ্যে আরো বিধিবিধান তৈরীর জন্য সংসদ, বিচারালয় ও কাজকর্ম নির্বাহের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য সরকার ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান নাগরিক স্বার্থের মৌলিক দিক সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেই কেবল তৈরী হতে পারে।

আলোচনার সুবিধা নেবার জন্য এতক্ষণ ভদ্রলোকি ভালমানুষি ভাব নিয়ে রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠন প্রসঙ্গ উপস্হাপন করলেও গঠনকালের আগে ও পরের সবসময় বলপ্রয়োগ বা সবল-ক্ষমতার বিষয় অর্থাৎ ক্ষমতার ধারণা রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে ক্ষমতা ও রাষ্ট্র এদুটোর মধ্যে সবল-ক্ষমতা আগে থাকলে পরে রাষ্ট্র সম্ভব। অর্থাৎ, রাষ্ট্র বা এর কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) থেকে সবল-ক্ষমতা উৎসারিত হয় না। আগে সবল-ক্ষমতা অর্জিত থাকলেই কেবল নাগরিকেরা ইচছা আকাঙ্খায় সম্মিলিত হয়ে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করতে সক্ষম হবে। নইলে ক্ষমতাহীনভাবে কেবল নাগরিকদের ইচছা আকাঙ্খায় সম্মিলিত হলেই রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করতে সক্ষম হবে না। করতে দিবে না। কে দিবে না? এই প্রশ্নটা মাথায় রেখে একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা পরিস্কার করবো। ১৯৭০ সালের নির্বাচন। সবার গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করে বলছি, নজর করতে হবে - নির্বাচন মানেই সংসদ নির্বাচন নয়; ওটা সংসদ নির্বাচনও ছিল না, ছিল গণপরিষদ(Constitute Assembly) নির্বাচন। অর্থাৎ অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র পুনর্গঠনের (re-constitute) লক্ষ্যে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করার সভায় (গণপরিষদ) কারা সদস্য হিসাবে নাগরিকদের ইচছা আকাঙ্খার প্রতিনিধিত্ত্ব করবেন - সেই প্রতিনিধি কে হবেন তা নির্বাচন করা। সাধারণভাবে বললে গণপরিষদের কাজ ও উদ্দেশ্য হলো, নির্বাচিত গণপরিষদ প্রতিনিধিদের (আবার মনে করিয়ে দেই, এরা সংসদ সদস্য নন) সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে। এর উদ্যেশ্য ও কাজ হবে গণপরিষদ সভা আহ্বান করা যাতে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠন সংক্রান্ত আকার দেবার জন্য নির্বাচিত গণপরিষদ প্রতিনিধিরা ঐ সভায় জমায়েত হয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) এর মৌলিক দলিল কনষ্টিটিউশনে (গঠনতন্ত্রে) তা লিপিবদ্ধ ও সভায় গৃহীত হয়ে গেলে গণপরিষদ তার দায়িত্ত্ব শেষ করে বিলুপ্ত হবে। ওদিকে গণপরিষদ প্রতিনিধিত্ত্বকারী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন গৃহীত কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) অনুসরণ করে এর অধীনে এবার সংসদ নির্বাচন আহ্বান করবে। নির্বাচন সম্পন্ন হলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রথম সভায় (জাতীয় সংসদ) গৃহীত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজের দায়িত্ত্ব শেষ করে বিলুপ্ত হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, উদ্দেশ্যের দিক থেকে গণপরিষদ নির্বাচন ডাকা আর সংসদ নির্বাচন ডাকা এক নয়। এছাড়া, গণপরিষদ সভা একবারই বসে, মৌলিক দলিল কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) রচনা ও গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়েই এর আয়ুকাল শেষ হয়। সাধারণভাবে তাই, সংসদ সদস্য নির্বাচন বা সংসদ নির্বাচন ডাকা বা দাবী করা মানে যেখানে ধরে নেয়া হয়েছে একটা কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) আগে থেকে আছে যেই কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) এর অধীনে ও সীমার মধ্যে আরও নির্বাহী বিধিবিধান ও পরিচালনের জন্য জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচন। আশা করি পরিস্কার করা গেল, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্য গণপরিষদ নির্বাচন। এখন প্রশ্ন হলো, ইতোমধ্যে উপস্হিত পাকিস্হান রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েও ইয়াহিয়া খান কেন অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র পুনর্গঠনের (re-constitute) লক্ষ্যে গণপরিষদ নির্বাচন দিতে রাজি হয়েছিলেন? তাও আবার মুখের কথা নয়, একদম সাফ-কবলা, রীতিমত প্রেসিডেন্টের ডিক্রি (এটাই LFO বা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার নামে পরিচিত) জারি করে রাজি হয়েছিলেন। এর উত্তরের মধ্য দিয়ে বুঝতে পারবো এটা আর রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) এর নয়, ক্ষমতার প্রশ্ন; সবল-ক্ষমতার কাছে হেরে গিয়েছিলেন ইয়াহিয়া খানের পূর্বসূরি আইয়ুব খান। ১৯৬৯ এর গণআভ্যুত্থান এতটুকু সবল-ক্ষমতা তৈরী করতে পেরেছিল। আইয়ুব খান ক্ষমতার হার স্বীকার করেছিলেন। তাঁর পদত্যাগের প্রতীকী অর্থ ক্ষমতার হার স্বীকার। ইয়াহিয়া খানের কাছে সাময়িক ক্ষমতা দিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন যাতে তিনি আবির্ভূত সবল-ক্ষমতার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতি কী হবে সেই মুসাবিদা (LFO বা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার ) তৈরী করেন। এটাই নাগরিকেরা ইচছা আকাঙ্খায় সম্মিলিত হয়ে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করতে যাওয়ার আগে গণআন্দোলনে তৈরী সবল-ক্ষমতা । আগে সবল-ক্ষমতা পরে রাষ্ট্র। তাই ক্ষমতা রাষ্ট্রের আগে এবং বাইরের বিষয়। কনষ্টিটিউশন (গঠনতন্ত্র) থেকে সবল-ক্ষমতা উৎসারিত হয় না।

এর পরেও অনেকে একটা বেকুব ধরণের কূটতর্ক করেন। বিশেষ করে মাওবাদীদের নেপালের গণপরিষদের নির্বাচনে বিজয় (এটাকে এখনও চ্যানেল আইসহ অনেক মিডিয়া সংসদ নির্বাচন বলে রিপোর্ট করে যাচ্ছে। পাঠকেরা বিচার করবেন, এটা মতলবি কাজ না নিউজ এডিটরের ক্ষমার অযোগ্য অজ্ঞতা) ও ক্ষমতার দারপ্রান্তে পৌছানো দেখে ব্যালট ও বুলেট বিষয়ক কূটতর্কে একটু শান দিয়ে নিতেই এই মতলবি-তর্ক জমানোর চেষ্টা করছেন বোঝা যায়। কলকাতার দেশ পত্রিকাও মে মাসের প্রথম সপ্তাহ সংখ্যায় ভারতীয় মাওবাদীদের ভয়ে বোধকরি এই মতলবি-তর্ক তুলেছে। দাবী করেছে, নেপালে মাওবাদীরা নিজেদের তত্ত্ব সশস্ত্র বল প্রয়োগের ক্ষমতার অসারতা প্রমাণ করে গণপরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জয়লাভ করেছে। বাংলাদেশেও এধরণের তর্ক মাঝে মাঝে উঠেছে। যদিও এখানে বুলেট বলতে অর্থ একটু ভিন্ন; সামরিক শাসন বা সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বিএনপির দল গঠন ও ক্ষমতায় যাওয়া বুঝানো হয়, আর ব্যলট বলতে বুঝানো হয় সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচন। তো এই বেকুবি কূটতর্কের গোড়ার গলদে যাওয়ার আগে তর্কের বিষয়টা একবার স্পষ্ট করে নেই। সবল-ক্ষমতা আগে তৈরী ছাড়া রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) সম্ভব কী না, বা এককথায় ক্ষমতা রাষ্ট্রের (কনষ্টিটিউট বা গঠনের) বাইরের ও আগের বিষয় কী না? উত্তর হলো হ্যাঁ, আগের ও বাইরের বিষয়। বাইরের মাওবাদী নেপালের উদাহরণে যাব না, অনেককে খামোখা ভয় দেখানো আমার উদ্যেশ্য নয়, তাই। দেশের উদাহরণ দিব, পাঠককে বেশী আগ্রহী করবে বলে। প্রশ্ন হলো, ১৯৭০ এর গণপরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র পুনর্গঠনের (re-constitute) ক্ষমতা লাভ করতে পেরেছিলাম কী? সবাই জানি উত্তর হলো না, উল্টা ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা মনে হলে আমরা শিউরে উঠি। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের সবল-ক্ষমতা আমাদের গণপরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া পর্যন্ত পৌছে দিতে এতটুকুই করতে পেরেছিল। আগে উল্লেখ করেছিলাম, ক্ষমতাহীনভাবে কেবল নাগরিকদের ইচছা আকাঙ্খায় সম্মিলিত হলেই তাঁরা রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করতে সক্ষম হবে না। করতে দিবে না। পাকিস্তানী নিপীড়ক রাষ্ট্রের অত্যাচারী শাসকের বলপ্রয়োগের ক্ষমতার বিরুদ্ধে পাল্টা সশস্ত্র বলপ্রয়োগ করে আমাদের সবল-ক্ষমতা অর্জন করতে হয়েছিল। তবেই আমরা আমাদের ইচছা আকাঙ্খার সঙ্কল্পে সম্মিলিত হয়ে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তবে অবধারিতভাবে তা আর পাকিস্তানি নষ্ট-রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের (re-constitute) দায় কাঁধে নিয়ে নয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন)। তবে কোন ত্রুটির কারণে বারবার আমাদের বর্তমান রাষ্ট্র নাগরিকের স্বার্থের মৌলিক দিক সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নিজের বিলুপ্তি বা অপারগতা প্রকাশ করছে সে আলোচনা অন্য কোথাও করবো। এখানে যেটা গুরুত্ত্বপূর্ণ পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা ছাড়া রাষ্ট্র আবার কনষ্টিটিউট(গঠন) আমরা করতে পারি নাই। নাগরিকেরা ইচছা আকাঙ্খায় সম্মিলিত হয়ে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) করতে যাওয়ার আগে এবং বাইরে পাল্টা এই সবল-ক্ষমতা গণআন্দোলনের ভিতর দিয়ে সশস্ত্রতায় তৈরী হয়।

লক্ষ্যণীয় যে জিয়াউর রহমান, এরশাদ বা চলতি ১/১১ সরকার ঐ বাইরের সশস্ত্র ক্ষমতার বলপ্রয়োগ দিয়েই তো নিজেকে ক্ষমতাসীন করেছে। এরপর নিজেকে কনষ্টিটিউট (গঠন) করেছে কনষ্টিটিউশনে (গঠনতন্ত্রে) নিজের ইচ্ছামত সাংবিধানিক সংশোধনীতে। যা আবার জনগণের বিচার দৃষ্টিতে তো বটেই, জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রে, সাংবিধানিক আইনী বিচারে আদালতেও তা অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। তবু মূল কথার ব্যতিক্রম ঘটেনি তাতে; বাইরের সশস্ত্র ক্ষমতার বলপ্রয়োগ দিয়ে কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেকে ক্ষমতাসীন করে, এরপর ঐ ক্ষমতা নিজেকে কনষ্টিটিউট (গঠন) করে কনষ্টিটিউশনে (গঠনতন্ত্রে)। এখন তাহলে প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্রের বাইরে উপস্হিত এই ক্ষমতার ন্যায্যতা বা বৈধতা সংগৃহীত হবে কোথা থেকে? কীসের ভিত্তিতে তা নির্ধারিত হবে? আমরাই বা কোন ধরণের বলপ্রয়োগের পক্ষে থাকতে পারি? আগে উল্লেখ করেছিলাম রাষ্ট্রের বাইরে পাল্টা এই সবল-ক্ষমতা গণআন্দোলনের ভিতর দিয়ে সশস্ত্রতায় তৈরী হয়, এর প্রকাশ গণঅভ্যুত্থানে বা '৭১ এর মত গণযুদ্ধে। মূল লক্ষণ হলো, গণ অর্থাৎ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর বা গরীব জনগণের সমর্থন ঐ ক্ষমতার পক্ষে থাকতে হবে। এমন হতে দেখা যায়, পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা আর তাতে গরীব জনগণের সমর্থন একই সাথে ঘটেছে বা তৈরী হয়েছে। (নেপালে মাওবাদীদের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছিল চলতি নির্বাচনের বহু আগেই। সর্বশেষ শহুরে গণআন্দোলন ঘটতে যা বাধ্য করেছিল, ছাপ রেখেছিল। নির্বাচনের ভিতর দিয়ে এটা কতখানি সংগঠিত তার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটলো মাত্র।)। অন্যদিকে আবার এও দেখা গেছে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা তৈরী হয়েছে বটে কিন্তু দ্রুত গরীব জনগণের পক্ষে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে তাঁদের সমর্থন আদায় করে নিয়েছে বা সামরিক অভ্যুত্থানের ক্ষমতার গণভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে পেরেছে। মিসরের নাসেরের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছিল। অর্থাৎ কথা দাঁড়াচ্ছে গরীব জনগণের পক্ষে রাজনৈতিক পদক্ষেপের উপর। রাজনৈতিক পদক্ষেপ - মানে এটা কেবল ঝান্ডার মামলা নয়। দলের নামের সাথে 'বিপ্লবী', 'মাওবাদী', 'সমাজতান্ত্রিক', 'কমিউনিষ্ট', 'আওয়ামী (জনগণের)' লাগিয়ে রাখা অথবা দলীয় পতাকার রং লাল অথবা খুবই সুন্দর একটা দলীয় গণমুখী মেনিফ্যেষ্টো -- এগুলোর কোনটা দিয়েই নির্ধারিত হবে না শেষবিচারে দলটা কী ছিল বা হতে পেরেছিল। যেকোন ক্ষমতার নেয়া ব্যবহারিক রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলোই নির্ধারণ করে সে কাদের পক্ষের ক্ষমতা। এবং একবারই নয় বারবার প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ও কর্মসূচীতে প্রমাণ রাখতে হবে এই ক্ষমতা গরীব খেটেখাওয়া মানুষের। গরীব জনগণও যেন অনুভব করতে পারে এই ক্ষমতা তার তরফে প্রয়োগ হচ্ছে। এটাই যেকোন পাল্টা বলপ্রয়োগ ক্ষমতার ন্যায্যতার বা বৈধতার ভিত্তি। নয় বছর ধরে বলপ্রয়োগ আসা ক্ষমতা নিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন কিন্তু ক্ষমতার আয়ুকালের মধ্যে তাঁর ক্ষমতার ন্যায্যতার বা বৈধতার তিনি প্রতিষ্ঠা করতে বা অভিষেক ঘটাতে পারেন নি। চলতি ১/১১ এর সরকারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য; ন্যায্যতার বা বৈধতার সংকটের মধ্য দিয়ে এর দিন কাটছে।

নাগরিকের স্বার্থের মৌলিক দিক সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র কনষ্টিটিউট (গঠন) হ্য়, এটাই কনষ্টিটিউশনের (গঠনতন্ত্রের) মৌলিক বিষয়। রাষ্ট্র সার্বভৌম নাগরিকের সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় এই অর্থে সার্বভৌম রাষ্ট্র নিজেকে যেকোন হামলা বা বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে তার ভৌগলিক সীমানা (territorial integrity ) সংহত রাখা ও সার্বভৌমত্ত্ব (sovereignty) রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতিসংঘও দাঁড়িয়েছে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো পরপস্পরের (territorial integrity ) সংহত রাখা ও সার্বভৌমত্ত্ব (sovereignty) রক্ষা করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে। পরাশক্তির পক্ষে কাজ করতে বা কোন চাপের মুখে বলপ্রয়োগের ক্ষমতা এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে ঐ ক্ষমতার আর নিজের ন্যায্যতা বা বৈধতা পাওয়ার নূন্যতম কারণটাও নাই হয়ে যায়।

আজ এপর্যন্ত। পরবর্তীতে এই সূত্রে অন্যদিকে যাবো।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-১

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০০৮ রাত ২:৩৪

নবাব সিরাজউদ্দৌলা বলেছেন:
আমার মাউসের ষ্ক্রল এমনিতেই নষ্ট।
মাইনাস।

০৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:১৭

পি মুন্সী বলেছেন: নবাব সিরাজউদ্দৌলা বলেছেন:
আমার মাউসের ষ্ক্রল এমনিতেই নষ্ট।
মনে হচ্ছে এবিষয়ে আপনার মাউসের ষ্ক্রল নষ্ট। সবার সব বিষয়ে আগ্রহ থাকে না, এটাই স্বাভাবিক। তবু ভবিষ্যতে আপনাকেও অর্ন্তভুক্ত কীভাবে করা সে খেয়াল করবো।

২| ০২ রা জুন, ২০০৮ রাত ২:৪১

আশরাফ মাহমুদ বলেছেন: ভালো লেখা। +
তবে কিছু কিছু অংশ আরো বিশ্লেষিত হলে ভালো হত। এবং তথ্যসূত্র দেয়া উচিত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তারপরও এলেখা অসাধারণ।

০৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:৩৫

পি মুন্সী বলেছেন: আশবাফ বলেছেন: ভালো লেখা। +
তবে কিছু কিছু অংশ আরো বিশ্লেষিত হলে ভালো হত। এবং তথ্যসূত্র দেয়া উচিত।......।

কোথায় কোথায় আরও বিশ্লেষিত হলে ভালো হতে উল্লেখ করলে আমি আবার চেষ্টা করবো।

তথ্য সূত্র প্রসঙ্গে: আমি এমন কোন তথ্য দেই নাই যার সূত্র উল্লেখ দরকার মনে হয়েছিল। তবু এপ্রজন্মের সমস্যা আমি বুঝতে পারি। বাংলা একাডেমীর ১৫ খন্ডে "স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল" যেটা আবার পুন:প্রকাশের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়েছে হাক্কানী পাবলিশার্স - ওটা দেখতে পারেন।
আপনার আগ্রহের প্রশংসা করি।

৩| ০২ রা জুন, ২০০৮ ভোর ৫:২৮

পলাশ রহমান বলেছেন: সুন্দর লিখা।

৪| ০৩ রা জুন, ২০০৮ সকাল ১১:২০

মুসতাইন জহির বলেছেন: খুব দরকারি বিষয়ে পরিচ্ছন্ন বিশ্লেষণ সম্পন্ন একটি পোস্ট। ধন্যবাদ।

কিছু বিষয়ে আলোচনা সামনে এগুলে কথা তোলা যেতে পারে। পয়লা ইতিাসের নজির থেকেকে বলি, পাকিস্তানের গণপরিষদ নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে ছিলেনতাদের কাজ রাষ্ট্র পর্নগঠন তবে তা ঐ রাষ্ট্রের সংহতি ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে করতেই তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু জাতীয় গণযুদ্ধের মাধ্যমে যে জনগোষ্ঠী নিজেদের আলাদা করার ঘোষণা দিয়েছিল তারা তখনই ঐ অঙ্গীকার থেকে রেরিয়ে এসেছে। কিন্তু ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারে পক্ষে যে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়া হয় তাতে পাকিস্তানের জন্য নির্বাচিত গণপরিষদের সদস্যদের বাংলাদেশের ( তখনও স্বাধীন হয়নি) সংবিধান প্রণয়নের জন্র নির্বাচিত সদস্য বলে গ্রহণ করা হয়। শুধু তাই নয় ঘোষনাপত্রে উল্লেখ করা হয় ''আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত...'' বলে। এটা তো হতে পারে না। নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ-এর অস্তিত্ব ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমরা কার্যত( de fecto) স্বাধীন বলে গণ্য হলেও আইনত(de jure) স্বাধীন হইনি। এর নানান রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক মুশকিলেন কথা বাদ দিলেও শুধু একটাদিক নোক্তা হিশেবে তুললে বুঝা যেতে পারে গলতিটার প্রকৃতি কত মারাত্মক। যেহেতু যুদ্ধ শেষ হবার আগেই এবং পাকিস্তানের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিশেবে নির্বাচিতদের সকলকে 'বৈধ' গণপরিষদ সদস্য বলে ঘোষনা করা হয়েছিল পরে যুদ্ধ শেষ হলে দেখা যায় প্রায় ৩২ জন পাকিস্তানের প্রতি তখনও অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র অনুযায়ী তারা আইনত নতুন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকারি। যার জন্য পরে আরো একটি অর্ডিন্যন্সি দিয়ে তাদেরকে দালাল আখায়িত করে বাদ দেওয়া হয়। বা আইনের ভাষায় তাদের সদস্য-পদ শূণ্য ঘোষনা করা হয়। কিনতু মূল ঘোষনাপত্রের কোন হেরফের হয়নি।

পরে আপনার বিশ্লেষণের একটি প্রসঙ্গ ''তাই ক্ষমতা রাষ্ট্রের আগে এবং বাইরের বিষয়''-- এই নিয়ে কথা বলার কোশেশ করবো, কারণ ক্ষমতাকে রাষেট্রর বাইরের বিষয় বলার মধ্যে একটা বিপদ আছে বলে আমি মান্য করি।

০৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১:৩৩

পি মুন্সী বলেছেন: জহীরকে ধন্যবাদ। ওর ইঙ্গিত স্পষ্ট করতে নিচের মন্তব্য।

ক্ষমতা রাষ্ট্রের আগে এবং বাইরের বিষয় - বলাতে, বিশেষত "আগে এবং বাইরে" বলাতে অনেকের কাছে অস্পষ্ট লাগতে পারে - একথা শুনেছি। এটা স্পষ্ট করার জন্য বলছি - "আগে এবং বাইরে" মানে রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠনের আগে ও এর গঠনতন্ত্রের বাইরে এর উৎস - এটা রাজনৈতিক ক্ষমতা বা শ্রেণী ক্ষমতা। জনগণের রাজনৈতিক আন্দোলন, লড়াই সংগ্রামের ভিতর দিয়ে যা "জনগণের সার্বজনীন ইচ্ছা" রূপে, রাষ্ট্র গঠনে রূপলাভ করে। চরিত্রের দিক থেকে এই ক্ষমতা রাজনৈতিক, আর এই রাজনৈতিক ক্ষমতাই রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠন উৎস। রাষ্ট্রের গণপ্রজাতন্ত্রী উৎস।
বিপরীতে, রাষ্ট্রের জন্ম ও গঠনের পর এর গঠনতন্ত্র ('সংবিধান') রাষ্ট্র নিজেকে ("জনগণের সার্বজনীন ইচ্ছা") সংরক্ষণ পরিচালনের ক্ষমতা দেয়। এই ক্ষমতা আইনী, রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র ('সংবিধান') যে আইনী ক্ষমতার উৎস।
ক্ষমতাকে আমরা যেন 'রাজনৈতিক' ও 'আইনী' এভাবে দুই অর্থে বুঝতে ও এই ফারাক স্পষ্ট রাখতে পারি - একথা মনে রেখে ক্ষমতা বলতে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে আমি রাষ্ট্রের "আগে এবং বাইরে" বলেছি।

৫| ০৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১:৩৭

সুন্দরম বলেছেন:

হাচা কতা কইচেন। আপনেরে পেলাস

১৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:০৩

পি মুন্সী বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৬| ১৭ ই জুন, ২০০৮ ভোর ৬:৩৩

দিনমজুর বলেছেন:
একটানে পড়লাম, পরে আরেকবার পড়তে হবে...

১৮ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:০৫

পি মুন্সী বলেছেন: দিনমজুর আরেকবার পড়ে আরও ভালোমন্দ কিছু লিখবেন আশা করে বসে রইলাম।

৭| ০৫ ই মে, ২০১০ ভোর ৪:৩৯

যমজজীবন বলেছেন: ভালো লাগলো। আপনার বয়ান ভঙ্গির ভিতর আমি একটা ভালো লাগা পাই।

০৫ ই মে, ২০১০ ভোর ৫:৪৮

পি মুন্সী বলেছেন: প্রায় দুই বছর পর আপনি এই মন্তব্য লিখেছেন। আমিও সেই সূত্রে দেখতে এলাম কী লিখেছিলাম। মনে হলো, অনেক কথাই রেখে ঢেকে লিখেছিলাম।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.