![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৯ সালের ১৬ জুলাই ওয়েলসের কার্ডিফে স্কুল কেয়ারটেকার ফ্র্যাঙ্ক বেল ও অপারেশন ম্যানেজার ডেব্বি বেলের কোল জুড়ে আগমন ঘটে এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের। তার নাম রাখা হয় গ্যারেথ ফ্রাঙ্ক বেল।কে জানতো এই ফুটফুটে বাচ্চাটাই এক সময় ফুটবলের গতিদানব হবে এবং তার গতি ও পায়ের স্কিল দিয়ে ফুটবল বিশ্বকে মুগ্ধ করবে। মাত্র ৯ বছর বয়সে বেল যখন তার এলাকা ভিত্তিক ক্লাব কার্ডিফ সিভিল সার্ভিস ফুটবল ক্লাবে খেলতো তখনই সাউদাম্পটন ফুটবল ক্লাবের নজরে আসে কিন্তু বয়স কম হওয়ায় দলে যেতে পারেনন নি। ছোটবেলা থেকেই সে তার আইডল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তী রায়ান গিগসের আদর্শ নিয়ে বড় হয়েছেন। এই আদর্শ নিয়েই একে একে সাউদাম্পটন,টটেনহ্যামের মত বিশ্বমানের ক্লাবে এবং বর্তমানে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন উইঙ্গার পজিশনে খেলা গ্যারেথ বেল।
#সাউদাম্পটন_ফুটবল_ক্লাব
২০০৬ সালের ১৪ এপ্রিল মাত্র ১৬ বছর ২৬৫ দিন বয়সে গ্যারেথ বেলের অভিষেক ঘটে সাউদাম্পটন ফুটবল ক্লাবে। সে সময় সে ছিলো সাউদাম্পটন ক্লাবের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়ার। আগস্টের ৬ তারিখ ডার্বি কাউন্টি ক্লাবের বিপক্ষে এক অভুতপূর্ব ফ্রিকে গোল দেয়ার মাধ্যমে ক্লাব ক্যারিয়ারের গোলের খাতায় নাম লেখান বেল।এর পর একে একে ওয়েস্ট ব্রমউইচ,সান্ডারল্যান্ড, হালসিটি এবং নরউইচ সিটির বিরুদ্ধে ফ্রিকিকে গোল দিয়ে রাতারাতি দলের ফ্রিকিক স্পেসালিস্ট বনে যান বেল। এর পরে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।তবে তেমন একটা গোল না পেলেও ফুটবল মাঠের প্রতিভার জন্য ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে বিবিসি ওয়েলস ইয়াং স্পোর্টস পার্সোনালিটি অফ দ্যা ইয়ার হিসেবে বেলকে কারওয়েন জেমস এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এর পরে ২০০৭ সালের মার্চে ফুটবল লীগ ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ারেও তার নাম আসে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ইঞ্জুরিপ্রবন হওয়ায় তেমন একটা গোলের দেখা পান নি বেল। সাউদাম্পটনের হয়ে ৪৫ ম্যাচে ৫ গোল এবং ৭ টি এসিস্ট করে বেল। ২০০৭ সালের ১২ মে চ্যাম্পিয়নশীপ প্লে অফের সেমিফাইনালে ডার্বি কাউন্টির বিরুদ্ধে সাউদাম্পনের হয়ে সে তার শেষ ম্যাচ খেলেন।
#টটেনহ্যাম_হটস্পার
২০০৭ সালের ২৬ মে ১০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ৫ বছরের চুক্তিতে সাউদাম্পটন থেকে তাকে সাইন করায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের টিম টটেনহ্যাম হটস্পার। টটেনহ্যামের হয়ে ২৪ আগস্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইডেটের বিরুদ্ধে তার অভিষেক হয়।তবে গোলের দেখা পেতে তাকে বেশি ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয় নি।টটেনহ্যামের হয়ে তার দ্বিতীয় ম্যাচে ফুলহ্যামের বিপক্ষেই সে গোলের দেখা পেয়ে যায়। ইঞ্জুরিপ্রবন বেল ইঞ্জুরির কারনে ম্যাচ মিস করা শুরু করতে থাকে ক্রমাগত।
#রিয়াল_মাদ্রিদ
২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর এ যেনো এক স্বপ্ন পূরনের দিন। রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে টটেনহ্যাম থেকে রিয়াল মাদ্রিদে সাইন করায় রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ এবং তাকে দেয়া হয় গুরুত্বপূর্ন ১১ নাম্বার জার্সিটি। তবে সাইন করালেও ইঞ্জুরির কারনে প্রথম ১৬ ম্যাচ খেলতে পারেন নি বেল। তবে ইঞ্জুরি থেকে ফিরে ভিলারিয়ালের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৮ মিনিটেই সে তার অভিষেক গোলের দেখা পায়।রিয়ালে এসেই যেনো দলের লাকি চার্মে পরিনত হয়ে গেলো বেল।২০১৪ সালের ২৪ মে ইউসিএলের ফাইনালে এতলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ১১০ মিনিটের মাথায় তার করা গোলের উপর ভর করেই মাদ্রিদ ১১ বছর পর জয় করে চ্যাম্পিয়নস লীগ। ২০১৪ সালে কোপা দেল রের ফাইনালে ৮৫ মিনিটের মাথায় বার্সেলোনার বিপক্ষে করা তার সেই গোলের কথা পুরো ফুটবল বিশ্ব কোনদিনও ভুলতে পারবে বলে মনে হয় নাহ।
তার সেই স্পিডি দৌড় ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে থাকবে আজীবন ।
এ গোল সম্পর্কে বার্সেলোনার সাবেক কোচ গ্যারার্ডো মার্টিনো বলেন "It is difficult to see a player sprint like that at that stage of the game." মাদ্রিদের সাবেক প্লেয়ার Xabi Alonso বলেন"It was incredible, I have never seen anything like it". এরপরই ইঞ্জুরিটা কেমন যেনো ক্যারিয়ারটাকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে থাকলো যতবারই ইঞ্জুরিতে পরতো ইঞ্জুরি থেকে ফেরার সময় মনে হতো নতুন উদ্দ্যমে ফিরে আসছে কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার, বার বারই ইঞ্জুরি তার ক্যারিয়ার শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।সর্বশেষ এ বছরের ইউসিএলের ফাইনালে লিভারপুলের বিপক্ষে নামার কিছুক্ষন পরেই চোখ ধাঁধানো বাইসাইকেল গোল দিয়ে ফুটবল বিশ্বকে আরেকবার জানান দিলো বেল এখনও ফুরিয়ে যায় নি বেল কখনও ফুরিয়ে যেতে পারে নাহ। মাদ্রিদের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮৯ ম্যাচে করেন গুরুত্বপূর্ন ৮৮ টি গোল এবং ৫৭ টি এসিস্ট
#ন্যাশনাল_টিম
জাতীয় দল ওয়েলসের হয়ে বেলের অভিষেক ঘটে ২৭ মে ২০০৬ সালে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর বিপক্ষে। ওয়েলসের হয়ে বেল মোটামুটি সফলই বলা যেতে পারে তার উপর ভর করেই ২০১৬ সালের ইউরোতে ওয়েলস সেমিফাইনাল পর্যন্ত যায় তবে রোনালদোর পর্তুগালের বিপক্ষে হেরে সেমি থেকে বিদায় নেয়। তবে তার শত চেষ্টার পরেও ওয়েলস ২০১৮ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি। ওয়েলসের হয়ে এখনও পর্যন্ত করেন ৭০ ম্যাচে ২৯ টি গোল এবং ১১ টি এসিস্ট।
#দলীয়_অর্জন
লা লীগাঃ ২০১৬-১৭
কোপা ডেল রেঃ ২০১৩-১৪
সুপারকোপাঃ২০১৭
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগঃ ২০১৩-১৪,২০১৫-১৬,২০১৬-১৭,২০১৭-১৮
উয়েফা সুপার কাপঃ২০১৪,২০১৭
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপঃ২০১৪,২০১৭
#ব্যাক্তিগত_অর্জন
টটেনহ্যাম হটস্পার ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ারঃ ২০০৯-১০,২০১০-১১
টটেনহ্যাম হটস্পার প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ারঃ ২০১২-১৩
উয়েফা টিম অফ দ্যা ইয়ারঃ২০১১,২০১৩
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ স্কোয়াড অফ দ্যা সিজনঃ ২০১৫-১৬
ওয়েলস ফুটবলার অফ দ্যা ইয়ারঃ ২০১০,২০১১,২০১৩,২০১৪,২০১৫,২০১৬
PFA টিম অফ দ্যা ইয়ারঃ ২০০৬-০৭,২০১০-১১,২০১১-১২,২০১২-১৩
PFA প্লেয়ার অফ দ্যা ইয়ারঃ২০১০-১১,২০১২-১২
প্রিমিয়ার লীগ প্লেয়ার অফ দ্যা সিজনঃ২০১২-১৩
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ টপ স্কোরারঃ২০১৪
#না_বলা_কিছু_কথা
গ্যারেথ বেল এক অফুরন্ত ভালোবাসার নাম।যে জায়গা করে নিয়েছে আমার প্রিয় খেলোয়ারের স্থানটি। এক সময় তাকে তুলনা করা হতো নেইমারের মত প্লেয়ারের সাথে। ২০১১-১২ সিজনের টটেনহ্যাম হটস্পার্সের কোচ হ্যারি রেডনেপ বেল সম্পর্কে বলেন "He's an amazing, amazing talent and he's after the Ronaldos and Messis of this world and he's getting better and better. He's almost unplayable when he's on his game. He is a genuine world-class player. There's nobody he couldn't play for. He'd improve any team."
লিভারপুলের সাবেক প্লেয়ার মার্ক লরেনসন তাকে নিয়ে বলেন "What makes Gareth Bale so special? Simple. He is one of the quickest players I've ever seen, but he has another gear and the ability to find that extra pace within the next stride. He has the ability to perform and use his technique at great pace." সাবেক মাদ্রিদ স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে যখন বলা হয় এক শব্দে বেলকে বিশ্লেষন করতে তখন সে বলে "Incredible" আর আজ ইঞ্জুরির কারনে সেই প্লেয়ারটার সামর্থ্য ও ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেও মানুষ দ্বিধাবোধ করে নাহ। সে ইঞ্জুরিপ্রবন বলে অনেক মাদ্রিদিস্তাই তাকে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে কিন্তু আমার মনে হয় মাদ্রিদকে দেয়ার মত তার এখনও অনেক কিছু বাকি রয়ে গেছে তাই খুব খুব খুবভাবে চাই রনবিহীন এই মাদ্রিদের হালটা যেনো সে ধরে। তার কাধে ভর করেই যেনো মাদ্রিদ দাড়িয়ে থাকে সগৌরবে।
©somewhere in net ltd.