নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
(উৎসর্গ ব্লগার সাহসী সন্তান)
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
হঠাৎ শরীর দুর্বল, খাদ্যে অরুচি, চোখ দু’টো হলুদ হলুদ ভাব। দুইদিন শরীরের দুর্বলতা নিয়েই অফিস করেছি। তৃতীয় দিন দুপুরে আনন্দ পত্রের ম্যানেজার খসরু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমার চেহারা দেখেই চমকে উঠলেন। নিজের থেকেই তিনি আমাকে বিকালে পুপুলার ডায়গনেস্টিক সেন্টারে তার বন্ধু ডাঃ মোস্তাফিজ-এর কাছে নিয়ে গেলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জন্ডিস ধরা পড়ল। ডাক্তার আমাকে সম্পুর্ণ বেড রেস্ট দিলেন। অফিসে ছুটি নিয়ে শুয়ে বসেই দিন কাটাচ্ছি। সাত দিন পার হওয়ার পর একটু সুস্থ্য সুস্থ্য মনে হচ্ছে। আমার পাশের রুমে থাকতেন পূবালী ব্যাংকের ডিপুটি কন্ট্রোলার। বড় ভাই বলে ডাকতাম। বয়স্ক মানুষ। কয়েক মাস পরেই রিটায়রমেন্টে চলে যাবেন।
ভদ্রলোক অফিস থেকে বিকেলে বাসায় ফিরে আমার রুমে এসে বললেন, প্রামানিক সাব, টাংগাইলের এক হুজুর পানি পড়া দেয়, তার পানি পড়া খেলে অনেক কঠিন রোগও নাকি ভাল হয়।
আমি চৌকির উপর শুয়ে ছিলাম। তার কথা শুনে শোয়া থেকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে বিছানায় বসে বললাম, আপনি এ খবর পেলেন কই?
তিনি বললেন, আমাদের অফিসের অনেক লোক সেখানে গিয়েছে এবং তারা পানি পড়া খেয়ে নাকি অনেক উপকার পেয়েছে।
আমি বললাম, আপনি কি যাবেন?
তিনি বললেন, আমি আগামী কালকেই যাব। আপনি ইচ্ছা করলে আমার সাথে যেতে পারেন।
আমি বললাম, আপনি কি হুজুরের বাড়ির ঠিকানা জানেন?
উনি আমাকে সায় দিয়ে বললেন, আমাদের অফিসের যারা হুজুরের বাড়ি গিয়েছিলেন আমি তাদের কাছ থেকে ঠিকানা যোগাড় করে নিয়ে এসেছি।
উনার আগ্রহ আর হুজুরের প্রতি ভক্তি দেখে আমিও যেতে রাজী হলাম।
পরদিন সকাল বেলা উঠে হালকা নাস্তা করেই দুইজনে রওনা হলাম। ডাইরেক্ট টাঙ্গাইল গামী বাসে উঠে বসলাম। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ দিকের ঘটনা। সেই সময়ে দূরের রাস্তা তো দূরের কথা ঢাকা শহরেও যানজট ছিল না। বেলা দশটার আগেই টাঙ্গাইল গিয়ে পৌঁছলাম। টাঙ্গাইলে বাস বদল করে কালিহাতি গিয়ে নামলাম। কালিহাতি নেমে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এখান থেকে পশ্চিম দিকে ছয়/সাত মাইল হেঁটে যেতে হবে।
ছয়/সাত মাইল রাস্তা হাঁটার কথা শুনে আমি অস্বস্তিবোধ করতে লাগলাম। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে আমার পক্ষে এত রাস্তা হাঁটা সম্ভব নয়। আমি ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবকে বললাম, ভাই, আমার পক্ষে এতো রাস্তা হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। আপনি একাই যান, আমি ঢাকায় ফিরে যাবো।
আমার কথা শুনে উনি কিছুটা বিমর্ষ হলেন। এতদূর এসে হুজুরের পানি পড়া না নিয়ে খালি হাতে ফিরে যাওয়া উচিৎ মনে করলেন না। তিনি আরো লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।
রাস্তার পশের পানের দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলল, আপনারা ভুল পথে এসেছেন। আপনারা এলেঙ্গা ফিরে যান। এলেঙ্গা থেকে ভুয়াপুরগামী বাসে উঠে পানি পড়ার কথা বললেই বাসওয়ালারা আপনাদেরকে নামিয়ে দিয়ে যাবে।
পান দোকানদারের কথা শুনে আমরা দুইজন আবার পিছন ফিরে এলেঙ্গা চলে এলাম। এলেঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই টাঙ্গাইল থেকে ভুয়াপুরগামী একটি বাস চলে এলো। বাসটি এলেঙ্গা থেমেই “পানি পড়া পানি পড়া” বলে চিল্লাতে লাগল। আমাদের আর বুঝতে বাকি রইল না এটাই বেগুন বাড়ি পানি পড়া যাওয়ার বাস। বাসে উঠে সিট নিয়ে বসার কিছুক্ষণ পরেই বাস যাত্রী দিয়ে ভরে গেল। আমি তখনও বুঝতে পারিনি আমার মত এই বাসের সকল যাত্রীই পানি পড়ার রুগী। একটু পরে বাস ছেড়ে দিলো। ভুয়াপুর যাওয়ার অনেক আগেই মাঠের মাঝখানে থেমে গেল। ড্রাইভার বলল, যারা পানি পড়া যাবেন তারা এইখানে নামেন।
আমরা দুইজন দরজার কাছেই ছিলাম, তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে গেলাম। আমরা নামার পরে দেখি আস্তে আস্তে সবাই নামছে। পুরো বাস খালি হয়ে গেল। বাসের ড্রাইভার হেলপার এ অবস্থা দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসল। পুরো বাসের লোকজন পানি পড়ার যাত্রী। একটু পরে যাত্রী ছাড়াই বাস ভুয়াপুরের দিকে চলে গেল।
এইখানে রাস্তা পূর্ব পশ্চিম লম্বা। আমাদেরকে রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে নামিয়ে দিয়েছে। রাস্তা পার হয়ে উত্তর পার্শ্বে চলে এলাম। ট্রাঙ্ক রোডের নিচে কয়েকটি রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। পাকা রাস্তা থেকে একটি কাঁচা রাস্তা সোজা উত্তর দিকে চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে আরো তিন মাইল যেতে হবে। রিক্সা ষাট সত্তর টাকার নিচে যাবে না। ভ্যানওয়ালারা প্রতি জনে বিশ টাকা ভাড়ায় চারজন নিয়ে যাচ্ছে। আমরা দুইজনে একটি ভ্যানে উঠলাম। ফাঁকা মাঠের ভিতর দিয়ে মাটির রাস্তা। বর্ষার পানিতে তলিয়ে পুরো রাস্তাই নষ্ট হয়েছে। একটু পরপরই ভাঙ্গা। প্রত্যেকটা ভাঙ্গায় নামতে হচ্ছে। এবড়োথেবড়ো ভাঙা রাস্তায় ভ্যানে বসে থাকলেও চলন্ত অবস্থায় মাঝে মাঝে ভ্যানসহ উল্টে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। কোথাও কোথাও পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙ্গে দুই পাশেই খাড়া কাছাড় হয়ে আছে। এরকম জায়গায় ভ্যান থেকে শুধু নামতেই হয় না ভ্যান ওয়ালার সাথে যাত্রীদেরকেও ভ্যান ঠেলে রাস্তার উপরে তুলে দিতে হয়।
আমাদের অবস্থা এমন হলো “ঘোড়াতে চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল”। আগে জানলে এ রাস্তায় ভ্যান রিক্সায় না চড়ে হেঁটেই রওনা হতাম। তিন মাইল রাস্তায় এক মাইলও ভ্যানে বসে থাকার সৌভাগ্য হলো না। যেটুকু রাস্তা ভ্যানে চড়ে গিয়েছি, এ্যাবরো থ্যাবরো রাস্তার ঝাঁকিতে তাতেই কোমরের বারোটা বেজে গেলো। এমনি অবস্থায় কখনও ভ্যানে চড়ে, কখনও ভ্যান ধাক্কিয়ে, কখনও পায়ে হেঁটে সোয়া বারোটার দিকে হুজুর বাড়ি গিয়ে পৌঁছলাম।
হুজুরের বাড়িতে এলাহী কান্ড। লোকে লোকারণ্য। বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বে ক্ষেতের ভিতর বাজার বসেছে। মাঝখানে ফাঁকা রেখে চারদিক দিয়ে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে দোকান-পাট বসেছে। টিনের ছাপড়া দিয়ে হোটেল-মোটেল তৈরী। আবাসিক হোটেলের চেহারা দেখে এমনিতেই হাসি পেল। আট নয় ফুট টিনের ছাপড়া। ছাপড়াগুলো চাটাই দিয়ে বেড়া দেয়া। ত্রিশ চল্লিশ ফুট লম্বা ছাপড়ার ভিতরে সাত আট ফুট পর পর খুপড়ি করে পার্টিশন দেয়া। বোর্ডারের আরাম দায়ক ঘুমের জন্য মেঝেতে বিছানো হয়েছে ধানের নাড়া। ধানের নাড়া মার্কা রুমের ভাড়া খুব বেশি নয়। প্রতি দিন দশ টাকা। আরেকটু ভাল হোটেলে থাকতে চাইলে বাঁশের টংয়ের ব্যাবস্থা আছে, ভাড়া একটু বেশি, বিশ টাকা। আরো ভাল হোটেলে থাকতে হলে চৌকির উপর কাঁথা বালিশসহ পঞ্চাশ টাকা। ভিআইপি ভাবে থাকতে চাইলে কাঠের চৌকির উপর লেপ তোষকের ব্যাবস্থা আছে, ভাড়া এক শ’ থেকে দুই শ’ টাকা।
থাকার হোটেল যে ভাবেই তৈরী হোক না কেন, বোর্ডারের পরিমাণ খারাপ নয়। ভি্আইপি রুমে লোকজন চোখে না পড়লেও ধানের নাড়া বিছানো খুপরিগুলিতে কিছু লোকজন চোখে পড়ল। অনেকেই ছিঁড়া কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে আছে তাদের সাথে থাকা কঙ্কালসার রগিগুলি দেখে খুব মায়া লাগল। এদের চেহারা বেশ ভুষা দেখেই বোঝা যায় এরা হত দরিদ্র। মেডিকেলে চিকিৎসার খরচ যোগাতে না পেরেই হয়তো বুকে সুচিকিৎসার আশা নিয়ে হুজুরের বিনে পয়সার পানি পড়া খেতে এসেছে।
খাবারের হোটেলগুলোও মন্দ নয়। বাঁশের চাটাইয়ের তৈরী চাল, চাটাইযের বেড়া। কয়েকটি হোটেলের সামনে সাইন বোর্ডে লেখা আছে, ঢাকাই হোটেল, দিল্লী হোটেল, বোম্বাই হোটেল। খাবার আয়োজন খারাপ নয়, মাছ, মাংস, গরু, খাসিসহ অনেক পদের তরকারী হোটেলের সামনে টেবিলে সাজানো আছে।
ক্ষেতের পশ্চিম পাশে আর্মিদের একটি তাঁবু টানানো আছে। হুজুরের বাড়িতে আর্মিদের তাঁবু দেখে আশ্চার্যই হলাম। খোঁজ নিয়ে জানলাম কোনো এক আর্মি অফিসারের স্ত্রী দীর্ঘ দিন থেকে অসুস্থ্য। অনেক চিকিৎসা করার পরও সুস্থ্য হচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেলের সব ডাক্তার ফেল। মেডিকেলের ডাক্তার ফেল হওয়ায় সুচিকিৎসার জন্য হুজুরের পানি পড়া খেতে নিয়ে এসেছেন। আর্মি অফিসারের স্ত্রীর সুচিকিৎসার সহযোগীতা করতে এসে এখানে ছোটখাটো একটি অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প তৈরী হয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে কেমন মনে হলো। কৌতুহল বশতঃ এক ফাঁকে তাঁবুর কাছে গিয়ে মহিলাকে দেখে খুব খারপ লাগল। মহিলা খুবই অসুস্থ্য। অসুখে অসুখে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আরেকজনের সাহায্য ছাড়া উঠতে বসতে পারে না। এই মহিলাকে তিন বেলা হুজুর এসে পানি পড়া খাওয়ানোর পাশাপাশি মন্ত্র পড়ে চোখে মুখে ফুঁ ফুঁ করে ঝাড়া দিয়ে যান। হুজুরের ঝাড়ায় মহিলা কতটুকু সুস্থ্যবোধ করছেন জানিনা, তবে মনের মধ্যে এতটুকুই সান্তনা খুঁজে পেলাম, স্বামী বেচারা স্ত্রীকে সুস্থ্য করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বাজারের মাঝখানে একটি বাঁশের খুঁটিতে মাইকের স্পীকার টাঙানো আছে। এই মাইক দিয়েই চিকিৎসার জন্য আগত মানুষ জনের উপচে পড়া ভির নিয়ন্ত্রন করা হয়। প্রয়োজনে হুজুর মাইক দিয়েই তেল পড়া পানি পড়াসহ নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
দিনটি ছিল শুক্রবার। আমরা হুজুরের পানি পড়ার জন্য হুজুরের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। হুজুরের লোকজন বাড়ির সামনের উঠানে দাঁড়ানো ছিল। তারা বলল, হুজুর জুমার নামায না পড়ে পানি পড়া দিবেন না।
বাড়িটি জমি থেকে বেশ উঁচু। বন্যার কারণেই হয়তো বাড়িটি মাটি কেটে জমি থেকে অনেক উঁচু করেছে। শুধু এই বাড়িটিই নয় ঐ এলাকার সব বাড়িই জমি থেকে উঁচু। হুজুরের বাড়িটি দক্ষিণমুখী। বাড়ির সামনে পূর্ব পশ্চিম লম্বা পাশাপাশি দু’টি পুরানো টিনের ঘর। দুই ঘরের মাঝখানে তিন চার হাত ফাঁক। দুই ঘরের মাঝের এই ফাঁক দিয়েই বাড়ির ভিতরে ঢুকতে হয়। দুইজন আনসার বাড়ির ভিতর ঢোকার রাস্তায় লাঠি নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। হুজুরের নিজস্ব লোকজন ছাড়া বাইরের কাউকেই বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
উঠানে মধ্য বয়স্ক একজন গ্রামের কৃষক দাঁড়ানো ছিল। পরনে লুঙ্গি, গায়ে কোড়া গেঞ্জি, ঘাড়ে গমছা। তাকে দেখে মনে হলো এই এলাকার লোক হবে। জিজ্ঞেস করে উত্তর পেলামও তাই। লোকটিকে হুজুরের পানি পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি যে বর্ননা দিলেন তা হলো এই, হুজুর ছোট থেকেই ইসলামীভাবাপন্ন লোক। বিনা কারণে নামায রোযা কাযা করেন না। তবে তিনি মাদ্রাসায় পড়েন নাই। স্কুল কলেজেই লেখা পড়া করেছেন। বিএ পড়ার সময় পাশের বাড়ির এক বয়স্ক মহিলা পেটের ব্যাথায় চিল্লাচিল্লি করতে ছিল। তার চিল্লাচিল্লি দেখে উপযাচক হয়েই তিনি এক গ্লাস পানিতে মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে দেন। গ্লাসের পানি পড়া খেয়ে মহিলার পেটের ব্যাথা সেরে যায়। ঘটনাটি মুহুর্তেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তাদের সমস্যা নিয়ে আসে। তাদেরকেও পানি পড়া দেন। তার পানি পড়া খেয়ে অনেকেই সুস্থ্যবোধ করে। এই খবর আস্তে আস্তে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিনই বিনে পয়সায় পানি পড়া নিতে দূরদূর থেকে লোকজন আসতে থাকে। এক সময় ট্ঙ্গাাইলের ডিসির কানেও খবরটি চলে যায় সেও তার সমস্যা নিয়ে আসেন। তার পানি পড়া খেয়ে নাকি তিনিও সুস্থ্য হন। হুজুরের পানি পড়ায় উপকার পেয়ে ডিসি সাহেব খুশি হয়ে তড়িঘড়ি হুজুরের বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্তীতে হুজুরের বাড়িতে আগত লোকজনের ভির সামাল দেয়ার জন্য আনসারের ব্যবস্থাও নাকি তিনিই করে দিয়েছেন।
লোকটির বর্ননা অনুযায়ী কথার কিছু নমুনা আমিও পেলাম। বাড়ির উঠানেই বিদ্যুতের খুঁটি লাগানো আছে। সামনের বাজারসহ পুরো বাড়িতেই বিদ্যুতের ব্যাবস্থা হয়েছে। তার বর্ননা শুনে হুজুরের প্রতি কিছুটা বিশ্বাস স্থাপন হলো। তার কারণও আছে, পানি পড়ার বিনিময়ে তিনি কোনো টাকা পয়সা নেন না। বিনে পয়সায় পানি পড়া দেন। টাকা পয়সা কামানোর ধান্দাবাজি নেই। দু’টাকা করে নিলেও হাজার হাজার টাকা রোজগার করতে পারেন কিন্তু এধরনের কোনো কিছু চোখে পড়ল না। তবে হুজুরের উত্থান খুব বেশি দিন আগে নয়। বিদ্যুতের খুঁটি, সামনের বাজার, মানুষ জনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, সব কিছুই নতুন নতুন মনে হলো।
আমরা লোকটির সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই হুজুর বাড়ি থেকে বের হয়ে এলেন। বয়স খুব বেশি নয় ২৫/২৬ বছরের যুবক। মুখে দাড়ি আছে। পরনে লুঙ্গি, গায়ে সাধারন পাঞ্জাবী। চারজন আনসারের সাথে আরো চার পাঁচ জন লোক তাকে ঘিরে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। হুজুরের কাছে কেউ ভিরতে পারছে না। তাকে এভাবে পাহারা দিতে দেখে খুব খারপই লাগল। হুজুরকে যদি আনসার দিয়ে পাহারা দেয়া হয়, মানুষ যদি হুজুরের নিকট যেতে না পারে তাহলে পানি পড়া নিবে কি ভাবে?
কিন্তু পরক্ষণই আমার ভুল ভাঙল। মুহুর্তেই পানি পড়ার জন্য লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ল। মানুষের ঠেলায় আনসারসহ আট দশজন পাহারাদার কখনও কখনও কাত চিৎ হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। পাহারাদারদের সাথে সাথে মাঝে মাঝে হুজুরও কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। মানুষের ঠেলা ধাক্কা আর পাহারাদারসহ হুজুরের দুর্দশা দেখে পানি পড়া নেয়ার কথা ভুলেই গেলাম। ধাক্কাধাক্কি থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য দুরে সরে গেলাম। দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে লাগলাম। ঠেলাঠেলি করতে গিয়ে মাঝে মাঝে পানি পড়া নিতে আসা লোকজনও চিৎ কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। মানুষের চিৎ কাত হওয়া দেখে হাসি আটকাতে পারছিলাম না। হাসির মাঝেও ভাবতে লাগলাম, পানি পড়া নিতে এসে মানুষ যদি এইরকম অবস্থার সৃষ্টি করে তাহলে অসুস্থ্য মানুষকে সুস্থ্য করতে গিয়ে হুজুরকেই না শেষে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়।
এই অবস্থার মধ্যেই হুজুর মসজিদে রওনা হলেন। ধাক্কাধাক্কি করতে করতে আমরাও তার সাথি হলাম। হুজুর আগে আগে আমরা পাঁচ ছয় শ’ লোক তার পিছনে পিছনে। মসজিদ খুব দুরে নয়। গ্রামের মসজিদ। টিনের চাল টিনের বেড়া। অনেক ঠেলাঠেলি করেও মসজিদের ভিতরে ঢোকা সম্ভব হলো না। বাইরেও নামাজের বিছানা পাওয়া গেল না। মাটির উপর দাঁড়িয়েই নামায পড়তে হলো। গ্রামের মসজিদ আর কত বড় হয়? প্রতি শুক্রবারে হয়তো বিশ পঞ্চাশজন লোকে নামায পড়তো। সেখানে হঠাৎ করে পাঁচশ’ হাজার লোক বেড়ে যাওয়ায় এই অবস্থা।
নামায শেষে মোনাজাত করে হুজুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। মসজিদে আসার পথে যত না ধাক্কাধাক্কি ঠেলাঠেলি করে এসেছি ফেরার পথে তার চেয়ে দ্বিগুন ধাক্কাধাক্কি করতে করতে ফিরে এলাম। বাড়িতে এসেই হুজুর সামনের উঠানের দক্ষিণ পার্শ্বের শেষ প্রান্তে উঁচু জায়গায় দক্ষিণ মুখ করে দাঁড়ালেন। মাইক আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। হুজুর মাইক নিয়ে সবাইকে বাড়ির নিচে জমিনে লাইন ধরে উত্তর মুখ করে দাঁড়াতে বললেন। সবার হাতে একটি দু’টি করে বোতল। কোন বোতলে পানি কোন বোতলে তেল। কয়েকটি বোতলের দোকানও বাজারে বসেছে। খালি বোতল দুই টাকা, তেলসহ বোতল পাঁচ টাকা। আমিও দু’টি বোতল কিনেছি। ডেপুটি কন্ট্রোলার সাহেব পাঁচটি বোতল কিনেছেন। নিজের জন্য দু’টি, বাড়ির গিন্নিসহ ছেলে মেয়েদের জন্য আরো তিনটি। সামনের লাইনে দাঁড়িয়েছি। কয়েক হাজার মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে গেল। সবাই সামনের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে। ধাক্কার চোটে উল্টে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। বহু কষ্টে দুই হাতে দু’টি বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হুজুর সবাইকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বোতলের মুখ খুলতে বললেন। হুজুরের নির্দেশ অনুযায়ী আমিও বোতল দু’টির মুখ খুলে মাইকের দিকে বোতলের উদাম মুখ ধরে রাখলাম।
কিছুক্ষণ পরেই হুজুর মাইকে তেল পড়া দিতে লাগলেন। তিনি যে কি বলছেন তা কিছুই বোঝা গেল না। উর্দু, আরবী, ফারসী, নাগরী না পাহাড়ী ভাষায় মন্ত্র পড়লেন বোঝার শক্তি কারোরই হলো না। অসংলগ্ন ভাষায় কিছুক্ষণ মন্ত্র পড়ে তিনবার মাইকে ফুঁ দিলেন। অবশেষে তেল পড়া মাথাসহ শরীরে মালিশ করতে বললেন এবং পানি পড়া তিন বেলা খেতে বললেন। পানি পড়া ও তেল পড়া শেষ হওয়ার আগেই পানির ভিতর পানি আর তেলের ভিতর তেল দিয়ে সাত দিন পর্যন্ত খেতে নিতে বললেন। তেল পড়া পানি পড়ার নিয়ম কানুন বলে দেয়ার পর তিনি মাইক ছেড়ে দিলেন। মাইক ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে মানুষজন লাইন ভেঙে হুজুরের দিকে হুমড়ি খেয়ে ছুটলো। বোতলের মুখ আটকিয়ে সারতে পারলাম না। মানুষের ধাক্কা খেয়ে বোতল থেকে অর্ধেক পানি ছিটকে পড়ে গেল। বহু কষ্টে বোতলের মুখ লাগিয়ে প্যান্টের দুই পকেটে ভরে হুজুরের কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ির উপরে উঠার চেষ্টা করতে লাগলাম। জমি থেকে বাড়ি অনেক উঁচু এবং খাড়া হলেও উঠতে বেগ পেতে হলো না। পিছনের মানুষের ঠেলার চোটেই তিড়িং করে লাফিয়ে বাড়ির উপরে উঠে গেলাম। সবাই হুজুরের মুখের সরাসরি ঝাড়া নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আমিও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে বার বার ধাক্কা খেয়ে ছিটকে দুরে সরে যাচ্ছি। অনেক চেষ্টায় হুজুরের কাছে গিয়েও কথা বলার সুযোগ হলো না। হাজার কণ্ঠের চিল্লাচিল্লিতে কারো কথা কেউ বুঝতে পারে না। হাত ইশারায় নিজেকে দেখাতেই হুজুর ঠাস করে ঘাড়ে একটি থাপ্পর দিয়ে বলল, নাই নাই, রোগ নাই।
আমার কি রোগ হয়েছে আর উনি কি রোগের থাপ্পর দিলেন কিছুই বুঝতে পেলাম না। তবে থাপ্পরের ব্যাথায় কোঁকড়া লেগে গেলাম। একে দুর্বল শরীর তারোপর হুজুরের বলিষ্ঠ থাপ্পর খেয়ে চোখে সরিষার ফুল দেখতে লাগলাম। ফাঁকে এসে চোখ বন্ধ করে বসে পড়লাম। থাপ্পরের ব্যাথার চোটে মনে মনে ভাবলাম, রোগ ভাল হোক বা না হোক দ্বিতীয়বার আর ওই হুজুরের কাছে যাওয়ার চিন্তাও করবো না।
আমার পাশেই দেখলাম এক ভদ্রলোক মেয়ে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছেন। ভদ্রলোক টয়োটা গাড়ি নিয়ে এসেছেন। সেই সময়ে অবস্থাপন্ন লোকজন ছাড়া প্রাইভেট গাড়ি চড়ার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের ছিল না। মেয়েটি আধুনিকা। সুস্থ্যই মনে হলো। তারপরেও কি কারণে যে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বোঝা সম্ভব হলো না। মেয়েকে নিয়ে হুজুরের কাছে যাওয়ার জন্য ভদ্রলোক খুব চেষ্টা করছেন। মানুষের ভিরে কাছে যেতে পারছেন না। ভির ঠেলে বাবা হুজুরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেও মেয়ের তেমন আগ্রহ নেই। মেয়েটি নাক সিটকাচ্ছে। অর্থৎ হুজুরের প্রতি তার বাবার ভক্তি হলেও মেয়ের এসবের প্রতি বিশ্বাস ভক্তি কিছুই নেই। হয়তো বাবার কথা ফেলতে পারছে না তাই অনিচ্ছা সত্বেও নাক সিটকাতে সিটকাতে বাবার সাথে সাথে ঘুরছে।
বেলা তখন দুইটা পার হয়েছে। হুড়োহুড়ি ধাক্কাধাক্কির ঠেলায় খুব খিদে পেয়েছে। ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখি উনার মুখও শুকিয়ে গেছে। ভাত খাওয়ার প্রস্তাব দিতেই রাজী হয়ে গেলেন। আমি উনাকে সাথে নিয়ে খাবার হোটেলে গেলাম। দুপুরের সময়। সব হোটেলেই প্রচন্ড ভির। ভির বাট্টা ঠেলে দিল্লী হোটেলে খেতে বসলাম। টিনের প্লেট ভরে মোটা চালের ভাত দিল। তরকারী মাছ গোশত কয়েক পদ আছে। ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব শিং মাছ আর বেগুন পছন্দ করলেন। আমিও উনার সাথে সায় দিলাম। কারণ বেগুন বাড়ি এসে বেগুন না খেলে এ এলাকার বেগুনের স্বাদ বুঝবো কেমন করে?
প্রথমেই বেগুনের তরকারী পাতে ঢেলে মুখে দিলাম। তরকারী খেয়ে মুখ উল্টে আসার অবস্থা। মনে হলো লবন, মরিচ, হলূদ আর পানি দিয়ে শুধু জাল দিয়েছে। এতটুকু স্বাদও হয়নি। অর্ধেক ভাত খেয়েই দুইজন চুয়াল্লিশ টাকা বিল দিয়ে চলে এলাম। আসার সময় কোনো রিক্সা ভ্যান না নিয়ে হেঁটেই রওনা হলাম। কারণ যাওয়ার সময় ভ্যানে চড়ে যে শাস্তি পেয়েছি সেটা তো আর ভোলা যায় না।
ট্রাঙ্ক রোডে এসে দেখি রাস্তার পাশে অস্থায়ী বাজার বসেছে। এই বাজার অন্য সময় বসে না। শুধু হুজুরের বাড়িতে পানি পড়া নিতে আসা লোকজনের জন্যই বসেছে। ঢাকা শহরসহ অনেক জায়গার লোকজনই এখানে আসে। শহরের লোকজন এখান থেকে টাটকা শাক-সব্জি সস্তায় পেয়ে কিনে নিয়ে যায়। ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব পঁচিশ টাকা দিয়ে বড় একটি ষোল মাছ কিনলেন। আমিও তাকে অনুসরণ করে অনেকগুলি মাগুর মাছ পঁয়ত্রিশ টাকা দিয়ে নিলাম। সব্জির বাজারে গিয়ে কচি লাউ দেখে মন মানলো না। জাংলা থেকে একটু আগেই কেটে এনেছে। দুইজনে দু’টি কচি লাউ ১২ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। আমাদের দেখাদেখি আরো অনেক লোক কেনাকাটা করল। বিক্রেতারা খুব খুশি। স্থানীয় বাজারের চেয়ে অনেক বেশি দামেই বিক্রি করেছে। তবে আমরা যারা ঢাকা থেকে এসেছি তারাও জিতেছি। এমন টাটকা মাছ, শাক-সব্জি যে দামে কিনেছি ঢাকার তুলনায় অনেক সস্তা।
কিছুক্ষণ পর ভুয়াপুর থেকে ঢকাগামী বাস চলে এলো। আমি আর ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব প্রথমেই বাসে উঠে সিট দখল করে বসলাম। মুহুর্তেই বাস ভরে গেল। যাত্রী ভরে যাওয়ায় বাস তাড়াতাড়িই ছেড়ে দিল।
রাস্তায় খুব একটা দেরি করল না। ঢাকার যাত্রী দিয়ে বাস ভরা। বাস দ্রুত চলতে লাগল। অন্যান্য বাসের তুলনায় অনেক আগেই আমরা ঢাকায় চলে এলাম। ঢাকায় যখন পৌছলাম তখন রাত নয়টা। বাসায় গিয়ে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করতে লাগল। মনে হলো গায়ে জ্বর আসবে। পরক্ষণেই মনে হলো হুজুরের পানি পড়া তেল পড়া আছে, এগুলোর সদব্যবহার করলে জ্বর কাছেও ভিরতে পারবে না। হুজুরের দেয়া নিয়ম অনুযায়ী রাতে পানি পড়া খেয়ে শরীরে তেল মালিস করে ঘুমালাম।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই কোঁকড়া লেগে গেলাম। সারা শরীরে ব্যাথা। ব্যাথার চোটে নড়তে পারছি না। মনে হলো সারা শরীর কেউ সাপ পিটানোর মত করে পিটিয়ে দিয়েছে। পাশের রুমে গিয়ে দেখি ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবও শুয়ে আছেন। কোমরের ব্যাথায় কোকাচ্ছেন। কাছে গিয়ে বললাম, বড় ভাই কোকাচ্ছেন কেন? তাড়াতাড়ি তেল মালিশ করেন আর পানি পড়া খান-- সেরে যাবে।
আমার কথা শুনে ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন, কোনো কথা বললেন না। আমি তার কোকানো দেখে নিজের শরীরের ব্যাথা থাকর পরও হাসাতে হাসতে বেরিয়ে এলাম।
অফিস টাইম পার হলেও দেখি শুয়ে আছেন। ব্যাথার চোটে তিনি আর অফিসেই গেলেন না। পরপর তিনদিন অফিস কামাই করে আমার মতই বিছনায় শুয়ে শুয়ে দিন পার করলেন।
তার অবস্থা দেখে মনে মনে হাসতে লাগলাম, যে লোকটি সুস্থ্য অবস্থায় পানি পড়া খেতে বেগুন বাড়ি গেল, সেই লোক পানি পড়া খেয়ে সুস্থ্য হওয়া তো দূরের কথা উল্টো আরো অসুস্থ্য হয়ে বিছনায় পড়ে কোকাচ্ছেন। হায়রে বেগুন বাড়ির পানি পড়া, আশা করলেন কি আর হলো কি?
(সমাপ্ত)
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫১
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই জহুরুল। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৯
ক্ষুদে লেখক বলেছেন: puro ghotona ta pore khb obak holam r moja o pelam :p
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫২
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ক্ষুদে লেখক। আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২০
সুমন কর বলেছেন: আমার কি রোগ হয়েছে আর উনি কি রোগের থাপ্পর দিলেন কিছুই বুঝতে পেলাম না। তবে থাপ্পরের ব্যাথায় কোঁকড়া লেগে গেলাম। একে দুর্বল শরীর তারোপর হুজুরের বলিষ্ঠ থাপ্পর খেয়ে চোখে সরিষার ফুল দেখতে লাগলাম। ফাঁকে এসে চোখ বন্ধ করে বসে পড়লাম। থাপ্পরের ব্যাথার চোটে মনে মনে ভাবলাম, রোগ ভাল হোক বা না হোক দ্বিতীয়বার আর ওই হুজুরের কাছে যাওয়ার চিন্তাও করবো না।
আপনার স্মৃতিচারণগুলো আসলেই বেশ মজাদার ছিল। প্লাস।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫২
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সুমন কর। আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৯
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমাকে নিয়ে যাবেন একদিন !!!
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৬
প্রামানিক বলেছেন: এই হুজুরের বুজুরগী কয়েক বছর পরেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার সেই স্মৃতি এখনও মনে দাগ কেটে আছে।
৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৯
সাহসী সন্তান বলেছেন: ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে আপনার স্মৃতিচারন পড়ছিলাম। কিন্তু কিছুদূর পড়ার পর হাসতে হাসতে দু'চোখের থেকে ঘুম এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে! ভাই জঠিল একটা লেখা লিখছেন!!
মোবাইলে লগ ইন করে মন্তব্য করছি, তাই বেশি কিছু বলতে পারছি না। ভাবছিলাম পরে মন্তব্য করবো। কিন্তু উৎসর্গটা যেহেতু আমাকেই করছেন তাই বাধ্য হয়েই লগ ইন করে আপনাকে এই মন্তব্য করতে হলো। তবে আপনার সাংঘাতিক অভিজ্ঞতার বর্ননা পড়েতো আমি শেষ!
ভাই সকালে কথা হবে ইনশা-আল্লাহ! ভাল থাকবেন! শুভ রাত্রি!!
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৫
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সাহসী সন্তান। ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে আপনি পড়েছেন জেনে খুবই খুশি হলাম। আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৯
সাহসী সন্তান বলেছেন: ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে আপনার স্মৃতিচারন পড়ছিলাম। কিন্তু কিছুদূর পড়ার পর হাসতে হাসতে দু'চোখের থেকে ঘুম এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে! ভাই জঠিল একটা লেখা লিখছেন!!
মোবাইলে লগ ইন করে মন্তব্য করছি, তাই বেশি কিছু বলতে পারছি না। ভাবছিলাম পরে মন্তব্য করবো। কিন্তু উৎসর্গটা যেহেতু আমাকেই করছেন তাই বাধ্য হয়েই লগ ইন করে আপনাকে এই মন্তব্য করতে হলো। তবে আপনার সাংঘাতিক অভিজ্ঞতার বর্ননা পড়েতো আমি শেষ!
ভাই সকালে কথা হবে ইনশা-আল্লাহ! ভাল থাকবেন! শুভ রাত্রি!!
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৫
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১৭
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
আমার জীবনেও এমন একটি ঘটনার কথা মনে পরে গেল। সেটি ১৯৭২-৭৩ সালের কথা। আমার সেই হুজুর বা গুরু ছিল এক হিন্দু নমোশূদ্র বাড়ী ছিল গোপালগঞ্জ মহকুমার (এখন জিলা) কোটালী পাড়া থানার এক অজপাড়া গাঁ গ্রাম। আপনার মত বহু কষ্ট করে সেই অজপাড়া গাঁ গ্রামে গিয়াছিলাম। সেখানেও আপনার এ ঘটনার মতো মানুষের ঢল ছিল। শুধুই আসা যাওয়ার কষ্ট, টাকা অপচয় আর বিরম্বনা ছাড়া আর কিছুই না।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩১
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রেজাউ করিম। আসলে আমাদের অনেকের জীবনেই এরকম অনেক ঘটনা আছে যা আমরা জানিনা। এই হুজুরের পানি পড়া খেতে গিয়ে কি যে কষ্ট করেছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অথচ বিনিময়ে কোন উপকার পাইনি।
৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা বেশ ইন্টারেস্টিং!! আচ্ছা প্রামাণিক ভাই, আপনার দেশের বাড়ি কি উত্তরবঙ্গের দিকে??
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কাল্পনিক ভালোবাসা। আপনি আমার গল্প পড়েছেন জেনে খুব খুশি হলাম।
ঠিকই ধরেছেন আমার বাড়ি গাইবান্ধায়।
৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮
সাহসী সন্তান বলেছেন: ভাই প্রথমেই একটা বড় দেখে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে রাত জেগে এই লেখাটা লিখে পোস্ট করার জন্য!! আসলে আপনার গল্প শুনে আমার ভিতরেও এই বিষয়টা জানার একটা আগ্রহ হয়েছিল, তাই আপনাকে লিখতে বলেছিলাম। কিন্তু আপনি যে সেটা সত্যিই ঐ রাতেই লিখবেন তা আশা করিনি। সুতরাং আপনার ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতার বর্ননাটা আমাদের কাছে শেয়ার করার জন্য আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ!!
আমার একটা বদ-অভ্যাস আছে ভাই। আমি যদি কখনো কোন হাসির ঘটনা শুনি, পড়ি বা দেখি তাহলে যতক্ষন ঐ ঘটনা আমার চোখের সামনে থাকবে, ততক্ষন আমি নিজে নিজেই হেসে যাবো। অথ্যাৎ যখনই ঐ কথা আমার মনে ভেসে আসবে ঠিক তখনই আমার হাসি আসবে! এখান থেকে ৫ বছর পরেও যদি এই ঘটনা আমার মনে উদয় হয় ঠিক তখনও আমি হাসবো!
রাতে আপনার অভিজ্ঞতার এই লেখাটা পড়ার সময় এতটাই হাসছি যে সকালে আমার পাশের রুমের এক ভাই জিজ্ঞাসা করছে 'ভাই আপনি রাত একটা দেড়টার দিকে অত হাসছিলেন কেন'?
আমি যখন তাকে এই পোস্টটা পড়তে দিয়েছি তখন তার সেকি হাসি.........!! আমি যতক্ষন না ঘুমাইছি ততক্ষন পর্যন্ত হাসছি। আর এখনও পর্যন্ত।
ভাই সব থেকে ইন্টরেস্টিং হলো এই লেখাটা। তাই যদি এটা বোল্ড করে দিতেন তাহলে ভাল হতো। কারন তখন লেখাটা সবার নজরে আসতো!!
আমার কি রোগ হয়েছে আর উনি কি রোগের থাপ্পর দিলেন কিছুই বুঝতে পেলাম না। তবে থাপ্পরের ব্যাথায় কোঁকড়া লেগে গেলাম। একে দুর্বল শরীর তারোপর হুজুরের বলিষ্ঠ থাপ্পর খেয়ে চোখে সরিষার ফুল দেখতে লাগলাম। ফাঁকে এসে চোখ বন্ধ করে বসে পড়লাম। থাপ্পরের ব্যাথার চোটে মনে মনে ভাবলাম, রোগ ভাল হোক বা না হোক দ্বিতীয়বার আর ওই হুজুরের কাছে যাওয়ার চিন্তাও করবো না।
This status is very very interesting! So many many thanks for you........!!! Take-care, All the best........!!!
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সাহসী সন্তান। সকাল বেলা আরো কিছু সংশোধন সংযোজন করা হয়েছে। কাহিনীটি আবার পড়লে বুঝতে পারবেন। আপনার উৎসাহের কারণে আমিও্ উৎসাহ বোধ করছি। প্যারাটি বোল্ড করে দিলাম।
১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
সাহসী সন্তান বলেছেন: এইবার দিয়ে মোট ৬ বার পড়ছি। ধন্যবাদ রিকোয়েস্ট রাখার জন্য!
সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই কোঁকড়া লেগে গেলাম। সারা শরীরে ব্যাথা। ব্যাথার চোটে নড়তে পারছি না। মনে হলো সারা শরীর কেউ সাপ পিটানোর মত করে পিটিয়ে দিয়েছে। পাশের রুমে গিয়ে দেখি ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেবও শুয়ে আছেন। কোমরের ব্যাথায় কোকাচ্ছেন। কাছে গিয়ে বললাম, বড় ভাই কোকাচ্ছেন কেন? তাড়াতাড়ি তেল মালিশ করেন আর পানি পড়া খান-- সেরে যাবে।
আমার কথা শুনে ডিপুটি কন্ট্রোলার সাহেব বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকলেন, কোনো কথা বললেন না। আমি তার কোকানো দেখে নিজের শরীরের ব্যাথা থাকর পরও হাসাতে হাসতে বেরিয়ে এলাম।
ভাই মন্তব্য শেষে আমিও হাসতে হাসতে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম! আপনার লেখাটি প্রিন্ট দিয়ে হার্ডকপি বের করছি। সময় পেলেই পড়বো বলে। এই ধরনের আনন্দদায়ক লেখা আমার খুবই প্রিয়। আশা করছি আপনার কাছ থেকে এমন লেখা আরও পাবো! পাঠক হিসাবে ভাই আজীবন আপনার পাশে আছি!!
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনার মত পাঠক পেয়ে আমিও আনন্দিত। শুভেচ্ছা রইল।
১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫
জুন বলেছেন: মজার পোষ্ট প্রামানিক ভাই । এখন হাসছি কিন্ত কি দুর্দশার মধ্যেই না পড়েছিলেন তখন অসুস্থ অবস্থায় তাই না ?
জন্ডিসের প্রথম এবং শেষ চিকিৎসা হলো রেষ্ট । আর আপনি কি দৌড় ঝাপের মধ্যেই না গিয়েছিলেন ।
সময় থাকলে এমন হুজুর নিয়ে আমার একটা গল্প পড়তে পারেন প্রামানিক ভাই যার আংশিক সত্য ।
http://www.somewhereinblog.net/blog/June/29454836
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০১
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ জুন আপা। আপনার গল্পটা এখনই পড়ছি।
১২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
মধু নদীর জোলা বলেছেন: হা হা হা দারুন মজাক পাইলাম
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৩
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মধু নদীর জোলা। শুভেচ্ছা রইল।
১৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩
রাফিউল আলম ইমন বলেছেন:
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৩
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাফিউল আলম ইমন। শুভেচ্ছা রইল।
১৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
প্রামানিক ভাই, শরীরের ব্যাথাটা কি আবার ফিরে এসেছে?
না পুরোপুরি সুস্থ্ হয়ে গেছেন এখন?
আবার যাবেন বেগুনবাড়ী?------
দারূণ লিখেছেন !!!
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৭
প্রামানিক বলেছেন: বেগুন বাড়ির পানি পড়ার বুজুর্গী দু'এক বছর পরেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আর ঐ পানি পড়ার নামও শুনি না। শরীরের ঐ ব্যাথা নাই তবে ওর চেয়েও বড় বড় ব্যাথা শুরু হয়েছে। ধন্যবাদ কামরুন্নাহার আপা।
১৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৮
ডি মুন বলেছেন: বাহ, খুব মজার গল্প।
ভুয়াপুর নামটাও চমৎকার। তবে পানি পড়া কাজে দিল না !!! এটাই দুঃসংবাদ
++++
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৯
প্রামানিক বলেছেন: ভুয়াপুর নামটা যে কে রেখেছিল জানি না। তবে ভুয়াপুরে বিখ্যাত ব্যাক্তিত্ব প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁর বাড়ি।। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল।
১৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: উচিত শিক্ষা হৈসে। শিক্ষিত মানুষজনের এমন আচরণ দেখলে ব্যথিত হই।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২০
প্রামানিক বলেছেন: খালি উচিত নয় মহা উচিৎ শিক্ষা পেয়েছি। ধন্যবাদ ভাই হাসান মাহবুব।
১৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২২
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভাল্লাগছে প্রামানিক ভাই। আপনার অকৃত্তিম টাইপের লেখা সবসময়ই ভালো পাই। ++
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২১
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শতদ্রু একটি নদী। অনেক অনেক শুভ্চেছা রইল।
১৮| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭
শাশ্বত স্বপন বলেছেন:
ভাই, যদি ইচ্ছা হয়, একবার যান
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২১
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শ্বাশত স্বপন। শুভ্চেছা রইল।
১৯| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১
শামছুল ইসলাম বলেছেন: সাবলীল বর্ননায় সুখ পাঠ্য গল্প/সত্য ঘটনা।
++++ ভাল লাগা।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১২
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শামছুল ইসলাম। শুভেচ্ছা রইল।
২০| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পানি পড়ার জন্য এতদূর? পারেন ও অাপনি (অাপনারা) । মজা পেলাম ।
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৯
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রুপক। ছোট থেকেই ভ্রমণের নেশা এবং আজব কিছু দেখার নেশা ছিল। যে কারণে অসুস্থ্য অবস্থায় এতদূর ভ্রমণ।
২১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৮
গেম চেঞ্জার বলেছেন: কি কইতাম প্রামাণিক ভাই। খালি মুখ চুপে হাসলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
জহুরুল০০৭ বলেছেন:
সুন্দর গল্প লিখেছেন বটে ।