![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা শহরের সুবিশাল অট্টালিকা দেখে মনোমুগ্ধ এক সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ রহিম মিয়া। যেদিকেই তাকায় সে হয় অবিভূত আর আশ্চুর্য। নিজ চোখে যেন তার বিশ্বাসই উঠে এসেছে সে; যে দেশে এখনও বহু মানুষ সারাদিন হাড়-ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও ফসলের প্রাপ্য মূল্য পায় না। কোন মতে হয়ত দু’মুঠো খেয়ে দিন পার করে ঠীকই, কিন্তু তাকে বেঁচে থাকা বলা যায় না। প্রচন্ড আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাতে না পেরে, শেষে এই রাজধানী শহরে জীবিকার তাগিদে আস্তে বাধ্য হল সে। কিন্তু এসে যা দেখলো তা তো তার চর্মচোক্ষে বিশ্বাস হতে চাই না। কিভাবেই বা বিশ্বাস হবে। যে জিনিস সে গ্রামে ৫ টাকায় বেচেতে পারেনি সে জিনিস এখানকার বাজারে সে ৫০ টাকাতেও কিনতে পারছে না ।গরীব মানুষকে আরও গরীব করে এখানকার মানুষ সম্পদশালী হয়। বিশাল বিশাল অট্টালিকা বানায়। এসব ভাবতে ভাবতেই পথের এক ধারে দাঁড়িয়ে সেজদা দিতে থাকে থাকে সে। কোটি মানুষের ভীড়ে সেই রহিম মিয়া কারও চোখে না পড়লেও, চোখে পড়ে অলস ভঙ্গিতে বসে থাকা তারিকের। রহিমের চলাফেরা, ক্যারিকেচার দেখে তারিকের জিজ্ঞাসু মনটাও কেমন জানি উতলা হয়ে ওঠে। হাতে থাকা সিগারেটটা পাশের নর্দমায় ফেলে দিয়ে রহিমের কাছে যেয়ে প্রশ্ন করেই বসে,” কি বব্যাপার নতুন নাকি কেখানে? কি নাম তোমার?” রহিম ভয়ার্ত দৃষ্টিতে নাম বলে তার চেয়ে থাকে। সে কোথা থেক এসেছে, সেটা জিজ্ঞাস করলে রহিম মিয়া উত্তর দেয়,” গাইবান্ধা”। দেশি মানুষ পেয়ে তারিক রহিমকে চা খাওয়ার জন্য বলে। এরপর চা খেতে খেতে তাকে জিজ্ঞাস করে,”তা তুমি এভাবে রাস্তায় সিজদা দিচ্ছিলা কেন ভাই?”
এরপর রহিম যা উত্তর দেয় তাতে তারিক কেন যে কেউ-ই হতবাক হয়ে যাওয়ার কথাই। রহিম মিয়া বলে, “এই যে দালানগুলো, এই যে এত কিছু এখানে, এসব তো আমাদেরকে মেরেই এরা করেছে। এখানকার মাটিতে, এখানকার বাতাসে শুধু আমি নিজের আপন মানুষগুলোরই ঘাম আর রক্তের গন্ধ পাচ্ছি। একে সিজদা না করলে তা পাপ হয়ে যাবে ভাই, বড় পাপ হয়ে যাবে।“
কথা গুলো ভেবে গত ৬ মাস ধরে চাকরীর জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো তারিকের মনে আলোড়ন জাগল। মন তাকেও প্রশ্ন করল, “তারিক আর কত দিন নিজের অধিকার ছেড়ে দিবি? এবার জেগে ওঠ তারিক, আগ্নেগিরির অগ্নুতপাতের হয়ে জেগে ওঠ”।
©somewhere in net ltd.