নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never regret anything that made you smile

পলিন আহামেদ

Never regret anything that made you smile

পলিন আহামেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোমেনশাহী তে একদিনের সফরনামা

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯

নাম দেখে অবাক হচ্ছেন, তাই না?
এটা আর কোথাও নয়, স্বনামধন্য ময়মনসিংহ যার প্রাচীন নাম মোমেনশাহী।
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ১১৫ কিলোমিটার দূরের সম্ভ্রান্ত, সাংস্কৃতিক বলয় বেষ্টিত, ইতিহাস-ঐতিহ্যমন্ডিত এক বিশাল জেলা। এই জেলার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও মানব নির্মিত স্থাপনা। আছে মুখরোচক কিছু খাবার এবং সুমধুর, শ্রুতিকর, মায়া জড়ানো আঞ্চলিক ভাষা।


মাত্র একদিন সময় নিয়েই খুব সহজে সকাল সন্ধ্যা সময়ের ভেতরে খুব অল্প খরচে এই জেলার সৌন্দর্য্য অবলোকন করে স্মরনীয় এক ভ্রমন করে আসা যায়।
বাস-ট্রেন দুই উপায়েই যাওয়া যায়। তবে অনেক কিছুর হিসাবে বাসই শ্রেয়তর।
ঢাকার মহাখালী/টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল থেকে ভোর সাড়ে ৫ টায় প্রথম ট্রিপ শুরু হয়। এরপর একটু পরপরই বাস থাকে। অগ্রিম বুকিং এর ঝামেলা নাই। গিয়েই বাসে ওঠা যায়। জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ২২০ টাকা।
তিন ঘন্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায়।
একদিনের ভ্রমনের জন্য যত সকালের ট্রিপ ধরা যায় ততই মঙ্গল।

#মুক্তাগাছা_জমিদার_বাড়িঃ ময়মনসিংহ জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরী খ্রিস্টিয় ১৯ থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি মুক্তাগাছায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করেন। এখানে আছে দূর্গামন্দির, রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির, তোষাখানা, লোহার নির্মিত দ্বিতল হাওয়াখানা, মঞ্চ এবং প্রাসাদের বাইরে অনেকগুলো মন্দির।


জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তায় গিয়ে হাতের ডান দিকেই পাবেন বিখ্যাত মুক্তাগাছার মন্ডার দ্বিতল দোকান।

#মুক্তাগাছার_মন্ডাঃ মণ্ডা নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। দুই শতাধিক বছর আগে মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মন্ডার জনক গোপাল পাল এক রাতে স্বপ্নাদিষ্ট হলেন। শিয়রে দাঁড়িয়ে এক ঋষি তাকে আদেশ দিচ্ছেন মন্ডা মিষ্টি তৈরি কর। পরদিন গোপাল ঋষির আদেশে চুল্লি খনন শুরু করলেন। দৈবাৎ উদয় হলেন সাধু। তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন চুল্লিতে। শিখিয়ে দিলেন মণ্ডা তৈরির কলাকৌশল। দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি হলো মন্ডা। গোপাল তার নব উদ্ভাবিত মন্ডা পরিবেশন করলেন তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর রাজদরবারে।
মন্ডা খেয়ে মহারাজা পেলেন পরম তৃপ্তি , আর বাহবা দিলেন গোপালকে। শুরু হলো মণ্ডার যাত্রা। গোপাল পাল সম্বন্ধে জানা যায়, বাংলা ১২০৬ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। নবাব সিরাজদৌলার মৃত্যুর পর গোপাল মাতৃভূমি রাজশাহীতে চলে আসেন। পরে বাংলা ১২৩০ সালে তিনি মুক্তাগাছায় বসত গড়েন। প্রথম মণ্ডা তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে ।
এটাই আদি ও আসল মন্ডা। এদের আর কোথাও কোন শাখা নেই।

#শশী_লজঃ

মুক্তাগাছার জমিদার বংশের নিঃসন্তান জমিদার মহারাজা সূর্য্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী তাঁর দত্তক পুত্র শশীকান্তের নামানুসারে ময়মনসিংহ শহরে শশীলজ নামে একটি বিলাসবহুল দ্বিতল প্রাসাদ নির্মান করেন। সুরম্য অট্টালিকার বাহির ও অন্দর সজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে নান্দনিক উপকরন। ভেতরের স্থাপনা ও প্রাকৃতিক পরিবেশও দেখার মতো। বাড়ির উত্তর ধারে মার্বেল পাথরের ঘাটলা দেয়া পুকুর পাড়ের দ্বিতল স্নানঘরটি দেখার মতো।

শশীলজ থেকে বের হয়ে ঠিক বিপরীত দিকের রাস্তায় ১০ মিনিট হাঁটলেই পাবেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং গভর্নমেন্ট ল্যাবঃ হাই স্কুল। এই ক্যাম্পাসেই আছে আলেকজান্ডার ক্যাসেল।

#আলেকজান্ডার_ক্যাসেলঃ স্থানীয়ভাবে লোহার কুঠি নামে পরিচিত। ১৮৭৯ সালে মহারাজা সূর্য্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ততকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের স্মৃতি রক্ষার্থে এই ভবন নির্মান করেন।

এখানে বিশ্ববরেন্য অনেক ব্যক্তিবর্গের পদধূলি পড়েছে যাদের মাঝে আছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রিটিশ লর্ড কার্জন, তুরষ্কের জাতির জনক কামাল পাশা, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, দেশবরেন্য চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ। বর্তমানে এটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) এর লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এবার চলে যান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। রিকশা নিয়ে সরাসরি যাওয়া যায়। গন্তব্য জব্বারের মোড়। এটা অনেকটা জাহাঙ্গির নগর ভার্সিটির বটতলার মতো। একদম নামমাত্র মূল্যে দেশিয় পদে ভূড়িভোজন করতে পারবেন।

খাওয়া শেষ করে একটা রিকশা বা অটো রিজার্ভ নিয়ে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত, পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১২০০ একর আয়তনের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পারেন। ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে রেললাইন, পাশেই আবার নদী। দেশের আর কোন ক্যাম্পাসে এই দুইয়ের বিরল সহাবস্থান আছে বলে মনে হয়না। রিকশা এসে থামবে বোটানিক্যাল গার্ডেনে। হরেক রকমের হাজার হাজার গাছের সমারোহ পাবেন এই উদ্যানে। কিছুটা পার্কের মতো করে স্থানবিশেষে বসার বেঞ্চ, বনানীর ভেতর দিয়ে হাঁটার পথ, পুকুর, পদ্ম ও অর্কিড বাগান, ছোট সাঁকো এবং নদীর ধারে বসার জায়গা আছে। কিছুটা ডেটিং জোন মনে হলেও পরিবেশ মন্দ নয়। অবশ্যই ভালো লাগবে।

ফেরার পথে নদীর পাড়ের বিপিন পার্ক ও বিপরীত দিকের সোনালী ব্যাংক অফিসের পাশের পুরাতন এক দালানও দেখে নিতে পারেন।

এরপর আবার রিকশা নিয়ে জয়নুল আবেদিন পার্ক। প্রথমেই যাবেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্র্হশালা। শিল্পাচার্য্যের স্মৃতি বিজড়িত জিনিসপত্র এবং তাঁর সৃষ্টিকর্ম উপভোগ করুন।
মনে রাখবেন এই সংগ্রহশালা বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। দর্শনের সময় সকাল ১০:৩০ থেকে ৫:৩০ (এপ্রিল-সেপ্টঃ), ১০:০০ টা থেকে ৪:৩০ টা (অক্টোঃ-মার্চ)
শুধু শুক্রবার বিকাল ৩:০০ থেকে রাত ৮:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে।

সংগ্রহশালা ঘুরে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে কিছুটা সময় কাটান। নদীর সুশীতল হাওয়া খান। চাইলে পাল তোলা নৌকায় নৌ-ভ্রমনও করতে পারেন।
ফেরার পথে সারিন্দা পার্ক ক্যাফের পাশের গেট দিয়ে বের হয়ে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ বিল্ডিং এবং জেলার বড় মাঠ দেখে আসতে ভুলবেন না যেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.