![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি লেখক শহরের কোলাহল ছেড়ে যতটুকু পারা যায় গ্রাম আর প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান। বিকেলে মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে শৈশবে ফিরে যাওয়া, সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁপোকার দল বুকে নিয়ে এক টুকরো নীরবতা খুঁজে পাওয়া — এ যেন তার নতুন জীবনের ছোট ছোট জয়। আজকের দুনিয়ার অস্থিরতা আর যুদ্ধের গন্ধের ভেতরেও তিনি স্বপ্ন দেখেন গ্রামের শান্ত আকাশ আর মাটির ঘ্রাণে ভিজে থাকার। শহরের ব্যস্ত দালান থেকে পালিয়ে মাটির কাছে ফেরার এ চেষ্টাই তার সবচেয়ে বড় আরাধ্য।
মানুষের চিত্ত-সন্ততি ও পুনর্জন্ম: বাস্তবতা না কি ভাববাদ?
মানুষের মন ও হৃদয় — যা আমরা এককথায় “চিত্ত” বলে থাকি — তার অন্তর্গত গুণাবলি কেবলমাত্র এই জন্মে তৈরি হয় না, বরং অনেক দর্শনের মতে, এটি পূর্বজন্মের অভিজ্ঞতা ও কর্মফলের ধারাবাহিকতা বহন করে। "চিত্ত-সন্ততি" শব্দযুগলটি বোঝায়, আত্মা ও তার ধারাবাহিক মানসিক গঠন — যা একটি জীবন থেকে অন্য জীবনে সঞ্চারিত হয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, চিন্তাধারা ও প্রবৃত্তি সবই পূর্বজন্মের অভিজ্ঞতার ফল।
চলচ্চিত্রের ভাষায় পুনর্জন্ম: “জাতিস্মর”-এর আবেগ
জাতিস্মর (২০১৪) নামক বাংলা চলচ্চিত্রটি এই বিষয়ে অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি নামে একজন কবিয়াল, যার পূর্বজন্মের স্মৃতি ঘিরে তৈরি হয় কুশল হাজরা নামক এক লাইব্রেরিয়ানের বর্তমান জীবন সংকট। পুরনো স্মৃতির সাথে নতুন জীবনের সংঘর্ষে কীভাবে এক ব্যক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে — চলচ্চিত্রটি সেটিই বর্ণনা করে। এই সিনেমা আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় যে, পুনর্জন্ম শুধু একটি কাল্পনিক বিষয় নয়, বরং অনেকের জীবনে অনুভূতির জায়গায় বাস্তব হয়ে ধরা দেয়। বহু বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে মানুষ দাবি করেছে, তারা তাদের পূর্বজন্মের কথা মনে করতে পারে — এমনকি পূর্বজন্মে ব্যবহৃত বস্তু, স্থান বা ব্যক্তিকে চিনতেও পারে। তবে এ সব দাবির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দুর্লভ। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা স্মৃতিভ্রান্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
তবে ইসলামের অবস্থান কী?
এখন, এই বিতর্ক ও বিশ্বাসের মাঝে একটি প্রশ্ন মাথা তোলে —ইসলাম পুনর্জন্মকে কীভাবে দেখে? ইসলাম স্পষ্টভাবে পুনর্জন্ম (Reincarnation) বা আত্মার বারবার দেহ ধারণকে অস্বীকার করে। ইসলামে মানবজীবনের চক্র মাত্র একবার — জন্ম, মৃত্যু, কবর, পুনরুত্থান (Resurrection), বিচার (Judgement Day), এবং তারপর চিরস্থায়ী অবস্থান — জান্নাত বা জাহান্নাম।
“প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, এবং কেয়ামতের দিনে তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।”
— (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
এখানে "পূর্ণ প্রতিদান" বলতে বোঝানো হয়েছে, এই জীবনই একমাত্র সুযোগ, যার ভিত্তিতে চূড়ান্ত বিচার হবে।
এই একটি জীবনেই সৎকর্ম, ইবাদত ও চরিত্র গঠন করে অনন্ত জীবনের অবস্থান নির্ধারিত হয়।
পুনর্জন্ম বনাম কিয়ামত: এক মৌলিক পার্থক্য
যেখানে পুনর্জন্মে বিশ্বাসীরা মনে করেন আত্মা বারবার ফিরে আসে শিক্ষা নিতে বা কষ্ট পোহাতে —ইসলামে কিয়ামতের দিন একবারই সবাইকে পুনরায় জীবিত করা হবে, জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণের উদ্দেশ্যে। এবং সেই বিচার হবে আল্লাহর সম্পূর্ণ জ্ঞান, ন্যায়বিচার ও করুণা অনুযায়ী।
পুনর্জন্ম: ধর্ম, দর্শন ও যুক্তির আলোকে একটি মধ্যপথীয় বিশ্লেষণ
পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ বলতে বোঝানো হয়—এক জীবনের মৃত্যু পরবর্তীতে আত্মার অন্য দেহে প্রবেশ করে নতুন জীবন শুরু করার চক্র। এটি কেবল একটি বিশ্বাস নয়; বরং বহু ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত একটি অস্তিত্ববাদী ব্যাখ্যা। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মে পুনর্জন্মের ধারণাটি শুধু গ্রহণযোগ্যই নয়—এটি আধ্যাত্মিক মুক্তির পথে একটি অবিচ্ছেদ্য ধাপ হিসেবে বিবেচিত। এইসব ধর্মে আত্মাকে নিত্য ও অবিনশ্বর রূপে দেখা হয়। আত্মা বারবার জন্ম নেয়, এবং পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী তার পরবর্তী জীবনের কাঠামো নির্ধারিত হয়। যতক্ষণ না আত্মা মোক্ষ (মুক্তি) লাভ করে, ততক্ষণ এই জন্ম-মৃত্যুর চক্র (সংসার চক্র) অব্যাহত থাকে।
জন্মান্তর ও মোক্ষ: ধারাবাহিকতার দার্শনিক ভিত্তি
এই দর্শনের মূল বক্তব্য হচ্ছে, আত্মা অবিনশ্বর হলেও তার পরবর্তী গন্তব্য তার পূর্বজন্মের কর্মফল দ্বারা নির্ধারিত হয়। কেউ যদি কোনো জন্মে তীব্র পাপ করে, তবে পরবর্তী জন্মে তাকে হয়তো কষ্ট, রোগ বা নিম্নজীবে জন্ম নিয়ে তা ভোগ করতে হবে। অপরদিকে, যদি কেউ ন্যায়নীতি ও ধর্মমতে জীবন যাপন করে, তবে সে উন্নত জীবনে জন্ম নিতে পারে অথবা মোক্ষলাভ করতে পারে। এখানে একটি আকর্ষণীয় বিষয় হল—এই জীবন কেবল একটি "কার্য-ফলীয় পরিণতি", পূর্বজন্মের ফলের বাস্তবায়ন এবং পরবর্তী ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। ফলে, প্রতিটি জন্ম যেন একদিকে ‘পরকাল’, আবার অপরদিকে ভবিষ্যতের পূর্বকাল। এই রূপান্তরের চক্রকে বলা হয় সামসারিক পথযাত্রা।
পুনর্জন্ম বিশ্বাস: ধর্মীয় বৈচিত্র্য ও সম্প্রসারণ
ইসলাম পুনর্জন্মের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে (এই প্রসঙ্গ আমরা পরবর্তী অংশে তুলব), তবে হিন্দু, বৌদ্ধ বা জৈন ধর্ম ছাড়াও পুনর্জন্মের একটি অদৃশ্য ছায়া ইহুদিতেও লক্ষ করা যায়। কিছু কাব্বালিস্ট (ইহুদি মিস্টিক) পুনর্জন্মের ধারনাকে আত্মিক বিশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এছাড়া প্রাচীন গ্রিক দর্শনের (বিশেষত প্লেটো ও পিথাগোরাস) লেখায়ও আত্মার বহুবারের গমনাগমন নিয়ে আলোচনা রয়েছে। পুনর্জন্মের এমন একটি দিক রয়েছে, যা আত্মা ও মহাশক্তির মধ্যে যোগাযোগ ঘটাতে চায়। আত্মা যেন প্রতিটি জীবনের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে একপ্রকার জ্ঞানতাত্ত্বিক পূর্ণতায় পৌঁছায়।
বৈজ্ঞানিক অবস্থান ও মনস্তাত্ত্বিক প্রতিচ্ছবি
এখন প্রশ্ন আসে — এই বিশ্বাসের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কোথায়? এখনও পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান পুনর্জন্মের কোনো দৃঢ় প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তবে বিশ্বের নানা প্রান্তে কিছু শিশুর পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে রাখার ঘটনা, এবং নির্দিষ্ট স্থান বা মানুষের সাথে সংযোগ অনুভব করার নজির একধরনের মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রসিক্রুশিয়ান চিন্তায় বলা হয়, মৃত্যুর ঠিক পরপরই আত্মা লাইফ রিভিউ অর্থাৎ পূর্বজীবনের একপ্রকার নিরপেক্ষ চিত্রায়ন দেখতে পায় — যা প্রায়ই আলোড়ন সৃষ্টিকারী অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরা দেয়। অনেক Near Death Experience (NDE) প্রাপ্ত মানুষও এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। যদিও এগুলো সরাসরি পুনর্জন্মের প্রমাণ নয়, তবে এগুলোর উপস্থিতি আত্মার অব্যাহত অস্তিত্বের প্রতি এক ধরণের ইঙ্গিত দেয়।
সাহিত্য ও সংস্কৃতির দর্পণে পুনর্জন্ম
বাঙালি সাহিত্যেও পুনর্জন্ম এক বহুল চর্চিত বিষয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দেবযান’ উপন্যাসে আত্মার ‘অপেক্ষা’ ও ‘যাত্রা’ খুব সূক্ষ্মভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। মৃত্যুর পর প্রেতযোনিতে গমন এবং পরবর্তী জন্মের জন্য অপেক্ষা — এই ধারা বৌদ্ধ চিন্তাকে অনুরণিত করে। এছাড়া শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহু রচনায় আত্মা ও পূর্বজন্ম নিয়ে ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। পশ্চিমা সাহিত্যে The Reincarnation of Peter Proud, Cloud Atlas কিংবা Many Lives, Many Masters ইত্যাদি বই পুনর্জন্মকে সাহিত্য ও মনস্তত্ত্বের স্তরে বিশ্লেষণ করে।
আত্মার অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নের শৃঙ্খলা
ধারণাটি আরও বলে যে, আত্মা প্রথমদিকে পার্থিব সুখের প্রতি আকৃষ্ট হয় — যা তাকে প্রাথমিক পর্যায়ের জন্মগুলোতে ঠেলে দেয়। কিন্তু একসময় তার মধ্যে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির সূচনা হয়, আত্মা ধীরে ধীরে "কামনা-মুক্তি" লাভ করে এবং মুক্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সমস্ত জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে আত্মা কিছু স্মৃতি ও অনুভূতি নিজের মধ্যে বহন করে, যা তার পরবর্তী জন্মের চারিত্রিক গঠন নির্ধারণ করে। এভাবেই আত্মা নিজেকে শুদ্ধ করে, জ্ঞান লাভ করে এবং এক সময় মোক্ষ বা মুক্তি অর্জন করে।
আত্মা, স্মৃতি ও মোক্ষ: পুনর্জন্ম বনাম আখিরাত দর্শনের দ্বৈতপথ
অনেক দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক চিন্তাবিদ মনে করেন, সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই মহাজগতের যাবতীয় স্মৃতি প্রতিটি জীবের দেহে বা চেতনায় সঞ্চিত হয়ে রয়েছে। এই ধারণাকে বলা হয় "সামষ্টিক স্মৃতির প্রবাহ" বা Universal Memory Bank। এর থেকে আত্ম-উপলব্ধি অর্জন করাই মোক্ষের দিকে যাত্রা। এই আত্মোপলব্ধিই একপ্রকার উচ্চতর চেতনার প্রকাশ, যা আধ্যাত্মিকতাকে সংজ্ঞায়িত করে। অনেক ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে, মানবজন্মে পৌঁছানোর পূর্বে আত্মাকে অসংখ্য যোনিতে (জীবের প্রকারে) জন্ম নিতে হয় — উদ্ভিদ, পাখি, পশু, কীটপতঙ্গ এমনকি অতিমনস্ক অস্তিত্বেও। এই যাত্রাই তাকে পরিশুদ্ধ করে, এবং মানবজন্মে সে ‘পরিপক্ব আত্মা’ হিসেবে জন্ম নেয়।
ভবিষ্যতের শরীর ও চেতনার যোগসূত্র
অভ্যাস ও চিন্তার ধারা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের চেতনায় রূপ নেয়, এবং সেই চেতনা ভবিষ্যতের জন্য একপ্রকার মানসিক মানচিত্র তৈরি করে। এর ফলে, জন্মান্তরের ধারায় আত্মা এমন একটি শরীর ধারণ করে, যা সেই অভ্যাস ও অভিপ্রায়ের উপযুক্ত বাহক হয়ে ওঠে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে, জন্ম ও আত্মার শরীরগ্রহণ একটি ন্যায়নিষ্ঠ প্রক্রিয়ার প্রতিফলন — পূর্বজন্মের অভ্যাসই ভবিষ্যতের গন্তব্যকে রূপ দেয়।
ইসলাম পুনর্জন্ম বিষয়ে কী বলে?
এবার আসা যাক ইসলামের অবস্থানের দিকে, যেখানে পুনর্জন্ম বিষয়টি একেবারেই ভিন্নভাবে দেখা হয়। ইসলাম পুনর্জন্মের (Reincarnation) ধারণাকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে। কারণ, ইসলাম অনুযায়ী মানুষের জীবন একটি মাত্র সুযোগ — মৃত্যুর পরে আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসার কোনো স্থান বা সম্ভাবনা নেই। একজন ব্যক্তি মারা গেলে তার আত্মা বারযাখ নামক একটি মধ্যবর্তী জগতে প্রবেশ করে, যেখানে তাকে কবরের আজাব অথবা শান্তি প্রদান করা হয়, তার পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী। এরপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা পুনরায় প্রতিটি মানুষকে দেহসহ জীবিত করবেন। সকলের আমল (কর্ম) পর্যালোচনা করা হবে, এবং তার ভিত্তিতে জান্নাত বা জাহান্নামের সিদ্ধান্ত হবে। এটাই ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘চূড়ান্ত বিচার’ (Final Judgment)। এটি একমাত্রিক, পরিণামমূলক এবং অপূনরাবৃত্ত — অর্থাৎ একবারই হবে এবং অনন্ত ফল বহন করবে।
পুনর্জন্ম বিশ্বাসের বিপরীতে ইসলামের মৌলিকতা
যদি কেউ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন, তাহলে কিয়ামতের প্রয়োজনই পড়ে না। কারণ, পাপ ও পুণ্যের ফল তো সে আগেই পৃথিবীতেই পাচ্ছে — এক জন্মে শাস্তি, আরেক জন্মে পুরস্কার। এমন পরিস্থিতিতে জান্নাত, জাহান্নাম, হাশর, পুলসিরাত, আখিরাত — সব ধারণাই অনর্থক হয়ে পড়ে। এই আক্বিদা বা বিশ্বাস ইসলামী দর্শনের মৌলিক কাঠামোর সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে। এ কারণেই পুনর্জন্মের বিশ্বাসকে ইসলামবিরোধী আক্বিদা হিসেবে গণ্য করা হয় এবং যে ব্যক্তি এই ধারণা পোষণ করে সে ঈমান হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পুনর্জন্ম
বিজ্ঞান পুনর্জন্মের কোন সরাসরি প্রমাণ এখনো উপস্থাপন করতে পারেনি। তবে কিছু গবেষণাপত্র ও প্রামাণ্য ঘটনার আলোকে কিছু মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা সামনে এসেছে — বিশেষ করে ছোট শিশুদের মুখে পূর্বজন্মের স্মৃতির কথা এবং পূর্ব-পরিচিত জায়গা ও মানুষের প্রতি আকর্ষণ। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ববিদ ড. ইয়ান স্টিভেনসন পুনর্জন্ম নিয়ে হাজারের বেশি ঘটনা সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্যে অনেক কেসে শিশুদের দেওয়া তথ্য বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। তবে এসবই অনির্ভরযোগ্য বা পুনরায় প্রমাণ করা কঠিন পর্যায়ে পড়ে। তাই বিজ্ঞান পুনর্জন্মকে "তত্ত্বের বাইরে কল্পনার স্তরে" রাখে।
আত্মা এক না বহু? দ্বন্দ্বময় ব্যাখ্যা
হিন্দু ও বৌদ্ধ দর্শনে আত্মা অবিনশ্বর, আর জন্মান্তর হলো তার আত্মশুদ্ধির যাত্রা। সেখানে আত্মা বহুরূপী — সে বারবার জন্ম নেয় এবং বারবার পরিশোধ করে। অন্যদিকে ইসলাম বলে আত্মা একবারই সৃষ্টি হয়, একবারই দেহে প্রবেশ করে, একবারই মারা যায় এবং একবারই পুনরুত্থান হবে। এই পার্থক্য শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয় — বরং এটা মানব অস্তিত্বের ব্যাখ্যা ও পরিণতির প্রশ্ন।
পুনর্জন্মের যান্ত্রিক প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিক কাঠামো: একটি অন্তিম ভাবনা
প্রশ্ন থেকেই শুরু — পুনর্জন্ম কি সত্যিই ঘটে? যদি ঘটে, তাহলে কোন ভিত্তিতে একটি আত্মা এক দেহ থেকে আরেক দেহে সঞ্চারিত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে, আমাদের মানুষ নামক প্রাণিটির আধ্যাত্মিক প্রযুক্তি—তাঁর অন্তর্গত কাঠামো ও সচেতনতার স্তর—সম্পর্কে অন্তত একটি মৌলিক ধারণা থাকা আবশ্যক।
মানুষ : এক বহুমাত্রিক সত্তা
যোগ দর্শন মতে, মানুষ কেবল রক্ত-মাংসের শরীর নয়। বরং তিনটি স্তরে গঠিত:
১-অন্নময় কোষ – খাদ্যজাত দেহ, আমাদের দৃশ্যমান শরীর।
২-প্রাণময় কোষ – চেতনার শক্তি, যা দেহে প্রাণ সঞ্চার করে।
৩-মনোময় কোষ – মানসিক ও আবেগঘন কাঠামো, যা আমাদের ভাবনা, অনুভূতি ও স্মৃতিকে ধারণ করে।
এই তিনটি স্তরই ভৌত বা ফিজিক্যাল জগতে কাজ করে, তবে এগুলো একসাথে মিলে গঠন করে আমাদের কার্মিক কাঠামো (Karmic Structure)। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি চিন্তা, কাজ ও অভ্যাস এই কাঠামোতে ছাপ ফেলে যায়। এই কর্মফল বা কর্ম-সংস্কার (Samskara)-ই আত্মাকে পরবর্তী জন্মের দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে পূর্বজন্মের অভিজ্ঞতা অনুসারে তার দেহ, মানসিকতা ও প্রবৃত্তির ছাঁচ তৈরি হয়।
আত্মার মুক্তি ও ‘মহা-সমাধি
তবে একজন যোগী যখন তার সমস্ত কর্মফল ও মনের চেতন স্তরকে নিঃশেষ করতে সক্ষম হন, তখন সে তার পুনর্জন্মের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলে। এটিই মহা-সমাধি বা মুক্তি। মুক্তি মানে কি মৃত্যু নয়? না, মুক্তি মানে মৃত্যু নয়—বরং মৃত্যুর পরেও আর না ফেরার অঙ্গীকার। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে আত্মা আর পুনর্জন্মের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। আত্মা তখন অস্তিত্বহীনতায় নয়, বরং পরম সত্তার সঙ্গে একত্বে বিলীন হয়ে যায় — অনেকটা নদীর সাগরে মিশে যাওয়ার মতো।
সময়ের ঋণ ও দায়িত্ব
এই ভূপৃষ্ঠে আমাদের শরীর ধার নেওয়া—জলে ভেজা মাটির মতো, যা একদিন ভেঙে যাবে, মিশে যাবে তার উৎসে। আমরা যেমন অণু পরমাণু ধার করে পৃথিবীর অংশ হয়েছি, তেমনি আমাদের চিন্তা ও কর্মও ধার করা সময়ের ওপর একটি দায়িত্ব। এই জন্যই কর্মই মুক্তির মূল চাবিকাঠি। কারণ, এই কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ গঠন করে, চেতনার দিক নির্ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের "ফেরার রাস্তা" বেছে দেয়।
উপসংহার
এই আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, পুনর্জন্ম কেবল একটি ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং এটি একটি দার্শনিক অনুসন্ধান—চেতনাজগতের গহীনে প্রবেশের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এটি এমন এক বিশ্বাসব্যবস্থা যা পৃথিবীর বহু প্রাচীন ধর্ম, বিশেষ করে হিন্দু, বৌদ্ধ, ও জৈন মতে কেন্দ্রীয়।
অন্যদিকে, ইসলাম এই চক্রবদ্ধ পুনর্জন্মকে অস্বীকার করে, বরং একক জীবনের দায় ও তার পরিণতির ওপর জোর দেয়। একজন মানুষ মৃত্যুর পর কবরের জীবন পার করে হাশরের ময়দানে দেহসহ পুনরুত্থিত হবে এবং সেখানেই চূড়ান্ত বিচার ও তার স্থায়ী গন্তব্য নির্ধারণ হবে — জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। সুতরাং, পাঠক হিসেবে আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে আত্মা চিরন্তন এবং মুক্তি তার চূড়ান্ত লক্ষ্য — তাহলে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করতে হবে:
"আমার প্রতিদিনের কর্ম কি আমাকে মুক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, নাকি আরও একটি অচেনা জন্মের পথে ঠেলে দিচ্ছে?"
সময় একান্তই সীমিত, কিন্তু আত্মার পথচলা বিশাল — আমরা কি প্রস্তুত?
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৪
কামাল১৮ বলেছেন: ইসলাম অবশ্যই পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে।মরার পরে আবার জিবিত হবার নামই পুনর্জন্ম।এটা ইসলামের একটা আকিদা।বৈজ্ঞানিক ভাবে এটা প্রমানিত না যে মৃত্যুর পরে মানুষ আবার জিবিত হতে পারে।
৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: ইসলাম কি বলে সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
৪| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৬
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: না মুসলিমরা পুনর্জন্মে না পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে। আর পুনর্জন্মে নিয়ে না না কাহিনী প্রচলিত আছে, যা পুরোটাই বানোয়াট বলে মনে হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো শিশুদের ঘটনাগুলো শিখিয়ে দেয় অথবা খুব ভালোমত ট্রেইন করে। মুসলিম শিশুদের মাঝে কোন পুনর্জন্মের কাহিনী পাওয়া যায় না, যে সমাজ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে শিশুগুলো শুধু ওই সমাজেই পাওয়া যায় এ থেকে বুঝা যায় বিষয়গুলো ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪৬
কাঁউটাল বলেছেন: ইসলাম পূনরুত্থানে বিশ্বাস করে। হাশরের ময়দানে মানুষ মাটি থেকে পূনরুত্থিত হবে এবং এর পরে হিসাব নিকাশ হবে।
পূনর্জন্ম একটি হিন্দু মতবাদ, ইসলামে পূনর্জন্ম নাই।