নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্টিগমা

রাফিন জয়

স্টিগমা

রাফিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

**ঝঞ্চা রাতের ভূত**

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫


ঝড় হাওয়ার প্রবাহ, জানালার পাশে বসে দেখছি এবং ভাবছি এমনি আরেকটি রাতের কথা। মনুষ্য মস্তিষ্ক সত্যিই অদ্ভুদ! তাইতো প্রতি ঝঞ্চার রাত দেখলেই আমার মনে পরে যায় সে রাতের কথা। যখন আমি, আমার সমবয়সি একটি মাস্তুত ভাই, আমার বড় দাদা এবং সম্পর্কে এক মামার সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম মেঘমল্লরে ঢাকা গগনের নিচে এক ভয়ঙ্কর কালো রাত্রিতে।
রাতটা যত কালো এবং ভয়ঙ্কর ছিল, তার চাইতে অনেক গুণ সুন্দর এবং চমকার আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। তার চাইতে অধিক কৌতুহলি ছিল। কৌতুহলটা আমার কাছে এমন ছিল যে, ঝঞ্চার রাতে গ্রাম বাংলার সবুজ খেত কেমন দেখতে। কারণ, জন্মগত ভাবেই আমি শহুরে ছেলে! শহরের মোটা, শক্ত কংক্রিটে ঢাকা ঘরের মাঝে থাকতে থাকতে প্রকৃতি নিহারণ তৃষা আমাকে অতৃপ্ত করে তুলেছিল একেবারে। তাই সেবার গ্রামে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া মাত্রই কোন রকমে হাতছাড়া হতে দেয়নি। সেবার গ্রামে যাওয়ার তৃতীয় দিন রাতে বয়ে ছিল এমন ঝড় হাওয়া। কৌতুহলি মন তখন উৎখুট-উৎখুট, খিটমিট-খিটমিট করছিল। তাই দাদা বুদ্ধি করে নানুকে বলেছিল, ‘রহিত মামার বাসায় থাকবো আমরা তিন জন আজ রাতে।’ নানু ও তা মেনে যায়। অন্যদিকে রহিত মামা ও আমাদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণে যাচ্ছিল।
রহিত মামার প্রতিক্ষার পালা শেষ করে আমরা মামার দরজার করা নাড়ি। এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে সেই মুহুর্তেই ঝড় হাওয়া তুচ্ছ করে বের হয়ে পড়ি প্রকৃতি নিহারণ করতে, মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে। কৌতুহলের উদ্দিপনার চাইতে নিগুর কালো রাতে ভয়ের অস্তিত্বই বেশি ছিল আমার মধ্যে। বাঁশঝাড় গুলো দেখেই গাঁ ছমছমে ভাবটা শরীরে শিহরণ তুলে দিয়েছিল। দাদাকে বলেছিলাম আমার খুব ভয় করছে। কিন্তু ওর প্রতিক্রিয়া দেখে ভুতের ভয় পালিয়ে গেল। ও বলেছিল, ‘আমি ভূত দেখতেই বের হয়েছি। রহিত মামাকে তো তাই ওই ভূতুরে গাছের সামনে যেত বল্লাম।’ এই কথা শুনে শরীর শিহরণ বন্ধ হয়ে ঠাণ্ডা এবং শিথিল হয়ে গেল। কারণ দাদা ওর বন্ধুদের সাথে আরো কত বাড়িতে যে ভূত দেখতে গিয়েছিল তার হিসেব মিলানো দায়! ওই মুহুর্তেই দাড়িয়ে গেলাম এবং বল্লাম যে, ‘আমি আর সামনে যাব না।’ সঙ্গে সঙ্গেই রাতুল খট খট করে হেঁসে উঠল। ওমন ভয়ানক হাঁসি শুনে ভিতু সভাবের আমি আরো ঘাবড়ে গেলাম। পরক্ষণেই দু-ঘাঁ লাগিয়ে দিলাম ওর পিঠে। দাদা তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে উপহাস করে বলে উঠল -আরেহ ভিতুর ডিম, এত ভয় পেলে বের হয়েছিস কেন?
আমি। -মটেই ভয় পাচ্ছি না।
দাদা। -তো যেতে চাইছিস না কেন? কত কষ্টে রহিত মামাকে রাজি করিয়েছি তুইকি জানিস?
আমি। -আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা, তুই চল।
দাদা। -ঠিক আছে, কিন্তু কাউকে বলতে পারবিনা।
আমি। -আমি তোর মত ভিতু না দাদা। চল তুই!
এ কথাটা অপমান বোধ থেকেই বলেছিলাম। কারণ রাতুল এবং রহিত মামা ও দাদার মত উপহসের দৃষ্টিতে হেঁসে যাচ্ছিল। রাগে ফেটে পরে আমি এগোচ্ছিলাম। জঙ্গল পারি দিয়ে অবশেষে বিশাল ধান খেতের পাশে সেই ভূতুরে গাছের তলাতেই বসলাম। পরে সে রাতের ঝড় হাওয়ার সম্পুর্ণ আনন্দ উপভোগ করছিলাম চার জনে। বিশাল খেত যেন বিস্তীর্ণ আকাশের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
যখন আমরা সৌন্দর্যের মোহ উপভোগে সব ভুলে বসেছি এবং মনের আনন্দে সবাই উল্যাসি নৃত্যে মাত, তখন ঘটল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। খেতের অনেকটা দূর থেকে এক অবয়ব চিৎকার করছে এবং হামড়ি খেয়ে পড়ছে। এত দ্রুত কোন মানুষ কখনোই দৌড়াবে না, আর এর মাথার আকৃতিও তো কোন মতেই মানুষের মত না! তো এটা কি? ভূত নয়তো? একথা আর বলতে হয়নি কারো, সবাই বুঝেই দৌড়ে পালাতে শুরু করলাম! ততোক্ষণে অবিরাম বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাতেই সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেল যে, কেউ যেন একথা জানতে না পারে। রাতের বেলায় সবার শরীরে জ্বর উঠে গিয়েছিল। তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়া হবে, তাও যেন কেউ না জানে।
কিন্তু সকালে যখন উঠলাম, তখন ঘটল আরেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। অন্য গ্রাম থেকে এক লোক যাওয়ার সময় বলছিল, ‘উত্তর পাড়ার রহমান কাইল রাইতে আডের তোন মাতায় বোজা নিয়া আহনের কালে চাইরডা চ্যাংরা ভূত দেখছে বৃষ্টি পড়নের কালায়। পোলাডা হেব্বি বয় পাইছে।’
পরে বুঝলাম, দৌড়টা আমরা অযথাই দৌড়ে ছিলাম! ভূত নয়, সেটা ছিল রহমান। আর ওর মাথায় ছিল অনেক বড় বোঝা। যা অন্ধকারের জন্য বুঝতে পারা যায়নি। আর ও ভূত দেখে নয়, আমাদের দেখেই চিৎকার করছিল এবং প্রাণের ভয়ে যত দ্রুত সম্ভম পালাতে গিয়ে হোঁচট পড়ে গিয়েছিল। তাই আজকের এই ঝড় হাওয়া আমাকে সেই রাতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। হয়তো দাদা, রাতুল এবং রহিত মামাকেও দিচ্ছে!


[বি:দ্র: ঘটনার চরিত্র গুলো এবং প্লট সম্পূর্ণ বানোয়াট।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.