নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনোয়ারা মণি

মনোয়ারা মণি

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার

কামরুন নাহার আমার নাম নয় আমার নাম মনোয়ারা মণি

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝিনুক ও মুক্তার গল্প

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩৮

ছোটবেলার সাজগোজ আর গহনা পরার স্মৃতির পাতার প্রথমেই দেখতে পাই আমার অনেক পছন্দের ‘মোতি’র মালা। যে মালাগুলো সম্ভবত সিনথেটিক ‘মোতি’র ছিলো। সময় প্রবাহে মালার সাথে যোগ হয়েছে কানের দুল, নাকের ফুল আর আংটি। সোনার গহনার প্রতি বরাবরই আকর্ষণ কম অনেক সময়ই শুনতে হয়েছে ‘সোনার গহনা তোকে মানায় না’। ‘মোতি’ বা ‘মোতি’র মালা নামটি আমার জীবন থেকে অন্তর্ধান হয়ে এক সময় ‘আসল মুক্তা’ আর বর্তমানে ‘রিয়েল পার্ল’ নামে রূপান্তর হয়েছে। গলায় মুক্তার মালা দেখেই বোধহয় একজন শুভাকাঙ্ক্ষী অগ্রজ ‘মণি-মুক্তা’ নামে ডেকেছিলেন। আনন্দ প্রকাশের প্লাবনে মাঝে মাঝেই বলতাম মুক্তা আমার জন্যই বানানো হয়েছে অথবা উই ওয়ার মেড ফর ইচ আদার। নানা রঙের নানা ডিজাইনের মুক্তার মালা বা সেট দেখলেই কিনতে ইচ্ছে হয় আর আনন্দের সাথে কিনেও ফেলি। আপনজনেরা এখন প্রিয় ইলিশ মাছের সাথে মুক্তার মালাও জুড়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে আসল পার্ল পাওয়া যায় এমন দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া একটি। গত জুলাই দু’হাজার বারোতে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে মুক্তার দোকান থেকে মালা কেনার সময় বিক্রেতা মেয়েটি বললো ‘এটা নাও, ফ্রেস ওয়াটার পার্ল। যদিও ইংল্যান্ডে ন্যাচারাল অথবা কালচার্ড পার্ল কিনা একথা মুক্তার মালা কেনার সময় যাচাই করেই কিনতে হয় কিন্তু ফ্রেস ওয়াটার অথবা সল্ট ওয়াটার পার্ল নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা মাথায় আসে নাই কখনও। এবার অস্ট্রেলিয়াতে মালা কেনার সময় দোকানের মেয়েটাকে পার্লের বিষয়ে বুঝিয়ে দিতে বললাম - ওদের কি আর অতো সময় আছে? কম বুঝে ভালো আছি এই থিওরি ভুলে গিয়ে এক সময় পারিবারিক পণ্ডিতকে কালচার্ড মুক্তার কাহিনী বুঝাতে বলতেই সে ঝিনুকের জীবন বৃত্তান্ত বুঝিয়ে দিলো। তখন থেকেই মন খারাপ। কেন যে বুঝতে চাইলাম সেটাই ভাবছিলাম আর চোখে ভাসছিলো ছেলেবেলায় বেদে রমণীদের ঝিনুক কুড়িয়ে সিদ্ধ ঝিনুক থেকে ‘মতি’ বের করার দৃশ্য। বুকের মাঝে প্রচণ্ড খচখচানি শুরু করলো কবি আবুল হাসানের লেখা আমার প্রিয় কবিতা-

“...ঝিনুক নীরবে সহো,

ঝিনুক নীরবে সহে যাও

ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও!’’

ইংল্যান্ডে ফিরে এসে অনেক কাজের ব্যস্ততার মাঝেও দেখি সাগর আর ঝিনুক আমার মাথার মাঝেই বসে আছে। গত কয়েকদিন ঝিনুক আর মুক্তার জীবন নিয়ে টানা হেঁচড়ায় কাটলো। অদ্ভুত একটা চিন চিনে ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছিনা মোটেও। মনে পড়ছে জীবনের একটা সময়ের কথা। চিকেন লিভার আর ইলিশ মাছের ডিম খুব পছন্দ ছিলো আমার। বাড়ীতে গেলেই বাবা এগুলো কিনতেন। একদিন দেখি পলোর (বাঁশ দিয়ে বানানো) নীচেকয়েকটা মুরগীর বাচ্চা। মাকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন ‘আজ বাজারে মুরগীর কলিজা পাওয়া যায় নাই এইজন্য তোর ছেলে (মা বাবাকে আমার ছেলে বলেন) মুরগীর বাচ্চা কিনে এনেছে। এগুলো থেকে তোর জন্য কলিজা ভুনা করবো’, নিজেকে সেদিন নির্দয় নিষ্ঠুর ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি নাই। মুরগীর কলিজা খাওয়ার ইতিহাসের সমাপ্তি সেখানেই।

এখন মুক্তার মালার কথা মনে হলেই মনে হচ্ছে ঝিনুকের জীবনের যন্ত্রণার কথা। প্রাকৃতিক নিয়মে যন্ত্রণায় আক্রান্ত ঝিনুক নিজেকে রক্ষা করতে তৈরি করে মুক্তা। আবার মানুষ মুক্তা পাওয়ার লোভে ঝিনুকের মাঝে নিজ হাতে রোপণ করে যন্ত্রণার বীজ। অসহায় ঝিনুক মুখ বুজে ব্যথা সয়ে বেঁচে থাকে একটা বেদনাহীন জীবনের আশায়। প্রলেপের উপর প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেয় তার বেদনার উৎসকে। ঝিনুক কি জানে এরই জন্য মানুষের হাতে হবে তার প্রাণদণ্ড। এই কথাগুলিই নানা ভাবে নানা দৃশ্যে আমার মনের মধ্যে ঘুরাঘুরি করছে। ভাবনা হচ্ছে আর কি কখনও আনন্দের সাথে মুক্তার মালা কিনতে পারবো? আমার ভালোলাগার সাথে বার বার জড়িয়ে যায় কিছু সৃষ্টির জীবনের যন্ত্রণা- কখনও বা মুরগী আবার কখনও বা ঝিনুক হয়তো বা মানুষেরও। আজকাল মুক্তার মালা হাত নিয়ে এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়াই আর ভাবি আমার সাথেই কেন এমন হয়?

Many hundreds of pearl oysters or pearl mussels have to be gathered and opened, and thus killed, in order to find even one wild pearl, and for many centuries that was the only way pearls were obtained. http://en.wikipedia.org/wiki/Pearl



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫৪

আধারের কবি বলেছেন: :( strange is the feeling though never felt before

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫১

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আধারের কবি। কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৩

তানিয়া হাসান খান বলেছেন: :( :( :(

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৩

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: এতো কষ্ট দেয়ার জন্য সত্যিই খারাপ লাগছে পরবর্তীতে হাসিমুখ দেখার চেষ্টা থাকবে। লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ তানিয়া হাসান খান।

৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:০০

মামুন অবাদুল্লাহ বলেছেন: ভালোই লিখেছেন ঝিনুক ও মুক্তার কথা। কাউকে স্বর্ন ভালো দেখায় আবার কাউকে বা মুক্তা তবে আপনাকে মুক্তাতেই ভালো লাগবে। ভালো থাকেন..............................

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৪

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: সুন্দর কমেন্ট আর লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ মামুন আবদুল্লাহ।

৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:০৬

নীল-দর্পণ বলেছেন: জন্মের পর আমাকে কালো দেখে নানা ভাই কোলে নিয়ে বলেছিলেন "আমার কালো নাতীনটার মান হবে মুক্তা" ডাক নাম এটাই।

মুক্তা জিনিসটা আমার খুব খুব পছন্দের। এর ইতিহাসটা কিছুটা জানলেও আপনার পোষ্ট পড়ে কেমন যেনো বেশী কষ্ট লাগছে। এভাবে কখনো ভাবিনি

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৫

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি কালো তারে বলে গায়ের লোক’...কমেন্টের মধ্যেও থাকে হৃদয়ের ছোঁয়া। একটি নতুন জগতে এক শিশু তার ছোট হাতে ধরে আছে একটি বলিষ্ঠ হাতের কনিষ্ঠ অঙ্গুলি...এমনি করেই সে চলা শিখে যায় একদিন। লেখাটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই মুক্তা নীল-দর্পণ।

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: Many hundreds of pearl oysters or pearl mussels have to be gathered and opened, and thus killed, in order to find even one wild pearl, and for many centuries that was the only way pearls were obtained. পুরো লেখাটা এ থিমের উপর দাঁড়িয়ে গেছে। .... and thus killed... ঝিনুকেরও প্রাণ আছে। ভাবুন, মুক্তোরও প্রাণ আছে, মুক্তও ক্ষুদ্র থেকে বেড়ে উঠতে থাকে।

ছোটোবেলায় আড়িয়াল বিলে মাছ মারতে গিয়ে অনেক ঝিনুক 'kill' করেছি, ভেতরের মাংশ খুঁটে খুঁটে ছোট্ট বালুকণার মতো রুপালি বস্তুকণা পেতাম। বাড়িতে এনে মাকে দেখাতাম। মা তখন ওগুলো একটা শর্ষে-তেলের শিশিতে পুরে রাখতে বলতো। এভাবে নাকি মুক্তো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। কিন্তু সেই মুক্তো বড় হতে দেখি নি। দিনভর তেলের শিশি নিয়ে খেলতাম, মুক্তো বের করতাম, আবার বোতলে পুরতাম, খেলতে খেলতে হারিয়ে যেতো, মাটিতে পড়ে যেতো, একসময় ওসবের কথা ভুলে যেয়ে অন্যখেলায় মেতে উঠতাম।

লেখা খুব মর্মস্পর্শী।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৪৭

ব্লগপাতায় কামরুন নাহার বলেছেন: ছোটবেলায় কৌতূহলী ছেলেটি একদিন অনেক বড় হবে সে স্বপ্ন মা সেদিনই দেখেছিলেন তাইতো মৃত্যুর ভিতর থেকে বাঁচিয়ে রাখার মন্ত্র শিখিয়েছিলেন।
মা কখনও মিথ্যা বলেন না।
সেই চঞ্চল ছেলেটির বড় কিছু দেখার অস্থিরতা ছিলো প্রচণ্ড। মোতি বোতলে নয় মাটির বুকে ঠিকই বেড়ে উঠেছিলো যখন সে অন্য খেলায় ব্যস্ত।
আড়িয়াল বিল দেখার শখ রইলো একদিন সাথে লাইব্রেরির বইগুলিও...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.