গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:০১

গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন

আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। এ জন্য মূলত গার্মেন্টস শিল্পের খোদ মালিকেরাই দায়ী। শ্রমিকদের নামে দুর্নাম দিয়ে, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে, জাতিকে বিভ্রান্ত করে, আসল সমস্যাকে আড়াল করে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যাবে না। চোখ বন্ধ রাখলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।

কয়েকদিন পরপরই বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় বেতন-বোনাস বাড়ানো এবং বকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ আন্দোলন , সংঘর্ষ-হতাহত ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ইতিমধ্যেই আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুর এলাকার বেশ কিছু গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে শ্রমিক অসন্তোষ আর আন্দোলনে। ঈদকে সামনে রেখে আরো বড়ো ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ আর আন্দোলনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান না করলে আন্দোলন হবেই। এ অবস্থায় শ্রমনির্ভর এই শিল্প দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।

শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে রয়েছে মূলত বকেয়া বেতন-ভাতা ও ওভারটাইম প্রদান, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মজুরি বাড়ানোর ন্যায় সঙ্গত দাবি। এসব দাবিকে কেন্দ্র করেই গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অসন্তোষ-সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা ন্যূনতম ন্যায্য মজুরির জন্য আন্দোলন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সমঝোতায় একটি মজুরি কাঠামো ধার্য হলেও এবং সরকারের তরফ থেকে বারবার তাগিদ সত্ত্বেও বিভিন্ন কারখানায় এটা কার্যকর না হওয়া খুবই দুঃখজনক। শ্রমিকরা যে সামান্য মজুরি পান তাতে তাদের নিত্যদিনের খরচই হয় না, তাও যদি বকেয়া থাকে তাহলে আর উপায় থাকে কি?

গত সপ্তাহেও সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি গার্মেন্টসে বকেয়া বেতন ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ আন্দোলন-ভাঙচুর-সড়ক অবরোধ করেছে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছে। কাজেই এই শিল্পখাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত আবিষ্কার করে লাভ নেই।

গার্মেন্টস মালিকরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে যে, কিছু কিছু এনজিও ও শ্রমিক নেতা-নেত্রীরা নাকি এই শ্রমিক অরাজকতা সৃষ্টি করছেন। ফলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৬ শতাধিক গার্মেন্টস কারখানা হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। শুধু গাজীপুর জেলার গার্মেন্টসগুলোতেই গত ১৫ দিনে প্রায় ৮ শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছে। জানা গেছে, গার্মেন্টস সেক্টরের বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে তাদের অর্ডার ফেরত নিয়ে গেছে। এতে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাতটিকে রীতিমতো হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মালিকপক্ষই। মালিকপক্ষ নিজেরা ঠিক হয়ে যান। স্বার্থান্বেষী মহল খুঁজে লাভ হবে না। মালিকপক্ষের কাছে আমার প্রশ্ন, স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমিকদের ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে কিবা স্বার্থ আদায় করতে পারে? এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি আদেশের ওপর ২ শতাংশ মূল্যছাড় চেয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবিলম্বে যদি আলোচনার মাধ্যমে এই ২ শতাংশ মূল্যছাড় প্রত্যাহার করানো না যায় তাহলে প্রতিযোগিতায় আমাদের বাজারটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। উল্লেখ্য, ওয়ালমার্ট বছরে আমাদের দেশ থেকে ২ শত কোটি ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে।

দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়াটা বড়ো রকমের অপরাধ এবং শ্রমিকদের জন্য উদ্বেগের। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পখাতের সংকট ও শ্রমিকদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে সমস্যাগুলো দূর করা, এ খাতে অনাকাঙ্ক্ষিত অতি মুনাফা-অতি শোষণ বন্ধে মালিক ও সরকারপক্ষেরই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, এই শিল্পখাতে একদিকে যেমন দেশের লাখ লাখ শ্রমিকের রুটি-রুজির বিষয় জড়িত রয়েছে অন্যদিকে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবেও এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

৫০ টি +২/-১৯