![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুনামগজ জেলার ছাতক উপজেলা মুক্তিযুদ্ধে এক গৌরবময় ভূমিকা পালন করে । এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর মুখোমুখি যুদ্ধ হয়েছে অনেকগুলো । শহীদ হয়েছেন বাংলার অনেক দামাল ছেলে। সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ' বিন্দু বিন্দু রক্ত ' - এর ১ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা ( ২ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯৭২ ) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুধু ছাতকের একটি অপারেশনেই শহীদ হয়েছেন ৪০জন মুক্তিযুদ্ধা । এঁরা হলেন - একরাম আলী, মো় মোস্তফা তালুকদার, সফিকুর রহমান, পীযূষ কান্তি সরকার, হুসেন আলী, আবু সিদ্দিক, ফিরোজ মিয়া, আবদুল মজিদ আলী, আবদুন নুর, মফিজ উদ্দিন, আবদুল বাছিত, আবিদ আলী, শমন আলী, সুরুজ আলী, নুরুল ইসলাম, আবদূর রশিদ, আবদুল আহাদ, এনামুল হক, আকবর হুসেইন, শমসের আলী, মুসলিম আলী, আবদূর রশিদ ও আলী আহাদ ।
২৮শে এপ্রিল পাকবাহিনী প্রবেশ করে ছাতক শহরে । শহরে ঢুকেই তারা নির্বিচারে চালাতে থাকে হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ । প্রথমে ছাতক বাজার লুট করা হয়, তারপর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাজার ।
ওইদিন ছাতক বাজারে যাঁদেরকে হত্যা করা হয়েছিল তাদের কয়েকজন হলেন - সিলেট কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র দিলীপ কুমার তড়াত, মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র জ্যোতির্ময় দত্ত নানু, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কেরানি কলিম উদ্দিন, ছাতকের ব্যবসায়ী যোগেন্দ্র দত্ত ও রুনু দাস । ছাতক যাওয়ার পথে গোবিন্দগঞ্জে তারা হত্যা করে জিতেন্দ্র দাস সহ আরো দু'জন গ্রামবাসীকে ।
পাকবাহিনীর অপরাধের সহায়তার জন্য গঠন করা হয় রাজাকার বাহিনী । এই বাহিনী গঠনে এগিয়ে আসে তোতা মিয়া, আশক আলী, ইছাক আলী প্রমুখ । এরাই স্থানীয় যুব সমাজের একটি অংশকে প্রলোভন দেখিয়ে হানাদার বাহিনীর সহযোগীতে পরিণত করে এবং পাক পশুদের যাবতীয় কুকর্মে সহায়তা করে । রাজাকার ইছাক আলীর পরামর্শে একদিন পাকবাহিনী হাজির হয় গণেশপুর গ্রামে । গুলি করে হত্যা করে ছাত্র ইউনিয়নের বিশিষ্ট কর্মী মখলিছুর রহমানকে । তিনি বিমান বাহিনীতে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু হলে তার প্রতিবাদে বিমান বাহিনী ছেড়ে চলে আসেন । সুযোগ বুঝে ভারত গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন । তার সে আশা আর পূর্ণ হয়নি তার আগেই শত্রুর গুলিতে শহীদ হয়ে মাতৃভূমির জন্য রেখে গেলেন অবিস্মরণীয় অবদান ।
২৬শে মে, ১৮ জন যুবক ছাতকের বেতুরা গ্রামের পাশ দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছিলেন । বেতুরার কুখ্যাত রাজাকার মতছির আলী ওরফে ফকির চেয়ারম্যান নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক পরিচয় দিয়ে তাদেরকে সহযোগীতা করার আশ্বাস দিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায় । বিশ্বাস ঘাতক এই বেঈমান গোপনে পাকি ক্যাম্পে খবর দিয়ে নাম না জানা এই যুবকদের পাকসেনাদের হাতে তুলে দেয় । আদের আর্ত চীৎকারে সেদিন বেতুরার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে । ভঁয়ে মানুষ দিকবিদিক পালাতে থাকে । সতের জনকে গুলি করে হত্যা করে পশুরা । বিরাট গর্ত করে তাতে মাটি চাপা দেয় সবাইকে । জীবন্ত অবস্তায়ই মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল অনেককে । সেই সতের জন বাঙলার বীর দামাল শহীদ যুবকদের নাম পরিচয় কিছুই জানা জায়নি ।
ছাতক - সিলেট সড়কের পাশে মাধবপুর নামক স্থানে নাম না জানা সতের জন বীর শহীদের স্মৃতির উদ্দ্যেশে নির্মিত ' শিখা সতের ' ।
৬ ডিসেম্বর পাক হানাদারদের হঠিয়ে ছাতক মুক্ত করেন বীর মুক্তিযুদ্ধারা । ৫ ডিসেম্বর রাতে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় অবস্থান নেয় মুক্তিযুদ্ধারা । পরদিন সকালে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে শহরে এসে অবস্থান নিলে পিছু হঠতে থাকে পাক হায়েনারা এবং বিনা যুদ্ধে ছাতক মুক্ত হয় ।
তথ্য সুত্রঃ সিলেটে গণহত্যা, তাজুল মোহাম্মদ ।
©somewhere in net ltd.