![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালির শৃঙ্খল থেকে মুক্তির ইতিহাস: বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই স্বাধীনতার স্বাদ।
বাংলা জাতির ইতিহাস দীর্ঘ, গৌরবময়, কিন্তু একই সঙ্গে বেদনাবিধুর। একথা সত্য যে বাঙালিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কখনও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ছিল না। কখনো রাজাদের অধীন, কখনো মুঘলদের করদ, ব্রিটিশদের উপনিবেশ, কিংবা পাকিস্তানি শাসকদের অবহেলার শিকার বাঙালির স্বাধীনতা ছিল কেবল কল্পনা, বাস্তবতা নয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: পরাধীনতার দীর্ঘ ছায়া
পূর্ব বাংলার ইতিহাস প্রাক-মুসলিম যুগে ছিল নানা রাজ্যশাসিত, যেমন পাল, সেন বংশ। তবে এসব শাসনকাল ছিল মূলত রাজতান্ত্রিক ও জনগণের অংশগ্রহণবিহীন।
মুসলিম শাসনকাল (১৩০০–১৭৫৭): তুর্কি, আফগান ও মুঘল শাসকগণ বাংলাকে শাসন করেছেন। যদিও কিছু সংস্কৃতি ও অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল, তবে জনগণ রাজনৈতিক স্বাধীনতা পায়নি।
ব্রিটিশ শাসন (১৭৫৭–১৯৪৭): পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতা একেবারে মুছে যায়। ব্রিটিশরা কেবল শোষণ করেছে, ফসল লুটেছে, দুর্ভিক্ষে মানুষ মরেছে, আর প্রতিবাদীদের গুলি করে হত্যা করেছে।
পাকিস্তান পর্ব (১৯৪৭–১৯৭১): ভারত বিভাগের পর পূর্ব বাংলা হয় পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, প্রশাসন সব ক্ষেত্রেই বাঙালিরা ছিল বৈষম্যের শিকার।
এই পর্বেই আবির্ভূত হন শেখ মুজিবুর রহমান একজন নেতা নন, বরং এক বিশাল আন্দোলনের প্রতীক।
শেখ মুজিব: বাঙালির রাজনৈতিক পুনর্জন্মের স্থপতি
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই নেতা, যিনি বাঙালিকে প্রথমবারের মতো নিজের অধিকার, ভাষা ও মর্যাদার জন্য রুখে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে:
১৯৪৮–৫২: ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি, যেখানে বাঙালিরা প্রথমবার রাষ্ট্রীয়ভাবে মাথা তুলে দাঁড়ায়।
১৯৬৬: ৬ দফা দাবির মাধ্যমে স্পষ্ট করে দেন বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসন ছাড়া মুক্তি নেই। এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার রূপরেখা।
১৯৬৯: গণ-আন্দোলনে তাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দেওয়া হয়।
১৯৭০: নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয় পায়, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় সংকট শুরু হয়।
৭ই মার্চ ১৯৭১: তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ছিল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা।
২৫শে মার্চ ১৯৭১: পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর “অপারেশন সার্চলাইট” শুরু হয়, কিন্তু মুজিবের আগে থেকেই দেওয়া নির্দেশে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু সেই স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন শেখ মুজিব বহু বছর আগে।
স্বাধীনতার অর্থ কী শেখ মুজিব শিখিয়েছেন?
বাঙালির ইতিহাসে এমন অনেক বীর আছে, কিন্তু স্বাধীনতা মানে একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি জাতি এই সংজ্ঞা শেখানো মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু রাজনীতি করেননি, একটি জাতিকে আত্মপরিচয়ের ভাষা শিখিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন বাঙালি শুধু শোষিত হওয়ার জন্য জন্মায়নি, বাঙালি শাসন করতেও জানে, নেতৃত্ব দিতেও জানে।
উপসংহার
শুধু ভূখণ্ড নয়, নিজস্ব পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও মর্যাদার ভিত্তিতে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন এই স্বপ্ন একমাত্র বাস্তব রূপ পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। তাই বলা চলে বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার পর সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ যিনি দিয়েছেন, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান।
এ ইতিহাস শুধু শ্রদ্ধা নয়, চেতনার উৎস। আমাদের দায়িত্ব এই সত্যকে জানাও, জানানোও।
©somewhere in net ltd.