নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
একাত্তর সালে যুদ্ধের সময় হুকুম আলীর জ্বরের সাথে পেট ব্যাথা শুরু হলো। জ্বর তাও এই সেই জ্বর নয়, টাইফয়েড জ্বর। যুদ্ধের কারণে ডাক্তার, কবিরাজ না থাকায় মাস খানেক ভুগতে ভুগতে ঔষধ পথ্য ছাড়াই জ্বর ভালো হয়ে গেল। বিনে চিকিৎসায় জ্বর ভালো হলেও পেট ব্যথা আর ভালো হলো না। পেটের ব্যাথায় বড় যন্ত্রনা ভোগ করতে লাগল। এমন পেটের ব্যথা, না খেতে পারে, না ঘুমাতে পারে। শরীর শুকিয়ে কাঠ, পিঠের হাড্ডিগুলোও গোনা যায়। দুর্বল শরীরে ঠিকমত হাঁটতেও পারে না, মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
শারীরিক এই অবস্থায় তার মনে হলো সে আর বাঁচবে না। মরার আগে ভাল-মন্দ কিছু খেয়ে মরা দরকার। মরার পর তো আর ঘুরে এসে খাওয়া যাবে না, যা খাওয়া দরকার তা বেঁচে থাকতেই খেতে হবে। রসগোল্লা খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় বাড়ির লোকজন তার ইচ্ছা অনুযায়ী রসগোল্লা এনে দিল কিন্তু পরিমাণে কম হওয়ায় খেয়ে তৃপ্তি মিটল না। তার আরো রসগোল্লা চাই, পেট ভরে না খেলে রসগোল্লা খাওয়ার সাধ পূরন হচ্ছে না।
সারা দিন গোল্লা গোল্লা করায় হুকুম আলীর বউ কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলল, তোমার যদি এতো গোল্লা খাবার মন চায় তাহলে ঘরত বসি থাকো কিসোক, ময়রার দোকানোত গেলেই তো হয়। ময়রার হাঁড়ির উপরোত বসি বসি আত্মা শান্তি করি খায়া আসো।
বউয়ের খোঁচা মারা কথা হুকুম আলীর আঁতে লাগল বটে কিন্তু রাগ হলো না। মনে মনে ভাবল বউয়ের কথায় রাগ না করে বরঞ্চ উল্টো কৌশল অবলম্বন করা দরকার। রাগলে রসগোল্লা নাও খাওয়া হতে পারে। বুঝেও না বোঝার ভান করে তার খোঁচা মারা কথাটাকেই সম্মতি স্বরুপ ধরে নিয়ে আনন্দে বিগলিত হয়ে বলল, বউরে, এতদিনে তুই হামার মনের কথাডা বুঝলু। এই কথাটাই কেউ বু’ঝবার চায় না।
হুকুম আলীর বউ স্বামীর চালাকি বুঝতে না পেরে কিছুটা অবাকই হলো। খোটা দিয়ে বলা কথাটাও সে সত্যি হিসেবে ধরে নিল! যে লোক কথায় কথায় খ্যাক খ্যাক করে উঠে সেই লোক খুশিতে বিগলিত হয়ে স্ত্রীর কথাকে তার মনের কথা হিসাবে ধরে নিল। এহেন পরিবর্তন দেখে স্বামীর প্রতি তার মায়া হলো। চেয়েছিল ভেংচি কেটে দু’কথা বলবে কিন্তু স্বামীর আনন্দ মিশ্রিত কথায় ভেংচি কাটতে পারল না। শান্ত স্বভাবে সহজভাবে বলল, তোমার ভাব দেখিয়াই তো ক’লাম। হাজার হলেও তুমি হামার সোয়ামী তো, তোমার মনের কথা কেউ বুজবাইর না পালেও হামি তো বুঝি।
এতদিন সে তার বউয়ের ভেংচি কাটা কটকটানি কথা শুনে এসেছে আজকের মতো এতো নরম সুরে কথা কখনও পায় নাই। বউয়ের সম্মতিমূলক কথায় মুখটা খুশিতে উজ্বল হয়ে উঠল। যে মানুষ নড়তে চড়তে পারে না সেই মানুষ নিজেই দশ কেজি পাট ঘাড়ে নিয়ে হাটের দিকে দৌড়াতে লাগল।
খুশিতে দৌড়াতে দৌড়াতে যখন আলাই নদীর পারে গিয়ে থামল তখন খেয়া নৌকা ঐ পারে গিয়েছে। খেয়ে ছাড়া এই নদী পার হওয়া সম্ভব না। নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজ ছিল, সেটা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট দিয়ে ভেঙে দিয়েছে। এখন ব্রিজ দিয়ে আর পার হওয়া যায় না। এলাকার লোকজন পারাপারের জন্য ব্রিজের পাশেই খেয়া বসিয়েছে। খেয়া ঘাটে প্রচন্ড ভির। প্রত্যেক হাটবারেই এরকম ভির হয়। নদী পার হওয়ার জন্য অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। নৌকা ওপার থেকে এপারে আসার সাথে সাথেই হুড়াহুড়ি লেগে গেল। কার আগে কে উঠবে সেই প্রতিযোগীতা। একবার খেয়া মিস করলে এক ঘন্টা বসে থাকতে হয়। হুকুম আলীরও তর সইছে না, অসুস্থ্য শরীর নিয়ে সেও ঠেলেঠুলে নৌকায় উঠল।
হুড়মুড় করে অতিরিক্ত লোক উঠায় নৌকা তলতল হওয়ার অবস্থা। মাঝি কিছু লোককে নামতে বললেও কেউ নামছে না। উপায়ান্তর না দেখে ঐ অবস্থায় মাঝি নৌকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। অতিরিক্ত বোঝাই হওয়ায় নৌকার কিনার ছুঁই ছুঁই পানি। একটু কাত হলেই উপচে পানি উঠছে। মাঝি সাবধানে লগি ঠেললেও মাত্রাতিরিক্ত যাত্রি হওয়ায় তাল সামাল দিতে পারছে না। এ অবস্থায় নৌকা আর বেশিদূর যেতে পারল না। মাঝ নদীতে গিয়েই লোকজনসহ ডুবে গেল। সবার সাথে হুকুম আলীও মাথার পাটসহ ডুবে গেল। সবাই জান বাঁচানোর জন্য জিনিষপত্র ফেলে সাঁতার কেটে পারে উঠার চেষ্টা করলেও হুকুম আলী পাটের বোঝা জড়িয়ে ধরে পানির নিচে যাওয়া শুরু করেছে।
তার চিন্তা হলো, পাট বিক্রি করা ছাড়া তো রসগোল্লা খাওয়া যাবে না-- কাজেই যত কষ্টই হোক পাট হাত ছাড়া করা যাবে না। হুকুম আলী প্রাণপন শক্তি দিয়ে পাটসহ উপরে উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু যতই পাট নিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করে ততই পাট পানিতে ভিজে ভারি হয়ে নদীর তলার দিকে যায়। দুর্বল শরীরে পানির নিচে আর কতক্ষণ থাকতে পারে? দম বন্ধ হয়ে মরার অবস্থা। কুলাতে না পেরে কিছু পানি খেয়েও ফেলেছে। তারপরেও পাটের বোঝা জাপটে ধরে উপরে উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, দম বন্ধ হয়ে মরার উপক্রম। অবশেষে পাট রেখেই উপরে উঠে আসে।
পানির উপরে ভেসে উঠতেই অন্যান্য নৌকাওয়ালারা নৌকায় তুলে নেয়। আধমরা হুকুম আলী নৌকায় উঠেই অজ্ঞান। জ্ঞান যখন ফেরে তখন দেখে তার চারপাশে অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে। পরনে লুঙ্গি গেঞ্জি ছাড়া আর কিছুই নাই। হাতে রাখা বাজারের ব্যাগটাও পাটের সাথে তলিয়ে গেছে। রসগোল্লা খাওয়া আর হলো না। রসগোল্লার পরিবর্তে নদীর তলদেশের ঘোলা পানি খেয়েই বাড়ি ফিরতে হলো।
তবে নদীর ঘোলা পানি খেলেও ক্ষতি হয় নাই বরঞ্চ উপকারই হয়েছে। অতিরিক্ত পানি খাওয়ার ফলে ঐ যে পেট ব্যাথা ভালো হয়েছে বাকি জীবনে আর কখনই পেট ব্যাথা করে নাই।
০০০ সমাপ্ত ০০০
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১২
প্রামানিক বলেছেন: যশোরের জামতলায় যান ভালো মিস্টি পাওয়া যায়।
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৬
মায়াস্পর্শ বলেছেন: যশোরের জামতলায় যান ভালো মিস্টি পাওয়া যায়।
খেয়েছি একবার। অনেক সুস্বাদু এবং দামও অনেক কম। ওখানকার মোটামুটি সব মিষ্টিই খেয়েছি।
অনেক সুন্দর লেখা। ধন্যবাদ।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৮
প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: খুবই লোভনীয়।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৮
প্রামানিক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৫
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: যাক অবশেষে রসগোল্লার পরিবর্তে নদীর ঘোলা পানিতে পেটের বিষ ভালো হলো।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৬
প্রামানিক বলেছেন: আমার পাশের গ্রামেই এই ঘটনা ঘটেছিল। কয়েক বছর আগে লোকটি মারা গেছে।
৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৪
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: বিষে বিষে বিষক্ষয়
আহাঃ রসগোললা -
কত দিন খাইনা
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭
প্রামানিক বলেছেন: খাওয়া দরকার তা না হলে আফসোস থেকে যাবে।
৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫
এম ডি মুসা বলেছেন: আহ খাওয়াবে একদিন?
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪
প্রামানিক বলেছেন: খাওয়াতে সমস্যা নাই
৭| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫০
নজসু বলেছেন:
সুগার আছে। তবুও ছবিটা দেখে খেতে ইচ্ছে করছে।
শিরোনাম দেখে সৈয়দ মুজতবা আলীর রসগোল্লা গল্পটির কথা মনে পড়ে গেলো।
মনে পড়লো কর্তার ডায়ালোগটা- টিন খুলেছ তো বেশ করেছ, না হলে খাওয়া যেত কী করে?
ধন্যবাদ প্রিয় ছড়াকার। হুকুম আলীর জন্য মায়া হচ্ছে।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪
প্রামানিক বলেছেন: মুজতবা আলীর রসগোল্লার টিনের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।
৮| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৩
সোনাগাজী বলেছেন:
কষ্টের জীবন; কিন্তু সে ভালো হয়েছে, এটা খুশীর খবর।
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৯
প্রামানিক বলেছেন: আসলেই ভালো হয়েছিল ভাই
৯| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫১
আজব লিংকন বলেছেন: হা হা হা .... দারুণ মজা পেলাম।
এক চুবানিতে পেট ব্যথা ক্লিয়ার। বেকার মানুষ এত এত ঔষধ খায়। হেই নদীর পানি শিশি বোতলে ভইড়া সাপ্লাই দেওয়া হোক।
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১০
প্রামানিক বলেছেন: খালি নদীর পানি খাইলে হবে না নদীতে চুবানিও খাইতে হইবো
১০| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫৯
জুল ভার্ন বলেছেন: মজার লেখা! আসল রসগোল্লার ছবি দেখে লোভ লাগছে।
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১১
প্রামানিক বলেছেন: অনেক সময় মিস্টি দেখলেই লোভ লাগে
১১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:১৬
নান্দাইলের ইউনুছ বলেছেন:
আজকাল মিষ্টিতে ভেজাল।
গ্রামের মিষ্টিতে আজকাল আগের মতো সততা নেই।
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
প্রামানিক বলেছেন: এখন আর খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে মিস্টি তৈরী হয় না। সব জায়গায় ভেজাল মিস্টি
১২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮
জটিল ভাই বলেছেন:
আহারে রসগোল্লা!!! মুজতবা আলী থেকে হুকুম আলী!!!!
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৮
প্রামানিক বলেছেন: মুজতবা আলীর মিস্টির টিন খুলেছিল চুঙিওয়ালারা আর আমাদের হুকুম আলী মিস্টির বদলে নদীর ঘোলা পানি খেয়েছেৃ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩
মায়াস্পর্শ বলেছেন: আহ, অনেকদিন খাই না ।