![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“আমরা সউদী রাজ পরিবার ইহুদীদের ভাই। আমরা যে কোন মুসলমান এবং যে কোন আরবীর সাথে দ্বিমত পোষণ করি, যারা ইহুদীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। বরং তাদের সাথে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আরব হচ্ছে সেই উৎসভূমি যেখান থেকে ইহুদীরা বিস্তার লাভ করেছিল; পরে তার বংশধররা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।”
(বাদশাহ ফায়সাল আল সউদ, ১৯৬৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন পোস্ট )
সত্যিই কি সউদী রাজ পরিবার “আনজা বিন ওয়াইল” গোত্রের সদস্য, যা তারা দাবি করে থাকে
তারা কি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ধর্মের অনুসারী? আসলেই কি তারা আরব বংশোদ্ভূত?
উপরের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর সউদী রাজ পরিবারের অনেক দাবির উপর কলঙ্ক আরোপ করবে এবং যুক্তির দ্বারা অনেক মিথ্যা উদ্ধৃতি খণ্ডন করবে। অপরদিকে মুনাফিকরা তাদের বিবেক বুদ্ধি বিক্রি করে দিয়ে, প্রকৃত সত্য গোপন করে সউদী রাজ পরিবারের মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছে। উচ্ছিষ্টভোগী কয়েকজন সাংবাদিক এবং ঐতিহাসিক সামান্য কিছু আর্থিক আনুকূল্যের কারণে সউদী রাজ পরিবারের বংশানুকূলের পরিচয়কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। নাউযুবিল্লাহ! এ সকল মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীরা বলতে চায় এই সউদী শাসকরা হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত খলীফা। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এ সকল তোষামোদির মূল কারণ হচ্ছে সউদী রাজপরিবারের অপরাধ, নৃশংসতাকে জায়িয করার লক্ষ্যে সমর্থন আদায় করা, যাতে তাদের সিংহাসন অটুট থাকে এবং তাদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগগুলো যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। অথচ তাদের এ সকল কর্মকাণ্ড, স্বৈরাচারী মানসিকতা ইসলামের প্রকৃত বিশ্বাসের পরিপন্থী।
ইসলাম ধর্মে রাজতন্ত্রের কোন সুযোগ নেই। কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের যে কোন সদস্যের চাপিয়ে দেয়া শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে রাজতন্ত্র, যা সাধারণ মানুষের অধিকারকে দমিয়ে রাখে এবং রাজার স্বৈরাচারী এবং স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যে কোন সরব বক্তার বাক রুদ্ধ করে। কুরআন মজিদে এ সকল রাজাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে “রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে, বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে। তারাও এরূপ করবে।” (সূরা নমল : আয়াত- ৩৪)
অথচ এই সউদী রাজ পরিবার কুরআন মজিদ-এর আয়াত শরীফকে প্রকাশ্য উপেক্ষা করে আবার দৃঢ়তার সাথে মিথ্যা দাবিও করে যে, তারা হচ্ছে কুরআনুল কারীমের সঠিক অনুসারী। সউদী সরকারের তরফ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে, রেডিও, টেলিভিশনে কুরআন শরীফ-এর সূরা নমলের ৩৪ নম্বর আয়াত শরীফ যেন তিলাওয়াত করা না হয়। শুধু তাই নয়, যে কোন প্রকাশনায়, জার্নালে, লেখায় এই আয়াত শরীফ-এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সউদী রাজ পরিবার ভীত যে, এই আয়াত শরীফ-এর তিলাওয়াত এবং প্রচারণা তাদের রাজতন্ত্রের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে।
কারা এই সউদী? এদের শেকড় কোথায়? এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য কি?
সউদী রাজ পরিবারের সবাই ভালভাবেই অবগত যে, বিশ্বের সকল মুসলমানগণ জেনে গেছে তাদের মূলে রয়েছে ইহুদী রক্ত। বিশ্বের সকল মুসলমান, তাদের রক্তাক্ত অতীত এবং বর্তমানের কদর্য এবং নিষ্ঠুর অত্যাচারের ইতিহাসও জেনে গেছে। বর্তমানে ইসলামের তথাকথিত লেবাস পরে (সুন্নতী পোশাক নয়) তারা প্রাণপণে তাদের ইহুদী অস্তিত্ব ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ কারণে বংশানুক্রমে তারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত পৌঁছেছে-এই দাবি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট অপচেষ্টাও চালাচ্ছে।
তারা ভুলে গেছে বা উপেক্ষা করছে যে, ইসলাম কখনই শুধু বংশ পরিচয়কে প্রাধান্য দেয় না। কুফরী করলে কেউ নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলের অন্তর্ভুক্ত থাকে না। ইসলাম মানুষের ঈমান, আমলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআন মজীদ-এ ইরশাদ করেন “হে মানবজাতি, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহিযগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, সব কিছুর খবর রাখেন।”
যে কোন ধর্মত্যাগী বা কাফির নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা দাবি করতে পারে না। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- যদিও তিনি ছিলেন আবিসিনিয়ার অধিবাসী এবং পরাধীন; কিন্তু ইসলামের কারণে তিনি ছাহাবীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। বিপরীতে আবু লাহাব কুফরীর কারণে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা হবার পরেও তার কোনো মর্যাদা নেই। ইসলামে কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। মানুষের তাক্বওয়া, পরহিযগারীর উপর তার মাক্বাম ও মর্যাদা। কার কতটা বিত্ত, বৈভব বা কে কোন্ রাজবংশের তার মাধ্যমে ইসলাম কাউকে মর্যাদা দেয় না।
এই সউদী রাজ পরিবারের প্রকৃত পূর্বপুরুষ কে?
৮৫১ হিজরী সনের কথা। আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের একদল লোক একটি কাফিলা তৈরি করে ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। আল-মাসালিক ছিল আনজা গোত্রের শাখা। এই কাফিলার উদ্দেশ্য ছিল ইরাক থেকে খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে এনে নজদে সরবরাহ করা। সেই কাফিলার প্রধান ছিল শামী-বিন-হাতলুল। কাফিলা যখন বসরায় পৌঁছে, তখন খাদ্যশস্যের এক ইহুদী বড় ব্যবসায়ীর সাথে দলের লোকজন সাক্ষাৎ করে। সেই ইহুদী ব্যক্তিটি ছিল মোরদাখাই বিন ইব্রাহীম বিন মোসেহ। কোন কোন প্রাচীন ইতিহাসে ইহুদী মোরদাখাইকে মানি বিন রাবিয়া আল মুরাইদি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মোরদাখাই-এর বংশধরেরা ম্রুদা গোত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সেই ইহুদী ব্যবসায়ীর সাথে দর কষাকষির সময় ইহুদী ব্যক্তিটি প্রশ্ন করে “আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?” উত্তরে তারা বলেন, আমরা আনজা গোত্রের এবং আল-মাসালিক সম্প্রদায়ভুক্ত। আল মাসালিক সম্প্রদায়ের কথা শুনেই সেই ইহুদী ব্যবসায়ী আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের উপস্থিত সবাইকে আবেগাপ্লুত হয়ে মুয়ানাকা করতে শুরু করে এবং বলে সেও মূলত আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের তবে সে বসরায় এসে বসবাস করছে। তার পিতার সঙ্গে আনজা গোত্রের কয়েকজন সদস্যের ঝগড়া বিবাদের ফলে সে এখন বসরায়।
এই বানানো গল্প বলার পর পর সে-ই ইহুদী ব্যবসায়ী তার ভৃত্যকে সমস্ত গম, খেজুর, অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যসমূহের বস্তা উটের পিঠে চড়াতে বললো। সেই সুদূর ইরাকে আনজা গোত্রের এবং আল-মাসালিক সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের সম্প্রদায়ের একজন এত উদার ব্যক্তি পেয়ে বেশ গর্ব অনুভব করলো। তারা সেই ইহুদীর সকল কথাই বিশ্বাস করলো। যদিও সে মাসালিক সম্প্রদায়ের ছদ্মবেশে ছিল একজন ইহুদী। কিন্তু খাদ্যশস্যের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়াতে সে সহজেই সবার কাছে বিশ্বস্ত হতে পেরেছিল।
যখন সেই কাফিলা খাদ্যশস্য বোঝাই করে নজদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে সে সময় সেই ইহুদী ব্যবসায়ী তাদের কাফিলার সঙ্গী হতে চাইলো। সে তার মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার জন্যে আকুল ইচ্ছা প্রকাশ করলো। তার এই অভিপ্রায়ের কথা শুনে কাফিলার সবাই তাকে চরম উৎসাহে অভিনন্দন জানালো। সেই ছদ্মবেশী ইহুদী, কাফিলার সাথে নজদে এসে উপস্থিত হল।
নজদে এসে শুরু হয় তার ভিন্ন রকমের কার্যকলাপ। সে তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে নিজের সম্পর্কে অনেক প্রোপাগান্ডা শুরু করে এবং ধর্মীয় অনেক বিষয়ে নিজের মনমত ফতওয়াও দিতে থাকে। সেই সুবাদে কিছু ভক্তও জুটিয়ে ফেলে। কিন্তু সে সময় আল-কাসিমে বসবাসরত একজন বড় আলিম ও বুযূর্গ ব্যক্তি হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক সেই ইহুদী বাধাগ্রস্ত হয়। মুসলমানের ছদ্মবেশে সেই ইহুদীর প্রচারিত বহু ফতওয়ার বিরুদ্ধে তিনি চরম প্রতিবাদ করেন। হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি নজদ, ইয়েমেন এবং হিজাজেও তালিম দান করতেন। উনার প্রচেষ্টায় সেই ইহুদীকে (বর্তমান সউদী রাজ পরিবারের পূর্ব পুরুষ) আল-কাসিম থেকে আল-ইহসাতে বিতাড়িত করেন। নতুন এলাকায় এসে এই ইহুদী (মোরদাখাই) তার নাম পরিবর্তন করে হয় মারক্বান বিন দিরিয়া এবং আল-কাতিফের নিকট বসবাস শুরু করে। সেখানে এসে, সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঢাল সংক্রান্ত একটা মিথ্যা গল্প প্রচার করা শুরু করে।
গল্পটা এ রকম- “মক্কার কাফিরদের সাথে মুসলমানদের যখন উহুদ পাহাড় প্রান্তে যুদ্ধ হয়, সেই উহুদের যুদ্ধে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একটি ঢাল মুবারক এক কাফিরের হস্তগত হয়। পরবর্তিতে সেই কাফির ব্যক্তি সেই ঢাল মুবারক বিক্রি করে দেয় ইহুদীদের বনু-কুনাইকা গোত্রের কাছে যা তারা পবিত্র সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করে আসছে। এভাবে সে ইসলাম ধর্মের প্রতি ইহুদীদের ধর্মীয় সহানুভূতির কথা বোঝাতে চাইতো। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবেও সে নিজের অবস্থান বেদুইনদের মধ্যে শক্ত করে নেয়। সে মুসলমানের ছদ্মবেশে ইহুদীদের পক্ষে কাজ করতে থাকলো। ইহুদী মোরদাখাই বা মারক্বান বিন দিরিয়া আল-কাতিফের নিকট দিরিয়া শহরে বসবাস শুরু করে। সে মনে মনে আরব ভূখণ্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উচ্চাশা পোষণ করতো। তার আশা পূরণের লক্ষ্যে, মূল পরিকল্পনা গোপন করে আরব বেদুইনদের তার পক্ষ সমর্থনের জন্য আবেদন নিবেদন করতে থাকে এবং নিজেই সেখানকার স্ব-ঘোষিত রাজা বলে দাবি করে। তার এই অপচেষ্টাকালে, আরবের আজামান গোত্র এবং বনু খালিদ গোত্র একত্রে এই ইহুদীর আসল পরিচয় পেয়ে তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা দিরিয়া আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কিন্তু সেই সুচতুর ইহুদী সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
বর্তমান সউদী রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ এই ইহুদী মোরদাখাই বা মারক্বান বিন দিরিয়া আল-আরিদের নিকট আল মালিবিদ-গুশাইবা নামক একটি খামারে আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্তমানে একে বলা হয় আল-রিয়াদ। এই ইহুদী সেই খামারের মালিকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সেই খামারের মালিক ছিল অত্যন্ত দয়ালু একজন মানুষ, সে তখনই তাকে আশ্রয় দান করেন। কিন্তু এক মাসের কম সময়ের মধ্যেই সেই কুচক্রী দুষ্ট ইহুদী, খামারের মালিকসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। কিন্তু সে প্রচার করে তারা লুটেরা কর্তৃক নিহত হয়েছে এবং সে খামার দখল করে নেয়। সে দিরিয়া নামক যে স্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল সেই নাম অনুসারে এই স্থানেরও নাম আল-দিরিয়া রাখে। (কিছু সত্য গোপন করে কোন কোন ইতিহাসে লেখা আছে- ৮৭৩ হিজরী (কাছাকাছি) অর্থাৎ ১৪৪৬ সালের দিকে ইহুদী মোরদাখাইয়ের ম্রুদা গোত্র দিরিয়া নামক স্থানে বসবাস করতে থাকে। আসলে মোরদাখাই পরিবারই ম্রুদা গোত্র নামে পরিচিত। ইহুদী মোরদাখাই সেখানে তার আত্মীয় ইবনে দির কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে আল-রিয়াদে বসবাস শুরু করে বলেও কথিত আছে। ইবনে দির ছিল সেখানকার শাসক এবং বহু ক্ষেত-খামারের অধিকারী। বলা হয়, ইবনে দির তাকে আল মুলাইবিদ এবং গুশাইবা নামে দুটি খামার দান করে; যা সে পরবর্তিতে আল-দিরিয়া নামে নামকরণ করে।)
বর্তমান সউদী রাজপরিবারের পূর্বপুরুষ সেই ইহুদী মোরদাখাই সেখানে “মাদাফ্ফা” নামে একটি অতিথিশালা খুলে এবং তার চারপার্শ্বে কিছু মুনাফিক জড়ো করে। সেই মুনাফিকরা প্রচার করতো এই ইহুদী হচ্ছে একজন বড় আরব বণিক। সেখান থেকে সে তার মূল শত্রু হযরত শায়খ সালেহ সালমান আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং আল-যালাফি নামক শহরের একটি মসজিদে উনাকে শহীদ করে। হযরত আব্দুল্লাহ আল তামিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শাহাদাতের পর মোরদাখাই নিজেকে যথেষ্ট মুক্ত ও নিরাপদ মনে করে সেই দিরিয়া গ্রামে বসবাস করতে থাকে। ইহুদী মোরদাখাই সেখানে অনেক বিয়ে করে এবং তার সকল সন্তানের সে আরবীয় নাম রাখে। তার বংশধররা সেখানে সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরবর্তিতে সউদী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত হতে থাকে। তার বংশধররাও আরবজাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে থাকে। তারা অনেক কৃষিক্ষেত্র অবৈধভাবে দখল করে নেয় এবং যারাই তাদের দুষ্ট পরিকল্পনার বিরোধিতা করতো তাদের তারা হত্যা করতো। তারা তাদের সাফল্যে পৌঁছবার লক্ষ্যে গোপনে বিভিন্ন প্রকার দুরভিসন্ধি প্রয়োগ করেছিল। যারা এই ইহুদী পরিবারের সঠিক ইতিহাস বলতে বা লিপিবদ্ধ করতে চেয়েছিলো তাদেরকেই ঘুষ প্রদান করা হয়েছিল। বিশেষত সেই এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নারী ও অর্থের মাধ্যমে প্রলোভিত করে দমিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাদের কলঙ্কিত ইতিহাস মুছে ফেলে তাদের বংশানুক্রম বিখ্যাত আরব গোত্র রাবিয়া, আনজা এবং আল-মাসালিকের সাথে সম্পৃক্ত প্রমাণ করে তাদের ইতিহাসকে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছিল।
(সউদি পরিবারের পূর্বপুরুষ যে ম্রুদা গোত্রের এ ব্যাপারে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। প্রচলিত আছে যে, তারা প্রাচীন রাবিয়া গোত্রের বিশেষত ‘ওয়াইল’-এর শাখা। কিন্তু যে বিষয়ে সব ইতিহাসে বিতর্ক আছে তা হচ্ছে সউদীরা ওয়াইলের কোন শাখার? বহু ঐতিহাসিক এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নজদের অধিবাসীরা বনু হানিফা গোত্রের যারা নজদ ও রিয়াদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
অনেকে জোর দিয়ে বলতে চায় তারা হচ্ছে আনজা নামক বড় বেদুইন গোত্রের। নজদে বসবাসরত অন্যান্য আনজা গোত্রের পরিবারের মত তথাকথিত ম্রুদা গোত্রের কোন লিখিত বা মৌখিক তথ্যও নেই যে ম্রুদা আনজা গোত্র থেকে মাইগ্রেশন করে নজদে আসে।)
বর্তমান সময়ের একজন চরম পর্যায়ের মুনাফিক হচ্ছে আমিন আল তামিমি, যে সউদী আরবের জাতীয় লাইব্রেরীর ডাইরেক্টর। সে সউদী আরবের এই ইহুদী শাসকগোষ্ঠীর বংশ তালিকা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সাথে সম্পৃক্ত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তার এই মিথ্যা জালিয়াতি কর্মের জন্য ১৯৪৩ সালে মিশরে নিযুক্ত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহীম আল-ফাদেলের কাছ থেকে আমিন আল তামিমি ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) হাজার মিশরীয় পাউন্ডে পুরস্কৃত হয়।
সউদী রাজ পরিবারের পূর্বপুরুষ ইহুদী মোরদাখাই বহু আরবী মহিলাকে বিয়ে করে এবং তাদের ঘরে বহু সন্তানের জন্ম হয়। সেই একই ধারাবাহিকতা বর্তমান সউদী রাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও প্রচলিত আছে। (সউদী আরবের বাদশাহ আব্দুল আজিজের চুয়াল্লিশ জন ছেলে এবং অগণিত কন্যা সন্তান। বাদশাহ সউদের ছিল বায়ান্ন জন পুত্র এবং চুয়ান্ন জন কন্যা) ইহুদী মোরদাখাই-এর এক পুত্রের নাম ছিল আল-মারাক্বান কারো মতে আল মুক্বরিন। মূলত তার নাম আরবীকরণ করা হয়েছিল ইহুদী নাম মেকরেন থেকে। সেই মেক-রেন বা আল মারাক্বান বা আল মুক্বরিন এর এক পুত্র ছিল মুহম্মদ (মুহম্মদ বিন মুক্বরিন) এবং তার এক পুত্রের নাম ছিল সউদ (সউদ বিন মুহম্মদ)। সেই সউদ থেকে হয়েছে সউদী রাজবংশের নাম। সউদের বংশধরগণ বিশেষত সউদের পুত্র মুহম্মদ বিন সউদ আরবের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা প্রচার করতো যে, সকল আরব ধর্মীয় নেতারা মুরতাদ হয়ে গেছে এবং তারা ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে সরে গেছে। বিভিন্ন গোত্রের নেতারা ধর্মের নামে শিরকে মশগুল- এই অজুহাতে অনেক মুসলমানকে শহীদ করা হয়।
সউদী রাজ পরিবারের নিজস্ব ইতিহাসবিদ দিয়ে রচিত The history book of Saudi familyi৯৮ থেকে ১০১ পৃষ্ঠার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে, সউদী বংশের সবাই নজদের সকল অধিবাসীদের মুরতাদ, কাফির মনে করতো। ফলে তাদের হত্যা করা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তাদের মহিলাদের দাসীতে পরিণত করাকে জরুরী বলে মনে করতো। মূলত সে সময় নজদের প্রধান মুহম্মদ বিন সউদ ছিল ওহাবী আক্বীদা দ্বারা বিভ্রান্ত।
ওহাবী মতবাদের প্রচার ঘটে আব্দুল ওহাব নজদীর মাধ্যমে যে ছিল বনু তামিম গোত্রের (যদিও তার পূর্বপুরুষ ইহুদী ছিল) তার জন্ম হয় উয়াইনিয়া গ্রামে, নজদের হুরাইমিলা শহরের পার্শ্বে, ১১১১ হিজরী অর্থাৎ ১৬৯৯ সালে। তার মৃত্যু হয় ১২০৬ হিজরী মোতাবেক ১৭৯২ সালে। প্রথমে সে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ইরাকের বসরায় যায়। পরে ইরান, ভারত, দামেস্কেও ভ্রমণ করে। সেখানে সে “নজদের শায়খ” নামে নিজেকে পরিচয় দিত। সে ছিল অত্যন্ত চতুর। ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে অনেক কিছু শেখে এবং একজন নেতা হবার স্বপ্ন পোষণ করে। ১১২৫ হিজরী অর্থাৎ ১৭১৩ সালে তার সাথে পরিচয় হয় ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপারের।
গুপ্তচর হ্যামপার এই ওহাবী নজদীর নেতা হবার অভিলাষ বুঝতে পেরে তার সাথে দীর্ঘ সময়ের জন্য সখ্যতা গড়ে তোলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের শেখা অনেক পদ্ধতি এবং মিথ্যা তার উপর সে প্রয়োগ করে। হ্যামপার ওহাবী নজদীর মধ্যে সব সময় ইসলাম ধর্মের নতুন অপব্যাখ্যা শুনতে পেত এবং তার মধ্যে ভিন্ন চিন্তার এক শায়খ হবার সম্ভাবনা দেখতে পেত। আব্দুল ওহাব নজদে ফিরে এসে গ্রামের লোকদের জন্য ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিন্ন চিন্তার বিভিন্ন লেখা লিখতে থাকে। সে মু’তাযিলা সম্প্রদায় এবং ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাছ থেকে যা শিখেছিল তার উপর সে লিখতে ও বলতে থাকে। গ্রামের লোকজন এবং তাদের প্রধান ইহুদী মোরদাখাই-এর বংশধর মুহম্মদ বিন সউদ তাকে অনুসরণ করতে থাকে। আরবদের কাছে বংশ পরিচয় ছিল অনেক বড় কিন' যেহেতু সে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য গোত্রের ছিল না তাই সে মুহম্মদ বিন সউদকে তার মত প্রচারে ব্যবহার করতে শুরু করে। যার নাম দেয় সে ওহাবী মতবাদ। সে নিজেকে কাজী এবং মুহম্মদ বিন সউদকে বাদশাহ হিসেবে পরিচয় দিত। তারা দু’জন পরবর্তিতে চুক্তিতে আসে যে তাদের সন্তানরা তাদের পরে ক্ষমতায় আসবে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইবনে আব্দুল ওহাবের কন্যাকে বিন সউদের পুত্রের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। ১১৫০ হিজরীতে অর্থাৎ ১৭৩৭ সালে আব্দুল ওহাব নজদীর ওহাবী মতবাদ একটা রাজনৈতিক রূপ লাভ করে সমগ্র আরবে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ধারাবাহিকতায় সউদী বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন মুহম্মদও ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং সে প্রথম ১৭৯১ সালে মক্কা শরীফ-এর আমীর হযরত শরীফ গালিব ইফেন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পূর্ব থেকেই গোপনে তারা ওহাবী মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছিল। তারা অনেক মুসলমানকে নিপীড়ন করে এবং শেষে হত্যা করে। অনেক মহিলা ও শিশুদের বন্দি করে এবং তাদের সম্পদ দখল করে। যারা আব্দুল ওহাব নজদীর (যার পূর্বপুরুষও ছিল ইহুদী এবং তুরস্কের অধিবাসী) আক্বীদার সাথে মিল না রাখতো তাদেরকে তারা মুসলমান বলতো না। এই ওহাবী নজদীর ভুল ফতওয়ার কারণে সউদী রাজ পরিবারের সন্ত্রাসী লোকজন সুন্নী অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করে ফেলে। শিশুসহ বহু মানুষ হত্যা করে, মহিলাদের উপর নিপীড়ন চালায় এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের উদর চিড়ে ফেলে, শিশুদের হাত পা কেটে ফেলে আগুনে নিক্ষেপ করতো। শুধু ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী না হওয়াতে মুসলমানদের মুরতাদ আখ্যায়িত করে তাদের সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করতো।
মূলতঃ মিথ্যা ধর্মীয় অনুশাসনের নামে এই ওহাবী আক্বীদা সম্পন্ন ইহুদীরা বিভিন্ন প্রকার নৃশংসতা চালায়। আর এই অনুশাসনের প্রবর্তক ছিল ইহুদী মোরদাখাই, যে সন্ত্রাসের বীজ বপন করেছিল তার সময় থেকে। এই ইহুদী পরিবার ১১৬৩ হিজরী সাল থেকে সউদী আরবসহ মুসলিম দেশসমূহে নৃশংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তারা গোটা আরব ভূ-খণ্ডের নাম তাদের পরিবারের নাম অনুসারে রাখে “সউদী আরব”। ভাবখানা এমন যে গোটা আরব তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি আর সেখানকার সকল অধিবাসী তাদের গোলাম বা ক্রীতদাস, যারা সকাল সন্ধ্যা শুধু তার প্রভুর আরাম আয়েশের জন্যই খেটে যাচ্ছে।
এই সউদী রাজ পরিবার দেশের সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের সম্পত্তি বলে বিবেচনা করে। যদি কোন সাধারণ নাগরিক তাদের এই ইহুদী শাসক গোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচার এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তবে জনগণের সম্মুখে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।
এই ইহুদী রাজ পরিবারের এক রাজকুমারী আমেরিকার ফ্লোরিডার এক বিলাস বহুল হোটেলের ৯০টি সোয়ীট (Suite) এক রাত্রির জন্য ১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ভাড়া করে। কেউ কি তার অপচয়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবে? যদি করে তবে তার পরিণতি হবে জনসম্মুখে তরবারীর আঘাতে শিরোচ্ছেদ।
১৯৬০ সালে “সোয়াত আল আরব” মিশরের কায়রোর ব্রডকাস্টিং স্টেশন এবং ইয়েমেনের সানার ব্রডকাস্টিং স্টেশন এই সউদী রাজ পরিবারের ইহুদী পূর্বপুরুষের ব্যাপারে সত্যতা স্বীকার করে।
১৯৬৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন পোস্টে বাদশাহ ফায়সাল আল সউদ এই চরম সত্যটি অস্বীকার করতে পারেনি। সে বলেছিল, “আমরা সউদী রাজ পরিবার ইহুদীদের ভাই। আমরা যে কোন মুসলমান এবং যে কোন আরবীর সাথে দ্বিমত পোষণ করি, যারা ইহুদীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। বরং তাদের সাথে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আরব হচ্ছে সেই উৎসভূমি যেখান থেকে ইহুদীরা বিস্তার লাভ করেছিল; পরে তার বংশধররা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।”
ওহাবী বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন সউদের ইখওয়ান বাহিনী তৈরির ধারণা থেকেই সিআইএ তালেবান বাহিনী তৈরির ধারণা পায়
১৯১৩ সালে কুয়েত এবং বুরাইদার মধ্যভাগে আতাউইয়া নামক মরুদ্যানে বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিন সউদ প্রথম ইখওয়ান জনপদ প্রতিষ্ঠা করে। রাজ্য শাসনে ইবনে সউদকে ওহাবী উলামাদের সমর্থনের প্রয়োজন ছিলো। সে ইখওয়ান জনপদ তৈরি করে সেখানে ওহাবী উলামাদের দ্বারা কট্টর ওহাবী মতবাদ প্রচার-প্রসার করতে থাকে। এভাবে আতাউইয়া রিয়াদের মতো একটি বিশাল জনপদে পরিণত হয়। এ থেকে ইবনে সউদ যে কোনো সময় যে কোনো সংখ্যক সৈন্য সংগ্রহ করতো। ফলে ইখওয়ান তার ক্ষমতার উৎস বা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলো।
এদিকে ব্রিটিশ সরকার আব্দুল আজিজকে মাসিক ৫ হাজার পাউন্ড করে দিতো। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ইবনে সউদকে এবং তখন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার গভর্নর শরীফ হুসাইনকে ভাতা বন্ধ করে দেয় ১৯২৩ সালে। আব্দুল আজিজ আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য সে হিজাজ আক্রমণ করে। হিজাজ অভিযান করে হাজীদের নিকট থেকে হজ্জ কর আদায় করার চেষ্টা করে। আব্দুল আজিজ বিন সউদ জানতো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ধর্মীয় কেন্দ্র পবিত্র মক্কা শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ-এ আধিপত্য বিস্তার না করলে মুসলিম বিশ্বে ইবনে সউদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না। ফলে হিজাজ দখল ছিলো তার জন্য জরুরী।
১৯২৪ সালে পবিত্র মক্কা শরীফ ইবনে সউদের দখলে আসে। ইবনে সউদ স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র সর্বত্র চালু করে। সে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মুসলিম বিশ্বের সাথে সখ্যতা রক্ষার জন্য গোল আলু নীতি, অনুসরণ শুরু করে। তাকে এমন কিছু করতে হয় যা কট্টরপন্থী ওহাবীদের ক্ষুদ্ধ করে। ইখওয়ানদের ব্যবহার করে তার রাজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে, সে বাদশাহও হয়েছে এখন আর ইখওয়ানদের প্রয়োজন নেই, ফলে ইখওয়ান ভ্রাতৃসংঘ বিলুপ্ত করতে থাকে। সে ইখওয়ানদের হিজাজ থেকে নিজ গোত্রে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়। ফলে ইখওয়ানদের মধ্যে হতাশা, নিরাশা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেয়।
একইভাবে, একই পথ অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র-আফগানিস্তান থেকে রুশ সৈন্য হঠাবার জন্য তালেবান তৈরি করে এবং তাদের মাধ্যমে আফগানিস্তান রুশ দখল মুক্ত করে। আবার আফগানিস্তানে সরাসরি নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সেই তালেবানদের উপর নির্বিচারে গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। আর এই পরিকল্পনার মূল শরীক দেশ হচ্ছে আব্দুল আজিজ বিন সউদের বংশধরদের দ্বারা চালিত ‘সউদী আরব’।
এবার দেখি হাদীছ শরীফ উনার মাঝে নজদীদের সম্পর্কে কি বলা হয়েছে
কা’বা শরীফের পূর্ব দিকের একটি মরুময় ঘৃণিত অঞ্চলকে নজদ বলে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসীরা আল্লাহ পাক-এর গযবপ্রাপ্ত এবং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অভিশপ্ত। মক্কা বিজয়ের পর হযরত নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদকে আরবের অন্যান্য দেশ হতে পৃথক করে ঘৃণিত অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি খানায়ে কা’বার সঙ্গে সম্পর্ক করে বলেন, রোকনে ইয়ামনী, রোকনে শামী ও রোকনে ইরাকী। কিন্তু এখানে রোকনে নজদী বলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা শরীফের দিক চিহ্নিত করেননি। কারণ নজদীরা প্রকৃত কা’বা শরীফ পন্থী ছিল না।
আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম –এর ইসলাম প্রচার কালে কা’বা শরীফের চতুর্দিকে কাফিররা ইসলামী আদর্শে মুগ্ধ হয়ে দ্বীন ইসলামে দীক্ষিত হন। আর মক্কা শরীফ হতে দূর দূরান্তে অবস্থারত অধিবাসীরা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র মুবারক ও আদর্শ মুবারকে মুগ্ধ হয়ে কালাম পাক-এর মহাবানীতে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তারা ওফদ নাম ধারন করত মক্কা শরীফ অভিমুখে রওয়ানা হন।
সে সময় তাঁদের কারো কারো মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল “ইয়া নবী আল্লাহ” আর কারো মুখে উচ্চারিত হতো আযানের বাক্যবলীর আল্লাহু আকবার। তাঁরা দূরদূরান্ত হতে কা’বা শরীফ-এর আঙ্গিনাতে ঊপস্থিত হয়ে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহন করত দ্বীন ইসলাম গ্রহন করে ধন্য হয়েছেন। এমনকি “নসীবাইনের” জ্বিন জাতি পর্যন্ত রসূলে পাক হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকে বাইয়াত গ্রহন করেন। কিন্তু কম বখত কোন নজদী হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহন করেনি। বরং নজদীরা ঈমান লাভের পরিবর্তে ঈমানদারগণকে নির্মমভাবে শহীদ করতো। এ কথার জ্বলন্ত প্রমাণ নজদের বীরে মাঊনাতে ৭০ জন ঈমানদার মুবাল্লিগ হাফিযে কুরআন ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমকে শহীদ করা ও “রজি” এর ঘটনাতে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শুলে ঝুলিয়ে শহীদ করা। এ দুটি ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা বুখারী শরীফের মধ্যে বর্ণিত আছে।
প্রকত পক্ষে নজদীরা ছিল জন্মগত নাফরমান নাস্তিক ও কাফির। নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদ ও নজদীদের সম্পর্কে কি কি অভিমত পোষণ করেন সে ব্যাপারে ছহীহ সনদ সূত্রে কয়েকটি হাদীছ শরীফ নিম্নে বর্ণিত হলো-
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মূল কাফির বা প্রধান কাফির পূর্ব দিকে।সেখান থেকেই শয়তানের শিং বের হবে। অর্থাৎ মক্কা শরীফ-এর পূর্ব দিকে আরব ভূখন্ডের অন্তভূর্ক্তূ ঘৃণিত প্রদেশ নজদ অবস্থিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বর্ণনা অনুযায়ী সেখানেই কাফিরদের মূল ঘাটি অবস্থিত। অথবা ঐ এলাকাতে যারা বসাবস করেছে তারাই প্রকৃত কাফির। কারণ, সেখানকারই তথাকথিত শেখ নজদী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ঘুমন্ত অবস্থায় শহীদ করার জন্য আবু জাহিলকে কুপরামর্শ দিয়েছিল। তাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যখনই পূর্বমূখী হতেন, তখনই তিনি পূর্ব দিককে অভিশপ্ত আখ্যায়িত করে বদ দুয়া করতেন।
আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম- এ হাদীছ শরীফটির দ্বিতীয় অংশে বলেন, এই নজদ হতে শয়তানের ধারাল শিং এর আবির্ভাব হবে। দ্বিতীয় বাক্যটির মধ্যে করনুশ শয়তান বা শয়তানের প্রথম শিং মিথ্যা নুবুওওয়াতের দাবীদার মুসায়লামাতুল কাজ্জাবকে এবং দ্বিতীয় শিং দ্বারা ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে বুঝানো হয়েছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বানীটি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব রূপ ধারণ করেছে। প্রথম শিংকে দমন করা হয় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফত কালে। আধুনিক কালের শয়তানের শিং অর্থাৎ ১৮০১ ইং ওহাবীরা সাউদ বিন আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে কারবালার পবিত্র ভূমি হতে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পবিত্র মাযার শরীফ ভেঙ্গে দেয়। ১৮০৩ ঈসায়ী সালে মক্কা শরীফ আক্রমণ করে কাবা শরীফ-এর গিলাফ ছিড়ে ফেলে।আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, আওলিয়ায়ে কিরাম ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মাযার শরীফসমূহ ভেঙ্গে ফেলে। ১৮০৪ ঈসায়ী সালে মদীনা শরীফ আক্রমণ করে। এই পবিত্র স্থানটি ১৮১৩ ঈসায়ী সাল পর্যন্ত ওহাবীদের দখলে ছিল। তাদের অধীনে থাকা অবস্থায় তারা জান্নাতুল বাক্বীর সকল মাযার শরীফসমূহ ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। এমনকি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওযা শরীফ-এর উপরও ঘৃণিত কালো থাবা বিস্তার করেছিল। ওহাবীরা যে কুফরী কর্মে লিপ্ত হয়েছিল তা পবিত্র কুরআন শরীফে ঘোষিত কাফিরগণও এরূপ অপকর্মে লিপ্ত হয়নি।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে বলেন, একদা আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বমূখী হয়ে অর্থাৎ নজদের দিকে ফিরে বলেন, এ দিক হতে ফিৎনা ফ্যাসাদ আবির্ভূত হবে।
(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
হাদীছ শরীফে পূর্ব দিকের কথা উল্লেখ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নজদকেই বুঝিয়েছেন।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মূল কুফর পূর্ব দিকে এবং গর্ব ও অহংকার রাখালদের মধ্যে। অন্য আর এক বর্ণনাতে রয়েছে যে, কঠিন অন্তর ও জুলুম অত্যাচার পূর্ব দিকের লোকদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবে। আর ‘ঈমান’হিজাজ এর বাসিন্দাদের মধ্যে থাকবে।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফদ্বয়ের দ্বারা নজদ ও নজদীদের প্রকৃত স্বরূপ বুঝানো হয়েছে। কারণ গর্ব ও অহংকার এবং জুলুম ও অত্যাচার তাদের দ্বারা যেমন প্রকাশ পেয়েছে এরূপ আর কোন এলাকার লোকদের দ্বারা তা প্রকাশিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইরশাদ করেন, পূর্ব দিক হতে (অর্থাৎ নজদ দেশ হতে) একদল লোক বের হবে, তারা ঠিকই কুরআন শরীফ পাঠ করবে, কিন্তু কুরআন শরীফ-এর মর্মার্থ তাদের কণ্ঠনালীর নিচে নামবে না। অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এর অর্থ বুঝবে না। তারা ইসলাম ধর্ম হতে এমনিভাবে দূরে সরে পড়বে যেমন তীর ধনুক হতে ছুড়লে আবার ফিরে আসে না। এসব লোকের সাধারণ লক্ষণ হল তাদের মাথা মুড়ানো থাকবে।ঠিক এই লক্ষণটি পরিলক্ষিত হয়েছে নজদবাসী ইবনে ওহাব নজদী ও তার অনুসারীদের মাঝে।
স্মর্তব্য, আমাদের এদেশেও তথাকথিত একদল মুবাল্লিগ জনসাধারণের মধ্যে খ্যাতি অর্জনের জন্য মাথা মুড়ায়ে ফেলে। তারা দাবী করে যে, তারাই প্রকৃত ইসলামের অনুসারী। প্রকৃত পক্ষে তারা হল ইসলামের চরম শত্রু। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরম শত্রু। তাই তাদের থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের একান্ত কর্তব্য।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
"একদা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবের শাম, ইয়ামন ইত্যাদি দেশের জন্য দুয়া করার পর মদীনা শরীফ-এর মাপ তোলার যন্ত্রাদির জন্য দুয়ায় বরকত করেন। অতঃপর তিনি পূর্ব মুখী হয়ে নজদের ব্যাপারে বলেন এ দিক হতে শয়তানের শিং উদয় হবে”
(বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ শরীয়ত গর্হিত কার্য-কলাপ এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদকারী ফেৎনা ফাসাদ সৃষ্টি ও ভূমিকম্প শুরু হবে।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা নজদের অধিবাসী ইবনে ওহাব নজদীর ওহাবী মতবাদের কথাই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ তারা সংস্কারের নামে ইসলামের মুলোৎপাটনের চেষ্টা করছে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাম ও ইয়ামনের বরকতের জন্য দুয়া করলে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্য থেকে কেউ কেউ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের নজদ সম্পর্কে দুয়া করুন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবারো শাম ও ইয়ামনের জন্য দুয়া করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা মতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৃতীয়বারে বললেন, ঐ নজদ হতেই ভূ-কম্পন এবং বিভিন্ন ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি হবে। এবং তথা হতেই শয়তানের শিং প্রকাশ পাবে।"
(বুখারী শরীফ)
(অর্থাৎ সর্বপ্রকার শয়তানী অভিমত প্রকাশ পাবে। যা ইবনে ওহাব নজদী কর্তৃক প্রকাশ লাভ করেছে)।
ফতওয়ায়ে শামীতে ওহাবী আন্দোলনের সঠিক দিক দর্শনঃ
ইসলামের সুপ্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব শামী কিতাবের লিখক আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুহম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর আক্বীদা-বিশ্বাস সম্বন্ধে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, সমস্ত ওহাবীদের আক্বীদা-বিশ্বাস খারিজী আক্বীদা বিশ্বাসের অবিকল অনুরূপ ছিল। অর্থাৎ তারা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মধ্যে সিফ্ফীনের যুদ্ধ চলাকালে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মতাদর্শের একেবারে বিরোধী হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত খারিজী ফিরক্বা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুআাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উভয়কেই কাফির বলে অভিহিত করেছে। নাঊযুবিল্লাহ। যেমন আজকাল মুহম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর ওহাবী ফিরক্বা দুনিয়ার সকল মানুষকে কাফির নামে আখ্যায়িত করতেছে। এরা আরব ভূখণ্ডের নজদ হতে আত্মপ্রকাশ করে। (প্রথম তারা ১৮০১ ইংরেজি সনে কারবালা ও মক্কা শরীফ আক্রমণ করে এবং কা’বা শরীফ-এর গিলাফ ছিঁড়ে ফেলে। অতঃপর ১৮০৪ ঈসায়ী সনে মদীনা শরীফ আক্রমণ করে সেখানকার মাযার শরীফগুলো ধ্বংস করে ফেলে)
ফতওয়ায়ে শামীর ভাষ্যমতে ওহাবী ফিরক্বার আক্বীদা ও বিশ্বাসঃ
বর্তমান যামানায় আবির্ভূত ওহাবী ফিরক্বা যারা নজদ প্রদেশ থেকে আত্মপ্রকাশ করে হারামাইন শরীফাইনে আধিপত্য বিস্তার করে। ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিল না। তথাপিও সে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য নিজেকে হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী বলতো। তার ভ্রান্ত আক্বীদার মধ্যে একটি আক্বীদা এই ছিল যে, তার বিশ্বাসীরাই শুধু মুসলমান, যারা তার বিরোধিতা করবে তারা কাফির ও মুশরিক। তার এই নীতিমালা অনুসারে সে উলামায়ে আহলে সুন্নতকে শহীদ করা জায়িয মনে করতো।
তাফসীরে ছাবীর মতে ওহাবী ফিরক্বাঃ
সুবিখ্যাত তাফসীরে ছাবীর গ্রন্থকার বলেন, “প্রত্যেকের অপকর্মই নিজের জন্য সুন্দর।” এ আয়াত শরীফটিতে খারিজী ফিরক্বার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই ফিরক্বার সাধারণ পরিচিতি হল এই যে, তারা কুরআন শরীফ-এর বিকৃত অর্থ করে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর মনগড়া ব্যাখ্যা করে। যা দ্বারা মু’মিন মুসলমানদের জান মাল নষ্ট করা বৈধ মনে করে। বর্তমানে যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়ে গেছে। তাদের পরিচিতি এই যে, তারা হিজাজ ভূমির একটি ফিরক্বা, যাদেরকে ওহাবী বলা হয়। ওহাবীরা নিজেদেরকে হক্ব মনে করে, প্রকৃতপক্ষে তারা বড় মিথ্যাবাদী। তাদের উপর শয়তান সওয়ার হয়েছে। তাই তারা আল্লাহ পাককে ভুলে গেছে। ওহাবীরা শয়তানের দল। হে মুমিনগণ! তোমরা শয়তানের দল হতে সতর্ক থেকো। তারা পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইবনে ওহাব নজদী বৃটিশের দালাল, বৃটিশ গুপ্তচর হ্যাম্পারের স্বীকারোক্তি
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খৃষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খৃষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খৃষ্টীয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর- হ্যাম্পার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। বৃটিশ গোয়েন্দা হ্যাম্পার তুরস্কের শায়খ ইফেন্দীর নিকট ছদ্ধবেশী মুসলমান সেজে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ চর্চা করে মুহম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের একান্ত বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। দ্বীন ইসলামের বিভিন্ন মৌলিক বিষয় নিয়ে তাদের (উভয়ের) মধ্যে যে আলাপ-আলোচনা হয়, তা হ্যাম্পার তার ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করে। বৃটিশ গোয়েন্দা হ্যাম্পারের উক্ত ডায়েরীটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় যখন জার্মানীর হস্তগত হয়, তখন জার্মান পত্রিকা ইসপিগল তা “Memoirs of Hempher, The British Spy to The Middle East” শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে। এতে বৃটিশদেরকে বিশ্ব সমাজের কাছে অত্যন্ত লজ্জিত হতে হয়। ডায়েরীটি ফরাসী পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়। জনৈক লেবাননী বুদ্ধিজীবী তা আরবীতে অনুবাদ করেন। তুরস্কের ওয়াকফ্ ইখলাছ প্রকাশনা হ্যাম্পারের স্বীকারোক্তি মূলক উক্ত ডায়েরীটি “Confession of British Spy and British enmity against Islam” নামে গ্রন্থাকারে ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করে।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১১
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: আমীন। মহান আল্লাহ পাক তাওফিক দান করুন। মুসলমানের লেবাসধারী এই ওহাবী সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হতে লিংকে দেওয়া বইটি পাঠ করুন
Click This Link ABritishSpy.pdf
২| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২২
ইউরো-বাংলা বলেছেন: বিশাল গল্প, কোথা থেকে সংগ্রহ করলেন ? তথ্যসূত্র লাগিয়ে দিলে ভালো হত।
ইতিহাস যাই হোক- রাজতন্ত্র ধ্বংস হোক।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৬
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: এই বইটি পড়ুন ভালোভাব
Click This Link ABritishSpy.pdf
৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫৩
টুনা বলেছেন: Shear korar jonno dhonnobad. Valo laga janea gelam. Valo thakben nirontor.
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৮
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৫
প্রবাসী১২ বলেছেন: রাজতন্ত্র খারাপ। তবে ভাল কোনটা? আমাদের মত গণতন্ত্র? যা লিখলেন সবই ইতিহাস। সত্যি মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজনও বোধ করছিনা। সকল ভ্রান্তি জাহান্নামে। ওহাবী বলে যা বুঝাতে চাইলেন, তাতে আপনার জাতের পরিচয় পাওয়া যায়। আপনি একজন মাজারী, কবর পুজারী। ভ্রান্তি আপনারটা আরো খারাপ।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দিকে আসুন। মুক্তি শুধু ওখানেই।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫২
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: হা হা আমি একজন মুসলিম যে খিলাফত আলা মিন হাজুন নুবুওয়্যাত এ বিশ্বাসী। আপনি যেই বিশ্ব মুনাফিক ইহুদী সউদীদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আমাকে গালিগালাজ করছেন, তারা তো আজকে সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে মুসলিম নিধনকারী এক নম্বর শত্রুহিসেবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে।
দেখুন এই ইহুদী বাদশাহদের মুসলিম বিরোধী তৎপরতা
মুসলমান দেশসমূহ ধ্বংসে মুনাফিক সউদী ওহাবী সরকারের কিছু অপকর্ম
১) ফিলিস্তিনে ইহুদীদের নির্বিঘœ প্রবেশ ঘটাতে ব্রিটেনের সাথে গোপনে চুক্তি করে সউদী ওহাবী সরকার। সেই গোপন চুক্তি অনুসারে মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি ইহুদীদের কাছে বিক্রি করে দেয় সউদী ওহাবী বিশ্বাসঘাতকরা।
২) ১৯৯০ সালে ইরাক হামলার সময় আমেরিকার সকল খরচ বহন করে সউদী ওহাবী সরকার।
৩) আমেরিকা সউদী ওহাবীদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সউদীরা সারা বিশ্বে অর্থ সরবরাহ করে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করে আর আমেরিকা সেই কথিত সন্ত্রাস দমনের নামে আগ্রাসন চালায়।
৪) ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার মূল উছিলা ভ- লাদেন, সেই লাদেন পারিবারিক ভাবে সউদী ওহাবী পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ।
৫) ২০০৩ সালে ইরাক হামলার সময় সউদী ওহাবী সরকারের অনুমতিতে সউদী ঘাঁটি ব্যবহার করে আমেরিকা।
৬) ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন হামলা চলছে, এখানেও সেই আমেরিকাকে ডেকে নিয়ে আসছে সউদী ওহাবী সরকার।
৭) মিশরে মুরসির পতনে সেনাবাহিনীকে অর্থ দেয় সউদী ওহাবী সরকার।
৮) সিরিয়ার বিদ্রোহীদের রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ করে খোদ সউদী ওহাবী সরকার।
৯) রাসায়নিক অস্ত্রকে অজুহাত বানিয়ে আমেরিকাসহ সকল পশ্চিমা সন্ত্রাসীদের ডেকে নিয়ে আসে সউদী ওহাবী সরকার।
১০) সিরিয়ায় পশ্চিমা আগ্রাসনের সকল খরচ দিতে রাজি হয় সউদী ওহাবী সরকার।
এরপরও কি মুসলমান উনারা সউদী ওহাবী সরকারকে বিশ্বাস করবে?
কোন মুসলমান মুসলমানকে কখনো শহীদ করতে পারে কি পারে না। যে শুধু মাত্র অরিজিনাল ইহুদী তার পক্ষেই সম্ভব মুসলমান নারী শিশুদের হত্যা করার জন্য রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ করা।
দেখুন সউদী রাজ পরিবার কি ভাবে বেছে শুধু মুসলমানদের শহীদ করছে
সউদী প্রিন্স রাসায়নিক অস্ত্র দিয়েছে ইসরাইলকে
সউদী গোয়েন্দামন্ত্রী প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান নিজেই ইহুদী ইসরাইলের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র পাঠিয়েছে এবং সেই অস্ত্র তেলআবিব সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। দেখা যাচ্ছে আসাদ নয় বরং মোসাদ এই অপকর্মের নায়ক। ভয়েস অব রাশিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিবিয়ার সেনা কর্মকর্তা আরো জানায়, প্রিন্স বান্দার নিজে সউদী রাজা হতে চায়। কিন্তু তার মা সউদী রাজবংশের না হওয়ায় (রাজতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী দাসী বা রক্ষিতার সন্তান রাজা হবার যোগ্যতা রাখে না) সে সউদী রাজা হওয়ার যোগ্য নয়। সাক্ষাৎকারে লিবীয় সেনা কর্মকর্তা আরো জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার দিন দিন বেড়ে চলা প্রভাব খর্ব করতেই সিরিয়ার উপর হামলা চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আমেরিকা। সিরিয়ার উপর থেকে রাশিয়ার সমর্থন তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে বান্দার বিন সুলতান চলতি মাসের প্রথম দিকে মস্কো সফর করে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিনিময়ে ১৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনার প্রলোভন দেখায়। এছাড়াও বিশ্ববাজারে তেলের বিষয়ে বিশেষ সুবিধা দেয়ারও প্রস্তাব দেয়। তবে পুতিন এসব প্রস্তাব প্রতাখ্যান করে।
সউদী গোয়েন্দামন্ত্রী প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান নিজেই ইহুদী ইসরাইলের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র পাঠিয়েছে এবং সেই অস্ত্র তেলআবিব সিরিয়ার বিদ্রোহীদের কাছে হস্তান্তর করেছে। দেখা যাচ্ছে আসাদ নয় বরং মোসাদ এই অপকর্মের নায়ক। ভয়েস অব রাশিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লিবিয়ার সেনা কর্মকর্তা আরো জানায়, প্রিন্স বান্দার নিজে সউদী রাজা হতে চায়। কিন্তু তার মা সউদী রাজবংশের না হওয়ায় (রাজতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী দাসী বা রক্ষিতার সন্তান রাজা হবার যোগ্যতা রাখে না) সে সউদী রাজা হওয়ার যোগ্য নয়। সাক্ষাৎকারে লিবীয় সেনা কর্মকর্তা আরো জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার দিন দিন বেড়ে চলা প্রভাব খর্ব করতেই সিরিয়ার উপর হামলা চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আমেরিকা। সিরিয়ার উপর থেকে রাশিয়ার সমর্থন তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে বান্দার বিন সুলতান চলতি মাসের প্রথম দিকে মস্কো সফর করে এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন প্রত্যাহারের বিনিময়ে ১৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কেনার প্রলোভন দেখায়। এছাড়াও বিশ্ববাজারে তেলের বিষয়ে বিশেষ সুবিধা দেয়ারও প্রস্তাব দেয়। তবে পুতিন এসব প্রস্তাব প্রতাখ্যান করে।
শুধুমাত্র তাই নয় এই ইহুদীদের বশংবদ সউদী ওহাবীরা ফেরাউনী শাসন কায়িমের স্বপ্নে বিভোর হয়ে মুসলিম দেশগুলো দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে
সিরিয়া, মিশর, লেবাননসহ মুসলিম দেশগুলোতে হামলা চালানোর জন্য, মুসলমান নিধন করার জন্য মরিয়া সউদী ওহাবী রাজপরিবার। সিরিয়া ইস্যু গরম রেখে এদিকে মিশরে গোপনে চালাচ্ছে মুসলিম গণহত্যা। যা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত না হলেও মিশরের নির্যাতিতরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে। আর এসব গণহত্যার পেছনে অর্থ যোগান দিচ্ছে সউদী ওহাবীরা; তাও প্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এদিকে সিরিয়ায় শুধুমাত্র রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস নয়, বরং গোটা সিরিয়ার উপর হামলা চালানোর জন্য পশ্চিমা হানাদার সম্প্রদায়কে চাপ দিচ্ছে মুসলমানদের রক্ত খেকো ইহুদী বংশধর সউদী রাজপরিবার। ‘অতশত বুঝি না, সিরিয়ায় হামলা চালান’- সম্প্রতি সউদী যুবরাজ সালমান বিন আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে সে আমেরিকাকে উদ্দেশ্য করে এমন আহ্বান জানিয়েছে। সউদী ওহাবীদের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ এ সংবাদ প্রকাশ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা আসছে সারা বিশ্বের সাধারণ মুসলমানদের থেকে। মুসলিম বিশ্বের মোড়ল সেজে সউদী ওহাবী শাসকরা ওইসব মুসলিমবিদ্বেষীদের গোলাম হয়েছে, যাদের ব্যাপারে খোদ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মুসলমানদের হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘মুসলমানদের প্রধান শত্রু হচ্ছে ইহুদী।’ আর এই ইহুদীদের সাথেই সউদী ওহাবী শাসকরা হাত মিলিয়েছে, অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের গণহত্যা করার জন্য। নাউযুবিল্লাহ।
এই বিশ্ব মুনাফিক সউদী ওহাবীরা মুসলিম দেশগুলো দখল করে সেখানে ফেরাউনী শাসন কায়িম করার রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সউদী ওহাবী রাজপরিবার ক্ষমতার নেশায় এতোটা বুঁদ হয়ে আছে যে, ফেরাউনের পরিণতির কথা বেমালুম ভুলে গেছে। ইহুদী-খ্রিস্টানদের তারা এতোটা বিশ্বাস করছে যে, এরা যে সউদী ওহাবীদের সাথে সাদ্দাম, গাদ্দাফিদের মতোও আচরণ করতে পারে, এটা তাদের ধারণার বাইরে।
দেখুন তার প্রমান
সিরিয়ার ওপর হামলা চালান: সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সিরিয়ার ওপর সামরিক আগ্রাসনের আহ্বান জানিয়ে সউদী আরব বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারে বিরুদ্ধে আমেরিকার সম্ভাব্য সেনা অভিযানে রিয়াদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল-ফয়সাল গত ইয়াওমুল আহাদি (রোববার) কায়েরোয় আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ আহ্বান জানায়।
সৌদ আল ফয়সাল বলেছে, “যে কোনো আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করা হলে তাতে আসাদ সরকার গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারসহ আরো নানা অপরাধী কর্মকা- চালাতে উৎসাহিত হবে।” সে আরো বলেছে, “এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার এটিই উপযুক্ত সময়।”
এর আগে বাশার আসাদ সরকার মার্কিন হামলার হুমকির জবাবে বলেছে, যে কোনো আগ্রাসন শক্তিমত্তার সঙ্গে প্রতিহত করা হবে। সেইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার দালালদেরও হুঁশিয়ার করে দিয়েছে দামেস্ক।
গত ২১ আগস্ট সিরিয়া সরকার রাজধানী দামেস্কের কাছে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিতি এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে বলে দাবি করে তাকফিরি বিদ্রোহী ও তাদের সমর্থক পশ্চিমা শক্তিগুলো। ওই ঘটনায় অন্তত ১,৪০০ মানুষের নিহত হওয়ার অভিযোগ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা করে, রাসায়নিক হামলার জবাবে সিরিয়ার ওপর হামলা চালাতে হবে।
এ হামলার একাধিক তারিখ ও সময় ঘোষণা করেও শেষ মুহূর্তে ওবামা তার অবস্থা থেকে সরে যায়। এখন সিরিয়ায় হামলার বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। কংগ্রেসে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে এবং ছুটি শেষে এর অধিবেশন বসবে ৯ সেপ্টেম্বর।
এদিকে সিরিয়ার বিদেশি মদদপুষ্ট বিদ্রোহীরা গত ইয়াওমুল আহাদি (রোববার) স্বীকার করেছে, দামেস্কের উপকণ্ঠে রাসায়নিক হামলার জন্য তারাই দায়ী। তাকফিরি বিদ্রোহীরা বলেছে, সউদী আরবের কাছ থেকে পাওয়া রাসায়নিক অস্ত্র ভুলভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে তাতে বিস্ফোরণ ঘটে যায়।
গত ইয়াওমুল আহাদি (রোববার) আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের জোট- কথিত সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের প্রধান আহমাদ আজ-জারবা বক্তব্য রাখে। সে সম্ভাব্য মার্কিন হামলায় সমর্থন দেয়ার জন্য আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।
অবশ্য সিরিয়ায় পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের ব্যাপারে আরব দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। মিশরসহ কয়েকটি দেশ সিরিয়ার ওপর সামরিক আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে।
সময় এসেছে এই ইসরাইলের পরম বন্ধু সউদী যুলুমশাহীর কবল থেকে মুসলমানদেরকে মুক্ত করার।
৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৩
ইনফা_অল বলেছেন: youtube এর লিংকটা দেখুন recited in Makkah by Sheik Sudais, Shuraim, এটা মক্কা হারাম শরীফ এ পঠিত। শুনে দেখুন ৩৪ আয়াত আছে কিনা?
http://www.youtube.com/watch?v=cb6MIcrRTzc
আল্লাহ সবাইকে সত্য জানার তোফিক দিন।
৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৯
ইনফা_অল বলেছেন: দুঃখিত লিঙ্কট নিচেঃ
http://www.youtube.com/watch?v=Evo946iPt10
http://www.youtube.com/watch?v=BFkKt8O-BzQ
৭| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৭
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: সামনে সউদী আরব বৃটিশদের সাথে যে দালালীর গোপন চুক্তি করেছিলো তার উপর পোষ্ট দেব, ইনশাআল্লাহ্।
৮| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৩৪
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: দেখুন গুনধর সউদী ইহুদীদের দেওয়া ফতওয়া অনুযায়ী তথাকথিত জিহাদুন নিকাহ বা যৌন জিহাদে অংশগ্রহনকারী মহিলাদের অবস্থা। থুতু মারা দরকার সউদী কুকুরগুলির মুখে
View this link
৯| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
প্রবাসী১২ বলেছেন: আমি কারো গুন-গান গাইনি। আমি বলেছি আপনি মাজারী, কবর পূজারী। আপনিও ভিষন ভ্রান্তিতে আছেন, যাদের গামন্দ করছেন আপনি তাদের সাথেই হাশরে উঠবেন।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২২
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: আমাকে অন্যায় ভাবে পূজারী অপবাদ দেওয়ার কারণে আপনার উপরেই এই তোহমত গিয়ে পড়েছে। কিতাবে রয়েছে ”মানুষ যখন দলীলে পারে না তখন সে গালি গালাজ করে।”
১০| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৮
ইনফা_অল বলেছেন: এই আষাঢ়ে গল্প কোথায় পান
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪২
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: ও আচ্ছা!!! আপনার গডফাদারদের কুকীর্তির ইতিহাস তুলে ধরলেই তা আষাঢ়ে গল্প হয়ে যায় না???
মানে বিচার মানি কিন্তু তাল গাছ আমার সিষ্টেম!!! পারলে খন্ডন করে করুন সউদী ইহুদীদের অপকর্মের ইতিহাস। প্রমান করুন যে তারা মুসলিম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত না।
১১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৫
ইনফা_অল বলেছেন: ওহাবী আন্দোলন খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর আরবের একটি সংস্কার আন্দোলন। এ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাব (১৭০৩-১৭৯২ খ্রি.) একজন ধর্মীয় আলেম এবং সংস্কারক ছিলেন। তিনি আমাদের এ ভারতীয় উপমহাদেশের বিপ্লবী আলেম মাওলানা শাহ ওলিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভীর সমসাময়িক ছিলেন। সে যুগে যে ব্যাপকভাবে পীরপূজা, গোরপূজা, ব্যক্তিপূজা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তুর্কী সুলতানরা ইসলামী আদর্শ থেকে দূরে সরে যেভাবে আয়েশী রাজা-বাদশাহর জীবন যাত্রা শুরু করেছিলেন, তিনি ছিলেন তার ঘোর সমালোচক। তিনি সর্বপ্রথম নজদ প্রদেশকে এবং পরে মক্কা-মদীনাসহ গোটা হেজাজ তথা আরব উপদ্বীপে তাঁর অনুসারীদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এভাবে তুর্কী সুলতানদের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন সুন্নী চারটি প্রধান মাযহাবের অন্যতম হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকে সুন্নীদের প্রতিপক্ষরূপে চলে আসছিল শিয়া পন্থীরা-যারা ইসলামের খিলাফতী ধারণার বিপক্ষে ‘ইমামতে’র ধারণায় বিশ্বাসী। বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মুসলমানদের মধ্যে ৫/৬ কোটি শিয়া ছাড়া অপর সকলেই সুন্নী। এমনকি যারা কোন নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসারী নন, হাদীসের অনুসারীরূপে নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে পরিচয় দেন, তাঁরাও এ অর্থে সুন্নী। তাঁরাও আমাদেরই মত শিয়াদেরকে ভ্রান্ত বলে বিশ্বাস করেন। এমতাবস্থায় মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের অনুসারীদেরকে সুন্নীদের প্রতিপক্ষরূপে দাঁড় করিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়াটা ছিল একান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ গরজটা তুর্কী সুলতানরা খুব বেশি অনুভব করেছিলেন, ঠিক যেভাবে ৬ দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আইয়ুব-ইয়াহইয়া খান তথা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নাম করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল এবং সর্বপ্রকার দমন পীড়নের ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন। মক্কা-মদীনার হারামাইন যেহেতু তুর্কী শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল আর আমাদের ধর্মপ্রাণ হাজী সাহেবগণ মক্কা-মদীনায় যিয়ারতে গিয়ে সে সব প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে পড়তেন, তাই এ উপমহাদেশেও ওহাবী বিরোধী প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। এ প্রচারণা যেহেতু ব্যাপকভাবে হয়েছিল তাই ব্রিটিশ আমলে বৃটিশ সরকার সে অস্ত্রটি আমাদের আজাদী সংগ্রামের সংগ্রামী আলেমগণের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে। তারা আজাদী সংগ্রামের পথিকৃত বালাকোটের শহীদ মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও শাহ ইসমাঈল শহীদকে সাথে সাথে গোটা মুজাহিদ আন্দোলন ও আজাদী সংগ্রামকে ‘ওহাবী আন্দোলন’ বলে অভিহিত করে। সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা নিসার আলী ওরফে তীতুমীর এবং হাজী শরীয়তুল্লাহর ফরায়েজী আন্দোলন সবই বৃটিশ ঐতিহাসিক ও আমলা ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার প্রমুখ কর্তৃক (ওহাবী) বলে অভিহিত হয়। হান্টারের ভাষ্যমতে, সৈয়দ আহমদ বেরলভী মক্কায় গিয়ে ওহাবী আন্দোলনে দীক্ষিত হয়ে আসেন, অথচ তিনি বা আমাদের তীতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ প্রমুখ বীরপুরুষগণ যখন ১৮২০ সালের দিকে হজে যান তখন মক্কা-মদীনায় সুদৃঢ় তুর্কী শাসন চলছিল এবং ঐ সব পবিত্র নগরীতে ওহাবী আন্দোলনের নামটি উচ্চারণ করাও ছিল গুরুতর অপরাধ। এর এক দশক পূর্বেই তুর্কী সুলতানরা ১২৪৪ হিজরীতে/১৮১৩ খ্রি. ওহাবীদেরকে হটিয়ে মুক্ত করে ফেলেছিলেন। সুতরাং ওটা ছিল নেহাৎই রাজনৈতিক প্রচারণা এবং অসত্য বিবরণ। তাই ১৮৬৪ সালে ‘গ্রেট ওহাবী ট্রায়াল’ নামে উপমহাদেশীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ‘কোলকাতা হাইকোর্টে’ সরকারী মামলা হয়েছিল-যার ভিত্তিতে অনেকেরই ফাঁসি ও দ্বীপান্তরের শাস্তি হয়েছিল। সে মামলার অভিযুক্তগণ আদালতে তাদেরকে ওহাবী বলে অভিহিত করার প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, আমরা ওহাবী নই, মুহাম্মাদী তরীকার অনুসারী।’ তারা ওহাবীর পরিবর্তে তাদেরকে সুন্নী বলে অভিহিত করার দাবী করেছিলেন। স্বয়ং হান্টার লেখেন, কার্যত ওহাবীরা হচ্ছে সুন্নী সম্প্রদায়ের একটি অগ্রগামী অংশ এবং ইসলামের শুদ্ধাচারপন্থী অংশ। বাংলা ও উত্তর পশ্চিম ভারতের প্রায় সকল মুসলমানই সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত। (ইন্ডিয়ান মুসলিমস পৃ. ৪৫-৪৬)
ভারতবর্ষে ওহাবী-সুন্নী দ্বন্দ্বের সূচনা
১. এল বিভান জোনস লেখেন, গোঁড়া মৌলবীরা সাইয়েদ আহমদ শহীদের অনুসারীদের কট্টর সংস্কার আন্দোলনকে ওহাবীটজম বলে কুৎসা রটায়। (Nicknamed them Wahhabies) The people of the mosque, p. 206 (London 1932)
২. ঐতিহাসিক পি হার্ডি লেখেন, The follwers of Syed Ahmad Barelvi Continued to maintain an active guerrilla war on the North West frontier in the region of Black mountain ... . the Ulama were a potential political force and that it was necessary to divided them politically from the supporters of Syed Ahmad Brelvi
অর্থাৎ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর অনুসারীরা ভারতবর্ষের উত্তর সীমান্তের কালোপাহাড় এলাকায় একটি গেরিলাযুদ্ধ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল। ... আলেমসমাজ আরো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিরূপে বিরাজমান ছিল। তাই তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করে সাইয়েদ আহমদ বেরলভীর অনুসারীদের থেকে সরিয়ে আনাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। (দি মুসলিমস অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া পৃ. ২৬৮)
৩. দেওবন্দী আলেমগণ ক্রমাগত ব্রিটিশ শাসন বিরোধী ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছিলেন। পি হার্ডি বলেন,
The collection of fatwas by Deobandi ulama are of immence importance for understanding the pre-ocopations of Indian Muslims.
অর্থাৎ দেওবন্দী আলেমগণের ফতোয়া সংকলনগুলো পরাধীন ভারতের মুসলমানদের মন ও মনন গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হত। (প্রাগুক্ত পৃ. ১৭১)
৪. এমতাবস্থায় বৃটিশ সরকারের জন্যে যা অত্যন্ত দরকারী হয়ে পড়েছিল তা হচ্ছে-
For every Alim who issued a fatwa that India was Dar-ul-Harb there would be one who declared that it was Dar-ul-Islam. Deoband represented the first response.
অর্থাৎ এমন প্রত্যেক আলেম যিনি বলেন হিন্দুস্তান দারুল হরব বা শত্রুকবলিত রাষ্ট্র, তার জবাবে আরো একজন করে আলেম থাকা অপরিহার্য যিনি বলবেন, না, হিন্দুস্তান দারুল ইসলাম। দেওবন্দ ছিল প্রথমোক্ত দলের প্রতিনিধিত্বকারী।
৫. পক্ষান্তরে আহমদ রেযা খান ঐ দ্বিতীয় অপ্রিয় দায়িত্বটি গ্রহণ করলেন। হার্ডির ভাষায়-
Ahmad Reza Khan of Barilvi issued a fatwa declaring India to be Dar-ul-Islam, marking it a sin to associate with infidels.
অর্থাৎ আহমদ রেযা খান ভারতবর্ষকে দারুল ইসলাম বলে ঘোষণা করে বিধর্মীদের (হিন্দুদের) সঙ্গে মিলে চলা (স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা) কে পাপ বলে ঘোষণা দেন। (প্রাগুক্ত পৃ. ২৬৮)
এ-ই হল ভারতীয় উপমহাদেশে ওহাবী-সুন্নী দ্বন্দ্বের ইতিহাস। যাদের জন্যে বেদাতী আলেমরা এ মহান জিহাদ (?) শুরু করেছিলেন সেই ইংরেজ জাতির ঐতিহাসিকরা তা ধরিয়ে দিয়েছেন। ঐ যুগে তিনি আজীবন যালেম বিজাতীয় বিদেশী সরকারের সমর্থন অব্যাহতভাবে যুগিয়ে গেছেন। এমনকি তার মৃত্যুর বছর ১৯২১ সালে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার পরে আলেমরা একটি সম্মেলন আহবান করেছিলেন।
ফ্রান্সিস রবিনসন এ তথ্যটি ফাঁস করে দিয়ে মন্তব্য করেন-
He had considerable influence with the masses but was not favoured by educated Muslims.
সাধারণ মানুষের উপর তার বেশ প্রভাব ছিল, কিন্তু শিক্ষিত মুসলমানরা তাকে পসন্দ করতেন না। (সেপারিটিজম এমাঙ ইন্ডিয়ান মুসলিমস, পৃ. ৪২২)
সে যুগে আহমদ রেযা খানের সাথে আবদুল মজীদ বদায়ূনী ও আবদুল হামিদ বদায়ূনী নামক দুই ভাই-যাদের প্রথমোক্তজন সরকারী ‘শামসুল উলামা’ খেতাব এবং ১৯২২ সালে গভর্ণর হারকোট বাটলারের দরবার থেকে একটি তমঘা ও সম্মানসূচক তরবারী লাভ করেছিলেন। (প্রাগুক্ত, পৃ. ২৭২)
গেইল মেনান্ট লেখেন, সরকারী মোসাহেবীর পুরস্কার স্বরূপ আবদুল মজীদ লক্ষ্ণৌর সরকার সমর্থক ক্যানিং কলেজের অধ্যাপকের চাকুরি এবং আবদুল হামিদ লক্ষ্ণৌ ঈদগাহর ইমামতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। (দি খিলাফত মুভমেন্ট দিল্লী অক্সফোর্ড ফ্রেম ১৯৮২, পৃ. ২৭২)
বর্তমানে ‘ওহাবী তত্ত্ব’ পুনঃআবিষ্কারকারীগণ সেই নোংরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে জানান দিলেন, ব্রিটিশ বেনিয়ারা ৬৫ বছর পূর্বেই এদেশ থেকে পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হলেও তাদের নিমক হালাল অনুগামীরা এখনো বেঁচে আছেন এবং যে কোন বাতিল শক্তিকেই তারা মদত যোগাতে সদা প্রস্ত্তত! সাধু সাবধান!!
১২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৩২
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: ইন ফা কিসের মধ্যে কি , পান্তাভাতে ঘী, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খ্যাত নামা, হক্কানী মুর্শিদ ছিলেন, মাজার শরীফ যিয়ারত করতেন। মিলাদ শরীফ ক্বিয়াম শরীফ করতেন।
অতএব, ওহাবী মতবাদ এর সাথে সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জড়ানো চরম মূর্খতা এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা মাত্র।
১৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৩৮
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: ইবনে ওহাব নজদীর আসল চেহারা সম্পর্কে জানতে চান।
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "ঈড়হভবংংরড়হ ড়ভ ইৎরঃরংয ঝঢ়ু ধহফ ইৎরঃরংয বহসরঃু ধমধরহংঃ ওংষধস" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ।
পর্ব - এক
হেমপার বলে, আমাদের বৃটিশ রাজ্য অনেক বড়। সূর্য, বৃটেনের সমুদ্রের উপর দিয়ে উদিত হয়, আবার এরই সমুদ্রের নীচে অস্ত যায়। তথাপি ইন্ডিয়া, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের মত উপনিবেশিক দেশগুলোতে আমাদের রাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এ সকল দেশসমূহে সামগ্রিকভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। যাই হোক, এ সকল জায়গার জন্য আমরা জোরদার এবং সফল কার্যক্রম আনতে যাচ্ছি। আমরা শীঘ্রই তাদের সবার উপর পরিপূর্ণ অধিপত্য বিস্তার করতে যাচ্ছি। দু’টো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ১। যে সকল জায়গা নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলো ধরে রাখা। ২। যে সকল জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেই সে সকল জায়গা অধিকারে আনা। এ দু’টো কর্তব্য সম্পাদনের জন্য, উপনিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রনালয় থেকে প্রত্যেক উপনিবেশের জন্যে একটি করে মিশন নিয়োগ করা হয়। আমি উপনিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রনালয়ে যোগদান করা মাত্রই মন্ত্রী মহোদয় আমার উপর তার আস্থা প্রকাশ করেন এবং আমাকে আমাদের পূর্ব ভারতের কোম্পানীর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। বাহ্যিকভাবে সেটা ছিল ব্যবসায়িক কোম্পানী। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিস্তৃত অংশ নিয়ন্ত্রণে আনার বিভিন্ন উপায় বের করা। আমাদের সরকার ভারতবর্ষের ব্যাপারে মোটেও বিচলিত ছিল না। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ভাষাভাষির এবং পরস্পর বিপরীত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মানুষ একত্রে বসবাস করে। চীনের ব্যাপারেও আমরা ভীত ছিলাম না। চীনে প্রধান্য বিস্তারকারী ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং কনফিউসিয়ানিজম যার কোনটাই আমাদের জন্য কোন রকম আশংকার ছিল না। দু’টোই ছিল মৃত ধর্ম যা জীবনের জন্য কোন সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেনি এবং বড় জোর এ দু’টি আহবান জানানোর নমূনামাত্র, তার বেশী নয়। এসব কারণে এ দু’টো দেশে বসবাসরত মানুষগুলোর নাম মাত্র দেশ প্রেমের অনুভূতি ছিল। এ দু’টি দেশ আমাদের অর্থাৎ বৃটিশ সরকারকে ভীত করেনি তথাপি যে সকল ঘটনা পরবর্তীতে ঘটতে পারে তা আমাদের ভাবতে হয়েছে। কাজেই এসব দেশে বিরাজমান মতভিন্নতা, অজ্ঞতা, দারিদ্র্য এমনকি রোগবালাই নিয়ে দ্বন্দ্ব বিরোধ অব্যাহত থাকুক সে লক্ষ্যে এক দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে থাকি। আমরা অনুকরণ করেছিলাম এদেশের প্রথা ও ঐতিহ্যকে এবং এভাবে আমাদের অভিসন্ধিগুলো গোপন রাখছিলাম। তবে ইসলামিক দেশগুলোর জন্য আমরা মানসিকভাবে দূর্বলতা অনুভব করছিলাম। ইতিমধ্যে রুগ্ন মানুষ (অটোম্যান সম্রাজ্য) এর সঙ্গে কিছু চুক্তি সম্পাদন করেছিলাম, যার সব কিছুতেই আমাদের সুবিধাজনক অবস্থান ছিল। উপনিবেশ মন্ত্রনালয়ের অভিজ্ঞ সদস্যরা ভবিষ্যৎবানী করেছিল যে, এই রুগ্ন মানুষ (অটোম্যান সম্রাজ্য) এক শতাব্দীর কম সময়েই শেষ হয়ে যাবে। উপরন্তু আমরা কিছু গোপন চুক্তি করেছিলাম ইরানী সরকারের সাথে এবং এই দু’টো দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলাম যাদের আমরা মেসন (গঅঝঙঘ) হিসেবে তৈরী করেছিলাম। ঘুষ, অদক্ষ প্রশাসন, অসম্পূর্ণ শিক্ষা, দূর্ণীতি, সুন্দরী মহিলায় আসক্তি এবং পরিশেষে কর্তব্যে অবহেলা এ দু’টো দেশের মেরুদ- ভেঙ্গে ফেলেছিল। এসব সত্ত্বেও আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম যে আমাদের কর্মকা- আশানুরূপ ফল দিচ্ছেনা। আমরা যে রকম আশা করছিলাম নীচে তার কারণগুলো উল্লেখ করা হলোঃ ১। মুসলিমরা ইসলামের প্রতি অত্যন্ত আত্মনিবেদিত। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক মুসলমানই খৃষ্টধর্মে আসক্ত পুরোহিত বা সন্নাসীর চেয়ে বেশী না হোক সমান অনুরাগী। জানা মতে, ধর্মযাজক এবং সন্ন্যাসীরা মারা যাবে তবু খ্রীষ্টধর্ম ত্যাগ করবে না। এরকম লোকের মধ্যে বিপদজনক হচ্ছে ইরানের শিয়ারা। যারা শিয়া নয় তাদেরকে শিয়ারা অবিশ্বাসী (কাফের) এবং মন্দ লোক হিসেবে গণ্য করে। শিয়াদের কাছে খ্রীষ্টানরা হচ্ছে ক্ষতিকর ময়লার মত। স্বাভাবিকভাবেই, একজন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে কি করে এ ময়লা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। একবার এক শিয়াকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন তোমরা খ্রীষ্টানদের এ রকম নজরে দেখ? আমাকে উত্তর যা দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই- “ইসলামের নবী ছিলেন (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত জ্ঞানী। তিনি খ্রীষ্টানদের একটা আধ্যাত্মিক নির্যাতনের মধ্যে রাখেন যাতে তারা আল্লাহ পাক-এর ধর্ম ইসলামে যোগ দিতে একটি সঠিক রাস্তা খুঁজে পায়। প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রেরও নীতি হচ্ছে একজন বিপদজনক ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক অনুশাসনে রাখা যাতে সে আনুগত্য স্বীকার করে। আমি যে নোংরামীর কথা বলছি তা বস্তুগত কিছু নয়, এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক নিপীড়ন যা শুধু খ্রীষ্টানদের কাছে অদ্ভূত তা নয়, এতে সুন্নী এবং সব অবিশ্বাসীরা জড়িত। এমনকি আমাদের প্রাচীনকালের ইরানী মেগিয়ান পূর্বপুরুষেরাও শিয়াদের চোখে মন্দলোক।” তাকে বললাম, দেখুন সুন্নী এবং খ্রীষ্টানরা তো আল্লাহ, নবী, এবং শেষ বিচার দিবসের উপরও বিশ্বাস করে; তাহলে তারা মন্দ হতে যাবে কেন? সে জবাবে বললো “তারা দু’ কারণে মন্দ। তারা আমাদের নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। (আসলে শিয়া এবং খ্রীষ্টানরাই নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে। শিয়াদের বিশ্বাস, কথা, গলদ কাজকর্ম কুরআন ও সুন্নাহ মোয়াফেক নয় এবং আহলে সুন্নাতুল জামায়াতের নীচের কিতাবগুলোর প্রত্যেকটিতে এর যথাযথ খ-ন করা হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ আহমদ ইবনে হাজার মক্কী লিখিত “আশ শাওয়াইক উল মুহরিকা’ শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী বিরচিত “তোহফা-ই-ইছনা আশারিয়া’ ইমাম-ই-রাব্বানি আহমদ ফারুকীর “তাঈদ-ই আহলে সুন্নাত।” আব্দুল আজিজ ফেরাহরেভী রচিত ‘নাহীয়া’ আব্দুল্লাহ সুয়েদির ‘হোজাজ-ই-কাতিয়ে’ এবং মোহাম্মদ শিরিস্তানী লিখিত ‘মিলাল ওয়ান নিহাল’ গ্রন্থসমূহ পঠিতব্য।) হে আল্লাহ পাক আমাদের এমন কাজ থেকে রক্ষা করুন এবং এ ধরণের নিষ্ঠুর দোষারোপের জবাবে আমরা অনুসরণ করি সেই প্রচলিত নীতির যে কেউ যদি আঘাত করে উত্তরে তাকেও আঘাত কর এবং তাকে বলা যে তুমিও নিকৃষ্ট। দ্বিতীয়তঃ খৃষ্টানরা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি আক্রমনাত্মক ভাবে দোষারোপ করে থাকে। যেমন, তারা বলে ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ পান করতেন। (নাউযুবিল্লাহ) তিনি অভিশপ্ত ছিলেন, তাই ক্রশ বিদ্ধ হন। (নাউযুবিল্লাহ)
মন্ত্রীসহ, কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের যাজক এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা সেখানে ছিলাম বিশ জন। আমাদের সম্মেলন চলেছিল তিন ঘণ্টা ধরে এবং শেষ অধিবেশন কোন সফল সিদ্ধান্তে না পৌছেই শেষ হয়ে যায়। তথাপি একজন যাজক বলেছিল “দুঃখ করোনা। মসিহ এবং তার অনুসারিরা কর্তৃত্ব অর্জন করেছিল তিনশ বছর যন্ত্রণা ভোগের পর। আশা করা যায়, অজানা জগত থেকে তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং অবিশ্বাসীদের (এখানে মুসলমানদের) তাদের কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করতে সৌভাগ্যদান করবেন, যদিও আরও তিনশত বছর পর তারা বিতাড়িত হয়। মজবুত ঈমান আর দীর্ঘ মেয়াদী ধৈর্য্য ধারনের মাধ্যমে আমাদের বাহুকে অবশ্যই অস্ত্রসজ্জিত করতে হবে। কতৃত্ব দখলের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচার মাধ্যমগুলো দখলে আনতে হবে। সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে অবশ্যই আমাদের খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার ঘটাতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্যটা (অটোমান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে ফেলা) অনুধাবন করা মঙ্গলজনক হবে, যদিও তা এক শতাব্দী পরে হয়। কেননা বাপের কাজ তো ছেলেদের জন্য।” আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল- যেখানে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড থেকে কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্মীয় লোকজন যোগদান করেছিল। আমি ছিলাম খুব সৌভাগ্যবান কারণ আমার এবং মন্ত্রীর মধ্যে সু-সম্পর্কের কারণে আমিও সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলনে মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনা এবং স্পেনে যেমন করা হয়েছিল তেমনিভাবে মুসলমানদের খ্রীষ্টধর্মে বিশ্বাস করানো বা খ্রীষ্টান বানানোর ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে যে সব আলোচনা হয় তার সবই আমার (হেমপার) “ইল্লা মালেকুতুল মসিহ” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি। কিন্তু এটা খুব কষ্টসাধ্য যে, একটি গাছকে হঠাৎ উপড়িয়ে ফেলা যার শিকড় জমিনের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু আমাদের অবশ্যই এই কষ্টগুলোকে সহজভাবে নিতে হবে এবং এর থেকে পরিত্রানের উপায় বের করতে হবে। খ্রীষ্টানধর্ম এসেছে প্রচারলাভের জন্য। আমাদের প্রভু মসিহ্ও তারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পূর্ব ও পশ্চিমের বিরাজমান খারাপ অবস্থা হযরত মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাহায্য করেছিল। এখন সে রকম অবস্থা নেই। পূর্ব-পশ্চিমকে ঘিরে থাকা বিরক্তিকর জিনিসও (তার মতে ইসলাম) অপসারিত হয়েছে। আমরা আজ আনন্দের সাথে লক্ষ্য করছি যে, পরিস্থিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মন্ত্রনালয় এবং অন্যান্য খ্রীষ্টান সরকারের মহৎ উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার ফলে মুসলমানগণ এখন পতনের মুখে, অপর দিকে খ্রীষ্টানরা উন্নতির পথে। এ সময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি সে সকল বিষয় যা হারিয়েছিলাম শতবর্ষ ধরে। গ্রেট বৃটেনের মত শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসলামকে নির্মূল করার মত এ মহতি প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্ব
ইস্তাম্বুলের পথেঃ হিজরী ১১২২ সালে (১৭১০ খ্রীষ্টাব্দে) উপনিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে মিশর, ইরাক, হিজাজ এবং ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছিল, গুপ্তচর বৃত্তি এবং প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের জন্যে, যাতে মুসলমানদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করা যায়। একই সময়ে এবং একই উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় আরো ৯ জন উদ্যমী এবং সাহসী লোককে নিয়োগ করে। অর্থ, তথ্য এবং মানচিত্র যা আমাদের প্রয়োজন ছিল তা ছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে আমাদের দেয়া হয়েছিল, সরকারী আমলা, আলিম-উলামা, এবং গোত্র প্রধানদের নামের তালিকা। আমার স্মৃতি থেকে কখনই মুছে যাবে না যে, যখন আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে বিদায় নিতে যাই, তিনি বলেছিলেন- আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমার সাফল্যের উপর। সুতরাং তোমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। আমি সমুদ্র পথে ইসলামী খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুলের পথে যাত্রা শুরু করি। আমার প্রাথমিক দায়িত্ব ছাড়াও আমাকে ভালভাবে সেখানকার মুসলমানদের স্থানীয় তুর্কী ভাষা খুব ভালভাবে শিখতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে আমি ল-নে বেশ পরিমাণ তুর্কী ভাষা, কুরআনের ভাষা আরবী এবং ইরানিয়ানদের ভাষা ফার্সী শিখে ফেলেছিলাম। যদিও কোন ভাষা শেখা আর স্থানীয় লোকজনদের মত করে কথা বলা, এদ’ুয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কয়েক বছরে ভাষাটা শিখতে পারলেও, বলাটা শিখতে হয়েছিল খুব সূক্ষ্মভাবে, যাতে লোকজন আমাকে সন্দেহ করতে না পারে। আমি অবশ্য ভীত ছিলাম না যে তারা আমাকে সন্দেহ করবে। কারণ মুসলমানরা খুব সহনশীল, উদারমনের, পরোপকারী যা তারা তাদের নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লালাৗহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিখেছে। তারা আমাদের মত সন্দেহ প্রবণ নয়। সর্বোপরি, সে সময় গুপ্তচরকে গ্রেফতার করার মত তুরস্ক সরকারের কোন সংস্থা ছিলনা। দীর্ঘ ক্লান্তি কর সমুদ্র যাত্রা শেষে আমি ইস্তাম্বুল গিয়ে পৌছি। আমি আমার নাম বললাম ‘মুহম্মদ’ এবং মুসলমানদের ইবাদত গৃহ মসজিদে আসা যাওয়া শুরু করলাম। মুসলামানদের শৃঙ্খলাবোধ, পরিচ্ছন্নতা এবং আনুগত্য দেখে আমি মুগ্ধ। মুহুর্তের জন্য নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন এই নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি? তাই করতে কি আমাদের প্রভু মাসিহ আমাদের উপদেশ দিয়েছিলেন? পর মুহুর্তেই ভাবি, একি শয়তানী চিন্তায় মগ্ন হলাম? এবং আরো ভালভাবে নিজের কর্তব্য পালন করার জন্য সিন্ধান্ত নিলাম। ইস্তাম্বুলে ‘আহমদ আফেন্দি’ নামক একজন বুযূর্গ লোকের সাথে আমার পরিচয় হয়। রুচিশীল আচরণ, খোলামনের ব্যবহার, আধ্যাত্মিক নির্মলতা আর পরোপকারী মনোভাব ইত্যাদির বিচারে আমাদের ধর্মের (খ্রীষ্টান ধর্মের) কোন ধার্মিক ব্যক্তিকেই তাঁর সমকক্ষ দেখিনি। হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার জন্যে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করতেন।
সে বুযূর্গ ব্যক্তির মতে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদিক থেকে উচ্চতম ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব। যখনই তিনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক উচ্চারণ করতেন তাঁর চোখ অশ্রুসজল হয়ে পড়তো। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছিলাম এ কারণে যে, তিনি আমাকে প্রশ্ন করেননি আমি কে এবং কোথা থেকে এসেছি। তিনি আমাকে ‘মুহম্মদ আফেন্দি’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন এবং স্নেহ মমতায় সমাদর করতেন। আমি একজন মেহমান, ইত্তাম্বুলে এসেছি কাজ করতে এবং খলিফার ছায়াতলে বসবাস করতে, এমনি বিবেচনায় আহমদ আফেন্দী আমাকে দেখতেন। বলতে কি, এ ছল চাতুরির মধ্যেই আমি ইস্তাম্বুলে অবস্থান করতে লাগলাম। একদিন আমি আহমদ আফেন্দিকে বললাম ‘আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, আমার কোন ভাই-বোনও নেই এবং পৈত্রিক সূত্রে কোন জমি জমাও পাইনি। আমি এসেছি ইসলামের এ প্রাণকেন্দ্রে কাজ করে বেঁচে থাকার জন্য এবং কুরআন-সুন্নাহ শেখার জন্যে অর্থাৎ ইহকাল এবং পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। আমার এ কথায় তিনি অত্যন্ত প্রফুল্ল হলেন এবং বললেন, “তিনটি কারণে তুমি শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য।” (তিনি যা বলেছিলেন তা হুবহু বর্ণনা করছি।) এক. তুমি একজন মুসলমান এবং সব মুসলমান ভাই ভাই। দুই. তুমি একজন মেহমান। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মেহমানদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শণ কর।” তিন. তুমি কাজ করতে চাও; হাদীছ শরীফে আছে, যে কাজ করে, সে আল্লাহ পাক-এর নিকট প্রিয়। তাঁর কথাগুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করলো। আমি মনে মনে বললাম, খ্রীষ্টান ধর্মেও কি এমন উজ্জ্বল সত্যের সন্ধান আছে? লজ্জার বিষয় সেখানে তা নেই।” যা আমাকে অবাক করে তা হচ্ছে, ইসলামের মত একটি মহান ধর্ম, এমন কিছু আত্ম অহংকারী লোকের হাতে পরে অবহেলিত এবং অধঃপতিত হচ্ছে, যারা জীবন সম্পর্কে অসচেতন।
আহমদ আফেন্দীকে বললাম যে, আমি কুরআনুল কারীম শিখতে চাই। তিনিও আমাকে খুশী মনে শিখাবেন বলে জানালেন এবং সে অনুযায়ী সূরা ফাতিহা শিখাতে শুরু করলেন। আমরা যা পড়তাম, তিনি তার ব্যাখ্যা ভাল করে বুঝিয়ে দিতেন। কিছু শব্দ উচ্চারণে আমার যথেষ্ট সমস্যা হলেও দু’ বছর সময়ের মধ্যে আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়ে ফেললাম। প্রতিটি ছবকের পূর্বে তিনি অজু করতেন এবং আমাকেও অজু করতে বলতেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে বসে শিখাতে শুরু করতেন। অজু বলতে মুসলমানরা যা বোঝায় তা হচ্ছে নীচে বর্ণিত একের পর এক ধোয়ার তালিকা- (১) সমস্ত মুখ ধোয়া, (২) ডান হাত আঙ্গুল থেকে কনুই সহ ধোয়া, (৩) বাম হাত আঙ্গুল থেকে কনুই সহ ধোয়া, (৪) মাথা, কানের পেছন, ঘাড়ের পেছন উভয় হাত দিয়ে মাসেহ করা, (৫) উভয় পা ধোয়া। মিসওয়াক ব্যবহার করাটা ছিল আমার জন্য এক বিড়ম্বনা। ‘মিসওয়াক’ হচ্ছে একটি ছোট্ট গাছের ডালা যা দিয়ে মুসলমানরা তাদের মুখ এবং দাঁত পরিস্কার করে। আমি ভেবেছিলাম এ গাছের ডালটি দাঁত ও মুখের জন্য ক্ষতিকর। মাঝে মাঝে ডালটি দিয়ে মুখে ব্যথা লাগতো এবং রক্ত ঝরতো, তথাপি তা আমাকে ব্যবহার করতে হত। মুসলমানদের মতে মিসওয়াক ব্যবহার হচ্ছে নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত এবং এর ব্যবহার খুবই উপকারী। বাস্তবেই আমার দাঁতের রক্তপড়া বন্ধ হয়ে গেল এবং আমার মুখে যে দুর্গন্ধ ছিল তাও দূর হয়ে গেল। যদিও অধিকাংশ বৃটিশদের মুখেই এ দূর্গন্ধ থাকে। ইস্তাম্বুলে থাকা কালে মসজিদের সেবায় নিয়োজিত এক খাদিমের কাছ থেকে আমি একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলাম। সে খাদিমের নাম ছিল ‘মারওয়ান আফেন্দি’। মারওয়ান ছিল হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একজন ছাহাবার নাম। মসজিদের খাদিম ভদ্রলোক ছিল নার্ভাস প্রকৃতির। তিনি তার নিজের নামের জন্য গর্ববোধ করতেন এবং বলতেন “ভবিষ্যতে আমার ছেলে হলে তার নাম রাখবো মারওয়ান, কেননা মারওয়ান ইসলামের একজন বীর যোদ্ধা।” মারওয়ান রাতের খাবার তৈরী করতো। শুক্রবার মুসলমানদের ছুটির দিন বলে আমি কাজে যেতাম না। সাপ্তাহিক বেতন ভিত্তিতে, অন্যান্য দিনগুলো আমি খালিদ নামের একজন কাঠ মিস্ত্রীর জন্য কাজ করতাম। যেহেতু আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খ-কালীন কাজ করতাম, সে অন্যান্য কর্মচারীদের বেতনের অর্ধেক বেতন আমাকে দিতো। কাঠ মিস্ত্রী খালিদ তার অবসর সময় ব্যয় করতো খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গুণাবলী বর্ণনা করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ। তিনি অনেক যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। তারপরেও ওমর-বিন খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক তাঁর পদচ্যুতির ঘটনা এই কাঠ মিস্ত্রীর মনে দারুন আঘাত করেছে। (খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় আবূ উবায়দা বিন র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এবং তিনিও অব্যহত বিজয় লাভ করেন। তার মানে বিজয় অর্জিত হয়েছিল আল্লাহ পাক-এর ইচ্ছায়, খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্যে নয়। খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সেনাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে খালিফা উমর বিন খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন।) এ (খালিদ) লোকটি, যার জন্যে আমি কাজ করতাম, সে ছিল চরিত্রহীন এবং নেশাগ্রস্থ। কেন জানি সে আমাকে বিশ্বাস করতো। কারণ সম্ভবত এটা যে আমি তাকে সবসময় মেনে চলতাম। সে গোপনে শরীয়ত অমান্য করতো কিন্তু বন্ধুদের সামনে শরীয়ত অনুসরণের ভান করতো। সে শুক্রবারে নামাযে যেতো, ঠিকই কিন্তু অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রে কি করতো এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না।
সকালের নাস্তা আমি দোকানে গিয়ে সেরে নিতাম। কাজের পর, যোহরের নামাযের জন্যে আমি মসজিদে যেতাম এবং আছরের নামায পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করতাম। আছরের নামাযের পর, আমি যেতাম আহমেদ আফেন্দীর কাছে, সেখানে তিনি আমাকে ঘন্টা দুয়েক কুরআনুল কারীম পাঠ করা এবং আরবী ও তুর্কী ভাষা শিক্ষা দিতেন। শুক্রবার এলেই আমার সমস্ত সপ্তাহের আয় তার হাতে তুলে দিতাম এবং তিনি আমাকে খুব ভালভাবে শিখাতেন। কিভাবে কুরআনুল কারীম তিলওয়াত করতে হয়, ইসলাম পালনের প্রয়োজনীয়তা কি এবং আরবী ও তুর্কী ভাষার জটিল বিষয়গুলো সবই তিনি যতœ করে আমাকে শিখাতেন। যখন আহমেদ আফেন্দী জানলেন আমি একা, তিনি তার একজন মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে রাজি হইনি।
তিনি তবু পিড়াপিড়ী করতে লাগলেন এবং বুঝালেন যে বিয়ে করা হচ্ছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে আমার সুন্নত থেকে সরে যায় সে আমার উম্মত নয়’।” আমি উপলদ্ধি করলাম যে এ ঘটনাটি আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে ফলে তাকে মিথ্য বলতে হল যে, আমার বিয়ে করার শারীরিক ক্ষমতা নেই। এভাবে আমাদের উভয়ের ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব অব্যহত রাখতে সক্ষম হই।
ইস্তাম্বুলে আমার দু’বছরের অবস্থান যখন শেষ হয়ে এলো, আমি আহমেদ আফেন্দিকে বললাম, “আমি এবার দেশে ফিরে যেতে চাই।” তিনি বললেন, না যেওনা। কেন যাবে? ইস্তাম্বুলে তুমি যা চাবে তাই খুঁজে পাবে। আল্লাহ পাক একই সাথে দ্বীন ও দুনিয়া দিয়ে ভরে দিয়েছেন এই শহরকে। তুমি বলেছো যে তোমার বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। আর কোন ভাই বোনও নেই তবে কেন তুমি এই ইস্তাম্বুল শহরেই স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছোনা?” আমার ব্যাপারে আহমেদ আফেন্দীর মনে একটা নির্ভরশীলতা তৈরী হয়েছিল। সে কারণেই তিনি আমাকে ছেড়ে দিতে রাজী হননি বরং চাপ প্রয়োগ করেছিলেন যাতে ইস্তম্বুলে আমি আমার আবাস গড়ি। কিন্তু আমার দেশপ্রেমজনিত কর্তব্য জ্ঞান আমাকে তাড়া দিচ্ছিলো আমি যেন লণ্ডন ফিরে যাই, ফিরে গিয়ে খিলাফতের কেন্দ্রভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদান করি এবং নতুন নির্দেশনা লাভ করি।
ইস্তাম্বুলে অবস্থানকালীন সময়গুলোতে আমি প্রতিমাসে উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ে আমার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক রিপোর্ট পাঠাতাম। আমার মনে পড়ে, একটি প্রশ্নে আমি জানতে চেয়েছিলাম যে আমি যে কাঠমিস্ত্রীর নিকট কাজ করছি, সে আমার সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে চায়, এ অবস্থায় আমার কি করণীয়? উত্তর ছিল, তোমার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তুমি তাও করতে পার। এ রকম উত্তরে আমি সাঙ্ঘাতিক অপমান বোধ করেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি জানি যে এ ধরনের পাপাচার ইংল্যান্ডে খুবই সাধারণ তবু আমার ক্ষেত্রে এরকম কখনো ঘটেনি যে আমার উপরওয়ালারা আমাকে এরকম কাজ করতে আদেশ করবে। আমি তাহলে কি করবো! আমার নেশার বাটি তলা পর্যন্ত সাবাড় করা ব্যতীত আর কিছুই করার ছিলনা। সুতরাং আমি চুপ হয়ে গেলাম এবং নিরবে কাজ করতে লাগলাম।
আমি যখন আহমেদ আফেন্দীর কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম তার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো এবং তিনি বললেন হে বৎস! আল্লাহ পাক তোমার সহায় হোন। তুমি আবার ইস্তাম্বুলে এসে যদি দেখ আমি আর নেই তবে আমাকে স্মরণ করে আমার আত্মার জন্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করো। শেষ বিচারের দিনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে আবার আমাদের দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমার মন এতটাই বেদনাক্লিষ্ট হয়ে পড়ে যে আমার দ’ুচোখ বেয়েও অশ্রু গড়িয়ে পরে। তারপরেও আমার কতর্ব্য বোধ স্বাভাবিকভাবেই ছিল অধিকতর শক্তিশালী।
তৃতীয় পর্ব
আমার বন্ধুরা, আমার আগেই লন্ডনে ফিরে এসে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশ লাভ করে। আমিও ফিরে আসার পর নতুন নির্দেশ পাই। তবে দুঃখজনকভাবে আমরা মাত্র ছয়জন ফিরে আসি। সচিব বললেন, বাকী চারজনের একজন মুসলমান হয়ে মিশরেই রয়ে গেছে। তথাপি সচিব সন্তুষ্ট ছিল কারণ সে মিশরে রয়ে গেলেও বিশ্বাসঘাতকতা করে কোন গোপন তথ্য ফাঁস করেনি। দ্বিতীয়জন রাশিয়া চলে যায় এবং সেখানে থেকে যায়। জন্মগতভাবে সে ছিল রাশিয়ান। সচিব তার জন্য খুব দুঃখ পেল। সে রাশিয়া গিয়ে আর ফিরে আসেনি বলে দুঃখ পায়নি। দুঃখ পেয়েছিল এ কারণে যে, সে রাশিয়ার হয়ে উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির চালিয়েছে এবং মিশন শেষে সে দেশে ফিরে গেছে। তৃতীয়জন, সচিব যা বললেন, বাগদাদের পাশ্ববর্তী শহর ‘ইমরায়’ প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। চতুর্থজন ইয়েমেনের সানায় অবস্থানকালীন সময় পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং বছরখানেক সময় ধরে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠায়; পরবর্তীতে তার রিপোর্ট পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় এবং হাজার চেষ্টা করেও তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। চারজনের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছিল মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বড় বিপর্যয়। কেননা, লোক সংখ্যায় আমরা কম হলেও দায়িত্ব পালনের দিক থেকে আমরা ছিলাম একটা জাতি। সে জন্যে প্রত্যেকের উপর আমাদের খুব হিসেব নিকেশ করে কাজ করতে হয়। রিপোর্টের কিছু অংশ বিশ্লেষণ করার পর, আমাদের চারজনের রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য সচিব এক সভা আহবান করেন। আমার বন্ধুরা যখন তাদের রিপোর্ট দিল, তখন আমিও আমার রিপোর্ট পেশ করলাম। আমার রিপোর্ট থেকে তারা কিছু কিছু নোট নিল। মন্ত্রী, সচিব ও অন্যান্য যারা সভায় যোগ দিয়েছিল সবাই আমার কাজের প্রশংসা করলো, কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে আমি হলাম তৃতীয়। আমার বন্ধুদের মধ্যে জর্জ বেলকাউড হয়েছিল প্র্রথম এবং হেনরি ফেনস হয়েছিল দ্বিতীয়। সন্দেহ নেই যে, তুর্কী ও আরবী ভাষা, কুরআন ও শরীয়ত শিখে আমি বড় সফলতা অর্জন করি কিন্তু অটোম্যান সম্রাজ্যের দূর্বল দিকগুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়কে কোন রিপোর্ট দিতে পারিনি। দু’ঘণ্টা ধরে সম্মেলন চলার পর সচিব আমার ব্যার্থতার কারণ জানতে চাইলে, আমি বললাম, “আমার প্রধান কাজ ছিল ভাষা, কুরআন এবং শরীয়ত শিক্ষা করা। আমি অতিরিক্ত কিছুর জন্য কোন সময় ব্যায় করতে পারিনি। কিন্তু আপনি যদি আমার উপর আস্থা রাখেন তবে এবার আপনাকে খুশী করতে পারবো।”
সচিব বললেন যে, আমিও সফলতা অর্জন করেছি তবে তিনি আশা করেছিলেন আমি প্রথম হব। তিনি বলতে লাগলেন, শোন হেমপার, পরবর্তী মিশনে তোমাকে দু’টো কাজ করতে হবে।
(১) মুসলিমদের দূর্বল জায়গাগুলো খুজে বের করতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা তাদের দেহে প্রবেশ করে তাদের শরীরের জোড়াগুলো আলাদা করে ফেলবো। নিশ্চয়ই, শত্রুকে আঘাত করার এটাই পথ। (২) যেই মুহূর্তে এসব দূর্বল অবস্থানগুলো সনাক্ত করতে পারবে এবং যেভাবে বললাম সেভাবে কাজ করতে পারবে (অন্যভাবে বলতে গেলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন করে তাদের পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারবে), তখন তুমি হবে সবচেয়ে সফল এজেন্ট এবং মন্ত্রণালয় থেকে মেডেল অর্জন করবে। আমি ছয়মাস লন্ডনে অবস্থান করেছিলাম এবং সে সময়ে আমার চাচাতো বোন ‘মারিয়া ইসভয়’কে বিয়ে করি। তখন আমার রয়স ছিল ২২ এবং মারিয়ার ২৩ বছর। মারিয়া ইসভয় ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। তবে তার বুদ্ধ বিবেচনা গড়পড়তা এবং সাধারণ সংস্কৃতিমনা মহিলা। তার সঙ্গে যতটুকু সময় কাটিয়েছি তা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখময় এবং মধুর সময়। আমার স্ত্রী যখন গর্ভবতী এবং আমরা একজন নতুন অতিথির অপেক্ষায় তখনই বার্তা পেলাম যে আমাকে ইরাকের উদ্দেশ্য যাত্রা করতে হবে। আমাদের সন্তান আসার সময়ে এ রকম বার্তা পেয়ে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। তবে ছেলের বাবা কিংবা কারো স্বামী হবার যে আবেগ আমার ছিল তার চেয়েও আমার কাছে আমার নিজের দেশ এবং বিশেষত আমার সহকর্মীদের মধ্যে প্রথম হবার গৌরবের বিষয়টি আমার কাছে বেশী গুরুত্ব পায়। ফলে বিনা দ্বিধায় আমি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করি। আমার স্ত্রী চেয়েছিল সন্তান ভুমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত যেন আমি মিশন স্থগিত রাখি। তথাপি আমি তার কথাকে উপেক্ষা করি। আমরা যখন একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলাম, দু’জনেই ফুপিয়ে কাঁদছিলাম। আমার স্ত্রী বললো, আমাকে চিঠি লেখা বন্ধ করোনা। আমি তোমাকে আমাদের নতুন সংসার সম্পর্কে লিখবো যা সোনার মত দামী। তার সে সকল কথা আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে। আমি প্রায় বাতিল করে দিতে চাচ্ছিলাম আমার সফর। তবু আমি আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি এবং বিদায় জানিয়ে চুড়ান্ত নির্দেশ নিতে মন্ত্রনালয়ের দিকে যাত্রা করি। ছয় মাস পরে আমি ইরাকের বসরা নগরীতে পৌছি। এই নগরীর অধিবাসীদের আংশিক সুন্নী এবং আংশিক শিয়া। বসরায় ছিল আরবী, পারসী এবং স্বল্প সংখ্যক খ্রীষ্টান গোত্রের বসবাস। জীবনে আমি তখন পারসিয়ান লোকের দেখা পাই।
যাই হোক প্রথম এবারে শিয়া ও সুন্নী মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। শিয়াদের মতে তারা আলী বিন আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর অনুসারী। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আপন চাচাতো ভাই। শিয়ারা বলে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খলীফা নিযুক্ত করেন এবং আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পরে খলীফা হবার জন্যে তাঁর বংশের আরো বারোজনকে ইমাম নিয়োগ করেন। যতটুকু আমি বুঝতে পেরেছি, খলীফা হবার ব্যাপারে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন উপযুক্ত গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ইসলামের ইতিহাস পড়ে যতটুকু বুঝতে পেরেছি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন বৈশিষ্টম-িত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এবং প্রগার জ্ঞানের অধিকারী। আবার হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খলীফা নিযুক্তের বিষয়টিও ছিল সঠিক। তবে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ছেলে এবং আটজন দৌহিত্রকে খলীফা নিযুক্ত করার বিষয়টি আমার নিকট সন্দেহজনক প্রতীয়মান হয়েছে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাতের সময় হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন বালক এবং তিনি কি করে জানতেন যে, তাঁর আটজন দৌত্রের আগমন হবে? যদি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্ পাক-এর ওহীর মাধ্যমে ভবিষ্যত জানতে পারেন। যেমনটি ঈসা আলাইহিস সালাম ভবিষ্যতের ব্যাপারে জানতেন। তথাপি খ্রীষ্টানদের কাছে হযরত মুহম্মদ ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবী হবার বিষয়টি সন্দেহের উর্দ্ধে নয়। মুসলমানদের দাবী, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আল্লাহ পাক-এর নবী এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তম্মধ্যে, কুরআন শরীফ অন্যতম। আমি নিজে কুরআন শরীফ পড়েছি। নিশ্চয়ই, কুরআন শরীফ অত্যন্ত উঁচুস্তরের কিতাব। এমনকি ইহা তাওরাত শরীফ এবং বাইবেলের চেয়েও উন্নত। এতে রয়েছে নীতি, বিধান ও নৈতিক নিয়ম-কানুন ইত্যাদি। আমার কাছে এটা একটি বিস্ময়ের ব্যাপার, কেমন করে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত উন্নতমানের কিতাব আনয়ন করলেন; কেমন করেই বা তিনি এতসব বুদ্ধি বৃত্তি এবং ব্যাক্তিত্ত্ব সম্পন্ন হতে পারলেন যা একজন অতি জ্ঞানী এবং ব্যাপক দেশ বিদেশ ভ্রমণে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষেও কোনদিন সম্ভব নয়। আশ্চার্য্যরে কিছু নেই যে, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াতের প্রমাণের জন্য এগুলোই যথেষ্ট।
হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নুবুওওয়াতের সত্যতা খুঁজে বের করতে আমি প্রচুর পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণাকর্ম চালিয়েছি। একবার লন্ডনে এক পাদ্রীর নিকট আমার এ আগ্রহের কথা প্রকাশ করি কিন্তু তার উত্তর ছিল একগুয়েমি, গোড়া আর বিশ্বাসের অযোগ্য। যখন তুরস্কে ছিলাম, আহমেদ আফেন্দীকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখনও আমি কোন সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। সত্যি বলতে কি, আহমেদ আফেন্দীকে আমি সরাসরি এ বিষয় সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন করা থেকে বিরত থেকেছি পাছে তিনি আমার গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়টি আঁচ করে ফেলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে আমি বহু ভেবেছি, নিঃসন্দেহে তিনি আল্লাহ পাক-এর রসূলগণের একজন এবং এ প্রসঙ্গে বই পুস্তক পড়ে দেখেছি। কিন্তু কি করা, আমি একজন খ্রীষ্টান, তাই তাঁর নুবুওওয়াতের ওপর এখনো ঈমান আনিনি। সন্দেহহাতীভাবে, তিনি সকল মনীষীদের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে। অন্যদিকে সুন্নীদের আক্বীদ
১৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৩৯
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: ২২। সকল মুসলমানদের জানা আছে যে, কেউ যদিকোন কল্যাণকর পথ দেখায় তবে সেই পথ অনুসরন করে যারা সওয়াব অর্জন করবে, সেই ব্যক্তিত্ব সেই সওয়াবের ভাগী হবেন।
২৩। মুসলমানগণ কুরআন ও হাদীছকে গভীর শ্রদ্ধা সহকারে ধারণ ও অনুসরণ করে। তারা বিশ্বাস করে এই দুই উৎসের অনুসরণই বেহেশ্ত পাবার পথ।
বইটিতে মুসলমানদের উক্ত বিশ্বস্ত অবস্থানগুলোকে আরো পঙ্গু এবং ব্যাপকভাবে দুর্বল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং সেটা সফল করার জন্য বইটিতে পথ দেখানো হয়েছেঃ
১। বিবাদমান গোত্র সমূহের মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে। অবিশ্বাসকে জোরদার করবে এবং বিভিন্ন সাহিত্য প্রকাশনার মাধ্যমে মতবিরোধকে জাগিয়ে তুলবে।
২। স্কুলে শিক্ষালাভ এবং প্রকাশনায় বাধা দেবে। যেখানে সম্ভব সাহিত্য তথা বইপত্র জ্বালিয়ে দেবে। মুসলিম ছেলে মেয়েরা যাতে অজ্ঞ থেকে যায় সে জন্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের নিন্দাবাদ করবে যাতে মুসলিম অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে না পাঠায়।
৩-৪। তাদেরকে বেহেশতের কথা বলবে এবং বোঝাবে পৃথিবীর জন্য কাজকর্ম করার প্রয়োজন নেই। তাছাউফের নামে বিভ্রিান্তির পরিধিকে বিস্তৃত করবে। তাদেরকে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বইপত্র পড়তে দিয়ে বিশেষত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এহইয়াউ উলুমুদ্দিন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মসনবী শরীফ, মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বইপত্র পুড়ানোর নামে তাদের মধ্যে একধরনের অসচতেনতাবোধ জাগিয়ে তুলবে। (নাউজুবিল্লাহ)
(গুপ্তচর হেমপারকে পড়তে দেয়া বইটিতে মূলতঃ সুক্ষ্মভাবে তাছাউফের বিরুদ্ধে বলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং মানুষকে প্রকৃত তাছাউফের শিক্ষা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদেরকে ওলীআল্লাহদের সোহবত থেকে দূরে রাখার জন্যই তাদের এ বক্তব্য। কারণ ওলীআল্লাহদের সোহবত ইখতিয়ার না করলে কারো পক্ষে হাক্বীক্বীভাবে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ের মহব্বত ও মারেফাত ও মারেফাত এবং তায়াল্লুক ও নেছবত হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, ইসলাম কখনই শুধু বেহেশ্তের আশায় বসে থেকে কাজকর্ম করতে নিষেধ করেনি। বরং হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক পুরুষের জন্য উপার্জন করা ফরয।” কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, “অতঃপর হালাল রুজির সন্ধ্যানে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়।” মুলতঃ হেমপারের বইটিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ইসলাম হয়তো কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে এবং বৈরাগ্যকে পছন্দ করে কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আবার সূক্ষ্মভাবে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বই এর নাম বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি মসনবী শরীফ, মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বইগুলোর নাম উল্লেখ করেছে। অথচ বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক না করুন, যদি কোন কারণে পৃথিবীতে কুরআন মজীদ এবং হাদীছ শরীফের শিক্ষা না থাকে এবং শুধু এহইয়াউ উলূমিদ্দীন কিতাবখানা থাকে তবে মানুষ শুধু এহইয়াউ উলূমিদ্দীন পড়ে আবার পরিপূর্ণ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মসনবী শরীফে তাছাউফের যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষা মূলতঃ মানুষের চরিত্রকে সুন্দরভাবে গঠন করে, উন্নত করে, নির্মল করে। মানুষের সব অসৎ স্বভাবগুলো দূর হয়ে যায় এবং সব সুন্দর, সৎ স্বভাবগুলো অর্জিত হয়। মূলতঃ তাছাউফই হচ্ছে ইসলামের মূল। আজকের সমাজে এতসব ফিৎনা ফাসাদের মূল কারণ হচ্ছে তাছাউফ বর্জিত সব শিক্ষা। তাছাউফের শিক্ষার ফলে মানুষের অন্তর থেকে দূর হয় অহংকার, হিংসা, ঈর্ষাপরায়ণতা, মিথ্যা, গীবত, লোভ এতসব বদ স্বভাবগুলো আর অর্জিত হয় অল্পেন্তুষ্টি, ধৈর্য্য, সত্যবাদিতা, ন্যায় পরায়ণতা, এসকল সৎস্বভাব। মানুষ যদি ইসলামের এই মূল শিক্ষা তাছাউফের শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তবে একজন মানুষ পৃথিবীর যে কোন কাজে যে কোন পদে অধিষ্ঠিত হোক না কেন সেই কাজ এবং সেই দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালিত হবে। কিন্তু তাছাউফের শিক্ষা ব্যতীত অন্য যতই শিক্ষাই থাকুক না কেন তা মানুষের চরিত্র গঠন করেনা ফলে পৃথিবীতে দেখা দেয় অশান্তি, নৈরাজ্য, ফিৎনা-ফাসাদ, মারামারি ইত্যাদি। সুতরাং তাছাউফের শিক্ষা মানুষের মধ্যে অসচেতনতা বোধ তো তৈরী করেই না বরং তৈরী করে চরম পর্যায়ের সচেতনতা বোধ।)
৫। সম্রাটদের নিষ্ঠুরতা আর স্বৈরাচারী মনোভাব পোষনের জন্য লেলিয়ে দিবে। তার জন্যে মিথ্যাচার করবে; যথাঃ তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া স্বরুপ। বস্তুত হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত উসমান জিন্নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সকল উমাইয়া এবং আব্বাসীয় খলীফাগণ তলোয়ার ও কেবল শক্তির বলে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং তারা প্রত্যেকেই ছিলেন একজন সর্ব ক্ষমতাধর। উদাহরণস্বরুপ বলবে, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তরবারীর সাহায্যে ক্ষমতা পান এবং এজন্যে যারা তাকে মানেনি তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেন। এর মধ্যে হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বাড়ীও ছিল। (নাউজুবিল্লাহ) (খুলাফায়ে রাশেদীন সম্পর্কিত উপরোক্ত বক্তব্য ও ইতিহাস শুধু অসত্যই নয় বরং কাট্টা কুফরীরও অন্তর্ভূক্ত। মূলতঃ সংক্ষিপ্ত সঠিক ইতিহাস হচ্ছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেছাল শরীফের পর একদল আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ একত্রিত হয়ে পরামর্শ করছিলেন পরবর্তী খলীফা মনোয়নের ব্যাপারে। তাঁরা পরামর্শ করছিলেন একজন মনোনীত হবেন আনছার ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পক্ষ থেকে আর একজন মনোনীত হবেন মুহাজির ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পক্ষ থেকে। এ কথা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গোচরে আসলে তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের উদ্বৃৃতি দেন যে,‘ খলিফা হবেন কুরাঈশদের পক্ষ থেকে’। অতঃপর আলোচনা শুরু হয় কুরাঈশ মুহাজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের মধ্যে। হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লহু তায়ালা আনহু প্রস্তাব করেন হযরত আবু উবায়দা ইবনুল র্জরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খেলাফতের দাায়িত্ব গ্রহণের জন্য। কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমাদের মধ্যে হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সর্বোত্তম। কেননা আল্লাহ পাক স্বয়ং এক আয়াত শরীফে হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর তিনটি প্রশংসা করেছেন। তিনি হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর হাত মুবারকে বায়াত গ্রহণ করলেন এবং সাথে সাথে অন্যরাও বায়াত গ্রহণ করলেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খলিফা হবার যোগ্যতা পূর্বেই হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রকাশ করেছিলেন। তারপরেও তিনি যখন বেশ অসুস্থ তখন তিনি হযরত উসমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেন কাগজ কলম আনতে যেখানে তিনি লিখে যাবেন। তার পরিবর্তে কে খলিফার দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু নাম প্রকাশ করার পূর্বেই তিনি আবার বেহুঁশ হয়ে পড়লেন এবং নাম প্রকাশ করতে পারেননি। কিন্তু ইতিমধ্যে হযরত উসমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সে কাগজে খলিফা হিসাবে হযরত উমার ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম মুবারক লিখে ফেলেন। পরবর্তীতে যখন হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবার কিছুটা সুস্থ হন তখন তিনি হযরত উসমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে জানতে চান কার নাম মুবারক লিখা হয়েছে। উত্তরে তিনি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম প্রকাশ করলে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ও হযরত ওছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য দুয়া করেন এবং জানান যে, হে হযরত ওছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি আমার অন্তরের কথাটাই লিখেছেন। এভাবে দ্বিতীয় খলিফা হিসাবে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মনোনিত হন।)
হেমপারকে দেয়া বইটিতে আরও বলাছিল যে, তোমরা মিথ্যাচার করবে যে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্ষমতা পান হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সুপারিশক্রমে। অন্যদিকে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নির্দেশে হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফা হন। আর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর বেলায় বিদ্রোহীরা তাঁকে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত করে। মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্ষমতাপান তরবারীর জোরে।
অতঃপর উমাইয়া খলীফাদের সময় সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রাপ্তির বিষয়টি পৈত্রিক ধারায় উত্তরাধিকার হিসেবে চালু হয়। একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয় আব্বাসীয়দের বেলায়। আর এভাবেই এটা সত্য বলে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম মানে স্বৈরাচারতন্ত্র।
(এক্ষেত্রেও সংক্ষিপ্ত সঠিক ইতিহাস হচ্ছে যে, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহুকে শাহাদতের পূর্বে অর্থাৎ আহত অবস্থায় হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণ আরজ করলেন, তাঁর পরবর্তী খলীফা মনোনীত করার জন্য। তখন তিনি বললেন, আজকে যদি হযরত আবু উবায়দা ইবনে জাররা রদিয়াল্লাহু আনহু জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁকেই আমি খলীফা হিসেবে মনোনীত করতাম। তাঁর অনুপস্থিতিতে ছয়জনের নাম ঘোষণা করে যাচ্ছি। এদের মধ্য হতে যে কোন একজনকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করতে হবে।
উল্লিখিত ছয়জন হচ্ছেন- হযরত উসমান যিন্ নূরাইন রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ত্বালহা রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত জুবাইর রদিয়াল্লাহু আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদিয়াল্লাহু আনহু।
স্মরণীয় যে, উপরোক্ত ছয়জনই ছিলেন “আশারা-ই-মুবাশ্শারার” অন্তর্ভূক্ত। উল্লিখিত ছয়জনের নাম ঘোষণা করে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদিয়াল্লাহু আনহুকে দায়িত্ব দিলেন। তিনদিনের মধ্যে যে কোন একজনকে মনোনীত করার জন্য। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদিয়াল্লাহু আনহু উল্লিখিত পাঁচজনের সাথে পরামর্শ করে হযরত উসমান রদিয়াল্লাহু আনহুকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত হন হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু। যার ফলশ্রুতিতে হযরত উসমান রদিয়াল্লাহু আনহু-এর শাহাদতের পর হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা হিসেবে খেলাফত লাভ করেন।
স্মর্তব্য যে, উল্লেখিত ছয়জনের মধ্যে কেহই খলীফা পদের অথবা খিলাফতের জন্য পদপ্রার্থী হননি। বরং হযরত ওমর রদিয়াল্লাহু আনহু তাঁদের নাম ঘোষণা করার কারণে তাঁরা পরস্পর পরামর্শ করেই একজনকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করেছেন।)
৬। হত্যাকা-ের শাস্তি মৃত্যুদন্ড এই বিধান ফৌজদারী দ-বিধান থেকে বাদ দিবে। দস্যু ও ডাকাতদের শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তাদেরকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে রাস্তায় চলাচলকে নিরাপত্তাহীন করে তুলবে।
৭। নীচের ব্যবস্থা অনুযায়ী তাদেরকে একটা অস্বাস্থ্যকর জীবনে পরিচালিত করতে হবে।
(ক) সবকিছুই আল্লাহ পাকের উপর নির্ভরশীল। (খ) স্বাস্থ্য পুনুরুদ্ধারে চিকিৎসার কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ পাক কি কুরআন মজিদে ইরশাদ করেননি? আল্লাহ পাক আমাকে খাওয়ান এবং পান করান। অসুস্থ হলে তিনিই সুস্থ করেন। তিনিই একমাত্র ক্ষমতাবান আমাকে মৃত্যুদানে এবং পরে পুনরায় জীবিত করার ব্যাপারে। সুতরাং কেও আল্লাহ পাকের ইচ্ছা ব্যতীত রোগ থেকে মুক্তি এবং মৃত্যু থেকে রেহাই পাবেনা। (সূরা শূরা আয়াত ৭৯-৮১)
(মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যেই বৃটিশ এজেন্টরা আয়াতে কারিমা এবং হাদীস শরীফের অর্থের বিকৃতি ঘটিয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণ করা সুন্নত। আল্লাহ পাক ওষুধের মধ্যে শিফা দিয়েছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন যিনি সব কিছুর সৃষ্টিকারী, তিনিই আরোগ্যকারী। আল্লাহ পাক সবকিছুর কারণ সৃষ্টি করেছেন। এবং কারণ ভিত্তিক নিয়ম কানুন পালন করারও নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের এই কারণগুলো অনুসন্ধানের জন্য পরিশ্রম করতে হবে এবং সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। “তিনি আমাকে আরোগ্যদান করেন” বলার অর্থ তিনি আমাকে আরোগ্য লাভের উপায়ও প্রদান করেন। এটাই ইসলামের বিধান যে, রোগের কারণ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা করতে হবে।)
৮। নিষ্ঠুরতাকে উৎসাহীত করার জন্য নিম্নোক্ত বক্তব্য দেবে।
(ক) ইসলাম হচ্ছে শুধু ইবাদতের ধর্ম।
(খ) রাষ্ট্রের ব্যাপারে ইসলামের কোন আগ্রহ নেই।
(গ) সে কারণে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর খলীফাগণের কোন আইনমন্ত্রী ছিলনা।
(ইবাদত বলতে শুধু নামায, রোযা, হজ্জ বোঝায় না। দুনিয়াবী কাজে নিয়োজিত থাকাও ইবাদত কেননা তাও আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ তবে সেটা হতে হবে শরীয়ত মুতাবিক। ভাল কাজ করার মধ্যে প্রচুর সওয়াব নিহিত আছে।)
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “মুসলমান নর ও নারীর জন্য ইল্ম হাছিল করা ফরয” অন্য এক হাদীস শরীফে সাইয়্যিদুল মুরছালিন, ইমামুল মুরছালিন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যারা কাজ করে এবং উপার্জন করে আল্লাহ্ পাক তাদের পছন্দ করেন।)
৯। এতসব ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের যে উপদেশ দেয়া হল তা গ্রহণ করলে অর্থনৈতিক মন্দাভাব আসাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হবে। এ ছাড়াও আমরা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি করে, বাণিজ্য জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে, বাজারে আগুন লাগিয়ে, বাধ, ব্রীজ ধ্বংস করে, ফসলের ক্ষেত সমান করে দিয়ে এবং পরিশেষে তাদের পানের উপযুক্ত পানিকে দুষিত করে আমরা আরও ক্ষতিকর কিছু কাজ যোগ করতে পারি।
(বৃটিশরা নিজেদের সভ্য বলে দাবী করে অথচ তাদের নৃশংসতা ও বর্বরতা সীমাহীন)
১০। প্রশাসনের লোকজনকে অবৈধ কার্যকলাপ, শরাব, জুয়া, দুর্নীতিতে অভ্যস্ত করাতে হবে এবং একেই কেন্দ্র করে গণবিক্ষোভ এবং চক্রান্ত সৃষ্টি করতে হবে। সরকারী সম্পদ তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য এবং তাদেরকে তাদের ইচ্ছামাফীক চলতে উৎসাহীত করতে হবে। যারা এভাবে আমাদের চলার পথ সুগম করবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে।
অতঃপর বইটিতে নীচের উপদেশগুলো যোগ করা হয়েছে। এ দায়িত্বে নিয়োজিত কোন বৃটিশ গোয়েন্দাকে প্রকাশ্যে বা গোপনে রক্ষা করতে হবে তবে কোন মুসলমান কতৃক কোন গোয়েন্দা আটক হলে তাকে উদ্ধারের জন্য কোন অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
১১। সব ধরনের সুদ প্রথার প্রচলন ঘটাতে হবে। কারণ সুদ শুধু অর্থনীতির ক্ষতি করেনা মুসলমানদের কুরআনের অনুশাসনের বিরোধিতা করতে শেখায়। কেও যদি একবার কুরআনের কোন অনুশাসন অমান্য করে তবে অন্য অনুশাসনগুলো অমান্য করতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তাদেরকে বোঝাতে হবে শুধু চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করোনা। সুতরাং সব ধরনের সুদ হারাম নয়।
১২। আলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার মিথ্য অভিযোগ এবং কলঙ্ক ছড়াবে। এভাবে মুসলানদের তাদের কাছ থেকে দুরে রাখবে। আমরাও কিছু গুপ্তচরকে তাদের মধ্যে ছদ্মবেশে রেখে দিবো। তারাও কিছু জঘন্য কার্যকলাপ সম্পন্ন করবে। তখন আলিমদের সম্পর্কে লোকজন বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে ফলে প্রত্যেককে সন্দেহের চোখে দেখা হবে। আল আজহার, ইস্তাম্বুল, নজফ এবং কারবালায় এসব গুপ্তচরের প্রবেশ ঘটাতে হবে। আলেম বিরোধী মনোভাব তৈরীর জন্য আমরা স্কুল, কলেজ, চালু করবো। এসব স্কুলগুলোতে আর্মেনিয়ান, গ্রীক এবং বাইজ্যান্টাইন শিশুদের শিক্ষা দেবো আমরা। মুসলমান শিশুদের মধ্যে আমরা এই মনোভাবে তৈরী করবো যে তাদের পূর্বপুরুষরা ছিল অজ্ঞ। খলীফা, বিদ্ধানব্যক্তি, প্রশাসনিক লোকদের বিরুদ্ধে শত্রু মনোভাব সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের দোষত্রুটিগুলো তুলে ধরবো এবং অভিযোগ তুলবো যে তারা শুধু ইন্দ্রীয় ভোগবিলাসে ব্যাস্ত থাকে। তারা রক্ষিতা নিয়ে সময় কাটায়, জনসম্পদের অপব্যবহার করে এবং কোন কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে অনুসরণ করেনা।
১৩। ইসলামে নারী ঘৃণার পাত্র এই মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর লক্ষ্যে কুরআনের এই আয়াত উদ্ধৃত করবে। “মেয়েদের উপর রয়েছে পুরুষের প্রাধান্য।” (সূরা নিসা আয়াত ৩৪)
এভাবে হাদীছের কথা বলবে যে, মেয়ে জাতি পুরোপুরি শয়তানের আশ্রিত।”
(হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, যে মহিলা (স্ত্রী) শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ করেন, তিনি বেহেশতের এক নিয়ামত। অপরদিকে যে মহিলা তার নফসের অনুগত এবং শরীয়তের খিলাপ চলে কুফরী, শেরেকী করে সে শয়তানের রজ্জু বা রশি অর্থাৎ তার মাধ্যম দিয়ে শয়তান কুফরী, শেরেকী ও গুমরাহী ওয়াছ ওয়াছা দেয়। মেয়ে জাতি শয়তানের আশ্রিতা এটা কাট্টা মিথ্যা কথা। এরকম কোন হাদীছ শরীফ নেই। গরীব অবিবাহিতা এবং বিধবা মহিলার ক্ষেত্রে তার পিতা তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নেবে। যদি তার পিতা না থাকে অথবা পিতা খুবই গরীব হয় তখন তার অন্য মাহরাম আত্মীয়গণ দায়িত্ব পালন করবে। যদি মাহরাম আত্মীয় না থাকে তবে খলীফা বা সরকারের তরফ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। একজন মুসলিম মহিলা কখনই জীবিকার জন্য বেপর্দা হয়ে কাজ করবে না। ইসলামী শরীয়াহ পুরুষের উপর মহিলার সকল দায়িত্ব ন্যাস্ত করেছে। সেদিক থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার একমাত্র পুরুষদের জন্য নির্ধারিত হবার কথা ছিল কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন এত মহান যে তিনি ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তি বোনদের জন্য নির্ধারিত করেছেন।
স্বামী তার স্ত্রীকে ঘরে বা বাইরে কোথাও উপার্জন করার জন্য বাধ্য করতে পারবে না। কিন্তু কোন মহিলা যদি কাজ করতে চায়, তার স্বামীর অনুমতিতে করতে পারবে তবে সম্পূর্ণ পর্দার মধ্যে থেকে এবং সেখানে কোন পুরুষের উপস্থিতি থাকতে পারবে না এবং এই ক্ষেত্রে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীরই থাকবে। কেও তার অর্জিত আয় এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি কিংবা মোহরানার অর্থ ছেড়ে দেবার জন্যে জোর খাটাতে পারবে না। এমনকি সে তার উপার্জনের টাকা ঘরের কিংবা ছেলেমেয়ের প্রয়োজনেও খরচ করতে বাধ্য নয়। স্বামীর জন্য ফরজ সংসারের সকল প্রয়োজন মেটানোর। আজকের কমুনিষ্ট শাসনে, নারী-পুরুষ সকলকে শুধু খাদ্যের প্রয়োজনে খাটতে হয়। খ্রীস্টান জগতে, তথাকথিত মুক্ত বিশ্বে এবং এমনকি কিছু নাম মাত্র মুসলিম দেশেও মহিলারা পুরুষের পাশাপাশি খেতে, খামারে, শিল্পে, কারখানায় কাজ করছে এই নীতিতে যে, জীবন সকলের জন্য সমান। যা কাট্টা হারাম। খবরের কাগজে প্রায়শই দেখা যায় বিবাহিত জীবনে তাদের অধিকাংশই সুখী নয় ফলে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা স্তুপ হচ্ছে।
সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বর্ণনা করে গেছেন তা প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত। (ক) প্রথমত ওহী। ওহী সরাসরি আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত। ওহী সমূহ কুরআন মজিদে লিপিবদ্ধ হয়েছে।)
১৪। পানির অভাবে অপরিচ্ছন্নতা সৃষ্টি হয়। সেজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে পানি সরবরাহ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবে।
মুসলমানদের শক্তিকে ধ্বংস করে দেবার জন্য বইটিতে নীচের মতামতগুলো প্রকাশ করা হয়েছে-
১. স্বগোত্রীয় প্রীতি এবং জাতিগত অহংকার সম্পর্কে মুসলমানদের উগ্র এবং অন্ধ স্বদেশ প্রেমে এমনভাবে উম্মাদ করতে হবে যাতে প্রাক ইসলামিক যুগের বীরত্বের প্রতি পুনঃ মনোনিবেশ করে। মিশরে ফিরআউনের যুগ, ইরানের ম্যাগী সময়কাল, ইরাকের ব্যাবিলনীয় সময়, অটোম্যানদের আঠিলা চেঙ্গিস যুগের অরাজক অবস্থা পুনঃ জাগরিত হয়। (তারা এ বিষয়ে একটা লম্বা তালিকা প্রণয়ন করেছে।) ২. গোপনে বা প্রকাশ্যে নীচের অপকর্মগুলো অবশ্যই করতে হবে। শরাব, জুয়া, ব্যাভিচার, শুকরের গোশ্্ত খাওয়া এবং খেলাধুলার দলগুলোর মদ্যে প্রতিযোগিতা। এসব করতে গিয়ে মুসলিম দেশগুলোর খ্রিস্টান, ইহুদী, ম্যাাগিয়ান এবং অন্যান্য অমুসলিমদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে। আর এ কাজে যারা নিয়োজিত থাকবে তাদেরকে কমনওয়েলথ মন্ত্রণালয়ের কোষাগার থেকে বেশি পরিমান বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. জিহাদ সম্পর্কে তাদের মনে সংশয়ের বীজ বপন করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে জিহাদ ছিল একটা সাময়িক হুকুমমাত্র যা বর্তমানে অচল হয়ে গেছে। ৪. শিয়াদের মন থেকে এ ধারণা দূর করে দিতে হবে যে, কাফিররা মন্দ নয়। সেজন্যে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করবে যেমন “আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুুসমূহ হালাল করা হল। আহ্লে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে।” (সূরা মায়িদা, আয়াত-৫)
তাদেরকে বলবে, নবীর এক স্ত্রী ছিল ইহুদী, যার নাম ছিল সাফিয়া। আর মারিয়া নামেও এক খ্রিস্টান স্ত্রী ছিল। তারা তো মন্দ ছিল না।
(হযরত সাফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা একজন ইহুদী সর্দারের কন্যা তিনি ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং উম্মুল মু’মিনীর এর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। আর মারিয়া কিত্্তীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মিশরের এক সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান বংশে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনিও ইসলাম কবুল করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীম রদ্বিয়অল্লাহু তায়ালা আনহু মূলতৎ মারিয়া কিবতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর মুবারক রেহেম শরীফে আসেন। সুতরাং সাফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে ইহুদী এবং মারিয়া কিবতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে খ্রিস্টান বলা চরম বেয়াদবি এবং কুফরী কাজ।)
৫. মুসলমানদের মধ্যে এ ধারণার জন্ম দিতে হবে যে, “নবীগণ ইসলাম বলতে যা বুঝিয়েছেন তাই পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। সেদিক থেকে ইহুদী ধর্ম এবং খ্রিস্টান ধর্মও আসলে ইসলাম। এ মতবাদকে নীচের যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করবে।
কুরআন সব ধর্মের সবাইকে মুসলমান নাম দিয়েছে। যেমন ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, আমাকে একজন মুসলিম হিসেবে কতল কর।” আর হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস্্ সালাম তাদের দোয়ায় বলেছেন, “হে আমাদের রব (আল্লাহ পাক) আমাদিগকে মুসলমান বানান এবং আমাদের বংশধরদের থেকেও মুসলিম জনতা তৈরী করুন।” হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্্ সালাম তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, “মরতে হলে একমাত্র মুসলমান হিসেবে মরবে।”
(সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্্ সালামগণ একই মৌলিক নীতি সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু সকল রসূলগণের শরীয়ত বা আদেশ নিষেধ এক রকম নয়। ঈমান আনা এবং শরীয়ত অনুসরণ করাটাই হল ইসলাম। প্রেত্যেক নবী আলাইহিমুস্্ সালামগণের শরীয়ত অন্যদের চেয়ে ভিন্ন রকমের, সেজন্য ইসলাম পালনও ছিল ভিন্ন রকম। আল্লাহ পাক-এর রসূল হিসেবে উলুল আ’যম রসূলগণ ওহীর মাধ্যমে নতুন শরীয়ত প্রণয়ন করেছিলেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ইসলাম এনেছেন সেটা দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত অন্খুন্ন থাকবে। সূরা আল ইমরানের ১৯তম এবং ৮৫তম আয়াত শরীফে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইহুদী খ্রিস্টানদেরকে তাদের পূর্বের ধর্ম ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, “যারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আনীত ইসলাম কবুল করবে না, তারা বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না এবং অনন্তকাল দোযখের আগুণে জ্বলবে।” পূর্বোক্ত নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্্ সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস্্ সালাম ও হযরত ইউসুফ আলাইহিস্্ সালাম তৎকালীন ইসলামকে মান্য করতে বলেছেন। গির্জায় যাওয়ার সেই শরীয়ত এখন আর কার্যকর নয়।)
৬। পুনঃ পুনঃ এটা বলবে যে, গীর্জা তৈরী করা হারাম নয় এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খলীফাগণ গীর্জাসমূহ ধ্বংস করেননি বরং সেগুলোকে সম্মান দেখিয়েছেন। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “আল্লাহ পাক যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রিস্টানদের) নির্জন, গীর্জা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসূহ ধ্বংস হয়ে যেত, যেগুলোতে আল্লাহ পাক-এর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।
(বিগত যামানায় যত ধর্মের ভিত্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর পক্ষ থেকে এবং ওহীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ইসলাম আসার পর সেগুলো রহিত হয়ে গেছে সেসব ধর্মের উপাসনালয়সমূহের নাম এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ স্ব স্ব যামানায় তাদের উপাসনালয়গুলো সম্মান ও সংরক্ষণ ফরয ছিল।)
৭। আরব বদ্বীপ থেকে ইহুদীদেরকে বিতাড়িত করবে এবং বদ্বীপে দুটো ধর্ম একত্রে থাকতে পারে না- এ হাদীছ সম্পর্কে মুসলমানদেরকে দ্বিধাগ্রস্থ করবে। এ হাদীছ সত্য হয়ে থাকলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন ইহুদী বা খ্রিস্টান স্ত্রী থাকার কথা নয়। তেমনি নজরান খ্রিস্টানদের সঙ্গেও কোন চুক্তি সম্পাদন হওয়ার কথা নয়।
(কোন উম্মুল মু’মিনীন ইহুদী বা খ্রিস্টান ছিলেন না। প্রত্যেকেই ইসলাম কবুল করেছিলেন। আর মুসরমানদের সাথে শর্ত সাপেক্ষে যে কোন ধর্মের লোকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে যা আল্লাহ পাক বলেন তাতে দোষের কিছু নেই)
৮। মুসলমানদের ইবাদতের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করতে হবে এবং উপকারী ইবাদত সমূহের মধ্যে ত্রুটি প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে এবং বলবে যে আল্লাহ পাক মানুষের ইবাদত চাননা। (ইবাদত করা হয় যেহেতু সেটা আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ। অবশ্যই আল্লাহ পাক বান্দার ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন তথাপি বান্দাদের নিজেদের জন্যই ইবাদতের প্রয়োজন রয়েছে। খ্রিস্টানরা দলবেধে চার্চে যায় অথচ মুসলমানদেরকে মসজিদে যাওয়া থেকে বাধা প্রদান করে।)
৯। যুদ্ধে গণীমতের যে মাল পাওয়া যায় তার এক পঞ্চমাংশ উলামাদের দেয়ার ব্যাপারে শিয়াদের বিভ্রান্ত করতে হবে। ব্যাখ্যা করবে যে, এক পঞ্চমাংশ গণীমতের মালের সাথে ব্যবসায়িক উপার্জনের কোন যোগ নেই। তারপর যোগ করবে যে, খুমুস (এক পঞ্চমাংশ গণীমত) দিতে হয় নবী বা খলীফাকে, উলামাকে নয়। উলামাদের দিতে হবে বাড়ী, প্রাসাদ, প্রাণী এবং উদ্যান। তাদের খুমুস দেয়া বৈধ নয়।
১০। মুসলমানদের মধ্যে বিদায়াত প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে এবং ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম বলে সমালোচনা করবে। প্রচার করবে যে মুসলিম দেশগুলো হচ্ছে অপ্রগতিশীল এবং তারা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে শুধু ইসলামের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে। (অপরদিকে পৃথিবীতে সবচেয়ে সভ্য এবং বড় সাম্রাজ্য মুসলমানরাই তৈরী করেছিল। মুসলমানরা অধঃপতিত হচ্ছে শুধু ইসলাম থেকে সরে যাবার কারণে)
১১। খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, সন্তানদের তাদের পিতা থেকে সরিয়ে দিতে উস্কানি দিতে হবে এবং এভাবে পিতার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। আমরা তাদের শিক্ষিত করবো। যে সময়টা তারা পিতার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে তখন আর তাদের কোন সুযোগ থাকবে না তাদের পিতার বিশ্বাস, আদর্শ এবং উলামাদের স্পর্শে যাবার।
১২. নারী জাতিদের প্ররোচিত করতে হবে যাতে তারা তাদের পর্দা থেকে সরে আসে। মিথ্যা কথামালা তৈরী করে বলতে হবে নিজেকে আবৃত রাখা ইসলামের মূল নির্দেশ নয় বরং আব্বাসীয় খেলাফতের সময়কালীন এটি একটি প্রথামাত্র। পূর্বে অন্যান্য পুরুষরা উম্মুল মু’মিনীনদের দেখতে পেতেন এবং তাঁরা সকল সামাজিক কর্মকা-ে যোগ দিতেন। মহিলাদের তাদের ঐতিহ্যগত পোশাক থেকে সরিয়ে যুবকদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে একটা অশোভনীয় পরিবেশ তৈরী করতে হবে। ইসলামকে নষ্ট করার এটা একটা কার্যকর পদ্ধতি। প্রথমে অমুসলিম এ কাজে ব্যবহার করতে হবে। সময়ের পরিক্রমায় মুসলমান মহিলারাও ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাবে এবং অমুসলিম মহিলাদের পথ অনুসরণ করবে।
(উপরের আলোচনাটি হেমপারকে দেয়া বইটিতে উদ্ধৃত ছিল। পর্দা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের ১১২-১৩১তম সংখ্যা পড়–ন। সেখানে হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়া হয়েছে।
১৩. মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে অপবাদ রটিয়ে জামাতে নামায আদায় বন্ধ করতে হবে এবং এতে সর্বপ্রকার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যে সকল মুছল্লী সেই ইমামের পিছনে নামায পড়বে তাদের প্রতি দেখাতে হবে অবজ্ঞা এবং বিরূপ মনোভাব।
১৪. সব সমাধি ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় উপস্থিত ছিল না। শুধু তাই নয় মাযার শরীফ যিয়ারতের ব্যাপারে সন্দেহ প্রবেশ করিয়ে দিয়ে নবী আলাইহিস্্ সালাম, খলীফা এবং নেককার মুসলমানগণ যেখানে শুয়ে আছেন সে সকল স্থান যিয়ারত করতে বাধা প্রদান করতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতার পাশে শুয়ে আছেন।
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শুয়ে আছেন বাকি নামক গোরস্থানে। হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কোথায় রাখা হয়েছে তা জানা যায়নি। কাজিমিয়াতে অবস্থিত দু’টো মাযার শরীফ দু’জন খলীফার। কিন্তু তারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশধর কাজিম বা জাওয়াদ নয়। তুস শহরে যে মাযার শরীফ রয়েছে তা হারুন নামীয় কারো। তিনি আহলে বাইতের সদস্য রিদা নামীয় কারো নয়। সামেরাস্থ কবরগুলো আব্বাসীয়দের। সেগুলো আহলে বাইতের সদস্য হাদী, আসকারী এবং মাহদীর নয়্ যেহেতু সব মুসলিম দেশের সমাধি ও গম্বুজ ধ্বংস করা ফরয, সে কারণে জান্নাতুল বাকীর সব কবরসমূহ নিশ্চিহ্ন করতে হবে।
(যদিও কিছু মানুষের ঈমান আক্বীদা বিনষ্ট করতে ওহাবীরা সক্ষম হয়েছে তার মানে এই নয় সব বিষয়েই তারা কামিয়াব। আল্লাহ পাক-এর অসীম রহমতের কারণে বংশানুক্রমে মানুষ ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাযার শরীফসমূহ সঠিকভাবেই চিহ্নিত করে আসছে।)
১৫। সাইয়্যিদগণ নবী বংশের অধঃস্থন পুরুষ, এ বিশ্বাসের প্রতি লোকজনকে সন্দেহ প্রবণ করবে। যারা কালো ও সবুজ পাগড়ী পরিধান করেন এবং সাইয়্যিদ নন তাদের সঙ্গে সাইয়্যিদগণকে একাকার করে ফেলতে হবে। এতে লোকজন সাইয়্যিদগণ সম্পর্কে হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে এবং পরিশেষে সাইয়্যিদগণের সম্পর্কে আস্থা হারাবে। সাইয়্যিদগণের ধর্মীয় কর্তৃত্ব নষ্ট করতে হবে এবং মাথা থেকে পাগড়ী খুলে ফেলার ব্যবস্থা করতেহবে। যাতে নুবুওয়াতি আখলাক্ব নষ্ট হয় এবং ধর্মীয় কর্তৃত্বের বিষয়গুলো কখনও সম্মান না পায়।
বিখ্যাত আলিম সাইয়্যিদ আবদ-উল-হামিক আরওয়াসি রহমতুল্লাহি আলাইহি ইস্তাম্বুল থাকতে আসহাব-ই-কিরাম নামে যে কিতাব রচনা করেন তাতে লিখেছেন, হযরত ফাতিমা-তুজ-জোহরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং তাঁর মুবারক আওলাদগণ দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত আহলে বাইয়াত হিসেবে বিবেচিত হবেন। উনাদের মুহব্বত করা সবার জন্য ফরয। আহলে বাইতকে ভালবাসা, অন্তর দিয়ে কিংবা দৈহিকভাবে এবং সম্পদের মাধ্যমে সাহায্য করা, ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং উনাদের অধিকারের প্রতি নজর রাখা হলে যে কেহ ঈমানের সাথে ইন্তকাল করতে পারবে। সিরিয়ার হামা শহরে সাইয়্যিদগণের জন্য আইনী আদালত
১৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৪২
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: (পরবর্তী অংশ)
ফতওয়া-ই-হামিসিয়ায় বলা হয়েছে, ইসলামের প্রথম যুগে আহলে বাইতের যে কোন বংশধরদের শরীফ নামে অভিহিত করা হতো। যেমন- শরীফই আব্বাসী, শরীফ-ই জয়নালী ইত্যাদি। ফাতেমী শাসকরা ছিল শিয়া। তারা হযরত ইমাম হুসাইন এবং হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমার বংশধরগণকে শরীফ নামে অভিহিত করতেন। মিশরের তুর্কী শাসকের একজন আশরাফ শাবান বিন হুসাইন নির্দেশ দেন সাইয়্যিদগণ সবুজ পোশাক পরিধান করবেন যাতে উনাদের শরীফদের থেকে আলাদাভাবে চেনা যায়। এ প্রথা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে, যদিও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোন মূল্য নেই।)
১৬। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা যেখানে শোখ প্রকাশ করে সেসব ধ্বংস করে দিতে হবে। কারণ তা হচ্ছে বিদয়াত এবং পরিত্যাজ্য। সেখানে মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে এবং ধর্ম প্রচারকদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। ধর্মপ্রচারক এবং শোক প্রকাশের স্থানগুলোর মালিকদের উপর কর আরোপ করতে হবে।
১৭। স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে সকল মুসলামনগণকে বোঝাবে যে প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন। সে যা খুশী তাই করতে পারে। আমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী ফরয নয়। উপরন্তু, তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রবেশ করিয়ে দিবে যে, খ্রিষ্টানরা তাদের নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে থাকবে, আর ইহুদীরা তাদের নিয়ম মেনে চলবে কেউ কারো হৃদয়ে আঘাত করবে না। আমর বিল মা’রুফ এবং নাহি আনিল মুনকার হচ্ছে খলীফাদের কাজ।
১৮। মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং বহু বিবাহ নিষিদ্ধ করতে হবে। বিয়ে শাদীও থাকবে নিয়ন্ত্রিত। বলতে হবে, একজন আরবী কোন ইরানী বিয়ে করতে পারে না, একজন ইরানী পারবে না আরবীকে বিয়ে করতে। একইভাবে একজন তুর্কী পারবে না ইরানীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে।
১৯। ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং মানুষের ইসলাম কবুল করা বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা নিবে। এ ব্যাপারে প্রচারণা চালাবে যে, ইসলাম শুধু আরব দেশে সীমাবদ্ধ থাকার মতই একটি বিশেষ ধর্ম। প্রমাণ হিসেবে কুরআন শরীফের এই আয়াত শরীফের উদ্ধৃতি দিবে, কেবলম তোমাদের এবং তোমাদের মত লোকজনের জন্যই শুধু যিকির।”
২০। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল রাষ্ট্রের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে যাতে কোন লোকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কখনও মাদরাসা বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম না হয়।
মুসলমানদের মনে কুরআন শরীফের সত্যতা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেগ ঘটাবে। কুরআন শরীফের অতিরিক্ত, সংশোধিত এবং বিকৃত বক্তব্য সম্বলিত অনুবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা নিবে, অতঃপর বলবে, “কুরআন শরীফ বিকৃত হয়ে গেছে।” (নাউযুবিল্লাহ)
কুরআন শরীফের কপিগুলো বেমানান এবং বেখাপ্পা। এক আয়াত শরীফের সঙ্গে অন্য আয়াত শরীফের মিল নেই। যে সকল আয়াত শরীফে ইহুদী, খ্রিষ্টান এবং বিধর্মীদের ব্যাপারে অপমানজনক কথা রয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে দেবে এবং জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ সে বিষয়গুলো বাদ দিবে। তুরস্ক, ফারসী এবং ভারতের প্রচলিত ভাষা এবং অন্যান্য আরো ভাষায় কুরআন শরীফের ভাষান্তর করবে যাতে আরব দেশের বাইরে অন্য দেশগুলোতে আরবী শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয় এবং আযান, নামায, দুয়া ইত্যাদি আরব দেশ ভিন্ন অন্য দেশগুলোতে আরবীতে না পড়া হয়। তদ্রুপ মুসলমানগণকে হাদীছ শরীফের ব্যাপারে সন্দেহ প্রবণ করে তুলবে। কুরআন শরীফের ভাষান্নতর, সমালোচনা এবং বিকৃত করার ব্যাপারে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে হাদীছ শরীফের ক্ষেত্রে একই পরিকল্পনা প্রয়োগ করবে। (ব্রিটিশদের এই অপচেষ্টা, শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এই কুরআন মজীদের যে কোন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিকৃতি থেকে হিফাজত করে আসছেন। এটা আল্লাহ পাক-এর কোন ওয়াদা । হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর উপর নাযিলকৃত ইনজিল শরীফ রক্ষার ব্যাপারে আল্লাহ পাক-এর কোন ওয়াদা ছিল না। সে কারণেই বাইবেল নামে একটা ভুল গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। সময়ে, সেই ভুল গ্রন্থটি বিভিন্নভাবে বিকৃত হয়েছে। পল নামে একজন ইহুদী পুরোহিত প্রথম, বাইবেলের বিবৃতি ঘটায়। সবচেয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয় ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে নিসিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে। ইস্তাম্বুলের প্রথম রোম সম্রাট কনষ্টাইনের নির্দেশে তিনশত নিরানব্বই জন পুরোহিতকে নিয়ে গঠিত সম্মেলনে এ কাজটি করা হয়।
প্রতি শতাব্দী শেষে এরূপ সংশোধনী আনয়ণ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। এভাবে ১২২৪ সালে মার্টিন লথার নামে একজন জার্মান পাদ্রী পোটেষ্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করে। খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা রোমের পোপকেঅনুসরণ করে তাদের বলা হয় ক্যাথলিক। ১০৫৪ সালে ইস্তাম্বুলের গীর্জা প্রধান, পোপের অধঃস্তন মাইকেল কিরোলারিয়াস অর্থডক্স (গোড়া) চার্চের গোড়াপত্তন করে। অনুরূপভাবে সিরিয়ান একেশ্বরবাদী দল সৃষ্টি হয় জোকাবাস (কাবাউস) কর্তৃক ও সিরিয়ান ম্যারোনিট সম্প্রদায় সৃষ্টি হয় মাআরো নামক এক ব্যক্তি দ্বারা। জোহাবাস উইটনেস দল গঠিত হয় ১৮৭২ সালের চার্লস রাসেল কর্তৃক।)
“কেমন করে ইসলাম ধ্বংস করা যায়” নামের বইটি যখন পুরোটা পড়ি তখন আমার মনে হল সত্যি বেশ দারুন একটি। আমার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এটি একটি মূল্যবান পুস্তক বলে মনে হল। সচিবের কাছে বইটি ফেরত দিতে গিয়ে বললাম, বইটি পড়ে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। সচিব বললো, তুমি নিশ্চিত থেকো এই পথে তুমি একমাত্র ব্যক্তি নও। আমাদের আরো অসংখ্য লোক আছে যারা তোমার ত এই দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের মন্ত্রণালয় পাঁচ হাজারেরও বেশী লোককে এ কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। মোট গোয়ন্দার সংখ্যা লাখের মত। বাড়াবার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছেঠ মন্ত্রণালয়ের। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলে, সব মুসলমানকেই আমাদের কব্জায় নিয়ে আসবে এবং সব মুসুলিম দেশগুলো চলে আসবে আমাদের দখলে। সচিব এক পর্যায়ে বললো, তুমি শুনে খুশী হবে যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাত্র এক শতাব্দী প্রয়োজন। যদিও আমরা সেই সুখের দিনগুলো দেখার জন্য বেঁচে থাকবো না কিন্তু আমাদের সন্তানরা তা দেখবে।
যেহেতু অন্যের বপন করা বীজের ফসল আমরা খাচ্ছি, সে কারণে অন্যের জন্য আজ আমরা বপন করে যাচ্ছি। যদি ব্রিটিশরা এই পরিকল্পনা ভালভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে তবে পরবর্তীতে সমস্ত খ্রিস্টান সম্প্রদায় সুখে থাকবে এবং বারশ শতাব্দী জুড়ে বিরাজমান অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করবে। সচিব বলতে থাকলো শতাব্দী জুড়ে বিরাজমান অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করবে। সচিব বলতে থাকলো শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে ক্রসেড চালিয়ে কোন ফায়দা হয়নি। মোগল এবং চেঙ্গিস সেনাদলও ইসলামের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কারণ তাদের কর্মকা- ছিল অতর্কীত ও অপরিকল্পিত। তারা শত্রু দমনের জন্যে শুধু সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ফলে অল্পতেই তারা কাহিল হয়ে পরতো। কিন্তু এখন আমাদের দক্ষ প্রশাসন চাচ্ছে একটা পরিকল্পিত পন্থায় দীর্ঘ সময়ে ধৈর্য্য সহকারে ইসলামের বিনাশ করতে। আমরাও সামরিক শক্তিকে কাজে লাগাবো। তবে সেটা আসবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা যখন ইসলামকে পুরোপুরি হজম করতে পারবো এবং যখন ইসলামকে সব দিক থেকে আঘাত হানতে সক্ষম হব, যখন একে চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে দিতে পারবো, ইসলামকে যখন আর পুররুদ্ধারের মত অবস্থায় পাওয়া যাবে না তখন আমাদের বিরুদ্ধে আর লড়ার যোগ্যতা থাকবে না।
সচিবের শেষ কথা ছিল, ইস্তাম্বুলে আমাদের যে সব পদস্থ কর্মকর্তা আছেন তারা অবশ্যই জ্ঞানী ও মেধা সম্পন্ন। তারা আমাদের পরিকল্পনা খুব সূক্ষ্মভাবে বাস্তবায়িত করছেন। তারা সেখানকার মুসলমানদের সাথে মিশছেন এবং তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা খুলছেন অন্যদিকে গীর্জাও প্রতিষ্ঠা করছেন। শরাব, জুয়া আর অশ্লীলতাকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে এবং ক্লাব ও ফুটবল খেলার মাধ্যমে তাদেরকে দল-উপদলে বিভক্ত করার ব্যাপারে তারা পরিপূর্ণভাবে সার্থক হয়েছে। মুসলমান যুবকদের মনে তারা সন্দেহ প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে, তৈরী করেছে সরকার বিরুদ্ধ দল এবং ভিন্ন মতালম্বী। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে দাঙ্গা ও সন্ত্রাস এবং অন্যায় কার্যকলাপ। প্রশাসক, পরিচালক ও রাজন্যবর্গ সবার ঘরে ঘরে খ্রিস্টান মেয়েদের চালান করে সবাইকে করেছে নীতিভ্রষ্ট। এসব কুকীর্তির মাধ্যমে তারা সকল শক্তি বিনষ্ট করে, তাদের বিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। আদর্শের দিক থেকে তাদের অধঃপতিত করে তাদের ঐক্য এবং যোগ্যতাকে বিনষ্ট করেছে। এবার সময় এসেছে যে কোন সময় যুদ্ধ ঘোষণা করার এবং ইসলামকে ধ্বংস করার।
ওহাবী মতবাদ প্রতিষ্ঠার নীল নকশা
প্রথম গোপন বিষয়টি উপভোগ করার পর দ্বিতীয় গোপন বিষয়টি জানার জন্য ইম (হেমপার ব্যাকুল হয়ে উঠি। অবশেষে একদিন সচিব আমাকে দ্বতীয় গোপন বিষয়টি তার প্রতিশ্রুতি মুতাবিক ব্যাখ্যা করলেন। দ্বিতয়ি গোপন বিষয়টি ছিল ৫৩ পৃষ্ঠার একটি স্কীম। এটা তৈরী হয়েছিল মন্ত্রণালয় উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার জন্য যারা এক শতাব্দীর মধ্যে ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করবে। এই স্কীমটিতে ছিল মোট ১৪টি অনুচ্ছেদ এবং এটি বিশেষভাবে সংরক্ষিত ছিল যাতে কোনভাবে এটা মুসলমানদের হাতে চলে না যায়।
স্কীমের অনুচ্ছেদগুলো ছিল নিম্নরূপঃ
১. আমাদের এমন একটি শক্তিশালী মিত্র বাহিনী তৈরী করতে হবে এবং রাশিয়ার জারের সাথে চুক্তিতে আসতে হবে যাতে বুখারা, তাজিকিস্তান, আর্মেনিয়া, খোরাসান এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর আক্রমণ চালিয়ে দখল করা যায়। রাশিয়ার সাথে অপর একটি চুক্তি করতে হবে যাতে তুরস্ক দখল করা যায়।
২. ফ্রান্সের সাথেও আমাদের সখ্যতা তৈরী করতে হবে যাতে ইসলামকে ভেতর এবং বাহির দু’দিক থেকেই ধ্বংস করা যায়।
৩. ইরান ও তুরস্ক উভয় দেশের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টির লক্ষে বীজ বপন করতে হবে। তাদের উভয়ের মধ্যে জাতীয়তাবোধ এবং সাম্প্রদায়িক ধারণা সৃষ্টিতে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
৪. মুসলিম দেশগুলোর অংশ বিশেষ অবশ্যই অমুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে দিতে হবে যেমন মদীনা শরীফকে দিতে হবে ইহুদীদের হাতে। আলেকজান্দ্রিয়া দিতে হবে খ্রিস্টানদের হাতে। তেমনি ইমারা যাবে সাইবার (সার্বিয়া) কাছে। কারমানশাহ (ইরানের একটি প্রদেশ), নুসারিয়া গ্রুপের কাছে। ইরান উপসাগর তুলে দিতে হবে হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে, ত্রিপোলিয়া যাবে দ্রুজদের (এরা ইসমাইলিয়া সম্প্রদায় ভুক্ত) হাতে, কারস (তুরস্কের একটি অঞ্চল) যাবে আলাউসদের হাতে এবং মাসকাট যাবে খারিজী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তী কাজ হবে তাদের হাতে অস্ত্র দেয়া যাতে তারা প্রত্যেকে ইসলামের জন্য গায়ের কাটা হায়ে দাঁড়ায়। তাদের দখলী এলাকার সম্প্রসারণ করতে হবে যাতে ইসলাম মুখ থুবড়ে পড়ে এবং শেষে ধ্বংস হয়ে যায়।
৫। মুসলিম দেশ এবং অটোম্যান রাষ্ট্রগুলোকে যতটা সম্ভব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং এমন ষড়যন্ত্র করতে হবে যাতে তারা সব সময নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদে ব্যস্ত থাকে। উদাহরণ হিসেবে আজকের ভারতের কথা বলা যায়। “বিভক্ত করো আর আধিপত্য বিস্তার করো, এবং বিভক্ত করো আর ধ্বংস করো” এটাই হোক সাধারণ থিওরি।
৬। ইসলামের মূল সৌন্দর্যের মধ্যে ভেজাল আনতে হলে বিভ্রান্তিকর ধর্মীয় মতের সংযোজন এবং বিভিন্ন দল-উপদলের মিশ্রণ ঘটানো প্রয়োজন।
এটা বাস্তবায়িত করতে আমাদের অবশ্যই এমন একটা ধর্মের আবিস্কার করতে হবে যা তাদের নফসের ইচ্ছার সাথে খাপ-খাইয়ে যেতে পারে। শিয়া অধুষিত দেশগুলোতে আমরা চার ধরনের ধর্মের প্রচলন করবো।
(ক) এমন এক ধর্ম যার ধর্মীয় নেতা হবেন ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
(খ) এমন এক ধর্ম যাদের ধর্মীয় নেতা হবেন ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি।
(গ) এমন এক ধর্ম যাদের ধর্মী নেতা হবেন ইমাম মাহদী আলাইহি সালাম।
(ঘ) এমন এক ধর্ম যাদের নেতা হবেন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। (আলী রিদা)
প্রথমটার জন্যে কারবালা হচ্ছে উপযুক্ত জায়গা, দ্বিতীয়টার জন্যে ইস্পাহান, তৃতীয়টার বেলায় সামারা আর চতুর্থটির জন্যে খোরাসানই হবে উপযুক্ত স্থান।
ইতোমধ্যে সুন্নীদের চার মাযহাবকে অবনমিত করে চারটি সম্পূর্ণ নতুন ধর্মে রূপান্তরিত করাতে হবে। এলক্ষ্যে নজদে আমরা একটি নৃতন ইসলামী দলের প্রতিষ্ঠা করবো এবং সকল প্রুপের মধ্যে একটা রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। চার মাযহাবের যাবতীয় বই-পত্র নষ্ট করে ফেলতে হবে যাতে করে প্রত্যেক দলের লোকেরা নিজেদেরকে একমাত্র বৈধ গ্রুপ বলে মনে করে এবং অন্যদেরকে মনে করে ধর্মবিরোধী, যাদেরকে কতল করে ফেলতে হবে।
৭। অনিষ্ট এবং বিদ্বেষের বীজ হিসেবে শত্রুতা, ব্যভিচার, শরাব, জুয়া ইত্যাদি মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অমুসলিমদেরকেও এ ব্যাপারে কাজে লাগানো যেতে পারে। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য এরকম মানসিকতা সম্পন্ন লোকদের একটি সাংঘাতিক সৈন্যদল তৈরী করতে হবে।
৮। মুসলিম দেশগুলোর দুর্বিনীত, কলুষিত নেতাচক্র এবং নিষ্ঠুর দলপতিদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদানে আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করবো না করা উচিতও নয়।
এভাবে তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে শরীয়তকে মান্য করার ব্যাপারে নিষেধ জারির ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবো। তাদেরকে এমনভাবে কাজে লাগাতে হবে যাতে উপনিবেশিক মন্ত্রণালয় যাই করতে আদেশ দেবে তারা তাই যেন বিনা দ্বিধায় সম্পন্ন করতে তৎপর হয়। তাদের মাধ্যমেই আমরা মুসলমানদের মধ্যে এবং মুসলিম দেশগুলোতে আইনী সহায়তায় আমাদের ইচ্ছাগুলোকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবো।
আমরা এমন একট জীবন ধারা ও পরিবেশ গড়ে তুলবো যেখানে শরীয়ত মান্য করা একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং ইবাদত করা হবে পশ্চাদমুখীতা। মুসলমানগণ যেন অমুসলিমদের মধ্য থেকে তাদের নেতা নির্বাচনে উৎসাহিত হয় আমরা সে কৌশলও অবলম্বন করবো। এসব করতে গিয়ে আমাদের কিছু ছদ্মবেশী এজেন্টকে উচ্চপর্যায়ে নিয়োগদান করবো, তারা মুসলমান এবং মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামের আশা আকাঙ্খা প্রতিফলনের নামে আমাদের ইচ্ছগুলোকেই বাস্তবায়িত করবো এবং এর জন্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেয়া হবে।
৯. আরবী শিক্ষা বন্ধ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবে। আরবী ভাষা বাদে অন্যান্য ভাষা যেমন ফার্সী, কুর্দিশ এবং পশতু এ সকল ভাষাসমূহকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করবে। আরব দেশসমূহে বিদেশী ভাষা প্রবেশ করিয়ে দেবে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের প্রাঞ্জল ভাষা ও তার সাহিত্য গুণকে নষ্ট করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক ভাষাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করবে।
১০. সরকারী আমলাদের পাশে আমাদের নিজস্ব লোক বসাতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে এ সকল লোকদের সচিব পর্যায়ে নিযোগ দিতে হবে। যাদের মাধ্যমে আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের অভিলাষগুলো পূরণ করবো। এ কাজ করার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে দাস ব্যবসা অবলম্বন করা। প্রথমে আমাদের গুপ্তচরদের ভালভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং এবং পরে তাদের দাস এবং রক্ষিতার ছদ্মবেশে পাঠাতে হবে। মুসলিম রাজন্যবর্গ বা আমলা স্থানীয় ব্যক্তিদের স্ত্রী, সন্তান এবং তাদের পরিচিত জনদের মাঝে এ সকল দাস বা রক্ষিতাদের বিক্রি করতে হবে। এভাবে যাদেরকে বিক্রি করা হবে তারা ধীরে ধীরে মালিকের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছবে এবং মুসলিম শাসকদের এমনভাবে ঘিরে থাকবে যেমন চুড়ি হাতের মধ্যে জড়িয়ে থাকে।
১১. আমাদের মিশনারী অঞ্চলের পরিধি বিস্তৃত করতে হবে যাতে সমাজের যে কোন শ্রেণী এবং পেশার লোকদের মধ্যে বিশেষত ওষুধ ব্যবসা, প্রকৌশল এবং হিসাব-নিকাশের কর্মকা-ে গভীরভাবে অনুপ্রবেশ করা যায়। আমাদের প্রকাশনা এবং প্রচারকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। চার্চ, স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরী, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নামের আড়ালে আমরা মুসরিম দেশগুলোতে আমাদের কর্মকা- চালিয়ে যাবো এবং যতদূর সম্ভব চতুর্দিকে এর বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। বিনামূল্যে আমাদের লাখ লাখ খ্রিস্টান ধর্মের বই পুস্তক ছড়াতে হবে। ইসলামের ইতিহাসের পাশাপাশি আমাদের খ্রিষ্ট ধর্মের ইতিহাস এবং সরকারী আইন প্রকাশ করতে হবে। বিভিন্ন চার্চ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে পুরোহিত ও নান এর ছদ্মবেশে আমাদের এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে এবং ধর্মীয় আন্দোলনের নেতা হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। তারা একইসাথে ইসলাম জগতের সকল গতি প্রবাহ এবং আন্দোলনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের রিপোর্ট করবে। তাছাড়া অধ্যাপক, বৈজ্ঞানিক এবং গবেষক ইত্যাদি নামের আড়ালে আমরা গড়ে তুলবো এক দল খ্রিস্টান বাহিনী যারা ইসলাসের বিকৃত বা নিশ্চিহ্ন করার তৎপরতা চালাবে। এরা ইসলামের জীবন পদ্ধতি, আচার-আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ সব আয়ত্ব করে ইসলামের বই-পুস্তক নষ্ট করবে এবং ইসলামী শিক্ষাকে নির্মূল করার চেষ্টা করবে।
১২. মুসলমান যুবক, বালক এবং মেয়েদের মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে হবে এবং ইসলামের ব্যাপারে তাদের মনে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে হবে। স্কুল, বই-পত্র, ম্যাগাজিন, খেলাধুলার ক্লাব গঠন, প্রকাশনা, সিনেমা, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণরূপে তাদের অন্তর থেকে নৈতিক মূল্যবোধ সরিয়ে ফেলবো এবংয আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্টরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মুসলিম যুব সমাজকে ফাঁদে ফেলার জন্যে প্রয়োজনে গোপনে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে ইহুদ,ি খ্রিস্টান এবং অমুসরিম যুবকদের জ্ঞান দান এবং প্রশিক্ষন দেয়া হবে।
১৩. গৃহযুদ্ধ এবং গণবিদ্রোহ সৃষ্টিকে উসকে দিতে হবে। মুসলমানদেরকে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে। একইভাবে অমুসলিমদের সাথেও যুদ্ধে লিপ্ত রাখতে হবে যাতে তাদের শক্তি নষ্ট হয় এবং উন্নতি ও ঐক্য বজায় রাখা বাধাগ্রস্ত হয়। তাদের মানসিক উৎকর্ষতা এবং আর্থিক ক্ষমতার উৎস যেন সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়। যুব ও কর্মশক্তিকে নষ্ট করে তাদের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে হবে।
১৪. তাদের অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে সাধন করতে হবে। উপার্জনের সকল উৎস, কৃষি ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থা, পানি সংযোগ এবং নদীর প্রবাহ এক কথায় সবকিছু নষ্ট করতে হবে। লোকজনদেরকে করতে হবে কর্মবিমুখ, অলস এবং ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি অমনযোগী। অলসদের জন্য খেলার মাঠ উন্মুক্ত করতে হবে। মাদক দ্রব্য এবং শরাব পান করাকে সহজতর করতে হবে।
দলীলসমৃদ্ধ, চমকপ্রদ এমন একটি কিতাব দেয়ায় আমি সচিবকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলাম না।
লন্ডনে এক মাস থাকার পর মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে নির্দেশ দেয়া হলো ইরাকে গিয়ে নজদের ওহাবের সঙ্গে পুনরায় দেখা করতে। আমি যখন আমার মিশনে যাত্রা শুরু করবো তখন সচিব আমাকে বলেছিলো, “নজদের সেই ওহাবের ব্যাপারে কখনই উদাসীন থেকো না। এ যাবৎ গোয়েন্দাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি পুরোপুরি বোঝা গেছে যে, আমাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য ওহাবী নজদী অত্যন্ত উপযোগী গবেট প্রকৃতির এক লোক।”
সচিব আরো বললেন, ওহাবী নজদীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করবে। আমাদের এজেন্টের সাথে তার ইস্পাহানে খোলামেলা কথা হয়েছে এবং সে শর্তসাপেক্ষে আমাদের ইচ্ছাপূরণ করতে রাজি হয়েছে।
সে যে শর্তগুলো আরোপ করেছে তা এরকমঃ তার মত, পথ ব্যাক্ত করার পর যখন সে নিশ্চিতভাবে তার দেশ এবং আলিম উলামা দ্বারা আক্রমণের সম্মুখীন হবে তখন সেই সম্ভাব্য বাঁধা এবং আক্রমণ থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনে তাকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ ও অস্ত্রবল দিয়ে সাহায্য করতে হবে।
ছোট আকারে হলেও তার আদর্শ অনুযায়ী তার দেশে তার জন্যে একটি শাসন ব্যবস্থা চালু করে দিতে হবে। মন্ত্রণালয় তার এই শর্ত মেনে নেয়।
যখন আমি (হেমপার) এ সংবাদ পেলাম তখন খুশীতে মনে হচ্ছিল আমি আকাশে উড়ছি। আমি সচিবকে প্রশ্ন করলাম আমার এ ব্যাপারে কি করা উচিত। তার উত্তর ছিল “ওহাবী নজদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটা স্কীম তৈরী করা হয়েছে। স্কীমটা হলোঃ
১. ওহাবী নজদীকে বলতে হবে তার মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাড়া সবাই কাফির। ফলে এ সকল কাফিরদের হত্যা করা, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, সম্ভ্রমহানি করা, লোকদের ক্রীতদাস বানিয়ে মেয়েদের রক্ষিতা হিসেবে বাজারে ক্রয় বিক্রয় করা হালাল।
২. তাকে আরও বলতে হবে, কা’বা ঘর মাটির তৈরী এবং মূর্তির অনুরুপ (নাঊযুবিল্লাহ) ফলে তা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। হজ্জ পালনের মত ইবাদত বন্দেগী নষ্ট করার লক্ষ্যে বিভিন্ন গোত্রের হাজীদের উপর চড়াও হয়ে তাদের মালামাল লুণ্ঠণ এবং কতল করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৩. খলীফাকে মানার ব্যাপারে মুসলমানদেরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। খলীফার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করতে হবে। এ ব্যাপারে তাকে সৈন্যদল প্রস্তুত করতে হবে। হিজাজের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং তাদের সম্মানে আঘাত হানতে তাকে সকল সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
৪. তাকে এই বলে লোকদের প্ররোচিত করতে হবে যে, মাযার, সমাধি এবং মুসলিম দেশগুলোতে অবস্থিত সব পবিত্র স্থানসমূহ হচ্ছে পৌত্তলিকতার নিদর্শন। ফলে, এসব ধ্বংস করে ফেলতে হবে। ওহাবী নজদীকে আরও ব্যবস্থা নিতে হবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন এবং সকল মাযহাবের ইমামগণের শানের খিলাফ কিছু করা বা বলার ব্যাপারে।
৫. সকল মুসলিম দেশগুলোতে অরাজকতা, অত্যাচার এবং বিপ্লব-বিদ্রোহকে উসকে দেয়ার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।
৬. তাকে (ওহাবী নজদী) কুরআন মজীদে নতুন সংযোজন এবং বিয়োজনের চেষ্টা করতে হবে। যেমনটি হাদীছ শরীফ-এর ক্ষেত্রে করা হয়েছে।
এই ছয়টি স্কীম ব্যাখ্যা করে সচিব আরও বলেন, তবে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে কোন আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। কারণ আমাদের কর্তব্য হচ্ছে ইসলামকে ধ্বংস করে দেয়ার বীজ বপন করা। পরবর্তী প্রজন্ম এসে বাকী কাজ শেষ করবে। বৃটিশ সরকার ধাপে ধাপে এগুতে চায় এবং ধৈর্য্য ধারণের একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে চায়।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো একটা জাগরণ এনেছিলেন। ওহাবী নজদীও একটা বিপ্লব সৃষ্টি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
কয়েকদিন পর আমি (হেমপার) মন্ত্রী ও সচিবের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আমার পরিজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বসরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, আমার ছেলে বললো, বাবা তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমার চোখ ভিজে গিয়েছিল। অনেক কষ্টের পর রাতের বেলায় বসরায় পৌছি। যখন আবু রিদার বাড়ীতে পৌছলাম তখন সে ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুম থেকে জেগে আমাকে দেখে খুব খুশী হলো। সে আমাকে আতিথেয়তা প্রদর্শন করলো। তার ওখানেই রাত অতিবাহিত করি। পরদিন সকালে সে বললো, ওহাবী নজদী আমার এখানে এসেছিল। সে তোমাকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠি খুলে পড়লাম।
ওহাবী নজদী লিখেছে, সে তার দেশ নজদে চলে যাচ্ছে। সেখানে তার ঠিকানাও উল্লেখ করেছে। আমি তখনি তার দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
অত্যন্ত ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে আমি তার ওখানে পৌঁছলাম। আমি তাকে বাড়ীতেই পেলাম। তার ওজন অনেক কমে গিয়েছিল। অবশ্য সে ব্যাপারে তাকে কিছু বলিনি। পরে জানলাম সে বিয়ে করেছে।
আমরা নিজেরা ঠিক করে নিলাম যে, সে মানুষের কাছে আমাকে তার ভৃত্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে এবং আমাকে তার কাজে কোথাও পাঠিয়েছিল সেখান থেকে ফিরেছি। ওহাবী নজদী সেভাবেই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।
আমি দু’বছর ওহাবী নজদীর সঙ্গে অবস্থান করেছিলাম। তার দাওয়াত প্রচারের বিষয়ে আমরা একটা কর্মসূচী নেই। শেষ পর্যন্ত হিজরী ১১৪৩ মোতাবেক ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে আমি তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হই। ওহাবী নজদী তার চারপাশে কিছু সমর্থক যোগাড় করে তার ঘনিষ্ট লোকজনদের মধ্যে দাওয়াত প্রচার করতে লাগলো। দিনে দিনে তার কার্যক্রম বাড়তে থাকলো। আমি তার চারপার্শে¦ দেহরক্ষীর ব্যবস্থা করলাম শত্রুর আক্রমণ মোকাবেলা করার জন্যে। তারা যা চাইতো সে রকম অর্থ এবং সম্পদ দিতে থাকলাম। যখনই শত্রুরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো আমি তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতাম। তার আহ্বান যত বাড়তে থাকে তত তার শত্রুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে সে তার এই দাওয়াতের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চাইতো। বিশেষত তার উপর ঘন ঘন আক্রমণ হতে দেখে ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি তাকে ছেড়ে কখনো যাইনি বরং তাকে উৎসাহিত করতে থাকি। আমি প্রায়শঃ বলতাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার চেয়ে অনেক বেশী কষ্ট সহ্য করেছেন। তুমি জেনে রাখ সে পথেই রয়েছে সম্মান ও প্রতিপত্তি। যে কোন বিপ্লবীদের মত তোমাকেও কিছু দুর্যোগ পোহাতে হবে।
আমি জানতাম তার উপর যেকোন মুহূর্তে শত্রুর আক্রমণ হতে পারে তাই শত্রুপক্ষের ভিতর গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিলাম। যখন শত্রু তার ক্ষতি করতে চাইতো, গোয়েন্দারা আমাকে জানিয়ে দিত এবং আমি তা প্রতিহত করতাম। একবার জানলাম, শত্রুরা ওহাবী নজদীকে মেরে ফেলার চেষ্টায় আছে। আমি তখনি তাদের সকল প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেয়ার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। যখন ওহাবী নজদীর চারপাশের লোক তাকে হত্যার প্রচেষ্টার খবর জেনে যায় তখন তারাও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের ঘৃণা ও নিন্দা করতে থাকে। এতে করে হত্যা লিপ্সু ব্যক্তিরা নিজেরা নিজেদের ফাঁদে আটকে যায়।
ওহাবী নজদী আমাকে অঙ্গীকার করেছিলো যে, স্কিমের ছয়টি ধারাই সে বাস্তবায়িত করবে। সে আরও বলে, কিছু সময়ের জন্য আমি ধারাগুলোর আংশিক বাস্তবায়ন করবো। সে তার সিদ্ধান্তে সঠিক ছিল কেননা সে সময় সবগুলো ধারা বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না।
সে উপলব্ধি করেছিলো যে, কা’বা শরীফ ধ্বংস করা সম্ভব নয়। ফলে কা’বা শরীফ মূর্তি সদৃশ্য (নাঊজুবিল্লাহ) এ ধারণাটি প্রচার থেকে সে বিরত থাকে। এ ছাড়াও কুরআন শরীফ পরিবর্তন করে ছাপানোর পরিকল্পনাও সে বাদ দেয়। মক্কা শরীফ-এর শরীফ বংশীয় লোকদের এবং ইস্তাম্বুলের শাসকদের ওহাবী নজদী সবসময় ভয় পেতো। সে বলতো আমরা যদি এ দু’টি কাজ করি তবে শক্তিশালী আর্মি দ্বারা আমাদের আঘাত করা হবে। আমি তার মতকে সমর্থন করেছিলাম কেননা সে সঠিক ছিল। কারণ পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে ছিল না। কয়েক বছর পর, কমনওয়েলথ মন্ত্রণালয়, দেরিয়ার আমির বিন সউদকে আমাদের পথে নিয়ে আসতে সক্ষম হই। তারা আমার কাছে বার্তা পাঠায় আমি যেন এই দু’ব্যক্তি (ওহাবী নজদী এবং বিন সউদ) এর মধ্যে পারস্পরিক মমতা এবং সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করি। মুসলমানদের হৃদয় জয় করার উদ্দেশ্যে আমরা ওহাবী নজদীকে ধর্মীয়ভাবে এবং বিন সউদকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাই।
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং প্রায়োগিক প্রচেষ্টায় বেশী শক্তিশালী হয়ে থাকে।
সবকিছুই ভালভাবে চলতে থাকে। প্রতিদিন আমাদের অবস্থান দৃঢ় হতে থাকে। কোন বিপর্যয় না ঘটলে আমরা আমাদের রচিত পথেই সাফল্যে পৌছবো। কেননা আমরা জানি আমাদের যা প্রয়োজন সেভাবেই বীজ বপন করেছি।
সতর্কতাঃ এই বইটি যিনি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন, তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন বৃটিশরাই ইসলামের চরম শত্রু এবং ভালভাবে জানতে পারবেন যে ওহাবী ফিরক্বা সারা দুনিয়াব্যাপি সুন্নী মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালিয়ে আসছে। ওহাবীরা বৃটিশদের দ্বারা সৃষ্ট এবং ক্রমাগত বৃটিশদের সমর্থন পেয়ে আসছে। এই বইটি প্রমাণ করে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার মানসেই বৃটিশরা ওহাবীদের সৃষ্টি করে। আমরা জানি খারিজী ওহাবীরা প্রতি দেশেই ওহাবী মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলে হেমপারের জবানবন্দী কারো লিখিত কাল্পনিক গল্পমাত্র। কিন্তু তারা এ দাবীর সমর্থনে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেনি। যারা ওহাবীদের রচিত বই পড়বে তারা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারবে যে, এই জবানবন্দী কত সত্য। ওহাবীরা ইসলাম ধ্বংসের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা যতই চেষ্টা করুক আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সত্যিকার মুসলমানদের কখনো নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। বরং তারাই নিশ্চিহ্ন হবে। কারণ আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এর সূরা ইসরার-এর ৮১নং আয়াত শরীফে সুসংবাদ দিয়েছেন “বলুন, সত্য এসেছে আর মিথ্যা ধ্বংস হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা ধ্বংস হওয়ারই যোগ্য।”
হেমপারের জবানবন্দী থেকে ভাষান্তর এ সংখ্যাতেই শেষ।
(বিঃ দ্রঃ- পরবর্তী সংখ্যা থেকে ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকার দ্বিতীয় খ- থেকে ভাষান্তর প্রকাশিত হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।)
ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে
[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিস্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রিস্টীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদের উপর তুর্কি ভাষায় রচিত মুহম্মদ আইয়ূব সাবরি পাশার “মিরাত আল হারামাইন” কিতাবের ইংরেজী অনুবাদ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ।
আরব উপদ্বীপটি যখন উমাইয়া (ঙঃঃড়সধহ) বংশের শাসনাধীন ছিল, রাষ্ট্র নির্ধারিত এক একজন কর্মকর্তা কর্তৃক প্রতিটি রাষ্ট্র শাসিত হত। পরবর্তীতে, হিযায ব্যতীত, প্রতিটি অঞ্চল যখন যে জবরদখল করতে পেরেছিল তারই আয়ত্বাধীনে এসে গিয়েছিল এবং শাসিত হয়েছিল রাজতন্ত্র হিসেবে। ১১৫০ হিজরীতে, ১৭৩৭ ঈসায়ী সনে ওহাবী নজদীর মাধ্যমে ওহাবি মতবাদ প্রচার লাভ করেছিল যা খুব অল্প সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করে দিয়েছেল এবং প্রচারিত হয়েছিল সমস্ত আরবে। পরর্বীতে, ইস্তাম্বুলের খলীফা, মুহম্মদ আলী পাশার নির্দেশে মিশরের শাসক তার অল্প সজ্জিত মিশরীয় বাহিনী দিয়ে আরবকে মুক্ত করেছিল।
১২০৫ হিজরীতে, (১৭৯১ ঈসায়ী সন) ওহাবী মতাবলম্বী আব্দুল আজিজ, মক্কার আমীর, শরীফ গালিব আফেন্দির বিরুদ্ধে প্রথমবারের মত যুদ্ধ ঘোষণা করে। এযাবৎ গোপনে তারা ওহাবী মতবাদ ছাড়িয়ে যাচ্ছিল, তারা হত্যা করেছিল অনেক মুসলমান পুরুষ, নারী ও শিশুদের। দাসত্বের শৃঙখলে আবদ্ধ এবং জবরদখল করেছিল তাদের সম্পদ-সম্পত্তিসমূহ।
ওহাবী নজদী ছিল বনী তামিম গোত্রের। ১১১১ হিজরী শতকে (১৬৯৯ ঈসায়ী সন) নজদ মরুর হুরাই-মিলা শহরের নিকটস্থ উআইনা গ্রামে তার জন্ম এবং মৃত্যু হয় ১২০৬ হিজরীতে (১৭৯২ ঈসায়ী সন)। প্রথম দিকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে সে গিয়েছিল বসরা, বাগদাদ, ইরান, ভারত এবং দামেস্ক। সেখানে সে তার চাতুরতা ও আগ্রাসী স্বভাবের জন্য “শেখ নজদি” খেতাব পেয়েছিল। এই অঞ্চলগুলি থেকে বহু অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভের ফলশ্রুতিতে একজন নেতা হওয়ার পরিকল্পনা আঁটতে শুরু করে সে ১১২৫ হিজরীতে, (১৭১৩ ঈসায়ী সন)। বসরাতে তার সাক্ষাৎ হয় একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার এর সঙ্গে। যে কিনা বুঝতে পেরেছিল যে, এই নাদান যুবকের (ওহাবী নজদীর) রয়েছে বিপ্লব ঘটিয়ে নেতা হওয়ার অভিলাষ। দীর্ঘদিনে সে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে। সে তাকে প্রলুব্ধ করেছিল সেসব শয়তানি আর শঠতায় যা সে “ব্রিটিশ মিনিস্ট্রি অব দি কমনওয়েলথ্-এর কাছে শিখেছিল। নজদির এসব প্রবঞ্চনার প্রতি এতো অনুপ্রেরণা দেখে সে তাকে একটি নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়। এজন্য এই গুপ্তচর এবং ওহাবী নজদী যা খুঁজছিল তা তারা পেয়ে যায়। তারা ভেবে দেখল, লক্ষ্য অর্জনে নতুন তরীকা বের করতে হলেও করতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনের প্রস্তুতি হি
১৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:৪৩
প্রীতম ব্লগ বলেছেন: (পরবর্তী অংশ)হিসেবে মনোযোগের সঙ্গে শুনতে থাকে, পবিত্র মদীনা শরীফের এবং দামেস্কের ‘হাম্বলী মাযহাবের উলামাগণের বক্তৃতাসমূহ। সে নজদে ফিরে গিয়ে গ্রামবাসীর জন্য ধর্ম বিষয়ে অনেক ছোট ছোট পুস্তিকা রচনা করে। সে লিখলো, যা সে ব্রিটিশ গুপ্তচরের নিকটে শিখেছিল এবং সংমিশ্রণ ঘটাল মু’তাজিলা ও অন্যান্য বিদয়াতিদের অপব্যাখ্যার ভ্রান্ত তথ্যসমূহ। বহু অশিক্ষিত গ্রামবাসী, বিশেষ করে দারইয়ার অধিবাসী এবং তাদের মূর্খ নেতা, ইবনে সউদ তাকে অনুসরণ করলো। আরবরা পুরুষানুক্রমিক বংশ মর্যাদার বিশেষত্বকে খুব মান্য করে এবং যেহেতু ওহাবী নজদি নিজে কোন সুপরিচিত’ পরিবারের লোক ছিল না তাই সে স্বীয় ত্বরীকা, যার নাম করণ করেছিল ‘ওহাবী’ মতবাদ। সে প্রচার কার্যে ইবনে সউদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। সে নিজেকে কাজী এবং ইবনে সউদকে হাবিস (শাসক) হিসেবে পরিচিত করেছিল। তারা তাদের শাসনতন্ত্রে পাশ করেছিল যে, উভয়ই কেবল তাদের সন্তানদের দ্বারা স্থলাভিষিক্ত হবে। ১৩০৬ হিজরীতে (১৮৮৮ ঈসায়ী সন) যখন ‘মিরআত আল-হারামাইন’ লেখা হয় তখন ইবনে সউদ বংশোদ্ভূত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ফয়সাল নজদ-এর আমীর এবং ইবনে ’আব্দুল ওহাব কাজী।
ওহাবী নজদীর পিতা ’আবদ আল-ওয়াহাব ছিলেন মদীনা শরীফ-এর একজন আল্লাহ ভীরু হক্কানী আলিম। ওহাবী নজদীর সহোদর সুলাইমান ইবনে ’আবদ আল-ওহাব এবং তার ওস্তাদগণ, মদীনা শরীফে তার ছাত্রাবস্থায় কথাবার্তা, আচরণ ও ধ্যান-ধারণা, যা সে প্রশ্নাকারে তাদের নিকট উত্থাপন করত; তা থেকে আশঙ্কা করেছিল যে, ভবিষ্যতে সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এবং ইসলামকে মূল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তারা তার ধ্যান-ধারণা সংশোধন করার জন্যে সৎ উপদেশ দিতেন এবং মুসলমানদেরকে তার ছোহবত এড়িয়ে চলতে বলতেন। কিন্তু অনতিবিলম্বেই তাদের সে শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিল (কিন্তু তারা বিপদের সম্মুখীন হলো যেই মূল বিষয়টি নিয়ে তাদের শঙ্কা হচ্ছিল।) এবং সে তার ভ্রান্ত মতবাদকে “ওহাবীবাদ” নাম দিয়ে খোলামেলাভাবে প্রচার করা শুরু করল।
কম সমঝ ও কম মেধা সম্পন্ন মানুষদেরকে বিপথগামী করার জন্য সে বিভিন্ন রকমের তথাকথিত কর্মসূচী সংস্কার এবং কথিত ইসলামী পুস্তকাবলী রচনা করে এগিয়ে আসে, যেগুলো ছিল আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদাভূক্ত আলিমদের মত ও পথের খিলাফ। সে প্রকৃত মুসলমান দল “আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-”এর আক্বীদাভূক্ত মানুষদের ‘অবিশ্বাসী ‘ বলে আখ্যায়িত করার মত ধৃষ্টতা দেখায়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা অন্যান্য নবী আলাইহিমুস্ সালাম অথবা আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলায় আল্লাহ্ তায়ালার নিকট থেকে কোন কিছু তলব করাকে অথবা মাযার শরীফ জিয়ারতকে সে শিরক বলে গন্য করত।
“ব্রিটিশ গুপ্তচরের কাছে নজ্দি শিখেছিল, যে কবরের নিকট গিয়ে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে সে মুশরিক। এমন মুসলমানগণকে সে কারাবন্দি করতো। যারা বলত যে, এই এই ওষুধে সুস্থতা লাভ করা যায়, অথবা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় আমি যা চেয়েছিলাম তা পেয়েছি- তাদেরকে ওহাবী নজদি কাফির বলতো।
ওহাবী নজদী তার মতের সপক্ষে যেসব দলীল পেশ করতো সেগুলো মিথ্যা আর অপবাদ ছাড়া কিছুই না। যে সকল মূর্খ লোক মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করতে পারতো না সে সকল অজ্ঞ, সূযোগ সন্ধানী, কাজ-কর্মহীন, জালিম প্রকৃতির লোকগুলো তার মতকে সমর্থন দিতে থাকে এবং হক্ব পথের অনুসারী সকল মুসলমানদের কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে।
ওহাবী নজদী তার বাতিল মতবাদ প্রচারের লক্ষ্যে দারিয়ার শাসকদের কাছে আবেদন করে। দারিয়ার শাসক তার রাজ্য ও ক্ষমতা বিস্তারের আশায় ওহাবী নজদীকে অতি উৎসাহের সঙ্গে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। তারা তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সর্বত্র তাদের ধারণা ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতে থাকে। যারা তাদের মতকে প্রত্যাখ্যান আর বিরোধিতা করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। ইবনে সউদের বাহিনীর পক্ষ থেকে যখন জানানো হলো মুসলমানদের মাল লুণ্ঠন করা এবং তাদের হত্যা করা হালাল তখন মরুভূমির পশুবৎ, লুণ্ঠনকারীরা ইবনে সউদের বাহিনীতে যোগদানের জন্যে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু করলো। ১৭৪৫ সালে, ইবনে সউদ এবং ওহাবী নজদী যুগপৎভাবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, যারা ওহাবী মতকে মেনে নিবেনা তারা হচ্ছে কাফির মুশরিক এবং তাদের হত্যা করা এবং তাদের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া জায়িয। ওহাবী নজদীর বয়স যখন ৩২ তখন থেকেই সে মনগড়া ইজতিহাদ রচনা করতে থাকে এবং তার চল্লিশ বছর বয়সে সেই মিথ্যা ইজতিহাদগুলো প্রকাশ করে।
ওহাবীদের আক্বীদা এবং মুসলমানদের উপর তাদের অত্যাচার সম্পর্কে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ ইবনে জায়নি দাহ্লাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি পবিত্র মক্কা শরীফের মুফতী ছিলেন তিনি তার “আল ফিতনাৎ আল ওহাবীয়া”তে বর্ণনা করেন। তিনি লিখেন, মক্কা ও মদীনা শরীফের উলামাদের বিভ্রান্ত করার মানসিকতায় ওহাবীরা সেখানে তাদের লোক পাঠায়। কিন্তু এ সকল লোকগুলো সেই সময়কালীন উলামাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি এবং পরবর্তীতে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ওহাবীরা হচ্ছে মূর্খ। লিখিত আকারে ওহাবীদের কাফির ফতওয়া দিয়ে তখন তা সর্বত্র প্রচার করা হয়। মক্কা শরীফ-এর আমীর শরীফ মাসুদ ইবনে সাঈদ, ওহাবীদের কারাগারে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। কিছু ওহাবী দারিয়ায় পালিয়ে যায় এবং সকল ঘটনার বিবরণ পেশ করে।
হিজাজের সকল মাজহাবের উলামাবৃন্দ, ওহাবী নজদীর ভাই মুহম্মদ সুলাইমান এবং তার শিক্ষকসহ সকলে ওহাবী নজদীর সকল বইগুলোর উপর গবেষণা করে ইসলামের জন্য ক্ষতিকর এবং বিবাদপূর্ণ লেখাগুলোর উত্তর প্রস্তুত করেন এবং মুসলমানদের সচেতন করার লক্ষ্যে তার বাতিল আক্বীদার বিরুদ্ধে দলীলসমৃদ্ধ কিতাব রচনা করেন। এই বইগুলো সে সময়ে খুব উপকারে আসেনি বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ওহাবীদের অসন্তোষ আরও তীব্র হয়ে উঠে। ইবনে সউদ উত্তেজিত হয়ে মুসলমানদের আক্রমণ করে আঘাত করে এবং রক্তপাত ঘটায়। সে ছিল বণী হানীফা গোত্রের, যার একটি শাখার মধ্যে এসেছিলো মিথ্যা নবী দাবিদার মুসায়লামাতুল কায্যাব। ইবনে সউদ মারা যায় ১৭৬৫ সালে পরে তার পুত্র আব্দুল আজিজ তার স্থলাভিষিক্ত হয়। ১৮০৩ সালে দারিয়ার একটি মসজিদে একজন শিয়া আব্দুল আজিজের পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। পরবর্তীতে তার ছেলে সউদ বিন আব্দুল আজিজ ওহাবীদের প্রধান নিযুক্ত হয়। এই তিন শাসক একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মুসলমানদের রক্তপাত ঘটায় এবং সমগ্র আরবে ওহাবী মতবাদ প্রচারের চেষ্টা চালায়।
ওহাবীরা বলে, ওহাবী নজদী তার চিন্তা ধারাকে প্রচার করেছিলো আন্তরিকতার সাথে মানুষের সঙ্গে আল্লাহ পাক-এর সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং মুসলমানদেরকে শিরক থেকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যে। তারা অভিযোগ করে ছয় শতাব্দী ধরে মুসলমানরা শিরকে লিপ্ত ছিল এবং ওহাবী নজদী তাদেরকে মুসলমান ধর্ম এবং আক্বীদাকে নবায়ন করতেই এসেছিলো। সে ৫ নম্বর, ১০৬ নম্বর, ১৪ নম্বর আয়াত শরীফ যথাক্রমে সূরা আল ক্বাফ, সূরা ইউনুস, সূরা আর রা’দ থেকে উদ্ধৃতি দিতো তার মতকে মুসলমানদের মাঝে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। যাই হোক এরকম কাছাকাছি অসংখ্য আয়াত শরীফ আছে এবং তাফসীরও আছে যে, আওলিয়ায়ে কিরামগণের সর্বসম্মত মত হলো “এ আয়াত শরীফগুলো হচ্ছে মূর্তিপূজক, কাফির এবং মুশরিকদের জন্য।”
ওলী আল্লাহ্গণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা আর কাফিরদের মুর্তির পূজার সাথে কোন মিল নেই। মুসলমান এবং কাফিররা গঠনে মানবাকৃতি এবং তারা উভয়ই মানুষ কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে মুসলমানরা আল্লাহ্ পাক-এর বন্ধু এবং চিরদিনের জন্য বেহেশতে অবস্থান করবেন অপর দিকে কাফিররা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের বাহ্যিক অবয়ব প্রমাণ করেনা যে তারা এক। যারা মুর্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর শত্রু এবং যারা আল্লাহ তায়ালার বন্ধুদের নিকট সাহায্য চায় তারা উভয়ই দেখতে বাহ্যিকভাবে একইরকম হলেও মুর্তির কাছে সাহায্যকারী যাবে দোযখে আর ওলী আল্লাহগণের কাছে সাহায্যকারী পায় আল্লাহ পাক-এর দয়া ও ক্ষমা। কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর রহমত ওলী আল্লাহগণের নিকটে”। আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “যেখানে ওলী আল্লাহগণের নাম মুবারক উল্লেখ করা হয় সেখানে রহমত বর্ষিত হয়”। সুতরাং যখন নবী এবং রসূল আলাইহিস্ সালাম এবং আওলিয়া কিরামগণের নিকট কিছু চাওয়া হয় তখন আল্লাহ পাক করুণা এবং ক্ষমা করেন।
মুসলমানগণ কখনো মনে করেনা যে, নবী আলাইহিস্ সালাম এবং ওলী আল্লাহগণের ইবাদত করতে হয় বা তারা আল্লাহ্ পাক-এর শরীক। মুসলমানগণ মনে করেন যে, ওলী আল্লাহগণ আল্লাহ পাক-এর মাহবুব বান্দা, যারা তাদের নিজেদের ইবাদত করার কথা কখনোই আশা করেন না। মুসলমান আরও মনে করেন যে তাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর বন্ধু। যাদের দুয়া আল্লাহ্ পাক কবুল করেন। সূরা মায়িদার ৩৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে “আমার কাছে পৌঁছার জন্যে তোমরা ওয়াসীলা তালাশ কর।”
এখানে বোঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ্ পাক তাঁর মাহবুব বান্দাগণের দুয়া কবুল করবেন। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ এবং কুনুজ-আদ-দ্বাকাইক-এ উল্লেখ আছে “বস্তুত আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তায়ালা এমন কয়েকজন তাঁর মাহবুব বান্দা তৈরী করেছেন যাঁরা কোন কিছুর জন্য প্রতিজ্ঞা করলে, আল্লাহ্ পাক তাঁদের ফিরিয়ে দেন না। মুসলমানগণ ওলী আল্লাহগণকে ওয়াসীলা হিসেবে মনে করেন এবং তাদের নিকট দুয়া এবং সাহায্য কামনা করেন যেহেতু তারা উপরের আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ বিশ্বাস করেন।
যদিও কিছু অবিশ্বাসী বলে যে, মুর্তিসমূহ সৃষ্টিকর্তা নয় বরং আল্লাহ্ পাকই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মূর্তিসমূহ উপাসনার যোগ্য একারণে যে, মূর্তিসমূহের কারণে মানুষের ইচ্ছাগুলি পূরণ হয়। তারা মূর্তিগুলোকে আল্লাহ্ পাক-এর শরীক মনে করে। যদি কেউ আল্লাহ্ পাক ভিন্ন অন্য কারো কাছে কোন সাহায্য কামনা করে এবং বলে যে, অবশ্যই তাকে সাহায্য করা হবে এবং যেকোনভাবেই তা ঘটবে যা আশা করা হয়েছে তবে সে ব্যক্তি কাফির হবে। কিন্তু যিনি বলেন “আমার ইচ্ছাগুলো কখনোই পূরণ হবেনা যদি আল্লাহ্ পাক ইচ্ছা না করেন” আল্লাহ্ পাক তাঁকে পছন্দ করেন।
তিনি একটি কারণ মাত্র। যদি কারো ইচ্ছা পূরণ হয় তাহলে তিনি আল্লাহ পাক-এর শুকরিয়া আদায় করেন। আর পূরণ না হলে তার তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকেন। অবিশ্বাসীদের মূর্তিপূজা আর ওলী আল্লাহ্গণের নিকট মুসলমানদের কিছু চাওয়া এবং তাঁদের ওসীলা তালাশ করা এক নয়। একজন জ্ঞানী সাধারণ বোধসম্পন্ন মানুষ কখনোই এই দুটো বিষয়কে এক করবেন না বরং পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন যে, বিষয় দুটো ভিন্ন। আল্লাহ্ পাক সকল উপকারী এবং অপকারী বিষয়সমূহ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ পাক ছাড়া আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়। কোন নবী রসূল, ওলী আল্লাহ্ কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারেন না। আল্লাহ্ পাক ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ্ পাক তখনই ক্ষমা প্রদর্শন করেন যখন কেউ তাঁর নবী বা রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, আওলিয়ায়ে কিরাম, ইবাদতকারী এবং তাঁর মাহবুব বান্দাগণকে ওয়াসীলা হিসেবে মনে করেন। আল্লাহ্ পাক ইচ্ছাগুলো পূরণ করেন। আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা প্রকাশ করেছেন এবং মুসলমানগণ তা বিশ্বাস করেন যা তাদের নিকট প্রকাশ করা হয়েছে।
মুশরিক এবং কাফিররা মনে করে, মূর্তিগুলো হচ্ছে তাদের প্রভু এবং উপাস্য। এই মূর্তিগুলোর কোন কিছু সৃষ্টি করার যোগ্যতা নেই জেনেও তাদের উপাসনা করে। মুশরিকদের কেউ কেউ এই মূর্তিগুলোকে উপাসনার উপযুক্ত মনে করে উপাসনা করে। আর কেউ কেউ এগুলোকে প্রভু মনে করে উপাসনা করে। তারা এ কারণে মুশরিক নয় যে, তারা মনে করে এ মূর্তিগুলো তাদের সুপারিশ করবে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে নিয়ে যাবে; বরং এ কারণেই মুশরিক যেহেতু মূর্তিগুলোকে তারা মা’বুদ মনে করে এবং এগুলোর উপাসনা করে।
নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেছেন, “ এমন একটি সময় আসবে যখন কাফিরদের প্রতি নাযিলকৃত আয়াতসমূহ মুসলমানদের মানহানি করার দলীল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।” তিনি আরও ইরশাদ করেন, “আমি একটি বিষয়ে বেশী শঙ্কিত যে, কিছু লোক এই আয়াত শরীফসমূহ ব্যবহার করতে চাবে সেই বিষয়ে, যে বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক আদেশ প্রদান করেননি।” এই দুটি হাদীছ শরীফ যা হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “লা মাযহাবীদের আগমন ঘটবে, যারা কাফিরদের বিষয়ে নাযিলকৃত আয়াত শরীফসমূহ মুসলমানদের উপর আরোপ করবে এবং কুরআনুল কারীম-এর তা’যীমের খিলাফ করবে।”
মুসলমানগণ তাদেরই মাযার শরীফ জিয়ারত করেন, যাদের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট রয়েছেন বলে বিশ্বাস করেন। মুসলমানগণ সে সকল মাহবুব বান্দাগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করেন। নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে দুয়া শিখিয়েছেন। তিনি মুনাজাতের মধ্যে বলতেন, “হে আমার রব! আপনি যাদের দুয়া এবং ইচ্ছাগুলো পূরণ করেছেন তাদের ওসীলা দিয়ে আপনার কাছে দুয়া করছি।” নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাহাবা আজমাঈনগণকে এভাবে দুয়া করতে শিখিয়েছেন, যাতে পরবর্তী মুসলমানগণ তা অনুসরণ করতে পারেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাতা হযরত ফাতিমা বিন আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর দেহ মুবারক কবরে রাখা হয় তখন তিনি দুয়া করেছিলেন, “হে আমার রব! আপনি ফাতিমা বিন আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে ক্ষমা করুন। উনার প্রতি অনুকম্পা করুন আপনার হাবীব-এর মুহব্বতের কারণে এবং আমার পূর্বে যে সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এসেছিলেন উনাদের মুহব্বতের কারণে।”
নবীদের নবী, রসুলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন অন্ধ ছাহাবীকে শিখিয়েছিলেন যিনি তাঁর দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেতে চেয়েছিলেন। দুই রাকায়াত নামায আদায় করে দুয়া করতে বলেছিলেন, “হে আমার রব! আমি আরজু করছি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়ে, মুহব্বত করে যাঁকে আপনি দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আমি বিনীত নিবেদন পেশ করছি “হে আমার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে ওসীলা করে মহান আল্লাহ পাক-এর কাছে আমি আরজু করছি মহান আল্লাহ পাক যেন আমার দুয়াগুলো কবুল করেন।”
যমীনে তাশরীফ আনার পর হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম দুয়া করেছিলেন, “হে আমার রব! হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় আমার দুয়া কবুল করুন।” মহান আল্লাহ পাক বলেন, “হে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম! যদি আপনি যমীন ও আসমানের সকল বিষয়ের জন্য আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়ে দুয়া করতেন তবে আমি আপনার দুয়া কবুল করতাম।”
হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বৃষ্টির জন্য দুয়া করার ওসীলা হিসেবে হযরত আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়েছিলেন এবং উনাদের দুয়া কবুল হয়েছিল। সেই অন্ধ ছাহাবীকে শেখানো দুয়া থেকে প্রমাণিত হয় যে, আওলিয়ায়ে কিরামগণের নাম মুবারক নিয়ে উনাদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা শরীয়তে জায়িয। ছাহাবা আজমাঈন এবং তাবিয়ীনগণের জীবনীতে অসংখ্য প্রমাণ আছে যে, মাযার শরীফ জিয়ারত করে, নাম মুবারক উচ্চারণ করে উনাদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা শরীয়তে জায়িয।
হযরত মুহম্মদ ইবনে সুলাইমান ইফেন্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি হযরত ইবনে হাজার আল হিতামিস রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ‘তুকফা’ (যা মিনহাজ’ কিতাবের ব্যাখ্যা) কিতাবের টীকা লিখে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি অসংখ্য দলীল আদিল্লা দিয়ে প্রমাণ করেন যে, ওহাবী নজদী বাতিল মাযহাব এবং আক্বীদার অনুসারী ছিল এবং অনেক আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এর মনগড়া ব্যাখ্যা করেছিলো। তিনি লিখেছিলেন, “হে ওহাবী নজদী! আল্লাহ পাক-এর কসম দিয়ে আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, মুসলমানদের অপবাদ দিয়োনা। কেউ যদি বলে, আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা আছেন তাদেরকে নছীহত কর। তাদেরকে দলীলের মাধ্যমে সরল সত্য পথে পরিচালিত কর। মুসলমানদের কাফির বলো না। তুমি নিজেও মুসলমান। সকল মুসলমানকে কাফির বলো না। এটা সত্য, যে সত্য পথ থেকে সরে আছে সে বিপদগ্রস্ত। সূরা নিসার ১১৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যে কেউ আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে হক্ব পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফিরাবো, যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর তা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।” এই আয়াত শরীফ-এ যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা থেকে সরে যাবে তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে।
অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যা প্রমাণ করে মাযার শরীফ যিয়ারত করা জায়িয এবং কল্যাণকর। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রায়শই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওযা শরীফ যিয়ারত করতেন। যিয়ারতের নিয়ম কানুন এর উপর অসংখ্য কিতাবও রচিত হয়েছে।
একজন ওলীআল্লাহকে ওসীলা করে দুয়া করা, উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করে সাহায্য চাওয়া কখনো ক্ষতিকর নয়।
মুসলমানগণ আল্লাহ পাক-এর মাহবুব বান্দার কাছে আরজি করেন, তাঁকে ওসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন, যেন তিনি মধ্যস্থতা এবং দুয়া করেন। মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক-এর কাছেই চান। কুরআন শরীফ-এর সূরা মায়িদার ২৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক বলেন, “আমি তাঁদের দুয়া কবুল করি যাদের আমি পছন্দ করি।” কারো অভিলাষ পূরণের জন্য ওলী আল্লাহগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা শরীয়সম্মত। ইস্তিগাছা, ইস্তিসফা, তাওয়াস্সুল এ সকল শব্দের অর্থ হচ্ছে, ওসীলা তালাশ করা।” কেউ যদি বলে আমি ঐ কারণে, এই জিনিস পেয়েছি। এর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক ঐ জিনিস পেতে ঐ কারণটি তৈরি করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, কেউ যদি বলে ঐ ওষুধটি আমার ব্যথা সারিয়েছে, অথবা সুপটি আমাকে তৃপ্ত করেছে বা পানি আমার তৃষ্ণা মিটিয়েছে এখানে সবগুলো বিষয় হচ্ছে কারণ বা উপলক্ষ।
এটা মনে রাখা জরুরী যে, মুসলমানগণ যারা এরকম উদ্ধৃতি দেন তাদের বিশ্বাস একইরকম। ফলে এ রকম বিশ্বাসে বিশ্বাসী কখনো কাফির হতে পারে না। ওহাবীরাও বিশ্বাস করে যে যারা তাদের নিকটে থাকেন এবং জীবিত আছেন তাদের কাছে চাওয়া শরীয়তসম্মত। তারা তাদের চাওয়া, পাওয়া পূরণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাগণের নিকট চায়। শুধু তাই নয় তাদের অভিলাষ পূরণের জন্য কর্মকর্তাদের বিশেষ খাতিরও করে।
ওহাবীরা মনে করে যারা ইন্তিকাল করেছেন বা দূরে আছেন তাদের কাছে চাওয়া শিরক। কিন্তু যারা জীবিত আছেন তাদের কাছে চাওয়া শিরক নয়। যাই হোক, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আলিমগণের কাছে পরেরটি (জীবিতদের কাছে চাওয়া) যেহেতু শিরক নয় প্রথমটিও (ইন্তিকালপ্রাপ্তদের কাছে চাওয়া) শিরক নয়। কেননা উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। প্রত্যেক মুসলমান ইসলাম ও ঈমানের মূল আক্বীদা বিশ্বাস করেন আর তা হলো, যা ফরয তা ফরয, আর যা হারাম তা হারাম।
এটা নিশ্চিত যে, প্রত্যেক মুসলমান বিশ্বাস করেন আল্লাহ পাক সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তিনি ছাড়া আর কেউ কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন না। যদি কোন মুসলমান বলে, আমি এখন নামায পড়বো না, এতে বোঝা যাবে যে তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন তিনি ঐ সময় বা ঐ স্থানে নামায পড়বেন না অথবা তিনি ইতোমধ্যেই নামায আদায় করেছেন।
কেউ তাকে দোষারোপ করতে পারবে না, অপবাদ দিতে পারবে না যে, তিনি আসলে নামায পড়তে চান না। ঐ ব্যক্তিকে যেমনি কাফির, মুশরিক বলা থেকে মুসলমানদের বিরত থাকতে হবে তেমনি যারা মাযার শরীফ যিয়ারত করেন এবং ওফাতপ্রাপ্ত আওলিয়ায়ে কিরামগণের কাছে সুপারিশের জন্য দুয়া চান এবং “আমার ঐ দুয়াগুলো যেন কবুল হয়” বা বলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্য সুপারিশ করুন।” এতে বোঝা যায় মুসলমানগণের এরকম শব্দ ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত, সৎ নিয়তযুক্ত।
ওহাবী নজদীর বিশ্বাস এর প্রচারণাসমূহ সমূলে উৎপাটন করা হবে পূর্ণ ইলম এবং প্রজ্ঞার দ্বারা। বহু কিতাব রচিত হয়েছে যেখানে প্রমাণ করা হয়েছে ওহাবী নজদী ভুল পথে ছিল এবং মুসলমানদের অপবাদ দিয়েছিল। এছাড়াও ইসলামের মধ্য থেকেই ইসলামের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেছিল। ইয়েমেনের একজন প্রখ্যাত মুফতী সাইয়্যিদ আব্দুর রহমান (রহমতুল্লাহি আলাইহি) লিখেন যে, একটি হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতিই যথার্থ হবে যা প্রমাণ করে ওহাবী নজদী ভুল পথে ছিল। “আরবের পূর্ব দেশ থেকে একটি সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হবে, তারা কুরআন শরীফ পড়বে যা তার গলার নীচে নামবে না। তারা ইসলামকে ত্যাগ করবে, যেমনি ধনুক থেকে তীর ছুটে যায়। তারা দাড়ি মু-াবে।” তাদের মু-িত চেহারাগুলো স্পষ্ট প্রকাশ করবে যে এরা ওহাবী নজদীর অনুসারী এবং ভুল পথে চালিত। এই হাদীছ শরীফ জানার পর আর অন্য কোন কিতাব পড়ারও প্রয়োজন পরে না। ওহাবী নজদীর কিতাবে নির্দেশ দেয়া আছে যে, তার অনুসারীরা মাথা এবং মুখের অংশবিশেষ মু-াবে। এরকম নির্দেশ ৭২ ফিরকার অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে নেই।
ওহাবী নজদী মহিলাদের মাথা মু-নের নির্দেশ দিয়েছিল। একজন মহিলা জবাব দিয়েছিল, “পুরুষের দাড়ির মত মহিলাদের মাথার চুল তাদের অলঙ্কার। আল্লাহ পাক যে অলঙ্কার দিয়ে মানুষকে ভূষিত করেছেন মানুষের পক্ষে তা ত্যাগ করা কি উচিত হবে?” ওহাবী নজদী এর কোন প্রতি উত্তর দিতে পারেনি। যদিও আব্দুল ওহাব নজদীর অসংখ্য বাতিল আক্বীদা রয়েছে তবে তার মধ্যে তিনটি প্রধান-
১. সে শিখিয়েছিল, আমল ঈমানের অংশ এবং যদি কেউ কোন ফরযকে বাদ দেয়, যেমন কেউ যদি কখনো অলসতার কারণে নামায আদায় না করে অথবা কোন বছর কৃপণতা করে যাকাত আদায় না করে, যদিও সে বিশ্বাস করে নামায আদায় এবং যাকাত দেয়া ফরয, তথাপি সে কাফির হবে। সে ব্যক্তিকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে এবং তাদের সম্পত্তি ওহাবীদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে।
২. ওহাবীরা বিশ্বাস করে, নবী আলাইহিমুস সালাম এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা শিরক। কোন বিপদ থেকে রক্ষা বা কোন ইচ্ছা পূরণের জন্য নবী আলাইহিমুস সালাম এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণের কাছে চাওয়াও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তারা বলে, ‘দালায়েল আল খায়রাত’ বইটি পড়া নিষিদ্ধ।
তারা আরও বিশ্বাস করে কোন কবরের গম্বুজ নির্মাণ করা এবং সেখানে যারা গিয়ে দুয়া কালাম পড়ে বা খিদমত করে তাদের উদ্দেশ্যে বাতি জ্বালানোও শিরক। ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে কোন হালাল পশু কুরবানী করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তাদের দৃষ্টিতে এরকম কাজ করা হচ্ছে আল্লাহ পাক ভিন্ন অন্য মানুষের ইবাদত করা। যখন সউদ বিন আব্দুল আযীয মক্কা শরীফ এবং মদীনা শরীফ-এ প্রবেশ করে তখন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মুবারক ব্যতীত সকল ছাহাবা আজমাঈন ও আহলে বাইত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং সকল শহীদগণ-এর মাযার শরীফ-এর উপর যত গম্বুজ ছিল তা সব ধ্বংস করে দিয়েছিল। (নাউযুবিল্লাহ)
মাযার শরীফগুলো তখন চিহ্নহীন হয়ে পরে। যদিও তারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মুবারক-এর গম্বুজও নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু যারাই কুড়াল হাতে নিয়েছিল তাদের কেউ পাগল হয়ে যায় এবং কারো শরীর অবশ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কেউ আর সেই ঘৃণিত অপরাধ করতে সক্ষম হয়নি। ওহাবীরা যখন মদীনা শরীফে অবস্থান নেয় তখন ইবনে সউদ মুসলমানদের জড়ো করে তাদের অপবাদ দেয় এবং বলে, তোমাদের ধর্ম আজকে থেকে ওহাবী মতবাদ দ্বারা পূর্ণ করা হলো এবং আল্লাহ পাক তোমাদের উপর সন্তুষ্ট। তোমাদের পিতারা ছিল কাফির এবং মুশরিক। তাদের ধর্ম অনুসরণ করো না। প্রত্যেকে বলো যে, তারা কাফির ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মুবারক-এর সামনে দাঁড়ানো এবং উনার কাছে কিছু আরজু করাকে নিষিদ্ধ বলে ওহাবীরা ফতওয়া দেয়। (নাঊযুবিল্লাহ) ওহাবীরা আরও বলে, শুধু রওজা মুবারক-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলতে হবে, ‘সালাম ইয়া মুহম্মদ’ সুপারিশ করার তিনি কেউ নন। (নাঊযুবিল্লাহ)।
প্রথম ওহাবী মিশন:
আব্দুল আযীয নিষ্ঠুরভাবে মুসলমানদের হত্যা করে শুধু ওহাবী মতবাদ প্রচারের লক্ষ্যে। সে ১২১০ সালে (১৭৯৫) মক্কা শরীফ-এ তিনজন ওহাবীকে পাঠায়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের উলামাগণ কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে উত্তর প্রদান করেন। পক্ষান্তরে ওহাবীরা কোন উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি। ওহাবীরা সত্য স্বীকার করা ভিন্ন অন্য কোন পথ খুঁজে পায়নি। তারা একটি দীর্ঘ ঘোষণা দেয় এবং স্বাক্ষর করে যে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত এর পথটি সঠিক এবং তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে, যে পথ স্বাভাবিক নয়। কিন্তু আব্দুল আযীয তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। কারণ সে তখন একটি রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের পেছনে দৌড়াচ্ছিল এবং নেতা হবার স্বপ্নে হৃদয়কে পূর্ণ করেছিল। ধর্মের আড়ালে সে মুসলমানদের উপর জুলুম বাড়িয়ে দিয়েছিল।
তিন ওহাবী মক্কা শরীফ-এর মুসলমানদের বুঝাবার লক্ষ্যে ২০টি বিষয় উপস্থাপন করে। সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উপরের তিনটি বিষয়ে মধ্যে স্থান পায়। ওহাবী নজদী বলেছিল যে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ইজতিহাদ করেন যে, ইবাদত ঈমানের একটি শাখা কিন্তু ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সকল ইজতিহাদ লিপিবদ্ধ ছিল এবং মক্কা শরীফ-এর উলামাদের তা বিস্তারিত জানা ছিল। সুতরাং উনারা সহজেই ঐ তিনজন ওহাবীকে বুঝাতে সক্ষম হন যে ওহাবীদের এ ধরনের অপবাদ মিথ্যা।
ঐ তিন ওহাবী তাদের ধারণায় বদ্ধমূল ছিল যে তাদের ওহাবী আক্বীদাই সত্য। তারা বলতে থাকে, মক্কা শরীফ-এর মুসলমানগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রওজা মুবারক, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত মাহযুব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ যিয়ারত করেন এবং বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ও ইবনে আব্বাস ও মাহযূব (মাহযূব হচ্ছেন সাইয়্যিদ আব্দুর রহমান যিনি সেই সময়ের প্রখ্যাত আলিম ছিলেন। ১২০৪ (১৭৯০) সালে তিনি ইন্তিকাল করেন এবং মুয়ালা কবরস্থানে শায়িত আছেন।) ওহাবীরা আরও বলে আমাদের ইমাম ওহাবী নজদীর ইজতিহাদ অনুযায়ী যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ’ বলে কিন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করেন তবে তারা কাফির হয়ে যান। এক্ষেত্রে তাদের হত্যা করা এবং তাদের সম্পদ দখল করা শরীয়ত সম্মত। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের উলামারা তার প্রতি উত্তরে বলেন, আল্লাহ পাক-এর মাহবুব বান্দাগণের মাযার শরীফ যিয়ারত করা, উনাদের ওসীলা দিয়ে দুয়া করার অর্থ উনাদের ইবাদত করা নয়। যিয়ারতকারীরা তাদের ইবাদত করার উদ্দেশ্য নিয়ে যিয়ারত করে না বরং তাদের ওসীলা করে আল্লাহ পাক-এর কাছে দুয়া করেন। তারা দলীল দিয়ে প্রমাণ করেন যে, এটি শরীয়তসম্মত এমনকি প্রয়োজনীয়ও বটে।
১৭| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮
মুদ্দাকির বলেছেন: আবারো পড়তে হবে , মন্তব্য সহ পড়তে হবে
১৮| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: @লেখক..এদের যতই বোঝান এরা বুঝবেনা। কারণ এদের অন্তকরণ মোহারাঙ্কিত!!! এরা বধির! অন্ধ!
সউদি শয়তানসের দোসররা আল্লাহর নেয়ামত তেলের পয়সা দিয়ে সারা বিশ্বে যে অপকর্ম করতেছে তার প্রতিফল তারা এই দিনয়াতেই পেয়ে যাবে। এইতো কিছূ সময় মাত্র!
মহাকলের কাছে ৬০-১০০ বছরতো নস্যি মাত্র!
বিশ্বাসী মাত্র পরকাল এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। তাদের আচরনেও কোরআনে সুস্পষ্ট বর্ণিত-
তারা বিশ্বাসীদের প্রতি কোমল, কাফের মুশরিকদের প্রতি কঠোর।
এইবারের গাজা হামলায় শহীদ ২০০০ জনের বিনিময়ে বিশ্ব অনেক বড় সত্য জানতে পারল। তাদের আত্মদান আল্লাহ কবুল করুন।
আর আল্লাহ আমাদের একজন সৎ, সত্য আহলে বাইয়াতের যোগ্য নেতৃত্ব দান করুন যিনি সারা বিশ্বে বিশ্ব মুসলিমদের নেতা হয়ে প্রকৃত সত্যের বিজয়ে নেতৃত্ব দেবেন।
১৯| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৬
টয়ম্যান বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ।
২০| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২১
সোহানী বলেছেন: কি বলবো বুঝতে পারছি না। আপনার লিখা অনেকটা শক্ এর মতো লাগলো। যে সৈাদিকে আমরা ধর্মের প্রধান ধারক বা বাহক বলি সেখানেই গলদ !!!! সত্যিই তো.... ইসলামতো বংশ পরম্পরায় শাসক তৈরী করতে বলেনি বলেই তো খলিফা ছিল। এবং কোন খলিফারই বংশধর পরবর্তী শাসক হয়নি তাহলে সৈাদিতে কেন?????? তারা কোথা থেকে রাজা হলো..... বংশ পরম্পরা রাজা হচ্ছে তা কিভাবে এলো।
যদিও এটি আমার খুব আগ্রহের বিষয় নয় তারপর ও অনেক দিনের পুরোনে জানাকে নতুন করে জানছি বলে ধাক্কা খাচ্ছি।
২১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৫
ইমরান আশফাক বলেছেন: নজদের ব্যাপারে আপনার কিছু অভিমত খটকার মত লাগলো, এই যে নজদের অধিবাসীদের নবীজি যে নেক নজরে দেখতেন না এটা কিন্তু আমি আগে কোথাও পাইনি। তাছাড়া আপনাকে কিছুটা মাজার অনুরাগী বলেই মনে হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন সুত্র উল্লেখ করেন নাই, মনে হলো পোস্টটা বিস্তৃত হয়েছে অনেকটা মনগড়া ভাবের দ্বারা।
২২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০৪
রাসেল সরকার বলেছেন: দ্বীনের কেন্দ্রস্থল তথা কেবলাভূমি সৌদী ওহাবী গোত্রবাদ দ্বারা অবরুদ্ধ হওয়া মানে বিশ্ব মুসলিম পরাধীন হয়ে যাওয়ার নামান্তর । তাই অবিলম্বে সকল মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনের কেন্দ্রস্থল হতে ওহাবীবাদকে উৎখাত করা প্রত্যেক ঈমানী ভাইবোনের ঈমানী দায়িত্ব
২৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৯
লাজুক আনন বলেছেন: সত্যের মোকাবিলায় শয়তান সবসময় সোচ্চার।তবে আমরা জানিনা প্রকৃত শয়তান কারা। এটা যদি জানতে পারা যেত তাহলে এত ফেতনা ফেসাদ সৃষ্টি করা শয়তানের পক্ষে সম্ভব হতো না। হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে আলোর পথ দেখাও।সত্য জানার তৌফিক দাও। যাতে আমরা শয়তানের মোকাবেলায় নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে পারি। আমিন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৮
আহেমদ ইউসুফ বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত তথ্যবহুল পোষ্টের জন্য। সত্য অনুসন্ধ্যানে যেন আপনি কখনোই নিবৃত্ত না হন সে কামনা করছি। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।