নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব মিথ্যা বলিব । সত্যের ভাত নাই তাই সত্য বলিব না।

রফিক এরশাদ

..সুযোগ পেলে চলে যাবো শহর ছেড়ে দুরে / কষ্টগুলো ফেলে যাবো পাশের আস্তাকুড়ে!

রফিক এরশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : খাম

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৩


এক
(নাটকের স্ক্রিপ্টটা শুরু হয় গ্রামের একটা অন্ধকার ভোঁর আলো ফুটে সকাল হচ্ছে এমন দৃশ্য দিয়ে। যে দৃশ্যে শেয়ালের ডাক থাকবে, আজানের অংশবিশেষ থাকবে, পাখিদের কিচিরমিচির, মোরগের ডাক, থাকবে বাচ্চাদের হইচই । পর্দার আড়ালে একটি কণ্ঠ ছড়া আবৃত্তি করবে।)
ছড়াঃ
হুক্কা হুয়া ডাকছে শেয়াল, চাঁদ উঠেছে একা,
গাছের ডালে বাদুরগুলো যাচ্ছেনা আর দেখা।
চাঁদের আলো বান ডেকেছে যাচ্ছে সরে পুবে,
হঠাৎ দেখি কি যে হল চাঁদটা গেল ডুবে।
মসজিদের ঐ মিনার থেকে আসলো মধুর ডাক,
আজান শুনেই নামলো পথে পাখপাখালির ঝাঁক।
চড়া গলায় মোরগ ডাকে কুক কুরু কুক কুরু,
এমন সকাল দিয়েই হল আরেকটা দিন শুরু।
ছেলে মেয়ে বুড়ো বুড়ি উঠে দাঁত মাজে,
আম্মা তখনই উঠে লেগে গেছে কাজে।
বই খাতা ব্যাগে ভরে খেয়ে নাও নাস্তা,
ইস্কুলে যাব ঐ দেখা যায় রাস্তা।
হই হই রই রই যাই ইস্কুলে,
পড়াশুনা করে যাই ভেদাভেদ ভুলে।
স্কুলে চলে আস তারা ইচ্ছা যাদের,
আদর্শ স্কুলে এলে পাবে আমাদের।।

দুই
টেবিলের উপর আড়াআড়ি ভাবে পড়ে আছে মুখবন্ধ খয়েরি রঙ্গের খামটা। মিনহাজুল আবেদীন অপলক চোখে চেয়ে আছেন খামটার দিকে। কি আছে এতে? টাকা থাকার সম্ভাবনা বেশী। সরাসরি কাউকে টাকা দেয়া অভদ্রতা। তাই মানুষ টাকা দেয় খামের ভেতর। এটাই ভদ্রতা। ছোট্ট অফিস ঘরটাতে তিনি একা বসে আছেন। এসির ঠান্ডা বাতাসের তীব্রতা এতই বেশী যে তার শীত করছে। তিনি ঠিক কতক্ষন ধরে এই রুমে একা বসে আছেন বুঝতে পারছেন না। চার্জের অভাবে তার মোবাইল ফোনটা বন্ধ হয়ে আছে। অফিস রুমের একমাত্র দেয়াল ঘড়িটা বলছে যে সময় এখন থেমে আছে। কারন ঘড়িটা বন্ধ। টাইম এন্ড টাইড ওয়েট ফর নান কথাটা এখানে প্রযোজ্য হচ্ছে না। তিনি খামটা তুলে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন।

তিন
(নাটকের এই দৃশ্যে গ্রামের একটি শ্রেণীকক্ষে পড়াশুনার কিছু খণ্ডচিত্র দেখা যাবে । পর্দার আড়ালে একটি কণ্ঠ ছড়া আবৃত্তি করবে।)
ছড়াঃ
অনেক পড়া, বাংলা এবং অংক ভীষন গোলমেলে
বিজ্ঞানটা মাথার ভিতর অদ্ভুত এক ঢেউ খেলে।
ইংরেজিটা ভীষন মজা-একটা বিশাল নদী
সেই নদীতে সাঁতার দিতাম বেল না বাজতো যদি!
ঘণ্টা বাজার শব্দ হবেঃ টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং
(পরবর্তী দৃশ্যে টিফিন পিরিয়ডের কিছু খণ্ডচিত্র দেখা যাবে । ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণীকক্ষ থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে যাবে। একটি কণ্ঠ ছড়া আবৃত্তি করবে।)
ছড়াঃ
টিফিন হল, টিফিন হল, চল ছুটে বাগানে,
গল্পের আসর জমবে এখন ছড়া এবং গানে ।
এই যে দাদু চলে এসছেন নতুন গল্প নিয়ে,
আর কথা নয় শুনবে এবার খুব মনোযোগ দিয়ে।

চার
পঞ্চাশোর্ধ মিনহাজুল আবেদীন ৭নং খাড়াসার ইউনিয়ন পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক। এটি ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া আর আশুগঞ্জের মধ্যবর্তী একটি গ্রাম। সরকারী এমপিওভুক্ত স্কুল, বেশ পুরনো। এখানে তার যথেষ্ঠ সুনাম। সবাই তাকে গাতক স্যার বলে জানে। তিনি স্কুলের জন্য নাটক লেখেন, গান লেখেন, প্যারোডি করেন। সবই তার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা আর আনন্দ দানের জন্য। এই স্কুলে যত বেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, এখানকার আর কোন স্কুলে হয় না। এমনই একটা পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি’র ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি এখন যে অফিসটাতে বসে আছেন এটা সম্ভবত তারই। অফিসটা মগবাজার ওয়্যারলেসগেটে। দাড়োয়ান তাকে কিছুক্ষন এখানে বসতে বলেছে। আর কতক্ষন বসে থাকতে হবে তিনি বুঝতে পারছেন না। হঠাৎ কি ভেবে তিনি খামটা তুলে বুকের সাথে চেপে ধরলেন।
খামের মুখটা স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল। হয়তো হাতের কাছে আঠা ছিল না বলে যিনি লাগিয়েছেন স্কচটেপ ব্যবহার করেছেন। কাজটা যে খুবই দ্রুততার সাথে করা হয়েছে তা হাতের লেখাটা পরে বোঝা যাচ্ছে। ছোট্ট করে বাংলায় লেখা আছে, ‘মিনহাজ’। আগে ‘জনাব’ও নেই পরে ‘স্যার’ও নেই। নিজের নামটা নিজের কাছেই কেমন অপিরিচিত মনে হচ্ছে। প্রায় ত্রিশ বছরের দীর্ঘ সময় ধরে তিনি শিক্ষকতা করছেন। অর্থকরি না পেলেও যেটা পেয়েছেন সেটা হল মানুষের সম্মান আর স্রদ্ধা। এই তো গত ফাল্গুন মাসে টিএনও সাহেবের ছেলের বিয়ে হল। তিনিই গ্রামের একমাত্র ব্যাক্তি যাঁকে কার্ড ছেপে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। আর কেউই কার্ড পায়নি। বাকি সব কার্ড চলে গিয়েছিল শহরে। কার্ডের খামের উপর লেখা ছিল, ‘জনাব মিনহাজুল স্যার ও পরিবার’। স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন সবগুলো ক্লাস তিনি করেছেন দাওয়াত কার্ড হাতে নিয়ে। ক্লাসে ঢুকেই বলেছেন, ‘বুঝলি ব্যাটারা সম্মান অনেক বড় ব্যাপার। ট্যাকা পয়সা হাতের ময়লা আর সম্মান মাথার মুকুট’। বিয়েতে অবশ্য তার যাওয়া হয়নি। হাতটা একদম খালি ছিল। হঠাৎ মিনহাজুল আবেদীনের মনে হল, আচ্ছা এমনও তো হতে পারে এই খামের ওপর যে নামটা লেখা সেটা তিনি নন, অন্য কেউ। তাকে তো শুধু চেয়ারে বসতে বলা হয়েছে। এটা বলা হয়নি যে টেবিলের খামটা আপনার। তিনি লজ্জিত ভাবে খামটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিলেন।

পাঁচ
(এই দৃশ্যে বুড়ো দাদু স্কুলের আঙ্গিনায় বাচ্চাদেরকে নিয়ে গল্পের আসর জমিয়েছেন । বাচ্চারা তাকে ঘিরে গোল হয়ে বসেছে এবং গল্প শুনছে।)
দাদুঃ এক যে ছিল রাজা, এটা খুব পুরনো গল্প
এক যে ছিল রাজা, এটা খুব পুরনো গল্প-
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ যা হয় একটা শুরু করুন, সময় যে খুব অল্প।
দাদুঃ আগের দিনে রাজা ছিল, প্রজা এবং উজির,
দামটা বেজায় সস্তা ছিল চাল, ডাল, তেল, সুজির।
ঘোড়াশালে ঘোড়া ছিল, হাতিশালে হাতি,
কথায় কথায় যুদ্ধ লাগতো এই জাতি, ঐ জাতি।
এক যে ছিল রাজা, আমার গল্পটা খুব দারুন-
জনৈক ছাত্রীঃ ধুত্যেরি ছাই দাদু এসব টালবাহানা ছাড়ুন।
দাদুঃ রাজা-রানী-রাজ্য-প্রজা সব হয়েছে কাল-
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ নতুন কিছু বলেন দাদু, আমরা ডিজিটাল।
দাদুঃ হুমম বুঝলাম, তবে শোনরে কচিঁকাঁচা,
আমি তখন যুবক থেকে কেবল হলাম চাচা।
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ তারপর?
দাদুঃ একটা ছেলে ছিল, সবাই ডাকতো তারে টোকাই,
একটু খানি চালাক ছিল, একটুখানি বোকাই।
জনৈক ছাত্রঃ নাম কি ছিল তার?
জানাটা দরকার।
দাদুঃ বাপ-মা তার কেউ ছিল না, নাম দেবে কে শুনি?
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ যাই হোক একটা বলে দেন, আমরা শুনতে চাই এক্ষুনি।
দাদুঃ মুন্না, ওর নাম ছিল মুন্না। এবার হলো?
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ নামটা বুঝতে পেরেছি এবার বাকিটা বলো!
দাদুঃ তার কাঁধে ঝোলা ছিল, ঝোলা ভরা ময়লা।
এটা সেটা কত কিছু ইট কাঠ কয়লা।
ভাগারের ময়লা না, কুড়াতে সে তাই-
বুঝে শুনে আমরা যা ফেলে রেখে যাই।
গাড়ি ঘোড়া, রাস্তায়, ইস্কুল মাঠে,
ছেলেবুড়ো, জনগন যেই পখে হাটে।
এটা সেটা ফেলে রাখে আসে পঁচা গন্ধ!
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ যারা এসব করে তারা মন্দ!
দাদুঃ মন্দ কেউ না দাদু, সব্বাই ভালো,
মেঘে ঢেকে গেছে চাঁদ-তাই এত কালো।
মেঘ কেটে গেলে চাঁদ হাসবে আবার..
জনৈক ছাত্রঃ আমদের তো টিফিন পিরিয়ড, আমরা কি খেতে পারি একটু খাবার?
দাদুঃ নিশ্চয় খেতে পার, তবে শুনে আসবে
খাবার খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে আসবে।
জনৈক ছাত্রীঃ আমরা তো হাত ধুই ঘুম থেকে জেগে।
দরকার আছে তবে খাবারের আগে?
দাদুঃ মাছ থাকে পানিতেই ধোয়া থাকে খুব
নদী আর খালে-বিলে দিয়ে থাকে ডুব।
কেটে কুটে মা দেখি করে তরকারী।
এবার বল, রান্নার আগে ধোয়াটা কি দরকারী?
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ দরকারী, দরকারী।

ছয়
খাড়াসার থেকে পায়ে হেটে তালশহর বাজার। এখান থেকে বাল্লার লোকাল ট্রেনে ভৈরব। ভৈরব থেকে বাসে করে মহাখালী টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে আবার বাসে করে ওয়্যারলেসগেট। মোটমাট একশ পয়ষট্টি টাকার ধাক্কা । একই খরচে আজই আবার তাকে ফিরতে হবে। তিনশ টাকা নায়লার কাছ থেকে নিয়ে তিনি ঢাকা এসেছেন। নায়লা তার পুত্রবধু। হাত খালি ছিল। মেয়েটা টাকাটা না দিলে তার ঢাকা আসা হত না। মেয়েটার মনটা বড় নরম। এসে টাকাটা হাতে গুজে দিয়ে বলল, ‘আব্বা মন খারাপ করবেন না। আপনে ঢাকা থেকে ঘুইড়া আসেন। আমি যাইতেছি। আমার হাতে দুনিয়ার কাজ। মন্টির কাঁশিটা কিছুতেই ভাল হইতেছে না। তুলসি পাতা আর কাজ করতেছে না আব্বা। একটু দোয়া কইরেন’। মেয়েটা দৌড়ে চলে যায়। তিনি তাকিয়ে থাকেন। কথা বলার শক্তি ছিল না তার। তার বলতে ইচ্ছা করছিল, মাগো আমি ঢাকা যাব না। তুই টাকাটা দিয়া মন্টিরে ডাক্তার দেখা। এতদিন কাঁশি থাকা ভাল কথা না রে মা।

সাত
দাদুঃ টোকাইয়ের সখ ছিল যাবে ইস্কুলে,
কিভাবে পড়বে? কেউ নাই তিন কুলে।
টাকা নাই, জামা নাই, নাই ব্যাগ বই,
রাস্তায় বাড়ি তার ঘর পাবে কই?
জনৈক ছাত্রঃ আমাদের বাড়িতে একটা ঘর আছে, দিতে পারি তারে-
দাদুঃ সে তো স্বাধীন থাকতে চায়। সে কি তা নিতে পারে?
জনৈক ছাত্রীঃ আমার অনেক পুরনো জামা আছে আম্মা কাউকে দেয় না!
দাদুঃ দিলেও লাভ নাই সে অন্যের দান নেয় না।
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ তার কি বন্ধু ছিল কোন?
দাদুঃ সে কথাই তো বলতে যাচ্ছি এবার শোনো।
দেশের মন্ত্রীর এক মেয়ে ছিল- নাম খুকি,
বয়সটা দশ-বারো, তার অল্প কি!
দুধে আলতায় রং সোনার বরণ,
বেণী চুল ছিপছিপে গায়ের গরন!
গাড়ী চড়ে স্কুলে যায়, হাটে না সে পায়ে,
সব লোক চেয়ে থাকে তার ডানে বায়ে।
কত সব দামী দামী খাবার সে খায়,
যত খায় তার বেশী ফেলে রেখে যায়।
গোটা দুই বডিগার্ড সাথে থাকে সদা,
হাতে থাকে রাইফেল, ছুরি, চাকু, গদা।
একদিন কি হল-
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ কি হল দাদু বল?
দাদুঃ আধখানা কলা খেয়ে ফেলে দিল হেটে,
ডাস্টবিনে নয় সোজা স্কুলটার গেটে।
এক বুড়ো এসেছিল নাতনীকে নিয়ে,
পা পিছলে পড়ে গেল ঐখানে গিয়ে।
যদিও মরেনি বুড়ো, তবু এটা খুন না?
তক্ষুনি ঐ পথে যাচ্ছিল মুন্না।
ঘটনা বুঝতে পেরে বাকি সারাবেলা,
স্কুল গেটে সারাদিন থাকে এক্কেলা।
বিকেলে ছুটির পরে খুকি চড়ে গাড়ি,
মুন্না দৌড়ে ছুটে যায় তাড়াতাড়ি।
তাকে দেখে গাড়িটার গ্লাস যায় নেমে,
উৎসুক জনগন, কথা গেছে থেমে।
বডিগার্ড বলে, এই গাড়ি দাঁড় করিয়েছিস ক্যান?
মুন্না বলে, এই যে আপামনি আপনার কলার খোসাটা নেন।
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ হি হি হি হা হা হা হো হো হো
দাদুঃ বডিগার্ড বলে, এই ভাগলি হতভাগা,
তোর যদি ইচ্ছা হয় তুই গিয়া খা গা।
মুন্না পায় না ভয় বলে, আপামনি-
আমরা গরীব খুব আপনারা ধনী।
কলার খোসাটা ফেলে ইস্কুল গেটে,
পরে গিয়ে ব্যাথা পেল বুড়ো তার পেটে।
যদি বুড়ো মরে যায় তোমরা কি হাসবে?
ঐ ছোট মেয়েকে স্কুলে কে নিয়ে আসবে?
গাড়ি নিয়ে চলে যাও, ডাস্টবিন পেলে,
টুপ করে ডাস্টবিনে এটা দিও ফেলে।
বডিগার্ড চাকু নিয়ে বলে, ব্যাটা ইতর!
খুকি বলে, কাকু বাদ দাও, ওর কখা তুমি কি করে বুঝবে বসে গাড়ির ভিতর?
এভাবেই দুজনার হয়ে গেল খাতির!
জনৈক ছাত্রঃ ওরে গিট্টু, এ যে পিপঁড়ের সাথে প্রেম হয়ে গেল হাতির!
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ হি হি হি হা হা হা হো হো হো

আট
ফোনটা এসেছিল গত মাসের সাত তারিখ। আছরের ওয়াক্ত। মিনহাজুল আবেদীন ওযু করে ঘরে এসেছেন এইসময় বাজলো ফোনটা।
-হ্যালো কে?
-আপনি কি মিনহাজ স্যার বলছেন?
-জ্বি বলেন।
-আমাদেরকে একটা কাজ করে দিতে হবে স্যার।
-কিন্তু আপনে কে?
-জ্বি হাসানের কাছ থেকে আপনার নাম্বার পেয়েছি। হাসানের বাবা আপনাদের এলাকার এমপি তাই না?
-ও আচ্ছা বলেন।
-আপনে নাকি ভাল কবিতা নাটক গান প্যারোডি এইসব লেখেন শুনলাম। স্কুলের পোলাপানের জন্য।
-জ্বি বাবাজি এই আর কি। বাচ্চাদের শিখানোর জন্য। রং ঢঙ করে কিছু বললে বাচ্চারা একটু মনোযোগ দিয়া শুনে ।এই জন্য এই সব করি। হা হা।
-জ্বি স্যার আমরাও এইটা চাই। শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপরে একটা গীতি নাটকের স্ক্রিপ্ট বানিয়ে দিতে হবে আপনাকে। বলতে পারেন একরকম ছন্দে ছন্দে নাটক। আমরা এটা দিয়ে একটা টিভি অনুষ্ঠান বানাবো। শিশু ও মহিলা অধিদপ্তর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এরা হবে অনুষ্ঠানের স্পন্সর । মন্ত্রি মিনিষ্টাররা এটা দেখবে। টিভিতে দেখালে আপনিও ঘরে বসে দেখতে পাবেন। এই সুযোগে পুরষ্কার টুরষ্কারও পেতে পারেন। মানে বুঝলেন না স্যার অনেক বড় কাজ। আপনি একসপ্তাহের মধ্যে এটা লিখে একটা ঠিকানায় কুরিয়ার করবেন। ঠিকানাটা আমি আপনার মোবাইলে এসএমএস করছি। ঠিক আছে স্যার?
-ঠিক আছে বাবাজি।
-জ্বি স্লামালেকুম।
মিনহাজুল আবেদীন বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে কাজটা করলেন। কুরিয়ার করলেন এই ঠিকানায় যেখানে তিনি এখন বসে আছেন। তিনদিন আগে ফোন করে তাকে আসতে বলা হয়েছে। কাজের পারিশ্রমিক নিতে এসেছেন ভেবে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে তার। এসব কাজ তিনি আনন্দের জন্য করেন। তার সন্তানতূল্য ছাত্রদের শিক্ষাদানের জন্য করেন। এর কোন পারিশ্রমিক হয় না। হঠাৎ মন্টির কথা মনে পড়লো। যদি কিছু টাকা পাওয়া যায় বাচ্চাটাকে ভাল ডাক্তার দেখাতে হবে। ভুল হয়ে গেছে, ওকে সাথে করে নিয়ে আসলে ভাল হত। একবারে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। ঢাকায় ভাল ভাল ডাক্তাররা বসেন। কেন জানি চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসে তার।

নয়
দাদুঃ হাসি নয়, হাসি নয় শোন মন দিয়ে,
নোংরা ময়লা ফেল ডাস্টবিনে গিয়ে।
জনৈক ছাত্রীঃ ধারে কাছে ডাস্টবিন যদি না থাকে তবে,
দাদুঃ একটা পাত্রে জমা করে নিতে হবে।
তারপর একসাথে রাতে কিবা দিনে,
কেউ গিয়ে ফেলে রেখে দিবে ডাস্টবিনে।
জনৈক ছাত্রঃ আচ্ছা ডাস্টবিনে ময়লা না ফেললে আর কি কি হয়?
ডাস্টবিনে যাওয়া আসা মনে হচ্ছে সময়ের অপচয়!
দাদুঃ ঠিক কথা, হক কথা, কথা খুব খাসা
তোমরা কি জানো, ময়লা আবর্জনা রোগ জীবানু আর ব্যাকটেরিয়ার বাসা?
জনৈক ছাত্রীঃ দাদু, রোগ জীবানু আর ব্যাকটেরিয়া কি করে?
আমি খুব ভীতু আমার এসব ভয় করে!
দাদুঃ হুমমম, সত্যিকারের ভয় পাওয়াটা দরকার, কিন্তু আমরা পাই না
তোমরাই বলো, এমন কোন খাবার আছে যা আমরা খাই না?
জনৈক ছাত্রীঃ সব খাই, সবই খাই, নাই কিছু বাদ
টক-ঝাল-মিস্টি আহা কি যে স্বাদ!
দাদুঃ ঠিক তাই, খেয়ে দেয়ে খাবারের অংশ
মোড়ক, প্যাকেট আর অবশিষ্টাংশ।
বাসি পচাঁ খাবার আর যা যা রাখি ঘুটে
মাছ মাংসের এঁটো যা যা কিছু জুটে।
বোতল আর ক্যান, প্লাস্টিক পলিথিন,
ভাঙ্গাচোরা খেলনাটা সাথে দিয়ে দিন।
পরিবেশ দূষন হয়, শুধু তাই তো না-
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ বুঝতে পারছি, এইখানে সেইখানে না ফেললে এইসব হইতোনা।
অসুখ বিসুখ বেশি হয় শিশুদেরই,
কিছু করা দরকার, বড় হয়ে গেছে দেরী!
দাদুঃ এবার নিশ্চয়ই তোমরা নিজেরা নিজেদের কান মলবে?
এবার আসো ডাক্তার কাকু আমাদেরকে এসব অসুখ সম্পর্কে বলবে।
(এই দৃশ্যে ডাক্তার কাকু গল্পের আসরে যোগ দেবেন। তিনি দাদুর পাশে বসবেন।)
ডাক্তার কাকুঃ ছড়ানো ছিটানো এসব আবর্জনায়,
ছড়িয়ে পড়ছে রোগ নানা জায়গায়।
ডায়রিয়া হয় খুব এসবের বলে-
জীবানুরা হানা দেয় খুব দলে দলে!
আমাশা ও কলেরা হলে যায় না ছাড়া-
জনৈক ছাত্রীঃ আমার ছোট ভাইয়ের হইছিল, মারা গেছে বেচারা!
ডাক্তার কাকুঃ দু:খের কথা এটা! জন্ডিস আরো-
সে-ই বোঝে যদি এটা হয়ে থাকে কারো।
অপরিস্কার পরিবেশ থেকে রোগ হয় ম্যালা-
জনৈক ছাত্রঃ আরও বাকি আছে? এবার সামলাও ঠ্যালা!
ডাক্তার কাকুঃ অ্যাজমা, হুপিংকাশি, খোসপাঁচড়াতে,
ছোট বাচ্চারা খুবই ব্যাথা পায় তাতে!
জনৈক ছাত্রীঃ তাইলে এখন আমরা কি করবো?
আমাদের বইয়ে এসব লেখা আছে আমরা কি শুধু পড়বো?
দাদুঃ পড়লে হবে না দাদু, লেখা আছে যত-
যা লেখা আছে কর কাজে পরিনত।
জনৈক ছাত্রীঃ কিন্তু কিভাবে করবো শুরু?
আপনি বলে দেন না, আপনি গুরু।
দাদুঃ নিজে ভালো হলে হবে দুনিয়াটা ভালো,
নিয়মিত স্নান করো, গায়ে পানি ঢালো।
নখ কাটো, চুল কাটো, বড় হলে তবে
হাত মুখ ধুয়ে বস খাবারের আগে।
ঘরবাড়ি ক্লাসরুম এটা সেটা ফেলে-
কোরও না নোংরা, আর এঁকোনা দেয়ালে।
জনৈক ছাত্রঃ আমরা ইচ্ছা করে আঁকিনা, আমরা আঁকি আপন খেয়ালে।
দাদুঃ যেই খেয়ালেই আঁকো, ঠিক না পিচ্চি!
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ আমরা আর এসব করবোনা কথা দিচ্ছি।
দাদুঃ আমরা আজকে যা যা শিখলাম
এগুলো গ্রামের সবাই কি জানে?
জনৈক ছাত্রীঃ না দাদু জানে না
আর জানলেও অনেকেই মানেনা।
দাদুঃ শিখতে হলে জানতে হবে
আর জানলে মানতে হবে।
আর যে জানে কিন্তু মানে না-
ছাত্র-ছাত্রীরাঃ সে সমাজের জন্য কোন সুফল বয়ে আনে না!
(স্ক্রিপ্ট সমাপ্ত)

দশ
-‘আপনি মিনহাজুল আবেদীন’? অবশেষে অফিসের ম্যানেজার সাহেব এলেন। এমপি’র ছেলের বয়সী। আর একটু বেশী হতে পারে। মনে হচ্ছে এর সাথেই ফোনে কথা হয়েছিল।
-জ্বি
-আপনি মনে হয় অনেক সকাল সকাল চলে এসেছিলেন স্যার। তাই না।
-জ্বি বাবাজি।
-আপনার খামটা দেখছি আপনাকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে কষ্ট করে এতক্ষন বসেন আছেন কি জন্য?
-বাবাজি কিছুতো বলে নাই।
-বুঝতে পেরেছি। সরি। শুধু শুধু এতক্ষন বসে থাকলেন। এই নিন এই খামটা আপনার জন্যই।
-ধন্যবাদ। আমি তাহলে আসি।
-ঠিক আছে আসুন। ভাল কথা আপনার স্ক্রিপ্টটা আমরা পেয়েছি। হয়েছে মোটামুটি। তবে আপনার চেয়ে ভাল আরও কিছু স্ক্রিপ্ট আমাদের কাছে আছে। সবগুলো মিলিয়ে একটা ফাইনাল করা হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন অনেক বড় একটা কাজ। আপনি তো গ্রামের স্কুলে বাচ্চাদেরকে এসব শোনান। ওরা মজা পায়। বাট শহরের বাচ্চারা ডিশ টিভি এসব দেখে মর্ডান হয়ে গেছে। ওদেরকে মজা দিতে অনেক এলিম্যান্ট যোগ করতে হয়। এলিম্যান্ট মানে মসল্লা স্যার। ওরা সহজে মজা পায় না। তাই মসল্লা দিতে হয়। হা হা হা। হাউএভার থ্যাংকিউ ভেরি মাচ। ইউ মে গো নাও।

পরিশিষ্ট
মিনহাজুল আবেদীন ওয়্যারলেস গেট থেকে হাটাপথে মহাখালীর দিকে রওনা হয়েছেন। প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ। ঘামগুলো কেন জানি চোখের কোনায় গিয়ে জমা হচ্ছে। তিনি পাঞ্জাবীর হাতায় বার বার চোখ মুছছেন। অফিস থেকে বেড়িয়ে তিনি তাড়াহুড়া করে খামটা খুলেছেন। ভেতরে ছিল দু’টা কুপন। কোন একটা চাইনিজ রেস্তোরার বুফে ডিনারের কুপন। রেস্তোরার নিচে লেখা গুলশান-১। সম্ভবত রেস্তোরার ঠিকানা ওটা। খামটা এখন তার পাঞ্জাবীর পকেটে আছে। একটা হাতে তিনি পকেটের ভিতর খামটা ধরে আছেন। তার মাথায় ভাল একটা আইডিয়া এসেছে। তার অনেক ছাত্রই ভাল রেজাল্ট করে ঢাকায় আসে পড়াশুনা করতে। যখন বিদায় নিতে যায় তার কাছে দেয়ার মত কিছুই থাকে না। তিনি শুধু মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন। এমনই তার একজন প্রিয় ছাত্রকে তিনি বিদায়ের সময় এই খামটা দিবেন। দিয়ে বলবেন,এই নে ব্যাটা তোর গরীব স্যারের একটা উপহার।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগা রইলো।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০০

রফিক এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন।

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম। :)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

রফিক এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৬

রফিক এরশাদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই :)

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২৮

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ছড়া ও গল্পের মিশেলে বেশ ভালই লাগলো। তবে বন্ধনীর ভিতর লেখাগুলোতে সহজপাঠ ব্যাহত হয়েছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৭

রফিক এরশাদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লাগছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৮

রফিক এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪

উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লাগছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২৮

রফিক এরশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.