নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সব্যসাচী

মানুষের জন্য

প্রজন্ম পশ্চিমাঞ্চল

প্রজন্ম পশ্চিমাঞ্চল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পাহাড়ের দিনগুলি"

০২ রা মে, ২০১৭ রাত ২:১৪

অক্টোবর, ২০১৫।
মাত্র ২ সপ্তাহ পার হয়নি নতুন চাকরিতে যোগদানের। আগের চাকরির সাথে কাজের মিল পাওয়া যায় বটে, তবে বলব না তখনও কাজটাই আমি পারদর্শী। প্রথম অফিসের দিন, বস বলে দিল আমাকে খাগড়াছড়ি সাইটে যাওয়া লাগবে। নতুন চাকরি কি কাজ তখনও তেমন কিছুই ভাল মত বুঝে উঠিনি। বস বলল, সমাস্যা নাই, চলে যাও পারবা কাজটা। এরপর সুরু হল অপেক্ষা সেই দিনের, কবে যাব খাগড়াছড়ি। এমনিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম, আমার প্রিয় জায়গাগুলোর একটা এবং এই জায়গাটার প্রতি আগ্রহ, রুয়েট জীবন শুরু বহুত আগে থেকেই। যা হোক, মধ্য অক্টোবর এ হঠাত করে, যাওয়ার ডাক এল খাগড়াছড়ি। তখনও বুঝিনি আসলে কি আছে সামনের দিনগুলোতে। পরদিন চট্টগ্রাম পৌছে, আরও একদিন অপেক্ষা করা লাগল, কেননা চট্টগ্রাম অফিসে তখনও আমার জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টস আর গাড়ীর ব্যবস্থা করতে পারিনি। সুতরাং ওই দিনটা চট্টগ্রাম শহরে থাকা বন্ধুদের সাথে কাটিয়ে দিলাম। পরদিন সকালে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি বোঝাই করে ড্রাইভার আমার হোটেলের সামনে ফোন দিতেই, ব্যাগ-বোচকা নিয়ে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির পথে। ওখানে ৩ টা সাইটে প্রি-কমিশনিং করতে হবে সামনের ১ সপ্তাহে। যদিও শীত আসেনি তখনও কিন্তু খাগড়াছড়ি জাওয়ার রাস্তায় সকালের আবহাওয়াটায় বেশ শীত শীত আমেজ ছিল। ড্রাইভারের এই দিকের পথ ঘাট বেশ চেনা, সুতরাং আমি নিশ্চিন্ত মনে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছিলাম আর গন্তব্যে পৌছানোর অপেক্ষা করছিলাম। হঠাত ড্রাইভার শর্টকাট করে ভাটিয়ারির রাস্তা দিয়ে যাতে চাইলে আমি মানা করলাম না। ভাটিয়ারির পাহাড়ী রাস্তাটা খুব চওড়া নয়, তবে আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটা অসাধারণ পাহাড়ী রাস্তা। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখে পড়ল বিএমএ। ইঞ্জিরিয়ারিং পড়তে আসার আগা পর্যন্ত এই জায়গাটার প্রতি আমার একটা অন্যরকম আকর্ষন কাজ করত। বহুবার আব্বু-আম্মুকে রাজি করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং কেই মেনে নিয়েছিলাম এখন থেকে ঠিক আট বছর আগে। কিন্তু কখনও ভাবিনি এই জবে এসে এই দিকটাই আর আসা হবে আর কোনদিন। যা হোক, সেই পুরোন স্মৃতি মনে করতে করতে আর প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে পৌছে গেলাম এতটা পথ বুঝতেই পারিনি। প্রায় আড়াই ঘন্টার সফর শেষে পৌছলাম আমার প্রথম গন্তব্য মানিকছড়ি। ওখানে সাইট দেখভালের কাজ করে কোম্পানির এক চাকমা ডিপ্লোমা, যাকে প্রথমে দেখে ভাবছিলাম একে আমার কথা কেমনে বোঝাবো আর কাজই বা কেমনে করব। কারন এমনিতে চট্টগ্রামে আমার ভাষা নিয়ে অভিজ্ঞতা খুব ভয়াবহ। কিন্তু সত্যিকথা বলতে এই লোকটা এতটাই আমাকে সহযোগীতে করেছিল যে ও না থাকলে হয়তে দুদিন পরেই আমকে কাজ ছেড়ে পালিয়ে আসা লাগত। এর সাথে ছিল আরো ৩ জন টেকনিশিয়ান, যারা বয়সে অন্তত আমার চেয়ে ১০-১২ বছরের বড়, আর তাদের এই সব কাজের অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে ঢের বেশি। অথচ যতদিন ওখানে কাজ করেছি বা এরপরও যত জায়গায় ওদের সাথে কাজ করেছি, ওরা একবারও কাজে না বলেছে মনে পরে না।
এবার ফিরে আসি আসল ঘটনায়। আসার আগে ঠীক যতটা খুশিতে ছিলাম কাজ শুরুর মুহুর্তেই সব খুশি উধাও হয়ে গেল। কাজ শুরুর জন্য যে পাওয়ার সাপ্লাই দরকার সেটা নাই। ওদের কাছে জানলাম, এটা এখানকার স্বাভাবিক ব্যাপার। আরও মজার ব্যাপার জানলাম, এখানে সারাদিনে ৬-৮ ঘন্টার বেশি এখানে পাওয়ার থাকেনা, আর যাও থাকে তাতে ভোল্টেজ ২০০ভোল্টেরও নিচে থাকে। শেষ পর্যন্ত দুদিনের কাজ ৪ দিনে কোন মতে শেষ করলাম। প্রথম সাইট শেষ করতে পারাতে প্রোজেক্ট ম্যানেজার টাইম এর ব্যাপারটা মেনে নিলেন, তবে সময় নিয়ে দু-চারটা জ্ঞান দিতে ভুল করলেন না।
এরপরের গন্তব্য মারিশ্যা। সাইটের দেখভালের দায়িত্বে থাকা রাস্কিন চাকমা আমকে জানালো এবারের জায়গাটা নাকি শান্তি বাহিনীর আস্তানা ছিল কিছুদিন আগেও। এখনও মাঝে মাঝে ওদের আসা যাওয়া আছে। এবার আমকে বলা হল ওখানে বলা যাবে না আমি কোম্পানির নাম, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা লাগবে আমি বিদ্যুত এর লোক। তার উপর সেই আগের প্রবলেম তো আছেই। এখানে পাওয়ার সাপ্লাই থাকেনা প্রায় সারাদিনই, খুব জোর দিনে দু একবার আসে। অনেক বাড়িতে এরা সোলার লাগিয়েছে, নিজেদের উদ্যোগে। অনেকটা কোন মতে কাজ শেষ করেই ফিরতে হল, দুদিনে কিছুকাজ বাদ রাখেই ফেরা লাগল।
পরের গন্তব্য পানছড়ি। এই জায়গাটা আরেকটু অদ্ভুত। এখানে প্রবলেম মাত্র দুটো, এক দিকে এখানে পাওয়ার বলতে কিছু এরা চিনেই না, যারা কিছুটা অবস্থা সম্পন্ন তারা সোলার দিয়ে নিজেদের কাজ চালাই। আরেকটি সমস্যা, এই জায়গাটা আমাকে বিকাল ৫টার আগেই ছেড়ে আসতে হবে, কেননা ওখানে সন্ধার পর শান্তিবাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। আরও মজার একটা ব্যাপার আছে, এই সাইটে টয়লেট করতে গেসে যাওয়া লাগত, প্রায় ৫ কিমি দুরের বাজারে। আশেপাশের যা টয়লেট দেখলাম তা সেই ৯০ এর দশকের গ্রামগুলোর মত, তাও সেটাও কম করে এক-দেড় কিলোমিটার দুরের লোকালয়ে। এখাঙ্কার খাবার দাবারও ছিল আমার জন্য অখাদ্য বললে ভুল হবেনা।
এই ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার শুরুর গল্প। এরপর প্রায় ৩ মাসে অনেক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার দেখা মিলেছিল এই জায়গাগুলোতে। আসতে আসতে অনেক মানুষের সাথে দেখা, আর তারপর থেকে ওদেরকেও অনেক কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছিল। মানুষগুলোকে যেভাবে জানতাম, তার চেয়ে ওদের গল্প অনেক ভিন্ন। সৌন্দর্য আর আতঙ্কের অবিমিশ্র রঙ এই পার্বত্য চট্টগ্রাম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৭ ভোর ৪:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


মোটামুটি তেমন কিছু নেই, খালি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.