নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষ। বলার মতো বিশেষ কিছু নেই। মনের ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই। ভালো লাগে কবিতা, লিখা-লিখি আর ছবি তোলা, এইতো! https://prokashoni.net

ইফতেখার ভূইয়া

গণতন্ত্র মুক্তি পাক, পরিবারতন্ত্র নিপাত যাক

ইফতেখার ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট থেকে বাংলাদেশের জন্য যা শিক্ষণীয় - ভাবনা

২৪ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮


চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট বোঝার জন্য আমাদের কিছুটা পেছনে ফিরে যাওয়া উচিত। ২০১৩ সালের শেষ দিকে ইউক্রেন পার্লামেন্টের ব্যাপক সমর্থন উপেক্ষা করে রাশিয়াপন্থী ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ যখন "ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন - ইউক্রেন এসোসিয়েশন চুক্তি" থেকে হঠাৎ সরে আসেন, তখন দেশব্যাপী বিক্ষোভ এর সূচনা হয়। এই বিক্ষোভ মূলত "ইউরোময়দান" নামে অধিক পরিচিত। ইয়ানুকোভিচ ই.ইউ. এর সাথে ঘনিষ্টতা না বাড়িয়ে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চেয়েছিলেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে এই চাওয়াটা অমূলক না হলেও দেশের বিশাল জনসংখ্যার ইচ্ছা-আকাঙ্খা উপক্ষো করাও অসম্ভব ছিলো। তবে ধারনা করা হয় চুক্তি স্বাক্ষর না করার পেছনে যতটানা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছের উপর নির্ভরশীল তার চেয়ে বেশী চাপ ছিলো রাশিয়ার দিক থেকে। ইউরোময়দানের শেষ দিকে ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারিতে এসে শুরু হয় "রেভ্যুলেশন অফ ডিগনিটি" বা মর্যাদার বিপ্লব।

ততদিনে বিপ্লবে অন্তত শ'খানেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ইউক্রেনের সংসদ ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ এর প্রতি অনাস্থা এনে তাকে পদচ্যুত করে এবং ইউক্রেন তার ২০০৪ সালের সংবিধানে ফিরে যায়। ইয়ানুকোভিচ নিজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন তাকে নিরাপদে রাশিয়াতে নিয়ে যেতে। পুতিন সে অনুরোধ রক্ষা করে তাকে রাশিয়ায় নিয়ে আসেন যা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন (সূত্র)।

এখানে উল্লেখ করা জরুরী যে, ইয়ানুকোভিচের আগে প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভিক্টর ইউশেঙ্কো যিনি ইউক্রেনকে ই.ইউ. এর সাথে আরো ঘনিষ্ট হওয়া ও ন্যাটোতে যোগ দেয়া নিয়ে বেশ সরব ছিলেন। ধারনা করা হয় এ কারনেই রাশিয়া ইউশেঙ্কোকে হত্যার উদ্দেশ্যে পয়জনিং করেছিলো খাবারের মাধ্যমে যদিও এ ব্যাপারে শতভাগ কোন প্রমাণ উপস্থাপন সম্ভব হয় নি। এ নিয়ে অনেক মতবাদ রয়েছে যা আপনার নিজ উদ্যেগে জানার চেষ্টা করতে পারেন।

যাইহোক, ইউক্রেনে হঠাৎ রাশিয়া তার নিয়ন্ত্রন হারালে প্রায় সাথে সাথেই রাশিয়া সৈন্য পাঠিয়ে ক্রাইমিয়া এনেক্সড করে নেয়। মনে রাখা জরুরী এইসব আন্দোলন ও বিপ্লবে ইউক্রেনের ফার রাইট আল্ট্রা ন্যাশনালিস্ট দলগুলো প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়ে এসেছে। এদের বেশীরভাগই স্বসস্ত্র নিও-নাৎস্যি (সূত্র)। এদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই অভিযোগ ছিলো যে তারা ইউক্রেনে বসবাসরাত রাশিয়ান ভাষা-ভাষী মানুষদের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করেছে যদিও তারা আইনগতভাবে ইউক্রেনের নাগরিক। আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেন এসব স্বীকার না করলেও রাশিয়ার এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের এবং পুতিন এ বিষয়ে বার বারই কথা বলেছেন। অনেক পশ্চিমা মিডিয়া বিষয়টিকে অসত্য দাবী করলেও বিষয়টি যে একটি বড় ইস্যু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার বিষয়টি এমনও নয় যে রাশিয়া মূলত তাদের ভাষা-ভাষী মানুষদের রক্ষার জন্যই ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছে। রাশিয়ান ভাষা-ভাষী এসব ইউক্রেনিয়ানদের বসবাস মূলত দেশটির রাশিয়া ঘেঁষা পূর্বাঞ্চলগুলো যা বেশীরভাগই এখন মূলত রাশিয়ার দখলে।

রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের মূল কারণ
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেশটি ভেঙ্গে যে নতুন দেশগুলো বিশ্ব মানচিত্রে নিজেেদের স্থান করে নিয়েছে তার সবগুলো দেশই মোটাদাগে সোভিয়েত ইউনিয়ন/রাশিয়া বিরোধী মতাদর্শ বিশ্বাস করে, আর এটাই স্বাভাবিক। ৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুই জার্মানীর একত্র হওয়াকে নিজেদের পরাজয় জেনেও তা মেনে নিয়েছে এই নিশ্চয়তায় যে পশ্চিমারা তাদের সামরিক বাহিনীর শক্তি ন্যাটোর মাধ্যমে আর পূর্বের দিকে এগুবে না। অন্য ভাষায় বলতে গেলে ন্যাটো আর পূর্ব দিকে অবস্থিত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে আর ন্যাটোতে অর্ন্তভূক্ত করবে না। কারন রাশিয়ার এটাকে তাদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে মনে করে। মিখাইল গরভাচেভ মূলত এই নিশ্চয়তার কারনেই জার্মানী থেকে সরে আসেন। তবে বর্তমানে অনেকেই মনে করে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র জর্জ বুশ এমন কোন নিশ্চয়তা দেন নি। যদিও সে সময় মার্কিন সেক্রেটারী অফ স্টেট (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) জেমস বেকার স্বীকার করেন যে গর্বাচেভ এই নিশ্চয়তা চেয়েছেন এবং তিনি (বেকার) সম্মতিও দিয়েছেন (সূত্র)। এগুলোকে এখন অনে পশ্চিমারা-ই অস্বীকার করছে যা রাশিয়া অনেকটা রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।

এ বিষয়ে মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফরি স্যাকস এর মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কে বা কেন তার কথা শোনা উচিত সেটা বোঝার জন্য তার ব্যাপারে কিছুটা পড়াশোনার প্রয়োজন রয়েছে। সময় নিয়ে ইউক্রেন ইস্যুতে তার কথাগুলো সবার শোনা উচিত বলে আমি মনে করি (দেখুন)।

উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সময় পুতিন পূর্ব জার্মানীতে কে.জি.বি.-র সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন (সূ্ত্র), সবকিছু তার সামনেই ঘটেছে এবং তিনি পুরো বিষয়টি সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য লজ্জাজনক পরাজয় হিসেবেই দেখেন। তাই বিশ্ব দরবারে সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা রাশিয়ার পুন:প্রতিষ্ঠা তার কাছে অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেকটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। প্রেক্ষাপট ভালোভাবে বোঝার জন্য ৬০'এর দশকে কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস নিয়ে পড়াশোনারও প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ - ভারত সম্পর্ক
রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার ইস্যুতে এতক্ষণ ধরে যা বলা হয়েছে তার অনেক কিছুর সাথে বর্তমান বাংলাদেশ - ভারতের সম্পর্কের শীতলতা ও ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ভারত হুমকির একটা পরিষ্কার ছাপ রয়েছে বলে আমি মনে করি। ৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে যে পূর্ব পাকিস্তান জন্ম নিয়েছিলো, তা যে তৎকালীন ভারতের জন্য নিরাপত্তাজনিত হুমকি ছিলো তা তারা দেশ ভাগের পরপরই বুঝতে পেরেছে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটা আরো পরিষ্কার হয়ে হয়েছে।

একটি দেশের সাথে দুটো ফ্রন্টে যুদ্ধ চালানোর চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ফ্রন্টকে কাজে লাগিয়ে মূল ফ্রন্ট থেকে আলাদা করে দেয়ার সুবিধা বোঝার জন্য কোন মিলিটারী এ্যানালিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ১৯৭১ এর যুদ্ধে ভারত কর্তৃক পূর্ব-পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও রসদ সরবরাহ ছাড়াও তাদের সরাসরি অংশগ্রণ মূলত সে প্রচেষ্টারই একটি বাস্তব বহিঃপ্রকাশ। তার মানে কখনোই এটা নয় যে, জাতি হিসেবে আমাদের ভারতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। উল্টো আমার ধারনা আজকের বাংলাদেশের মানুষগুলোও তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদানকে অস্বীকার করে না তবে একই সাথে এই মাটিতে তাদের তাবেদারী সরকারকে-ও আর পছন্দ করে না।

আপনি যতবারই ভারতের আধুনিক মানচিত্র দেখবেন, ততবারই একটা বিষয় পরিষ্কার হবে যে ভারত মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগোলিকভাবে ভারতের জন্য বেশ বড় একটা দুর্বলতা। বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সাথে ভারতের বিরাট অংশের যে অসম যোগাযোগ, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ব্যবধান রয়েছে তার বড় একটা কারন এই বাংলাদেশ। সেখানে ভারতকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের সাথে চীন তথা পাকিস্তানের রাজনৈতিক সুসম্পর্ক, সামরিক ও বেসামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও অন্য যে কোন কর্মকান্ড অনেকটাই ভারতের জন্য নিরাপত্তার হুমকি। বাংলাদেশে ভারতপন্থী ও ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী সরকারের মাঝে কিছু পার্থক্য থাকলেও নীতিগত দিকে তেমন একটা পার্থক্য নেই। ইয়ানুকোভিচের ইউক্রেনে রাশিয়া যেমন সুবিধা পেয়েছে ভারত বাংলাদেশে হাসিনার সময়ে তার চেয়ে কম সুবিধা পয়েছে বলে আমার মনে হয় না।

ইউক্রেন আক্রমনের আগে ও পরে রাশিয়া তার নিরাপত্তা ও রাশিয়ান ভাষা-ভাষী ইউক্রেনীয়ানদের প্রতি অন্যায়ের যে ন্যারেটিভ আমরা শুনেছি বা শুনছি তেমনি বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিরুপ আচরণ ও বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থানের ন্যারেটিভও আমরা শুনতে পাই ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া থেকে। সে কথা তারা দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলে বেড়াচ্ছে। আজ তুলসি গ্যাবার্ডকে বলেছে, কাল ই.ইউ.-কে গিয়ে বলবে এর পর অন্য কোথাও। সত্য ও মিথ্যে নির্ধারণের আগে জেনে রাখা ভালো বার বার মিথ্যে-কেও যদি মিডিয়াতে প্রচার করা হয় এক সময় বিশ্ব সেটাকেই সত্য বলে মেনে নিতে শুরু করে আর সমস্যার শুরু সেখানেই। ইয়ানুকোভিচের রাশিয়া পলায়ন আর হাসিনার ভারত পলায়নের পার্থক্য এতটুকুই যে হাসিনা বিমানে পালিয়েছে আর ইয়ানুকোভিচ বাই রোড যদিও ইউক্রেনের মিলিটারী ইয়ানুকোভিচকে পালাতে সাহায্য করে নি। এটাও ভাববার মতো বিষয়।

রাশিয়ার ইউক্রেনের ভূ-খন্ড দখল এখন বাস্তবতা। ভারত যে বাংলাদেশকে কোনদিনও আক্রমণ করে দখল করবে না তেমন কোন চুক্তি কখনো স্বাক্ষর হয় নি। ইউক্রেনের জন্মলগ্নে রাশিয়া তাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়ার সুবাদে ইউক্রেন তাদের অনেকগুলো নিউক্লিয়ার অস্ত্র রাশিয়াকে ফেরত দিয়েছিলো, দিন শেষে তাতে অবশ্য কাজ হয় নি। বাংলাদেশের তেমন কিছু দেয়ার না থাকলেও অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের মাত্রাতিরিক্ত ভারত নির্ভরতা, বাণিজ্যে অসমতা তাদের অনেক কিছু দিয়েছে বৈ কি! তবে দিন শেষে ভারতের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই ভারতের জন্য সমস্যার ও নিরাপত্তার বিষয়। সুতরাং ভারত যে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আক্রমণ করবে না, তেমন নিশ্চয়তা নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কিছু নেই।

বাংলাদেশের দিক থেকে যুদ্ধ অবশ্যই কোন অপশন নয় তবে এটা অবশ্যসম্ভাবী। বিষয়টা যুদ্ধ হবে কি হবে না সেটা নয়, কবে হবে সেটাই প্রশ্ন। কারণ ভারত মানচিত্রে বাংলাদেশের উপস্থিতিকে তারা কখনোই সহজভাবে নেয় নি, আর নিবেও না। ভুলে গেলে চলবে না ভারতের নতুন সংসদে স্থাপিত "অখন্ড ভারত" ম্যুরালে পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ বলে কিছু নেই (সূত্র), পুরোটাই ভারত। তবে অন্যান্য বাকি দেশগুলো তুলনায় বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে একটু বেশী গুরুত্বপূর্ণ। বোঝার জন্য ভারতের মানচিত্র বার বার দেুখন। বাংলাদেশকে এ্যানেক্সড করা সম্ভব হলে, সেটা ভারতের জন্য অবশ্যই পজিটিভ বিষয় হবে। তবে ভারত এখনো রাশিয়ার মতো পরাশক্তি নয়। বিষয়টিকে আপনি চীন-তাইওয়ান ইস্যুর মতোও ভাবতে পারেন। আমেরিকায় উপস্থিতিই মূলত চীন ও ভারতকে এ ধরনের কাজ করা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের সাম্প্রতিক এই যুদ্ধ ও তার পরিণতি অবশ্যই তাদেরকে উৎসাহিত করবে।

সম্ভাব্য সমাধান
আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো, সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা। হ্যাঁ, সেটা ভারতওে সাথেও হতে হবে তবে সেটা নিজ স্বার্থ বিকিয়ে নয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈদেশিক মিশন ও বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে স্ব-স্ব রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিতে হবে ও ডিপ্লোম্যাটিক কর্মকান্ডের পরিধি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে হবে যাতে ক্ষমতার চেক এন্ড ব্যালেন্স এর বিষয়টি সুনিশ্চিত করা যায়। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রীর টার্ম লিমিট করে দেয়া যাতে কেউ দীর্ঘ মেয়াদে কোন সুর্নিদিষ্ট পক্ষের হয়ে কাজ করতে না পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ও বিচার বিভাগকে আরো স্বাধীনতা দেয়া। সামরিক শক্তির আধুনিকায়ন, ১৮ বছর হয়ে গেলে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে বাধ্যতামূলক ২/৩ বছরের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান (সার্টিফিকেট সহ)। শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি উন্নত দেশে প্রেরণ, ট্রেনিং শেষে দেশে এনে তাদের কাজে লাগানো। বৈদেশিক অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমানো ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জন সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়া, দুর্নীতি রোধ, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক জীবন-মান উন্নয়ন ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার সুনিশ্চিত করা।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠাই নিরাপদ বাংলাদেশ এর একমাত্র সূত্র। এর অন্যথা হলে বাংলাদেশ তার অস্তিত্ব সংকটে পড়বে সন্দেহাতীতভাবে। ইতিহাস অন্তত সেটাই শেখাচ্ছে আমাদের।

মনে রাখতে হবে দিন শেষে ৫৬ হাজার বর্গ-মাইলের এই দেশ আমার-আপনার, আমাদের সবার। সকল ভেদাভেদের উর্ধ্বে থেকে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সকলের এক থাকার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক, বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টা হতে হবে। আপনার, আমার আমাদের সন্তানদের জন্য সুন্দর বাংলাদেশের জন্য এক হয়ে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে সেটা রক্ষা করা আরো বেশী কঠিন।

নোট: পুরো লিখাটিই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। এখানে ইতিহাসের কিছু বিষয় উল্লেখ থাকাতে তথ্যের অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকা অসম্ভব নয়। সুর্নিদিষ্ট কোন ভুল থাকলে সেটা তথ্যসূত্রসহ উল্লেখ করলে অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে তা সংশোধনও করা যেতে পারে। আমি কোন পেশাদারী কলামিস্ট নই, সুতরা সকল বক্তব্য কিছুটা লবনসহ হজম করার অনুরোধ থাকছে। ধন্যবাদ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২৯

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো, সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা। হ্যাঁ, সেটা ভারতওে সাথেও হতে হবে তবে সেটা নিজ স্বার্থ বিকিয়ে নয়।

বিগত ১৬ বছর হাসিনা অনেকটাই বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানিয়েছে , হাসিনা নিজের মুখে বলেছে সে ভারতকে যা দিয়েছে তা ভারত আজীবন মনে রাখবে।

ভারত বাংলাদেশকে কি কি দিয়েছে তার একটা বিবরণ দিন।

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০২

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না কারণ লিখার মূল বিষয়বস্তুর সাথে এটার সরাসরি গুরুত্ব খুব একটা নেই। তবে নিজ উদ্যেগে সেটা জানার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০৮

রাসেল বলেছেন: সহমত পোষণ করছি, কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কি?

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০৩

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনেকটাই জনগণের ইচ্ছের উপর নির্ভরশীল। সবার আগে সচেতনতা বেশী জরুরী বলে মনে হয়েছে। ধন্যবাদ।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: পরপর লেখাটা দুবার পড়লাম।

২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০৪

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:৫৫

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: "if India could swallowed us, they would have swallow us"
ইউরোপ, পার্সিয়ান, আফগান, আরবদের মত ভারতের ১২ হাজার বছরের ইতিহাসে বাইরের কোন রাজ্য দখল বা আক্রমণ করার রেকর্ড নেই, কারন তারা সফ্ট পাওয়ার জাতি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল দেশ গিলে খাওয়ার মত সামর্থ্য, এখনো ভারতের হয় নী।

তবে তার মানে এই নয় ভারতের সাথে যুদ্ধ ভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে চলতে হবে। "কারো সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব"। ভারত বড় ও মুক্তিযোদ্ধের সহায়তাকারী দেশ হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। তবে তা কোন‌ ভাবেই বাংলাদেশ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নয়? বর্তমানে ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার দায় পুরাটাই দিল্লির। বানিজ্য, ভিসা বন্ধ সহ সবকিছু দিল্লির নেওয়া। ইউনুস সরকারের খুব বেশি দায় আছে বলে মনে হয় না। পুরো পোষ্টে‌ ও সম্ভাব্য সমাধান বাস্তবসম্মত।‌

৩১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:১২

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: এখানো দুটো বিষয়ে পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন।

১। হাসিনার মতো লোক ক্ষমতায় রেখে যদি বাংলাদেশকে চুষে খাওয়া যায়, তবে সেটাই ভালো অপশন। বিগত ১৬ বছর ধরে সেটাই হয়ে এসেছে আর ইয়ানুকোভিচের ইউক্রেনেও তেমনটাই হচ্ছিলো বহুদিন ধরেই। সমস্যা হয় যখন হাসিনার মতো ইয়ানুকোভিচরা জনগণের ধাওয়া খেয়ে তাদের প্রভু রাষ্ট্রে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

২। নতজানু সরকার না থাকলে রাশিয়ার মতাে কিছু ধুয়ো তুলতে হয়। সংখ্যালঘু আক্রমন ও নির্যাতন আর সেগুলো নিয়ে মিডিয়ায় ও বিশ্বে মাইক নিয়ে মিথ্যাচারণ করে একটা শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ তৈরী করে আক্রমণের প্রাথমিক স্তর তৈরী করা। রাশিয়া সেটা করেছে, ভারতও করেছে ও করছে।

আগেই বলেছি, বিষয়টা হবে কি হবে না সেটা নয়। কবে হবে সেটাই প্রশ্ন। সেটা এক হাজার বছর পরে হলেও হবে। বাংলাদেশে যে সনাতনধর্মী ভাই-বোনদের কোন সমস্যা হয় নি, সেটা কেউই বলবে না। কম-বেশী হয়েছে তবে ভারত যতটা দাবী করছে ততটা অবশ্যই নয়। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয়, খোদ ভারতেও আছে। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা, গো-মাংস খাওয়ার কারনে পিটিয়ে মুসলিমদের মেরে ফেলার ঘটনা আমরা ভুলিনি। আমেরিকাতেও আছে।

কারো সাথেই দ্বন্দ্বে জড়ানোর পক্ষপাতি আমি নই তবে পূর্ণ প্রস্তুতির পক্ষে অবশ্যই। ভূ-রাজনীতি অত্যন্ত জটিল বিষয়। সব ধরনের অবস্থার জন্য দেশের সবাইকে প্রস্তুত ও ট্রেনিং প্রাপ্ত থাকা উচিত। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.