নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুনিয়ার মজদুর এক হও

অনুনয়, আবেদন, নিবেদন করে অধিকার আদায় করা যায় না। অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়। অধিকার আদায়ে চাই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম

কামরুল হাসান রাহাত

আমার লেখালেখির পেছনে চালিকাশক্তি- সর্বগ্রাসী পুঁজিবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে মানবিক সমাজের আকাঙ্খা ও শ্রেনীদর্শন।

কামরুল হাসান রাহাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীর স্বাধীনতা বনাম মাল তত্ত্ব

১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

: মামা, মালটা দেখছোস …

: কই?

: আরে এই যে দেখ, জটিল মাল…

: এটাতো মেয়ে ..

: আরে এটারেইতো মাল কয়, যাই কস জিনিসটা জোস



এই হচ্ছে আমাদের সমাজ। এখানে নারী হচ্ছে মাল বা ক্ষেত্র বিশেষে জিনিস। মাল মানে সাধারণ নারী না। আবেদনময়ী বা সোজা বাংলায় যৌন আবেদনময়ী নারী। আমাদের সমাজ এখনো নারীকে যৌন ভোগের সামগ্রী হিসেবেই দেখে। একজন নারী সে যতই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী হোক না কেন, তার মূল যোগ্যতা হচ্ছে তার শারীরিক সৌন্দর্য। তবে বিয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু ছেলেরা সুন্দর মেয়েদের বিয়ে করতে চাইলেও তাদের ভাষায় মালদের বিয়ে করতে চায় না। যদিও বা এমন কাওকে পছন্দ হয় বা পারিবারিক সিদ্ধন্তে বিয়ে করতে হয় তখন বিয়ের পর সেই আবেদনময়ী নারীর উপর নেমে আসে নানা রকম বিধি নিষেদ। যেমন বোরকা পড়তে হবে, শর্ট জামা পড়া যাবে না … ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এই শারীরিক সৌন্দর্য দিয়ে নারীদের যোগ্যতা মাপার ব্যাপারটা নিয়ে নারীদের চিন্তা ধারাটা কেমন? একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন নারীরা নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য এর ব্যাপারটা নিয়ে খুব সচেতন থাকে। ছোট বেলা থেকেই পারিবারিক ভাবেই তাদের শেখানো হয় তাদেরকে সব সময় সেজেগুজে সুন্দর হয়ে থাকতে হবে। ফলে অবচেতন মনেই সে মেয়েটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিন্তা চেতনা নিজের মধ্যে ধারন করে। পুরুষ যা চায় নারী নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করে।



পারিবারিক পরিবেশের বাইরে আমাদের সামাজিক পরিবেশও প্রবল ভাবে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা চেতনা দ্বারা আচ্ছন্ন। ফলে আমাদের মিডিয়া থেকে শুরু করে কর্পোরেট ক্ষেত্র সব জায়গায় নারীদের শারীরিক সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অথচ নারী তার মেধা দিয়ে, মনন দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিজের যোগ্যতা প্রমান করছে যা কখনো হাইলাইট করা হয় না। নারীকে ভোগ্য পন্য হিসেবে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করা হয় বিজ্ঞাপন জগতে। যে কোন পন্যের বিজ্ঞাপনে নারীকে, তার শরীরকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয় যেনো সেই পন্যটির পাশাপাশি নারী নিজেও একটি পন্য। হাল আমলে সেই পন্য সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে র্যা ম্প মডেলিং। যেখানে নারী নাকি তার গায়ের পোষাক কোনটা পন্য বোঝাই দায় হয়ে যায়। অথচ নারীর এই পন্যরুপী ব্যবহারকেই অনেকে নারী স্বাধীনতা বলে আখ্যা দিতে চায়।



নারী মুক্তি নিয়ে নারীবাদীরাও বিভ্রান্তিতে ভোগেন, ক্ষেত্রবিশেষে অন্যকে বিভ্রান্ত করেন। নারীবাদীদের কাছে নারী মুক্তি মানে হচ্ছে শ্বশুর বাড়িতে নারীর অধিকার। ফলে তারা ইভটিজিংএর বিরুদ্ধে কথা বলেন, যৌতুক বিরোধী আন্দোলন করেন, বাল্য বিবাহ রোধের কথা বলেন অথচ ব্যক্তিগত সম্পদকে কেন্দ্র করে যে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীকে পন্য হিসেবে গন্য করা হয় সেই সংস্কৃতির বিপক্ষে কথা বলেন না। ফলে নারীর ধুমপান করাকে বা একসাথে নারী পুরুষের আড্ডা দেওয়াকে নারী স্বাধীনতা বলে তারা আত্মশ্লাঘায় ভোগেন। যদিও ধুমপান করা যেমন নারীর স্বাধীনতা বুঝায় না তেমনি শুধু নারী বলেই কাওকে ধুমপানে বাধা দেওয়াও স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ।



তবে আমাদের মনে রাখতে হবে নারীকে পন্য হিসেবে ব্যবহার যেমন একটা সম্পত্তিগত ধারনা তেমনি নারীকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখাও সেই একই সম্পত্তিগত ধারনারই ফল। ভাবখানা এমন আমার সম্পত্তি আমি দেখবো অন্যরা কেন দেখবে? দোহাই দেওয়া হয় পর্দা করলে ইভ টিজিং কম হয়। যদিও বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় শহুরে খোলামেলা পোষাক পড়া মেয়েদের থেকে গ্রামের সহজ সরল মেয়েরাই ইভ টিজিংএর শিকার বেশী হয়।



এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে সমাধান কি? নারী মুক্তির সঠিক রাস্তাটাই বা কি? এক্ষেত্রে আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে যে ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তিগত ধারণাকে কেন্দ্র করে নারীকে পুরুষের পদানত করা হয়েছে সেই সম্পদ কেন্দ্রিক ধারনাকে উচ্ছেদ করতে হবে, আর তা করতে হবে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় রেখেই। মানুষের সব সম্পত্তি যখন ব্যক্তিগত থেকে সামাজিক সম্পত্তিতে রুপান্তর হবে তখন নারীও মু্ক্তি পাবে অন্যের সম্পত্তি হওয়া থেকে। তাছাড়া শুধুই সভা সেমিনার করে নারীকে মুক্তি দেওয়া যাবে না। নারী রয়ে যাবে মাল বা জিনিস হিসেবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

শেখ আজিজুর রহমান বলেছেন: ঠিক বলেছেন .........। পড়ে ভালই লাগল

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২৪

কামরুল হাসান রাহাত বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৩৭

মদখোর বলেছেন: eta shudhu matro ei shomajer na,jekono somajer bortoman obostha..ekhane meyerao ekhon nijer vog ponno hishebe uposthapon korche..ora biliye dicche nijeder..vul ta tobe kar..chelera mal bolche,ami ei kothar ghoor birodhi tobe manush jodi nijeke ponner moto dekhiye beray tobe take mal bolte somossha howar kotha na..lokkho kore dekhben,jara oi maler moto nijeder bahire prokash kore mal kintu taderi daka hoy..sobaike na..

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২৮

কামরুল হাসান রাহাত বলেছেন: এখানে কাদের কে মাল ডাকা হয় সেটা মূল বিষয় না। মূল বিষয় হচ্ছে যে মাল ডাকছে সে কিন্তু এক ধরনের ভোগবাদী মানসিকতা থেকেই এই শব্দটা ব্যবহার করছে। যারা যারা নিজেদের পন্য হিসেবে উপস্থাপন করছে তারাও একই মানসিকতা ধারণ করে ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.