নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

ইফতেখার ভূইয়া

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক

ইফতেখার ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

এনভিদিয়া জিফোর্স বনাম কোয়াড্রো

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৩৩

টাইটেলে উল্লেখিত বিষয় আলোচনার সুবিধার্থে কিছুটা ভূমিকার প্রয়োজন বোধ করছি।

ভূমিকাঃ গ্রাফিক্স বা ভিডিও কার্ড কম্পিউটারের অন্যতম একটি কম্পোনেন্ট যা আপনার ল্যাপটপের ডিসপ্লে বা ডেস্কটপ কম্পিউটারের মনিটরে দৃশ্যমান সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে। পিক্সেল, কালার ডেপথ, রিফ্রেশ রেট এর মত গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুই মূলত গ্রাফিক্স কার্ডের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। প্রথম দিকের কম্পিউটারগুলোর জি.ইউ.আই. তুলনামূলকভাবে অনেক সাধারণমানের হওয়ার কারণে গ্রাফিক্স কার্ডগুলো ততটা শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন ছিলো না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আর.জি.বি. সাপোর্ট (৮/১৬/৩২ বিট) থাকলেই সেখানে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় দৃশ্য বা ইন্টারফেস তৈরী করা সম্ভব হতো।

বিগত দু'দশকে সে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং এর সুফল ভোগ করছি আমরা সবাই। বর্তমানের খুব সাধারণ মানের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারগুলোতেও বেশ শক্তিশালী গ্রাফিক্স কার্ড মাদারবোর্ডে যুক্ত থাকার কারণে সাধারণ ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই মোটামুটিভাবে উন্নত মানের ছবি বা ভিডিও উপভোগ করতে পারছেন। মনে রাখা জরুরী যে, মূলত ৯০ এর দশকের পর থেকেই জনপ্রিয় প্রসেসর র্নিমাতা কোম্পানীগুলো (ইন্টেল/এ.এম.ডি./ভিয়া) তাদের মাইক্রোপ্রসেসরগুলোতে আলাদা করে ভিডিও চিপ বা ইঞ্জিন (জি.পি.ইউ.) সংযুক্ত করতে শুরু করে যাতে গ্রাফিক্স কার্ড র্নিমাতা কোম্পানীগুলোর (এনভিদিয়া, এ.এম.ডি., এস.থ্রি, থ্রি.ডি.এফ.এক্স., এ.টি.আই. ইত্যাদি) উপর ব্যবহাকারীর নির্ভরতা কমিয়ে আনা যায়। পাশাপাশি কম্প্যাটিবিলিটি এবং ড্রাইভার সাপোর্টের মতো কাজগুলো কমিয়ে আনা যায়। মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা কোম্পানীগুলো এতে কিছুটা সফলতা অর্জন করলেও তাদের আধিপত্য খুব বেশীদিন ধরে রাখতে পারেনি। এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা সম্ভব তবে সংক্ষেপে বললে বলবো মূলত গেমিং, কনজিউমার গ্রেড ভিডিও এবং প্রফেশানল ভিডিও সর্ম্পকিত কাজের পরিধি (ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি রেন্ডারিং) বেড়ে যাওয়ার কারনে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পুরো ব্যাপারটা এতটাই জটিল আর ব্যয়বহুল আকার ধারণ করে যে, কোন একক মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা কোম্পানীর পক্ষে দুটো বাজার (মাইক্রোপ্রসেসর, জি.পি.ইউ.) এক সাথে ধরে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আর এই কারণেই মূলত এনভিদিয়া এবং এ.টি.আই টেকনোলজিস এর মতো কোম্পানীগুলো নতুন করে বাজারে একাধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে।

এনভিদিয়ার উত্থানঃ হালের বাজার লক্ষ্য করলে অবশ্য একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, মূলত এনভিদিয়া কোম্পানটিই জি.পি.ইউ. মার্কেটে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে। মাইক্রোপ্রসেসর র্নিমাতা কোম্পানী এ.এম.ডি-র সাবসিডিয়ারি কোম্পানী এ.টি.আই টেকনোলজী বাজারে তাদের রেডিওন ব্র্যান্ডের গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। মূলত ৯০'এর দশক থেকেই আমি এনভিদিয়ার বিভিন্ন গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে আসছি, মাঝে রেডিওন-ও ব্যবহার করে আবার এনভিদিয়াতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি বিভিন্ন কারনে।

কয়েক দশক ধরে, এইচ.ডি. ভিডিও (মূলত চলচ্চিত্র ও ভিডিও ক্যামেরায় ব্যবহারের কারনে) এবং গেমিং-এর বাজার অনেকটাই সম্প্রসারিত হয়েছে, পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ইউটিউব ভিডিও কন্টেন্ট তৈরীর কারনে ভিডিও এডিটিং এর বাজারও বেড়েছে কয়েকগুণ। সবকিছু মিলিয়ে উন্নত মানের গ্রাফিক্স কার্ডের উপর নির্ভরতা-ও বেড়ে গেছে অনেকগুন। এদিক থেকে এনভিদিয়া বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের (মূলত জিফোর্স, কোয়াড্রো) গ্রাফিক্স কার্ড এনে মোটামুটিভাবে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে, বিশেষ করে প্রফেশনাল কন্টেন্ট নির্মাতাদের কাছে এগুলো বেশ জনপ্রিয়।

উন্নতমানের ভিডিও তৈরী এতটাই জটিল পর্যায়ে চলে গেছে যে এখন শুধু মাইক্রোপ্রসেসরের গাণিতিক ক্ষমতা দিয়ে আর কুলোচ্ছেনা। প্রয়োজন হচ্ছে বেশ শক্তিশালী এবং নিবেদিত গ্রাফিক্স চিপ বা ইঞ্জিন যা নিজেও এক ধরনের মাইক্রোপ্রসেসর। জিপিইউ মূলত সিপিইউ এর সাথে নর্থ ব্রিজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাণিতিক কাজ সম্পাদন করে। পুরো ব্যাপার ব্যাখ্যা করে বোঝানো কঠিন তাই একটি ইলাস্ট্রেশন তুলে দিচ্ছি বোঝার সুবিধার্থে।

কপিরাইটঃ এনভিদিয়া।

এনভিদিয়া জিফোর্সঃ যারা নিয়মিত গেমিং করেন বা নতুন নতুন টাইটেলের গেইম ট্রাই-আউট করেন তারা বেশ ভালো করেই জানেন যে, উন্নত মানের গ্রাফিক্স কার্ড কতটা জরুরী। প্রায় দু'দশক ধরে এনভিদিয়ার জিফোর্স কার্ডগুলো গেমার ছাড়াও, হাই ডেফিনিশন ভিডিও কনজিউমের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বিলিয়ন ডলারের গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে জিফোর্স কার্ডগুলোর অবদান অস্বীকার উপায় নেই। ডেস্কটপে ডেডিকেটেড কার্ড ছাড়াও বিভিন্ন গেমিং ল্যাপটপের জন্যেও এনভিদিয়া জিফোর্স ব্র্যান্ডের মোবাইল জিপিইউ তৈরী করেছে এবং করছে। জিফোর্স ব্র্যান্ডের বিভিন্ন সিরিজের কার্ড এখন বাজারে বেশ সহজলভ্য।

এনভিদিয়া কোয়াড্রোঃ মূলত প্রফেশনাল কাজের জন্য এই ব্র্যান্ডের কার্ডগুলো বেশ জনপ্রিয়। কম্পিউটার এ্যাইডেড ডিজাইন (ক্যাড), কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজারি (সিজিআই), ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েশন (ডিসিসি), বৈজ্ঞানিক গণনা এবং মেশিন লার্নিং এ্যাপলিকেশনগুলোতে কাজ করার জন্য কোয়াড্রো-র কার্ডগুলো বেশ উপযোগী।

বিশ্লেষণঃ সমসাময়িক জিফোর্স এবং কোয়াড্রো কার্ডগুলোর চিপসেট বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই একই হয়ে থাকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসলে তাহলে দু'টো ব্র্যান্ডে পার্থক্য কোথায়? চিপসেট একই হলেও মূল পার্থক্য আসে চিপসেটগুলো কিভাবে কাজ করে বা আন্ডারলাইয়িং আর্কিটেকচারে। মূল জিপিইউ চিপের আর্কিটেকচারের মধ্যেও পার্থক্য আছে এবং এগুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরন করা হয়ে থাকে, যেমন ভল্টা, ম্যাক্সওয়েল, প্যাসকেল, কেপলার, টেসলা ইত্যাদি।

বলছিলাম আন্ডারলাইয়িং আর্কিটেকচারে কথা। এখানে মনে রাখা জরুরী যে স্বাভাবিকভাবে কোয়াড্রো কার্ডের চিপসেটে জিফোর্সের তুলনায় অনেক বেশী মেমরি ব্যাবহার করা হয়ে থাকে, তাই গাণিতিক হিসেব করার ক্ষেত্রে এই কার্ডগুলো বেশ এগিয়ে থাকে। চিপসেট একই হওয়ার পরেও শুধুমাত্র ডাটা প্রসেসিং করার সক্ষমতার কারণে কোয়াড্রো কার্ডগুলো আর্কিটেক্ট, ইন্জিনিয়ার, ডিজাইনারদের ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলোর জন্য উপযোগী/কম্প্যাটেবল করে বানানো হয়। তাতে করে প্রফেশনাল ব্যবহারকারীরা অন্যান্য কার্ড বা ব্র্যান্ডের তুলনা কোয়াড্রো কার্ডে অনেক বেশী ভালো পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করতে পারেন। এক্ষেত্রে এনভিদিয়া ঐসব প্রফেশনাল সফট্ওয়্যার কোম্পানীরগুলো সাথে সরাসরি পার্টনার হিসেবে কাজ করে এবং নিরাপত্তার বিষয়টিও খুব সিরিয়াসলি মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এই কার্ডগুলোর আরেকটি বিশেষ ফিচার হলো, একসাথে একাধিক ডিসপ্লে সাপোর্ট (বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ৩ বা তার বেশী) করা যা জিফোর্সে তুলনামূলকভাবে কম লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও এই কার্ডগুলোতে গাণিতিক ভুল করার সম্ভাবনা জিফোর্সের তুলনায় অনেক কমিয়ে রাখার দিকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

অন্যদিকে জিফোর্স কার্ডগুলো মূলত গেমিং ইন্ডাস্ট্রির উদ্দেশ্যে বানানো হয়, যেখানে মূল লক্ষ্যই থাকে কোয়ান্টিটি ওভার কোয়ালিটি। মানে দাঁড়ালো, স্বল্প সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফ্রেম জেনারেট করে তা ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করা। এখানে প্রতিটি ফ্রেমের কোয়ালিটি কোয়াড্রো কার্ডের তুলনায় কম হয়ে থাকে যদিও তা অতি সূক্ষ্ম এবং স্বাভাবিকভাবে তা চোখে পড়ে না। কিন্তু অনেক বেশী ফ্রেম তৈরী করার কারণে তা নিরবিচ্ছিন্ন দৃশ্য প্রদর্শনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই বাজারে অনেক বেশী ফ্রেম প্রর্দশনে সক্ষম গেমিং মনিটর আলাদাভাবে বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক মনিটরগুলো ৬০ হার্টজের হলেও আধুনিক গেমিং উপযোগী মনিটরগুলো ১২০, ১৪৪, ১৬৫, ১৮০, ২০০ এমনকি ২৪০ হার্টজেরও হয়ে থাকে। ঠিক এখানেই জিফোর্স কার্ডগুলো তাদের সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করতে পারে।

আইরনি হলো, এতকিছুর পরেও এবং একই জিপিইউ হওয়ার সত্ত্বেও কোয়াড্রো কার্ডগুলো জিফোর্সের তুলনায় বেশ দামী। কারণ কার্ডগুলো মূলত কোয়ালিটির উপর জোর দিয়ে থাকে এবং এদের লাইফস্প্যান, ওয়ারেন্টি পিরিয়ড-ও জিফোর্সের তুলনায় অনেক বেশী।

নোটঃ সময় স্বল্পতার কারনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছি ইচ্ছে করেই। এমন কিছু বিষয় রয়ে গেছে যা হয়তো গভীর আলোচনার জন্য প্রয়োজন ছিলো কিন্তু তা স্বল্পপরিসরে সম্ভব নয়। আশা করছি ব্যাপারগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কত্তকিছু জানার আছে!
বাপ্রে! ;)

অনেক ধন্যবাদ। বেশ ক্লিয়ার হলো অনেক কিছু :)

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:২১

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আসলে পুরো বিষয়টাই আরো অনেক বেশী জটিল। চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব সহজ ভাষায় লিখার, তারপরেও কিছু বিষয় অজানাই থেকে যাবে। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গবেষণা বা পড়াশোনার প্রয়োজন। অনেক কিছু জেনেছেন, জেনে ভালো লাগছে। সময় করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমি বিশ্বাস করি- বাঁচতে হলে জানতে হবে।

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: দ্যাটস্ এ গুড ওয়ে টু লুট এ্যাট লাইফ।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনলাইনে বেচাকেনার জন্য সফটওয়ার কোন কোম্পানীগুলো বিক্রয় করে?

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪৯

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: ওপেন সোর্স বা বিনে পয়সায় ব্যবহার করতে পারেন ওপেনকার্ট, উকমার্স দিয়ে। আর সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে সপিফাই বা বিগকমার্স ব্যবহার করতে পারেন।

৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


ধন্যবাদ।
এগুলো ব্যবহার করে, অর্ডার নেয়া, পেমেন্ট পাওয়া, সবকিছু করা যায়?

১৮ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:১২

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অবশ্যই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.