নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক

[email protected]

দণ্ডিত পুরুষ

জীবন যাপন নয়, বহন করেই চলছি প্রতিনিয়ত। কখনও কখনও এই বহিত জীবন, আমাকে ভুল পথে চালিত করে। তখন আমি অপরাধবোধে ভুগী। নিজেকে দণ্ড দেই। এভাবেই চলছে জীবন।

দণ্ডিত পুরুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দর্শন, বস্তুবাদ ও বিজ্ঞান (পর্ব-১)

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:৫৩

দুনিয়ার চিন্তাধারার ইতিহাসে বস্তুবাদ ও নাস্তিকতা প্রায় একই সাথে হাত ধরাধরি করে চলে আসছে। সৃষ্টিকর্তা নেই – এটাই নাস্তিকতার মূল প্রমাণ্য বিষয়। অন্য কথায় বলা যায় - বস্তুই সবকিছুর মূলে। বস্তুই মহাজগতের অদি আর বস্তুই এর অন্ত। এতে সচেতন সৃষ্টিকর্তার কোনো প্রয়োজন নেই।



অতীতে ধর্মকে যারা কঠোর মনে করত- কিংবা ধর্মীয় জীবন-যাপনকে কষ্টকর মনে করত, - অন্য কথায় - যারা খাওয়ায়, বিলাসিতায় ও জাগতিক জাঁকজমকে জীবনকে উপভোগ করতে চাইত তারাই কমবেশী ধর্মীয় বন্ধনকে ছিন্ন করে নাস্তিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করত। মহত্তর জীবনবোধের বিরোধী আর জাগতিক বস্তু উপভোগে মত্ত এইরূপ একদল লোককে তাই বলা হতো বস্তুবাদী। পরবর্তীকালে একেই ইতর বস্তুবাদ নাম দেয়া হয়।



কিন্তু এধরনের লোক ছাড়াও আরও একদল নাস্তিকতাবাদী লোক ছিলেন - যারা ভোগে নয় চিন্তাধারায়ও কোনো সৃষ্টিকর্তার যৌক্তিকতা বুঝতে পারতেন না। ১৪-১৫ শতকের দিকে বিজ্ঞানের অপূর্ব আবিষ্কারে এই চিন্তা ধারার লোকজন নতুন এক যুক্তির সন্ধান পায়। বিজ্ঞানের আবিষ্কার শুধু যে মানুষের বিরাট শক্তির ঊম্মেষ ঘটিয়েছিল তাই নয়- নতুন নতুন জ্ঞানের ও সন্ধান দিয়েছিল। যে বিষয়ে মানুষ এতদিন ছিল অন্ধকারে, যার কার্য-কারণ বুঝা ছিল তার পক্ষে অসম্ভব এবং বহু কিছুর কারণ জানত না বলে বহু কুসংস্কারকে সে অলৌকিক শক্তি রূপে কল্পনা করত - তা এখন বিজ্ঞানীর হাতের মুঠোয় সহজ ভাবে ধরা দেয়ায় বস্তুবাদীরা ভাবতে লাগল - অলৌকিক শক্তির কল্পনা অবান্তর অন্ধ কুসংস্কার। মানুষ আগাগোড়া বস্তুনির্ভর, আর অলৌকিক শক্তির আস্তিক্য কুসংস্কারকে কাটিয়ে উঠে বস্তু-শক্তির জ্ঞান লাভ ও ব্যবহারই মানুষের চরম ও পরম সাধনার বিষয়।



এই সময় থেকে শুরু করে ঊনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স ও বৃটেনে একদল বস্তুবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। এদের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল - একদিকে খৃস্টান ধর্ম তথা সমস্ত ধর্ম বিশ্বাসের অসাড়তা প্রমাণ ও বস্তু-নির্ভর জীবনের যৌক্তিক গতিধারা নির্ধারণ। এরা মনে করতেন প্রকৃতিই একমাত্র শেষ ও সত্য। এদের মধ্যে বুকনার (Buchner), মলেসকট (Moleschott), ভট (Vot), বওয়ার (Bawer), র্স্টানার (Stirner) ও নৈরাজ্যবাদী বাকুনিন (Bakunin) অন্যতম। এই সময়ের বস্তুবাদকে বলা হয় যান্ত্রিক বা মেকানিস্টিক (Mechanistic) বস্তুবাদ। কারণ, বৈজ্ঞানিক অন্যান্য যন্ত্রপাতির মতো মানুষকেও তখন এই বস্তুবাদীরা মহত্তর জীব মনে না করে, মনে করতেন বস্তুর উন্নততর বিকাশ মেশিন বা যন্ত্ররূপে।



অপরদিকে বস্তুবাদের বিপরীত মতবাদ হিসেবে দর্শনে ভাববাদের সৃষ্টি হয়। বস্তুবাদীরা যেমন মনে করতেন বস্তুই সব ভাববাদীরা মনে করতেন ভাবই (Idea) সবকিছুর মূল। ভাববাদী দলের মধ্যে সবচাইতে নামকরা দার্শনিক হলেন, জার্মানির হেগেল (Hegel)। হেগেল ভাববাদে বিপ্লব আনেন - তিনি দ্বান্দ্বিকতা ও বিপরীততার (Dilaectis) তত্ত্ব পরিবেশন করেন। এইমতে প্রত্যেক ভাবে বা কাজে দু'টো উল্টো বিষয় বা বিপরীত যুক্তি থাকে। এই দুই বিপরীত বিষয়ে সংঘর্ষে তৃতীয় একটি ভাব বা বিষয়ের পরিণতি ঘটে। এইভাবে ভাবের তথা কাজের অগ্রগতি ঘটে। ইউরোপ যখন হেগেলিয়ান ভাববাদের জোয়ারে আপ্লুত তখন ফুয়েরবাক (Feuerbach) নামক আরও একজন দার্শনিক বস্তুবাদের জয়গানে ইউরোপে আলোড়নের সৃষ্টি করেন। তিনি বিখ্যাত দার্শনিক হিউম, কান্ট ও হেগেলের মতবাদের বিরুদ্ধে নতুন ধরনের বস্তুবাদের পত্তন করেন। তার মতেও নিরঙ্কুশ ভাব (absolute idea) বা অতি শক্তি বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমাদের মাথা-ই (brain) হলো বস্তুর দ্বারা তৈরী - আর সেই বস্তুল মাথার ফল হলো আমাদের চেতনা ও চিন্তা শক্তি। তার মতে, বস্তু মনের ফল নয় - মন-ই হলো বস্তুর উন্নততর বিকাশ। তার মতে, খ্রিস্টান গড (God) হলেন মানুষের অযৌক্তিক আয়না-বিম্বের প্রতিফলন মাত্র।



ফুয়েরবাক বলেন - ধর্ম (religion) শব্দটি আসে বাঁধন (religare) শব্দ থেকে। মানুষ প্রকৃতি বা বস্তু থেকে সৃষ্ট হলেও মানুষে মানুষে রয়েছে বাঁধন - স্নেহের, ভালোবাসার, মমতার ও নৈতিকতার। তার মতে সৃষ্টিকর্তা নির্ভর ধর্ম নয় - ভালোবাসা, মমতার ও নৈতিকতার ধর্মই হলো মানুষের ধর্ম। এপর্যন্ত বস্তুবাদের যে বিভিন্ন ধারার বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে বস্তুবাদের ৩ টি প্রধান বিষয় ফুটে ওঠে -

১। ইতর বস্তুবাদ

২। যান্ত্রিক বস্তুবাদ

৩। ফুয়েরবাকিয় বস্তুবাদ



= ইতর বস্তুবাদ মানুষকে তার মহত্তর দিক থেকে নামিয়ে ভোগ সর্বস্ব পশুস্থলে নামিয়ে আনে। আর যান্ত্রিক বস্তুবাদ পরিণত করে তাকে নৈতিকতাহীন যন্ত্ররূপে। ফুয়েরবাকিয় বস্তুবাদের যান্ত্রিকতার মধ্যে ভালোবাসা ও নৈতিকতার দূর্বল আস্তরণ থাকলেও তা শীঘ্রই হয়ে ওঠে বস্তুবাদী ও ভাববাদী উভয় দলের সমালোচনার লক্ষ্য।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১:০০

শূন্য আরণ্যক বলেছেন: +

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১:০৭

দণ্ডিত পুরুষ বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১:০১

আবদুর রহমান (রোমাস) বলেছেন:
পিলাচ +

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১:১৪

দণ্ডিত পুরুষ বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১:২২

নাজিম উদদীন বলেছেন: আমাদের ভারতবর্ষের চার্বাক বা লোকায়তরাও বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাস করত।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ২:১৫

আলমগীর কুমকুম বলেছেন: +

৫| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ২:২৭

বিদগ্ধজন বলেছেন: চমৎকার। গবেষণাধর্মী লেখা। অসাধারণ ভাষার ব্যবহার।

৬| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ ভোর ৬:৫০

আবু নাঈম বলেছেন: লেখাটি অনেকের ভাল লেগেছে। একজন এটাকে গবেষণাধর্মী লেখা বলেছেন।
লেখককে কয়েকটা প্রশ্ন করি।
(১) মানুষের উদ্ভব এবং মানুষের সমাজের উদ্ভব কতদিন আগে?
(২) ধর্ম-দর্শন এগুলো মানুষের সমাজে কবে এসেছে?
(৩) আপনি ধর্ম-দর্শন সম্পর্কে কোন ইতিহাসবিদের লেখায় উপরোক্ত তথ্য পেয়েছেন _ "অতীতে ধর্মকে যারা কঠোর মনে করত- কিংবা ধর্মীয় জীবন-যাপনকে কষ্টকর মনে করত, - অন্য কথায় - যারা খাওয়ায়, বিলাসিতায় ও জাগতিক জাঁকজমকে জীবনকে উপভোগ করতে চাইত তারাই কমবেশী ধর্মীয় বন্ধনকে ছিন্ন করে নাস্তিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করত। মহত্তর জীবনবোধের বিরোধী আর জাগতিক বস্তু উপভোগে মত্ত এইরূপ একদল লোককে তাই বলা হতো বস্তুবাদী। পরবর্তীকালে একেই ইতর বস্তুবাদ নাম দেয়া হয়।"
ধর্ম-দর্শন নিয়ে অনেক গবেষণাধর্মী বই আছে। যদি নামগুলো জানান, উপকৃত হব।

২৮ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৭:৩৩

দণ্ডিত পুরুষ বলেছেন: : আপনি সম্ভবত কিছুটা রেগে গিয়েছেন।আমি কাউকে আক্রমণ করে এই সব লিখিনি।আপনি রেগে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানলাম আপনি কাল মার্কস অনুরাগী।ওনার সৃষ্টিশীলতার জন্য আমি ওনাকে শ্রদ্ধা করি।ইদানীং আমি যে বইগুলো পড়ছি তার মধে্য একটি হলো "বিজ্ঞান-সমাজ-ধর্ম"।যার লেখক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম।এখানে ওনি খুব সূচারুভাবে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করেছেন।যা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।আমি এগুলো বিশ্বাস করি।ব্লগে আস্তিকতা-নাস্তিকতা নিয়ে যে আগুন জ্বলছে সে আগুনে আমি ঘৃতাহুতি দিতে আসিনি।কোনরকম যুক্তি ছাড়াই আমি আমার ধর্মীয় বিশ্বাসে অটল।এতে আমাকে আপনি সেকেলে,গোঁড়া বা প্রতিক্রিয়াশীল যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন।আর হ্যাঁ,সমভোগতন্ত্র কি কারণে ঠিকেনি তা জানার আগ্রহ আছে।

৭| ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:২৫

পথিক!!!!!!! বলেছেন: লেখাটির জন্য কোন বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন একটু নামটা উল্লেখ করবেন কি?

২৮ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ৭:৩৮

দণ্ডিত পুরুষ বলেছেন: পথিক ভাই,বিজ্ঞান-সমাজ-ধর্ম নামক একটি বই যা প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম লিখিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.