নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়া

প্রকৃতির রহস্যময়তা আমাকে বিমোহিত করে। তাই এর সাথে একাত্ম হয়ে সবার হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

কামরাজ

প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়াই আমার চেষ্টা

কামরাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লবণ-১

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩

“লবণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। মানুষের ইতিহাসে লবণের ব্যবহার খুব কম দিনের নয়। ঠিক কবে কোথায় কীভাবে মানুষের খাদ্যে লবণের ব্যবহার শুরু হয়, স্পষ্ট করে জানা যায় না। তবে মোটামুটি জানা গেছে, আজ থেকে অন্তত ৫,০০০ বছর আগে মানুষ তার খাদ্যে লবণ ব্যবহার করেছে। তখন লবণ মানুষের খাদ্যে একটা অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ছিল। সমাজে লবণের মর্যাদা ছিল অনেক উঁচুতে।

সংস্কৃতে ও তদ্ভব শব্দে লবণের ব্যুৎপত্তি এক নয়। এ থেকে মনে হয়, ইন্দো-ইউরেশীয়রা তাদের প্রথম দেশত্যাগের সময় লবণের ব্যবহার জানত না। যা-ই হোক, মানুষের প্রথম সভ্যতায় লবণ যে লভ্য ছিল তা মনে করার কারণ আছে। হোমার লবণকে ‘divine’ বলেছেন।

উচ্চবর্গের প্রাণী আর মানুষের ক্রমবিকাশে লবণের একটা বড়ো ভূমিকা ছিল। প্রাণের সূচনা সমুদ্রের লবণ সমৃদ্ধ পরিবেশে। আদিম কোষের ভিতরকার তরলে পট্যাশিয়াম ছিল অনেক বেশি, সোডিয়াম অনেক কম। সমুদ্রের সোডিয়াম সমৃদ্ধ পরিবেশ থেকে কোষের তরলকে পৃথক করে রেখেছিল কোষপ্রাচীর। ঝিল্লীময় কোষপ্রাচীরের একদিক থেকে আর একদিকে আয়নের বিচলন প্রাণের একটা মৌলিক প্রক্রিয়া এবং কোষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির একটা অপরিহার্য অংশ, বিশেষ করে নার্ভাস সিস্টেম অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্রের কোষের মধ্যে।

সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের প্রতিটি স্নায়ুকোষের মধ্যে নিউরোট্রান্সমিশন অর্থাৎ স্নায়বিক বার্তা প্রেরণের জন্য সোডিয়াম দরকার। মানবসভ্যতার পিছনে মানুষের মস্তিষ্কেরই ভূমিকা। আদিম মানুষের মধ্যে যে উদ্যমের অভাব ছিল তার অন্যতম প্রধান কারণ মনে করা হয় তাদের খাদ্যে সোডিয়ামের অভাব।

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের শরীরে সোডিয়াম দরকার। প্রতিদিন ঠিক কতখানি সোডিয়াম দরকার বলা শক্ত। তবে দেখা গেছে, মানুষের স্বাভাবিক খাদ্যে যে পরিমাণ সোডিয়াম থাকে, তাতেই তার দেহের প্রয়োজন মিটে যায়, অর্থাৎ‍ আলাদা করে লবণ না খেয়েও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে।

এই শতাব্দীর মধ্যভাগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, পলিনেশিয়া আর অ্যামাজন বেসিনে বিক্ষিপ্তভাবে এমনকিছু সমাজের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল যেখানে মানুষ লবণের ব্যবহার জানত না। ঐসব সমাজের কতকগুলিতে আজও হয়তো লবণ প্রবেশ করে নি, কিন্তু অধিকাংশেই করেছে- তবে অল্প পরিমাণে এবং তারা লবণকে অতি মূল্যবান সামগ্রী মনে করে।

আদিম মানুষ লবণ খেত এমন কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় নি। সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরির কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে এই সেদিন, সম্ভবত প্রথম কৃষিভিত্তিক সভ্য সমাজের সূচনা হবার পর। সে ১২,০০০ বছরও হয় নি; হোমো সেপিয়্যান্স সেপিয়্যান্সের যে ক্রমবিকাশ হয়েছে তার বৃহত্তর অংশই হয়েছে লবণহীন খাদ্যের উপর ভিত্তি করে। যতদূর জানা যায়, লবণের খনি প্রথম আবিষ্কৃত হয় অস্ট্রিয়ার টাইরোলে, ব্রোঞ্জযুগের শেষভাগে, খৃষ্টপূর্ব প্রায় ১,০০০ অব্দ নাগাদ।

আজ পর্যন্তও এমন কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় নি যাতে বলা যেতে পারে, পুরাতন প্রস্তরযুগের মানুষ অথবা মধ্য প্রস্তরযুগের মানুষ লবণ তৈরি করেছে কিংবা লবণের খনি সম্পর্কে তাদের কোনো আগ্রহ ছিল। যতদূর মনে হয়, লবণের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়েছে নব প্রস্তরযুগে, যখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে খাদ্য পাওয়া গেছে। প্রয়োজনাতিরিক্ত খাদ্য সংরক্ষণের তাগিদেই লবণের ব্যবহার শুরু। অন্তত ৩,০০০ বছর ধরে লবণ মানুষের জীবনে একটা আশ্চর্য স্থান অধিকার করে আছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গোটা পৃথিবীতে এত লবণের বাণিজ্য হয়েছে যা আর কোন পণ্যে হয় নি।

প্রাচীনকালে যখন পণ্য বিনিময় করে বাণিজ্য হত তখন লোকে লবণের বিনিময়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনত। অর্থাৎ, আজ যেমন আমরা পয়সা দিয়ে জিনিস কিনি তেমনি তখন লোকে লবণ দিয়ে জিনিস কিনত। মানুষের বেতনও তখন দেওয়া হত লবণে। লবণের খনি অধিকার করার জন্য অথবা রক্ষা করার জন্য মানুষের ইতিহাসে কম যুদ্ধবিগ্রহ হয় নি। প্রাচীন গ্রীকদের কাছে একজন ভালো ক্রীতদাস ছিল ‘worth his weight in salt’। ইংরেজী salary কথাটা এসেছে লাতিন sal থেকে, লাতিনে sal এর অর্থ salt ।

এমন যে লবণ, স্বাস্থ্যমহলে আজ তার অনেক দুর্নাম। ডাক্তাররা তাকে persona non-grata বলে ঘোষণা করেছেন। লবণ এখন তাঁদের কাছে new villain ।

ডাক্তারদের এই মনোভাব মোটেই অসঙ্গত নয়, কারণ আজ পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই লবণের দরুন হাই ব্লাড প্রেশারের শিকার হচ্ছে। একবার এই অসুখের কবলে পড়লে আর তা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না। হাই ব্লাড প্রেশারের অযুত কুফল। তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক কিডনি ফেলিয়োর, স্ট্রোক আর হার্টের রোগ। এই অসুখগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে অনেকখানি ক্ষতি হয়ে যাবার পর এবং সে ক্ষতি প্রায়শই অপূরণীয় ক্ষতি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: অত্যন্ত সুন্দর লিখেছেন, ভাল লাগল।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২

কামরাজ বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.