নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম। অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার

আমি জাতিস্মর। সপ্তমবার মানব জন্ম, অষ্টমবার মানব জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীর বুকে ফিরবো। সীতারাম নন্দী(১ম), কৃষ্ণকান্ত নন্দী(২য়),কাশিমবাজার রাজা কৃষ্ণনাথ রায়(৩য়),বিজয়কৃষ্ণদুলাল পাল(৪র্থ),হরিদাস মুখার্জী(৫ম),রমেশ সাহা(৬ষ্ঠ),প্রদীপ হালদার(৭ম)।

প্রদীপ হালদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি সেখানে কিছু সময়ের জন্য একা ছিলাম।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

বিকাল ৪টা নাগাদ ফোন পেলাম। আমাকে পুলিশের সাথে কোন এক জায়গায় যেতে হবে এবং সেখানে এক মৃতদেহের হাত দেখতে পাওয়া গেছে, সেটাকে উদ্ধার করতে হবে। সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে।মাটি থেকে কোন মৃতদেহ তুলতে হবে।
আমি গাড়ি নিয়ে বের হলাম। আমার সামনে পুলিশের গাড়ি ছিল। প্রায় পাঁচটা নাগাদ পুলিশকে নিয়ে আমি গ্রামে পৌঁছালাম। মাঠে এসে গাড়িগুলো দাঁড়ালো। আমি গাড়ি থেকে নামলাম। আমি হাঁটতে শুরু করলাম। আমার হাতে একটা পিচবোর্ড ছিল। তাতে কিছু সাদা কাগজ ছিল। আমার সাথে পুলিশেরা হাঁটতে শুরু করলো। রিপোর্টার আমাদের ছবি তুলতে শুরু করলো। প্রচুর গ্রামের মানুষজন ছিল। তারাই আমাদেরকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যাছিল। ঘন জঙ্গল। বাম দিকে নদী। নদীর দুই ধারে উঁচু উঁচু গাছ। ঘন জঙ্গল। তখনও দিনের আলো ছিল। গা ছম ছম করার মতো জায়গা। হঠাৎ দেখি নদীটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। নদীটি সোজাসুজিভাবে যেমন চলে গিয়েছে, তেমনি নদীটি আবার ডান দিকে বেঁকে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। তবে নদীটি এখানে বেশী চওড়া নয়। লাফ মেরে পার হওয়া যাবে। সবাই লাফ মেরে নদীটি পার হচ্ছিল। আমার পরণে কোর্ট প্যাণ্ট ছিল,পায়ে জুতো ছিল। কোর্টের দুই পকেটে দুটি মোবাইল ছিল। আমি নদী পার হতে ইতস্ততঃ করছিলাম। ভাবলাম, লাফ মেরে নদী পার হওয়া ঠিক হবে না। আমি জলে পড়ে যেতে পারি। সেক্ষেত্রে আমার জুতো নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা মোবাইল দুটো জলে পড়ে যেতে পারে। সবাই নদী পার হচ্ছিল। আমি বললাম, "আমাকে কেউ ধরে নদী পার করে দাও না?" একটি ছেলে আমার কাছে এগিয়ে এলো। সে আমাকে তার পিঠ ধরতে বললো। সে আমাকে তার কাঁধে তুলতে চাইছিল। আমি তার কাঁধে না উঠে পিঠ ধরলাম। ছেলেটি আমাকে নদী পার করিয়ে দিলো। আমি ডাঙায় উঠলাম। আবার হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর যেতেই আবার নদী। নদীর দুই পাড়ে প্রচুর লোকজন। তারা আমাকে জানালো যে আবার নদী পার হতে হবে। এখানে জল একটু বেশী আছে। হেঁটে নদী পার হওয়া যাবে, তবে জুতোটা জলে ভিজে যাবে। তাই আমি কয়েকটি ছেলেকে বললাম,"তোমরা আমাকে ধরে নদীটি পার করে দাও।" আমার কথা শুনে দুটো ছেলে এগিয়ে এলো। আমি আমার দুই হাতে তাদের দুই কাঁধ ধরলাম। পিচবোর্ড আর মোবাইল আমার হাতে ছিল। আর একটি ছেলে আমার পা দুটো উঁচু করে ধরলো। তারা আমাকে নদী পার করে দিলো। প্রথমবার নদী পার হওয়ার সময় আমার হাতে মোবাইল ছিল আর পিচবোর্ডটি অন্য একজনের হাতে দিয়েছিলাম। আমি এবার নদীর ধারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,"কোথায় দেহ আছে?" তারা বললো, "স্যার, এই যে এখানে হাত দেখা যাচ্ছে।" আমি দেখলাম, কিছু বালি তোলা হয়েছে, আর সেখানে একটি ডান হাত দেখা যাচ্ছে। কব্জিতে একটি ধাতুর বালা আছে। আমি পুলিশকে দেখতে পেলাম না। বুঝলাম,প্রচুর লোকজন দেখে পুলিশ নিজেদেরকে লুকিয়ে রেখেছে। একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, "স্যার, কুকুর আনেন নি?" বললাম, "না, পুলিশ তো কুকুর আনে নি।" তাদেরকে বললাম জেনেরটরের আলোর ব্যবস্থা করতে। আমার কথা শুনে একজন পুলিশ আমার কাছে এলো। সে আমাকে জানালো,"স্যার, আলোর ব্যবস্থা থাকবে।"
এক ঘণ্টা কেটে গেলো। মাটি খোঁড়ার জন্য গ্রামের লোকজন একটা কোদাল নিয়ে এলো। চারটে এমারজেন্সী লাইট পাওয়া গেলো। পুলিশ মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করলো। তখন সন্ধ্যা ৬টা। সবার মধ্যে একই ভাবনা- মৃতদেহটা কার? আজ সকালে কিছু মহিলা এই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তাদের সন্দেহ হয়, এই পথের বালি মাটি খোঁড়া কেন? তখন তারা হাত দিয়ে বালি খোঁড়ে আর এই হাত দেখতে পেয়ে তারা ভয় পেয়ে যায় এবং গ্রামের মানুষজনকে এই বিষয়টি তারা জানায়। তারপর আত্মীয়স্বজন থানায় অভিযোগ দায়ের করে। মানুষজন খুবই উৎসাহিত ছিল। ক্যামেরাম্যান ভিডিও করছিল। অবশেষে মৃতদেহ বালির মধ্য থেকে তোলা হলো। নগ্ন দেহ। মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। পুলিশ একটা বড় বস্তা নিয়ে এলো। বস্তার ওপরে মৃতদেহ রেখে, পুলিশেরা ধরাধরি করে মৃতদেহটাকে নিয়ে নদী পার হলো। নদীটাকে পার করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার কাছে কোন ব্যক্তিই এলো না। ভাবলাম, তাহলে জুতোটাকে জলে ভিজিয়ে এদের সাথে যাবো? আবার ভাবলাম, না।
রাত সাড়ে সাতটা। মুহূর্তের মধ্যে জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেলো। আমার ধারে কাছে না আছে কোন পুলিশ আর না আছে কোন ব্যক্তি। আমি একা দাঁড়িয়ে আছি নদীর ধারে। আর আমার পাশেই সেই খোঁড়া জায়গা। নদীর এপারে কিংবা ওপারে কোন ব্যক্তিই নেই। ভাবছি, এখানে আমাকে নিয়ে আসার সময় কয়েকটি ছেলে সাহায্য করেছিল। অথচ মৃতদেহ তোলার পর আমাকে সাহায্য করার জন্য কেউ রইলো না। পাঁচ মিনিট হয়ে গেলো। মানুষের চীৎকার আর কানে আসছে না। কি করবো তাই ভাবছিলাম। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ আমার পেছন দিকে, যেখান থেকে মৃতদেহ তোলা হয়েছে, ঠিক তার ওপরের দিকে কিছু আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি কিছু দেখতে পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম সাদা জামা কাপড় পরিহিত এক লোক । তাকে দেখে আমি আওয়াজ দিলাম, "দাদা, আমাকে নদীটি পার করে দিন তো?" লোকটি সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে ছুটে এসে বললো, "আমার কাঁধে উঠুন।" মাঝবয়সী দোহারা পাতলা এক লোক। আমার সামনে আসতেই আমি পিছন থেকে দুহাত দিয়ে তাকে জাপটে ধরলাম। মোবাইল আমার কোর্টের পকেটে ছিল। আমার হাতে পিচবোর্ড ছিল। লোকটা হঠাৎ আমাকে নিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়লো এবং লোকটা উঠে দাঁড়াতে গেলে আমি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে যাচ্ছি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ থেকে নেমে পড়লাম। ভাবলাম,এর পিঠে উঠে নদী পার হতে গেলে এই ব্যক্তিটি আমাকে জলে ফেলে দিতে পারে, আর সেক্ষেত্রে আমার মোবাইল নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং আমি এর সাহায্য নিয়ে নদী পার হবো না। আমি তাকে বললাম, "আরে আপনি তো ফেলেই দিচ্ছেলেন, আপনি আমাকে অন্য পথ দিয়ে নিয়ে চলুন।" লোকটি চটপট উত্তর দিলো, "স্যার, অন্যপথ আছে। নদীর পথ দিয়ে যাওয়া যাবে,তবে অনেক সময় লাগবে।" আমি বললাম, "তাই চলুন, আমি যাবো, হোক দেরী।" হঠাৎ নদীর ওপার থেকে আওয়াজ এলো," এই স্যারকে ভালো পথ দিয়ে নিয়ে যা না।" এই লোকটি তখনই আমাকে বললো, "স্যার, একটা শটকাট রাস্তা আছে।" আমি বললাম, "তাই চলুন।" লোকটি তার মোবাইলের আলো জ্বেলে আমার আগে এগিয়ে গেলো। আমি তাকে বললাম, "দাঁড়ান, আমার মোবাইলে টর্চ আলো জ্বালাচ্ছি।" আমার মোবাইলের টর্চ আলো জ্বালালাম। লোকটি আমার আগে হাঁটতে লাগলো। আমি তার পেছনে রইলাম। লোকটি ডানদিকের পথ ধরলো। আমি বুঝলাম আমার পাশ দিয়ে কোন লোক বাম দিকে চলে গেলো। কিন্তু বাম দিকে যাওয়া লোকটাকার খোঁজ নিলাম না। আবার যে লোকটা আওয়াজ দিয়েছিলো তার ব্যাপারেও তাকে কিছু বললাম না। হঠাৎ ফোন। আমি লোকটাকে বললাম,"দাঁড়ান, ফোন আছে।" আমি স্যারের সাথে কথা বললাম। তারপর আমি আমার গাড়ির ড্রাইভার সাথে কথা বললাম। লোকটি আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,"আপনার নাম কি?" লোকটি জানালো, " জগানন্দ পাল।" আমি বললাম, "কি নাম?" লোকটি বললো, "জগানন্দ পাল।" আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ঐখানে আমি তো একা ছিলাম, আপনি এলেন কেন?" লোকটি বললো, "ভগবান বোধহয় আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে উদ্ধার করার জন্য।" আমি আর তাকে কিছু বললাম না। হাঁটতে হাঁটতে আমি গ্রামের মানুষজনের কাছে পৌঁছে গেলাম। এবার আমি আগে হাঁটতে লাগলাম। লোকটার কথা আমি ভুলে গেলাম। আমি আমার গাড়ির কাছে পৌঁছে গেলাম। অফিসে ফোন করলাম। হঠাৎ লোকটি আমার কাছে চলে এলো। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, "স্যার,আমি কি চলে যাবো?" আমি বললাম, "হ্যাঁ চলে যান, ভালোভাবে যাবেন।" লোকটি তখনই চলে গেলো। আমি থানায় এলাম। বড়বাবুর আসতে অনেক দেরী হলো। আমি ঘরে ফিরে এলাম। মাঝ রাতে ঘুম ভাঙতেই সেই জঙ্গলের ছবি চোখের সামনে ভেসে এলো। ভালোভাবে ঘুমাতে পারলাম না। এদিন রাতেও ভালোভাবে ঘুম হলো না। রাতে যখনই ঘুম ভাঙে, তখনই জঙ্গলের ছবি ভেসে আসে আর সেই লোকটি যে আমাকে পথ দেখিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে এলো আর সেই আওয়াজ "এই স্যারকে ভালো পথ দিয়ে নিয়ে যা না।" আজ রাতে ভালো ঘুম হলো না। জঙ্গল যেন আমাকে ডাকছে। আমি ঠিক করলাম, আমি আবার ঐ স্পটে আবার যাবো। আমার ড্রাইভারও যেতে রাজি হলো। আমি বেলা বারোটা নাগাদ ঐ স্পটে আবার পা রাখলাম। ভিডিও করলাম। গ্রামের লোকজনের সাথে দেখা হলো। যে ছেলেটি আমাকে নদী পার করে দিয়েছিল, তাকে বললাম, "তুমি কি কোন আওয়াজ দিয়েছিলে?" ছেলেটি জানালো যে অনেকদূর আসার পর পুলিশ জিজ্ঞাসা করছিল সাহেব কোথায়? তখন আমরা দেখলাম যে, আপনি অন্য একটি লোকের সাথে অন্য পথ দিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাকে বললাম, "তুমি কি ওই লোকটাকে চেনো?" ছেলেটি বললো, "না।" তারা সবাই জানালো যে তাদের গ্রামে পাল পদবির কোন লোকের বসবাস নেই। একজন আমাকে জানালো যে জগন্নাথ পাল বলে একজন লোক মুদিখানায় কাজ করে। আমি পরদিন সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে জগন্নাথ পাল বলে কোন লোক বসবাস করে না। সদানন্দ পালই আমাকে জানালো যে তার দাদা জগন্নাথ, তবে তার চেহারা মোটা এবং বয়স সত্তরের বেশী। আমি বাড়ি ফিরে এলাম।
সমালোচনা - মাথায় গুলি করে খুন করে নদীর চরে পুঁতে দিয়েছিল। মৃতদেহ তোলার পর কোন অপরাধী কি সেই জায়গা দেখতে যাবে? আমি সেখানে কিছু সময়ের জন্য একা ছিলাম। আমার কথা শুনে লোকটা কাঁধে নিতে চাইলো কেন? সত্যই কি সে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছিল, নাকি আমাকে মেরে ফেলতে এসেছিল? গাড়ির কাছে এসেও সে আমার কাছে চলে যাবার অনুমতি চাইলো কেন? সে কি আসলে কোন ব্যক্তি ছিল নাকি কোন প্রেতাত্মা ছিল?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৩

কল্লোল পথিক বলেছেন: রহস্যের গন্ধ পাওয়া যায়

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: ভারী চিন্তার বিষয়!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.