নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়া

প্রকৃতির রহস্যময়তা আমাকে বিমোহিত করে। তাই এর সাথে একাত্ম হয়ে সবার হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

কামরাজ

প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়াই আমার চেষ্টা

কামরাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লবণ-২

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯

আদিম মানুষ এবং তাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা লবণ খেত না, তাদের খাদ্যে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ সোডিয়াম থাকত তাতেই তাদের দেহের প্রয়োজন মিটে যেত। আজও পৃথিবীর যেসব জায়গায় মানুষ লবণ খায় না কিংবা খুব কম খায় তাদের মধ্যে হাই ব্লাড প্রেশার দেখা যায় না।



অল্প কিছুদিন আগে হার্ভার্ডের আর.বি.লী. এবং আই. ডি. ভোর উত্তর-পশ্চিম বৎসোয়ানায় কুং বুশম্যান অর্থাৎ অরণ্যবাসীদের মধ্যে একটা সমীক্ষা করেছিলেন। এই অরণ্যবাসীরা বহির্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার জগৎ তারা কখনও চোখে দেখে নি, সেই জগতের আলো কখনও তাদের ওপর প্রতিফলিত হয় নি। আশি মাইল চওড়া এক জলহীন বলয় সভ্যজগৎ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।



হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা এই অরণ্যবাসীদের কাছে একটা শিবির স্থাপন করে একসঙ্গে এক বছরেরও অধিক কাল সেখানে বাস করেছেন। তাদের সাঙ্কেতিক ভাষা শিখেছেন, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন এবং তাদের জীবনযাত্রায় যতখানি সম্ভব কম বাধা সৃষ্টি করে খুব কাছে থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, এই অরণ্যবাসীরা সাধারণত মোটা হয় না, অসুখবিসুখ না হলে তাদের শরীরে অপুষ্টি দেখা দেয় না, তাদের মধ্যে হাই ব্লাড প্রেশার নেই, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের সিস্টলিক [হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে গড়ে ২৭ বার সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। হৃৎপিণ্ড যখন সংকুচিত হয় অর্থাৎ এই সিস্টোলের সময় ধমনীর মধ্যে রক্ত প্রবাহের চাপ খুব বেশি হয় এবং এই সময় ধমনীর এই বর্ধিত চাপকেই বলে সিস্টোলিক প্রেশার।] আর ডায়াস্টলিক [সিস্টোলিক ক্রিয়া শেষ হবার পর যখন সমগ্র হৃৎপিণ্ড ক্ষণিকের জন্যে প্রসারিত বা শিথিল হয় তখন তাকে বলে ডায়াস্টোল। এই সময় হৃৎপিণ্ড ক্ষণিকের জন্য বিরতি বা বিশ্রাম নেয়। এই ডায়াস্টোলের সময় ধমনীর মধ্যে রক্তের চাপ খুব কমে যায় এবং তখন ধমনীর মধ্যে রক্তের এই নিম্নতম বা কম চাপকে বলে ডায়াস্টোলিক প্রেশার।] দুরকম রক্তচাপই কমতে থাকে­- সভ্যজগতের সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার। সভ্য, প্রাচুর্যপূর্ণ জগতে পুরুষ ও নারী সকলেরই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গড় সিস্টলিক ও ডায়াস্টলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। অরণ্যবাসীদের রক্তচাপ বৃদ্ধি না পাবার কারণ এই যে, তারা লবণ খায় না।”



“রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ইক্সপেরিমেন্টাল থেরাপি এণ্ড প্যাথোলোজী কেন্দ্রের রুশীয় বিজ্ঞানীরা বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন যে, প্রতিদিন লবণমাখা খাবার খেতে থাকলে অচিরেই হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়ার ত্রুটি ঘটবেই। লবণের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে এই রুশীয় বিশেষজ্ঞদের কোন দ্বিমত নেই।”



“পর্যবেক্ষণে জানা গেছে ৪০ বছর বয়সের পর লবণ খেলে হাই ব্লাড প্রেশার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। আসলে অতিরিক্ত লবণ খেলে, শরীরে যে অনুপাতে জল ও লবণ আছে সেই অনুপাত বিঘ্নিত হয়, তখন শরীরকে ঐ অতিরিক্ত লবণ সামাল দেওয়ার জন্য ধরে রাখতে হয় বাড়তি জল। আর ঐ বাড়তি জলের ওজন সামলাতে হৃৎপিণ্ডের পরিশ্রম হয় বেশি।



উত্তর জাপানের লোকেরা আমাদের চেয়ে ৩.৪ গুণ বেশি লবণ খায় এবং ওদের শতকরা ৪০ জনই হাই ব্লাড প্রেশারে ভোগে।”



“আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশানের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, দিনে মাত্র একগ্র্যাম লবণ খাওয়া কমালে বিরাট সংখ্যক মানুষ বাঁচতে পারেন নানা ধরণের হৃদরোগের কবল থেকে।



লবণ বন্ধ করতে হবে সবরকমের খাবারে। স্বাদের কথা ভাবছেন? [ মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,‘খাদ্যের স্বাদ জিহ্বায় নয়, মনে।’ তার প্রমাণ হিসেবে দেখেছি, একজন হিন্দু ভদ্রলোক খাসীর মাংস ভেবে তৃপ্তিসহকারে গরুর মাংস খেয়ে বলেছেন, খুব স্বাদ লাগলো। কিন্তু পরে যখন জানতে পারলেন যে, ওটা গরুর মাংস ছিল অমনি তাঁর বমি হয়ে গেলো। সুতরাং জিহ্বা থেকে মনই এক্ষেত্রে বড়।] লবণ ছাড়া খাবার খাওয়া একবার অভ্যাস হয়ে গেলে লবণের খাবার খেতেই বরং কষ্ট হবে আপনার। আর লবণ ছাড়া খাবার সবসময় বিস্বাদ লাগে, এও ছেলেবেলা থেকে অভ্যাসের বশে গড়ে ওঠা এক সংস্কার। তবে লবণ ছাড়া যাদের খেতে অসুবিধা হয় তারা বাজারে নতুন আসা পট্যাশিয়াম সল্ট ব্যবহার করে দেখতে পারেন।”৪ “স্বাস্থ্যসচেতন লোকেরা অনেকে এখন লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইডের পরিবর্তে পট্যাশিয়াম ক্লোরাইড খেতে শুরু করেছেন। অনেক দোকানে পট্যাশিয়াম ক্লোরাইড রাখাই যাচ্ছে না, আনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার অনেক সুপার মার্কেটে ‘নো সল্ট’ নামে পট্যাশিয়াম ক্লোরাইড বিক্রি হয়। আমাদের দেশেও এখন অনেকে পট্যাশিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করছেন, বিশেষ করে হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীরা।”



“অত্যধিক লবণের দরুন হাই ব্লাড প্রেশার ছাড়াও কিছু অসুখ হতে পারে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ইডিমা অর্থাৎ জলসঞ্চারহেতু দেহের ফোলা রোগ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যাকে বলা হয় শোথ। এতে দেহের টিস্যু ফুলে যায়।”৬ “সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যদি দেখা যায় মাংসপেশী বা গাঁটগুলো শক্ত (stiff) হয়ে আছে তাহলে বুঝতে হবে বাড়তি লবণ খাওয়ার ফলেই শোথ দেখা দিয়েছে। শোথ শরীরের টিস্যুগুলোকে অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত করে।”



“অত্যধিক লবণ খাওয়ার ফলে অনেকসময় প্রি-মেনস্ট্রুয়াল টেনশনের গুরুতর সব উপসর্গও দেখা দিতে পারে- শরীর ফুলে যাওয়া, মাথা ধরা, খিটখিটে ভাব, রাগ, ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ঝরা ইত্যাদি। প্রধানত শরীরে বেশি পরিমাণে লবণ আর জল জমে যাবার দরুনই মাসিক রক্তস্রাবের আগে এইসব উপসর্গ দেখা দেয় এবং মাসিকের দিন অনুমান করে তার দিন পাঁচেক আগে থেকে লবণ খাওয়া কমিয়ে দিলে এইসব উপসর্গের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।” “নোনতা খাবার এবং পাতে লবণ খাওয়া মেয়ে মহলের অনেকেরই অভ্যাস। সব মেয়েরই অবশ্যই জানা দরকার, একান্তভাবে বিশ্বাস করা দরকার যে, লবণ তাদের পক্ষে এক প্রধান শত্রু। লবণের অতিরিক্ত ব্যবহারই মেয়েদের স্বাস্থ্যের মানদণ্ড মাসিকের বিপর্যয় ঘটায়। লবণকে গৃহশত্রু মনে করে একেবারে ত্যাগ করতে পারলেই গোটা নারী সমাজের পক্ষে তথা গোটা মানব সমাজের পক্ষেই শুভহবে।”



“খেলোয়াড় আর যাঁরা অত্যধিক কায়িক পরিশ্রম করেন, গরমকালে তাঁদের দেহ থেকে ঘামের সঙ্গে যখন অনেক লবণ বেরিয়ে যায় তখন তাঁরা যদি সেই লবণের অভাব পূরণের জন্য হঠাৎ প্রচুর পরিমাণে লবণ খান তাহলে তাতে প্রচণ্ড ক্ষতি হতে পারে, কখনও কখনও তার পরিণাম মারাত্মক হতে পারে। কারণ, অত্যধিক পরিমাণে সোডিয়াম খাওয়ার দরুন শরীর থেকে অত্যধিক পরিমাণে পট্যাশিয়াম বেরিয়ে যায় বলে শরীরে পট্যাশিয়ামের দারুণ অভাব ঘটে। তাতে শরীরের পেশীসঙ্কোচন ব্যাহত হয়, হৃৎপিণ্ডের পেশী সঙ্কোচনও বিঘ্নিত হয় এবং রক্ত গাঢ় হয়ে যায়।



ডাক্তাররা বলেন, Salt tablets are unnecessary, never necessary and dangerous । তাঁরা বলেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে, খেলোয়াড়রা লবণ খাওয়া কমিয়ে দিলেই বরং উপকার পাওয়া যায়; কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেহ লবণ ধরে রাখতে শিখে নেয়, তখন ঘামের সঙ্গে বেশি লবণ বেরিয়ে যেতে পারে না।”



“আজকাল অনেক স্বাস্থ্যবিদ ও ক্রীড়া প্রশিক্ষক গ্রীষ্মকালে ও খুব পরিশ্রমের পর লবণ খেতে বলেন। তারা বলেন, প্রচুর ঘামের মাধ্যমে ঐ সময়ে শরীর থেকে বহু লবণ বেরিয়ে যায়। আর এভাবে শরীরে লবণের ভাগ কমে গেলে স্বাস্থ্যের খুব ক্ষতি হয়, শক্তিসামর্থ কমে যায়। সেজন্য তারা বলেন, খেলোয়াড়রা খুব ঘর্মাক্ত হয়ে যাবার পর সামান্য উষ্ণ জলে লবণ গুলে পান করবে। এতে তাদের শরীরের লবণের অংশের কোন হেরফের ঘটবে না। কিন্তু এ এক ভ্রান্ত ও অনিষ্টকর পদ্ধতি। এভাবে লবণ খেলে খেলোয়াড়দের ক্ষতি হবেই। শুধু খেলোয়াড়দেরই ক্ষতি হয় তা নয়, এভাবে যারাই লবণজল গ্রহণ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।



অনেক খাদ্যবিজ্ঞানী এভাবে বাড়তি লবণ খাবার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, শরীর যখন ঘামে তখন ঐ ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বাড়তি লবণই শুধু বেরিয়ে যায়, শরীরের পক্ষে প্রয়োজনীয় লবণ এতে বেরোয় না। প্রতিদিন যে লবণ আমরা খাই তাই তো শরীরের পক্ষে বাড়তি। শরীর তো সেই লবণকেই শরীর থেকে অনেক সময় দূর করে দিতে পারে না।



তাই আমরা যদি বেশ পরিশ্রম করি, যদি বেশ ঘাম ঝরে তবে ঐ ঘামের ভেতর দিয়ে ঐ জমা লবণ শরীর থেকে বাইরে যাবে, আর এর ফলে শরীর ভাল থাকবে। কিন্তু যদি ঘামলে আরও লবণ গুলে খাই তাহলে একদিকে যেটুকু লবণ বেরুবে আবার অন্যদিকে সেটুকুই শরীরে ঢুকবে।



দৌড়বিদদের মধ্যে যাঁরা খুব লম্বা দৌড় দেন, ম্যারাথন দৌড়ান তাঁরা তাঁদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় জেনেছেন যে, তাঁরা যদি সম্পূর্ণভাবে লবণহীন খাবার খান তবে তাঁদের পুরো দম, পুরো শক্তি থাকে। তাঁরা বলেন, লবণযুক্ত খাবার খেলে তাঁদের ফুসফুসের ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ার ব্যাঘাত হয়, তাঁদের দম ফুরিয়ে যায়।”



“আমাদের এই দেহ যন্ত্রটা বড় অদ্ভুত। তার মধ্যে এমন ব্যবস্থা আছে যাতে দেহের অভ্যন্তরীণ জলসরবরাহ আপনা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, আবার সোডিয়াম আর পট্যাশিয়ামের মধ্যে যে সমতা থাকা অতি প্রয়োজন সেই সমতাও আপনা থেকেই থাকে। এখন, আমরা যদি বাইরে থেকে কোনোভাবে এই ব্যবস্থাটা নষ্ট করে দিই তাহলেই বিপদ ঘটে।



কি শিশু, কি যুবক, কি বৃদ্ধ- শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলেই শরীর থেকে পট্যাশিয়াম বেরিয়ে যায়। অত্যধিক সোডিয়াম খাওয়ার দরুন শরীরের মধ্যে সোডিয়াম-পট্যাশিয়াম ব্যাল্যান্স নষ্ট হয়ে গিয়ে শরীরের পক্ষে অতি প্রয়োজনীয় পট্যাশিয়াম বেরিয়ে যায় আর তাতেই বিপদ ঘটে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য শরীরে পট্যাশিয়াম একান্ত দরকার। শরীরে স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখতে পট্যাশিয়ামের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০১

ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব ভাল দরকারী পোষ্ট।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩

কামরাজ বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: +++++++

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১০

কামরাজ বলেছেন: ধন্যবাদ ইরফান আহমেদ বর্ষণ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.