নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম। অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম, অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি রাজা কৃষ্ণনাথ রায় ছিলাম। ১৮৪৪ সালে ৩০ অক্টোবর তারিখে আমি যে উইল লিখেছিলাম,আজ সেই উইল প্রকাশ করলাম। আসল উইল পাওয়া গেলে তার সাথে কতটা মিল আছে।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৩

উইল
-------

আমি, শ্রী রাজা কৃষ্ণনাথ রায় বাহাদুর, কান্তনগর পরগণার জমিদার এবং ঘোষণা করছি যে,আমি বাংলা,বিহার প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত মুর্শিদাবাদ জেলার কাশিমবাজারের বাসিন্দা,একটি উইল লিখছি এবং উইল তৈরী করছি-
আমার জমিদারীর নিষ্পত্তি এবং পরিচালনার জন্য নির্দেশ, খাজনা পরিশোধের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত সম্পত্তি, তালুক এবং ঘোষণা করছি যে, বসবাসযোগ্য বাড়ীসমূহ, বাগানসমূহ এবং পুকুরগুলি অথবা অন্য কোন সম্পত্তি এবং তয়োজী অর্থাৎ আসবাবপত্র,পরিহিত পোশাক পরিচ্ছদ সমূহ এবং রত্নরাজি এবং স্বর্ণ,রূপা,কাঁসা,পাথর এবং ঘোষণা করছি যে,ধাতুসমূহ অথবা পাথর সমূহ, বস্ত্রসমূহ,যা কিছু আমার নিজের নামে আছে অথবা অন্য ব্যক্তিদের নামে আছে,যাবতীয় অস্থাবর অথবা স্থাবর,আমার মৃত্যুতে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেসব নিয়ম অনুষ্ঠিত হবে,সেসব,উইল অথবা অনুমতি পত্রের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে লিপিবদ্ধ করা হলো যার প্রতিটি নির্দেশ মোতাবেক কার্যকরী করা হবে।

১। অনুচ্ছেদ এক - আমার মৃত্যুর পরে আমার প্রথম শ্রাদ্ধ উৎসবে বারো হাজার টাকার বেশী খরচ করা যাবে না। এবং এক বছর অতিবাহিত হবার পর শ্রাদ্ধের কাজে অর্থাৎ সপিণ্ডি করুন ( সপিণ্ড করন) কাজে নয় হাজার টাকার বেশী খরচ করা যাবে না।আমার একটি পাথরের মূর্ত্তি তৈরী করা হবে এবং বানজেতিয়ায় বৈঠকখানায় আমার ছবির পরে রাখা হবে এবং মূর্ত্তিটি বৈঠকখানায় থাকবে।
আমার বাৎসরিক শ্রাদ্ধ প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হবে এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবহার অনুযায়ী। এবং আমার পূর্ব পুরুষদের শ্রাদ্ধ ইত্যাদি একই নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হবে কিন্তু খরচ প্রতিষ্ঠিত হারের বেশী হবে না।


২। অনুচ্ছেদ দুই - বর্তমানে আমার কোন পুত্র সন্তান নাই,কিন্তু এক কন্যা সন্তান আছে। যদি আমার মৃত্যুর সময়ে আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরী দাসী এক সন্তানের জন্মদানের প্রত্যাশা করে এবং পূর্ণ সময় আসার পরে পুত্র সন্তানের জন্ম না দিয়ে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়,সেইক্ষেত্রে আমি আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরী দাসীকে নির্দেশ দিচ্ছি যে,সে গয়ায় যাবে এবং আমার সপিণ্ড করোন শ্রাদ্ধ পালন করবে অথবা বৎসর কীর্ত্তে ( বাৎসরিক ক্রিয়া) অনুষ্ঠান পালন করবে। এই অনুষ্ঠানে যোগদান বাবদ এবং যাতায়াত বাবদ ত্রিশ হাজার টাকার বেশী খরচ করা যাবে না। এর পরে আমার স্ত্রী যদি শ্রী শ্রী ঈশ্বর কাশী ( বেনারস)-তে গোথিক স্টাইলে পাথরের শ্রী শ্রী ঈশ্বর শিব ঠাকুর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে,সেইক্ষেত্রে সে এই কাজের জন্য এক লক্ষ টাকা খরচ করতে পারবে। তবে এই কাজটা শেষ হলে একজন অভিজ্ঞ ইংরেজ ভদ্রলোক দ্বারা পরীক্ষিত করা হবে। মন্দির তৈরী করা শেষ হলে, আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরী দাসী সেখানে শিব এবং গৌরীর সুন্দর ছবি প্রতিষ্ঠা করবে। এই প্রতিষ্ঠাকরা বাবদ এবং আমার স্ত্রীর যাতায়াত বাবদ খরচ যথাক্রমে পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যে এবং দশ হাজার টাকার মধ্যে করতে হবে,বেশী খরচ করা যাবে না।
গাজীপুরে আমার যে জায়গীর আছে,সেখানকার আয়ের অর্ধেক শ্রী শ্রী ঈশ্বর বৃন্দাবন ধামের জন্য আমার পূর্ব পুরুষদের দ্বারা মাসে এবং বৎসরে খরচের জন্য বরাদ্দ ছিল। এখন আমি যে শিবকে প্রতিষ্ঠা করলাম তার খরচ এখান থেকে হবে এবং সমানভাবে ভাগ করে খরচ করা হবে। চার আনা খরচ করা হবে বৃন্দাবন পূজার জন্য এবং বাকি চার আনা খরচ করা হবে কাশীর শিব পূজার জন্য এবং আমার নাম,আমার স্ত্রীর নাম এবং বছর,মন্দিরে অন্তর্লিখিত-র জন্য। দুহাবেহারা তথা গাজীপুরে আমার জায়গীরের লাভের অর্ধেক আমার কাশিমবাজার রাজবাড়িতে পূর্ব পুরুষদের পূজার জন্য,এই পূজা কাশিমবাজারে আমার পূর্ব পুরুষদের বসত বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে,এই পূজার জন্য ঘোষণা করছি যে,মার্বেল হল এবং পূজা বাড়ি যেখানে দুর্গোৎসব পালিত হয়,বসত বাড়ির এই দুটি অংশ,যতক্ষণ পর্যন্ত আমার স্ত্রী জীবিত থাকবে,ততক্ষণ তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে,এরপর আমার শ্রী শ্রী ঈশ্বর গুরুদেব এবং তার উত্তরপুরুষেরা,প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওপরের মহলের আয় থেকে টাকা পাবে এবং ঐ পূজাপার্বণ অনুষ্ঠান করবে এবং এই ব্যাপারে একটি মাসিক হিসাব এবং একটি বাৎসরিক হিসাব মুর্শিদাবাদ জেলার কালেক্টরের কাছে থাকবে এবং অসচ্চরিত্র, অপ্রয়োজনীয় খরচ কোনভাবেই যে কোন হিসাব থেকে করা যাবে না,এই ব্যাপারে কেউ উইল করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। তাকে ভাবতে হবে যে,জায়গীর মহল তার হয়েছে,তাকে বিবেচনা করতে হবে যে সে একজন কর্মচারী ( কর্মচারী -অফিসার) অথবা ব্যবসার একজন ম্যানেজার। যে কোন ব্যাপারে যদি সে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে তাহলে কিছু ব্যক্তি কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের হস্তক্ষেপে নিয়োজিত হয়ে এবং তার পূজা ওপরের পদ্ধতিতে চালু রাখবে এবং কেউ কোন সময়ে চিরতরে দুহাবেহারা জায়গীর বন্ধক বা বিক্রী করতে পারবে না। এবং কাশিমবাজারে বসত বাড়ির এই দুটো অংশে সমানভাবে তারা এই বিষয়কে বিবেচনা করবে।


৩। অনুচ্ছেদ তিন - বর্তমানে আমার এক কন্যা সন্তান জীবিত আছে। আমার মৃত্যুর ঘটনার পূর্বে আমার এক বৈধ সন্তানের জন্ম হলে,আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, এইরূপক্ষেত্রে যদি আমার মৃত্যুর সময়ে আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরী দাসী গর্ভবতী থাকে এবং পূর্ণ সময়ে ভালোভাবে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়,তাহলে সেই পুত্র হবে আমার উত্তরাধিকারী এবং উত্তরাধিকারী। কিন্তু ঘটনায় এক পুত্র সন্তানের জন্ম না হয়ে যদি এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়,তাহলে আমার ইচ্ছা এবং নির্দেশ এই যে,সেইক্ষেত্রে কোন পুত্র সন্তান দত্তক নেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। এবং যদি এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় এবং সে পূর্ণ বয়স প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ আঠারো বছর বয়স হওয়ার পূর্বে যদি সে মারা যায়,সেইক্ষেত্রে কোন দত্তকপুত্র যে কোন বিবেচনার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা যাবে না।

৪। অনুচ্ছেদ চার - আমি আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরীকে আরও নির্দেশ দিচ্ছি যে,পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবহারের বিপরীত আচরণ সে কোন পদ্ধতিতেই নিজে সেইরূপ আচরণ করবে না। আমার পুত্র সন্তানের জন্ম হলে,আমার স্ত্রী রাজবাড়িতে শান্তি বজায় রাখা শর্তের মধ্য দিয়ে আমার পুত্রের সাথে চিরকাল বসবাস করবে এবং একই সঙ্গে খাবার খাবে এবং শান্তি ও নিরবতার মধ্য দিয়ে সে তার জীবন অতিবাহিত করবে।
কিন্তু যদি এমন ঘটনা ঘটে,যে,আমার স্ত্রী আমার পুত্রের সাথে ঝগড়া করছে এবং খারাপ ব্যক্তিদের উপদেশ অনুযায়ী আমার স্ত্রী আমার পুত্রকে উত্তেজিত করছে যেখানে কিছু মামলা করার ফলে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং তার ফলে আমার জমিদারীর ক্ষতি হয়েছে, যে পদ্ধতিতে আমার মা ঠাকুরাণী আমার সাথে ঝগড়া করেছে এবং এর ফলে আমার অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে এবং এর প্রভাব জমিদারীতে পড়েছে। যদি আমার স্ত্রী এই পদ্ধতিতে ঝগড়া করে এবং গৃহ ত্যাগ করে,তাহলে সে তৎক্ষণাৎ শ্রী শ্রী বৃন্দাবনে যেতে পারে এবং সেখানে থেকে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতে পারে এবং মাসে তিনশো টাকার বেশী ভাতা পাবে না। এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমার স্ত্রী এই দেশে বসবাস করলে বিশেষত: বাংলায় থাকতে চাইলে মাসে একশত টাকার বেশী ভাতা আমার হিসাব থেকে পাবে না। কিন্তু ঝগড়া এবং বিতর্কের সৃষ্টি না করে পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবহার অনুসারে সে যদি রাজবাড়িতে বরাবর থাকতে চায় তাহলে পরিবারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবহার অনুসারে রাজি থাকলে সে অবশ্যই খাদ্য এবং পোশাক পাবে।এবং যদি সে ইচ্ছা প্রকাশ করে যে,সে তীর্থস্থান শ্রী শ্রী জগন্নাথ ক্ষেত্রে ( পুরী) যাবে, সেইক্ষত্রে সেখানেযোগদান বাবদ খরচ নির্বাহের জন্য সে পনেরো হাজার টাকা পাবে।
যদি আমার এক পুত্র সন্তান হয় এবং পূর্ণ বয়স্ক হয় এবং আমার স্ত্রীকে খাদ্য এবং পোশাক না দেয় এবং আমার স্ত্রীকে যদি বজায় না রাখে,তাহলে সেইক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর কোন দোষ নেই,আমার স্ত্রী উপরে উল্লিখিত পরিষেবা পাবে। এবং আমার স্ত্রীর কোন দোষ না থাকা সত্ত্বেও যদি আমার পুত্র তার সাথে ঝগড়া করে এবং বিরক্তি প্রকাশ করে,সেইক্ষেত্রে আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরী তার বাসস্থানের জন্য একটা বসত বাড়ি পাবে এবং মাসে এক হাজার টাকা পাবে। এই নিয়ম তখনই বিবেচনার সাথে প্রযোজ্য হবে যখন আমার পুত্র পূর্ণ বয়স্ক হবে। এবং যদি আমার পুত্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয় তাহলে সেইক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।


৫। অনুচ্ছেদ পাঁচ - আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে,যদি আমার পুত্র সন্তান এইরূপক্ষেত্রে বেঁচে থাকে,আমার সমস্ত জমিদারী,আমার নিজের নামে অথবা অন্যের নামে নির্দিষ্ট এবং অস্থাবর সম্পত্তি, আমার জমিদারীর সব এবং আমি ঘোষণা করছি যে, সব কিছুই কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় পূজাপার্বণে যোগদান বাবদ খরচ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আমার নির্দেশ মতো হবে এবং খরচ নির্বাহ করা হবে জায়গীর মহলের আয় থেকে অথবা অনুরূপ অন্য কোন মহলের আয় থেকে সমানুপাতে খরচ নির্বাহ করা হবে। রাজবাড়ির দুটো অংশ একই অবস্থায় থাকবে এবং এই অংশ দুটো অন্য কোন ব্যক্তির দায়িত্বে রাখা যাবে না। এবং আমার স্ত্রী সেখানে খরচ নির্বাহ করবে। এবং যখন আমার পুত্র পূর্ণ বয়স্ক হবে,তখন সে প্রতিষ্ঠিত ব্যবহার অনুসারে খরচ করবে।
এই পদ্ধতিতে আমার নির্দেশের উদ্দেশ্য এই যে,যদি আমি সন্তানহীন হই অর্থাৎ যদি কোন পুত্র সন্তান আমার না থাকে,তাহলে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে যে নির্দেশাবলী আছে,তাতে আমার সম্মতি রইলো এবং সেই অনুযায়ী চলবে। এবং অন্য সব বসত বাড়ি বিক্রী করা হবে এবং উপলব্ধি করা হলো,কিন্তু এরূপ দীর্ঘক্ষণ ধরে চলবে না যেহেতু আমার স্ত্রীর অস্তিত্ব আছে।


৬। অনুচ্ছেদ ছয় - আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে,আমার স্ত্রী আমার কন্যার পরিণয়ের ব্যবস্থা করবে এবং অনুষ্ঠানটি তার নিয়ন্ত্রণ এবং নিজস্ব পরিচালনার মধ্য দিয়ে হবে এবং আমার কন্যা সন্তানের সহিত বিবাহ হবে এক উচ্চ কুলিন সম্প্রদায়ের এবং ভালো স্বভাব যুক্ত এক পুত্র সন্তানের। যে আমার জামাই হবে,সে এবং আমার কন্যা সন্তান যতক্ষণ পৃথক আছে,তখন সেই কুলিন পুত্র সন্তান লেখাপড়ায় ভালো শিক্ষিত হবে এবং একই পদ্ধতিতে আমার কন্যা সন্তান বাংলা এবং ইংরেজী পড়তে জানবে এবং শিক্ষিতা হবে। এরপর আমার কন্যা সন্তানের বিবাহ অনুষ্ঠানে সাত অথবা আট হাজার টাকার বেশী খরচ করা যাবে না,যখন আমার কন্যা সন্তানের বয়স এগারো বছর হবে,তখনই তাকে বিবাহ দেওয়া হবে। এবং আমার কন্যা সন্তানের বয়স যতক্ষণ আঠারো না হবে,ততক্ষণ সে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে বিভিন্ন নির্দেশাবলী গ্রহণ করবে। এবং যে জামাই হবে তাকে শিক্ষার জন্য কলকাতায় হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করতে পাঠাবে। যখন আমার কন্যা সন্তান পূর্ণ বয়স্ক হবে তখন সে বসত বাড়ির মূল্যস্বরূপ পাঁচ হাজার টাকা পাবে এবং তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্যাশ দেওয়া হবে এবং অন্য কোন জিনিষ তাকে দেওয়া হবে না এবং পৃথকভাবে বসবাস করবে এবং সে এবং তার পরিবারের অন্য কেউ ভবিষ্যতে কোন সময়ে কোন কিছু আর দাবী করবে না।

৭। অনুচ্ছেদ সাত - আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, আমার পুত্র সন্তানের বিবাহ অনুষ্ঠানে দশ হাজার টাকার বেশী খরচ করা যাবে না। আমার পুত্র সন্তানের বিবাহের পর,গ্রামের বারো জন ব্রাহ্মণের বিবাহের অনুষ্ঠান করা হবে। ঐ বারো জন ব্রাহ্মণের বিবাহে আমি পাঁচ শত টাকা নির্দিষ্ট করে দিচ্ছি,কিছুক্ষেত্রে খরচ পাঁচ শত টাকার বেশী হতে পারে এবং অন্য কিছুতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু এই ছয় হাজার টাকার খরচটাকে ওপরের দশ হাজার টাকা খরচের অংশ বলে বিবেচিত হবে না।
আমার পুত্র সন্তানের বিবাহ হবে যখন তার বয়স পনেরো বছর হবে। এবং কন্যা সন্তানকে আমি সম্মান জানাচ্ছি,যে আমার পুত্রবধূ হবে। আমার স্ত্রীকে নির্দেশ দিচ্ছি যে,সে একজন উঁচু সম্ভ্রান্ত কুলিন কন্যা সন্তান নির্বাচন করবে,যে খুব সুন্দরী হবে এবং খুব উঁচু ভালো শিক্ষিতা হবে এবং যে বাংলা,ইংরেজী লিখতে পড়তে এবং নির্দেশ দিতে পারবে এবং তারপর বিবাহ হবে।


৮। অনুচ্ছেদ আট - আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, আমার মৃত্যুর পর আমার নিজের শরীর প্রাপ্ত যদি পুত্র সন্তান থাকে,তাহলে সেইক্ষেত্রে, আমার সব সম্পত্তি তথা জমিদারী, তালুক এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট এবং অস্থাবর সম্পত্তি যেগুলি আমার নিজের নামে কিংবা অন্যদের নামে আছে,যাই হোক না কেন যদি কিছু বাদ থাকে, উল্লিখিত সম্পত্তির সব,আমি ঘোষণা করছি যে,যতক্ষণ আমার পুত্র সন্তান নাবালক থাকবে অর্থাৎ পূর্ণ বয়স্ক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের অধীনে থাকবে,আমার পরিবারের পেছনে বছরে ষাট হাজারের বেশী টাকা খরচ করা যাবে না,এছাড়া আমার পুত্র সন্তান এবং কন্যা সন্তানের শিক্ষার পেছনে যেটা খরচ হবে, সেটা তাদের বিচারের রায় অনুসারে,সাদ্দার বোর্ড অফ রেভেনিউর ভদ্রলোকের দ্বারা নির্দিষ্ট করা হবে। তারা বইপত্র সরবরাহ করবে এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিষপত্র, যখন যেটার প্রয়োজন হবে এবং যখন আমার পুত্র সন্তানের বয়স আইনের সম্মতিতে আঠারো বছর পূর্ণ হবে,তখন কোর্ট অফ ওয়ার্ডস আমার পুত্র সন্তানকে সমস্ত জমিদারী ফেরৎ দেবে এবং ঘোষণা করছি যে,যতক্ষণ সে নাবালক থাকবে, ততক্ষণ তার খরচের জন্য ক্যাশ দেওয়া হবে না,যতক্ষণ না তার বয়স পঁচিশ বছর হবে,কারণ আঠারো বছর বয়সে কোন ব্যক্তির সব কিছু বোঝার ক্ষমতা থাকে না এবং মন অটল থাকে না,সেইকারণে আমি এই শর্ত দিয়েছি। কিন্তু আমার পুত্র সন্তানের বয়স হলে অর্থাৎ আঠারো বছর পূর্ণ হলে,তখন সে ইচ্ছা করলে উক্ত টাকা দিয়ে কোন ভালো লাভ প্রদায়ক জমিদারী কিনতে পারে অথবা কোন জমিদারী বন্ধক নিতে পারে কোন ব্যক্তিগত ব্যক্তির কাছ থেকে কিন্তু বিক্রী করার শর্তাধীনে। কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের ভদ্রলোক, যা প্রয়োজন, তা ওই টাকা থেকে সরবরাহ করবে এবং যখন সে পূর্ণ বয়স্ক হবে,তখন ঐ ভদ্রলোকের মতামত থাকবে,যদি সে তার শিক্ষা শেষ না করে এবং বিচার্য বিষয় হয়,তাহলে সে নাবালক বলে বিবেচিত হবে যতক্ষণ না সে শিক্ষা শেষ করে। একজন ইংরেজ এবং একজন সহকারীকে এই উদ্দেশ্যে নিয়োগ করা হবে যে,তাকে নির্দেশ দেবে বাংলা এবং ইংরেজী বিষয়ের এবং একজন পণ্ডিত এবং একজন গুরু মহাশয় থাকবে এই উদ্দেশ্যে,যারা তাকে অংক বিষয়ে নির্দেশ দেবে। মুর্শিদাবাদ জেলার কালেক্টরের কাছে একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হবে যেখানে থেকে সে প্রত্যহ পাঁচ ঘণ্টা থেকে দশ ঘণ্টা পড়াশোনা করবে এবং সপ্তাহে কি শিখলো তা উক্ত ভদ্রলোকের কাছে পুনরাবৃত্তি করে শোনাবে। তাকে পরীক্ষা করা হবে এবং কমিশনার ও ঐ জায়গার এজেন্ট প্রত্যেক ছয় মাসে তার পরীক্ষা গ্রহণ করবে। সে মুর্শিদাবাদ জেলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সাতজন অথবা আটজন তরুণদের কাছ থেকে নির্দেশ গ্রহণ করবে যাতে পড়াশোনায় তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বেশী সফল হতে পারে।
এবং শেষ দুই বছর ধরে উপরের ভদ্রলোক একজন উপযুক্ত মৌলবি নিয়োগ করবে, যে আমার পুত্র সন্তানকে আইন শেখাবে যেগুলি সরকারী লিখিত আইন এবং পারসিয়ান ভাষাও শেখাবে,যাতে ঐ ভাষা সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকে,এর বেশী কিছু নয়। কিন্তু পরে তাকে ইংরেজী ভাষাতে শিক্ষা দেওয়া হবে,যদি পারে তবে তাকে ফরাসী ভাষাতেও শিক্ষা দেওয়া হবে,পড়তে এবং লিখতে শিখবে গত দু বছর ধরে এবং একই পদ্ধতিতে যদি পারসিয়ান ভাষাও শিখে নিতে পারে তাহলে খুবই ভালো হয়। সুতরাং আমি বিনীতভাবে অনুনয় করছি উক্ত ভদ্রলোককে,যদি তার সময় থাকে এবং অন্যান্য পড়াশোনার ক্ষতি না করে,তারা আমার পুত্রকে সঠিকভাবে শিক্ষিত করে তুলবে,কারণ এই দেশের ধনবান ব্যক্তিদের পুত্ররা সাধারণত জ্ঞানহীন এবং তারা তাদের সম্পদের গর্বে স্ফীত হয়,আর অন্যদেরকে অত্যাচার করে। সুতরাং আমি অনুনয় করছি যে, সে খাদ্য এবং পোশাক পাবে যতক্ষণ না সে ষোলো বছর বয়সে পড়ে এবং চৌদ্দ বছর বয়স থেকে, মাসিক একশত টাকা পাবে পকেট মানি হিসাবে এবং ষোলো বছর বয়স থেকে যতক্ষণ না সে পূর্ণ বয়স্ক হয়,ততক্ষণ পর্যন্ত পকেট মানি হিসাবে পাঁচশত টাকা পাবে,কিন্ত যদি,মাসিক,ছয় মাসে এবং বাৎসরিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সে যা শিখেছে,তার কৃতকার্যতা প্রমাণ করতে না পারে,তাহলে তার পকেট মানি সমানুপাতিক হারে কমে যাবে।


৯। অনুচ্ছেদ নয় - আমি আন্তরিকভাবে এই দেশের ব্রিটিশ সরকারকে অনুনয় করছি যে,নিম্নে যে বিষয়গুলি বর্ণিত হয়েছে, সেগুলি সম্বন্ধে আমার প্রতি যেন তাদের উদারতা থাকে,আমার শরীর প্রাপ্ত যদি কোন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ না করে অথবা জন্মগ্রহণের পর যদি মারা যায়,তাহলে তারা আমার সমস্ত জমিদারী, নির্দিষ্ট এবং অস্থাবর সম্পত্তি দখল করবে, কিন্তু স্বর্ণ, রূপা,পিতল,কাঁসা, পাথর এবং অন্য ধাতুসমূহ এবং পাথরের তৈরী জিনিষপত্র গুলো বাদ দিয়ে এবং তাই ঘোষণা করছি যে,এবং আসবাবপত্র যেগুলি আমার কাশিমবাজার বাড়িতে আছে,যে সব আসবাবপত্র আমার বানজেতিয়া বাড়িতে আছে,আমার মৃত্যুর পরে,যা পড়ে রইলো তার প্রতিটি জিনিষ বিক্রী করতে পারে এবং ভালো জমিদারি কিনে প্রসারণ ঘটাতে পারে।
জমিদারীর সব যা আমার আছে,আমি দুহাবেহারা জায়গীর যা গাজীপুর জেলার মধ্যে,এটি আমার নিজের জন্য এবং আমার পূর্ব পুরুষদের ধর্মীয় পূজার জন্য বরাদ্দ করলাম। অন্য সব জমিদারী পাট্টা দেওয়া হলো অথবা খামার রক্ষার অধীনে রইলো এবং বাহারবান্দ গোলা,কিসমত ভিতরবান্দ,কিসমত গয়বাড়ি যা রংপুর জেলায় অবস্থিত এগুলোকে বাদ দিয়ে। সুতরাং আমি প্রার্থনা করছি যে,তারা একজন অথবা দুজন ভালো অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ ভদ্রলোক যারা সিভিল সার্ভিসে যুক্ত তাদেরকে বিশেষ কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করবে,তাদের উদ্দেশ্য হলো পরিমাপ করা,মূল্যায়ন করা এবং নিষ্পত্তি করা,আদায় করার পর সরকারী খাজনা শোধ করার পর যে লাভ পড়ে রইলো তার উপলব্ধি করা, উপরে উল্লিখিত মহল এবং অন্য মহলসমূহ নিষ্পত্তির পর,তারা আবেদন করবে একটা কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থাৎ আমার নামে একটা স্কুল হবে "দি কৃষ্ণনাথ ইউনিভার্সিটি অফ বানজেতি",যেখানে স্কুল হবে,ছেলেমেয়েদেরকে ইংরেজী, লাতিন,ফ্রেঞ্চ,সংস্কৃত এবং সাধারণ বাংলা এবং পারসিয়ান এবং আরবি ভাষা এবং বিজ্ঞান পড়ানো হবে,এবং কাছের একটি বাড়িতে একটা হাসপাতাল হবে এবং একজন অভিজ্ঞ ইংরেজ ভদ্রলোক নিয়োগ করা হবে এবং সঠিক ভারতীয় নিয়োগ করা হবে হাসপাতালের জন্য এবং যারা হাসপাতালকে পরিচালনা করবে এবং হাসপাতাল সংক্রান্ত ব্যবসার কাজ চালিয়ে নিয়ে যাবে।
এবং যদি আমার পুত্র সন্তান থাকে তাহলে এইক্ষেত্রে তারা একজন স্পেশাল কমিশনার দিয়ে রংপুর জেলায় অবস্থিত বাহারবান্দ এবং অন্য পরগণাসমূহের পরিমাপ,মূল্যায়ন এবং নিষ্পত্তি করবে।
যদি আমার পুত্র সন্তান না থাকে,তাহলে আমি আন্তরিকভাবে সরকারকে অনুরোধ করছি, ব্যবহৃত পদ্ধতিতে পূর্বে বর্ণিত আমার সব সম্পত্তি বিক্রী করতে এবং সঙ্গে আয়ের সুদ রাখতে, বিভিন্ন জেলায় কালেক্টরের অধীনে থাকা জমিদারি, এবং ব্রিটিশ সরকার আমার প্রতি উদারতার সঙ্গে পূর্বে বর্ণিত কলেজ এবং হাসপাতাল তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং সরকারী খাজনা শোধ করার পর যা অবশিষ্টাংশ থাকবে,তা কলেজ এবং হাসপাতালের জন্য খরচ করবে। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা, শিক্ষা এবং সঠিক পরিচালনার জন্য, এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেখানে ছেলেমেয়েরা অসমর্থ,যেহেতু ছেলেমেয়েরা তাদের পড়াশোনায় ব্যস্ত,সেখানে তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিবেচনা করবে এবং তারা কলেজটাকে বানজেতিয়া বাড়ি থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করবে না কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞান এবং অঙ্ক বিষয়ে সেখানে ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।


১০। অনুচ্ছেদ দশ - আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে,যতদিন আমার স্ত্রী জীবিত থাকবে,ততদিন আমার স্ত্রী মাসে পনেরোশত টাকা ভাতা পাবে,পুত্র সন্তান জীবিত না থাকলে এবং সে বরাবর কাশিমবাজার বসত বাড়িতে বসবাস করবে এবং তার মৃত্যুর পর ঐ টাকা কলেজের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমার একজন খুব বিশ্বস্ত চাকর আছে,শ্রী কেশব চন্দ্র সরকার,কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের অধীনে থাকা আমার জমিদারীর লাভের অংশ জমা হলে,আমার মৃত্যুর পর,সেখান থেকে এক লাখ টাকা কেশব চন্দ্র সরকারকে দেওয়া হবে। উক্ত ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব বিশ্বস্ত চাকর,যে কারণে আমি নির্দেশ দিচ্ছি এবং আদেশ দিচ্ছি যে,এই টাকা তাকে দেওয়া হবে যাতে সে সুখ শান্তিতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে এবং ব্যক্তিগতভাবে মাসে পঞ্চাশ টাকা পেন্সন পাবে এবং এই পেন্সন তার পুত্রগণ এবং পৌত্রগণও পাবে। কিন্তু এই পৌত্রগণের পরে আর কেউ পেন্সন পাবে না। তারা কেশব চন্দ্র সরকারকে খরিজা ছটি ( বিশেষত বিচ্ছিন্ন অংশ) পাট্টা শর্তে দিয়ে দেবে,এটি শেরগার পরগণা এবং বালিয়াপুরের অংশ,যা জঙ্গলীমহলে অবস্থিত, সদর মলগুজারী অথবা সরকারী খাজনাহিসাবে এই মহলের মূল্য ষোলো শত টাকা,এই মহলটাকে তাকে দিয়ে দেবে পাট্টা হিসাবে যার মূল্য পনেরো হাজার টাকা, কিন্তু উক্ত তালুকের মূল্য হিসাবে এক হাজার টাকার বেশী পরিশোধ করবে না, আমি এর মূল্য নির্দিষ্ট করে দিলাম মাত্র এক হাজার টাকা এবং এর বেশী নয়।


১১। অনুচ্ছেদ এগারো - আমার নিম্নলিখিত খাস আছে, আমার প্রিয় ঘোড়াগুলি, 'সুলতান,' 'নেপোলিয়ন', এবং একটি লোহা ধূসর ইংরেজ ঘোড়া, যার নাম 'মানকি', এবং চারটি লোহা ধূসর 'আরব ঘোড়া' অর্থাৎ সাতটা ঘোড়া, একটা ছোট 'বগি', এবং একটা 'টানা' জিনিষ যেটা চারটে ঘোড়া পরিচালনা করে, এর 'টপ' নেই, এটাই 'ঘোড়ার গাড়ী', এবং তিনটে হাতি 'সেকেন্দার গ্রিজ', 'চাঁদতারা', এবং 'ছুটে বাচ্চা' ( ছোট্ট যুবক হাতি) এবং ছয়টা নতুন দোনলা বন্দুক স্মিতের দ্বারা এবং একটি দোনলা চুঙ্গি বন্দুক মিস্টার বটেমানের দ্বারা অনুমোদিত এবং দুটো পিস্তল, আমি কেশব চন্দ্র সরকারের কাছে দিয়ে যাচ্ছি।
উল্লিখিত ব্যক্তিগত জিনিষগুলো সে বিক্রী করতে পারবে না, কেবলমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে পারবে। সে তার নিজের ব্যবহারের জন্য লঙের তৈরী একটি দোনলা রাইফেল নিতে পারবে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত হাতিগুলো এবং ঘোড়াগুলো জীবিত আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার সংস্থা বা সরকার থেকে তাদেরকে খাবার সরবরাহ করতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবে উক্ত হাতিগুলো এবং হাওদাগুলো এবং জিন পরানো, লাগাম পরানো সহ ঘোড়াগুলো এবং সাজ পরানো ঘোড়ার গাড়ী ব্যবহার করতে পারবে।
আমি সরাসরি উক্ত সরকারকে আরও কিছু দিয়ে যাচ্ছি, পঞ্চাননতলায় আমার যে একটি নিম্নতর ঘরযুক্ত পাকা বাড়ি আছে এবং যেহেতু আমার পুত্র সন্তান নাই, সেইকারণে নিম্নলিখিত জিনিষ গুলো, আমার ডায়মন্ড স্টার এবং ডায়মন্ড গার্ড চেন এবং দুটো সাধারণ সোনার ঘড়ির চেন এবং দুটো খুব ছোট ঘড়ি, ম্যাককেবের তৈরী এবং একটি হীরার আংটি যাতে স্টার যুক্ত আছে এবং একটি চমৎকার বড় মুক্তাগুলোর, সংখ্যায় সত্তর অথবা আশিটি, চেন এবং একটি বড় বাদ্যযন্ত্র বাক্স এবং সোনা এবং রূপার থালা যার মূল্য দশ হাজার টাকা যেহেতু সে এগুলোকে বাছাই করেছে এবং আমার বানজেতিয়া বাড়িতে সব আসবাবপত্র যার মধ্যে চেয়ারসমূহ, পালঙ্কসমূহ, টেবিলসমূহ, খাটসমূহ, বড় এবং ছোট ছবিসমূহ এবং ছয় মোমবাতির দুটি দীপ্তি এবং আট মোমবাতির দুটি দীপ্তি এবং বারো মোমবাতির একটি দীপ্তি এবং প্রাচীর ছায়া ষাট জোড়া, কুড়িটি তাক, এইসব জিনিষের মূল্য প্রায় আট হাজার টাকা। আমার মৃত্যুর পর এইসব জিনিষ গুলো দেরী না করে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ডায়মন্ড স্টার এবং মুক্তাগুলো, উপরে উল্লিখিত রত্নরাজি, আমার যদি কোন পুত্র সন্তান না থাকে অথবা যদি পুত্র সন্তান থাকে এবং যুবক বয়সে পৌঁছানোর আগে মারা যায় অর্থাৎ যদি নাবালক অবস্থায় জমিদারী দখল নেওয়ার আগে মারা যায়, তাহলে সেইক্ষেত্রে কেশব চন্দ্র সরকার উক্ত জিনিষগুলো পাবে।
সুপ্রীম কোর্টে দুই লাখ টাকার কম-বেশী জমানো আছে, যেখান থেকে আমার ঠাকুরমাকে মাসিক ভাতা দেওয়া হবে এবং আমার ঠাকুরমার মৃত্যুর পর উক্ত টাকা কেশবচন্দ্র সরকারকে দিয়ে দেওয়া হবে এবং যে টাকাটা উক্ত কোর্টে মায়ের মাসিক ভাতা দেওয়ার জন্য জমানো আছে, আমার মায়ের মৃত্যুর পর সেই টাকা কোম্পানি গ্রহণ করবে এবং সেই টাকার সুদ থেকে প্রতিদিন অন্ধ,খোঁড়া এবং বিকলাঙ্গ ব্যক্তিদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করবে। আমার ঠাকুরমার মৃত্যুর পর উল্লিখিত দু লাখ টাকার কম-বেশী দেরী না করে উক্ত কেশব সরকারকে দিয়ে দেবে। আমি সব স্বত্ত্ব তুলে নিচ্ছি যেটা আমি অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং একই স্বত্ত্ব উক্ত কেশব সরকারকে দিয়ে দিচ্ছি।
যদি আমার এক পুত্র সন্তান থাকে এবং আমার মায়ের মৃত্যুর পরে,মায়ের মাসিক-বেতন টাকার জন্য যা জমানো আছে, সে ইচ্ছা করলে টাকাটা সংগ্রহ করতে পারবে,তবে যাই হোক না কেন, কোনো হিসাবের মধ্যে টাকাটা রাখতে পারবে না। উক্ত টাকা কোম্পানির কাছে জমা রাখবে এবং পূর্বে বর্ণিত সাহায্যহীন ব্যক্তিদেরকে সুদের টাকায় খাদ্য সরবরাহ করবে।


১২। অনুচ্ছেদ বারো - আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, আমার মৃত্যুর পরে যদি আমার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, সেইরূপক্ষেত্রে আমার স্ত্রী শ্রীমতী সারদাসুন্দরী দাসী এবং অন্যান্য এবং সঠিক ব্যক্তি নিরাপত্তার কারণে 'ওয়াসি ওয়ালি' অথবা নির্বাহীগণ হিসাবে নিযুক্ত হবে,যারা একসঙ্গে আমার টাকা, ক্যাশ বণ্ড ইত্যাদিতে সংগ্রহ করবে, তাই ঘোষণা করছি যে, এবং উক্ত ক্যাশ, কোর্ট অফ ওয়ার্ডসের ভদ্রলোক জমা করবে এবং কোম্পানির কাগজগুলো অনুসারে বিনিয়োগ করবে,যেটা পরে, যখন আমার পুত্র পূর্ণ বয়স্ক হবে, সে তখন ব্যবহৃত পদ্ধতিতে পূর্বে নির্দেশিত, সমগ্র জমিদারী গ্রহণ করবে। যদি আমার পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আমার যে নির্দেশাবলী আছে তা গ্রহণযোগ্য হবে।
সুতরাং আমি এই বারোটি অনুচ্ছেদ নিজের হাতে লিখেছি, এক পরিণত বিবেচনা এবং ব্যক্তিদেরকে অনুনয়ের পরে, যারা আমার বিষয়ের ব্যবস্থাপনায় ন্যস্ত হয়ে এবং আমার প্রতি রুষ্ট না হয়ে, আমি সত্যভাবে এবং বিশ্বস্তভাবে যা এখানে নির্দেশ দিয়েছি, তার সবটাই কাজে পরিণত করবে।
এই উইল এবং ইচ্ছাপত্র বারোটি অনুচ্ছেদে সম্পূর্ণ। ১৮৪৪ সাল, ৩০ অক্টোবর, বুধবার, কাশিমবাজার।
এই বারোটি অনুচ্ছেদ আমার নিজের হাতে লেখা এবং অন্য কোন ব্যক্তির হাতের লেখার কোনো একটি চিঠি নেই কেবল সাক্ষীদের নামগুলো ছাড়া এবং সাক্ষীগুলোর নাম লিখিত হয়েছে। সাক্ষীতে বিভিন্ন ব্যক্তির হাতের লেখা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার কাছে আমার প্র প্রপিতামহের কয়েক ঘড়ি স্বর্ণমুদ্রা পাওনা ছিল। আমি মনে করি এই জন্মেই আপনার উচিত লেন দেন আমার সাথে চুকিয়ে ফেলা।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৭

প্রদীপ হালদার বলেছেন: আমি অবশ্যই আপনার কথা রাখবো। সত্য হোক কিংবা মিথ্যা হোক কিংবা ঠাট্টা হোক, যে আওয়াজ আমাকে দিয়েছেন,তা রক্ষা করার দায়িত্ব আমার।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: চালিয়ে যান হে মহাত্মন। ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দেবো আমরা।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৯

প্রদীপ হালদার বলেছেন: শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা জানাই। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.