নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের আমলাতন্ত্রের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় বৃটিশ আমলে এই আমলাদের জন্ম এর উত্তরসূরীদের বলা হত আইসিএস অফিসার (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ডেভিড গিলমোর তার এক বিখ্যাত লেখায় দাবী করেছেন, “১৯০১ সালের দিকে, রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর এই উপমহাদেশে মাত্র হাজার খানেকের কিছু বেশি আইসিএস অফিসার ছিল, যাদের এক-পঞ্চমাংশ যেকোন সময়ে হয় ছুটিতে নয়ত অসুস্থ থাকত। অথচ এই গুটি কয়েক অফিসাররাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বর্তমানের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং মায়ানমার নিয়ে গড়া এক বিশাল অঞ্চলের প্রায় ৩০ কোটি লোকের প্রশাসন চালাত”।
বিখ্যাত রাশিয়ান নেতা জোসেফ স্টেলিন থেকে শুরু করে অনেক হোমরা চোমরাই এই আইসিএসদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। লয়েড জর্জ এই আইসিএসদের বৃটিশ ভারতের ‘স্টিল-ফ্রেম’ উপাধি দিয়েছিলেন। একটা ব্যাপার উঠে এসেছে গিলমোর সহ অনেকের লেখায়, তা হলো অফুরন্ত দুর্নীতির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই এলিট প্রশাসক শ্রেণী সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল
খোদ বৃটেনে বৃটিশ সিভিল সার্ভিস ‘প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার (বৃটিশ) জন্য উন্মুক্ত’ করে দেয়া হয় ১৮৭০ এর দশকে। অথচ এই উপমহাদেশে সিভিল সার্ভিস ‘প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার (বৃটিশ) জন্য উন্মুক্ত’ করা হয়েছিল আরও আগে, ১৮৫০ এর দশকে, কিন্তু তখনও আইসিএস নেটিভদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। (এর আগে ছিল ‘সিলেকসন বাই পেট্রোন্যাজ’) এবং সেই দশকেই অবশ্য নেটিভদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বলে রাখা উচিত এর আগে ইন্ডিয়ানদের উঁচু পদে যাবার অধিকার ছিল না।
নেটিভদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও আইসিএসে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারটা এত সোজা ছিল না। কালাপানি পাড়ি দিয়ে বিলেতে গিয়ে বৃটিশদের সাথে প্রতিযোগিতার করে সুযোগ পাওয়া কঠিন একটা কাজ ছিল। যার ফলে পরবর্তী চৌদ্দ বছরে শুধু মাত্র একজন নেটিভ আইসিএস হতে পেরেছিল। এবং তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রথম নেটিভ আইসিএস।
এই আইসিএসদের ব্যাপারে যে মডেলটা অনুসরন করা হত তা হল, কঠিন বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন। বাছাইয়ের পরে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশুনা করা এবং অন্যান্য কঠিন প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে যাওয়া। এই আইসিএসরা ছিল ‘জেনারেলিস্ট’, এদের মধ্যে সুপিরিওরিটি ও আরোপ করা হত। দৃশ্যতই বৃটিশ-রাজ একটা এলিট প্রশাসক শ্রেণী গঠন করতে চেয়েছিল। এবং স্বীকার করতেই হয় সফলও হয়েছিল।
বড় সব সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী এবং আমলাতন্ত্রের উপরের পদ গুলো (সেন্ট্রাল, প্রভিন্সিয়্যাল এবং জেলা পর্যায়ে) আইসিএসদের দখলে থাকত। অন্যান্য স্পেশালাইজ ক্যাডারের লোকজন উপরের পদ গুলোতে যাওয়া প্রায় অসম্ভবই ছিল, এবং তারা সাধারনত আইসিএসদের সাবোর্ডিনেট হিসাবেই থাকত।
১৯৪৭ সালে, পাকিস্তান এবং ভারত নামের দুটি নতুন রাষ্ট্রই এই সিভিল সার্ভিসের জন্য গর্বিত ছিল। পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরেই করাচিতে একটি সরকারি প্রচারপত্রে পাকিস্তনের সিভিল সার্ভিসকে আইসিএসদের উত্তরসূরী বলে গর্বভরে প্রচার করা হয়েছিল। আইসিএসকে বলা হয়েছিল, ‘দ্য মোস্ট ডিস্টিংগুইসড সিভিল সার্ভিস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। ১৯৪৭ স্বাধীনতার পরেই আইসিএসের আদলে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলা হয়েছিল, ১৯৫০ এর নামকরণ করা হয় সিভিল সার্ভিস অভ পাকিস্তান বা সিএসপি।
পাকিস্তানে সিএসপি নামের এই এলিট শ্রেণী কিন্তু মন্ত্রীদের কিংবা আইনসভার দ্বারা চালিত না হয়ে শক্তিশালী রুলিং পার্ট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রায়ই তারা মন্ত্রী এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করত। আইসিএসদের ঐতিহ্য বজায় রেখে কেন্দ্রীয় এবং প্রভিন্সিয়্যাল সেক্রেটারিয়েটের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রেখেছিল। সিএসপিরা আইসিএসদের মত স্বায়ত্তশাসিত ছিল। তারা তাদের বাছাই প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ, ইনডোক্ট্রিনেশন, ডিসিপ্লিনারি ব্যাপার, প্রমোশন এমনকি বিভাগীয় অনুসন্ধান সবকিছুই একক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করত”, আর সেই জেনারেলিস্ট, স্পেশালিস্ট দ্বন্দ্ব তো ছিলই। জেনারেলিস্ট সিএসপিরা সবসময় স্পেশালিস্টদের অবদমিত করে রাখত।
১৯৪৭ সালের পরবর্তীতে পূর্ববাংলার সচিবালয়ের সমস্ত উচ্চপদগুলি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী (এবং ভারত থেকে উদ্বাস্তু অবাঙ্গালীরা) আমলাদের দখলে। এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে তাদের ব্যবহার ছিল প্রভূর মত। আমলাদের অধিকারে ছিল পৃষ্টপোষকতার সম্পদ। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় পূর্ব বাংলার মুখ্য সচিব আজিজ আহমদের হাতে বিপুল ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। সচিবদের বদলির ব্যাপারে তার কথাই ছিল ফাইনাল।
পাকিস্তানের প্রথম গভর্ণর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানও আমলাদের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এমনকি আমলাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজনীতিবিদদের উপর নজর রাখতে। আরেকটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে। সিএসপি চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর জন্য সেক্রেটারী জেনারেলের পদ তৈরী করা হয়েছিল। ১৯৫১ তে তিনি যখন আর্থমন্ত্রী হলেন তখন এই পদ বিলুপ্ত করা হয়েছিল।
কাশ্মির এবং ভারত ইস্যুতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী দ্রুতই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। আশ্চর্যজনক ভাবে আমলা এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে আঁতাত খুব ভালই হত এবং রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির ব্যাপারে তারা সোচ্চারও ছিল।
তবে পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র তাদের পূর্বপুরুষদের ইনকরাপ্টএবল খ্যাতি বজায় রাখতে পারেনি। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন বিহীন হয়ে, পৃষ্টপোষকতার সম্পদ তাদের করেছিল দুর্নীতিবাজ। মজার ব্যাপার আইয়ূব খান এবং ইয়াহিয়া খান দু’জনেই আমলাতন্ত্রকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কিন্তু আমালাদের সাপোর্ট ছাড়া তাদের নিজেদেরই ভিতই ছিল নড়বড়ে।
ষাট এর দশকে পূর্বপাকিস্তানে স্বাধীকার আন্দোলন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে রুপ নেয়। তখন গুটিকয়েক দেশ প্রেমিক অফিসার ছাড়া বেশির ভাগ আমলারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তেমন কোন ভুমিকা রাখেন নি। তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তান সরকারের কাজ করেছেন।
১৯৭১ সালে অল পাকিস্তানে ৫০০ জন সিএসপি ছিল। ৩০০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী, ২০০ জন পূর্বপাকিস্তানী। এই ২০০ জনের মধ্যে ১৭ জন ছিল বিহারী। বাকি ১৮৩ জন সিএসপিই ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশটা চালচ্ছে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে। সাথে আছে কয়েকশ সংক্রামিত সিএসপি।
চলবে
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৫৪
ফেরারী মন বলেছেন: সামু কর্তৃপক্ষ আমার পোষ্টটি সরিয়ে ফেলেছে তাতে আমার কোনো দুঃখ নাই। হয়তো তারা আমার পোষ্টে এমন কিছু পেয়েছে যাতে তারা মনে করছেন যে এটা প্রথম পাতায় থাকা উচিত নয়। কিন্তু মতিহারকে ব্লক করার একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে । আর তা হল ৪৮ জন ব্লগার আমার পোষ্টে কমেন্ট করেছে তাদের কাউকেই আমি ব্লক করি নাই এমনকি তাদের একটা খারাপ কথা পর্যন্ত বলি নাই। কিন্তু হঠাৎ করে শেষের দিকে এই পোষ্টের ভিতর মা শব্দটা নিয়ে এসেছে এজন্য আমি তার উপর অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়েছি যার কারণে তাকে ব্লক করা হয়েছে এবং তার মন্তব্যটা মুছে দেওয়া হয়েছে। যা হোক সবাইকে ধন্যবাদ।