![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি লেখক শহরের কোলাহল ছেড়ে যতটুকু পারা যায় গ্রাম আর প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান। বিকেলে মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে শৈশবে ফিরে যাওয়া, সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁপোকার দল বুকে নিয়ে এক টুকরো নীরবতা খুঁজে পাওয়া — এ যেন তার নতুন জীবনের ছোট ছোট জয়। আজকের দুনিয়ার অস্থিরতা আর যুদ্ধের গন্ধের ভেতরেও তিনি স্বপ্ন দেখেন গ্রামের শান্ত আকাশ আর মাটির ঘ্রাণে ভিজে থাকার। শহরের ব্যস্ত দালান থেকে পালিয়ে মাটির কাছে ফেরার এ চেষ্টাই তার সবচেয়ে বড় আরাধ্য।
চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বাণিজ্য ও প্রাণবন্ত সংস্কৃতির এক অপার সম্ভাবনাময় নগরী। এখানকার জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সেই সমৃদ্ধির এক স্বপ্নদায়ক পরিচায়ক। পাহাড়ী অঞ্চলের নানা আদিবাসী ও জনজাতির জীবনধারা জানতে, দেখার সুযোগ এখানে পাওয়া যায়। আচ্ছাদিত আছে চাক, মুরং, হাজং, খুমি, কোচ, দালু, বিভিন্ন উপজাতির নিদর্শন, কৌশল, পোশাক এবং নিজেদের নিজস্ব কৃষ্টির প্রতিচ্ছবি। তবে দর্শনার্থীদের সাধারণ ধারণার বাইরে গিয়ে, ছোটুদের স্কুল-শিক্ষকদের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম তৈরির মাধ্যমে এ জাদুঘর জাতীয় ঐতিহ্য ও তার বহুমাত্রিকতার মধ্য দিয়ে অনন্য সামাজিক শিক্ষা দিতে পারে।
স্থানীয় টিকেট ব্যবস্থা (বাংলাদেশির জন্য মাত্র ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের সুলভ মূল্য) এবং ঢাকার বাহিরেও এশিয়ার অন্যতম এই ধরণের জাদুঘর হওয়ার ইতিহাস—১৯৬৫ সালে পাকিস্তানি প্রশাসনের অধীনে নির্মাণ শুরু, এবং ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হস্তে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পরে—এই সবই চট্টগ্রামকে ঐতিহাসিক ও শিক্ষামূলক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বড় ধরনের সম্প্রসারণ, নতুন গ্যালারির যুক্তি হলেও, বর্তমানে জানা যায় প্রশাসনিক ও কারিগরি দুর্বলতার কারণে এর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সৃষ্টিশীল প্রচার, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দর্শকদের জন্য নির্ধারিত কার্যক্রমের অভাবে জাদুঘরের জনপ্রিয়তা সীমাবদ্ধ।
এখন সময় এসেছে—ইউরোপের রিলায়েবল ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মত সংগঠিত উদ্যোগে স্থানীয় পর্যটন প্রচারণার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর, গবেষণামূলক প্রকাশনা ও অনলাইন উপস্থাপনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সঠিক পরিচিতি তৈরির। সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এটি হতে পারে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জাতি-সত্যের আদর্শ কেন্দ্র, যা শুধু চট্টগ্রামের জন্য না, সমগ্র বাংলাদেশকে নতুন দৃষ্টান্তের পথ দেখাবে।
অবস্থান ও প্রারম্ভিক ইতিহাস
স্থান – পাঠানতলা মক্কা, বাদাম আলীর মোড়ের উত্তরে, চট্টগ্রামের পরিতৃপ্ত অঞ্চল। প্রতিষ্ঠা – ১৯৬৫ সালে ‘সেন্ট্রাল ইথনোলজিক্যাল মিউজিয়াম অব পাকিস্তান’ নামে শুরু, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদনে এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত হয়। প্রারম্ভে এটি ছিল ছোট একটি কাঠামো; ১৯৭৮ ও ১৯৮৫ সালে পর্যায়ক্রমে চার কক্ষ ও দুইটি গ্যালারির সংযোজনের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি-তাত্ত্বিক সংগ্রহশালা হিসেবে।
ইকোনোমিক অ্যাক্সেস ও দর্শক সুবিধা
-বাংলাদেশী নাগরিক: মাত্র ২০ টাকায় প্রবেশ
-শিক্ষার্থী (মাধ্যমিক পর্যন্ত): ৫ টাকা
-৫ বছরের নিচে শিশু ও প্রতিবন্ধীর জন্য প্রবেশ ফ্রি
-সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা; বিদেশীদের জন্য ২০০ টাকা
এই মূল্যে যেতে গেলে খুবই স্বল্প বাজেটে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ভ্রমণ হয়ে ওঠে, যা চট্টগ্রামে অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন।
সংগ্রহ ও প্রদর্শনী
জাদুঘরের প্রদর্শনী বিভাগে রয়েছে:
-ঘরের বায়নিকা – নিগ্রয়েড, ককেশয়েড, মঙ্গোলয়েড, অস্ট্র্যালয়েড — চারটি মানবজাতিগত শাখা
-চাক, মুরং, হাজং, খুমি, কোচ, দালু, মান্দাই, বোনা, কুকী, সাঁওত্ বাবুবলী, ওরা পালিয়া সহ বাংলাদেশের অন্তত ১২টি আদিবাসী ও নৃগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও ঐতিহ্য
-উন্নত তুলনামূলক বিভাগ – এশিয়ার অন্যান্য দেশের সংগ্রহ সহ উপস্থাপনা
এইসব আসবাবপত্র, পোশাক, জীবন-শৈলী ও ঐতিহাসিক সভ্যতা তুলে ধরে একটি বহুমাত্রিক ও মানবিক দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ দেয়।
বর্তমান অবস্থা‑সমস্যা
১-জনবল শঙ্কা – ১.৩২ একর ভূমির উপর স্থাপিত অফিসে ৩২ জন কর্মীর মধ্যে ১২টি পদ শূন্য; পর্যাপ্ত স্টাফ না থাকা জাদুঘরের কাজে বড় বাধা।
২-অঞ্চলিক সংযোগ ও প্রচারণা – অনলাইনে আধুনিক উপস্থাপন ও প্রচারের ঘাটতি; অনেকেই এর অস্তিত্ব জানে না।
৩-প্রযুক্তিগত দুর্বলতা – ট্যাব, অডিও গাইড, ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিসপ্লে ইত্যাদির অভাবে দর্শকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই।
৪-নির্বাহী ঝুঁকি – টিকিটিং ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক অসঙ্গতি।
সম্ভাবনা এবং অগ্রণীয় উদ্যোগ
-স্থাপত্য ও ডিজাইন আধুনিকীকরণ: তথ্য উপস্থাপন, গঠনশৈলী আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শক্তিশালী করা।
-ট্যুরি-শিক্ষামূলক কার্যক্রম: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকদের জন্য বিশেষ আয়োজন — ওয়ার্কশপ, গাইডেড ট্যুর, প্রদর্শনী।
-আন্তর্জাতিক সংযোগ: এশিয়ার অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক সংগঠনের সাথে বিনিময়মূলক কার্যক্রম, গবেষণা ও সংস্কৃতিক সংযোগ।
-বেসরকারি সহযোগিতা: কর্পোরেট স্পন্সরশিপ, সিএসআর প্রোগ্রামগুলো দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত রোলআউট।
-অনলাইন ডাটাবেস ও আইটি সমাধান: ওয়েবসাইট, ভার্চুয়াল ভ্রমণ, অডিও গাইড, ই-রিসার্চ রিসোর্স সংগ্ৰহ।
উপসংহার
“চট্টগ্রাম জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর” — এটি শুধু একটি ভৌগোলিক বিন্দু নয়, এটি বাংলাদেশের বহুজাতি ঐতিহ্যের জীবন্ত রূপ। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন, রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ দেশ-বিদেশে পরিচিতি দিতে পারে। তবে সত্যিকারের বিকাশ তখনই হবে যখন যথাযথ অর্থ, জনবল, প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মনোযোগ দিয়ে এটিকে একটি আধুনিক সাংস্কৃতিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে — দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থী, পর্যটক, গবেষক ও সংস্কৃতি প্রিয় মানুষের জন্য এটি হতে পারে এক অনন্য শিক্ষার মঞ্চ। চট্টগ্রামের, বাংলাদেশের আর বিশ্বের জনমনে জায়গা করে নিতে হলে সময় এসেছে — চট্টগ্রাম জাতীয়তাত্ত্বিক জাদুঘরকে একটি উচ্চমানের নূতন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার।
সময় এসেছে জাদুঘরের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীল উদ্যোগের। এটি আমাদের সবকটি সংস্থার – শিক্ষা, সংস্কৃতি, বেসরকারি খাত ও সাধারণ নাগরিকদের — যৌথ দায়িত্ব!
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৭
সাফায়েতুল ইসলাম বলেছেন: গুরুত্বপূর্ন মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, লেখাটিতে সময় করে আরও কিছু ছবি যুক্ত করে দেওয়া হবে।
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:২৮
নীল প্রজাপ্রতি বলেছেন: আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বেশ কয়েকবার। শুভেচ্ছা থাকলো।
২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩২
সাফায়েতুল ইসলাম বলেছেন: আমার মায়ের সাথে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি মূলত বাসা থেকে হাটতে বেরিয়েছিলেন আমাকে নিয়ে। তাও বেশ অনেক দিন আগের কথা। পরবর্তীতে ভার্সিটি থেকে যাদুঘরটির উপর ফিচার লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সুবাদে বিষয়টি নিয়ে লেখা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৬
পুলহ বলেছেন: একেবারেই জানতাম না এটি সম্পর্কে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এ সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরার জন্য। তবে জাদুঘরের আরো কিছু ছবি দেখতে পারলে, আরো ভালো লাগতো।
শুভকামনা জানবেন ভাই।