নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্টিগমা

রাফিন জয়

স্টিগমা

রাফিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

**মায়াবিনী দুঃখ পদ্মফুল**

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭

গত কয়েকদিনে একটা ছোট পোস্ট করেছিলাম তিনটা পর্বে, তবে সেটা পদ্য ভাষায়। গল্পটা সম্পূর্ণ সৃজনশীল বা বানোয়াট ভাবেই লেখা। বাস্তব না হলেও বাস্তবতা। গল্পের তিনটা চরিত্র মাণিক, বাবা এবং মা। যাদের দারিদ্র চাবুকের কশাঘাতে রোজ কাটতো দিবস। নিয়তির নির্মম পরিহাসে মাণিকের বাবা খুন হয় চুরির অপরাধে এবং মাণিক ও তার মা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় জীবন যুদ্ধে হার মেনে। এমন পরিবার পাওয়া হয়তো আমাদের সমাজে বিরল নয়। যদি তা আমরা সরাসরি দেখতে না পাই, তবে দারিদ্র চাবুকের কশাঘাতে জর্জরিত আমাদের সমাজের ৮৫% মানুষের জীবনে যদি একবার অন্বেষণের দৃষ্টিতে দেখি, হয়তো এমন খুদ্র খুদ্র ঘটনা আর সৃজন করে আর গল্পে রটানোর প্রয়োজন হবে না। আজকে সেটার সম্পূর্ণটা এক সাথে পোস্ট করছি।

পর্ব-১
**বাবার মৃত্যু**

মাধবী কোমল ফুল ফোটে রোজ
মধু মাধবীতে করে ভুর,
দিব্য কর্ণে শুনে যায় সে রোজ
সুললিত মৌমাছিরই সুর।

ভগ্ন চিলেকোঠাতে জন্মে বালক
চিলেকোঠাতেই করে বাস,
চিরাগত তার অভাব ছিল, দুঃখ
তারে দেয়নাতো অবকাশ!

বাবার চিত্তে মায়াবিনী সুর
ফোটে দুঃখ পদ্মফুল,
ঘুমেতে জড়ায় কুহেলি কাপড়
ক্ষুদ্র মাণিক মৃদুল!

গৃহের পাশে মায়াবিনী বন
থেকে আসছে, প্রকট হিমেল বায়ু,
রাত্রি আনে হিম ঘনাঘন,
সে চিন্তায় বাবা করছে লঘু আয়ু!

কিন্তু বৃথাই সব কিছু তার,
করতে কি আর পারে?
সমাজ তারে করছে বিকার
ন্যায্য নেইকো কেড়ে!

প্রতিদিন দেয় গাধার শ্রম,,,,,,
পায়না পারিশ্রমিক,
অভাব ও তার রোজ নেয় দম
গুনতে নতুন ক্রমিক!

বাবা তারে বাসতো ভাল নিজের চাইতে অধিক
তথা প্রাণের চাইতে বেশি,,,,
কিন্তু সেতো তুলতো না মুখ,
মাণিকরে তার সেতো করতে পারেনি খুশি!!!

রোজ রাতে সে একা কাঁদে নিরালায়
কাঁদে মায়া স্বপনের ফাঁকে,
মাণিক না তার করে কতই আশাই
দেখে বাবার বদন দিকে!!

মাণিক ও তার বড্ড শুভ
বুঝেগো বাবার সব,
সঞ্চারেসে মহা সুখী ভাব
করেনাকো কলরব!

কিন্তু দিনেক বায়না ধরে
বাবার গলায় ঝুলে,
“দিবে তো আমায় গালিটা এনে
সালা দিন যেটা ঘুলে?”

সেই শোচনেই সহসা করলো বসে
এক প্রভাতে চুরি,
প্রভাত প্রাতেই আঁটল দরী বাঁশে
মহৎ গৃহস্থে ধরি!

ঘায়ের পরে ঘা মেরেছে,
করেছে গো কশাঘাত,
সেই আঘাতেই বাবা মরেছে,
ওই দিনের ওই রাত!

স্বভাবের চোঁর ছিল নাকো বাবা
অভাবে করেছে চুরি,
তারি শুল্ক বইলো গো বাবা,
দেখে নাকো আর ফিরি!

মুক্তো অম্বর তলে থাকেগো মানুষ
পারেনাকো নিতে শ্বাস,
সবল শ্রেণী ঢালছে গো বিষ,
করছে সর্বগ্রাস!

মাণিক কাঁদে লাশের পাশে
কাঁদে সাথে তার মা,
দেবঞ্জনা হায় ধুয়ে আসে
কেঁদে যায় প্রতিমা!

স্বামীরে আজ হচ্ছে মনে
অনেক অনেক স্বার্থপর,
জমছে ব্যথা হিয়ার কোণে
করে গেল কেন পর?

লাশের দাফন কেউ করেনা
বাবা চুরি করেছিল তায়,
মাণিক বাজায় বিষের বীণা
মাতৃ কবর খুবলে যায়!

কাফন ছাড়া দাফন শেষে
ধরল মোনাজাত,
মাণিক ক্রন্দন আসছে ভেসে
কাঁদছে দিবারাত!

পর্ব-২
**মাণিক ক্রন্দন//কবিতা**

শীর্ণ দেহের জীর্ণ বালক
চিবুক রেখে মাতৃ কোলে,
শূন্য কেন থালা তাদের
সে তা জানায় কান্না রোলে।

প্রতিক্রিয়াহীন থাকে মা
ঝরায় নয়ন-জল,
তলব করে মাণিক যে তার,
‘কাঁদছিস কেন বল?’

মা হেসে কয়, ‘ফুটো ঐযে কুটির
চালা, কাঁদবো কেন বল?
চুপসে এসে বদন উপর
পড়ছে বাদল জল।’

কমল মাতৃ বদন দেখে মাণিক
বুঝে নির্বাক,
‘ক্ষুধা নাই মা, থাক মা,
তুই শুয়ে থাক।’

কইছে মিছা মাণিক যে তার
বুঝে যায় মায় সব,
হৃদয়ঙ্গম করেও সব, থাকতে চায়
মায় নিশায় নীরব।

নিস্তব্ধ নিশার স্তব্ধতাকে কষ্ট
জানায় মাতৃ ফুপ্সে কেঁদে,
মাণিকও তার আড়ালে কাঁদছে
কষ্টে বক্ষ বেঁধে!

আড়াই বছর পূর্বে মাণিক
হারিয়েছে তার বাপ,
দারিদ্রতা দংশন করে রোজ
হয়ে দানব সাপ!

আজকে মালিক বড্ড ঠকায়ে
পয়সা দেয়নি হায়,
তাই তো মাণিক অন্নহীনা
ভাত জোটেনি তাই।

ফুপ্সে কাঁদা ঢেপসা কণ্ঠ মাণিক
শুনে মাকে জড়িয়ে কয়,
‘ক্ষুধার চাইতে মাতৃ ক্রন্দন
আরো অভিশাপময়!’

পর্ব-৩
**মাণিক ও মার মৃত্যু**

মহা নীলে আমি দেখি হেমবর্ণের
বর্ণমালা ক্যানভাস স্বপ্ন রঙ্গে আঁকা,
পাঠশালা এই নিষ্ফল ললাট গড়নের
হইনি কখনো দেখা!

স্বপ্ন আমার অবিনাশী থাকে
হিয়ার একটি কোণে,
মায়ার স্বপন ছাড় দেয়না দেখে
সময় একটু পেলে।

কিন্তু বৃথাই সব যে আমার
করতে কি আর পারি,
সর্বহারার জাত যে আমার
সব খেলাতেই হারি!

বিদ্যালয়ে টাকার খেলা
মহা শিক্ষায় নাই ছাড়,
খাবার জোটেনা যার দুবেলা
শিক্ষা দিয়ে করবে কি উদ্ধার?

বাবা মরেছে বছর পাঁচেক
মা'ই কেবল মন,
কিন্তু সমাজ আমার অনেক
নির্দয় প্রতিক্ষণ!

পুরুষতন্ত্র উঁচুতে বসে
করে খালি ফরমান
পারলে চুষে, ধমনী রসে
নিয়ে যায় পুরো প্রাণ!

কিন্তু আমরা করব কি আর
অভ্যাসেরই দাস,
তাই নিলাম আজকে তুলে বিষের
পূর্ণ গ্লাস!

প্রথমে একটু করলো জ্বালা
পরে সব শান্ত,
কিন্তু মা তো সইতে জ্বালা
প্রাণ করে ক্ষান্ত!

নাইকো কাঁদার কেউ আমাদের
মাটি চাপা দেয় ফেঁসে,
সমাজ আমায় দেয়নিকো কিছু
সবটা খেয়েছে গ্রাসে!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫

ধ্রুবক আলো বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন, প্রথম কবিতাটি পড়েছিলাম +++

লিখে যান,

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:০৪

রাফিন জয় বলেছেন: হুম, আপনার মন্তব্য দেখেছিলাম। ধন্যবাদ দাদা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.