নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নানা কাহিনী

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৩২

বি.দ্র. : লেখার সাথে ছবির কোনো সম্পর্ক নাই।

নানা কাহিনী মানে নানান ধরনের কাহিনী না, বরং আমার নানার কাহিনী।
আমার নানার আদি বাড়ি হচ্ছে ঢাকার বাড্ডার মোল্লা পাড়ায়। আমার নানার নাম লতিফ মোল্লা, বংশের নামেই এলাকার নাম। নানার আদি বাড়ি বাড্ডার মোল্লা পাড়াতে হলেও আমার নানা বিয়ের পরে চলে যান তার শ্বশুর বাড়ির এলাকায়, পূর্ব রামপুরায়। সেখানেই শুরু করেন সংসার, গড়ে তোলেন নিবাস। সেই এলাকার নাম হয়ে যায় পূর্ব রামপুরা মোল্লা বাড়ি। বাড্ডার মোল্লা পাড়ায় রয়েগেছে আমার নানার সকল আত্মীয়রা, শুধু নানা রামপুরায় গিয়ে গড়ে তুলেছেন নতুন মোল্লা বাড়ি।

আমার নানা সম্পর্কে আমার কোনো স্মৃতি নেই। মায়ের কাছে নানা সম্পর্কে অতি সামান্যই শুনেছি। নানা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। নানা যখন হজ্জ্ব পালনের জন্য মক্কায় গেছেন তখন হজ্জ্ব পালন কালীন সময়ে কোনো ভাবে বুকে প্রচন্ড আঁঘাত পান। ফলে তিনি সুষ্ঠ ভাবে সম্পূর্ণ হজ্জ্ব পালন করতে পারেন নি। অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে এসেছিলেন। নানা এক দিন ঘুম থেকে উঠে সবাইকে জানান তিনি হজ্জ্ব সম্পূর্ণ করেছেন, স্বপ্নে!!
নানার কাহিনী এইটুকুই।


আমার উকিল নানার বাড়ি হচ্ছে উত্তর বাড্ডার ভাওয়ালীয়া পাড়ায়।
উকিল নানা ছিলেন বেজায় আমুদে লোক। দুহাত ছড়িয়ে খরচ করতেন। স্বভাব চরিত্র দুধে ধোয়া তেঁতুল বিচির মতো। ছোটখাটো কালো রঙের মানুষ, তবে মনটা সাদা। মনে যা চাইতো তাই করতেন তিনি। নিজের কোনো খায়েশ অপূর্ণ রাখার লোক তিনি ছিলেন না। তালের রস ছিল উনার প্রিয় পানিয়, সাথে গরু বা মুরগীর কাঁচা মরিচের ঝাল মাংস কষা। তাস খেলতে খুবই পছন্দ করতেন। তবে কখনো জিততে পারতেন না খুব একটা।

উকিল নানার মনে ছিলো একটাই দুঃখ, নানীর কোনো সন্তান ছিলো না। নানাজ্বী কয়টা বিয়ে করেছিলেন সেটি গুনে বলা মুশকিল। কিন্তু বড় নানী ছাড়া অন্য কোনো নানীই খুব বেশী দিন নানী হিসেবে টিকেনি। প্রায় সকলেই টাকা পয়সার লোভে নানাকে বিয়ে করতো। বিয়ের পরে কিছু টাকা পয়সা গয়নাগাটি হলে সেগুলি নিয়ে টুপ করে ডুব দিতো। ডুব দিতে তাদের তেমন কোনো সমস্যা হতো না, কারণ নানা নতুন নানীদের কখনোই বড় নানীর বাড়ির ধারে কাছে আনতো না।

উকিল নানা-নানী দুজনেই আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন, আদর করতেন।
আমার জন্মের পরে আমার দুধ খাওয়ার জন্য উকিল নানা আমার জন্য একটি দুধেল গরু দিয়ে ছিলেন। আমার বয়স ৬-৭ বছর হওয়া পর্যন্ত আমার প্রধান খাদ্য ছিলো দুধ আর দুধ ভাত। ঐ গরুর বাচ্চা থেকে আমাদের বাড়িতে সব সময় গরু থাকতো। সর্বশেষ আমাদের বাড়ির গরু গুলি বিক্রি করে দেয়া হয় ১৯৯৮ সালে।

তো বড় নানী একবার কিভাবে যেনো খোঁজ পেলেন নানার কোনো এক স্ত্রীর গর্ভে একটি ছেলে হয়েছে। তারপর নানী খুঁজে খুঁজে কিভাবে কিভাবে সেই ছোট নানীকে বের করে তার কাছ থেকে সেই শিশু বাচ্চাটিকে নিয়ে এলেন নিজের কাছে। সেই মামু এখন বড় নানীর আদরে বড় হয়েছে, বিয়ে করেছে, কয়েক বছর আগে একটি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে।

বেশ কয়েক বছর আগে আমার উকিল নানা মারা গেছেন। অনেক দিন অসুস্ত হয়ে বিছানায় ছিলেন। এমনিতেই ছোটখাটো মানুষ ছিলেন, অসুস্থ হয়ে আরো শুকিয়ে গিয়েছিলেন। নানার অবস্থা খুব খারাপ শুনে আমি দেখতে গেলাম। নানা খাটে শুয়ে আছে। আত্মীস্বজেনরা সবাই চারপাশে। সকলেই ডাকাডাকি করছে, নানা একবারের জন্যও চোখ খুলছে না।

আমি গিয়ে নানার মাথার পিছনে দাঁড়ালে পরে নানী নানাকে ডেকে বললেন- "দেখেন আপনেরে কে আইছে দেখতে! মেম্বরের পোলা আইছে, সারোয়ার।"
এইটুকু বলার পরে নানা চোখ মেলে মাথার উপর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন। সবাই অবাক হয়ে গেলো!! আমার কথা বলার সাথে সাথে চোখ মেলে আমাকে দেখলেন, অথচ বাকিরা এতো ডাকাডাকি করলেও তাকায়নি। কিন্তু আমি নানার মাথার পিছনে দাঁড়িয়ে নানার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম নানা এখন মারা যাবেন। এটি উনার শেষ চোখ মেলে তাকানো। এরপর আর কোনদিন হাজার ডাকলেও নানা চোখ মেলবেন না।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:৩৫

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর। আমি তো রামপুরা তে একটা ফার্মেসী তে শিক্ষানবিস হিসেবে আছি। জাহান গ্যালারি, রোড চার, জি ব্লগ। বনশ্রি, থানা রামপুরা, ঢাকা।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:২২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- বাহ! আপনিতো তাহলে আমার বেশ কাছাকাছিই থাকেন।

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:৪১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: উকিল নানার কাহিনিটা খুব করুণ ভাবে লিখেছেন। উকিল নানা কাকে বলে?

নানাদের কাহিনি ভালো লেগেছে। মায়ের বাবার চাইতে উকিল নানার কাহিনিই বেশি লিখেছেন।

জলদস্যু ভাইয়ের নামটা তাহলে জানা হয়ে গেল - সারোয়ার ভাই :)

মজা লেগেছে উকিল নানার কতটা স্ত্রী আছে, তা গুনে শেষ না করতে পারার বিষয়টা :)

ভালো লেগেছে, নানি যখন তার অন্য সতীনের কাছ থেকে আপনার একমাত্র মামাকে (উকিল নানার ছেলে) নিজের কাছে নিয়ে এসে বড়ো করেছেন।

নানাদের বেহেশ্‌ত নসিব কামনা করছি।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আমাদের এই অঞ্চলে বিয়ের সময় মেয়ের পক্ষ থেকে একজনকে উকিল বাবা হিসেবে মানা হয়। তিনিই কাজীর সাথে বর কনের এজিন নেন। তিনি হয়ে যান কনের উকিল বাবা আর বরের উকিল শ্বশুর, আর বর-কনের বাচ্চাদের উকিল নানা।

- আমার নাম আগেও লিখেছিতো মনে হয়!! মোঃ সারোয়ার সোহেন।

- ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় সোনাবীজ ভাই।

৩| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১১

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টে ভালো লাগা জানানোর জন্য।

৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: নানা কাহিনী ভালো লিখেছেন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- শুকরিয়া প্রশংসার জন্য।

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



সুবাস্তু নজর ভ্যালীর কথা যখন লিখেছিলেন তখনই আপনাদের চিনতে পেরেছি। আপনারা বেশ সন্মানী মানুষ। আপনার নানা ও উকিল নানার প্রতি দোয়া রইলো। আল্লাহপাক উনাদের বেহেস্ত নসীব দান করুন।


৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- ধন্যবাদ আপনাকে।
- নজর মাহমুদের বংশের সাথে আমাদের সম্পর্ক বৈবাহিকসূত্রে। নজর মাহমুদের দুই পুত্র বিয়ে করেছিলেন আমার দুই ফুপুকে। আবার বড় ফুপুর বড় ছেলে বিয়ে করেছেন আমার চাচাতো বড় বোনকে এবং ছোট ফুপু ছোট ছেলে বিয়ে করেছেন আমার বড় বোনকে। নরজর মাহমুদ তার ছেলে, তার নাতীরা সন্মানী মানুষ সত্যি, তবে তাদের বর্তমান জেনারেশন সেই সন্মানের যায়গাটা ধরে রাখতে পারে নাই। আমাদের বেলাতেও সেই কথা বেশকিছুটা খাটে। বাবা-চাচাদের মতো ততোটা আমরাও ধরে রাখতে পারি নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.