নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিষিক্ত কঙ্কাল

অপাংক্তেয় আত্মজীবী....

নিষিক্ত কঙ্কাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বি সেনসিটাইজড

১০ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:৫৪

আমি অদ্ভুতভাবে অনেক দিন থেকেই হাতের কাছে নিউজপেপারের সহজলভ্যতা থাকার পরেও নিউজ পড়ি না। হঠাৎ সামনে পড়লে অবচেতনে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একবারেই খেলার পাতায় চলে যাই। অথবা বিনোদন জগতের রুচি সমৃদ্ধ কিছু মধু চাখার পর জ্ঞানের ভান্ডার উন্নত হয়েছে ভেবে সেখান থেকে অপনোদন ঘটাই। কারন কি? কারনটা সম্পুর্নই ব্যক্তিগত চেতনা প্রসূত। আপনি শুনলে মুচকি হাসি দিয়ে অবজ্ঞার অনাবৃতি টানতে পারেন। আবার আমার চিন্তার বালখিল্যতা দ্বারা মাথায় আঘাত পেয়ে সামান্য কপাল কুঁচকাতেও পারেন। স্বাধীনতা আপনার। তবে স্বাধীন দেশের অধীন নাগরিক হিসেবে কারনটা শোনানোর অধীকার আমার আছে। আচ্ছা প্রথমে কারনটা শোনাই, তারপর কিছু কাহিনী বলি।
কয়েকদিন আগে এক মুক্ত আলোচনার আসরে শোনা একটি ইংরেজী টার্ম মস্তিষ্কের কর্মক্ষম নিউরনে ব্যাপক আলোড়ন তুলে। টানা ২ দিন আমি শব্দটা নিয়ে চিন্তা করেছি। শব্দটা ছিল ‘Desensitization’। বাংলায় অর্থ খুজতে গেলে যার অর্থ দাড়ায় ‘সংবেদনহীনকরণ’। বিপরীত দিক বিবেচনায় এটাই উপরোক্ত ঘটনার কারন।এবং সংবেদনশীল থাকার ন্যুনতম একটি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই নিউজপেপারের প্রতি এই ধরনের অনীহার উৎপত্তি, বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। বিষয় টা একটু ব্যাখ্যা করি।
খুব বড় ধরনের ক্লাশ/সংঘর্ষ বা গণপিটুনি অথবা পাড়ার/ক্যাম্পাসের দুর্ধর্ষ ডুয়াল মারামারি বাস্তবে দেখার দুর্ভাগ্য খুব বেশি হয়নি আমার। ২০০৬ সালে টিভিতে সর্বপ্রথম ক্লাস ফাইভে পড়া সেই ছোট্ট আমি কল্পনার অতীত কিছু লাইভ ফুটেজ দেখেছিলাম। যেখানে ৭/৮ জন যুবক মিলে একজন যুবক কে সাপ মারার মত পিটাতে পিটাতে সেখানেই তার প্রাণবায়ু বের করে নিয়ে আসে। ছোটবেলায় আমিও সাপ মেরেছি এবং অনুভব করেছি এভাবে পিটানোর মাঝে একধরনের পৈশাচিক আনন্দ সর্বাঙ্গ জুড়ে বিরাজ করে। যাইহোক, এনটিভিতে সেদিনের সেই লাইভ ভিডিও ফুটেজে ‘মানুষরুপী সাপ’ হন্তারক দের পৈশাচিক আনন্দ আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সহজেই বড় ধরনের আঘাত হানতে সক্ষম হয়। পরবর্তী কয়েকদিনে তার ইফেক্ট আমার ভিতরে ছিল। ঘুমের মাঝেও অনেক সময় শিউরে উঠতাম। এত পুরান জিনিস ঘাটার উদ্দেশ্য হলো, কয়েক দিন আগে পিএলটি তে ক্লাস করছিলাম সকালে। জানালার পাশের সিটে বসার কারনে ক্লাসের বাইরে সংঘটিত ঘটনাবলি সহজেই চক্ষুগোচর হয়। সেদিন অকস্মাত আমার জানালার পাশেই লাইব্রেরী বারান্দায় দুই তাগড়া জোয়ানের(!) মাঝে তুল্কালাম বেধে যায়। একজন আরেকজনের কলার চেপে সজোরে কিল, ঘুষা যা পারছে নিক্ষেপ করছে। এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলেও ভালো ছিলো। কিছুক্ষনের মধ্যে কিল, ঘুষি, বাঁশের চ্যালা আর লাঠির বাড়ি তন্মধ্যে শুধু একজনের ঘাড়, মাথা, পিঠে টেন্ডস টু ৯০ ডিগ্রী কোণে আপতিত হতে থাকে। ৯/১০ জন মিলে যে যেভাবে পারছে একজনের উপরে ঝড় তুলছে। বেচারা প্রথম দিকে গর্জন করছিল, মাঝে হাত উচিয়ে আত্মরক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা ক’রে এবং শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে অসহায়ের মত মার খেয়ে গিয়েছে। আর আমরা নির্বাক দর্শক হয়ে দুচোখ দিয়ে এই রগরগে দৃশ্য গিলেছি। হয়ত মানবতা বোধের জায়গাটা তে সামান্য আচড় পড়েছিল, কিন্তু সার্ফ এক্সেলের এই যুগে সেই আচড়ের দাগ বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। এই নির্বাক অনুভুতিশুন্য নিরবতা বা সামান্য অনুভূতিযুক্ত সংবেদনহীতাই হলো “ডিসেনসিটাইজেশন”।
এক দশক বা বছর পাঁচেক বা বছর দুয়েক আগেও খবরের কাগজে রাজনৈতিক বলির স্বীকার, মানুষের মরা মুখের ছবি দেখলে অনুভূতি সংবেদনশীল হয়ে উঠত। মৃত মানুষটার জন্য খারাপ লাগত। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সংবাদ, এই ছবি গুলোই সংবাদপত্রের প্রথম পাতার রেগুলার হট নিউজ হয়ে উঠেছে। আমাদের চোখও এগুলোর সাথে সহনীয় হয়ে গেছে। এখন রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির অন্ধদালাল, মনুষ্য প্রজাতির বেজন্মাগুলোর পেট্রোলবোমায় কয়লা হয়ে যাওয়া মানুষের বিভৎস ছবি দেখে আর আমাদের ভিতরটা কেঁপে উঠে না। পুলিশ নামক গ্যাদগ্যাদা কিছু শুয়োরের ক্রসফায়ারে ২০/২৫ টা গুলি একসাথে খাওয়া মানুষটার মৃত্যুর কারন যখন গণপিটুনি বলে চালিয়ে দেয়া হয় তখন ভ্রুক্ষেপ করি না। কারন “আমার তো ক্ষতি হয়নি, আমার কোন আত্মীয় তো আর পুড়ে কয়লা হয়নি অথবা আমার আপন জনের কেউ তো আর রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক খুন বা গুম হয়নি। তাহলে আমি কেন কপাল কুটে মরবো?”
সত্যি বলতে কি, আজ আমরা এমনই ‘ডিসেনসিটাইজড’ হয়ে গেছি। এবং এর চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছানোর পথে সামান্য হলেও যেন বাধা পড়ে তার জন্যেই নিউজপেপারের প্রতি এহেন বিতৃষ্ণা। কারন সম্ভবত এটাই।
যাইহোক, সংবেদনহীনতার উদাহরণ হিসেবে কিছু কাহিনী বলতে চেয়েছিলাম। আজ আর সম্ভব না। "ডিসেনসিটাইজেশন" থেকে উত্তরনের উপায় বিষয়ক আলোচোনার চিন্তা আছে পরবর্তীতে। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ভাবনা আর বড় বড় কিছু মানুষের সংস্পর্শে যে শিক্ষা গুলো বিন্দু বিন্দু মুক্তোর মত জমা হচ্ছে ভিতরে তার আলোকে। দোয়াপ্রার্থী।
ভালো থাকুন। বি সেনসিটাইজড।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:২৩

গার্ডেড ট্যাবলেট বলেছেন: সুন্দর লেখা এবং চমৎকার পরিবেশন। এই 'ডিসেনসিটাইজেশনের' কল্যাণে দিনে দিনে আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক নিক্তিতে অথর্ব হয়ে গেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.