নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্টিগমা

রাফিন জয়

স্টিগমা

রাফিন জয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বৈরাচার বিরোধী দিবস

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:১৯



থরে থরে ক্রিমজন কৃষ্ণচূড়া সে বসন্তেও ফুটে ছিল। রক্তাক্ত দোসরা ফাগুনের স্মৃতিচারণ করি। ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। নোনতা রক্তে স্নাত হয় রাজপথ। অতিতের পাতা খুলে ধরা যাক।

১৯৮২ সাল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট জেনারাল এইচ এম এরশাদের শাসন কালে তার শিক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ মজিদ খান এক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ জনগণের স্পর্শকাতর অনুভূতির স্থান ধর্মকে পূঁজি করে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করেন।

রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই অর্ধ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করতে হবে। যদি তাদের বার্ষিক ফল খারাপ হয়, তবুও সেই শর্তে তারা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। এক কথায় টাকার বিনিময়ে ডিগ্রি ক্রয়। শিক্ষা একেবারে পরিণত হতে যাচ্ছিলো পণ্যে। সাথে তাদের নীতিতে বাংলা ও ইংরেজির সাথে আরবিকেও বাধ্যতা মূলক করা হয়। যা একেতো মাতৃভাষাকে উপেক্ষা, উপরন্তু ধর্মের সেন্টিমেন্ট কে ব্যবহার করে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যকে কায়েম করা। সাম্প্রদায়িক শক্তির কবলে শেষ হতে যাচ্ছিলো বাংলা। শিক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছিলো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের থেকে।

তবে প্রতিবাদ প্রতিধ্বনিতে রাজপথ প্রকম্পিত করতে ছাড়েনি প্রগতিশীল ছাত্র-জনতা। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা ১৯৮২ সালের ২১ নভেম্বর মোট ১১টি ছাত্র সংগঠন মিলে প্রকাশিত শিক্ষানীতি বাতিলের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বসে গঠন করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। প্রত্যেক দল থেকে ১০ জন করে মোট ১১০ জনকে নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়।

সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে জনমত গঠন এবং আন্দোলনকে তরান্বিত করতে সবাই নেমে পড়ে মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে। আন্দোলন যখন ক্রমেই জনতার মাঝে সারা ফেলছিল, তখন আন্দোলনকে সর্বোপরি ছাত্র জনতাকে অবদমিত করতে বসে থাকেনি তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট এরশাদ। গ্রেফতার করা হয় তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ফারুককে।

ফলে ছাত্র জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সালের ২৭ ও ২৮ শে জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সারাদেশের ছাত্র জনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। আর তা দেখে স্বৈরাচার শাসকগণ ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তারা এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য এরপরে উঠে পড়ে লাগে।

রক্তঝরা দোসরা ফাগুন বা ১৪ ফেব্রুয়ারি মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্ররা ছাত্র জমায়েতের ডাক দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে মিছিলে দলে দলে শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অকুতোভয়ের মতে এগিয়ে চলছিল। স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হচ্ছিলো। ঢাকার হাইকোর্ট অবধি না যেতেই (বর্তমান শিক্ষা চত্বর) দেখে পুলিশের ব্যারিকেড। ব্যারিকেড বাধা অতিক্রম করার পূর্বেই অগত্যা রায়ট ভ্যান দিয়ে ছাত্র জনতার উপর গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়। টার্গেট করে চলে গুলি বর্ষণ। চলে বেধড়ক লাঠিচার্জ ও নির্মম ভাবে বুটের আঘাত। স্পট ডেথ হয় অনেকেরই। অনেকের লাশ গুম করে ফেলা হয়। যাদের নাম জানা যায় তারা হচ্ছে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, আইয়ুব, মোজাম্মেল, দিপালী।

রাইফেলের বুলেটের থেকে বাঁচার জন্য কেউ প্রাণপণে পালানোর চেষ্টা করে। কেউ কেউ কার্জন হলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। কেউ আবার সহপাঠীদের লাশ অবধি খুঁজে পায়নি। তখনো বিরতিহীন ভাবে বেজে যাচ্ছিলো রাইফেলের খইফোটার প্রতিধ্বনি।

অন্য দিকে যখন বসন্ত দুপুরে সূর্য হেলে পড়েছে, তখন ছাত্র জনতা ফের তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ি সামনে জড় হতে থাকে। তখন রাইফেল তাক করে খোলা জিপ ঢুকে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফের বেধড়ক পেটানো হয় শিক্ষার্থীদের। ক্ষতবিক্ষত দেহে কেউ আবার যায় ঢামেকে।

এভাবেই শুরু হয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত। ঘটনার পরিক্রমায় ১৯৯০’র গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারী এরশাদের পতন নিশ্চিত হয়। আর এমন তাৎপর্যপূর্ণ দিনকে ঘিরে আমরা এখন ভালবাসা দিবস পালন করি বটে, তবে শহিদদের জন্য একবিন্দুও নয়। রক্তঝরা ফাগুনের এই দিনটাকে নবপ্রজন্ম কতটুকু মনে রেখেছে? আমরা দোসরা ফাগুন আর ১৪ই ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য বলে বুঝে থাকি শুধু ভ্যালেন্টাইন ডে নামে। দেখতে পাই সিংগাল পরিষদের প্রেমবঞ্চিত হওয়া নিয়ে বিক্ষুব্ধ মিছিল। অসভ্য উল্লাস আর স্থুলতা। অথচ তখনো তারা প্রেম করতো, প্রেমিক-প্রেমিকাকে নিয়েই মিছিল হতো।

রক্তঝরা রক্তিমা ফাগুনের নতুন ভাবে আবির্ভাব ঘটুক। সব স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটুক। গনতন্ত্র মুক্তি পাক।
বাক স্বাধীনতা মুক্তি পাক,
মুক্তবাক বাক মুক্ত থাক।

রক্তঝরা ফাগুনের শুভেচ্ছা সাথে লাল সালাম স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সব শহিদের প্রতি।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: কি দরকার ওসব মনে রেখে? এখন তো চারিদিকে কেবলই সুখ সুখ

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৫

রাফিন জয় বলেছেন: প্যারা নাই, চিল!

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। ব্লগ কর্তৃপক্ষের উচিত পোস্টটি স্টিকি করা।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:০৯

রাফিন জয় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমার জন্মের আগের ঘটনা।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১০

রাফিন জয় বলেছেন: আমারও

৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৬

স্থিতধী বলেছেন: শফিক রেহমান কি তবে বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর প্রচলন শুরু করানোর আগে এ দিনের স্বৈরাচার বিরোধী ইতিহাস সম্পর্কে জানতোনা?

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১২

রাফিন জয় বলেছেন: কে উনি?

৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ভালবাসা দিবসের কারণে দিবসটি হারিয়ে গেছে।
আবার বারবার ফিরে আসায় দিবসটির গুরুত্বও হারিয়েছে।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১৫

রাফিন জয় বলেছেন: ঠিক একমত হতে পারছি না। দিনটি হারানোর কারণ আরও অনেক। আমাদের অগ্রজরা আমাদের সামনে ইতিহাস তুলে ধরে না।

৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫২

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আমার জন্য চরম ভয়াবহ তিনটি দিন ফেব্রুয়ারী ২১, ২২ এবং ২৩।

১৪ই ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় টিএসসির কাছ থেকে আমাকে ধরে নিয়ে যায় এরশাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। সারারাত আমাদের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের প্রাঙ্গনে পেটানো হয়। সারারাত ধরে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রদের ধরে নিয়ে আসা হয় একই স্থানে এবং চলে বিভিন্ন কিসিমের অত্যাচার। ২২ তারিখ সকালে নিয়ে যাওয়া হয় জোনাল মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটরের কার্যালয়ের সামনে - বসিয়ে রাখা হয় রোদের মধ্যে সারাদিন, একটু পরপর ভীতি প্রদর্শন করা হয় অস্ত্র তাকে করে। সেদিন সন্ধ্যায় কয়েকটি বিআরটিসি বাসে গাদাগাদি করে নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা ট্রানজিট ক্যাম্পে - বাস বহরের সামনে পিছনে মেশিনগান তাক করা সেনা জীপ। বাস থেকে নামিয়ে মোটা মোটা গদা দিয়ে পেটানো হয় আরেকদফা।
২২ তারিখ রাত্রে সামরিক কর্মকর্তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরদিন সকালে আমাদের ছেড়ে দেয়া হয় বর্তমান বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায়।

আমি এখনো মাঝেমধ্যে ভাবি, স্বৈরাচারী লম্পট খুনি এরশাদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে কিভাবে শেখ হাসিনা ৮৬ সালের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিলেন - জাফর, জয়নাল, দীপালি সাহার আত্মত্যাগকে অসম্মান করে !

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৫

রাফিন জয় বলেছেন: Hypocrisy is what Hasina is. I can feel you sir. I have also met some people who had participated in that protest. They said me the brutality.

৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:০৩

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: উপরে আমার মন্তব্যে টাইপো সংশোধন হবে। দুঃখিত, দ্রুত টাইপ করায় তারিখগুলোতে ভুল করে ফেলেছি।
প্রথম লাইনে:
আমার জন্য চরম ভয়াবহ তিনটি দিন ফেব্রুয়ারী ১৪, ১৫ এবং ১৬।
দ্বিতীয় প্যারায়:
১৫ তারিখ সকালে নিয়ে যাওয়া হয় জোনাল মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটরের কার্যালয়ের সামনে।
তৃতীয় প্যারায়:
১৫ তারিখ রাত্রে সামরিক কর্মকর্তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৮

রাফিন জয় বলেছেন: ১১ জানুয়ারি নাকি ফেব্রুয়ারিতে যেনো আরেকটা মিছিল হয়েছিলো সচিবালয় অভিমুখে। অনেক বড়ো মিছিল ছিলো। আসলে তথ্য সূত্র না থাকায়, ঠিক প্রকাশ করতে পারছি না। আপনিতো ঐ সময়কার, আমাকে একটু তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন স্যার?

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:০১

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: সম্ভবত আপনি ১৯৮৭ সালের নভেম্বরের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের তথ্য জানতে চেয়েছেন।

Noor Hossain and the image that helped bring down a dictator

Demonstrators And Police Clash On Eve On Anti-Ershad Demonstrations

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.