![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারাবিশ্বের সকল গুরু, গোঁসাই, পির, মুর্শিদ, ভক্ত আসেকান ও তরিকাপন্থী সকলের পবিত্র চরণে প্রেমভক্তি রইল। এই আইডির ও গুরু গৃহ পেইজের সকল পোস্ট বিষয় ভিত্তিক ও গবেষেণাধর্মী। এখানে সাধারণ কোনো পোষ্ট দেওয়া হয় না। তাই; সবাইকে বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে; কোনো জাতি, ধর্ম ও শাস্ত্রীয় মতবাদকে ছোট করা বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা আমাদের লেখার উদ্দেশ্য নয়। তথাপিও; যদি; অজানতে আমাদের লেখার বিষয়বস্তু বা কোনো বাক্য কারো মতের বিপক্ষে যায়; সেক্ষেত্রে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মনে রাখতে হবে; যেহেতু; আমাদের পোস্টগুলো বিষয় ভিত্তিক ও গবেষণাধর্মী। লেখকের লেখার উদ্দেশ্য সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা; কাউকে হেওপ্রতিপন্ন করা নয়। তাই; সকলের প্রতি আবারও বিনীত নিবেদন; প্রতিটি পোস্টে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের করে লেখককে উৎসাহিত করবেন। যেহেতু; প্রতিটি পোস্ট তৈরিতে লেখকের প্রচুর মেধা ও শ্রম ব্যয় হয়। আর যদি তা না পারেন; তবে; খারাপ মন্তব্য করা হতে বিরত থাকবেন। লেখাতে তথ্যগত ভুল, অসংগতি ও ইতিহাস বিভ্রাট দেখা গেলে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। গুরু গৃহ কর্তৃপক্ষ ও পরম কাঁইজি
মানুষের ইতিহাস মানব প্রজাতির উদ্ভব, তার জীবন বিকাশ ও জীবনধারা এবং ঐতিহ্য-সভ্যতা-সংস্কৃতি; যার বাস্তবতা প্রত্নতাত্ত্বিক উজ্জ্বল নিদর্শনে বিদ্যমান। অন্যদিকে; ধর্মীয় কাহিনী জীবন হতে জীবনে বিচরণ, বংশধারা বিস্তার অর্থাৎ; যে গোপন কর্মকাণ্ডে প্রজনন-বিনোদন-সাধন সিদ্ধি হয়, তারই রূপক বর্ণনা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অস্তিত্বহীন এসব প্রতীকী কাহিনীর বাস্তবতা না থাকলেও দেহ জগতে তা দীপ্তিমান বাস্তব। এজন্য; ইতিহাস লৌকিক কিন্তু ধর্মীয় কাহিনী অলৌকিক।
রাজনৈতিক ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িক ইতিহাসের পার্থক্য
১. রাষ্ট্রশাসন বা পরিচালনা বিষয়ক অতীত ঘটনাবলীকে রাজনৈতিক ইতিহাস বলে।
১. ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা’ দ্বারা সংঘটিত বিষয়াদির ওপর অতীতকালে রূপকার্থে নির্মিত পৌরাণিক কাহিনীকে সাম্প্রদায়িক ইতিহাস বলে।
২. রাজনৈতিক ইতিহাস বাস্তবে সংঘটিত ঘটনাবলী।
২. সাম্প্রদায়িক ইতিহাস রূপকার্থে নির্মিত ঘটনাবলী।
৩. এটা সম্পূর্ণই বাস্তব।
৩. এটা পুরোটাই নির্মিত।
৪. ঘটনা না ঘটলে, যখনতখন; এটা রচনা করা যায় না।
৪. এটা লেখার জন্য ঘটনা ঘটার প্রয়োজন হয় না। যখনতখন; এটা রচনা করা যায়।
৫. এর ঘটনার স্থান, কাল, মাস, দিবস ও যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত পক্ষ-বিপক্ষের রাষ্ট্র নায়কগণের নাম সবই বাস্তব। যেমন; সিরাজ উদ্ দৌলা।
৫. এর ঘটনার স্থান, কাল, মাস, দিবস ও যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত পক্ষ-বিপক্ষের রাষ্ট্র নায়কগণের নাম সবই রূপক। যেমন; রাবণ।
৬. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন।
৬. সারা বিশ্বের সব সাম্প্রদায়িক ইতিহাস এক ও অভিন্ন (ভাষার ব্যবধান মাত্র)।
৭. আক্ষরিক জ্ঞানের ধারক বাহক মনীষীগণ সবাই ইচ্ছে করলে এটা লেখতে পারেন।
৭. সুবিজ্ঞ আত্মজ্ঞানী রূপকার ও সুতীক্ষ্ণ দিব্যজ্ঞানী ব্যতীত সাধারণ মানুষ এটা নির্মাণ করতে পারে না।
৮. এটা সবাই বুঝে।
৮. এটা সবাই বুঝে না।
৯. এটা দেশ-জাতির সাথে সম্পৃক্ত।
৯. এটা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত।
১০. এর তথ্য-উপাত্ত ভূতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত।
১০. এর তথ্য-উপাত্ত আত্মতত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত।
১১. এটা হতে কখনই উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসীবৃত্তির উদ্ভব হয় না।
১১. এটা হতে সর্বদা সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসীবৃত্তির উদ্ভব হয়।
ভারতের আর্য ও আরবের মুহাম্মদ সম্পূর্ণই সাম্প্রদায়িক পৌরাণিক কাহিনী। যেমন;
চমৎকারের মরণ কবলে পতিত ঐতিহাসিক দল
(Fallen dying morsel historiographer group of the Miracle)
“ঋগ্বেদের পরিচয়” নামক চমৎকারনির্ভর অনুচ্ছেদটি নিচে তুলে ধরা হলো। বর্তমানকালের ঐতিহাসিকরাও কী পরিমাণ চমৎকার নির্ভর হয়ে পড়েছে; তা পাঠককুল কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারবে।
“হুইলারের ধারণা এ সময় ঋগ্বেদে বর্ণিত প্রাচীন আর্যজাতি উত্তর পশ্চিশ ভারতে প্রবেশ করে এবং হরপ্পা সংস্কৃতির ধারক বাহক যে মানুষ্য গোষ্ঠী ছিল তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে যারা বিজয়ী হয়েছিল তাদের আদর্শেই ঋগ্বেদের দেবতা ইন্দ্রের চরিত্রটি রূপায়ণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন ঋগ্বেদের ‘পুরন্দর’ কথাটি ইন্দ্রের উপাধি রূপে ব্যবহৃত। সিন্ধুনদের অববাহিকায় যে সভ্য প্রাচীন জাতির নগর ছিল; সেসব ইন্দ্র ধ্বংস করেন বলেই তার নাম পুরন্ধর। সিন্ধু অববাহিকাবাসীরা প্রস্তর ও মৃত্তিকা দ্বারা দুর্গ নির্মাণ করতো। সম্প্রতিক কালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এ অঞ্চলে অনেক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছে। ঋগ্বেদে বর্ণিত ইন্দ্র এ ধরণের অনেক দুর্গ ধ্বংস করেছিলেন। এমর্মে যে বর্ণনা রয়েছে; তা এসব দুর্গকেই সূচিত করে (Wheeler Indian Civilisation p. 900)।
পিগোট হুইলারও এ প্রতিপাদ্যই গ্রহণ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন; এটা সুবিদিত যে; দুই হাজার (২,০০০) খ্রিস্টপূর্বাব্দ অর্থাৎ; আজ হতে প্রায় চার হাজার (৪,০০০) বছর পূর্বে; হরপ্পা সংস্কৃতি পরিপূর্ণ মহিমায় অধিষ্ঠিত ছিল। তাদের সংস্কৃতিটি ছিল সম্পূর্ণ নগর কেন্দ্রিক এবং সে নগরগুলো দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। আর্যজাতি ভারতে প্রবেশ করলে; তাদের সাথে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। অতঃপর; আর্যরা তাদের সুরক্ষিত দুর্গগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীরই ছায়াপাত হয়েছে ঋগ্বেদে ইন্দ্রের বীরত্বসূচক কীর্তির বর্ণনায়। বৈদিক সাহিত্যের বর্ণনা অনুযায়ী যে জাতির সঙ্গে তারা সংঘর্ষ ও সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল; তাদের দস্যু বা দাস বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের আকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে; তারা কৃষ্ণকায় এবং ‘অনাস’ অর্থাৎ; তাদের নাসা চেপ্টা ছিল। আমরা পূর্বেই বলেছি যে; এ প্রাচীনতম জাতির মানুষের অধিকাংশই ছিল অস্ট্রেলীয় গোষ্ঠীভুক্ত। তারা কৃষ্ণকায় ছিল এবং তাদের নাসিকা চেপ্টা ছিল।
এ প্রসঙ্গে ইন্দ্রের বীরত্বসূচক ভূমিকায় ঋগ্বেদে যে জাতি সম্পর্কে উল্লেখ আছে; সে বিষয় তিনি প্রসঙ্গত আলোচনা করেছেন। যেমন; ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ৫৩ সুক্তে উল্লিখিত হয়েছে; “হে ইন্দ্র! তুমি শত্রুধর্ষণকারী রূপে যুদ্ধ হতে যুদ্ধান্তরে গমন করো, বল দ্বারা নগরের পর নগর ধ্বংস করো।” (রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ)। ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মণ্ডলের ১৫ সুক্তে আছে; “ইন্দ্র বলকে বিদীর্ণ করেছিল। পর্বতের দৃঢ়দ্বার উদ্ঘাটিত করেছিল ও এদের কৃত্রিম রোধাদি উদ্ঘাটিত করেছিল।” ইন্দ্রকে যে পুরন্দর বলা হয়; সেকথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। এসব তথ্য হতে অনুমান করা হয় যে; প্রায় চার হাজার বছর পূর্ব হতে; উত্তর পশ্চিম হতে আর্যরা ভারতবর্ষের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে। তারপরঃ সেখানে অধিষ্ঠিত প্রাচীনতম যে নগরভিত্তিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছিল; তাদের সাথে সংঘর্ষ ও সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ঋগ্বেদের অনেক মন্ত্রের মধ্যে এ সংঘর্ষের ছায়াপাত হয়েছে।
এবার ঋগ্বেদের রচনাকালের একটি মীমাংসা করা যায়। ঋগ্বেদ নির্মিত হয় আর্যজাতি সিন্ধু উপত্যকাবাসীদের পরাস্ত করার পর। অর্থাৎ; এ অঞ্চলে নগর কেন্দ্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠারও অনেক পরে। অতঃপর; আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতিকে ধ্বংস করে তাদের বসতি স্থাপন করে। এমন মহাগ্রন্থ নির্মাণ করতে তাদের কয়েক শতাব্দী সময় লাগবে; তা সহজে অনুমান করা যায়। এ তথ্যের ভিত্তিতে ঋগ্বেদের রচনাকালকে পঞ্চদশ (১,৫০০) খ্রিস্টপূর্বাব্দ অর্থাৎ; আজ হতে প্রায় পঁয়ত্রিশ শত (৩,৫০০) বছর পূর্বে ধরে নেওয়া যায়। এ আলোচনার সমর্থনে বলা যায়; একটি মিটানিয়ান নথী পাওয়া গেছে; যার আনুমানিক কাল তেরশত আশি (১,৩৮০) খ্রিস্টপূর্বাব্দ অর্থাৎ; আজ হতে প্রায় তেত্রিশ শত আশি (৩,৩৮০) বছর পূর্ব ধার্য করা হয়েছে। ঋগ্বেদের কয়েকজন দেবতার নাম তাতে লেখা রয়েছে। তা হতে পিগোট অনুমান করেন যে; ঋগ্বেদের রচনাকাল পনেরোশত (১,৫০০) খ্রিস্টপূর্বাব্দ অর্থাৎ; আজ হতে প্রায় পঁয়ত্রিশ শত (৩,৫০০) বছর পূর্ব হবে। এটা একটি যুক্তি সঙ্গত অভিমত”।২
সব সময়; ভৃগুর কামযুদ্ধ হয় শিশ্নের সাথে। কিন্তু শ্বরবিজ্ঞানে; এসব লজ্জাস্কর পরিভাষা পরিহার করার জন্য; ভৃগুর ছদ্মনাম রাখা হয়েছে ইন্দ্র। অতঃপর; নরদেহের ছদ্মনাম রাখা হয়েছে নগর। ইন্দ্র কামযুদ্ধে শুক্রপাত করার দ্বারা সব নরদেহই ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করে। এজন্য; ইন্দ্র অনেক নগর ধ্বংস করেছে বলা হয়েছে। চমৎকারের মরণ কবলে পতিত হয়ে অনেক বড় বড় ঐতিহাসিকগণও পুরাণ নির্ভর কথিত অনেক সাম্প্রদায়িক ইতিহাস নির্মাণ করেছেন। তাই; বলা হয়; রাজনৈতিক ইতিহাস বাস্তব কিন্তু সাম্প্রদায়িক ইতিহাস কথিত, অবাস্তব, রূপক ও আত্মদর্শন ভিত্তিক। বাস্তব ঘটনা না ঘটলে রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা যায় না। কিন্তু বিশ্বের যে কোনো একটি পুরাণকে কেন্দ্র করে; যে কোনো সময় যে কোনো সাম্প্রদায়িক ইতিহাস নির্মাণ করা যায়- যা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।
চমৎকারের মরণ কবলে পতিত জ্যোতিষী দল
(Fallen dying morsel nostradamus group of the miracle)
“ইসলামের ইতিহাসে জ্যোতিষশাস্ত্র ও মুসলমান মনীষীদের জীবনে জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা” নামক চমৎকার নির্ভর অনুচ্ছেদটি নিচে তুলে ধরা হলো। বর্তমান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও কী পরিমাণ চমৎকার নির্ভর হয়ে পড়েছে তা পাঠককুল কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারবে। “একজন ভবিষ্যদ্বক্তার (জ্যোতিষীর) সঠিক সুপরামর্শের কারণে মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়া ও একান্ত ইচ্ছায় হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর পিতা আব্দুল্লাহর প্রাণ রক্ষা পায়। ইসলামী সাম্প্রদায়িক মতবাদের প্রচারক মানবদরদী মানুষের মুক্তির বাণী বাহক ও কল্যাণের উৎস হযরত মুহাম্মদের (সঃ) পৃথিবীতে আগমনের পথ হয়েছিল সুগম। হযরত মুহাম্মদের (সঃ) পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের ওপর তৎকালে মক্কার কাবাগৃহের তীর্থযাত্রীদের জল সরবরাহের ভার ন্যস্ত ছিল। তীর্থের সময় প্রতিবছর সুপেয় জলের অভাব ঘটত। আব্দুল মুত্তালিব এতে বিচলিত হয়ে জল সরবরাহের কোনো নতুন উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টায় ছিলেন। “কালক্রমে মাটির তলে চাপা পড়ে যাওয়া হযরত ইসমাইলের (আঃ) সময়কার সে বিখ্যাত ‘যমযম’ কূপ পুনঃ আবিষ্কারের জন্য আব্দুল মুত্তালিব দৃঢ় প্রতীজ্ঞ হন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও ‘যমযম’ উৎসটির সন্ধান না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তাই; একদিন প্রতীজ্ঞা করলেন যদি আমার ১০টি সন্তান জন্মে এবং ‘যমযম’ কূপ আবিষ্কার করতে পারি; তবে একটি পুত্রকে হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) ন্যায় আমিও আল্লাহর রাহে কুরবানি করব।
“কালক্রমে তিনি ‘যমযম’ কূপের আবিষ্কার করতে সক্ষম হলেন। ১০টি পুত্র সন্তানও লাভ করলেন। এতে তিনি পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো এক পুত্রকে কুরবানি দিতে মনস্থ করলেন। পুত্রদের মধ্যে ‘তীর’ এর সাহায্যে ভাগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে পুত্র আব্দুল্লাহর নাম নির্বাচিত হলো। তখন তাকে কোরবানির জন্য কাবাগৃহে নিয়ে গেলেন। তখন ‘মক্কার কুরাইশরা ও আব্দুল মুত্তালিবের অন্যান্য পুত্ররা এ কাজ করতে নিষেধ করলেন। ওঁরা আরও বললেন; “এভাবে যদি ছেলেকে কুরবানি করা হয়; তবে অনাগতকাল পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। লোকেরা নিজ-নিজ সন্তানকে এনে কুরবানি দিতে থাকবে এবং এভাবে মানববংশ একে একে নিঃশেষ হয়ে যাবে।”
পুনঃপুন নিষেধ করা ও বুঝানোর পর আব্দুল মুত্তালিব ‘শিআ’ নামক একজন ভবিষ্যদ্বক্তার (জ্যোতিষীর) নিকট গিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করলেন। ‘শিআ’ নির্দেশ দিলেন আব্দুল্লাহর বিনিময়ে ১০টি উট নির্ধারণ করো। অতঃপর; আব্দুল্লাহ ও ঐ ১০টি উট এর মধ্যে ভাগ্য পরীক্ষা করো। তিনি আরও বললেন যে; যতবার পর্যন্ত উটের নাম না উঠবে প্রতিবারই ১০টি করে উটের সংখ্যা বাড়াতে থাকবে। এরূপে যখন উটের নাম উঠবে; তখন নির্দিষ্ট সংখ্যক উট কুরবানি করতে হবে। জ্যোতিষী ‘শিআ’র নির্দেশ অনুযায়ী তাই করা হলো। দশবারের বার উটের নাম উঠল এবং উটের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০০টিতে। তখন আব্দুল মুত্তালিব সন্তুষ্টচিত্তে ১০০টি উট কুরবানি করলেন। সে হতে কারো প্রাণের বিনিময়ে ১০০টি উট কুরবানির প্রথা আরবে প্রচলিত হয়ে গেল। এভাবেই পরবর্তীকালে যিনি বিশ্বনবির পিতা হবার গৌরব অর্জন করলেন; সে মহাভাগ্যবান আব্দুল্লাহ একজন ভবিষ্যদ্বক্তা (জ্যোতিষীর) সঠিক পরামর্শে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা পেয়েছিলেন”। হযরত মুহাম্মদের (সঃ) বাল্যকালেই আরেক জ্যোতিষী বলেছিলেন ‘এ এক অসাধারণ বালক’। পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের পরলোকগমনের পর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) চাচা আবু তালিবের নিকট লালিতপালিত হতে লাগলেন। “তৎকালে বনু লাহাব গোত্রের একজন নজ্জম (জ্যোতিষী) মানুষের দৈহিক লক্ষণাদি দেখে মানবজীবনের শুভাশুভ বিচার করতেন (মানুষের চেহারা ও দৈহিক লক্ষণাদি বিচার বিশ্লেষণ করে শুভাশুভ নির্ণয় জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি প্রাচীন পদ্ধতি)। এ পদ্ধতিকে সামুদ্রিকবিদ্যা Physiognomy বলে। এ পদ্ধতিটি জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি বিশেষ শাখা।
বনু লাহাব গোত্রের এ জ্যোতিষী প্রায়ই মক্কায় আসতেন। কুরাইশরা তাদের ছেলেদের নিয়ে শুভাশুভ জানার জন্য তার কাছে ভিড় করতেন। একদিন আবুতালিবও বালক মুহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে উক্ত জ্যোতিষীর নিকট গেলেন। জ্যোতিষী শিশু মুহাম্মদের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই গভীরভাবে মনোযোগী হলেন। আবুতালিব বালক মুহাম্মদ এর প্রতি জ্যোতিষীর অধিক মনোযোগ লক্ষ্য করে অজানা আশঙ্কায় কৌশলে বালক মুহাম্মদকে জ্যোতিষীর সম্মুখ হতে সরিয়ে দিলেন। এতে জ্যোতিষী বললেন; “ছেলেটিকে আবার আমার কাছে নিয়ে এসো। শপথ! এ এক অসাধরণ বালক”। সেদিনের সে ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তীকালে সত্যে পরিণত হয়েছিল। আজ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পৃথিবীতে এক অসাধারণ মহামানব রূপে স্বরণীয় ও বরণীয়।
হযরত মুহাম্মদের (সঃ) পঁচিশ বছর বয়সে চল্লিশ বছর বয়সের বিধবা মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের প্রভুত ধনসম্পদের অধিকারিণী ও অশেষ গুণবতী বিবি খাদিজাকে (রাঃ) বিবাহ করেন। বিবাহের পর হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাম্প্রদায়িক মতবাদের চিন্তায় অধিক মনোযোগী হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অধিকাংশ সময়ই তিনি মক্কার সন্নিকটে একটি পর্বতের গুহায় নির্জনে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। দীর্ঘ পনেরো বছর তিনি কাটিয়েছিলেন এ ধ্যানমগ্নতায়। অবশেষে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসের ৬ তারিখে প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে তিনি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের (আঃ) কাছ থেকে আল্লাহর বাণীলাভ করেন। অর্থাৎ; নবুয়ত প্রাপ্ত হন। বাণী প্রাপ্ত হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সর্বপ্রথম বিবি খাদিজার (রাঃ) নিকট ফিরে গিয়ে এ সুসংবাদ জ্ঞাপন করেন।
বিবি খাদিজার (রাঃ) চাচাত ভাই তৎকালে নজ্জুমিয়ৎ (জ্যোতিষশাস্ত্র) চর্চা করতেন। খাদিজা (রাঃ) তার চাচাত ভাইয়ের নিকট গমনপূর্বক সবকিছু বিস্তারিত অবহিত করলেন। তখন তিনি নক্ষত্রের অবস্থান বিশ্লেষণপূর্বক বললেন; “এ সে পবিত্র মহাপুরুষ, যার কথা পবিত্র গ্রন্থ তৌরাতে উল্লেখ রয়েছে। আমি আরও দেখতে পাচ্ছি যে; তার বংশধরগণ তার ওপর নিদারুণ অত্যাচার করবে। যদি ততদিন বেঁচে থাকি তবে আমি তাঁর পক্ষ অবলম্বন করব। একথা শ্রবণের পর বিবি খাদিজা (রাঃ) গৃহে ফিরে এসেই ইসলামী মতবাদ গ্রহণ করলেন। বিবি খাদিজাই (রাঃ) বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী। সুতরাং বলা যায় যে; মহান ইসলামী সাম্প্রদায়িক মতবাদের প্রারম্ভেই জ্যোতিষ শাস্ত্রের ভূমিকা রয়েছে।
ইসলামী সাম্প্রদায়িক মতবাদের মহান ব্যক্তিত্ব জ্ঞান-সমুদ্র আমিরুল মোমেনিন হযরত আলি (রাঃ) খলিফা রূপে সর্বপ্রথম জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি অধিক দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তার অসংখ্য নীতিবাক্য ও দার্শনিক উক্তি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ‘আনওয়ারুল আকওয়াল’ নামক তার একটি কাব্যগ্রন্থের কথাও কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। তাঁর নামে প্রচলিত আরও একটি কাব্যগ্রন্থ ‘দীওয়ানে আলি’ আজও আরবি মাদ্রাসাগুলোতে পাঠ্যপুস্তক রূপে বিদ্যমান। আরবি ব্যাকরণসহ আরও অনেক সূক্ষ্ম ও জটিল শাস্ত্রের প্রবর্তক রূপে হযরত আলির (রাঃ) নাম সর্বজন স্বীকৃত। তাঁর আবিষ্কৃত বা প্রবর্তিত অনেক শাস্ত্র জ্ঞানের তালিকাও গবেষকগণ পেশ করেছেন। কেরাত, ফরায়েজ, কালাম, খেতাব, কেতাবত, তাবীর, নক্ষত্রবিদ্যা, তিব্ব, কবিতা, ছন্দবিদ্যা ও অংক প্রভৃতি শাস্ত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রেই তাঁকে মুসলমানদের ইমাম মান্য করে। তিনি সুফি শাস্ত্রেও ইমাম ছিলেন। এ শাস্ত্রের অসংখ্য বুজর্গ সাধক নিজেদেরকে হযরত আলির (রাঃ) ত্বরিক্বাপন্থী বা অনুসারী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
‘নাহাজুল বালাগাহ’ নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থটি হযরত আলির (রাঃ) নির্মিত বলে প্রচলিত। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ গ্রন্থে হযরত আলি (রাঃ) জ্যোতিষশাস্ত্র সম্পর্কে বলেন;
“হে মোমেন সব তোমরা জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষা করো না,
হ্যাঁ ততটুকু শেখো যতটুকু দ্বারা আত্মরক্ষা করা চলে”।
হযরত আলি (রাঃ) জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা করতেন বলেও কথিত আছে। সুতরাং; বলা যায়; খোদার ওপর খোদকারী নয়; প্রকৃতপক্ষে জ্যোতিষ শাস্ত্র দ্বারা স্রষ্টার অপার মহিমা; জীবন পথের পাথেয় নির্দেশনা; জীবন দর্শনের গতিধারা; আধ্যাত্মিকতার সন্ধান; বাস্তব জীবনের রূপরেখা ও বর্তমান সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। আর এর ভিত্তি হচ্ছে জন্মকালীন গ্রহ ও গ্রহদের অবস্থানের সঠিক গণনা।”।৩
উল্লেখ্য; এখানে যদিও আলি আরবীয় পৌরাণিক চরিত্র; তবুও; কেবল যুক্তির জন্য আলোচনা করা হয়েছে। আর কেবল শিক্ষার জন্য আলোচনা করা হয়েছে।
অত্যন্ত চমৎকার বিষয় হলো শ্বরবিজ্ঞানে ও পুরাণে আত্মতত্ত্বের সব বিষয়বস্তুকে অনেক ব্যবধানে দেখানো হয়। অর্থাৎ; মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তুকে আড়াল করে উপমার মাধ্যমে আলোচনা করা হয়। যাতে পাঠকরা পড়েও বুঝতে না পারে, ও শ্রোতারা শুনেও বুঝতে না পারে। নিচে আরবীয় পুরাণে ব্যবহৃত পরিভাষাগুলোর দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি উদ্ঘাটন করা হলো;
আবু তালিব (অন্বেষীর পিতা) = শিষ্য।
আব্দুল মুত্তালিব (জ্ঞানান্বেষীর পিতা) = শিষ্য।
আলি (অটল) = অটল।
কুরাইশ (বিখণ্ডিত) = সন্তান।
জিব্রাইল (অত্যন্ত কঠিন) = বাক্ দেবতা বলন।
জ্যোতিষী = জ্ঞান।
নজ্জম (জ্যোতিষী) = জ্ঞান।
নবুয়ত (প্রচারকাল) = রজকাল।
যমযম (কূপ) = জননপথ (বৈতরণী)।
বনু লাহাব (অগ্নিধারী) = কাম আগুনধারী যুবক/যুবতী।
মক্কা (চুষণকারী) = যোনি কবন্ধ।
মুহাম্মদ (প্রশংসিত) = সাঁই।
পনের বছর = কিশোরীর রজস্বলা হওয়ার বয়স।
মহাপুরুষ = সাঁই।
হিরা (পর্বত) = দেহ।
১০টি সন্তান = ১০ ইন্দ্রিয়।
১০টি উঠ = ১০ ইন্দ্রিয়।
২৫ বছর = ২৫ গুণ।
৪০ বছর = ৪০ তলা।
১০০টি উঠ = শতদল।
(তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ; ৪র্থ খণ্ড; লেখক; বলন কাঁইজি)।
©somewhere in net ltd.