নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালাউদ্দিন রাব্বী

রাবব১৯৭১

সালাউদ্দিন রাব্বী

রাবব১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম নয়, মানবতা হোক শ্রেষ্ঠ পরিচয়

০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:১২

________________________________________
ধর্ম নয়, মানবতা হোক শ্রেষ্ঠ পরিচয়
ধর্ম এক অদৃশ্য বিশ্বাস।
এমন এক বিশ্বাস, যা অনুভব করা যায় কিন্তু প্রমাণ করা যায় না। কেউ ইসলাম, কেউ হিন্দু, কেউ খ্রিষ্টান কিংবা বৌদ্ধ,এই পরিচয়গুলো মানুষের অন্তর্গত চেতনায় গঠিত, শরীরে নয়, দেহের গঠনে নয়। কেউ যদি তার বিশ্বাস প্রকাশ না করে, তবে বাহ্যিকভাবে তাকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই সে কোন ধর্মের। তবু আজ এই অদৃশ্য পরিচয়ের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্বের দেশে দেশে রক্ত ঝরছে, জীবন নিঃশেষ হচ্ছে, জাতি ভাগ হচ্ছে।
আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রযুক্তি মানুষের হাতে আকাশ এনে দিয়েছে, অথচ ধর্মের নামে বিভেদ এখনো মাটিতে রক্ত টেনে আনছে। ধর্ম, যার জন্ম হয়েছিল মানুষের নৈতিকতা, মানবতা, সহানুভূতি, এবং আত্মশুদ্ধির জন্য সেই ধর্মই আজ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্ধ বিশ্বাসের পরিণতি
ধর্ম মূলত এক ধরনের আত্মিক নির্ভরতা,যা মানুষকে ভালোবাসা, সহনশীলতা, ক্ষমা ও সৎ পথে চলার অনুপ্রেরণা দিতে ছিল। কিন্তু আজ এর মোড় ঘুরেছে। একে কাজে লাগিয়ে মানুষ মানুষকে ঘৃণা করতে শিখছে, ‘অন্য ধর্মের’ লোককে শত্রু ভাবতে শিখছে। এই মনোভাব যখন সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ধর্ম হয়ে ওঠে বিভেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার।
ধর্মের নামে যে রক্তপাত হয়, তার উৎস হচ্ছে অশিক্ষা আর অন্ধ বিশ্বাস। যত অশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি সমাজ, সেখানে ধর্মীয় উগ্রতা ও অসহিষ্ণুতা তত প্রবল। কারণ সেখানে মানুষ প্রশ্ন করতে শেখেনি। তারা শেখে যা বলা হয়েছে, তাই চিরসত্য। অথচ প্রশ্নহীনতা মানুষকে মানুষ রাখে না; করে তোলে যন্ত্র বা হাতিয়ার।
ধর্ম বিশ্বাস যদি হয় নিঃস্বার্থ, তাহলে সে কাউকে হত্যা শেখায় না, ঘৃণা শেখায় না, যুদ্ধ শেখায় না। অথচ ইতিহাসে আমরা দেখেছি ধর্মের নামে সবচেয়ে বড় যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়েছে। আজও হয়। উপাসনালয়ে বিস্ফোরণ ঘটে, ধর্মীয় আলয়ে ঢুকে মানুষ গুলি করে, কেবল ভিন্ন বিশ্বাসের কারণে মানুষের ঘর জ্বলে উঠে। এই কি ধর্ম?
শিক্ষা বনাম ধর্মান্ধতা
একটি পরিসংখ্যান বলে, পৃথিবীর যে সব দেশে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা বেশি, সেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি কম, সহনশীলতা বেশি। কারণ শিক্ষার আলো মানুষকে শেখায় সব মানুষের রক্তের রঙ এক, শ্বাস-প্রশ্বাস এক, ভালোবাসার ভাষা এক। ধর্ম মানুষের পছন্দ হতে পারে, কিন্তু তার পরিচয় হওয়ার কথা নয়।
একজন বিজ্ঞানী যখন রিসার্চ করেন, তিনি দেখেন না সহকর্মী মুসলিম না হিন্দু। একজন চিকিৎসক যখন রোগী বাঁচান, তিনি ধর্ম দেখে ইনজেকশন দেন না। একমাত্র রাজনীতি ও উগ্রবাদই ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। ধর্ম তখন হয়ে ওঠে ব্যবসা, যার লাভ হয় কিছুজনের আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা মানবতা।
মানবতা হারিয়ে ফেলা জাতির পরিণতি
ধর্ম কখনো রাষ্ট্র হতে পারে না। ধর্ম হতে পারে মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত বিশ্বাস। রাষ্ট্র যখন ধর্ম নিয়ে খেলতে শুরু করে, তখন আইন চলে ঈমানের নামে, স্বাধীনতা হয় বিভেদের দাস। তখনই মানুষ ভিন্ন মতকে সহ্য করতে পারে না, অন্য ধর্মের মানুষকে মনে করে দুশমন। একসময় সেই ঘৃণা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে মানুষ অস্ত্র তোলে ঈশ্বরের নামে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো যে ঈশ্বর ভালোবাসার, করুণার, ন্যায়ের, তিনি কি চান রক্তপাত? ঈশ্বর কি চান তাঁর নামে মানুষ খুন হোক?
ধর্ম নয়, মানবতা এই হোক ভবিষ্যতের পরিচয়
আমরা যদি একটি শান্তিপূর্ণ, সভ্য ও মানবিক সমাজ চাই, তাহলে এখনই প্রশ্ন করতে হবে,ধর্ম আমাকে কতটা মানুষ বানিয়েছে? আমি অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল? আমার ঈশ্বর কি আমাকে ঘৃণা শেখাচ্ছেন, না ভালোবাসা?
ধর্ম নয়, মানবতা হোক প্রধান পরিচয়।
মানুষ হোক একমাত্র মাপকাঠি।
আমার বিশ্বাস আমার নিজের, কিন্তু আমার মনুষ্যত্ব সবার জন্য সমান।
এই বিশ্বে একমাত্র সত্য আমরা সবাই মানুষ।
বাকি সব পরিচয় শুধু বিশ্বাস, ধারণা বা অভ্যাস।
একে অপরের প্রতি সম্মান, সহানুভূতি আর করুণা এই তিনটি গুণই যথেষ্ট বিশ্বকে সুন্দর করার জন্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.