নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সারাবিশ্বের সকল গুরু, গোঁসাই, পির, মুর্শিদ, ভক্ত আসেকান ও তরিকাপন্থী সকলের পবিত্র চরণে প্রেমভক্তি রইল। এই আইডির ও গুরু গৃহ পেইজের সকল পোস্ট বিষয় ভিত্তিক ও গবেষেণাধর্মী। এখানে সাধারণ কোনো পোষ্ট দেওয়া হয় না। তাই; সবাইকে বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে; কোনো জাতি

পরম কাঁইজি

সারাবিশ্বের সকল গুরু, গোঁসাই, পির, মুর্শিদ, ভক্ত আসেকান ও তরিকাপন্থী সকলের পবিত্র চরণে প্রেমভক্তি রইল। এই আইডির ও গুরু গৃহ পেইজের সকল পোস্ট বিষয় ভিত্তিক ও গবেষেণাধর্মী। এখানে সাধারণ কোনো পোষ্ট দেওয়া হয় না। তাই; সবাইকে বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে; কোনো জাতি, ধর্ম ও শাস্ত্রীয় মতবাদকে ছোট করা বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা আমাদের লেখার উদ্দেশ্য নয়। তথাপিও; যদি; অজানতে আমাদের লেখার বিষয়বস্তু বা কোনো বাক্য কারো মতের বিপক্ষে যায়; সেক্ষেত্রে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মনে রাখতে হবে; যেহেতু; আমাদের পোস্টগুলো বিষয় ভিত্তিক ও গবেষণাধর্মী। লেখকের লেখার উদ্দেশ্য সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা; কাউকে হেওপ্রতিপন্ন করা নয়। তাই; সকলের প্রতি আবারও বিনীত নিবেদন; প্রতিটি পোস্টে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের করে লেখককে উৎসাহিত করবেন। যেহেতু; প্রতিটি পোস্ট তৈরিতে লেখকের প্রচুর মেধা ও শ্রম ব্যয় হয়। আর যদি তা না পারেন; তবে; খারাপ মন্তব্য করা হতে বিরত থাকবেন। লেখাতে তথ্যগত ভুল, অসংগতি ও ইতিহাস বিভ্রাট দেখা গেলে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন। গুরু গৃহ কর্তৃপক্ষ ও পরম কাঁইজি

পরম কাঁইজি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামী পৌরাণিক মি’রাজ

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:২৮

ইসলামী পৌরাণিক মি’রাজ

(المعرﺍﺝ الأسطورية الإسلامية)
(Islamic mythological ascent)
ভূমিকা (Introduction)
মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) আরবি পরিভাষা। এটি ইসলামী সাম্প্রদায়িক শাস্ত্রে ব্যবহৃত একটি অনন্য পরিভাষা। একে কেন্দ্র করে আরবীয় সুবিজ্ঞ রূপকারগণ অসংখ্য চমৎকার/ Miracles/ (معجزات) (মু’জিযা) নির্মাণ করেছেন। সুমহান রূপকার মনীষীগণের নির্মিত অনুপম চমৎকারসমূহ একত্র করেই সম্পাদিত হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত অসংখ্য মহাগ্রন্থ; যা বর্তমানে সাম্প্রদায়িক গ্রন্থ রূপে ব্যবহৃত ও স্বীকৃত। ইসলামী সাম্প্রদায়িক শাস্ত্রে বর্ণিত অগণিত পরিভাষার মধ্যে মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) একটি ব্যক্তিবাচক অনন্য পরিভাষা। অত্র সত্তাটির অলৌকিক কাহিনী জানার পর; এর প্রকৃত তথ্য, তত্ত্ব ও তাৎপর্য জানাও প্রয়োজন। তাই; আলোচ্য পরিভাষাটির প্রকৃত সত্তা, অর্থ ও পৌরাণিক পরিভাষার মূলক সত্তা উদ্ঘাটনের জন্য; নিচে কয়েকটি অভিধান অবিকল তুলে ধরা হলো। অতঃপর; সম্যক পর্যালোচনা শেষে সঠিক সমাধান প্রদান করা হলো।
আরবি মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) পরিভাষাটির অনুবাদসমূহ
(Translations of Arabic ascender terminology)
১. আরবি ফার্সি তুর্কি হিন্দি উর্দু শব্দের অভিধান (বাংলা একাডেমি)।[২]
মিরাজ; মেরাজ বি ১. সোপান ২. আরোহণ ৩. ইসলামী পুরাণ মতে; কুরাণে বর্ণিত নবীর আধ্যাত্মিক জগতে ভ্রমণ {আ. আররাজা (عرج) অর্থ; অস্ত যাওয়া; নিষ্প্রভ হওয়া >}
২. আল-কাওসার (আধুনিক আরবি-বাংলা অভিধান)।[৩]
‘معراج’ [মে’রাজুন] (আপৌছ)বি সিঁড়ি, পথ, ঊর্ধারোহণের অবলম্বন {আ. আররাজা (عرج) অর্থ; অস্ত যাওয়া; নিষ্প্রভ হওয়া >}
৩. ফরহঙ্গ.ই.রব্বানী (উর্দূ-বাংলা অভিধান)।[৭]
‘معراج’ [মি’রাজ] (আপৌছ)বি আঃ নাঃ স্ত্রীঃ; সোপান, আরোহণ, উচ্চতা (প্র) ইসলামী পুরাণে; নবী (সাঃ) আধ্যাত্মিক জগতে ভ্রমণ {আ. আররাজা (عرج) অর্থ; অস্ত যাওয়া; নিষ্প্রভ হওয়া >}
৪. ফরহাঙ্গে কাসেমী (উর্দূ বাংলা অভিধান)।[৮]
‘معراج’ [মি’রাজ] (আপৌছ)বি আং. না. স্ত্রী. সিঁড়ি, ধাপ, মই (প্র) ইসলামী পুরাণ মতে; নবীর ঊর্ধ্বগমন {আ. আররাজা (عرج) অর্থ; অস্ত যাওয়া; নিষ্প্রভ হওয়া >}
পর্যালোচনা (Reviews)
উপরোক্ত অনুবাদগুলোর মধ্যে; একটিও ‘معراج’ (মি’রাজ) পরিভাষার বাংলা অনুবাদ নয়। কারণ; উপরোক্ত অভিধানবিদগণ (Linguists) কেউই এর মূল বের করেন নি। আর মূল বের না করার কারণে; তাঁরা সঠিক অর্থ বা অভিধা বের করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সবাই কেবল গতানুগতিক সাম্প্রদায়িক পরিভাষা কানে শোনেই লেখার চেষ্টা করেছেন। তাই; কোথাও রূপক, উপমান, চারিত্রিক ও ছদ্মনাম পরিভাষাকেও শব্দের মূল অর্থ রূপে চালিয়ে দিয়েছেন। কেউ বলতে পারেন সবার অর্থ করাই ভুল; এটা কেমন কথা? দেখুন; কেবল আরবি আররাজা (عَرَّجَ) হতে কর্তাকারক (ফায়েল; (فا)) মুয়াররিজ (مُعَرِّجٌ) হয়। তারপর; মুয়াররিজ (مُعَرِّجٌ) হতে ‘معراج’ (মি’রাজ) করা হয়েছে। যেমন; বাংলায় বিকল হতে বৈকল্য করা হয়। এছাড়া; অন্য কোনো আরবি পরিভাষা হতে ‘معراج’ (মি’রাজ) পাওয়া যায় না। নিচে পরিভাষাটির সঠিক অভিধা দেওয়া হলো।
সমাধান (Solution)
মি’রাজ [ﻤﻌﺭﺍﺝ] (আপৌছ)বিণ ১. আরোহী, অধিরোহী, ঊর্ধ্বগামী, উদীয়মান, অধিরূঢ়, উত্তরণকারী, আরোহণকারী, ঊর্ধ্বগমনকারী, ঊর্ধ্বারোহণকারী, Mirage, Passenger, Climbing, ascending, ascender; ‘تصاعدي’ (তাসায়াদি) ২. অদৃশ্য, নিষ্প্রভ, নিষ্ক্রিয়, নিরুদ্দেশ, নিখোঁজ, প্রভাবহীন, দীপ্তিহীন, তিরোধান, জীবনশূন্য, সজিবতাহীন বি আরোহণ, ঊর্ধ্বগমন, ওপরে উঠা, ascent (প্র) ইসলামী পুরাণে বর্ণিত; কুরানের ঊর্ধ্বগমনকারী (ব্য্য) ১. আরবি (عَرَّجَ) > (مضا) (يُعَرِّجُ) > (مر) (عَرِّجْ) > (مص) (تَعْرِيْجٌ) > (فا) (مُعَرِّجٌ); অর্থ; যে অস্তমিত হয়। অতঃপর; আরবি মুয়াররিজ (مُعَرِّجٌ) পরিভাষা হতে মি’রাজ (مِعْراجٌ) গঠন করা হয়েছে। যার অর্থ; যে অস্তমিত হয়। অর্থাৎ; আরবি আররাজা (عَرَّجَ), অর্থ; অস্ত যাওয়া, নিষ্প্রভ হওয়া। তারপর; অতীতকাল (مضا) ইউয়াররিজু (يُعَرِّجُ); অর্থ; সে অস্ত গেছে। অতঃপর; আদেশসূচক (مر) আররিজ (عَرِّجْ); অর্থ; অস্ত যাও। তারপর; উৎপত্তি মূল (مص) তা’রিজু (تَعْرِيْجٌ); অর্থ; অস্তমিত হওয়া। অতঃপর; কর্তা (فا) মুয়াররিজ (مُعَرِّجٌ); অর্থ; যে অস্তমিত হয়। এরপর; আরবি মুয়াররিজ (مُعَرِّجٌ) পরিভাষা হতে মি’রাজ (مِعْراجٌ) হয়েছে। যার অর্থ; যে অস্তমিত হয় ২. ঋতুমতী রমণীদের রজস্রাব গড়ে সাড়ে তিন দিন দেহধামে দৃশ্য থাকার পর; সাতাশ (২৭) দিনের জন্য অদৃশ্য হয় বা ঊর্ধ্বগমন করে। আহলে বাত্বিনগণ একে নবীর ২৭ বছরের জন্য মি’রাজে গমণ বলে থাকেন। উল্লেখ্য; শ্বরবিজ্ঞানে ও পুরাণে এক দিনকে এক বছর বলা হয়। যারফলে; আধ্যাত্মিক পাণ্ডিত্যের জন্য সাতাশ (২৭) দিনকে সাতাশ (২৭) বছর বলা হয় (শ্ববি) রজ, আর্তব, স্রাব, menses, dust, menstrual, আদাত (আ.ﻋﺎﺪﺓ), কুরউ (আ.ﻘﺮﺃ), মাহিজ (আ.ﻤﺤﻴﺾ) (আঞ্চ) ঋতু, মাসিক (রূপ্রশ) অবতার, প্লাবন, বন্যা, ভার্গব, ভীষ্ম, রক্তবন্যা, লালজল, সরস্বতী (ইদে) নবী (আ.نبي), পয়গাম্বর (ফা.ﭙﻴﮕﻤﺒﺭ), হাওয়া (আ.ﺤﻮﺍﺀ) (ইপ) তোরাহ (ﺗﻮﺭﺍﺓ), ইঞ্জিল (আ.ﺍﻧﺠﻴﻝ), যাবুর (আ.ﺯﺒﻮﺭ) (ইংপ) messenger (দেপ্র) এটি ‘আরবীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’র ‘হায়েজ’ পরিবারের একটি ‘আরবীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. ইসলামী পুরাণে; সাধারণত; নবীর ঊর্ধ্বগমনকে মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) বলা হয় ২. শ্বরবিজ্ঞানে ঋতুমতীদের রজস্রাব গড়ে তিন দিন দৃশ্যমান থাকার পর; সাতাশ দিনের জন্য অদৃশ্য হওয়াকে রূপকার্থে বাংলায় বসিধের ঊর্ধ্বগমন ও আরবীয় পুরাণে মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) বলা হয় (বাপৌছ) আদিমাতা, ঘোষক২, শতরূপা, শেষ-বসিধ ও সরস্বতী (বাপৌচা) অরুণ, নক্ষত্র, বসিধ, মহল্লাল, রংলাল ও লালিমা (বাপৌউ) গরল, তিক্ত-জল, বন্যা, লালবাতি, সংবাদপত্র ও হলাহল (বাপৌরূ) জোয়ার (বাপৌমূ) রজ {আ. আররাজা (عرج) অর্থ; অস্ত যাওয়া; নিষ্প্রভ হওয়া >}।
মি’রাজের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some highly important quotations of ascender)
১. আসসালাতুল মি’রাজুল মু’মিনিনা, জানতে হয় নামাজের বেনা, বিশ্বাসীদের দেখাশুনা, লালন কয় এ জীবনে।” (পবিত্র লালন-৯২৮/৪)।[৭৭]
২. কোন নবী মদিনায় এলো, কোন নবীর চৌদ্দ বিবি ছিল, কোন নবী মি’রাজে গেল, কোন নবী আওয়াল আখিরি।” (পবিত্র লালন-৪৭১/২)।[৭৭]
৩. নবী মি’রাজ হতে এলেন ঘুরে, বলেন না ভেদ কারও তরে।” (পবিত্র লালন-৫৭৭/১)।[৭৭]
৪. নবী মি’রাজেতে গিয়ে, যে ভেদ তিনি এলেন নিয়ে, চারজনের চার গোল দেখে, লালন পড়ল বিষম গোলে।” (পবিত্র লালন-৫৭৭/৬)।[৭৭]
৫. নবীর কালিমা ভজব সুখে, নবী করলেন চৌদ্দ নিকেহ, কোন বিবির দেনা রেখে, নবী মি’রাজে গেল।” (পবিত্র লালন-৪৪/২)।[৭৭]
৬. নিগূঢ়-প্রেম কথাটি আজ আমি, শুধাই কার কাছে, কোন প্রেমেতে আল্লাহ নবী, মাসে মাসে মি’রাজ করছে।” (পবিত্র লালন-৬০০/১)।[৭৭]
৭. মি’রাজ হয় প্রকৃতির কারণ, গুপ্ত-ব্যক্ত হয় আলাপন, কে পুরুষ আকার- কে প্রকৃতি তার, শাস্ত্রে প্রমাণ কী আছে।” (পবিত্র লালন-৬০০/২)।[৭৭]
৮. মি’রাজের কথা শুধাব কারে, আদমতন নীর আকার মিথ্যা কী করে।” (পবিত্র লালন-৭৯০/১)।[৭৭]
৯. যাবি যদি ঊর্ধ্বগমনে (মি’রাজ) গমনে, সাধুর চরণ করগে ভজন, গোপনে নিরজনে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৬৭)।[৭৮]
১০. সৎগান যদি বিদাত হতো, তবে কী সুরে ফেরেস্তা গাইত, চেয়ে দেখ নবীকে মি’রাজের পথ, নৃত্যগীতে নেয়।” (পবিত্র লালন- ৯১০/৩)।[৭৭]
‘معراج المؤمنين’ [মি’রাজুল মু’মেনিন] (বাপৌছ)বি বিশ্বাসীদের আরোহী, বিশ্বাসীদের সারথী {আ. মি’রাজ (معراج) + আ. মু’মিনিন (مؤمنين) >}।
ইসলামী পুরাণে বর্ণিত নবীর মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) হয়েছিল। তবে; নবী কী? আমার নবী কে? মানুষের কোন সত্তার নাম নবী? পুরুষের নবী কয়টি ও কি কি? আবার; নারীর নবী কয়টি ও কি কি? পুরুষদেহের শেষ নবী কী? আবার; নারীদেহের শেষ নবী কি? নবী যার সংবাদ বহন করেন; তার উপাসনা কিভাবে করতে হয়? তা কেউ উল্লেখ করেন নি। সেজন্য; এটির দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি বের করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য; কোনো পৌরাণিক পরিভাষার দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তির বের করতে হলে, সর্ব প্রথমে পরিভাষাটির প্রপক বা পৌরাণিক কাহিনী উপস্থাপন করতে হবে। তাই; নিচে মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) এর আরবীয় পৌরাণিক কাহিনী তুলে ধরা হলো।
মি’রাজের বিবরণ (Details of ascending)
একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়; নবুয়্যতের দশম বছরের ২৭ রজব তারিখে নবী (সাঃ) আবু তালিবের মেয়ে হিন্দার বাড়িতে ছিলেন। আবার; অন্য কাহিনীতে বর্ণিত হয়েছে; ঐ রাতে নবী কা’বাতে ঘুমিয়েছিলেন। তিনি কা’বা'র ঐ অংশে ঘুমিয়েছিলেন; যেখানে কোনো ছাদ ছিল না (হাতিম)।
হিন্দার বিবরণ থেকে জানা যায়; ঐ রাতে নবী রাতের প্রার্থনা সেরে ঘুমাতে যান। অত্যন্ত ভোরে নবী (সাঃ) উঠে সবাইকে জাগালেন এবং নামাজ আদায় করলেন। হিন্দাও তাঁর সাথে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে; নবী (সাঃ) জানালেন; “ও উম্মেহানি (হিন্দার ডাক নাম); এই ঘরে আমি তোমাদের সাথে প্রার্থনা করেছি। যেমন; তোমরা দেখছো। তারপর; আমি পবিত্র স্থানে গিয়েছি ও সেখানে প্রার্থনা সেরেছি। তারপর; তোমাদের সাথে ভোরের প্রার্থনা সারলাম; যেমন; তোমরা দেখছো।”
শিষ্য আনাস (রাঃ); মালেক ইবনে সা’সায়া (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে; নবীকে যেই রাত্রে আল্লাহ পরিভ্রমণে নিয়ে গিয়াছিলেন; সেই রাত্রের ঘটনা বর্ণনায় সাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলিয়াছেন; যখন; আমি কা’বাগৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপনীত হইলাম; এবং তখনও; আমি ভাঙ্গা ঘুমে ভারাক্রান্ত ছিলাম) ঊর্ধ্বমুখী শায়িত ছিলাম। হঠাৎ; ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) আমার নিকট আসিলেন (এবং আমাকে নিকটবর্তী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়া আসিলেন)। অতঃপর; আমার বক্ষের ঊধর্ব র্সীমা হইতে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত চিরিয়া ফেলিলেন। তারপর; আমার হৃৎপিণ্ড বাহির করিলেন। অতঃপর; একটি স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হইল। যাহা ঈমান (পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞান বর্ধক) বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল। আমার হৃৎপিণ্ডকে (জমজমের জলে) ধৌত করিয়া; তাহার ভিতরে ঐ বস্তু ভরিয়া দেওয়া হইল। তারপর; হৃৎপিণ্ডকে নির্ধারিত স্থানে রাখিয়া আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করিয়া দেওয়া হইল। অতপর; আমার জন্য খচ্চর হইতে একটু ছোট; গাধা হইতে একটু বড়; শ্বেতবর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হইল; তাহার নাম ‘বোরাক’ (بوراك), যাহার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। সেই বাহনের ওপর আমাকে আরোহী করা হইল।
ঘটনা প্রবাহের ভিতর দিয়া জিবরাইল (আঃ) আমাকে নিয়া মাসজিদুল আকসায় উপস্থিত হইলেন। সেখানে সকল নবীদের সাথে আমি ইমাম হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করিলাম। তারপর; জিবারাইল আমাকে নিয়া তথা হইতে প্রথম আকাশের দ্বারে পৌঁছাইলেন এবং দুয়ার খুলিতে বলিলেন। ভিতর হইতে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হইল; জিবরাইল স্বীয় পরিচয় প্রদান করিলেন। অতঃপর; জিজ্ঞাসা করা হইল; আপনার সঙ্গে কে আছেন? জিবরাইল বলিলেন; নবী (সাঃ) আছেন। বলা হইল; (তাঁহাকে নিয়া আসিবার জন্যই তো আপনাকে) তাঁহার নিকট পাঠানো হইয়াছিল? জিবরাইল বলিলেন হ্যাঁ। তারপর; আমাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাইয়া দুয়ার খোলা হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় আদমকে (আঃ) দেখিতে পাইলাম। জিবরাইল আমাকে তাঁহার সহিত পরিচয় করাইয়া বলিলেন; ইনি আপনার আদিপিতা আদম (আঃ)। তাঁহার ওপর শান্তি সম্বোধন করুন। আমি তাঁহাকে ‘শান্তি হোক’ বলে সম্বোধন করিলাম। আমার শান্তি সম্বোধনের উত্তরে; আমাকে ‘সুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ আখ্যায়িত করিলেন।
অতপর; জিবরাইল আমাকে নিয়া দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দুয়ার খুলিতে বলিলেন। এখানেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হইল এবং শুভেচ্ছা ধন্যবাদ জনাইয়া দ্বার খোলা হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় ইয়াহইয়া (আঃ) ও ইসার (আঃ) সাক্ষাৎ পাইলাম। তাঁহাদের উভয়ের নানী পরস্পর ভগ্নী ছিলেন। জিবরাইল আমাকে তাঁহাদের সহিত পরিচয় দানের পর; শান্তি সম্বোধন করিতে বলিলেন; আমি তাঁহাদিগকে শান্তি সম্বোধন করিলাম। তাঁহারা আমার শান্তি সম্বোধনের উত্তর প্রদান করতো; ‘সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ বলিয়া ধন্যবাদ জানাইলেন।
অতঃপর; জিবরাইল (আঃ) আমাকে নিয়া তৃতীয় আকাশের দ্বারে পৌঁছিলেন এবং দুয়ার খুলিতে বলিলেন। তথায়ও; পূর্বের ন্যায় কথোপকথনের পর; শুভেচ্ছা স্বাগত জানাইয়া দুয়ার খোলা হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া ইউসুফের (আঃ) সাক্ষাৎ পাইলাম। জিবরাইল (আঃ) আমাকে তাঁহার সহিত পরিচয় করাইয়া শান্তি সম্বোধন করিতে বলিলেন; আমি তাঁহাকে শান্তি সম্বোধন করিলাম। তিনি শান্তি সম্বোধনের উত্তর দান করতো; আমাকে ‘সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ বলিয়া ধন্যবাদ জানাইলেন।
অতঃপর; আমাকে নিয়া জিবরাইল চতুর্থ আকাশের নিকটে পৌঁছিলেন এবং দুয়ার খুলিতে বলিলেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তরের পর; শুভেচ্ছা স্বাগত জানাইয়া দুয়ার খোলা হইল। আমরা ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় ইদ্রিসের (আঃ) সাক্ষাৎ পাইলাম। জিবরাইল (আঃ) আমাকে তাঁহার সহিত পরিচয় করাইয়া শান্তি সম্বোধন করিতে বলিলেন। আমি তাঁহাকে শান্তি সম্বোধন করিলাম। তিনি শান্তি সম্বোধনের উত্তর দিলেন। অতঃপর; ‘সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ বলিয়া আমাকে ধন্যবাদ জানাইলেন।
অতঃপর; জিবরাইল আমাকে লইয়া পঞ্চম আকাশে পৌঁছিলেন এবং দুয়ার খুলিতে বলিলেন। এই স্থানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর চলার পর; শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ দানের সহিত দুয়ার খোলা হইল। আমি ভিতরে পৌঁছিয়া হারুনের (আঃ) সাক্ষাৎ পাইলাম; জিবরাইল আমাকে তাঁহার সহিত পরিচয় দানের পর; শান্তি সম্বোধন করিতে বলিলেন। আমি শান্তি সম্বোধন করিলাম। তিনি আমার শান্তি সম্বোধনের উত্তর দিলেন এবং ‘সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ বলিয়া আমাকে ধন্যবাদ জানাইলেন।
তারপর; জিবরাইল আমাকে নিয়া ষষ্ঠ আকাশের দুয়ারে পৌঁছিলেন এবং দুয়ার খুলিতে বলিলেন। এই স্থানেও পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হইলে; জিবরাইল স্বীয় পরিচয় দান করিলেন; অতঃপর; সঙ্গে কে আছে জিজ্ঞাসা করা হইল। তিনি বলিলেন; নবী (সাঃ)। বলা হইল; তাঁহাকে নিয়া আসিবার জন্য অপনাকে পাঠান হইয়াছিল! জিবরাইল বলিলেন; হ্যাঁ। তৎক্ষণাত শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাইয়া দুয়ার খোলা হইল। তথায়; প্রবেশ করিয়া মূসার (আঃ) সাক্ষাৎ পাইলাম। জিবরাইল (আঃ) আমাকে তাঁহার সহিত পরিচয় জ্ঞাত করিয়া শান্তি সম্বোধন করিতে বলিলেন। আমি তাঁহাকে শান্তি সম্বোধন করিলাম। তিনি শান্তি সম্বোধনের উত্তর প্রদান করিলেন। অতঃপর; ‘সুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ বলিয়া আমাকে ধন্যবাদ জানাইলেন।
যখন; আমি এই অঞ্চল ত্যাগ করিয়া যাইতে লাগিলাম; তখন; মূসা (আঃ) কাঁদিতেছিলেন। তাঁহাকে কাঁদিবার কারণ জিজ্ঞাসা করা করিলাম। তখন; তিনি বলিলেন; আমি এই কারণে কাঁদিতেছি যে; আমার দলের মধ্যে স্বর্গ লাভকারীর সংখ্যা এই নবীর দলের স্বর্গ লাভকারীর সংখ্যা অপেক্ষা ন্যূন হইবে। অথচ; তিনি বয়সের দিক দিয়া যুবক এবং পৃথিবীতে প্রেরিত হইয়াছেন আমার পরে।
তারপর; জিবরাইল (আঃ) আমাকে নিয়া সপ্তম আকাশের দিকে আরোহণ করিলেন এবং দ্বারে পৌঁছিয়া দুয়ার খুলিতে বলিলেন। এই স্থানেও পূর্বের ন্যায় সকল প্রশ্নোত্তরই হইল এবং দুয়ার খুলিয়া শুভেচ্ছা ও স্বাগত জনান হইল। আমি ভিতরে প্রবেশ করিলাম। তথায় ইব্রাহিমের (আঃ) সাক্ষাৎ লাভ হইল। জিবরাইল আমাকে বলিলেন; তিনি আপনার (বংশের) আদিপিতা; তাঁহাকে শান্তি সম্বোধন করুন। (উল্লেখ্য; ইহুদী ও খ্রিস্টান পুরাণ অনুযায়ী, ইব্রাহিম (আঃ) হলেন; আদিপিতা)। আমি তাঁহাকে শান্তি সম্বোধন করিলাম। তিনি আমার শান্তি সম্বোধনের উত্তর দিলেন। অতঃপর; ‘সুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য সংবাদবাহক’ বলিয়া শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাইলেন।
অতঃপর; আমি ‘শাজারাতুল মুন্তাহা’ (شجرة المنتهى) এর নিকট উপনীত হইলাম। তাহা এক প্রকাণ্ড কূলবৃক্ষ বিশেষ। তাহার এক একটা কুল হজর অঞ্চলে প্রস্তুত (বড় বড়) মটকার মতো। এই গাছের একেকটি পাতা হাতীর কানের মতো। জিবরাইল আমাকে বলিলেন; এই বৃক্ষটির নাম ‘শাজারাতুল মুন্তাহা’। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখিতে পাইলাম; দুইটি ভিতরের দিকে ও দুইটি বাইরের দিকে প্রবাহিত। নদীগুলোর নাম সম্পর্কে আমি জিবরাইলকে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন; ভিতরের দিকে প্রবাহিত নদী দুইটির নাম ‘সালসাবিল’ ও ‘কাওসার’। আর বাহিরের দিকে প্রবাহমান নদী দুইটি হইল ‘নীল’ ও ‘ফোরাত’। তারপর; আমাকে ‘বায়তুল মা’মুন’ পরিদর্শন করান হইল। তথায়; প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হইয়া থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায়; সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ প্রাপ্ত হয় না)।
অতঃপর; (আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা প্রকাশ করিয়া দেখাইবার উদ্দেশে; পরীক্ষার জন্য) আমার সম্মুখে তিনটি পাত্র উপস্থিত করা হইল। একটিতে ছিল সুরা বা মদ; অপরটিতে ছিল দুগ্ধ; আরেকটিতে ছিল মধু। আমি দুগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করিলাম। জিবরাইল (আঃ) বলিলেন; দুগ্ধ সত্য ও খাঁটি স্বভাগত বৈশিষ্ট্যস্বরূপ; (সুতরাং; আপনি দুগ্ধের পাত্র গ্রহণ করিয়া ইহাই প্রমাণ করিয়াছেন যে) আপনি সত্যও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। আপনার জন্য আপনার দলও তাহার ওপর থাকিবে।
তারপর; আমার শরিয়তে প্রত্যেক দিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার বিধান করা হইল। আমি ফিরিবার পথে মূসার (আঃ) নিকটবর্তী পথ অতিক্রম করার সময়ে; তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন; বিশেষ কী আদেশ লাভ করিয়াছেন? আমি বলিলাম; পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। মূসা (আঃ) বলিলেন; আপনার উম্মত প্রতিদিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিতে সক্ষম হইবেন না। আমি; সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছি। আমি বনি ইস্রাইলগণকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়াছি। সুতরাং; আপনি প্রভুর কাছে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত নবী (সঃ) বলিলেন; তখন; আমি প্রভুর কাছে ফিরিয়া গেলাম। প্রভু (দুইবারে পাঁচ পাঁচ করিয়া) দশ ওয়াক্ত হ্রাস করিয়া দিলেন। অতঃপর; আমি আবার মূসার নিকট পৌঁছিলাম। তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শই দিলেন। আমি আবার; প্রভুর নিকট ফিরিয়া গেলাম; এইবারও (ঐরূপ) দশ ওয়াক্ত হ্রাস করিয়া দিলেন। পুনরায়; মূসার নিকট পৌঁছিলে; তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি আবার প্রভুর নিকট ফিরিয়া গেলাম এবং (পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত হ্রাস করিয়া দিলেন। পুনরায়; মূসার নিকট পৌঁছিলে; তিনি আমাকে এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি আবার প্রভুর নিকট ফিরিয়া গেলাম এবং (পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত হ্রাস করিয়া দিলেন।
এইবারও মূসার (আ:) নিকট পৌঁছার পর; তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি আবার প্রভুর কাছে ফিরিয়া গেলাম; এইবার আমার জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইল। এইবারও মূসার নিকট পৌঁছার পর; তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন; বিশেষ কী আদেশ লাভ করিয়াছেন? আমি বলিলাম; প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ প্রদান করা হইয়াছে। মূসা (আঃ) বলিলেন; আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেরও আদেশ পালন করিতে পারিবে না। আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি। আমি বনি ইস্রাইলগণকে অনেক পরীক্ষা করিয়াছি। আপনি আবার প্রভুর কাছে ফিরিয়া গিয়া আরও হ্রাস করার আবেদন জানান।
হযরত নবী (সঃ) বলিলেন; আমি মূসাকে বলিলাম; প্রভুর কাছে অনেকবার আসা-যাওয়া করিয়াছি; এখন আবার যাইতে লজ্জাবোধ হয়। আর যাইব না বরং পাঁচ ওয়াক্তের ওপরই সন্তুষ্ট রহিলাম এবং তাহা বরণ করিয়া নিলাম। হযরত নবী (সঃ) বলিলেন; অতপর; যখন; আমি ফিরিবার জন্য অগ্রসর হইলাম; তখন; আল্লাহর পক্ষ হইতে একটি ঘোষণা করা হইল; ‘আমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকি রাখিলাম; (আমার পক্ষে আমার বাক্য অপরিবর্তিতই থাকিবে) অবশ্য কর্মক্ষেত্রে দাসদের পক্ষে সহজ ও হ্রাস করিয়া দিলাম। (অর্থাৎ; কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত রহিল; কিন্তু পুণ্যের দিক দিয়া পাঁচই পঞ্চাশ পরিগণিত হইবে।) প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ পুণ্য দান করিব।” (বুখারী শরীফ, ৫ খণ্ড)।
“হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) মালিক ইবনু সা‘সায়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাঃ) মি’রাজ রাত্রির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁদের কাছে এও বলেন যে; তিনি যখন পঞ্চম আকাশে এসে পৌছলেন; হঠাৎ; তখন সেখানে হারুনের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ হইল। জিবরাইল (আঃ) বলিলেন; ইনি হইলেন হারুন (আঃ); তাঁকে শান্তি সম্বোধন করুন। তখন; আমি তাঁকে শান্তি সম্বোধন করিলাম। তিনি উত্তর দিয়া বলিলেন; ধন্যবাদ ‘পুণ্যবান ভাই ও পুণ্যবান নবী (সাঃ)’।
টীকা; সাবিত এবং আব্বাদ ইবনু আবূ আলী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে হাদিস বর্ণনায় কাতাদার (রহঃ) অনুসরণ করেছেন।” (বুখারী শরীফ ৩১৫৫)।[৫৫]
“ইব্রাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; নবী (সাঃ) বলেছেন; যে রাতে আমার মি’রাজ হয়েছিল; সে রাতে আমি মূসাকে (আঃ) দেখতে পেয়েছিলাম। তিনি হলেন; হালকা পাতলা দেহবিশিষ্ট ব্যক্তি; তাঁর চুল কোঁকড়ানো ছিল না। মনে হচ্ছিল তিনি যেন ইয়ামান দেশীয় শানুআ গোত্রের লোক। আর আমি ইসাকে (আঃ) দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন; মাধ্যম দেহবিশিষ্ট; গায়ের রং ছিল লাল। যেন তিনি এইমাত্র স্নানাগার থেকে বের হলেন। আর ইব্‌রাহিমের (আঃ) বংশধরদের মধ্যে; তাঁর সাথে আমার চেহারায় মিল সবচেয়ে অধিক। তারপর; আমার সামনে দুইটি পেয়ালা আনা হলো। তার একটিতে ছিল দুধ; আর অপরটিতে ছিল শরাব। তখন; জিব্‌রাইল (আঃ) বললেন; এ দু’টির মধ্যে যেটি চান; আপনি পান করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি নিলাম এবং তা পান করলাম। তখন; বলা হলো; আপনি স্বভাব ও প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছেন। দেখুন; আপনি যদি শরাব নিয়ে নিতেন; তাহলে; আপনার অনুসারীরা পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।” (বুখারী শরীফ ৩১৫৬)।[৫৫]
“ইব্রাহিম ইবনু মূসা মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; নবী (সাঃ) বলেছেন; মি’রাজ রজনীতি আমি মূসার (আঃ) দেখা পেয়েছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন; নবী (সাঃ) মূসার (আঃ) আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা (আঃ) একজন দীর্ঘদেহী, মাথায় কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট; যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। নবী (সাঃ) বলেন; আমি ইসার (আঃ) দেখা পেয়েছি। এরপর; তিনি তাঁর আকৃতি বর্ণনা করে বলেছেন; তিনি হলেন; মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট; যেন তিনি এইমাত্র হাম্মামখানা হতে বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইব্রাহিমকেও (আঃ) দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে; আকৃতিতে আমিই তার অধিক সা’দৃশ্যপূর্ণ। নবী (সাঃ) বলেন; তারপর; আমার সামনে দুইটি পেয়ালা আনা হলো। একটিতে দুধ; অপরটিতে শরাব। আমাকে বলা হলো; আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। তখন; আমাকে বলা হলো; আপনি স্বাভাবকেই গ্রহণ করেছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন; তাহলে; আপনার অনুসারীরা পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।” (বুখারী শরীফ ৩১৯৫)।[৫৫]
“ইসমাইল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি মসজিদে কা’বা থেকে রাতে অনুষ্ঠিত ইসরার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন যে; তিন ব্যক্তি (ফিরিস্তা) তাঁর নিকট হাজির হলেন; মি’রাজ সম্পর্কে ওহি অবতরণের পূর্বে। তখন; তিনি মাসজিদুল হারামে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। তাদেঁর প্রথম জন বললেন; তাদেঁর (তিন জনের) কোন জন তিনি? (যেহেতু; নবীর (সাঃ) পাশে হামযা ও জাফরও শুয়ে ছিলেন) মধ্যম জন উত্তর দিলেন; তিনিই (নবী (সাঃ) তাদেঁর শ্রেষ্ঠ জন। আর শেষ জন বললেন; শ্রেষ্ঠ জনকে নিয়ে চল। এ রাত্রে এতটুকুই হলো; এবং নবীও (সাঃ) তাদেরকে আর দেখেন নাই। অতঃপর; আরেক রাতে তাঁরা আগমন করলেন। নবীর (সাঃ) অন্তর তা দেখতে পাচ্ছিল। যেহেতু; নবী (সাঃ) এর চোখ ঘুমাত কিন্তু তাঁর অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। সকল নবীর অবস্থা এমনই ছিল যে; তাঁদের চোখ ঘুমাত কিন্তু অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। তারপর; জিবরাইল (আঃ) (ভ্রমণের) দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং নবীকে (সাঃ) নিয়ে আকাশের দিকে চড়তে লাগলেন।” (বুখারী শরীফ ৩৩১৭)।[৫৫]
“আদম (রহঃ); আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন; আকাশের দিকে নবীর (সাঃ) মি’রাজ হলে; তিনি বলেন; আমি একটি জলাধারের (নদী) ধারে পৌঁছলাম; যার উভয় তীরে ফাঁপা মুক্তার প্রস্তুত গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম; হে জিবরাইল! এটি কি? তিনি বললেন; এটিই (হাউযে) কাওসার।” (বুখারী শরীফ ৪৬০০)।[৫৫]
যতদূত জানা যায়; মি’রাজের ওপর মোট ২২ জন রাবির বর্ণিত ২৫টি হাদিস পাওয়া যায়। তারমধ্যে; আমরা ওপরে ৬টি হাদিস উল্লেখ করেছি। এ হতেই বুঝা যায় যে; সব হাদিস বর্ণনার মূল উপাদান একই; বিধায় অবশিষ্ট হাদিসগুলো দেখানোর প্রয়োজন নেই।
ইসলামী পুরাণের বর্ণনা অনুসারে; যে রাতে নবী ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন; সেই রাতকে ‘লাইলাতুল মি’রাজ’ বলা হয়। মুসলমানরা বিভিন্ন উপাসনার মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মি’রাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে। কেননা; এই মি’রাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক রূপে নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ; দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নির্দিষ্ট করা হয়। ইসলামী পুরাণ অনুযায়ী; নবীর নবুওয়াত প্রকাশের একাদশ বৎসরের (৬২০ খ্রিষ্টাব্দ) রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে; নবী প্রথমে কা’বা শরিফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় গমন করেন। তারপর; সেখানে; তিনি নবীদের জামায়াতে ইমামতি করেন। অতঃপর; তিনি বোরাক (بوراك) বাহনে আসীন হয়ে; ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। ঊর্ধ্বাকাশে শাজারাতুল মুন্তাহায় সামান্য বিরতি গ্রহণ করেন। এই ভ্রমণে জিবরাইল ফেরেশতা তাঁর ভ্রমণ সঙ্গী ছিলেন। এ ব্যাপারে কুরানে একটি মাত্র আয়াত পাওয়া যায়। যথা; “سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ” উচ্চারণ; “সুবহানাল্লাজি আসরা বিআবদিহি লাইলাম মিনাল মাসজদিল হারামি ইলাল মাসজদিল আকসা। আল্লাজি বারাকনা হাওলাহু লিনুরিহি মিন আয়াতিনা; ইন্নাহু হুয়াস সামিউম বাসির।” অর্থ; “পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় দাসকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন পবিত্র মন্দির থেকে মহা পবিত্র মন্দির পর্যান্ত; যার চার দিকে আমরা পর্যাপ্ত কল্যাণ দান করেছি; যাতে আমরা তাঁকে জ্যোতির কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।” কুরানের কোথাও মি’রাজের স্পষ্ট বর্ণনা নেই। হাদিসে যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা পুরোটাই মিথ।
মতামত (Opinion)
মুসলমান সম্প্রদায়ের মূল ধর্মগ্রন্থ কুরান। কিন্তু কুরানের কোথাও ‘মি’রাজ’ পরিভাষাটির ব্যবহার দেখা যায় না। কিন্তু; যখন; অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদের নবুয়্যতের বা ঐশ্বিক বাণীর প্রমাণস্বরূপ স্বর্গে আরোহণ করার প্রমাণ আনতে বলে; তখন সেখানে উল্লিখিত শব্দ ছিল তারকা ফিস সামায়ী; স্বর্গে আরোহণ করো। যেখানে তারকা মানে আরোহণ করো; আর শব্দটি রাকিয়া থেকে উদ্ভূত; যার অর্থ ‘সে আরোহণ করেছিল’। আরবি মি’রাজ শব্দটি আরাজা (عَرجَ) থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। কিন্তু এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো; রাকিয়া দ্বারা দৈহিক আরোহণ বুঝায়। অন্যদিকে; আরাজা দ্বারা আধ্যাত্মিক আরোহণ বুঝায়। তাই; কুরান কর্তৃক মুহাম্মদের ‘আধ্যাত্মিক আরোহণ’ প্রমাণিত (ইসলামের ধারাবাহিক ইতিহাস: প্রথম খন্ড: মহানবী (স:), ডক্টর ওসমান গনী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। সংগ্রহের তারিখ: ১৭ জুন ২০১২ খ্রিস্টাব্দ)। এসব মহা বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা।
ইসলামী পুরাণে বর্ণিত মি’রাজ কাহিনীর উপাদান বিশ্লেষণ
(The elements analysis of the Miraj story narrated in the Islamic mythology)


ইসলামী পৌরাণিক বাইত আলমা’মুন/ বাইত আলআমান
(الأساطير الإسلامية بيت المأمون / بيت الأمان)
(Islamic mythological safe house/ safety house)
ভূমিকা (Introduction)
বায়তুল মামুন (بيت المأمون) আরবি পরিভাষা। এর বাংলা নিরাপদ ঘর বা নিরাপদ বাড়ি। ইংরেজিতে বলা হয় Safe house/ Sure safe house. ইসলামী পুরাণে ঘরটির বৈশিষ্ট্য ব্যাপারে বলা হয়েছে যে; এটি; মানব ও দানবের উপাসনার ঘর নয়। এটি কেবল দেবতাগণের উপাসনা ঘর। তাই; এখানে কেবল স্বর্গীয় দূতগণই উপাসনা করেন। প্রভুর দেবতা সংখ্যা অনেক। দেবতা সংখ্যা এতোই অধিক যে; “যে দল একদিন সুযোগ পায়; সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ প্রাপ্ত হয় না।”
সাধারণ বিবরণ (General details)
ইসলামী পৌরাণিক বর্ণনা হতে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে; সেই পবিত্র ঘরটি হলো নারীজাতির ‘জরায়ু’। এখান থেকে যে একবার বের হয়; সে আর কখনও নিজ রূপে নিজ ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। তবে; আবার বীর্য রূপ ধারণ করে প্রবেশ করে; সন্তান রূপে বের হতে পারে। আর দেবতার দল বলতে মানুষের জ্ঞান, মন, রিপু, রুদ্র, দশা, মন্দা এবং ইন্দ্রিয়াদি বুঝানো হয়েছে। তারপর; বলা হয়েছে; সেখানে চারটি নদী আছে। দুইটি ভিতরে (‘সালসাবিল’ ও ‘কাওসার’) ও দুইটি বাইরে (‘নীল’ ও ‘ফোরাত’) প্রবাহিত। সাধুশাস্ত্র মতে; মানবদেহে সাত সাগর তের নদী আছে। পঞ্চ জ্ঞানিন্দ্রিয় এবং জ্ঞান ও মনকে একত্রে সাত সাগর বলা হয়। অন্যদিকে; ছয় রিপু ও সাত সাগরকে একত্রে তের নদী বলা হয়। অথবা তের নদী হলো; অশ্রু/ শিকনি/ বিষ্ঠা/ মূত্র/ ঘর্ম/ কফ/ রক্ত/ রজ/ লালা/ শুক্র/ দুগ্ধ/ সুধা ও মধু। তারমধ্যে; এখানে শুক্র, দুগ্ধ, সুধা ও মধুর কথা বলা হয়েছে। কারণ; শুক্র ও দুগ্ধ দেহের বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে; সুধা ও মধু সারা দেহ হতে জরায়ুর দিকে প্রবাহিত হয়। আবার; তিনটি পাত্রের মধ্যে দুধের পাত্র গ্রহণ করা বলতে; সহজ প্রাপ্যতার কথা বলা হয়েছে। আর পঞ্চাশবার উপাসনা করা বলতে পঞ্চ জ্ঞানিন্দ্রিয় সজাগ রাখাকে বুঝানো হয়েছে। পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ দ্বারা পঞ্চ জ্ঞানিন্দ্রিয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ; পঞ্চাশ সংখ্যাটি পাঁচের সাথে দশগুণ পুণ্যের গুণিতক। পাঁচ ওয়াক্ত করে নামাজ হ্রাস করা দ্বারা প্রতি জন্মে জন্মে পঞ্চ জ্ঞানিন্দ্রিয় নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং পঞ্চ জ্ঞানিন্দ্রিয় সঠিকভাবে সক্রিয় করা বুঝানো হয়েছে।
বাইবেল গ্রন্থেও এমন চারটি নদীর বর্ণনা রয়েছে। যেমন; বাইবেলের বর্ণনা মতে; আদিমানব আদমকে সৃষ্টি করার পর; ঈশ্বর তাকে ইডেন নামক স্বর্গে বসবাস করতে দেন। ইডেনের অবস্থান ব্যাপারে বাইবেলে বলা হয়েছে যে; ঈশ্বর পূর্বদিকে ইডেন উদ্যান নির্মাণ করেন। অতঃপর; সেখানে আদমকে থাকতে দেন। তারপর; ঈশ্বর ঐ উদ্যানে সর্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্যদায়ক বৃক্ষ রোপন করেন। সে উদ্যানের মধ্যখানে জীবনবৃক্ষ ও সতত জ্ঞানদায়ক বা সদাসদ জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ উৎপন্ন করেন। এ উদ্যানের সেচন কাজের জন্য এর মধ্যস্থল হতে চতুর্মুখী বা চার ধারাযুক্ত এক নদী সৃষ্টি করেন। প্রথম ধারার নাম পিশোন; যা সমস্ত হবিলাদেশ বেষ্টন করে প্রবাহিত হতো। সে নদীতে স্বর্ণ উৎপন্ন হতো। এছাড়া; গুলগুল ও গোমেদক মনি জন্মিত বলেও উল্লেখ আছে। দ্বিতীয় ধারার নাম ছিল গিহোন; যা সমস্ত কুশদেশ বেষ্টন করে প্রবাহিত হতো। তৃতীয় ধারার নাম ছিল হিদ্দেকল; এটি; অশুরিয়া দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। চতুর্থ ধারার নাম ছিল ফুরাৎ; যা নিয়ে কারবালা উপন্যাস নির্মিত হয়েছে। (আদিপুস্তক- ২/৮-১৪)।[২৪]
তাই; বলা যায়; ইসলামী পুরাণের এসব বর্ণনা নতুন নয়। এগুলো বাইবেল হতে সংকলন করা কাহিনী। ইসলামী পুরাণ ভালোভাবে না জেনে কেবল পাপ-পুণ্য ও স্বর্গ-নরক ব্যবসা কতটুকু সমীচীন?
সারকথা; রজস্বলা নারীদের পবিত্রকালের সাতাশ দিন রজস্রাব থাকে না। এই সাতাশ দিনকেই ইসলামী পুরাণ বা আরবীয় পুরাণে রজস্রাবের মি’রাজ (معراج) বা ঊর্ধ্বগমন বুঝানো হয়েছে।
নবীর মি’রাজ; ইতিহাস নাকি মিথ? (Prophet's Miraj; History or Myth?)
একটি আত্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (An apperceptive analysis)
মি’রাজ কী, কার মি’রাজ, কেন মি’রাজ, কোথায় মি’রাজ ও কিভাবে মি’রাজ? এটা কি কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা নাকি ইসলামী পৌরাণিক কাহিনী? অথবা কোনো মহিমান্বিত মহামানবের স্বশরীরে ঊর্ধ্বারোহণ, ঊর্ধ্বগমন; নাকি নিদ্রাযোগে কল্পনার রাজ্যে স্বপ্ন বিলাস? মি’রাজ কি অতীত স্মৃতির জাবরকাটা; নাকি মানবজীবনের চলমান ঘটনা? অথবা বিষয়টি নারী জীবনের অবসম্ভাবী ও অপরিহার্য বাস্তবতা? এধরণের অসংখ্য প্রশ্ন ও যুক্তিতর্কে মুসলমান সম্প্রদায়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিকতায় কার কী লাভ-ক্ষতি; তা বিশ্লেষণ করতেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। আরবীয় পৌরাণিক ‘معراج’ (মি’রাজ) কাহিনী জানার আগে; নবী, মি’রাজ, ইতিহাস ও মিথ পরিভাষাসমূহ জানা প্রয়োজন। এজন্য; এসব পরিভাষা দিয়েই ‘معراج’ (মি’রাজ) আলোচনা আরম্ভ করা হলো।
ইসলামী পৌরাণিক নবী
(النبي الأسطورية الإسلامية)
(Islamic mythological prophet)
নবী (نبي) আরবি পরিভাষা। এর বাংলা অর্থ; ঐশি সংবাদ বাহক। তাই; সাধারণ সাংবাদিককে বলা হয় সাহাফি (صحافي) এবং ঐশি সাংবাদিককে বলা হয় নবী (نبي)। নবীর ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজি বলেছেন; প্রত্যেকের নবী ভিন্ন ভিন্ন। যার নবী তাকেই চিনতে হবে। তিনি আরও বলেছেন যে; কোনো সাম্প্রদায়িক মতবাদে বর্ণিত অন্ধবিশ্বাসী নবী দ্বারা মানুষের কোনো উপকার হবে না। যেমন; তিনি বলেছেন;
১. “১জানো যদি নবীনামা,
বলে দিবে আজ আমারি,
কোনো নবী করে শরা জারি।
২কোন নবী মদিনায় এলো,
কোন নবীর চৌদ্দ বিবি ছিল,
কোন নবী মি’রাজে গেল,
কোন নবী আওয়াল আখিরি।
৩কোন নবীর হয়রে ওফাত,
কোন নবী জারি করেন আয়াত,
কোন নবী দেয় দীনের দাওয়াত,
কোন নবী পারের কাণ্ডারী।
৪যে নবীর চৌদ্দ বিবি ছিল,
তিন বিবির সন্তান হলো,
এগারো বিবির কী দোষ ছিল,
ফকির লালন ভাবে তারই।” (পবিত্র লালন- ৪৭১)।[৭৭]
২. “১নবী নবী বলো কারে,
নবী দেখি কয়েক জনা,
কোন নবীর করব ভজনা।
২স্বর্গ হতে অবতরণ কেউ কয়,
কেউ বলে নবীর জন্ম হয়,
নবী দেহের শেষ অবতার হয়,
কেউ জানে কেউ জানে না।
৩যে নবী কয় ধর্ম বচন,
তারে চেনে ধরে কয়জন,
ঘুরে সবে পাগলের মতন,
আপন ঘর কেউ খোঁজে না।
৪জিন্দা নবীর খবর করে,
রসিক ত্রিবেণীতে অধর ধরে,
আপন কর্ম আপনি সারে,
লালনের ভাগ্যে হলো না।” (পবিত্র লালন- ৫৭৪)।[৭৭]
ইসলামী পৌরাণিক খাতামান নবী (Islamic mythological last Prophet)
খাতামান নবীয়্যিন (خَاتَمَ النَّبِيِّين)/ Seal of the Prophets, হায়াতুন নবী (حيات النَّبِيِّ)/ Living Prophet, আখেরি নবী (آخرى النَّبِي) ও খাতামাল আম্বিায়া (خَاتَمَ الانبياء) ইত্যাদি পরিভাষাও অনেক সময় কর্ণগোচর হয়। যেমন; কুরানে আছে; “مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا”; উচ্চারণ; “মা কানা মুহাম্মাদুন আবা আহাদিম মির রিজালিকুম। ওয়া লাকির রাসুল আল্লাহ। ওয়া খাতামান নাবিয়্যিন। ওয়া কানা আল্লাহ বিকুল্লে শায়্যিন আলিমা।” অর্থ; “সাঁই তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি কাঁইয়ের দূত এবং শেষ বসিধ। কাঁই সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” ইংরেজি অনুবাদ; “Muhammad is not the father of any one of your men, but he is the Messenger of Lord. And last of the prophets. And ever is Lord, of all things, Knowing.” (কুরান; সুরা আহযাব-৪০)।[৩৬]
তাই; সর্বপ্রথম আমাদের নবী চেনা প্রয়োজন। আরো চেনা প্রয়োজন যে; নবী কি? আমার নবী কয়জন? আমার শেষ নবী কে? স্মরণীয় যে; ইসলামী পুরাণে বর্ণিত নবী কেবল রূপকথার নবী। সেজন্য; যার যার নবী এবং যার যার শেষ নবী চেনা প্রয়োজন। তবেই; ইসলামের নবী ও কুরানের নবী চেনা সম্ভব হবে।
মানবসন্তান জন্মগ্রহণের পর; তার দেহে যা যা উদ্গত, উদ্ভব, অবতরণ ও সৃষ্টি হয় সেগুলোই তার নবী (অবতার)। অর্থাৎ; মানবসন্তান জন্মের পর তার মধ্যে অবতীর্ণ ও উদ্গত সবই ঐশিদূত (নবী)। পূর্বেই বলা হয়েছে যে; নবী অর্থ ঐশি সাংবাদিক। যেমন; পুত্র সন্তান জন্মের পর প্রথমে দাঁত উদ্গত হয়। তাই; দাঁত তার প্রথম নবী (অবতার)। তারপর; উদ্গত হয় গোঁফ; তারপর; দাড়ি। বাহ্যিকভাবে দাড়ির পর আর কোনো ঐশিদূত অবতরণ করে না। সেজন্য; দাড়িকেই পুরুষদেহের সর্বশেষ ঐশি অবতার বা শেষ নবী (অবতার) বলা হয়। তবে; গোঁফ ও দাড়ি উদ্গত হওয়ার পর; যুবকদের দেহে শুক্র বা বীর্য উদ্গত হয়। এটি; অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটি দেখা যায় না। তাই; শুক্রকে নবী রূপে গণ্য করা হলেও শেষ নবী রূপে গণ্য করা যায় না।
অন্যদিকে; কন্যা সন্তান জন্মের পর প্রথমে দাঁত উদ্গত হয়। তাই; দাঁত তার প্রথম নবী। তারপর; স্তন; তারপর; রজস্রাব। রজস্রাবের পর আর কোনো ঐশিদূত অবতরণ করে না। সেজন্য; রজস্রাবকেই নারীদেহের সর্বশেষ ঐশিদূত বা শেষ নবী বলা হয়।
যারফলে; এখানে নিজের নবী চেনা হলো। আরও চেনা হলো যে; পুরুষদেহের শেষ নবী ‘দাড়ি’ ও নারীদেহের শেষ নবী ‘রজ’। অন্যদিকে; ইসলামী পুরাণে বর্ণিত নবী হলেন রূপক ও কাল্পনিক। তাই; কাল্পনিক বা রূপক নবীর প্রেম, অন্বেষণ ও উপাসনা পরিত্যাগ করে; আপন আপন নবী চেনা ও তাদের কার্যক্রম জানা ও বুঝার দিকে আগ্রহী হওয়া সব বুদ্ধিমানের একান্ত প্রয়োজন।
মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) আরবি পরিভাষা। এর অর্থ; আরোহী, অধিরোহী, ঊর্ধ্বগামী, উদীয়মান, অধিরূঢ়, উত্তরণকারী। মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) পরিভাষাটির পূর্বে; ফার্সি শব (شب) পরিভাষা যুক্ত করে বলা হয় ‘শব ই মি’রাজ’। ফার্সি শব (شب) অর্থ ‘রাত’। অন্যদিকে; আরবীয় পুরাণে মি’রাজ পরিভাষাটির পূর্বে লাইলুন (ليل) পরিভাষা যুক্ত করে বলা হয় ‘লাইলাতুল মি’রাজ’। লাইলুন (ليل) অর্থ ‘রাত’। তবে; এটি বাংভারতের মুসলমানদের কাছে ‘শবে মি’রাজ’ নামেই অধিক পরিচিত। যেমন; লালন সাঁইজি লেখেছেন;
১. “আসসালাতুল মি’রাজুল মু’মিনিনা।” (পবিত্র লালন- ৯২৮/৪)।[৭৭]
২. “কোন নবী মি’রাজে গেল।।” (পবিত্র লালন- ৪৭১/২)।[৭৭]
৩. “নবী মি’রাজে গেল।” (পবিত্র লালন- ৪৪/২)।[৭৭]
৪. “মাসে মাসে মি’রাজ করছে।” (পবিত্র লালন- ৬০০/১)।[৭৭]
৫. “মি’রাজ হয় প্রকৃতির কারণ।” (পবিত্র লালন- ৬০০/২)।[৭৭]
৬. “নবী মি’রাজ হতে এলেন ঘুরে।” (পবিত্র লালন- ৫৭৭/১)।[৭৭]
৭. “নবী মি’রাজেতে গিয়ে।” (পবিত্র লালন- ৫৭৭/৬)।[৭৭]
৮. “মি’রাজের কথা শুধাব কারে।” (পবিত্র লালন- ৭৯০/১)।[৭৭]
৯. “চেয়ে দেখ নবীকে মি’রাজের পথ।” (পবিত্র লালন- ৯১০/৩)।[৭৭]
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে; ইসলামের ও কুরানের নবী রূপক ও কাল্পনিক। অন্যদিকে; মানুষের নবী বাস্তব। তবে; নারী ও পুরুষের নবী ভিন্ন ভিন্ন। তাই বুঝতে হবে; কুরানে বর্ণিত ইসলামী পৌরাণিক নবী এবং নারী ও পুরুষের বাস্তব নবী কখনও এক নয়। মানুষে বিদ্যমান নবী বাস্তব। অন্যদিকে; কুরানে ও ইসলামী পুরাণে বর্ণিত নবী উপমান ও কাল্পনিক।
আর যেহেতু; আরবি মি’রাজ অর্থ আরোহী। তাহলে; সবার আগে জানতে হবে; কোনো নবী আরোহণ করেন? কোথা হতে কোথায় আরোহণ করেন? বাংলা ব্যাকরণ অনুসারে; যিনি আরোহণ করেন তিনিই আরোহী। তাহলে; আরোহণ করতে পারে, আরোহণ করে; এমনকি; আরোহণ করছে এমন নবী অবশ্যই আছে। আর সেই বাস্তব নবীর ব্যাপারেই ইসলামী পৌরাণিক মি’রাজের এতো আলোচনা।
পুরুষদেহে দাঁত একবার আগমন করলে সহজে ঊর্ধ্বগমন করে না। স্মরণীয় যে; বিভিন্ন রোগে পুরুষদের অকালে দাঁত পড়ে যাওয়া ভিন্ন কথা। তাই; এখানে দাঁত পড়াকে পুরুষদেহ হতে দাঁতের ঊর্ধ্বগমন রূপে গণ্য করা যাবে না। আবার; গোঁফ ও দাড়ি একবার আগমন করার পর; আর কখনই; ঊর্ধ্বগমন করে না। আর শুক্রও একবার আগমন করার পর; আর কখনই ঊর্ধ্বগমন করে না।
নারীদেহেও দাঁত একবার আগমন করার পর; আর কখনই; ঊর্ধ্বগমন করে না। স্মরণীয় যে; বিভিন্ন রোগে নারীদের অকালে দাঁত পড়ে যাওযাটা ভিন্ন কথা। তাই; এখানে দাঁত পড়াকে নারীদেহ হতে দাঁতের ঊর্ধ্বগমন রূপে গণ্য করা যাবে না। আর নারীদের স্তন একবার আগমন করার পর; আর কখনই ঊর্ধ্বগমন করে না। তবে; স্তন বড় ও ছোট হওয়া; শেষ বয়সে শুকিয়ে যাওয়া; এসব জৈবিক অবস্থা মাত্র।
কিন্তু; নারীদের রজস্রাব প্রথম আগমনের পর হতে প্রতিমাসে একবার আগমন ও ঊর্ধ্বগমন করে। ১১ হতে ৪০ বছরের মধ্যবর্তী ৩০ বছরে রজ ৩৬০ বার আগমন-ঊর্ধ্বগমন করে। অর্থাৎ; নারীদের শেষ নবী প্রতি মাসে একবার আগমন ও ঊর্ধ্বগমন করে। তাই; এখন স্পষ্ট করেই বলা যায় যে; ইসলামী, মুসলমানী ও কুরানী মি’রাজের সব মিথের মূল হলো; নারীদেহের ‘রজ’। অর্থাৎ; প্রতিমাসে রজস্রাব আগমন করাকে ইসলামী পুরাণে রূপকার্থে বলা হয় ‘অহি নাযিল (كشفت وﺤﻰ)’ হওয়া। অন্যদিকে; রজস্রাব বন্ধ, উধাও বা অদৃশ্য হওয়াকে ইসলামী পুরাণে রূপকার্থে বলা হয় ‘মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ)’। এখন; পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে; ঋতুমতীদের রজ আগমন ও প্রত্যাগমনকে কেন্দ্র করেই ইসলামী পৌরাণিক কাহিনীগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া; ইসলামী পুরাণে; বোরাক্বকে (بوراك) মনের উপমান পদ রূপে গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য আরবি বারক্ব (برق) অর্থ বিদ্যুৎ। যেহেতু; মনের গতি বিদ্যুতের গতির চেয়েও অধিক। তাই; গতির কাছাকাছি গণনায় বিদ্যুৎকে মনের উপমান করা হয়েছে। এখানে; মন উপমিত ও বিদ্যুৎ উপমান। উল্লেখ্য যে; আরবি বারক্ব (برق) হতে বোরাক্ব (بوراك) পরিভাষার উৎপত্তি হয়েছে।
আবার; ইসলামী পৌরাণিক মি’রাজে যে ‘রফরফ’ (رفرف)/ (قطعة من نسيج) এর কথা বলা হয়েছে; তাকে ইংরেজিতে বলা হয় mudguard. যার অর্থ; যাতে গাড়িস্থ যাত্রীদের শরীরে পথের কাদা ছিটকে পড়তে না পারে, সেজন্য; গাড়িতে ব্যবহৃত চক্র সংলগ্ন কাদা রক্ষক উপবৃত্তাকার ঢাকনা রফরফ বলা হয় (আরবি-বাংলা অভিধান; বাংলা একাডেমী)।
এখানে; যাত্রী হলো ‘ঋতুমতী’। জীবজন্তু বা মানুষ জরায়ুতে যাওয়া আসার পথ হলো ‘জননপথ’। আর কাদা হলো ‘রজ’। রজকালে যাতে ঋতুমতীর শরীরে রজ রক্ত ছিটকে পড়তে না পারে; সেজন্য; ‘রজপট্টি’ (Pad) ব্যবহার করা হয়। তাই; সারা বিশ্বের সব পুরাণে ঋতুমতীদের রজকালে ব্যবহৃত রজপট্টিকে কাদা রক্ষক (mudguard) এর সাথে উপমিত করা হয়। এখানে; কাদা রক্ষক (mudguard) উপমান এবং রজপট্টি উপমিত। রজপট্টিকে ইংরেজিতে প্যাড (Pad) বলা হয়।
ইসলামী পৌরাণিক মি’রাজ আরবী রজব মাসের ২৭ দিবসে হলো কেন?
(Why the Islamic mythological ascent is on the 27th day of Arabic Rajab mounth?)
নারীদের রজস্রাবের ঊর্ধ্বগমন ঘটে মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ দিবসে। উল্লেখ্য যে; বাঙালী নারীদের শরীর ক্ষীণ ও রুগ্ন। সেজন্য; তাদের রজকাল গড়ে চার দিন। অন্যদিকে; মধ্যপ্রাচ্যের সবল ও দীর্ঘাঙ্গী নারীদের রজকাল গড়ে তিন দিন। এ গণনা অনুযায়ী মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) বা আরোহী হওয়ার কথা ছিল; যে কোনো মাসের তৃতীয় বা চতুর্থ দিবসে! কিন্তু; রজব মাসের ২৭ দিবস হলো কেন? ২৭ রজব দিবসে মি’রাজ (আরোহী) এর ঊর্ধ্বগমন নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। তবুও; রমজান মাসের ২৭ দিবসের রাতে ‘শব ই ক্বদর’ নির্ধারণের প্রতি লক্ষ্য করেই ‘শব ই মি’রাজ’ কে রজব মাসের ২৭ দিবসের রাতে স্থাপন করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে; মি’রাজ (ﻤﻌﺭﺍﺝ) বা আরোহী হলেন; প্রাপ্তবয়স্ক নারীদেহে অবতরণকারী ‘রজ’। আর আরোহণের স্থান অবশ্যই ‘নারীদেহ’। বাহন বোরাক্ব (برق) হলো ‘মন’। বাহন রফরফ (رفرف) হলো ‘রজপট্টি’। জিব্রাইল (جبرائيل) হলেন মানুষের মুখের ‘কথা’।
মুসলমানদের মধ্যে একটি বাণী দীর্ঘদিন হতে শোনা যায়। সে বাণীটি হলো; “ﺍﻧﺎ ﺨﺎﺗﻡ ﺍﻟﻧﺑﻰ ﻭ ﻻ ﻧﺑﻰ ﺑﻌﺿﻰ” উচ্চারণ; “আনা খাত্বামান নাবি ওয়া লা নাবিয়া বাদি।” অর্থ; “আমি হলাম সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে আর কোনো বসিধ নেই।” আর হাদিসটির উৎস হলো তিরমিজি শরিফের ২২১৯ নং হাসিদ। যথা;
“حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ، عَنْ أَبِي أَسْمَاءَ الرَّحَبِيِّ، عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى يَعْبُدُوا الأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي ثَلاَثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏”
২২১৯. সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে; তিনি বলেছেন; রাসূল (সাঃ) বলেছেন; অংশীবাদীদের সাথে আমার অনুসারীদের কতিপয় গোত্র মিলিত না হওয়া পর্যন্ত থাম্যদিন সংঘটিত হবে না। এমনকি; তারা মূর্তিপূজাও করবে। আমার অনুসারীদের মধ্যে অতি শীঘ্রই ত্রিশ জন বড় মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে। এদের সকলেই দাবি করবে যে; সে নবী। অথচ; আমিই সর্বশেষ নবী; আমার পরে কোনো নবী নেই {সহীহ, মিশকাত (৫৪০৬), সহীহাহ (১৬৮৩)। আবূ ঈসা বলেছেন; এ হাদীসটি হাসান সহীহ।} [৫৩]
আবার পবিত্র কুরানেও এমন একটি উক্তি দেখতে পাওয়া যায়। “ مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ” উচ্চারণ; “মা কানা মুহাম্মাদুন আবা আহাদিম মির রিজালিকুম, ওয়া লাকির রাসুলাল্লাহি; ওয়া খাতামান নাবিয়্যিনা, ওয়া কানাল্লাহু বিকুল্লি শাইয়্যিন আলিমা।” অর্থ; “সাঁই (মুহাম্মদ) কারো পিতা ছিলেন না; তোমাদের পুরুষরা (যেমন)। তিনি ছিলেন কাঁইয়ের তত্ত্ববাহক এবং সর্বশেষ বসিধ এবং কাঁই সর্ববিষয়ে সুবিজ্ঞ।” (কুরান- আহযাব- ৪০)।[৩৬] চিরন্তন এ বাণীটি নিঃসন্দেহে ঘোষক দেবতার উক্তি। কারণ; একটি কন্যা সন্তানের দেহ সর্বোতভাবে সুগঠিত হওয়ার পর; সর্বশেষে তার কটিদেশ ও বুকের স্ফীত অংশ বিকশিত হয়। নারীদেহে সন্তান ধারণ ও প্রতিপালনের যাবতীয় দৈহিক প্রস্তুতি সুসম্পন্ন হওয়ার পর; সর্বশেষে রজস্রাবের আগমন ঘটে। চরম ও পরম বাস্তবতার ভিত্তিতে বলা যায়; কন্যাদের দেহে রজস্রাব আগমনের পর; আর কোনো নতুন দৈব বিষয়বস্তুর আগমন ঘটে না। এবার বলা যায়; রজস্রাবই নারীদেহের সর্বশেষে সাংবাদিক। শ্বরবিজ্ঞানে; এ রজস্রাবকেই বসিধ দেবতা বলা হয়। এজন্য; বলা যায় যে; শেষ নদী দাবি উক্তিকারী সত্তাই হলে রমণীদের রজস্রাব। অন্যদিকে; পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণের পর ক্রমে ক্রমে তার নাসিকা, মুখ, চোখ, কর্ণ, হাত ও পা কর্মক্ষম হয়ে ওঠে; শিশুকে শৈশবে উত্তরণ করে। অতঃপর; শৈশব হতে পদার্পণ করে কৈশোরে। তারপর; স্বর্গধাম হতে গোঁফ এসে; তাকে একেবারে যৌবনের কাছাকাছি নিয়ে যায়। অতঃপর; স্বর্গধাম হতে সর্বশেষ সত্তা দাড়ি; হঠাৎ একসময় আগমন করে কৈশোরকে চিরদিনের মতো হত্যা করে; তাকে যৌবনে উত্তরণ করে। দাড়ি আগমনের পর আর কোনো স্বর্গীয় দূত পুরুষদেহে আগমন করে না। এজন্য; যেমন; নরদেহের জন্য দাড়িকে সর্বশেষ স্বর্গীয় অবতার বলা হয়; তেমনই; নারীদেহের জন্য রজস্রাবকে সর্বশেষ ঐশিদূত বলা হয়।
“অথচ; আমি সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে আর কোনো বসিধ নেই।” এমন চিরন্তন উক্তি ৯৯ মূলক সত্তার মধ্যে কার হতে পারে? এর উত্তরে এবার শক্ত করেই বলা যায় যে; আলোচ্য উক্তিটি হয়তো নরদেহের দাড়ির; নয়তো নারীদেহের রজস্রাবের। তবে; নরদেহের দাড়ির আলোচনা শ্বরবিজ্ঞানে একেবারেই নেই বললেই চলে। যে দুয়েক স্থানে দাড়ির আলোচনা পাওয়া যায়, তবুও; তার উপমিত সত্তা শিশ্ন। যেমন; পবিত্র কুরানে রয়েছে; “ قَالَ يَبْنَؤُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي وَلَا بِرَأْسِي إِنِّي خَشِيتُ أَنْ تَقُولَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِي(৯৪)” উচ্চারণ; “ক্বালা ইয়াবনাউহুম্মা লা তা’খুজ বিলিহইয়ায়ি, ওয়া লা বিরা’সি ইন্নি খাশিয়াতু আন তাকুলা ফাররাক্বতা বাইনা বানি ইসরাইলা ওয়া লাম তারক্বাব কাউলি।” অর্থ; “তিনি বললেন; হে আমার ভাই! আমার দাড়ি ও চুল ধরে টেনো না; আমি ভয় করি যে; তুমি বলবে; তুমি মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছো! এবং আমার কথা স্মরণে রাখ নি।” (কুরান- ত্বোয়াহা- ৯৪)।[৩৬] দাড়ি কেবল দাড়ি অর্থে বিশ্বের কোনো শ্বরবিজ্ঞান ও কোনো পুরাণের কোথাও ব্যবহার হয় নি। এবার পরিষ্কার করে বলা যায়; উপরোক্ত উক্তিটি অবশ্যই রজস্রাবের। এবং এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
লিহইয়া [ﻟﺤﻴﺔ] (আপৌছ) দাড়ি, শ্মশ্রু, চিবুক, থুতনি, মুখের চিবুকের লোম (বাপৌমূ) বলাই {আ}
কিন্তু; অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো; বাংভারতের অধিকাংশ খুষ্ক লেখক, ব্যৈখ্যিক ও টৈকিক আরবীয় পুরাণ ও ইসলামী পুরাণের ঘোলাজল খেয়ে কাল্পনিক নবী নিয়ে এখনও ব্যতিব্যস্ত। তাই; তারা মাবনদেহের সর্বশেষ ঘোষককে মানুষের মতো প্রাণী কল্পনা করে। অতঃপর; যত গান ও গল্প লিখে যাচ্ছেন; তাতে মনে হয় না যে; সাধারণ মানুষ কোনদিনই প্রকৃত সর্বশেষ নবী (ঘোষক) চিনতে ও জানতে পারবে! আবার; কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে; রমণীদের স্তনের দুগ্ধও তো রজ আগমনের অনেক পরে আসে। তবে; তাকে কি সর্বশেষ দেবতা বলা যায় না? এমন প্রশ্নে উত্তর হলো; স্তনের দুগ্ধ নারীদেহের মৌলিক কোনো দেবতা নয়। কারণ; এটি; কেবল সন্তানগ্রহণের কারণেই আগমন করে। সাধারণত; কোনো রমণী সন্তানগ্রহণ না করলে; কোনো কারণ ব্যতীত; তার স্তনে দুগ্ধ আগমন করে না। যদি বিকল্পভাবে; অনূঢ়া বা নবোঢ়ার স্তনে দুগ্ধ উৎপাদন করা হয়। তবে; তা রজ আগমনের পূর্বেও করা যায় এবং রজ আগমনের পরেও করা যায়। এজন্য; রমণীদের স্তনের দুগ্ধকে নারীদেহের সর্বশেষ স্বর্গীয় অবতার বলা যায় না। সুবিজ্ঞ রূপকার ও সুমহান আত্মজ্ঞানীগণের দ্বারা নরদেহের দাড়ি এবং নারীদেহের রজ দ্বারা নির্মিত বাণীটি হলো; “أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي” উচ্চারণ; “আনা খাতামান নাবিয়্যিনা ওয়া লা নাবিয়া বাদি।” অর্থ; “আমিই সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে আগমনকারী কোনো বসিধ নেই।” সারা বিশ্বে; এ বাণীটির অনুকূলে; আরবীয় পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে বাণীটির কথককে একজন মানুষ কল্পনা করে; বর্তমানে সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক অঙ্গনে যে অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে; তা হতে আর কোনদিন বেরিয়ে আসতে পারবে কী মানুষ?
মন্ত্রটি নির্মাণের প্রেক্ষাপট (Making background of the verses)
রূপকারগণের হেয়ালিখেলার ‘বাঙালী পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা’গুলোর এক হাস্যকর গল্পের আসরে গোঁফ একবার বলে উঠল; “আমিই সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে আগমনকারী কোনো বসিধ নেই।” তখন এর উত্তরে দাড়ি বললো; “না না।” অতঃপর; আবার “قَالَ َ الْلِحِيَة أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ ﻟِﺠِﺴْﻢِ الرِّجَالُ ﻮَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِيْ” উচ্চারণ; “কালাল লিহইয়া; আনা খাতামুন নাবিয়্যিনা লি জিসমির রিজালুও; ওয়া লা নাবিয়া বাদি।” অর্থ; “দাড়ি বললো; আমি নরদেহে সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে আগমনকারী কোনো বসিধ নেই।” গোঁফ ও দাড়ির এমন আলোচনা শোনার পর; সহাস্য বদনে রজ বললো; “قَالَ الْحَيِضُ أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ ﻟِﺠِﺴْﻢِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎءِ ﻮَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِيْ” “কালাল হায়িজু আনা খাতামুন নাবিয়্যিনা লি জিসমিন নিসায়িউ ওয়া লা নাবিয়া বাদি।” অর্থ; “রজ বললো; আমি নারীদেহে সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে আগমনকারী কোনো বসিধ নেই।”
কিন্তু; পরবর্তীকালে সাধারণ পাঠক ও শ্রোতাকে ধাঁধায় ফেলার জন্য; বাক্যটি হতে “قَالَ الْلِحِيَة” (কালাল লিহইয়াউ) ও “ﻟِﺠِﺴْﻢِ الرِّجَالُ” (লি জিসমির রিজালুন) অংশ তুলে দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে; পরের বাক্যাটি হতেও “قَالَ الْحَيِضُ” (কালাল হায়িজু) ও “ﻟِﺠِﺴْﻢِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎءِ” (লি জিসমিন নিসায়ি) অংশ তুলে দিয়ে কেবল “أَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي” (আনা খাতামুন নাবিয়্যিনা ওয়া লা নাবিয়া বাদি) এই অংশ বর্ণনা করার প্রথা চালু করা হয়েছে। এজন্য; এ বাক্যটির প্রকৃত কথককে সহজে বের করা যায় না।
আরও অনেক পরে; বাক্যটি অনেক বড় বড় সংকলকগণের দ্বারাই সংকলিত হওয়া আরম্ভ হয়। অবশেষে; গত বারোশত বছর পূর্বে হাদিস সংকলকগণের দ্বারা বাক্যটি হাদিস রূপে সংকলিত হয়। তখন; হতেই এ বাক্যটি মুসলমানদের নিকট হাদিস রূপেই গণ্য হয়ে আসছে। বড় মজার ব্যাপার হলো; বড় বড় মুসলমান মনীষীগণও বসিধকে হায়াতুন নবী “ﺤﻴﺎﺖ ﺍﻟﻨﺑﺊ” (চিরঞ্জীবী বসিধ) এবং সাঁইকে হায়াতুল মুরসালিন “ﺍﻟﻤﺭﺴﻟﻴﻦ ﺤﻴﺎﺖ” (চিরঞ্জীবী সাঁই) বলে থাকেন। উল্লেখ্য যে; “ﺨﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻰ” খাতামুন নবীকেই (সর্বশেষ বসিধ) হায়াতুন নবী “ﺤﻴﺎﺖ ﺍﻟﻨﺑﺊ” (চিরঞ্জীবী বসিধ) এবং “ﺨﺎﺗﻢ ﺍﻟﺭﺴﻮﻞ” খাতামুর রাসুলকেই (সর্বশেষ সাঁই) হায়াতুল মুরসালিন “ﺍﻟﻤﺭﺴﻟﻴﻦ ﺤﻴﺎﺖ” (চিরঞ্জীবী সাঁই) বলা হয়। সে-ই চিরঞ্জীবী বসিধ এবং চিরঞ্জীবী সাঁইই আত্মজ্ঞানীগণের বসিধ ও সাঁই।
মুসলমানদের একদল বসিধকে চিরঞ্জীবী নামে আখ্যায়িত করেন; আবার; আরেকদল সেই বসিধকেই প্রয়াত রূপে বিশ্বাস করেন। প্রতি বছর মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়ালে মহা ধুমধামে বসিধের জন্ম-মৃত্যু দিবসও পালন করে থাকেন। কোন বসিধ চিরঞ্জীবী এবং কোন বসিধ প্রয়াত, তা তারা একবার পাত্তা করার প্রয়োজনটুকুও মনে করে না। অথচ; আত্মজ্ঞানীগণ যাকে সর্বশেষ বসিধ বলে থাকেন; তাঁর জন্ম-মৃত্যু কিছুই নেই। তিনি যোনিজাত নন; তিনি চিরন্তন। সারা বিশ্বের সর্বত্রই তাঁর চরম ও পরম বাস্তবতা রয়েছে। তেমনই; আত্মজ্ঞানীগণ; যাকে সর্বশেষ সাঁই বলে থাকেন; তাঁরও জন্ম-মৃত্যু কিছুই নেই। তিনিও যোনিজাত নন। আবার; তিনিও চিরন্তন। সারা বিশ্বের সর্বত্রই তাঁরও চরম ও পরম বাস্তবতা রয়েছে। এঁরা হলেন; একজন চিরঞ্জীবী বসিধ; অন্যজন চিরঞ্জীবী সাঁই। বড় মজার ব্যাপার হলো; মুসলমানদের একদল এঁদেরকে বলেন মাটির সৃষ্টি। আবার; আরেকদল বলেন এঁরা জ্যোতির সৃষ্টি। প্রকৃত ব্যাপার হলো; সাম্প্রদায়িকদের বসিধ কেবলই কাহিনী নির্ভর। অর্থাৎ; Bogus boh. কিন্তু আত্মজ্ঞানীগণের বসিধ সর্বপ্রকার দ্বন্দ্ব, সন্দেহ ও তর্কবিতর্ক বিমুক্ত চির জীবন্ত ও চিরঞ্জীবী।
Bogus boh n মিথ্যা কথার ভয়ঙ্কর বুড়ী {ই}।
এখন বলা যায় যে; সাম্প্রদায়িকদের বসিধ হলো; চির কাল্পনিক। সামান্য কিছু পৌরাণিক কাহিনী ব্যতীত এর কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু আত্মজ্ঞানীগণের বসিধ হলো; চির বাস্তব ও দেহতাত্ত্বিক এবং তা হলো রমণীদের রজ।
এবার ভেবে দেখুন জন্মের পর হতে ক্রমান্বয়ে ইন্দ্রিয়াদি সচল হতে থাকে। শ্বরবিজ্ঞানের ইন্দ্রিয়াদির ক্রমমাণ অনুসারে তাদের ক্রমিক বসিয়ে দেখানো হলো। সর্বপ্রথমে সচল হয় ৩ নাসিকা, তারপর; সচল হয় ৬ বাক্ (বলন)। জন্মগ্রহণের পর নাসিকা দ্বারা অম্লজান প্রবেশ করার সাথেই সাথেই সন্তান ‘উঁয়া উঁয়া’ করে কেঁদে ওঠে। এর অর্থ সন্তানের বাক্ ইন্দ্রিয় সচল হয়েছে। অতঃপর; ক্রমান্বয়ে ৭ পাণি (হাত) ৮ পাদ (পা) ও ৪ জিহবা সচল হয়। যারফলে; সন্তান খাওয়া আরম্ভ করে। খাওয়া আরম্ভ করার অল্প সময় পরে; সন্তানের ৯ পায়ু সচল হয়। অতঃপর; সচল হয় সন্তানের ৫ ত্বক। তাই; তারা শীত-গ্রীষ্ম অনুভব করতে পারে। তারপর; সন্তানের ২ কর্ণ ও ১ চক্ষু সচল হতে সময় লাগে প্রায় ছ’মাস। অতঃপর; ১০ হতে ১২ বছর পর সন্তানের ১০ উপস্থ ইন্দ্রিয়টি সচল হয়। উল্লেখ্য যে; চুল গর্ভের মধ্যেই উদ্গত হয়। প্রথম পর্যায়ের দাঁত ১ হতে ২ বছরের মধ্যেই উদ্গত হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের দাঁত ৪ হতে ১০ বছরের মধ্যেই উদ্গত হয়। এ বর্ণনাটুকু পুত্র ও কন্যা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
অতঃপর; প্রায় ১০ হতে ১৬ বছরের মধ্যে কিশোরীর রজ আগমন করে এবং প্রায় ১৬ হতে ১৮ বছরের মধ্যে কিশোরের মুখে গোঁফ উদ্গত হয়। তারপর; দাড়ি উদ্গত হয়। এগুলো সবই স্বর্গীয় অবতার (এসবের রূপক নামের ওপর পৌরাণিক ঈশ্বরায়ন, পৌরাণিক দেবতায়ন ও পৌরাণিক মানবায়ন করেই পৌরাণিক চরিত্র নির্মাণ করা হয়)। প্রাথমিক অবস্থায় সন্তানের বলন (কথা) সচল হয়। অন্যদিকে; সে অর্থ বোধক কথা বলতে পারে না। তেমনই; দোলনায় সন্তানের হাত ও পা সচল হয়। অন্যদিকে; সে হাত দ্বারা কোনকিছু ধরতে ও পা দ্বারা হাঁটতে পারে না। প্রাথমিক অবস্থায় সন্তানের কর্ণ ও চক্ষু সচল হয়। অন্যদিকে; প্রায় ছ’মাস হতে এক বছরের মধ্যে সে কর্ণ দ্বারা শুনে কোনকিছুই অনুভব করতে পারে না; তেমনই; এ সময়ের মধ্যে চক্ষু দ্বারা দেখেও কাউকে চিনতে পারে না।
পরিশেষে বলা যায়; আগমনের দিক থেকে রমণীদের রজ এবং পুরুষের দাড়িই সর্বশেষ অবতার। এটা; যেমন; চরম বাস্তব; তেমনই; সর্বজন স্বীকৃত। এবার বলা যায়; সারা বিশ্বের কিছু কিছু সাম্প্রদায়িক মনীষী ও বক্তা আরবি ‘ﺨﺎﺗﻢ’ (খতম) পরিভাষাটির অর্থ আংটি বা ছাপাংকনের কথাও বলে থাকেন। এবার ‘ﺨﺎﺗﻢ’ (খতম) অর্থ ছাপাংকন ধরা হলে; বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায়; “আমিই পরিসমাপ্তিকারী বসিধ এবং আমার পরে কোনো বসিধ নেই। বাংলা ‘সর্বশেষ’ কথার আরও স্পষ্ট আরবি প্রতিশব্দ রয়েছে। যেমন; ‘ﺍﺨﻴﺭ’ (আখির)। এবার; ‘ﺨﺎﺗﻢ’ (খতম) পরিভাষাকে ‘ﺍﺨﻴﺭ’ (আখির) পরিভাষা দ্বারা প্রতিস্থাপন করলে; বাক্যটি সম্পূর্ণই বিতর্কমুক্ত হয়ে যায়। যেমন; “أَنَا اَخِيْرُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي” “আনা আখিরুন নাবিয়্যিনা লা নাবিয়া বাদি।” অর্থ; “আমিই সর্বশেষ বসিধ এবং আমার পরে কোনো বসিধ নেই।” এ বাক্যটি পাঠ করলে কারো কোনো বিতর্ক করার সুযোগ থাকে না।
সারা বিশ্বের সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুরাণে বর্ণিত সব সত্তার উপমান বিষয়বস্তু দেহের বাইরে পাওয়া যায়। কিন্তু; উপমিত বিষয়বস্তু কেবল মানবদেহ ভিন্ন অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। কিন্তু সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক খুষ্ক বক্তারা জীবন বিধানের মতো গ্রন্থের বিষয়বস্তু দেহের ভিতর অন্বেষণ করে না। কারণ; তারা মনে করে যে; এসব সাম্প্রদায়িক ইতিহাস। প্রকৃতপক্ষে এসব পৌরাণিক কাহিনী। তারা ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত পৌরাণিক বিষয়বস্তু প্রকৃতিতে অন্বেষণ করে। সারা জীবন অন্বেষণ করে কিছুই পায় না। এসব নিয়ে কেউ রাজনীতি করে; আবার; নিরাকার প্রভুর নিরাকার স্বর্গ-নরক ব্যবসা করে। আবার; দুয়েকজনে সম্পূর্ণ উল্টো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ লিখে; একেবারেই সারা সাম্প্রদায়িক অঙ্গন লেজে গোবরে করে তোলে। তাই; বর্তমানে কোনো বুদ্ধিমান মানুষ সাম্প্রদায়িক সত্তাগুলোর অপব্যাখ্যা পরিত্যাগ করে আত্মতত্ত্বে ফিরে আসতে চাইলেও; সহজেই তা পারবে না। কারণ; বর্তমান বিশ্বে আত্মজ্ঞানী মনীষী সংখ্যা একেবারেই স্বল্প। পুরাণকে পুরাণ ও ইতিহাসকে ইতিহাস বলা লোক তো প্রায় বিরল (তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ (১ম খণ্ড); লেখক; বলন কাঁইজি)।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.