নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিশ্চিত গন্তব্য

ভণ্ড সাধক

আমি কেউ না

ভণ্ড সাধক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিল্পী সম্মানী এবং আব্দুল জব্বার

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭


সালাম সালাম হাজার সালাম... বিদায় হে বীর কণ্ঠযোদ্ধা আবদুল জব্বার। তাঁর কাঠালবাগানের বাসায় দুই কিস্তিতে দীর্ঘ দুই ইন্টারভিউ নেওয়ার স্মৃতি চোখে ভাসছে। পোকা-মাকড়ের মতো টিকে থাকা এই জীবনে বহু গুণীজনের সান্নিধ্য পাওয়া ছাড়া প্রাপ্তি তেমন কিছু নেই। তাই যেসব মনীষীর সংস্পর্শ পেয়েছি তাদের প্রয়াণে বুকে দাগ কাটা স্মৃতি মনে করে শ্রদ্ধা জানাই। শিল্পী জব্বার ভাইয়ের সঙ্গেও মোহনীয় কিছু স্মৃতি আছে, তবে এক তিক্ততায় সবই আবছা হয়ে গেছে । এজন্য জব্বার ভাই দায়ী নন মোটেও, ওই বিব্রতকর ঘটনার নায়ক বা খলনায়ক কে তা না হয় পরেই বলি।

কালজয়ী অসংখ্য গানের শিল্পী আব্দুল জব্বারের প্রয়াণে শোকের মিছিল দর্শক-শ্রোতার অন্তরে। হৃদয়ছোয়া স্মৃতিতে ভাসছে ফেসবুক । লোকটা আমি মন্দ বলেই বোধহয় বিড়ম্বনার স্মৃতিটাই আজ হানা দিচ্ছে মনে।

প্রায় ৮/৯ বছর আগে কাজ করতাম আনন্দ আলোতে, প্রথমে সিনিয়র রিপোর্টার পরে চিফ রিপোর্টার। বিজয়ের মাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আবদুল জব্বারের দীর্ঘ ইন্টারভিউ নিলাম, সেটি ছাপাও হলো। কয়েকদিন পর অফিসের টিএন্ডটি নম্বরে কল । রিসিপশনিস্ট মনি জানালো, শিল্পী আবদুল জব্বার সাহেব আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। ইন্টারভিউ মন মতো হলে ভদ্রতা করে শিল্পীদের কেউ কেউ ধন্যবাদ বলার উদারতা দেখান, আবার উল্টাপাল্টা হলে কেউ কেউ আপত্তিও জানান। ভাবলাম সেরকমই কিছু।

- হ্যালো, জব্বার ভাই। কেমন আছেন? ইন্টারভিউটা পড়েছেন? কেমন হয়েছে? ফোনের অপর প্রান্তে চাপা কণ্ঠ, ‘আমি আবদুল জব্বার বলছি, শিল্পী আবদুল জব্বার। বুঝছেন কে আমি? আমি শিল্পী আবদুল জব্বার।’

- জ্বি জব্বার ভাই, আপনার শরীরের অবস্থা কেমন? ইন্টারভিউটাতে ছাপা হয়েছে। ভাই আপনার কি চোখে পড়েছে?
- দেখছি, পড়ার সময় পাই নাই। শোনেন শিল্পী আবদুল জব্বার বলছি।
-জ্বি বুঝতে পারছি।
- ইন্টারভিউ নিলেন, ছাপাও হলো। খুব ভালো। কিন্তু শিল্পী সম্মানী কই? শিল্পী আবদুল জব্বারের সম্মানী দিবেন না।

তাজ্জব হলাম। ইন্টারভিউয়ের জন্য আবার শিল্পী সম্মানী! এর আগে একবার কবি নির্মলেন্দু গুণের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে কবি সম্মানী দিতে হয়েছিল। কবি অবশ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইতেই বলেছিলেন, ইন্টারভিউয়ের জন্য আমাকে টাকা দিতে হবে। কিন্তু শিল্পী আবদুল জব্বার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় একবারও সম্মানীর কথা মুখে আনেননি। উল্টো বরং মানিকগঞ্জের শবরি কলা আর খেজুর গুড়ের সন্দেশ দিয়ে অ্যাপ্যায়ন করেছিলেন। ইন্টারভিউ ছাপা হওয়ার পর কেনো সম্মানীর কথা বলছেন!

আমার ক্ষণিক নিরবতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে অপর পাশ থেকে আবারও তাগিদ, ‘কী হলো? কথা কানে যায় না, আমি শিল্পীসম্মানী চাই। আপনাদের অফিস তো চ্যানেল আইতে। আমি আমার ছোট ছেলে বাবুকে পাঠাচ্ছি। ওর হাতে শিল্পী সম্মানী দিয়ে দিবেন’। আমাকে কথা বলার আর কোনো সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দেওয়া হলো।

অবস্থা আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ। ব্যাপারটা সম্পাদক রেজানুর রহমানকে জানানোর জন্য ছুটলাম। হায় হায় রেজানুর ভাই তো সিটে নেই। শিল্পী যদি এখন তার ছেলেকে সত্যিই পাঠিয়ে দেন! সেই কাঠালবাগান থেকে তেজগাঁও, রাস্তায় জ্যাম। আহা এতো কষ্ট করে ছেলেটা আসবে! তারচেয়ে বরং শিল্পীকে বলি, আজকে ছেলেকে না পাঠাতে। রিসিপশনে মণিকে বললাম, শিল্পী আব্দুল জব্বারের বাসায় কল লাগান। মণি জানালো, দুইটা নম্বরই বিজি। একটু দেরি হবে। আপনি সিটে যান, আমি দিচ্ছি।

ডেস্কে ফিরলাম। কতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, কি যন্ত্রণা। আরে আমার মোবাইলেই তো জব্বার ভাইয়ের নম্বর আছে। ব্যালেন্স শেষ হয়ে এসেছে, তবে একটা কল বোধহয় করা যাবে। কল দিলাম জব্বার ভাইয়ের মোবাইলে। একবার রিং বাজতেই তিনি রিসিভ করলেন। আরে আরে অবাক কাণ্ড- এত বড় একজন শিল্পী ; আমার মতো অভাজনের নম্বর দেখি সেভ করে রেখেছেন।

- হ্যাঁ বিপুল, তোমাকে ফোন দেব বলে ভাবছিলাম। লেখাটা পড়লাম। বেশ ভালো লেখো তুমি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যা বলেছিলাম। ওই জায়গাটা আরেকটু ডিটেইল করলে ভালো হতো। শুরুটা ভালো করেছো। ধন্যবাদ ছোট ভাই। বাসায় আরেকদিন চা খেতে আসো।

...মানে কী? এর আগে শিল্পী আবদুল জব্বারের নামে কে কল করেছিল? যিনি এ কাজটি করেছিলেন তার দেখা পেলাম ঘণ্টাখানেক পরেই। একটু বেটে আর খানিকটা মোটা করে ছেলেটা এসেই বলে, বাইরে মারাত্মক গরম। আপনাদের এইখানে কি কোল্ড ড্রিংকসের ব্যবস্থা আছে? শিল্পী সম্মানী দেন!

ভেবেছিলাম কঠিন ফাঁপড় নেব, কেনো জানি পারলাম না। একজন গুনী শিল্পীকে এভাবে ছোট না করার উপদেশ দিয়ে দায় সারলাম। মাথা নিচু করে ছেলেটা আমার ডেস্কের সামনে বসে থাকলো। আধাঘন্টা পেরিয়ে যায়, তবু ওঠার নাম নাই। বিনা কাজে এভাবে একটা লোক কি করে চুপচাপ বসে থাকতে পারে। তাকে মিছেমিছি বললাম, আমি যে এখন একটু বাইরে যাবো। আপনি কি আরো বসবেন?

ছেলেটা ওঠে দাড়ালো। এরপর কোনো সংকোচ ছাড়াই বললো, রিক্সা ভাড়া নাই, বিশ-পঞ্চাশটা টাকা থাকলে দেন।

বলেন তো, কে এই ছেলে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.