নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মান্ধাতার ভাসমান শ্যাওলা এক! ভাসমান এই শ্যাওলাকে ফেসবুক, ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউডে পাবেনঃ Kb Mahbub Khan এই নামে। শ্যাওলার সম্বল ছাইপাঁশ লেখা, আবৃত্তি, বাঁশের বাঁশি আর যখন তখন মুখে এক চিলতে হুদাই মার্কা হাসি!

মাহবুবুর রহমান টুনু

মাহবুবুর রহমান টুনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গেঁয়ো শীতঃ ০৩; পরীক্ষা এবং ফলাফল!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪০



পরীক্ষাঃ
.
এস,এস,সি পরীক্ষা শুরু হবে সামনে। একজন পরীক্ষার্থীর সাথে কথা হচ্ছিলো পরীক্ষা নিয়ে, খুব স্বাভাবিক ভাবে সেও অন্য সবার মতই উদ্বিগ্ন ছিল পরীক্ষা নিয়ে, তো কথা বলবার এক পর্যায়ে আমি মজা করে বললাম “ পরীক্ষা নিয়ে আর যত চিন্তাই থাক, পরীক্ষার দিন তো সকাল সকাল বেশ মেলা টাকা ইনকাম করতে পারবা” সে বলল কিসের টাকা? (কিছুটা অবাক হয়েই) আমি বললাম; পরীক্ষা দিতে যাবা, সেলামি পাবা না সবার কাছ থেকে? তার ভাষ্য অনুযায়ী মনে হল আজই প্রথম সে শুনলো, অর্থাৎ তাদের এইখানে এটার (সেলামির) কোন প্রচলন নাই।
.
এবার আসি-
শহরে বা দেশের অন্যসব গ্রামে অথবা কোন পরিবারে এই প্রচলনটা ছিল বা আছে কিনা জানি না, আমাদের গ্রামে ছিল, আর আমাদের পরিবারে তো ওতপ্রোতভাবেই জড়িত ছিল। আমাদের বিশাল পরিবার। আব্বারা চার ভাই, সবার বাড়ি একসাথেই এবং সবাই একসাথেই থাকত, সুতরাং আমাদের পরিবারে কারো পরীক্ষা হওয়া মানেই ছিল তার ২/৪ মাসের পকেট খরচ আনায়াসে জোগাড় হওয়া, সাথে রং বেরঙ এর হরেক রকম নতুন পোশাক তো ছিলই। আসলে ব্যাপারটা ছিল এরকম, আমাদের ওদিকে পরীক্ষার প্রথম দিনটায় পরীক্ষার্থীর জন্য যেমন চিন্তার ছিল, তেমনি এর আনন্দ ঈদের দিনের থেকে কোন অংশেই কম ছিল না, এবার বিশদ খুলে বলা যাক, আমারটা দিয়েই বলি।
.
আমার পরীক্ষা শুরু হবার আগে থেকেই মোটামুটি একটা প্রস্তুতি চলত কে কি দেবে, আমাকে না বলা হলেও আমি জেনে যেতাম যেকোনভাবে, সালামি বা উপহার গুলি পাওয়া শুরু হত পরীক্ষার দু তিন দিন আগে থেকেই, যেমন খালামনি, নানু, ফুফা ফুফিদের বাসা দুরে থাকার কারনে তারা পরীক্ষার দিনে আসতে পারতেন না, তাই করতাম কি, পরীক্ষার ৪/৫ দিন আগে তাদের বাসা যেয়ে যেয়ে দোয়া চেয়ে আসতাম। এটা একরকম বাধ্যতামূলক ছিল বলা যায়। একদিনেই সবার বাসা ভ্রমণ সম্পূর্ণ করতে হবে কেননা সামনেই পরীক্ষা, পড়াশুনার একটা ব্যাপার আছে। সবার বাসা ভ্রমণ শেষে ঝুলি খুলে দেখা যেত ৪/৫ সেট শার্ট, প্যান্ট, ১৫০০-২০০০ টাকা হয়ে গেছে। এত খুশি রাখি কোথায়।।
পরীক্ষার দিন আব্বা গোসল করিয়ে দিত, এরপর সেইরকম খাই দাই তো আছেই। আমাদের ঐদিকে আবার এই কথারও দারুন প্রচলন ছিল যে “ ডিম খাওয়া যাবে না, ডিম খেলে নাকি শুন্য নম্বর নিয়ে ফিরতে হবে “ আমাদের আব্বা আম্মা এই নিয়ম না মানলেও বড়দের চাপে পরে পালন করতেন, বেশ আয়োজন করেই পালন করতেন, পরীক্ষার কটাদিন আশে পাশে ডিম কমই ছিল। এবার শুরু হত বব্বা, বম্মা, গ্রামের নিকটাত্মীয় দের কাছে দোয়া চাওয়া, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথেই এনাদের কাছে দোয়া নেয়া সেরে নেয়া হত, কিছুক্ষণ পরে দেখা যেত প্যান্টের পকেট বেশ ফুলে ফেপে উঠেছে ২০০/১০০/৫০/২০/১০ এরকম করে করে বেশ জমা হত।
.
গতকাল পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো। অফিসে বসে বসে অনেকেরই ফল দেখে দিলাম। দারুণ ফলাফল।
পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার কথা বেশ মনে পড়ছে, বৃত্তি পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে যাবার পর একটা পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি মাঝে যে দেড় ঘন্টার বিরতি হত, ঐ সময়টায় বাইরের হোটেল, রেস্তোরাঁ গুলি লোক সমাগমে বেশ ভরাট থাকত, তো বাইরে এসে দেখা যেত, বব্বা, খালু, মামা, আব্বা, একসাথে এতজন দাঁড়ায় আছে! মনে একটা ভয় কাজ করত যে, যা লিখে আসলাম সেগুলো আবার ধরা শুরু করবে কিনা। ভয়ের মুখে ছাই, এনারা মূলত আমার জন্য অপেক্ষা করতেন আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর জন্য, খালু বলত আমি আজ খাওয়াই, বব্বা বলত আমি, আর মামা বলত আমি, এটা যেন সেই সময়টায় তাদের আবশ্যকীয় দায়িত্ব ছিল এবং খাওয়ানোর প্রতিযোগিতা ছিল যেন বাধ্যতামূলক। আহা, আজ কে কোথায় পরে আছি, কোথায় সেই দিনগুলো, সেই ভালবাসা! তখন বুঝি নাই, এখন মাঝে মধ্যে মাঝরাতে মাথায় গিজ গিজ করে স্মৃতি গুলো, চোখে পানি আসতে চায়, একসাথে হাসি, কাঁদি। সব থেকে বেশী মিস করি আব্বার করিয়ে দেয়া গোসল, এইতো সেদিনও এস,এস,সি পরীক্ষার দিন গায়ে সাবান লাগিয়ে দিলেন। সেই পরীক্ষার সময় দেখতাম, অন্যরা যখন খাওয়ানোর জন্য প্রতিযোগিতায় মগ্ন, তখন আব্বা একটু দূর থেকে পাঞ্জেরী গাইড হাতে করে ইশারা করতেন, “ আয় বেটা, একটু রিভিশন দে, পাঞ্জাবীর মত লম্বা উত্তরগুলি কি তোর বাপ মুখস্থ করবে?

ফলাফলঃ
.
ফলাফল নিয়ে তেমন কোন স্মৃতি নাই আসলে, অন্য সবার মতই ভীষণরকম ভয়ে কাটত প্রতিটা মিনিট, সেকেন্ড। পরীক্ষা কেমন দিতাম সেটা আমিই জানতাম শুধুমাত্র, আর বাসায় জিজ্ঞেস করলেই অন্য সবার মতই খুব সাবলীল ভাবেই বলে দিতাম “হুম, সেইরকম, ৯৫ তো আসবেই অবলীলায়যায়! আব্বা আম্মারা শুনে খুশি হতেন, আশায় বুক বাধতেন, সেই আশাগুলি তখন আমার চোখের সামনে দেখেও বুঝতে পারি নাই, পারলেও মূল্য দেই নাই। আজও আশা আর তাদের সেই স্বপ্নগুলিকে দেখি, আমার চোখে দেখি, আমারই সামনে আকাশে উড়ে বেড়ায়, আমি ধরতে পারি না; আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে হো হো হো করে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দূর অজানায় মিলিয়ে যায়! ফলাফলের কথা বলতেছিলাম, ওইদিন করতাম কি, আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল শাকিল, এস,এস,সি- ইন্টার দুটো পরীক্ষার ফলাফলের সময়ই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসলের আগে সাইকেল টা পরিস্কার করতাম খুব যত্ন করে, একদম নারিকেল তেল, মবিল, আরো যত যা দিয়ে পারা যায়, একদম নতুনের মত চকচকে করে নিতাম, একই কাজ করত আমার বন্ধু শাকিল, কেননা পরিকল্পনা তো করাই আছে। সকালে ও বাসায় আসত বা আমি ওর বাসায় যেতাম, এরপর একসাথে বেড়িয়ে পরতাম, মোবাইলে থাকত অনেক টাকা আর ফুল চার্জ। অনেক দুরে অচেনা কোন গ্রামে, নির্জন কোথাও যেতাম অথবা খুব নিকটেই থাকতাম কোন গোপন আস্তানায়, যেখানে পরিবারের কেউ হানা দিতে পারবে না। এবারে সাইকেল অত পরিস্কারের উদ্দেশ্য বলে নেই, আসলে ওটাকে অত পরিস্কার করতাম এই জন্য যে, আমাদের উভয়েরই পরিকল্পনা ছিল, পরীক্ষার ফলাফল “ফেইল” আসলে দুজনেই সাইকেল বিক্রি করে বাড়ি ছেড়ে পালাব দুরে কোথাও। বেশীরভাগ সময়েই ঢাকায় পালাবার প্লান করা থাকত। কি করে খাব সেই প্লানও থাকত। অনেক অনেক স্বপ্ন আর সংগ্রামের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল আমাদের। আল্লাহর অশেষ রহমত, আমাদের আর সাইকেল বিক্রি করে বাড়ি ছাড়তে হয় নাই!আমরা পাশ করেছি, দুজনই পাশ করেছি এবং ভাল নম্বর পেয়েই পাশ করেছি বার বার।

গতকাল পঞ্চম এবং অষ্টম দুই শ্রেণিরই পরীক্ষার ফল প্রকাশ পেল। অনেকের ফলই দেখে দিলাম, আহামরি কোন উল্লাস বাবা মায়েদের চোখে মুখে দেখলাম না। মনে হলো; এ তো হওয়ারই ছিল! কেমন যেন!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: আপনার লেখাগুলো পড়তে ভালোই লাগে..
সহজ, সরল, সাবলীল......

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...
কিংবা পুরোনো সেই দিনের কথা......

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩১

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ভাই। বড় দিনের শুভেচ্ছে নেবেন।

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: শুভ বড়দিন!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩১

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: বড়দিনের শুভেচ্ছা আপনাকেও। ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আপনার লেখাগুলো ভালো লাগছে
ছবিটা হাসির হয়েছে। শুভকামনা রইলো

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৩

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: হ্যাঁ ওটা কিছু না ভেবেই ব্যাবহার করে ফেলেছি। শুভকামনা আপনার জন্য। ধন্যবাদ নেবেন।

৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:২৩

তাহমিদ রহমান বলেছেন: এতো এতো কবিতা আর রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মাঝে এরকম একটা দুটো স্মৃতিকথা পড়ে খুব আনন্দ পাই।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১২

মাহবুবুর রহমান টুনু বলেছেন: আপনি আনন্দ পেয়েছেন জেনে খুব ভাল লাগল। শুভকামনা আপনার জন্য। ধন্যবাদ নেবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.