নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মান্ধাতার ভাসমান শ্যাওলা এক! ভাসমান এই শ্যাওলাকে ফেসবুক, ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে পাবেনঃ Kb Mahbub Khan এই নামে। শ্যাওলার সম্বল ছাইপাঁশ লেখা, আবৃত্তি, বাঁশের বাঁশি আর যখন তখন মুখে এক চিলতে হুদাই মার্কা হাসি!

মাহবুবুর রহমান টুনু

মাহবুবুর রহমান টুনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গেঁয়ো শীতঃ ০১; সিনেমা দেখা!

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৪৮



বর্ষাকাল আমার খুব ভাল লাগে না, ঝামেলার মনে হয়, শুধুমাত্র যে দিনটা বেকার থাকি, সেই দিনটায় ভাল লাগে, সেটারও প্রথম কারন ঘুম আর দ্বিতীয় কারন মনের ভেতর কেমন একটা প্রেম প্রেম খেলা খেলে যায়, প্রেমিকা না থাকলে, ও খেলাও শালা বৃথা; তবে কবিদের ব্যাপার আলাদা। বসন্ত ঋতুটা আসলে মানুষের থেকে সম্ভবত পশু পাখিদের কাছে প্রিয় বেশী, এর কারন হলো এই ঋতুটা এদের মিলনের মোক্ষম সময়, এই ঋতুতেই পশু পাখিরা সব থেকে বেশী বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে। আমি এবং আমার মত যারা গেঁয়ো ছেলেপুলে আছে, অর্থাৎ যারা বড় হয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে, তাদের কাছে শীতকালটাই সম্ভবত সবথেকে প্রিয় বেশী। কেন প্রিয় মূলত সেটাই তুলে ধরবার জন্য এই লেখা। লেখার মান যাই হোক, আমি নিশ্চিত এই লেখা অনেককেই তাদের ফেলে আসা কিছু রঙ্গীন দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আজকে প্রথম পর্ব তাই ভূমিকা লিখতে হলো। আজ লিখব শীতে সিনেমা দেখার স্মৃতি নিয়ে।
.
অন্যসব সময়ের থেকে শীতকাল এলেই গ্রামে ছেলেপুলেদের সিনেমা দেখতে যাবার ধুম পরে যেত, এর অন্যতম প্রধান কারন হল চুরি করা সহজ হতো আর প্রচন্ড কুয়াশা। চুরি করা সহজ হতো কীভাবে বলি, শীতের সময় ভারী ভারী সব শীতের কাপড় পরতাম আমরা, দুই তিন কেজী চাল জ্যাকেট বা সোয়েটার অথবা চাদরের আড়ালে আনায়াসে চালান করে দেয়া যেত, কেউ সহজে সন্দেহ করতে পারত না। সেই চাল বিক্রি করা টাকা দিয়েই সিনেমা দেখা হতো সিংহভাগ ছেলেদের, এর বাইরে কেউ কেউ টিফিনের টাকা, কেউবা বাবার পকেট মেরে, কেউবা টিউশনি পরীক্ষার ফি এর কথা বলে বলে টাকা সংগ্রহ করত। যেদিন সিনেমা দেখতে যেতাম, সেদিন মোটামুটি ২০ থেকে ৩০ জন করে একসাথে যেতাম, দু চারদিন আগে থেকেই প্লান করা থাকত, এরপর নির্দিষ্ট দিনে যাত্রা শুরু, হাঁটা শুরু করলে মনে হতো যেন একটা মিছিল! হাতে জলিল বিড়ি, কত শত গল্প (সব ১৮+), এর লুঙ্গি ধরে টান, ওর চাদর নিয়ে টানা হাচরা, কত কি যে! আহা! বলে রাখি, আমাদের গ্রাম থেকে সিনেমা হলের দূরত্ব ছিল মোটামুটি চার মাইল, শর্টকাট রাস্তায় গেলে সেটা ৩ মাইলের মত প্রায়! শর্টকাট রাস্তায় গেলে যেতে হতো লোকেদের ধানক্ষেত, সবজিক্ষেত মাড়িয়ে, এর জন্য কতবার যে কত লোকের দৌড়ানি খেয়েছি সে হিসেব মেলা ভার।
.
মেইন রোড দিয়ে গেলে তো মহা বিপদ, রাতের বেলা গ্রামের অনেক পরিচিত লোকেরা বাজার সওদা করে বাড়ি ফিরত, তাদের ভেতর একজনও যদি আমাদের ভেতরের একজনকেও দেখেছে তো পরদিন সকালে ২০/৩০ জনের একজনেরও রক্ষা নাই, একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় অনেকবার এমন হয়েছে যে হুট করে সামনে গ্রামের পরিচিত কাউকে চোখে পড়ল, অথবা এমন হতো যে, তিনি পরিচিত নন তবু পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে, তখন ভয়ে আমরা কি করতাম; কেউ কেউ রাস্তার ধারের কোন খালে লুকিয়ে যেত, কেউবা কারো বাড়ির পিছনে, কেউ গাছের আড়ালে, আর যারা এসবের কিছুই করার সময় পেত না, সে সোজা সাপ্টা পাছার কাপড় তুলে রাস্তার পাশের ক্ষেতের আলে বসে পড়ত প্রাকৃতিক কর্ম সাড়ার ভান করে! পাছার কাপড় তুলতে লজ্জার কিছুই নাই কারন আর একটু এগোলেই সিনেমা হলের খুব কাছে একটা বিল আছে, সেখানে সবাইকেই লুঙ্গি বা প্যান্ট খুলে মাথায় নিতেই হবে। তখন ব্রীজ ছিল না, আমরা সেই বিলটা এভাবেই পার হতাম, সবাই, কারোরই রক্ষা নাই। ঐ বিল বাদেও অন্য রাস্তা ছিল, তবে ধরা পরার সম্ভাবনা ছিল শতভাগ!
.
তখন সিনেমা হলগুলি আজকের মত ছিল না, এখন তো বন্ধই হয়ে গেছে বলা যায়। তখন একদম লোকে লোকারণ্য ছিল সিনেমা হলগুলি। টিকেট কিনতে যেয়ে ছোট্ট একটা জায়গা দিয়ে একবারে ৮/১০ জনের হাত ঢুকিয়ে দিতে হতো, সে সময় এমন একজনকে টিকেট কিনতে দেয়া হতো যার হাতের ছাল উঠে গেলে বা কেটে গেলেও বাসায় কেউ জিগ্যেস করবে না বা সন্দেহ করবে না। ১৫/১৬ টাকায় ফার্স্ট ক্লাস এর টিকেট, ঝালমুড়ির ঝাঁঝালো গন্ধ, ৭/৮ পদের জর্দায় পান, কেটু সিগারেট, সিট স্বল্পতার জন্য সিট নিয়ে অন্য গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে মারামারি, আহা! কীভাবে ভুলি সেই দিনগুলি। কয়দিন হলো? মাত্র তো কটা বছর, আমরা তো এখনো বুড়ো হওয়া তো দূরে থাক, বিয়েই করি নাই অথচ; সময়? কত দ্রুত বদলে যাচ্ছে, উল্টে পাল্টে সেই রঙিন দিনগুলিকে তছনছ করে দিচ্ছে!
সিনেমা দেখে বাড়িতে ফিরবার পর সকালের চিত্র যদি এমন হতো যে; হুট করে কোন বড় ভাই বা চাচা সামনে এসে বলতেছে, “কীরে টুনু মিয়া, বড় হয়ে গেছিস না? মনে হয় আমরা কিছু জানিনা?” তখন আর বুঝতে বাকী থাকত না যে আমাদের টিমের ভেতর অবশ্যই একজন ধরা পরেছে এবং তার যথেষ্ট ধোলাই হচ্ছে! আমার বাসাতেও যে একটু পরেই জেনে যাবে সেটা বুঝতে বেশী দেরী নাই কারন যে ধরা পড়ত সে মাইরের ঠেলায় বাকিগুলার নাম বলে দিতে বাধ্য। তখন আমাদের বেশীরভাগ ছেলেরা করতাম কি, বাসায় জানার আগেই দু তিনটা জামা কাপড় স্কুলের ব্যাগে ঢুকিয়ে নানু, ফুপু বা খালামনির বাসায় দৌড় দিতাম। দু তিনদিন পর খালু, ফুপা বা নানু এসে বাবা মাকে বুঝিয়ে রেখে যেত!
.
সেই দিনগুলি আর নাই। প্রত্যন্ত কোন গ্রামেও নাই। এমনকি নদীর ওপারের কোন চরেও নাই। আর কখনো কোনদিনও আসবে না। আমাদের বয়সে, আমাদের সময়ে আমাদের দিন ছিল এরকম, এখন প্রত্যন্ত গ্রামে ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চাও তার অবসর কাটায় মোবাইলে গেমস খেলে, ফেসবুকিং করে, ইউটিউবে হলিউড মুভি দেখে! সারাদিন বিছানা আর পড়ার টেবিল! সেই জন্য আমি সবসময়ই বলি যে আমরা সত্যিই অনেক বেশী ভাগ্যবান যে এই সময়ে আমাদের জন্ম হয় নাই। আমরা গ্রামে থেকে, গ্রামীণ শৈশব এবং কৈশোরটাকে পেয়েছি একদম শতভাগ। সবসময়ই আমি নিজেকে মান্ধাতার এবং গেঁয়ো পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি, সবসময় নিজের শেকড়ের ভাষাটাকে আঁকড়ে থাকবার চেষ্টা করি, অনেকেই অনেক সময় বলেন যে; তুমি তো আবৃত্তি চর্চা কর, এভাবে কেন কথা বল? ওভাবে কথা আসলে আমি বলি না, কথাই আমাকে বলায়! ঐ শেকড়ে যে কি সুখ, কত আনন্দ সে আমি লিখে বুঝানো একেবারেই সম্ভব না। সেইসব দিনের কথা মনে হলে এখন নিজেকে মনে হয় অন্য দেশের মানুষ; স্বপ্ন দেশের মানুষ!

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছু বদলে যায়। এটাই অলিখিত নিয়ম।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৪

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: তাই
মনেরে আজ কহো যে
ভাল মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে!!

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম আপনি শেষে এসে সেটা বলে দিয়েছেন!
সত্যি এখনকার ছেলে-মেয়েরা আমাদের সময়টাকে কল্পনাও করতে পারবে না।
সবাই ভার্চুয়াল হয়ে যাচ্ছে।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আসলেই, দিনগুলি যে খুব অতীতের সেও কিন্তু না। কেমন যেন ঝড়ের গতিতে বদলে যাচ্ছে সব। কি সুন্দর দিন ছিল। হৈ হুল্লোড়ে বেলা কেটে যেত, খিদে টেরই পেতাম না!

৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১২

মা.হাসান বলেছেন: অনেক থানা শহরেই এখন আর সিনেমা হল নাই। আমি যে জেলায় বড় হয়েছি সেখানে ৪টা হল ছিল, এখন ১ টা আছে । অনেক কিছুই বদলে গেছে, কিছু পরিবর্তন ভালো লাগে, কিছু খারাপ লাগে, এটাই বেচে থাকা।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৪

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আমার বাড়ি যে থানায়, একসময় সেই একটি থানাতেই সিনেমা হল ছিল ৪ টি। এখন শুধু ১ টা আছে, সেও শুধু দুই ঈদে চালু হয়! আর বাকিগুলো গোডাউন বনে গেছে! ফুরিয়ে যাওয়া দিন গুলি অথবা ভাল লাগা গুলি আর ফিরবে না।

৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০১

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: শৈশবের দিনগুলি অনেক বেশী মিস করি। :(

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১৬

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: সে আর বলতে! আমরা সেইসব দিনগুলি যেভাবে পেয়েছি, সেগুলি এখন কল্পনারও বাইরে! প্রভা আপনাকে ধন্যবাদ।

৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ব্লগে স্বাগতম।

আপনি কখন আসলেন, সেফ হয়ে গেলেন অথচ আজই প্রথম আপনার লেখা পড়লাম।

স্মৃতিময় লিখা ভাল লাগলো। সিনেমা নিয়ে কত স্মৃতি যে আছে আমাদের.................

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫২

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আমি অবুঝ, এখনো তেমন জানি না যে সেফ হলে সকলকে খুশির সংবাদটি জানিয়ে দিতে হয়। সে যাহোক, নিরাপদ যখন হয়েছি, তখন আছি আপনাদের সাথে। ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
বেশি বেমি মন্তব্য করবেন তাহেলে দেখবেন সবাই আপনাকে জানছে

এবং আপনার পোস্টও পড়ছে। এগিয়ে যান।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০০

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি অবশ্যই চেষ্টা করব মন্তব্য করবার।

৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩০

ফয়সাল রকি বলেছেন: পঞ্চাশ বছর আগে কিন্তু চিত্রটা অন্যরকম ছিল!
চালিয়ে যান। লিখতে থাকুন।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০২

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরেও আজকের চিত্রটা ভিন্ন বনে যাবে, অকল্পনীয় বনে যাবে। লেখা অব্যাহত থাকবে। ধন্যবাদ রকি ভাই।

৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: নব্বইয়ের দশকে জন্মানোর মজাটাই আলাদা। আমার শুরু কুকুর-মাথা গ্রামোফোন দিয়ে.............।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৪

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: একদম! আমাদের সৌভাগ্যই বটে! সেই দিনগুলি ভুলবার মত নয়। অমন দিন আর এই জীবনে দেখা হবে না বোধকরি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.