![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সোহেল খন্দকার, মুক্ত চিন্তার অধিকারী। নিজে স্বাধীনতা পছন্দ করি, অন্যের জন্যও স্বাধীনতা আদায়ে সচেষ্ট।
নারী! শব্দটাতেই মনে হগয় কোন অীভশাপ আছেভ মনে হয় ভয়ংকর কিছু লুকায়িত আছে এরমধ্যে। এ কারণে সমাজের সর্বত্র চলছে এদের বঞ্চিত করার নির্মম প্রচেষ্টা। সমাজের একটিা শ্রেণীর হাতে আজ নারীরা চরমভাবে হচ্ছে লাঞ্চিত। আর প্রতি মুহুর্তে বঞ্চনার কোন শেষ নেই । সমাজের নারীরা বঞ্চিত ও লাঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বঞ্চনার শুরু হয় জন্মের পর হতেই। অধিকাংশ পিতা-মাতা মনে করেন মেয়ে হড় হলেই অন্যের ঘরে পাঠাতে হবে (বিয়ে দিতে হবে), তাই তার জন্য বেশী খরচ করে লাভ কি? সে জন্যই হয়তো ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাকে ঠকানো হয়। খাবার-দাবার, পোষাক-আশাক, ও শিক্ষা চিকিৎসার সব ক্ষেত্রেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা পিছিয়ে আছে। কোন পরিবার যদি তার সন্তান দের সবার পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে না পারে তবে পড়ালেখা বন্ধের প্রথম খড়গটা আছে মেয়েদের জন্য।
পোষাক-আশাক, খেলাধুলা স ক্ষেত্রে ই প্রাধান্য পায় ছেলে শিশুর অধিকার। মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবারের যে কোন বিষয়ে, সমস্যায় মতামত দেয়ার অধিকার প্রায় থাকেই না। তাদের মতামত শুনাতো দূরের কথা, কোথাও কোন সমস্যা হলে তাদের জনানোর প্রয়োজনও বোধ করে না অনেক অভিভাবক।
সমাজের সবার মাঝেও বিরাজ করে বৈষম্য মূলক আচরণ। মেয়েরা এটা করতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না, এটা করা উচিত না, ওটা করা ভালো দেখায় না, ওটা বলা উচিত না- এ রকম হাজারো না নিয়ে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির মাঝে বড় হয় মেয়েরা। যখন কোন মেয়ে বড় হয়ে তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয় তবে তাকে শুনতে হয় নানা আপত্তিকর মন্তব্য, যা তার আশেপাশের পরিচিত ও কাছের মানুষগুলো হতেই আসে। অথচ একজন নারীর সাথে চলছে সর্বত্র চৈষম্য। একজন নারী একাধারে ঘরে ও বাইরে কাজ করে অথচ তারপরেও তাদের থাকে না কোন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।
এরপরে যখন মেয়েরা বয়ঃপ্রাপ্ত হয় তখন তাকে পরিয়ে দেয়া হয় নানা ধরনে শৃংখল। একা কোথাও যেতে পারবে না, ঘর হতে বের হলে শুনতে হবে নানা ধরনের কটুক্তি, এ কাজ করা যাবে না, ওমুক কাজ করা ঠিক হবে না, ওমুক ধরনের কথা বলা যাবে না, ওমুকের সাথে বেড়াতে যাওয়া যাবে না। না দিয়ে জীবন আষ্টে পৃষ্টে বেধে দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার কোন সমাধান বা চলাফেরার স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করা কোন চেষ্টা করা হয় না। অথচ এসব সমস্যা খুব বেশী গভীর নয়। সামান্য সচেতনতা ও আন্তরিকতা থাকলে সমস্যা সমূহ দূর করা খুবই সহজ।
বাস-টেম্পু সহ গনপরিবহনে সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত হয় নারীরা। বাসে সংরক্ষিত আসন রেখে লিখে রাখা হয় “মহিলা সীট”। কিন্তু বাস্তবে পিক আওয়ারে সেখানে বসে থাকে পুরুষেরা। নারীদের জন্র যাদের কোন সহানূভুতি নেই। বাস চালক ও কন্ডাক্টরাও থাকেন নিশ্চুপ। যেন মহিলা যাত্রীরা অনেক ঝামেলা তাদের না নিলেই বাচিঁ। বাসে বসার সংরক্ষিত আসনে বসলে পুরুষদের মাথায় আসে নারী পুরুষ সমান অধিকার। তাই পুরুষরা দাড়িয়ে যেতে পারলে মহিলারা কেন পারবে না।
কিন্তু যখন খুব বেশী প্রয়োজন নারীর পুরুষের অধিকার স্মরণ রাখা তখন আমারা বেমালুম ভুলে যাই সব কিছু। পৈত্রিক সম্পত্তি বা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে নারীদের সাথে করা হয় চরম টালবাহনা।
এই পৈত্রিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সভ্য-অসভ্য সবাই এক হঠকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কোন অবস্থাতেই অধিকাংশ পুরুষরা নারীর সম্পত্তি দিতে রাজী থাকেন না। পরিবারে যদি ১০জন ভাই থাকে তবে তারা বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি পরস্পর সমান ভাগে ভাগ করে নিতে রাজি আছেন। কিন্তু যদি পরিবারে একজনও নারী থাকে তবেই বিপ্িত্তটা বাজে তখন। তাকে সম্পত্তির অধিকার দিতে নারাজ সবাই। তার অপরাধ সে নারী।
গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায় পৈত্রিক সম্পত্তির কিছু অংশ যা লাভজনক যেমন- কৃষি জমি, ব্যবসা-বাণিজ্যের কিছু অংশ দিলেও বসত বাড়ী, পুকুর, বাগান বাড়ী, গৃহ-পালিত পশু-পাখী (যত বেশীই হোক) ইত্যাদির কোন অংশই মেয়েদের বলে মনেই করা হয় না। ভাগ বাটোয়ারা করার সময় এসব কিছু হিসাবে ধরাই হয় না। ধরবে কে? এসব ভাগ-বাটোয়ারা, সালিশ-বিচারতো শুধু পুরুষের কাজ এখানে মহিরাদের প্রবেশ নিষেধ।
হিন্দু ধর্মে মেয়েদের পৈত্রিকসম্পত্তিতে কোন অধিকার দেয়া হয়নি। কিন্তু মূললিম সমাজে মেয়েদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে সু-স্পষ্ট ভাবে এ অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের অন্তরীন করা হলেও সম্পত্তির ক্ষেত্রে ধর্মের কথা সবাই ভুলে যায়। বিচিত্র এ সমাজ র্ধমকে ব্যবহার করে হাতিয়ার হিসাবে, নিজের ইচ্ছা মতো।
কিন্তু পুরুষ শাসিত এ সমাজে কি নারীর মুক্তি নাই? আছে এর জন্য প্রয়োজন মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন, বাস্তবভিত্তিক সঠিক পদক্ষেপ, সামাজিক সংস্কার ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক বিকাশ।
সেই সাথে সবাইকে মানুষ ভাবতে হবে এবং এ দায়িত্ব পুরুষ শাসিত এ সমাজের সকল পুরুষের কারণ পুরুষরা যদি কিছু করতে চায় তা সমাজ ও দেশ সহজেই করতে দেয়, তাদের বাধা অনেক কম। নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এনে দেবে প্রকৃত নারী মুক্তি।
©somewhere in net ltd.