নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাভারতের গপ্পো - ০২৪ : অস্ত্রশিক্ষা প্রদর্শন

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৪


একদিন দ্রোণাচার্য মহারাজ ধতরাষ্ট্রকে জানালেন যুবরাজদের অস্ত্রশিক্ষা শেষ হয়ে গেছে। রাজা অনুমতি দিলে তাঁরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রদর্শন করবেন। ধতরাষ্ট্রে অনুমতি দিলে দ্রোণের নির্দেশ অনুসারে বিশাল প্রদর্শনক্ষেত্র তৈরি করা হলো। নির্দিষ্ট দিনে সেখানে ভীষ্ম, কৃপাচার্য, ধতরাষ্ট্রের এবং গান্ধারী, কুন্তী সহ রাজপুরনারীরা মঞ্চে গিয়ে বসলেন। দ্রোণাচার্য তাঁর পুত্র অশ্বত্থামাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন।

যৌদ্ধাবেশে সজ্জীত হয়ে রাজপুত্ররা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন। যুধিষ্ঠিরকে দিয়ে শুরু করে তাঁরা সকলে একে একে নিজেদের অস্ত্রশিক্ষার প্রয়ােগ দেখাতে লাগলেন। তাঁরা অশ্বারােহণে দ্রুতবেগে বাণ দিয়ে লক্ষ্যভেদ করলেন, রথ, গজ ও অশ্ব চালনা, বাহযুদ্ধ এবং ঢাল ব্যবারের নানান কৌশল দেখালেন।



তারপর দুর্যোধন ও ভীম গদা হাতে সগর্জনে পরস্পরের সম্মুখীন হলেন। দর্শকদের একদল ভীমের এবং আরেক দল দুর্যোধনের পক্ষ নিলো। শুরু হয়ে গেলো প্রচন্ড কোলাহল। তখন দ্রোণের পুত্র অশ্বত্থামা পিতার নির্দেশে গদাযুদ্ধে উদ্যত ভীম আর দুর্যোধনকে থামালো।




এবার অর্জুন তার শিক্ষা প্রদর্শন করতে শুরু করলো। অর্জুন আগুন-পানি বায়ু প্রভৃতি অস্ত্রের প্রয়ােগ দেখালেন। একটি ঘূর্ণমান লোহার শুকরের মুখে একসাথে পাঁচটি বাণ নিক্ষেপ করলেন, খড়্গ আর গদা হাতে বিবিধ কৌশল দেখালেন। দর্শকগণ অর্জনের নানাপ্রকার প্রশংসা করতে লাগল।




অর্জুনের কৌশলপ্রদর্শন শেষ হয়ে এসেছে এমন সময় সেখানে কবচকুণ্ডলশােভিত মহাবিক্রমশালী কর্ণ উপস্থিত হলেন। অর্জুন যে তাঁর ভাই তা তিনি জানতেন না। কর্ণ বললেন অর্জুন যাযা করে দেখিয়েছে তিনিও তাই তাই করে দেখাবেন। এই বলে তিনি দ্রোণের অনুমতি নিয়ে অর্জুন যা যা করেছিলেন তাই করে দেখালেন।

দুর্যোধন আনন্দিত হয়ে কর্ণকে আলিঙ্গন করে বললেন- তােমাকে স্বাগত জানাচ্ছি, তুমি এই কুররাজ্য ইচ্ছামত ভােগ কর।
কর্ণ বললেন- আমি তােমার সখা চাই, আর অর্জুনের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করতে চাই।
দুর্যোধন বললেন- তুমি সখা হয়ে আমার সঙ্গে সমস্ত ভােগ কর আর শত্রুদের মাথায় পা রাখ।
অর্জুন কর্ণকে অপমান করার জন্য বললো কর্ণ অনাহূত হয়ে এসেছে এবং অনাহূত হয়ে কথা বলেছে তাই অর্জুন তাঁকে অনাহূতদের নরকে পাঠাবে।
কর্ণ বললেন- এই রঙ্গভূমিতে সকলেরই আসবার অধিকার আছে। মুখে কথা না বলে যুদ্ধ করো।

দ্রোণের অনুমতি নিয়ে অর্জুন তাঁর ভাইদের সঙ্গে কর্ণের সম্মুখীন হলেন, দুর্যোধন ও তাঁর ভাইয়েরা কর্ণের পক্ষে গেলেন।
ইন্দ্র ও সূর্য নিজ নিজ পুত্রকে দেখতে এলেন, অর্জনের উপর মেঘের ছায়া এবং কর্ণের উপর সূর্যের কিরণ পড়ল। দ্রোণ কৃপ ও ভীষ্ম অর্জুনের পক্ষে গেলেন।

কুন্তী কর্ণকে নিজের ছেলে বলে চিনতে পারলেন। দুই পুত্রকে সশস্ত্র দেখে কুন্তী বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। এই সময়ে কৃপাচার্য কর্ণকে বললেন, অর্জুন কুরুবংশজাত, পাণ্ডু ও কুন্তীর পুত্র, ইনি তােমার সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধ করবেন। কর্ণ, তুমি কে? তােমার মাতা পিতার কুল কি? কোন রাজবংশের ছেলে তুমি? তােমার পরিচয় পেলে অর্জুন যুদ্ধ করা বা না করা স্থির করবেন, রাজপুত্রেরা তুচ্ছকুলশীল প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন না। কৃপের কথায় কর্ণ লজ্জায় মাথা নত করলেন। তখন দুর্যোধন বললেন, আচার্য, অর্জুন যদি রাজা ভিন্ন অন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে না চান তবে আমি কর্ণকে অঙ্গরাজ্যে অভিষিক্ত করছি। এই বলে দুর্যোধন তখনই কর্ণকে অভিষিক্ত করলেন।

এমন সময় কর্ণের পালকপিতা অধিরথ ঘর্মাক্ত ও কম্পিত দেহে সেখানে প্রবেশ করলেন। তাঁকে দেখে কর্ণ নতমস্তকে প্রণাম করলেন। তাই দেখে ভীম বললেন, সুতপত্র, তুমি অর্জনের হাতে মরবার যােগ্য নও, তুমি কশা হাতে নিয়ে কুলধর্ম পালন কর। যজ্ঞের খাবার যেমন কুকুর খেতে পারে না, তুমিও অঙ্গরাজ্য ভােগ করতে পার না।

দুর্যোধন বললেন, ভীম, এমন কথা বলা তােমার উচিত হয় নি। দ্রোণাচার্য কলস থেকে এবং কৃপাচার্য শরস্তম্ব থেকে জন্মেছিলেন, আর তােমাদের জন্মবত্তান্তও আমার জানা আছে। কবচকুণ্ডলধারী কর্ণ নীচ বংশে জন্মাতে পারেন না। কেবল অঙ্গরাজ্য নয়, সমস্ত পৃথিবীই ইনি ভােগ করবার যােগ্য।

এই সময়ে সুর্যাস্ত হল। দুর্যোধন কর্ণের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেলেন। পাণ্ডবগণ, দ্রোণ, কৃপ, ভীষ্ম প্রভৃতিও নিজ নিজ ভবনে চলে গেলেন। কর্ণ অঙ্গরাজ্য পেলেন দেখে কুন্তী আনন্দিত হলেন।



====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।



=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
মহাভারতের গপ্পো - ০২১, মহাভারতের গপ্পো - ০২২, মহাভারতের গপ্পো - ০২৩
=================================================================

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


রাজারাই ধর্মের স্তম্ভ

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এইটা মানা গেলো না।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ভারতবাসীর ছিল সূর্যদেবতা মধ্যপ্রাচ্যের ছিল চন্দ্রদেবতা।হুবাল দেবতার মাথায় ছিল চাঁদ ভারতীয় দেবতাদের মাথায় সূর্য আঁকা থাকতো।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাহ!! ভালো বলেছেন তো।

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১২

রাজীব নুর বলেছেন: ইউটিউবে মহাভারত দেখা শুরু করেছি।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমি দেখি নাই কখনো।

৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২২

বিটপি বলেছেন: আপনার লেখা এই অল্প কয়েকটি বাক্য পড়ার জন্য আমাকে অনেকদিন অপেক্ষা করে থাকতে হয়। ধন্যবাদ অপেক্ষা অবসানের জন্য।

কুন্তী যদি তখনি কর্ণের পরিচয় প্রকাশ করে দিত, তাহলে তাঁর কুল পরিচয় নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকত না। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও সেই দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না।। অর্জুন তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে হত্যা করতে চায়নি কিন্তু পাশা খেলার সময়ে দ্রৌপদীকে উদ্দেশ্য করে বলা কর্ণের কটুবাক্যের কথা স্মরণ করিয়ে কৃষ্ণ অর্জুনকে প্ররোচিত করেছিল নিরস্ত্র কর্ণকে হত্যা করতে।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: দুঃক্ষিত আমি আপনাকে অপেক্ষা করি রাখার জন্য।
আগামীতে চেষ্টা করবো আরো দ্রুত পোস্ট দিতে।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৪

জুল ভার্ন বলেছেন: চমতকার লিখেছেন।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৬| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৭

রাহাত আরা স্বর্ণা বলেছেন: পড়লাম। মহাভারত পুরোটা পড়ার ইচ্ছা আছে। ধন্যবাদ লেখনীর জন্য।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও মন্তব্যের জন্য।

৭| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৭

অপু তানভীর বলেছেন: এই পর্ব অনেক দিন পর দিলেন । আরও দ্রুত দিন ।

আপনার কারনে মহাভারত পড়া হচ্ছে । আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: জ্বী, একটু দেড়ি হয়ে গেছে। আগামী পর্ব তাড়াতাড়ি আসবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.