![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি।
ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি মালিকানাধীন চার ব্যাংক ভয়াবহভাবে খেলাপি ঋণের চক্রে জড়িয়ে পড়েছে।
খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে- হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে গত বছর। একমাত্র হলমার্কের বিরুদ্ধেই প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মিলেছে, যার পুরোটাই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর বাইরে দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ, গ্যাস সঙ্কটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। এর পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিতে পারছে না। অনেকেই নতুন করে ঋণ খেলাপির খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণখেলাপির নীতিমালায় পরিবর্তন, ব্যাংকঋণের উচ্চসুদ সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণের উপর প্রভাব ফেলেছে।
কিন্তু অভিনব পদ্ধতিতে পার পেয়ে যাচ্ছে ঋণখেলাপিরা। ব্যাংকারদের যোগসাজশে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ঋণ সমন্বয় করার পাশাপাশি খেলাপিরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে। তারা আদালতে রিট করে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নিজেদের নাম স্থগিত করিয়ে নিচ্ছে। এ সুবাদে তারা ঋণখেলাপি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ নিয়মাচারকে পাশ কাটিয়ে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ নিচ্ছে। শুধু এটিই নয়, শত শত কোটি টাকার ঋণ পরিশোধের দায় থেকেও তারা নিজেদের মুক্ত রাখতে সক্ষম হচ্ছে। এভাবে ৩৩৬ বড় খেলাপি ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া থেকে অব্যাহতি পেয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। চোখের সামনে ঋণশৃঙ্খলা ধ্বংস হলেও কিছুই করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি আদালত সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে। এমতাবস্থায় খেলাপিদের আটকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বিকল্প চিন্তা করছে। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। ফলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভিশন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
ব্যাংকারেরা বলেছে, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় দেয়ার পরেও খেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট করছে। ফলে ব্যাংক প্রাথমিকভাবে রায় পেলেও খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আবার সিভিল আটকাদেশ আইনের ৩৪ ধারা অনুযায়ী ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আটকাদেশ দেয়ার পরেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তা যথাযথভাবে কার্যকর করছে না। এ ছাড়া আইনগত জটিলতার কারণে বন্ধকী সম্পত্তির স্বত্ব ব্যাংকের অনুকূলে ন্যস্ত করা যাচ্ছে না। এর ফলে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক কাঙ্খিত হারে সফলতার মুখ দেখছে না।
অপরদিকে মামলার জালে আটকা পড়েছে সারাদেশের ২ লাখ কৃষক। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষি শ্রমিকের দুষ্প্রাপ্যতা, উৎপাদন খরচ জোগাড়ে কৃষকের অবস্থা এমনিতেই বেশ খারাপ। এ সময় সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করতে পারে বলে বিশ্লে¬ষকরা মনে করেন। ঋণের দায়ে এখন কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, পালিয়ে ফিরছে অনেকে। এসব কৃষকের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ৬টি ব্যাংকের পাওনা মাত্র ৫১৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ নাগাদ এক হিসাবে জানা গেছে, দেশে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে ২ লাখ ১৩৬টি।
বলাবাহুল্য, একই দেশে এ বৈষম্যের প্রতি আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। ১০ হাজার টাকার কৃষকের ঋণী কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হবে, ওয়ারেন্ট বের হবে আর কৃষক পালিয়ে বেড়াবে অপরদিকে একই দেশে হাজার হাজার কোটি ঋণ খেলাপি শুধু নয় বরং লোপাটকারীরাও পার পেয়ে যাবে এমনকি উল্টো নতুন করে ঋণ পাবে দেশে এ বৈষম্য কী করে বরদাশত করা যায়?
প্রতিভাত হয় সরকার জনগণের সরকার নয়। সরকার প্রভাবশালী, বিত্তশালী, দলীয় রাজনৈতিক সরকার। সরকার সংবিধান লঙ্ঘনকারী সরকার।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিকের এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সরকার সংবিধান পালন করেনা। ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার তাদের নেই। একথা সরকারকেও উপলব্ধি করতে হবে। জনগণকেও জনসচেতন হতে হবে।
আর কতকাল শ্রমিকের বক্ষপিঞ্জরের উপর তৈরী হবে অত্যাচারীর প্রমোদখানা!!!
©somewhere in net ltd.