নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রফেসর আলতাফ সরকার

প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার, একজন শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষক, ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মী, স্বাস্থ বিষয়ক কলাম লেখক, বাংলাদেশ ফিজিেথেরাপি এসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতা উপদ্রেষ্টা, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠাতার প্রধান সম্পাদক, ব্যাকপেইন চিকিৎসায় উন্মোচন করেছেন এক নতুন দিগন্ত, সরবপরি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

প্রফেসর আলতাফ সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোমর ব্যথায় আধুনিক ফিজিওথেরাপি

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৮

চোখ কতটুকু দেখে, কান কতটুকু ই বা শুনে কিন্তু মন সে তার বিশার আর ভক্তি নিয়ে ছুটে যেতে পারে অনেক দূর। মনের এই দূরন্ত গতিকে থমকে দিতে পারে, যে কোন শিঁরদাড়ার সমস্যা।


আজকের আমার এই লেখাটি এমন একটি বিষয় নিয়ে যা কিনা আমাদের শিঁরদাড়া, শরীর এবং মন সবকিছুকেই বিপর্যস্থ থেকে ভাল করতে সাহায্য করবে বলে আশা করি । সুপ্রিয় পাঠক আমার আজকের লেখার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাচ্ছি, স্পাইন বা মেরুদন্ডের বিভিন্ন সমস্যা ও তার চিকিৎসার ব্যপারে।

আজকাল অনেকই বলে থাকেন দিন দিন আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি, ধরুন কাঁধ ব্যথা, পিঠ ব্যথা বা কোমর ব্যথা। কারো কারো ধারনা বিভিন্ন খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য হতে পারে অথবা গাড়ি ঘোড়ার ধোঁয়া বা বড় বড় অট্টালিকার কারনে এই রোগ হতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে উপরোক্ত কারন ছাড়াই কোমর ব্যথা হতে পারে। কোমর ব্যথার রোগী এত বেড়েছে যে প্রায় পরিবারেই কোমর ব্যথার রোগী আছে। ২০-২৫ বছরের যুবক থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়স্ক লোকের মধ্যে এই কোমরের ব্যথা বেশি হচ্ছে। আমেরিকা, ইউরোপ এবং বিশ্ব ব্যাক পেইন সোসাইটির বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ৮০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেরা জীবনের কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় ভুগে থাকেন।

আমাদের কোমরকে বলা হয় লাম্বো স্যাকরাল রিজিওন এই লাম্বো স্যাকরাল রিজিওন ৫টি লাম্বার ভার্টিব্রা ও ১টি যুক্ত স্যাকরাল ভাট্রির্বা দ্বারা গঠিত। এই ভাট্রির্বা বা হার গুলোর মাঝে নরম এক প্রকার পদার্থ থাকে যাকে বলা হয় ডিস্ক। এই ডিস্ক সকএ্যবজারভার বা ঝাকুনি সহ্য করতে কাজ করে। স্পাইনকে শক্তিশালী রাখার জন্য হাড়, ডিস্ক, লিগামেন্ট এবং মাংশ পেশি বিশেষ ভাবে কাজ করে। এই স্পাইন বা শিরদাঁড়ার মধ্যে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ স্পাইনাল কর্ড থাকে। যা থেকে শরীরের ডান এবং বাম দিকে নার্ভ বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। এই শিঁরদাড়ার সাহায্যে আমাদের শরীরের ওজন বহন করি এবং দৈনন্দিন কাজ করি। ব্যাকপেইন বা কোমর ব্যথা হওয়ার অনেক কারন আছে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো মেকানিকাল ৭০%, ডিজেনারেশন ১০%, ডিস্ক এর অসুবিধার জন্য ৪%, অষ্টিওপোরেসিস ৪%, স্পাইনাল ক্যানাল স্টোসিস ৩%, স্পন্ডিলোলিসথেসিস ২% এবং অন্যান্য কারণ এর জন্য ৭%। এছাড়াও সমাজের প্রাপ্ত বয়স্ক লোকদের মধ্যে ১০% ভাগ ক্রোনিক পেইন এ ভোগেন। এই ১০% এর মধ্যে কোমর ব্যথার রুগীও রয়েছে। কর্মসংস্থান রিপোর্টে দেখা গেছে অফিস এক্সিকিউটিভদের মধ্যে ১২% কর্মকর্তা কোমর ব্যথায় ভোগেন। এখানে কোমর ব্যথার কারন বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে-পোশ্চার বা বসার ভঙ্গির জন্য কোমর ব্যথা বেশি হয়। যেমন অনেক্ষন বসে কাজ করি, অনেক্ষন সামনে ঝুঁকে কাজ করি অথবা হঠাৎ করে সামনে ঝুঁকে কোন জিনিস উঠাই কিংবা ঘরের আসবাব পত্র ধাক্কা ধাক্কি করি অথবা জিনিসপত্র অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করি। তাহলে আমাদের কোমর ব্যথা হতেই পারে। এছাড়াও অসঠিক ভঙ্গিতে দৈনন্দিন কাজ করলে কোমর ব্যথা হতে পারে। যদি কখনও আমরা হঠাৎ করে মাজার উপর পড়ে যাই অথবা কোমর বা মাজায় কোন প্রকার আঘাত পাই তাহলে কোমর ব্যথা হতেই পারে। যে সমস্ত মহিলা মা হওয়া বা সন্তান প্রসব করা কোমর ব্যথা হওয়ার আর একটি অন্যতম কারন। এছাড়াও ফ্যসেট জয়েণ্ট ও স্যাকরো ইলিয়াক জয়েন্ট অসঠিকভাবে কাজ করলে কোমর ব্যথা হতে পারে। সর্ব শেষে একটি বিশেষ কারনের কথা বলছি যে কারনটির কথা সচরাচর আমরা ভুলে যাই তাহলো মাংশ পেশির দুর্বলতা বা ইমব্যালেন্স।
কোমর অসুস্থ হলেই প্রথমে আমরা ব্যথা অনুভব করি। আর এই ব্যথা লোকাল অথবা রেফার্ড হতে পারে। এই ব্যথা কোমরে থাকতে পারে আবার কোমর থেকে বাটক, উরু অথবা পায়ের নিচের অংশের যেতে পারে। এই ব্যথা হঠাৎ করে হতে পারে আবার আস্তে আস্তে হতে পারে। এই ব্যথার জন্য আমাদের দৈনিন্দন কাজ ব্যাহত হয়, চলাফেরার গতি কমে যায়। অনেক সময় এই ব্যথা হতে শোয়া, বসা, দাঁড়ালে অথবা হাঁটার সময় কম বেশি হতে পারে। কাশি দিলেও কখনও কখনও ব্যথা হতে পারে।
কোমরের শিঁরদাড়ার পাশের মাংস চাপ দিলে এবং তল পেটের মাংসে চাপ দিলেও ব্যথা অনুভব করা যেতে পারে। এই উপসর্গ গুলো নির্ভর করে রুগীর স্পাইনের কোন অংশে কি পরিমাণ অসুস্থতা হয়েছে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রুগীকে রোগের ইতিহাস জানা দরকার। কি কি উপসর্গ হয় এবং সঠিক ফিজিওথেরাপিউটিক ইক্সামিনেশন করা দরকার। রোগের ইতিহাস ও পরীক্ষা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্ট রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন। যেমন- কখন ব্যথা শুরু হয়েছে, এই ব্যথা কোথা থেকে কোথায় যায়, আপনি এখন কেমন বোধ করছেন, কখন এ ব্যথা শুরু হয়েছিল এবং কখন ব্যথা কমে গেছে। এখন ব্যথা আছে কিনা? কি ধরনের চিকিৎসায় আপনি ভাল বোধ করেন বা আপনার ব্যথা থাকেনা। কি কাজ করলে আপনার এ ব্যথা কমে যায় অথবা ব্যথা থাকে না বা বেড়ে যায়। আপনার শোয়া, বসা, দাঁড়ানো অথবা হাঁটার সাথে আপনার এ ব্যথার কোন সম্পর্ক আছে কি?
এরপর ফিজিওথেরাপিষ্ট আপনার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পরীক্ষা করবেন এবং এ পরীক্ষা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষার সময় ফিজিওথেরাপিষ্ট বের করবেন কোথায় আপনার অসুবিধা যেমন অসুবিধা কি হাড়ে, ডিস্কে, টেন্ডোনে লিগামেন্টে অথবা মাংসে?
মনে করুন আপনার মাংসে অসুবিধা; মাংসের কোন অংশে অসুবিধা একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে বের করতে পারবেন। এ ছাড়াও আপনার দরকার হতে পারে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এম.আর.আই এবং রক্ত পরীক্ষা।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে অনেকাংশে বোঝা যায় আপনার ক্যান্সার, ইনফেকশন, ইনফ্লামেশন অথবা সিস্ট আছে কিনা? একজন মেডিসিন বিশেষাজ্ঞ পরামর্শ মত ঔষধ খেলে সবচেয়ে ভাল হয়। তাছাড়াও যেখানে ব্যথা আছে এই ব্যথার জায়গায় ব্যথানাশক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
খাদ্য তালিকায় একটু পরিবর্তন আনতে হবে যেমন প্রচুর পানি খেতে হবে, মৌসুমি ফল বেশি খেতে হবে। খাদ্য তালিকায় আদার রস এবং পেপে যুক্ত করতে হবে। ভাত ও ভাত জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। গড়ে ৮ ঘন্টা ঘুমালে এ রোগ থেকে আরও দ্রুত আরোগ্য পাওয়া যায়। আশা করি আপনারা যারা এরকম কষ্টে ভুগছেন এ চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন এবং কষ্টমুক্ত হবেন।
ফিজিওথেরাপির চিকিৎসার মধ্যে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত ম্যানুয়াল থেরাপি। এই ম্যানুয়েল থেরাপির সাথে লো-লেভেল লেজার থেরাপি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, ওয়াক্স প্যাক থেরাপি, ক্রায়োথেরাপি ব্যবহার করতে হবে এবং লাম্বার করসেট হিসেবে ট্রানাসভার্সাস এ্যবডোমিনিস মাস্ল ব্যবহার করতে হবে। তবে সম্পূর্ণ বিশ্রাম আপনার অসুস্থ বাড়াতে পারে। ঘরের মধ্যে ছোট ছোট কাজ যেমন- চেয়র টেবিলে বসে খাবার খাওয়া, ওয়াস রুম ব্যবহার করা এবং ঘরের মধ্যে চলাফেরা করতে হবে যা আপনার অসুস্থ সারাতে সাহায্য করবে। মনে রাখতে হবে আপনার ডিস্ক আপনার মুভমেন্টের উপর বেঁচে থাকে।
চিকিৎসকদের মতে ব্যাক পেইন চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যান্ত গুরুত্ব বহন করে। একটি সঠিক ব্যায়াম আপনার কোমরের ব্যথা দ্রুত নিরাময় করতেই পারে। সুতরাং ব্যাক পেইন নিয়ে আপনাকে আর জীবন-যাপন করতে হবে না। যে কাজ করতে গিয়ে আপনার কষ্ট হয় ঐ কাজ করবেন না। বসে থাকা অবস্থায় সঠিক ভঙ্গি ব্যবহার করুন যাতে আপনার ডিস্কের উপর চাপ না পরে। কোন বস্তু উত্তলন করার সময় সঠিক ভঙ্গি ব্যবহার করুন যেমন, হাঁটু এবং হিপ জয়েন্ট বাঁকা করে কোমর সোজা রেখে বস্তু তুলুন। কখনও কোমর বাঁকা করে তুলবেন না।
ব্যাক পেইন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ব্যায়াম করবেন। আশা করি আপনি ব্যথা মুক্ত থাকবেন।
“আবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আধুনিক ম্যানুয়্যাল থেরাপির মোবালাইজেশন এর মাধ্যমে অতি দ্রুত এই ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব।”

প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার
ব্যাক পেইন বিশেষজ্ঞ

লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
০১৭৬৫৬৬৮৮৪৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.