![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন নিয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল, আজ ২০২৫ সালে এসে আমরা কি সেই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছি? নাকি, আমরা সেই পথ থেকে বহু দূরে সরে এসেছি? প্রশ্নটা দিনকে দিন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
একটা সময় ছিল, যখন মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষিত মানুষ নিয়ে এক নিরস্ত্র জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু একজন নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি জাতির চেতনার প্রতীক। তার অনুপ্রেরণায় গোটা জাতি এক হয়ে লড়েছিল স্বাধীনতার জন্য।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের সংবিধান। সেই সংবিধানে তিনি নির্ধারণ করেছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচালনার চার মূলনীতি: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই চারটি স্তম্ভ ছিল একটি প্রগতিশীল, সাম্যবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তার রক্তস্নাত অনুপস্থিতিতে একের পর এক সরকার এই মূলনীতিগুলোকেই বিকৃত করেছে বা ধ্বংস করেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে, বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে একটি ধর্মভিত্তিক সংকীর্ণ মানসিকতার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা এক ভয়ঙ্কর বিকৃত প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে যাদের হাতে আজ মানবতা, বিবেক, সহানুভূতি জিম্মি হয়ে পড়েছে।
আজ আমরা দেখছি, এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের মুখোশ পরে সমাজে একের পর এক অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে মানুষ হত্যা, মব জাস্টিস, নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করার হাতিয়ার হিসেবে। এই মৌলবাদী অপশক্তি আসলে আমাদের সমাজের ক্যান্সার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে যেখানে ধর্ম থাকত ব্যক্তিগত বিশ্বাসে, রাষ্ট্র থাকত সবার জন্য সমানভাবে সহনশীল ও ন্যায়ভিত্তিক।
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা খুব দ্রুত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই আমরা সহনশীলতা হারিয়েছি, ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ, মানুষ নিরাপত্তাহীন। যেখানে ধর্মের নামে একজন মানুষ বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয় সেখানে কোনো সভ্যতা গড়ে উঠতে পারে না।
এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? মুক্তিযুদ্ধের রক্ত, ত্যাগ আর স্বপ্নের বিনিময়ে অর্জিত এই ভূখণ্ড কি এমন একটি অসহিষ্ণু, বিভ্রান্ত সমাজে পরিণত হওয়ার জন্যই ছিল?
আজ সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার, আত্মসমালোচনার, এবং ফেরার—বঙ্গবন্ধুর চার মূলনীতির পথে। জাতীয়তাবাদ মানে কুসংস্কার নয়, সমাজতন্ত্র মানে দারিদ্র্যের বৈধতা নয়, গণতন্ত্র মানে স্বৈরাচার নয়, আর ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মবিরোধিতা নয়—বরং এটি হচ্ছে সকল ধর্ম, মত ও চিন্তার প্রতি সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা।
যদি আমরা এখনই সচেতন না হই, তাহলে হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে, বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে।
©somewhere in net ltd.