নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের পথ

প্রচেষ্টা

আসল নাম : ইলিয়াস আহমেদ পেশা : ব্যবসা অবস্থান : তালতলাবাজার, মুন্সিগঞ্জ। শখ : নেট এ ঘুরে বেড়ানো, ব্লগ লিখা।

প্রচেষ্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫২

আসসালামু আলাইকুম, আমি ইলিয়াস আহমেদ, এই ব্লগে এটা আমার প্রথম পোষ্ট। ভুলত্রুটি মার্জনার চোখে দেখবেন বলেই আশা করছি।



আমার প্রথম পোষ্টে সবাইকে স্বাগতম।



আব্দুল্লাহ নাম, সিদ্দীক ও আতিক উপাধী, ডাকনাম বা কুনিয়াত আবুবকর, পিতার নাম ওসমান, কুনিয়াত আবু কুহাফা, মাতার নাম নাস সালমা এবং কুনিয়াত উম্মুল খায়ের। কুরাইশ বংশের উপর দিকে ষষ্ঠ পুরুষ ‘মুররাতাএ’ গিয়ে রাসুলাল্লাহ (সা) এর নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। রাসুলাল্লাহ (সা) এর জন্মের দু’বছরের কিছু বেশী সময় পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং অনুরুপ সময়ের ব্যবধানে তাঁরা উভয়ে ইন্তেকাল করেন। তাই মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল রাসুলাল্লাহ (সা) এর বয়সের সমান।

তিনি ছিলেন উজ্জল গৌরবর্ণ, পাতলা ছিপছিপে ও প্রশস্ত ললাট বিশিষ্ট। শেষ বয়সে চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। মেহেদীর খিজাব লাগাতেন। অত্যন্ত দয়ালু ও সহনশীল ছিলেন।



তিনি ছিলেন সম্মানীত কুরাইশদের অন্যতম। জ্ঞান, মেধা, অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি, বিচক্ষনতা ও সচ্চরিত্রতার জন্য আপামর মক্কাবাসীর শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। জাহেলী যুগে মক্কাবাসীদের ‘দিয়াত’ বা রক্তের ক্ষতিপুরণের সমুদয় অর্থ তাঁর কাছে জমা হতো। আরব বাসীর নসব বা বংশ সংক্রান্ত জ্ঞানে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ। কাব্য প্রতিভাও ছিল। অত্যন্ত বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল-ভাষী ছিলেন। বক্তৃতা ও বাগ্মীতায় খোদা প্রদত্ত যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন।

তিনি ছিলেন তাঁর গোত্রের অত্যন্ত জনপ্রিয়, বন্ধুবৎসল ও অমায়িক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী, দানশীল ও চরিত্রবান। জাহেলী যুগেও কখনো শরাব পান করেননি। তারঁ অমায়িক মেলামেশা, পান্ডিত্য ও ব্যবসায়িক দক্ষতার কারণে অনেকেই তাঁর সাথে বন্ধুত্য ও সখ্যতা স্থাপন করতো। তাঁর বাড়িতে প্রতিদিনই মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়মিত বেঠক বসতো।

হযরত আবু বকরের পিতা আবু কুহাফা কুরাইশদের মধ্যে যথেষ্ট মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন বয়োবৃদ্ধ ও স্বচ্ছল। তাঁর গৃহ কবেল ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যই প্রসিদ্ধ ছিলনা, সামাজিক কর্মকান্ডেও তাঁর মতামত অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করা হতো। মক্কা বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রতি তিনি আকৃষ্ট না হলেও পুত্র আবু বকরকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন- এমন কোন প্রমান ইতিহাসে পাওয়া যায় না। অবশ্য হযরত আলীকে (রা) তিনি দেখলে মাঝে মাঝে বলতেন ‘এই ছোকড়াই আমার ছেলেটার মাথা বিগড়ে দিয়েছে’। মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলাল্লাহ (সা)’র খেদমতে হাজির হয়ে ইসলামের ঘোষনা দেন। হিজরী ১৪ সনে একশ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। শেষ বয়সে তিনি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন।

হযরত আবু বকরের মা’উম্মুল খায়ের’ স্বামীর বহু পুর্বে মক্কায় ইসলামের প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কার ‘দারুল আরকামে’ ইসলাম গ্রহণকারীদের মদ্যে তিনি অন্যতম। স্বামীর মত তিনিও দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। প্রায় ৯০ বছর বয়সে পুত্রকে খেলাফতের পদে অধিষ্টিত রেখে তিনি ইন্তেকাল করেন।



আবু বকর ছিলেন পিতার একমাত্র পুত্র সন্তান। অত্যন্ত আদর যত্ন ও বিলাসিতার মাঝে পালিত হন তিনি। শৈশব থেকে যৌবনের সূচনা পর্যন্ত পিতার উপর নির্ভরশীল ছিলেন। বিশ বছর বয়সে পিতার ব্যবসা বানিজ্যের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন।



শৈশব থেকে আবু বকরের সাথে রাসুলাল্লাহ (সা)’র বন্ধুত্য ছিল। তিনি রাসুলাল্লাহ (সা)’র অধিকাংশ বাণিজ্য সফরের সফর সঙ্গী ছিলেন। একবার রাসুলাল্লাহ (সা)’র সঙ্গে ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়া যান। তখন তাঁর বয়স প্রায় আঠার আর হুজুর (সা) এর বয়স বিশ। তাঁরা যখন সিরিয়া সীমান্তে; বিশ্রামের জন্য রাসুলাল্লাহ (সা)’র একটি গাছের নীচে বসেন। আবু বকর একটু সামনে এগিয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলেন। এক খ্রীষ্টান পাদ্রীর সাথে তাঁর দেখা হয় এবং ধর্ম বিষয়ে কিছু কথা-বার্তা হয়। আলাপের মাঝখানে পাদ্রী জিজ্ঞেস করে ওখানে গাছে………………………………..র নীচে কে ? আবু বকর বললেন, এক কুরাইশ যুবক, নাম মুহাম্মাদ বিন আবদিল্লাহ। পাদ্রী বলে উঠল, এ ব্যক্তি আরবদের নবী হবেন। কথাটি আবু বকরের অন্তরে গেথে যায়। তখন থেকেই তার অন্তরে রাসুলাল্লাহ (সা)’র নবী হওয়া সম্পর্কে দৃঢ় প্রত্যয় হতে থাকে। ইতিহাসে এ পাদ্রীর নাম ‘বুহাইরা’ বা’ নাসতুরা’ বলে উল্লেখিত হয়েছে।



রাসুলাল্লাহ (সা)’র নবুয়ত লাভের ঘোষনায় মক্কায় হৈ চৈ পরে গেল। মক্কার প্রভাবশালী ধনি নেতৃবৃন্দ তাঁর বিরোধিতায় কোমর বেঁধে লেগে যায়। কেউবা রাসুলাল্লাহ (সা)’কে মাথা খারাপ, কেউবা জীনে ধরা বলতে থাকে। নেতৃবৃন্দের ইংগিতে ও তাদের দেখা-দেখি সাধারন লোকেরাও ইসলাম থেকে দুরে সরে থাকে। কুরাইশদের ধনবান ও সম্মানী ব্যক্তিদের মধ্যে এক মাত্র আবু বকর রাসুলাল্লাহ (সা)’র সঙ্গ দেন, তাঁকে সাহস দেন এবং বিনা দ্বিধায় তাঁর নবুয়তের প্রতি ঈমান আনেন। এই প্রসঙ্গে রাসুলাল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, একমাত্র আবু বকর ছাড়া প্রত্যেকের মধ্যেই কিছু না কিছু দ্বিধার ভাব লক্ষ্য করেছি। এভাবে আবু বকর হলেন বয়স্ক আজাদ লোকদের মধ্যে প্রথম মুসলমান।

মুসলমান হওয়ার পর ইসলামের ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে তিনি রাসুলাল্লাহ (সা)’র সাথে দাওয়াতী কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মক্কার আশপাশের গোত্র সমুহে ইসলামের দাওয়াত দিতন। হজ্জের মৌসুমে বিভিন্ন তাঁবুতে গিয়ে লোকদের দাওয়াত দিতেন। বহিরাগত লোকদের কাছে ইসলামের ও রাসুলাল্লাহ (সা)’র পরিচয় তুলে ধরতেন। এভাবে আরববাসী রাসুলাল্লাহ (সা)’র প্রচারিত দ্বীন সম্পর্কে অবহিত হয়ে তাঁর উপর ঈমান আনে। তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাব ও চেষ্টায় তৎকালীন কুরাইশ বংশের বিশিষ্ট যুবক উসমান, যুবায়ের, আব্দুর রহমান, সা’দ ও তালহার মত ব্যক্তিরা সহ আরো অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেন।



রাসুলাল্লাহ (সা) যখন নবুওয়াতের প্রকাশ্য ঘোষনা দিলেন, আবু বকরের নিকট তখন চল্লিশ হাজার দিরহাম। ইসলামের জন্য তিনি তাঁর সকল সম্পদ ওয়াকফ করে দেন। কুরাইশদের যেসব দাস-দাসী ইসলাম গ্রহনের কারনে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হচ্ছিল, এ অর্থ দ্বারা তিনি সেই সব দাস-দাসী খরিদ করে আযাদ করেন। তেরো বছর পর যখন রাসুলাল্লাহ (সা) সাথে তিনি মদীনায় হিজরাত করেন তাঁর কাছে এ অর্থের মাত্র আড়াই হাজার দেরহাম অবশিষ্ট ছিল। অল্পদিনের মধ্যে অবশিষ্ট দিরহাম গুলিও ইসলামের জন্য ব্যয়িত হয়। বিলাল,খাব্বাব,আম্মার,আম্মারের মা সুমাইয়্যা,সুহাইব,আবু ফুকাইহ প্রমুখ দাস-দাসী তাঁরই অর্থের বিনিময়ে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভ করেন। তাই পরবর্তী কালে রাসুলাল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি প্রতিটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি। কিন্তু আবু বকরের ইহসান সমূহ এমন যে, পরিশোধ করতে আমি অক্ষম। তাঁর প্রতিদান আল্লাহ দেবেন। তাঁর অর্থ আমার উপকারে যেমন এসেছে, অন্য কারো অর্থ তেমন আসেনি।



রাসুলাল্লাহ (সা) মুখে মি’রাজের কথা অনেকেই যখন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝখানে দোল খাচ্ছিল,তখন তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। হযরত হাসান (রা) বলেনঃ মি’রাজের কথা বহু সংখ্যক মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করে। লোকে আবু বকরের কাছে গিয়ে বলেঃ আবু ব্কর তোমার বন্ধুকে তুমি বিশ্বাস কর? সে বলেছে, সে নাকি গতরাতে বাইতুল মাকদাসে গিয়েছে, সেখানে সে নামায পড়েছে, অতঃপর মক্কায় ফিরে এসেছে।



আবু বকর বললেনঃ তোমরা কি তাঁকে বিশ্বাস কর? তারা বললঃ হ্যাঁ, ঐতো মসজিদে বসে লোকজনকে এ কথাই বলেছে। আবু বকর বললেনঃ আল্লাহর কসম, তিনি যদি এ কথাই বলে থাকেন তাহলে সত্য কথাই বলেছেন। এতে অবাক হাওয়ার কি দেখলে? তিনি তো আমাকে বলে থাকেন,তাঁর কাছে আল্লাহর কাজ থেকে ওহী আসে। আকাশ থেকে ওহী আসে মাত্র এক মুহূর্তের মধ্যে। তাঁর সে কথাও আমি বিশ্বাস করি। তোমার যে ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছো এটা তাঁর চেয়েও বিস্ময়কর। তারপর তিনি রাসুলাল্লাহ (সা) কাছে গিয়ে হাজির হলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর নবী, আপনি কি জনগনকে বলেছেন যে, আপনি গত রাতে বাইতুল মাকদাস ভ্রমন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবু বকর বললেনঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল। রাসুলাল্লাহ (সা) বললেলঃ হে আবু বকর, তুমি সিদ্দিক। এভাবে আবু বকর “সিদ্দিক” উপাধিতে ভুষিত হন।



মক্কায় রাসুলাল্লাহ (সা) অভ্যাস ছিল সকাল সন্ধায় আবু বকরের বাড়ীতে গমন করা। কোন বিষয়ে পরামর্শের প্রয়োজন হলে তাঁর পরার্মশ করা। রাসূল (স) দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য কোথাও গেলে তিনিও সাধারনত সঙ্গে থাকতেন।



মুসলমানের ওপর মুশরিকদের অত্যাচার চরম আকারে ধারন করলে একবার তিনি হাবশায় হিজরাত করার ইচ্ছা করেছিলেন কিন্তু “ইবনুদ দাগনাহ” নামক গ্রোত্রপতি তাঁকে এ সিন্ধান্ত থেকে বিরত রাখে। সে কুরাইশদের হাত থেকে এ শর্তে নিরাপত্তা দেয় যে,আবু বকর প্রকাশ্য সালাত আদায় করবেন না, কিন্তু দীর্ঘদিন এ শর্ত পালন করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ইবনুদ দাগনাহ নিরাপত্তা ফিরেয়ে দেন এবং অনান্য মুসলমান ভাইদের যে অবস্থা হয় সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহনের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান ।



রাসুলাল্লাহ (সা) হিজরাতের সেই কঠিন মুহূর্তে আবু বকরের কোরবানী, বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য্য ও বন্ধুত্বের কথা ইতিহাসের চিরদির অম্লান হয়ে থাকবে। তাঁর সাহচর্য়ের কথা তো পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে। ইবনে ইসহাক বলেন “আবু বকর রাসুলাল্লাহর (সা) কাজে হিজরতের অনুমতি চাইলে রাসুলাল্লাহ (সা) তাঁকে বলতেনঃ তুমি তাড়াহুড়া করোনা। আল্লাহ হয়তো তোমাকে একজন সহযাত্রী জুটিয়ে দেবেন। আবু বকর একথা শুনে ভাবতেন যে, রাসুলাল্লাহ (সা) হয়তো নিজের একথাই বলেছেন। তাই তিনি তখন থেকেই দুটো উট কিনে অত্যন্ত যত্ন সহকারে পুষতে থাকতেন। এই আশায় যে, হিজরাতের সময় হয়তো কাজে লাগতে পারে”।



উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসুলাল্লাহ (সা) দিনে অন্তত একবার আবু বকরের বাড়িতে আসতেন। যেদিন হিজরতের অনুমতি পেলেন সেদিন দুপুরে আমাদের বাড়িতে আসলেন, এমন সময় কখনো তিনি আসতেন না। তাঁকে দেখামাত্র আবু বকর বলে উঠলেন, নিশ্চয় কিছু একটা ঘটেছে। তা না হলে এমন সময় রাসুলাল্লাহ (সা) আসতেন না। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলে আবু বকর খাটের একধারে সরে বসলেন। আবু বকরের বাড়ীতে তখন আমি ও আমার বোন আসমা ছাড়া আর কেউ ছিল না। রাসুলাল্লাহ (সা) বললেনঃ তোমার এখানে অন্য যারা আছে, তাদেরকে আমার কাছ হতে দুরে সরিয়ে দাও। আবু বকর বললেন হে আল্লাহর রাসুল আমার দুই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। আপনার কি হয়েছে ? রাসুলাল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহ আমাকে হিজরত করার অনুমতি দিয়েছেন। আবু বরক জিজ্ঞেস করলেন আমিও কি সঙ্গে যেতে পারব ? রাসুলাল্লাহ (সা) বললেনঃ হ্যাঁ যেতে পারবে। আয়েশা বলেনঃ সেদিনের আগে আমি জানতাম না যে, মানুষ আনন্দের আতিশয্যেও এত কাঁদতে পারে। আমি আবু বকরকে সেদিন কাঁদতে দেখেছি। অতঃপর আবু বকর (রা) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ! এই দেখুন আমি এই উট দুটো এ কাজের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি।



তাঁরা আব্দুল্লাহ ইবন উরায়তকে পথ দেখিয়ে পথ দেখিয়ে নেয়ার জন্য ভাড়া করে সাথে নিলেন। সে ছিল মুশরিক, তবে বিশ্বাষভাজন। রাতের আঁধারে তাঁলা আবু বকরের বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে বের হলেন এবং নিম্ন ভুমিতে “সাওর” পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। হাসান বসরী (রা) ইবন হিশাম হতে বর্ণনা করেনঃ তাঁরা রাতে ‘সাওর’ পর্বতের গুহায় পৌছেন। রাসুলাল্লাহ (সা),র প্রবেশের আগে আবু বকর (রা) গুহায় প্রবেশ করলেন। সেখানে কোন হিংস্র প্রানী বা সাপ-বিচ্ছু আছে কিনা তা দেখে নিলেন। রাসুলাল্লাহ (সা) কে বিপদমুক্ত রাখার উদ্দশ্যেই তিনি এরুপ ঝুঁকি নিয়েছিলেন।

মক্কায় উম্মুল মোমেনীন হযরত খাদিজার ওফাতের পর রাসুলাল্লাহ (সা) কে যখন আবু বকর (রা) বিমর্ষ দেখলেন, অত্যন্ত আদব ও নিষ্ঠার সাথে নিজের অল্প বয়স্কা কন্যা আয়েশাকে (রা) রাসুলাল্লাহ (সা),র সাথে বিয়ে দেন। মোহরের অর্থও নিজেই পরিশোধ করেন।

হিজরতের পর সকল অভিয়ানেই তিনি রাসুলাল্লাহ (সা),র সাথে অংশগ্রহণ করেন, কোন একটি অভিযানেও অংশগ্রহণ হতে বঞ্চিত হননি।

তাবুক অভিযানে তিনি ছিলেন মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী।এ অভিযানের সময় রাসুলাল্লাহ (সা),র এর আহবানে সাড়া দিয়ে বাড়িতে যা কিছু অর্থ-সম্পদ ছিল সবই তিনি রাসুলাল্লাহ (সা),র হাতে তুলে দেন। আল্লাহ’র রাসুল জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আবু বকর ছেলে মেয়েদের জন্য বাড়িতে কিছু রেখেছো কি ? জবাবে আবু বকর বললেনঃ তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই যথেষ্ট।



মক্কা বিজয়ের পর নবম হিজরীতে প্রথম ইসলামি হজ্জ আদায় উপলক্ষে রাসুলাল্লাহ (সা) আবু বকরকে (রা) “আমিরুল হাজ্ব” নিয়োগ করেন। রাসুলাল্লাহ (সা),র অন্তিম রোগ শয্যায় তাঁরই নির্দেশে মসজিদে নববীর ইমামতীর দায়িত্ব পালন করেন। মোট কথা রাসুলাল্লাহ (সা),র জীবদ্দশায় আবু বকর তাঁর উজির ও উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

রাসুলাল্লাহ (সা),র ওফাতের পর আবু বকর লা) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। “খলিফাতু রাসুলিল্লাহ”- এ উপাধিটি কেবল তাঁকেই দেয়া হয়। পরবর্তী খলিফাদের ‘আমিরুল মোমেনীন’ উপাধি দেয়া হয়েছে।

ব্যবসা ছিল তাঁর পেশা। ইসলাম-পুর্ব যুগে কুরাইশদের এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। ইসলাম গ্রহনের পরেও জীবিকার তাগিদে এ পেশা চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে খলিফা হবার পর খিলাফতের গুরু দায়িত্ব কাঁধে পরায় ব্যবসার পাট চুকাতে বাধ্য হন। হযরত উমর ও আবু উবাইদার পীড়াপিড়িতে মজলিশে সুরার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজন অনুপাতে বাইতুল মাল হতে নুন্যতম ভাতা গ্রহনে স্বীকৃত হন। যার পরিমাণ ছিল বাৎসরিক আড়াই হাজার দিরহাম। তবে মৃত্যুর পুর্বে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে বাইতুল মাল হতে গৃহিত সমুদয় অর্থ ফেরত দানের নির্দেশ দিয়ে যান।



রাসুলাল্লাহ (সা),র ওফাতের সংবাদে সাহাবা মন্ডলি যখন সর্ম্পূন হতভম্ব, তাঁরা যখন চিন্তাই করতে পারছিলেন না, রাসুলাল্লাহ (সা)’র ওফাত হতে পারে, এমনকি হযরত “উমর (রা) কোষমুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে ঘোষনা করে বসেন- যে বলবে রাসুলাল্লাহ (সা)’র হয়েছে তাঁকে হত্যা করবো”। এমনই এক ভাব-বিহবল পরিবেশেও আবু বকর (রা) ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ় ও অবিচল। সমবেত জনতাকে লক্ষ্য করে তিনি ঘোষনা করেনঃ “যারা মুহাম্মাদের ইবাদত করতে তারা জেনে রাখ, মুহাম্মাদ মৃত্যবরণ করেছেন। কিন্তু যারা আল্লাহর ইবাদত কর তারা জেনে রাখ আল্লাহ চিরঞ্জীব-তাঁর মৃত্যু নেই”। তারপর এ আয়াত পাঠ করেনঃ মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছে। তিনি যদি মারা যান বা নিহিত হন তাহলে তোমরা কি পেছনে ফিরে যাবে? যারা পেছনে ফিরে যাবে তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিগগিরই আল্লাহ তাদের প্রতিদান দেবেন”। ( সূরা আলে ইমরান-১৪৪) আবু বকরের মুখে এ আয়াত শুনার সাথে সাথে লোকেরা যেন সম্বিত ফিরে পেল। তাদের কাছে মনে হল এ আয়াত যেন তারা এই প্রথম শুনছে। এভাবে রাসুলাল্লাহ (সা),র ইনতিকালের সাথে সাথে প্রথম যে মারাত্নক সমস্যাটি দেখা দেয়, আবু বকরের (রা) দৃঢ় হস্তক্ষেপে তার পরিসমাপ্তি ঘটে।

রাসুলাল্লাহ (সা),র কাফন-দাফন তখনো সম্পন্ন হতে পারেনি। এরই মধ্যে তাঁর স্থলাভিষিক্তির বিষয়টি জটিল আকার ধারন করলো। মদীনায় জনগন, বিশেষগত আনসাররা “সাকীফা বনী সায়েদা” নামক স্থানে সমবেত হলো। আনসাররা দাবী করলো, যেহেতু আমরা রাসুলাল্লাহ (সা) কে আশ্রয় দিয়েছি, নিজেদের জান-মালের বিনিময়ে দুর্বল ইসলামকে সবল ও শক্তিশালী করেছি, আমাদের মধ্য থেকে কাউকে রাসুলাল্লাহ (সা),র স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। মুজাহিরদের কাছে এ দাবী গ্রহনযোগ্য হলো না। তারা বললোঃ ‌ইসলামের বীজ আমরা বপন করেছি এবং আমরাই তাতে পানি সিঞ্ঝন করেছি। সুতারাং আমরাই খিলাফতের অধিকতর হকদার। পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নিল। আবু বকরকে (রা) ডাকা হল। তিনি তখন রাসুলাল্লাহ (সা),র পবিত্র মরদেহের নিকট। তিনি তখন উপস্থিত হয়ে ধীর-স্থিরভাবে কথা বললেন। তাঁর যুক্তি ও প্রমাণের কাছে আনসাররা নতি স্বীকার করলো। এভাবে রাসুলাল্লাহ (সা),র ইনতিকালের পর দ্বিতীয় সমস্যাটি দেখা দেয়, আবু বকরের (রা) বুদ্ধি ও বিচক্ষণতায় তারও সুন্দর সমাধান হয়ে যায়।



আবু বকর খলীফা নির্বাচিত হলেন। খলীফা হওয়ার পর সমবেত মুহাজির ও আনসারদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেনঃ “আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমাকে খলীফা বানানো হয়েছে। আল্লাহর কসম, আমি চাচ্ছিলাম, আপনাদের মধ্য থেকে অন্য কেউ এ দ্বায়িত্ব গ্রহন করুক। আমি স্বরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা যদি চান আমার আচরণ রাসুলাল্লাহ (সা),র আচরনের মত হোক, তাহলে আমাকে সেই পর্য়ায়ে পোঁছার ব্যাপারে অক্ষম মনে করবেন। তিনি ছিলেন নবী। ভুলক্রতি থেকে ছিলেন পবিত্র। তাঁর মত আমার কোন বিশেষ মর্যদা নেই। আমি একজন সাধারন মানুষ। আপনাদের কোন একজন সাধারন ব্যক্তি থেকেও উত্তম হওয়ার দাবী আমি করতে পারিনে। ……আপনারা যদি দেখেন আমি সঠিক কাজ করছি, আমার সহায়তা করবেন। যদি দেখেন আমি বিপদগামী যচ্ছি, আমাকে সর্তক করে দেবেন। তাঁর সেই নীতি নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত প্রথম ভাষনটি চিরকাল বিশ্বের সকল রাষ্ট্র নায়কদে র জন্য অনুকরনীয় হয়ে থাকবে।

তাঁর চরিত্রের সীমাহীন দৃঢ়তার আর এক প্রকাশ ঘটে রাসুলাল্লাহ (সা),র ইনতিকালের অব্যবহিত পরে উসামা ইবনে যায়িদের বাহিনীকে পাঠানোর মাধ্যমে। রাসুলাল্লাহ (সা),র ওফাতের অল্প কিছুদিন আগে মুতা অভিযানে শাহাদাত প্রাপ্ত যায়িদ ইবনে হারিসা, জাফর ইবনে আবি তালিব ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার (রা) রক্তের পরিশোধ নেয়ার জন্য একটি বাহিনী প্রস্তুত করেন। এ বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত করেন নওজোয়ান উসামা ইবন যায়িদকে। রাসুলাল্লাহ (সা),র নির্দেশে উসামা তাঁর বাহিনীসহ সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলেন। তাঁরা মদীনা থেকে বের হতেই রাসুলাল্লাহ (সা) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা মদীনার উপকন্ঠে শিবির স্থাপন করে রাসুলাল্লাহ (সা)’র রোগমুক্তির প্রতিক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু এ রোগেই রাসূল (সা) ইনতিকাল করেন। আবু বকর (রা) খলীফা হলেন। এদিকে রাসুলাল্লাহ (সা) ওফাতের সংবাদে আবর উপদ্বীপের বিভিন্ন দিকে নানা অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। কেউ বা ইসলাম ত্যাগ করে, কেউ বা যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়, কেউ বা নুবওয়াত দাবী করে বসে। এমনি এক চরম অবস্থায় অনেকে পরামর্শ দিলেন উসামার বাহিনী পাঠানোর ব্যাপারটি স্থগিত রাখতে। কিন্ত আবু বকর অত্যন্ত কঠোর ভাবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন। তিনি যদি এ বাহিনী পাঠাতে ইতস্ত করতেন বা কাল বিলম্ব করতেন তাহলে খিলাফতের দায়িত্ব লাভের পর এটা হতো রাসুলাল্লাহ (সা),র নির্দেশের প্রথম বিরুদ্ধাচরণ। কারণ অন্তিআম রোগ শয্যায় তিনি উসামা বাহিনীকে যাত্রার নির্দেশ দিয়েছিলেন।



আবু বকর উসামার বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত অটল থাকেন। তখন আনসারদের একটি দল দাবী করলেন; তাহলে অন্তত উসামাকে কমান্ডারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য কোন বয়স্ক সাহাবীকে তাঁর স্থলে নিয়োগ করা হউক। উল্লেখ্য যে তখন উসামার বয়স মাত্র বিশ বছর। সকলের পক্ষ হতে প্রস্তাবটি হযরত উমার উপস্থাপন করলেন। প্রস্তাব শুনে আবু বকর রাগে ফেটে পরলেন। তিনি উমারের দাড়ি মুট করে ধরে বললেনঃ রাসুলাল্লাহ (সা) যাকে নিয়োগ করেছেন, আবু বকর তাকে অপসারন করবে ? এভাবে এ প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখান করেন।

হযরত উমারও ছিলেন উসামার এ বাহিনীর অর্ন্তভুক্ত একজন সৈনিক। অথচ নতুন খলিফার জন্য তখন তাঁর মদিনায় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। খলিফা ইচ্ছে করলে তাঁকে নিজেই মদীনায় থেকে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্ত তিনি উসামার ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ না করে তাঁর কাছে আবেদন জানালেন উমারকে মদীনায় রেখে যাওয়ার জন্য। উসামা খলিফার আবেদন মঞ্জুর করলেন। কারণ আবু বকর (রা) বুঝেছিলেন, উসামার নিয়োগ কর্তা খোদ রাসুলাল্লাহ (সা)। সুতরাং এক্ষেত্রে উসামার ক্ষমতা তাঁর ক্ষমতার উপরে। এভাবে আবু বকর (রা) রাসুলাল্লাহ (সা),র এর আদেশ যথাযথ বাস্তবায়ন করেন এবং তাঁর সামান্যতম বিরুদ্ধাচারন থেকেও বিরত থাকেন।



রাসুলাল্লাহ (সা),র ইন্তিকালের পর আবাস ও জুবইয়ান গোত্রদ্বয় যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টি নিয়ে খলিফার দরবারে পরামর্শ হয়। সাহাবীদের অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান না চালানোর পরামর্শ দেন। কিন্ত আবু বকর (রা) অটল। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম, রাসুলাল্লাহ (সা),র যুগে উটের যে বাচ্চাটি যাকাত পাঠানো হতো এখন যদি তা কেউ দিতে অসীকৃতি করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করব।

কিছু লোক নবুয়তের মিথ্যা দাবীদার ছিল। আবু বকর (রা) অসীম সাহস ও দৃঢ়তার সহকারে এসব ভন্ড নবীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। তাই ইতিহাসবিদরা মন্তব্য করেছেনঃ আল্লাহর সাহায্য ও সহায়তার পর আবু বকরের এ দৃঢ়তা যদি না হতো, মুসলিম জাতির ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লিখা হতো।

এমনটি সম্ভব হয়েছে এই জন্য যে, হযরত আবু বকরের (রা) স্বভাবের দু’টি পরস্পরবিরোধী গুনের সমাবেশ ঘটেছিল, সীমাহীন দৃঢ়তা ও কোমলতা। এ কারণে তাঁর চরিত্রে সর্বদা একটা ভারসাম্য বিরাজমান ছিল। কোন ব্যক্তির স্বভাবে যদি এ দু’টি গুনের কেবল একটি বর্তমান থাকে এবং অন্যটি থাকে অনুপস্থিত, তখন তাঁর চরিত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে । কিন্ত আল্লাহর অনুগ্রহে এ দু’টি গুন তাঁর চরিত্রে সমানভাবে বিদ্যমান ছিল। হযরত আবু বকর যদিও মুসলমানদের নেতা ও খলিফা ছিলেন, তবুও তাঁর জীবন ছিল অনাড়াম্বর। খলিফা হওয়া সত্তেও মদীনার অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে জনগণের অবস্থা জানতেন, এবং তাদের ব্যক্তিগত কাজও সময় সময় নিজ হাতে করে দিতেন। হযরত উমার (রা) বলেনঃ আমি প্রতিদিন সকালে এক বৃদ্ধার বাড়িতে তার ঘরের কাজ করে দিতাম। প্রতিদিনের মত একদিন তার বাড়িতে উপস্থিত হলে বৃদ্ধা বললেনঃ আজ কোন কাজ নেই। এক নেককার ব্যক্তি তোমার আগেই কাজ গুলো শেষ করে গেছে। হযরত উমার পরে জানতে পারেন সেই নেককার ব্যক্তিটি হযরত আবু বকর (রা) । খলিফা হওয়া সত্তেও এভাবে এক অনাথ বুদ্ধার কাজ করে দিয়ে যেতেন। হযরত আবু বকর মাত্র আড়াই বছরের মত খেলাফত পরিচালনা করেন। তবে তাঁর এ সময়টুকু ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বলে বিবেচিত হয়। রাসুলাল্লাহ (সা)’র ইন্তিকালের পর তাঁর সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অবদান হলো, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা। আরবের বিদ্রোহ সমূহ নির্মুল করা। রাষ্ট্র ও সরকারকে তিনি এত মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন যে, মুসলমানরা ইরান ও রোমের মত দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে সাহসী হয় ও অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বহু অঞ্চল দখল করে নেয়।



হযরত আবু বকরের আরেকটি অবদান পবিত্র কোরআনের সংকলন ও সংরক্ষন। তাঁর খিলাফত কালের প্রথম অধ্যায়ে আরবের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সেই সব বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে কয়েকশত হাফেজে কোরআন শাহাদাত বরন করেন। শুধু মাত্র মুসায়লামা কাজ্জাবের সাথে যে যুদ্ধ হয় তাতেই সাত শ’ হাফেজ শহীদ হন। অতঃপর হযরত উমারের পরামর্শে হযরত আবু বকর (রা) সম্পুর্ণ কোরআন একস্থানে গ্রন্থাকারে সংকলন করেন এবং কপিটি নিজের কাছে সংরক্ষন করেন। ইতিহাসে কোরআনের এই আদি কপিটি ‘মাসহাফে সিদ্দিকী’ নামে পরিচিত। পরবর্তী কালে হযরত ওসমানের যুগে কোরআনের যে কপিগুলো করা হয় তা ‘মাসহাফে সিদ্দিকী’র অনুলিপি মাত্র।



হযরত আবু বকর রাসুলাল্লাহ (সা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, আল্লামা জাহাবী ‘তাজকিরাতুল হুফফাজ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। অত্যধিক সতর্কতার কারণে তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় অনেক কম। উমার, উসমান, আব্দুর রহমান ইবন আউফ, ইবন মাসউদ, ইবন উমার, ইবন আ’মার, ইবন আব্বাস, হুজাইফা, যায়িদ ইবন সাবিদ, উকবা, মা’কাল, আনাস, আবু হুরাইরা, আবু উমামা, আবু বারাযা, আবু মুসা, তাঁর দু কন্যা আয়েশা ও আসমা প্রমুখ সাহাবী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বিশিষ্ট তাঁবেয়ীরাও তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন



১৩ই হিজরীর ৭ই জমাদিউল উখরা হযরত আবু বকর (রা) জ্বরে আক্রান্ত হন। ১৫দিন রোগাক্রান্ত থাকার পর হিজরী ১৩ সনের ২১শে জমাদিউল উখরা মোতাবেক ৬৩৪ খ্রীষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে ইন্তেকাল করেন। হযরত আয়েশার (রা) হুজরায় রাসুলাল্লাহ (সা)’র পাশের একটু পুবদিকে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি দু’বছর তিনমাস দশদিন খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।



সুত্রঃ আসহাবে রাসুলের জীবন কথা হতে সংকলিত!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৯

স্বপ্নীল আহমেদ বলেছেন: বেশ বড় লেখা, সময় করে পড়ব নে।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩৪

প্রচেষ্টা বলেছেন: আমার প্রথম পোষ্টে প্রথম কমেন্ট করেছেন, আপনাকে স্বাগতম স্বপ্নীল ভাই। যখন সময় হবে পড়ে নিবেন। আশা করি আপনার ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.